সুখ অমৃত পর্ব-১০

0
88

#সুখ_অমৃত
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মানতাশা উমায়রার সাথে পুনরায় তাদের বাড়িতে ফিরে এলো। বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই তারা মুখোমুখি হলো জাইনের! জাইনকে দেখে উমায়রা এবং মানতাশা দুজনেই অবাক চোখে তাকালো। জাইন মানতাশার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে উমায়রার পানে তাকিয়ে বলল,
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আমি এসেছি থেকে তোমায় খুঁজে চলেছি।”

উমায়রা নম্র স্বরে বলল,
“মানতাশাকে নিয়ে একটু ঘুরতে গেছিলাম বুর্জ খলিফায়।”

জাইন মানতাশার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কেমন লাগল বুর্জ খলিফা?”

“ভালো।”

বলেই মানতাশা স্থান ত্যাগ করলো। এই জাইন নামক লোকটার দৃষ্টি তার সহ্য হয়না। এই দৃষ্টি তার পূর্ব পরিচিত। আবু সুফিয়ানের চোখের দৃষ্টির সাথে যার মিল খুঁজে পায়। তাছাড়া এই লোকটা দুটো বিয়ে করেছে। তাই তাকে নিয়েও এমন কোন চিন্তা করতে পারে। তবে মানতাশা সেটা হতে দিতে পারবে না। এজন্য সে এই পন্থাই অবলম্বন করছে। দূরে থাকবে এই লোকের দৃষ্টি থেকে।

জাইন মানতাশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। হেসে বলে,
“এভাবে বেশিদিন আমার থেকে পালিয়ে বের হতে পারবে না। আমি যার দিকে একবার নজর দেই,তাকে নিজের করেই ছাড়ি। তোমাকে আমার কাছে ধরা দিতেই হবে মানতাশা।”

★★★
হাফসা নিজের কক্ষে অবস্থান করছে। সে শুনেছে জাইন আজ লন্ডন থেকে ফিরেছে কিন্তু এখনো তার সাথে দেখা করেনি। ব্যাপারটা ভাবতেই তার রাগ হলো খুব। সে চায় সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। নিজের শ্বশুর এবং এই মহলকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখলেও স্বামীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা তার জন্য কঠিন। জাইন তাকে খুব বেশি মূল্যায়ন করে না৷ যতটা সে বুঝেছে তাকে বিয়ে করা নিয়েও জাইনের বিশেষ মত ছিল না। তাই তো বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় নিজের চাচাতো বোনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে। সরাসরি হাফসাকে কিছু না বললেও কৌশলে বুঝিয়ে দেয় যে, সে তাকে স্ত্রী হিসেবে মন থেকে মেনে নিতে পারে নি। হাফসা নিজেও জানে এই বিয়েটা একটা চুক্তির মতোই। জাইনের বাবা দুবাইয়ের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। তার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যই তার চাচা তথা দুবাইয়ের আমির তাদের বিয়ে দিয়েছে।

হাফসা তবুও এসবকে গুরুত্ব দেয় না। সে চায় সবকিছু নিজের হাতের মুঠোয় রাখতে। এজন্য তার পথ পরিস্কার রাখতে হবে। এসব কারণেই সে উমায়রাকে দমিয়ে রাখতে চায়। তবে হাফসা এটুকু জানে জাইন উমায়রাকেও পছন্দ করে না। তবে নিজের যাবতীয় কাজ সে উমায়রাকে দিয়েই করিয়ে নেয়। এই কারণেই উমায়রাকে বিয়ে করেছে যাতে হাফসাকে এসব করতে না হয়। হাফসার উপস্থিতি তার সহ্য হয়না। আর এখানেই তার স্বস্তি। তবে হাফসার ভয়ও এই যায়গায়৷ জাইনকে যতদূর সে চিনেছে তাতে ও যদি আবার নিজের পছন্দের কোন মেয়েকে বিয়ে করে এনে তোলে তখন হাফসার এই আধিপত্যে ভাটা পড়বে। এটা হাফসা হতে দিবে না। তাই জাইনকে নজরে রাখতে হবে।

হাফসার এই ভাবনার মাঝেই জাইন চলে আসে সেখানে। এসে বলে,
“কেমন আছেন আপনি হাফসা?”

জাইন হাফসাকে সবসময় আপনি বলেই সম্মোধন করে। মোটেই সম্মান দিয়ে নয় বরং দূরত্ব বোঝানোর জন্য এটা সে বোঝে। তবে এটাকে গুরুত্ব দিতে বেশি রাজি নয়। হাফসা মৃদু হেসে বলে,
“কেমন আছেন জাইন সাহেব? লন্ডন থেকে আজই ফিরলেন বুঝি?”

“জ্বি, তবে দুঃখিত লন্ডন থেকে আপনার জন্য কিছু আনতে পারিনি।”

হাফসা বুঝতে পারে এভাবে তাকে সূক্ষ্মভাবে অপমান করছে। তবে হাফসা এই অপমান আবার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বলে,
“অসুবিধা নেই। আমার ভাই-আব্বুও লন্ডনে যায়। তারা আমার জন্য যেসব উপহার আনে তা রাখারই যায়গা নেই, নতুন করে আপনি কিছু আনলে সেটা কই রাখবো?”

জাইন অপমানটা হজম করে নিয়ে বলে,
“এজন্যই আপনার জন্য কিছু আনি না।”

“তা, উমায়রার জন্য কিছু আনেন নি?”

“না, তবে অন্য কারো জন্য এনেছি।”

হাফসার ভ্রু কুঁচকে আসে। কৌতুহলী দৃষ্টিতে জাইনের দিকে তাকায়। জাইন নিজের পকেট থেকে একটা ডায়মন্ড রিং বের করে বলে,
“এটা কোহিনূর হিরার তৈরি, সুন্দর না?”

