#সুখ_অমৃত
#পর্ব_১৩/১৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সুফিয়ানকে দেখে মোহাম্মদ জাফর ভীত হয়ে পড়লেও সেই ভয় সহসা প্রকাশ করতে চাইলেন না। তাই তো ভয়কে দূরে ঠেলে মৃদু হেসে বললেন,
“তুমি আসায় আমি অনেক খুশি হয়েছি। আজ কতদিন পর তুমি এলে।”
সুফিয়ান মোহাম্মদ জাফরের কানে ফিসফিস করে বলে,
“আমি এবার এমনি এমনি আসিনি। কিছু উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এসেছি। যেটা তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। তাই না আঙ্কেল?”
মোহাম্মদ জাফর উত্তরে কি বলবেন ভেবে পেলেন না৷ এর মাঝেই সালমা বেগম বলে উঠলেন,
“তুমি কেন এসেছ এখানে?”
আবু সুফিয়ান খানিক হেসে বলল,
“ভয় পাবেন না, আন্টি৷ আমি এখানে থাকতে আসিনি৷ এখানে আমি এসেছি যা একান্তই আমার তা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।”
“মানে?! কি বলতে চাইছ তুমি?”
সুফিয়ান আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি বলে,
“মানতাশাকে চেনেন নিশ্চয়ই..আমি ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি। ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল৷ মাঝখান থেকে ও পালিয়ে এসে আমার সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো। এখন আমি শুধু ওকে ফেরত চাই..আর কিছু না।”
উমায়রা কেপে ওঠে সুফিয়ানের কথা শুনে। বিড়বিড় করে বলে,
“তাহলে এই সেই লোক যার হাত থেকে মানতাশা এখানে পালিয়ে এসেছে!”
সালমা বেগম বলে ওঠেন,
“তোমার সেই ইচ্ছা আর কোনক্রমেই পূরণ হবার নয়। কারণ ঐ মেয়েটা এখন আমাদের বাড়ির বউ। তাই ওকে আমরা সবাই মিলে রক্ষা করব।”
সালমা বেগমের কথা যেন আবু সুফিয়ানের উপর বজ্রপাতের আঘাত হয়ে নামলো। সে চিৎকার করে বলে উঠল,
“এমনটা হতে পারে না!”
এমন সময় জাদ মানতাশাকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বলল,
“কিন্তু এমনটাই হয়েছে।”
মানতাশার পাশে অন্য একটি ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সুফিয়ানের হুশ উড়ে গেল। সে ক্রোধের সহিত তাকিয়ে থাকল। জাদ নিচে নেমে মানতাশার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
“আমার স্ত্রীর দিকে অন্য কারো বদনজর আমি বরদাস্ত করব না। তাই ভালো হবে যদি আপনি নিজের নজর ঝুকিয়ে চলেন মিস্টার আবু সুফিয়ান।”
“তুমি কি আমায় থ্রেট দিচ্ছ?!”
আবু সুফিয়ানের গম্ভীর স্বর। জাদ হেসে বলেন,
“ধরে নিন, তাই।”
আবু সুফিয়ান এবার মোহাম্মদ জাফরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কাজটা তুমি ভালো করলে না, আঙ্কেল। প্রথমত আমি ভেবেছিলাম তুমি শুধু এই মেয়েটাকে আশ্রয়ই দিয়েছ। তাই তোমার সাথে আলোচনা করে সব মিটমাট করে নিবো। কিন্তু এখন তো দেখছি তুমি বেশ ভালোই গেমস খেলছ। এই মেয়েকে নিজের পুত্রবধূ বানিয়ে নিয়েছ! বেশ, বেশ! এটাকে আমি শত্রুতা হিসেবেই নিলাম। মনে করলাম তুমি এভাবে আমার সাথে চূড়ান্ত শত্রুতার সূত্রপাত করলে। এর ফল ভালো হবে না। আবু সুফিয়ান নিজের শত্রুতা বেশ ভালো ভাবেই পালন করে। আর তোমার থেকে ভালো তো সেটা কেউ জানে না।”
বলেই সে ফিরে জাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার যখন যা পছন্দ হয় ঠিক তখন থেকেই সেটা নিতান্তই আমার। আজ অব্দি কেউ আমার পছন্দের কিছু কেড়ে নেওয়ার দুঃসাহস দেখায় নি যেটা তুমি দেখালে। এর ফল মোটেই ভালো হবে না। তুমি সাপের লেজে পা দিয়েছ! ছোবল তো তোমায় খেতে হবেই। আর আমার যা পছন্দ সেটাকেও আমি আবার নিজের করে নেব।”
বলেই মানতাশার দিকে ফিরে বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলে,
“ওড়ার সুযোগ যখন পেয়েছ, যত ইচ্ছা উড়ে নাও। আর বেশি দিন আর এই সুযোগ পাবে না। আমার কথা মিলিয়ে নিও, খুব শীঘ্রই তোমাকে আবারো আমার খাঁচায় বন্দী হয়ে জীবন পার করতে হবে।”
বলেই আবু সুফিয়ান যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। মানতাশা ভয়ে একদম মিইয়ে যায়। জাদের হাত শক্ত করে ধরে। জাদ মানতাশাকে অভয় বানী দিয়ে বলে,
“একদম ভয় পেওনা তুমি। আমি আছি তোমার পাশে। যতক্ষণ আমার শরীরে প্রাণ আছে ততক্ষণ এই শয়তান টা তোমার গায়ে একটা আঁচড়ও কাঁটতে পারবে না।”
মানতাশা যেন অনেকটাই স্বস্তি পায়। জাদ মানতাশাকে ছেড়ে ক্ষোভ নিয়ে সুফিয়ানের দিকে এগিয়ে নিতে যাচ্ছিল তখনই সুফিয়ানের ২ জন তাগড় তাগড় বডিগার্ড এসে তার সম্মুখীন হয়। যার ফলে জাদ আর এগোতে পারে না। সুফিয়ান পিছন ফিরে তাকিয়ে ফিচেল হেসে বলে,
“আমার সাথে পাঙ্গা নিয়ে ঠিক করলে না। দেখি তোমার এই সাহস দিয়ে কতদূর কি করতে পারো৷ আজ তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আমি এটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম যে তোমার স্ত্রীকে আমি নিজের কাছে বন্দিনী করে রাখব আর তুমি কিছুই করতে পারবে না।”
বলেই সুফিয়ান বিদায় নেয়। জাদ ক্ষোভ নিয়ে মোহাম্মদ জাফরের মুখোমুখি হয়ে বলে,
“ঐ লোকটা আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার ছেলের বউকে এভাবে অপমান করল..আপনার ছেলেকে এভাবে থ্রেট দিয়ে গেল অথচ আপনি কিছু না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন! কেমন বাবা আপনি?!”