হাফসা উত্তেজিত হয়ে বলে,
” এটা কার জন্য এনেছেন আপনি?”

জাইন রিংটা পুনরায় পকেটে রেখে বলে,
“নতুন একজনকে মনে ধরেছে, তার জন্যই এনেছি।”

হাফসা জ্বলেপুড়ে আঙ্গার হয়ে যায়। সবজায়গায় রাজত্ব করার স্বপ্ন দেখা হাফসা নিজের স্বামীর মনেই রাজত্ব করতে পারেনি। অথচ অন্য কেউ সেখানে ঠাঁই করে নিচ্ছে। এটা সে কিছুতেই হতে দিবে না। জাইনও হাফসাকে কিছু না বলে তার কক্ষ ত্যাগ করলো৷ হাফসা ঈর্ষান্বিত হয়ে বলল,
“আপনার হৃদয়ে আমি না থাকলে আর কেউ সেখানে থাকবে না। যে আপনার হৃদয়ে ঠাঁই পেয়েছে তাকে আমি এই পৃথিবীতে আর ঠাঁই পেতে দিব না।”

★★★
মানতাশা নিজেদের কক্ষে ছিল। সময়টা পড়ন্ত বিকেলের। মানতাশা শুয়ে ছিল মাথাব্যাথার দরুণ। হঠাৎ করে দরজায় ঠকঠক আওয়াজে সে বিরক্ত হয়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। বিরক্তির সহিত বলে,
“কে?”

“আমি।”

কন্ঠটা চিনতে পারল মানতাশা৷ এটা জাইনের কন্ঠস্বর।

“আপনার কি কোন জরুরি প্রয়োজন?”

“হুম, দরজাটা খোলো।”

মানতাশা কিছুক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দে বুঝে দরজাটা খুলে দিলো। জাইন মানতাশাকে দেখেই একগাল হাসল। যা মানতাশার মোটেই ভালো লাগল না। জাইন মানতাশার দিকে ডায়মন্ড রিং এর বাক্সটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি প্রথম আমাদের বাড়িতে মেহমান হিসেবে এসেছ, তাই ভাবলাম তোমাকে কোন উপহার দেয়া উচিৎ। এইজন্যই লন্ডন থেকে তোমার জন্য এই সামান্য উপহার এনেছি।”

মানতাশা বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে থাকে কিছু পলক। অতঃপর ভিত কন্ঠে বলে,
“আপনারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন এটাই আমার কাছে অনেক৷ এসব উপহারের কোন প্রয়োজন নেই।”

“কেউ ভালোবেসে কিছু দিলে সেটা গ্রহণ করতে হয়।”

বলেই জাইন একপ্রকার জোর করে বাক্সটা মানতাশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে। মানতাশা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে সে এটা গ্রহণ করতে পারবে না। সিদ্ধান্ত নিলো উমায়রার মারফত এটা আবার তাকে ফেরত দিয়ে দিবে।

★★★
হাফসা বেগম রাগে থরথর করে কাপছে। এই মহলে তার এক বিশ্বস্ত কর্মচারীকে জাইনের উপর নজরদারি করার নির্দেশ দিয়েছিল। তার মাধ্যমেই জানতে পারল সব ঘটনা। জাইন আংটিটা মানতাশাকে দিয়েছে। হাফসার যা বোঝার সে বুঝে নিয়েছে। মানতাশার কথা মনে করে রাগী স্বরে বলল,
“ভুল করলে মেয়ে। আমার পথের কাঁটা হয়ে উঠলে! পথের কাঁটা কিভাবে ওপড়াতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”

তারপর নিজের সেই বিশ্বস্ত কর্মচারীকে গোপনে কিছু একটা পরামর্শ দিয়ে বললেন,
“কাজটা যেন ঠিকমতো হয়ে যায়।”

★★
মানতাশা সবে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় আবারো তার দরজায় কেউ কড়া নাড়ে। এখব গভীর রাত। ঘড়িতে সময় এখন রাত ১২ টা। মানতাশা বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতেই দেখল মহলের এক কর্মচারীকে। সে মানতাশার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“এত রাতে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। কিন্তু উমায়রা বেগম আপনার সাথে কিছু জরুরি প্রয়োজনে দেখা করতে চেয়েছে।”

“ঠিক আছে, আপনি যান, আমি আপার কক্ষে গিয়ে দেখা করে দেব।”

“কক্ষে না। উনি আপনার সাথে নিচে স্টোররুমে দেখা করতে চেয়েছে।”

মানতাশা ভাবলো বিকেলে জাইনের ঘটনাটা নিয়ে হয়তো কিছু বলবে। এজন্যই গোপনে ডেকে পাঠিয়েছে। তাই সে বলল,
“আচ্ছা, আমি স্টোররুমে যাচ্ছি।”

মানতাশা পা বাড়ালো স্টোররুমের দিকে। কর্মচারীর মুখে ফিচলে হাসি। সে বলল,
“আপনি বুঝলেনও না কত বড় ফাদে পা দিলেন।”

মানতাশা স্টোররুমে এসে দেখলো এখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বেশ ভয় লাগলো তার। আশেপাশে ইঁদুরের চিকচিক শব্দ শোনা যাচ্ছে। অন্ধকারে হঠাৎ মানতাশা লক্ষ্য করলো কেউ তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে তার শিরদাঁড়া খাড়া হলো। চিৎকার করে দৌড় দিলো সামনের দিকে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে উপরে তাকিয়ে অবাক স্বরে বলল,
“আপনি!”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