মোহাম্মদ জাফর চূড়ান্ত ক্রোধ নিয়ে বলে,
‘একদম আমার উপর চোখ রাঙাবে না৷ বিপদ তুমি নিজেই নিজের কাছে টেনে নিয়েছ। তুমি চেনো এই আবু সুফিয়ান কে? তার সাথে চ্যালেঞ্জ নেয়ার ফল কি হতে পারে?’
“কে এই আবু সুফিয়ান যাকে আমাদের এত ভয় পেয়ে চলতে হবে?”
“ও হলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিং..মাফিয়া সমাজের অন্যতম ভয়ানক সদস্য। যার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই। গোটা বিশ্বে ওর মাফিয়া গিরির সাম্রাজ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ও চাইলে আমার মতো হাজার হাজার ব্যবসায়ীকে তুড়ি মে*রে নিজের ইশারায় নাচাতে পারে।”
মানতাশা তাজ্জব বনে যায় মোহাম্মদ জাফরের কথা শুনে। জীবনে আর কত সত্যের মুখোমুখি হতে হবে তাকে? আজ যে সত্য সে জানল তা তার জন্য ছিল অনেক ভয়ানক। এই লোকটা এতটা ক্ষমতাশালী সেটা মানতাশা বুঝতেই পারে নি। তাহলে কি এই লোকের হাত থেকে সে কখনো রক্ষা পাবে না। এসব ভেবেই সে দৌড়ে নিজের ঘরের দিকে গেল৷ জাদ সেটা দেখে মানতাশার পিছনে দৌড় দিলো। মানতাশা নিজের আর জাদের রুমে এসে কাঁদতে লাগল। জাদ মানতাশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল৷ মানতাশা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমার জীবনে সুখ এত ক্ষণস্থায়ী কেন? সুখ কি আমার জীবনে অমৃতর মতো অমর হয়ে ধরা দিতে পারে না? আমার জীবনে কি কখনো আর আলোর মুখ দেখব না? এভাবেই কি আমাকে এই কষ্টের জীবনের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে?”
জাদ মানতাশাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুমি একদম ভয় পাবে না। ঐ সুফিয়ান যতোই শক্তিশালী হোক না কেন..আমার বুক থেকে তোমায় আলাদা করবে এমন ক্ষমতা ওর নেই। তুমি শুধু আর শুধু আমার। গোটা বিশ্বে এমন কোন শক্তি নেই যে আমার কলিজাকে আমার থেকে আলাদা করবে।”
মানতাশা জাদের কথায় ভরসা পায়। জাদের বুকেই যেন নিজের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়। জাদকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আপনি এভাবেই আমাকে নিজের কাছে জড়িয়ে রাখুন সবসময়। আমি কখনো আপনার থেকে দূরে যেতে চাই না। আপনার মাঝেই যে আমি নিজের সুখ, নিজের ভালো থাকাকে খুঁজে পেয়েছি। সেটাকে আর কোন মূল্যেই হারাতে চাই না।”
“তুমি আর কিছু হারাবে না মানতাশা। এটা আমি তোমায় কথা দিচ্ছি।”
বলেই মানতাশার কপালে চুমু খায়।
★★★
নিজের কক্ষে বসে হাফসা বেগম কিছু হিসাব মিলাচ্ছে। আজ সকালে সে কিছু জরুরি কাজের জন্য দুবাই রাজমহলে গিয়েছিল। ফিরে এসে নিজের অনুগত কর্মচারী দের মাধ্যমে সব খবর পেয়েছে। সব শুনে সে বেশ খুশিই হয়েছে। এমনিতেই ঐ মানতাশা নামক মেয়েটার বাড়বাড়ন্ত তার সহ্য হচ্ছিল না। মেয়েটার করা ব্যবহার থেকে স্পষ্ট বিদ্রোহের আভাস পাওয়া যায়। হাফসা বেগমের এই বাড়িতে এতদিন ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সাম্রাজ্যে যেন এই মেয়েটা এসেছে চীর ধরানোর জন্য। হাফসা বেগম তাই যেকোন মূল্যে চায় এই মানতাশা নামক পথের কাটাকে উপড়ে ফেলতে। আর এখন আর উপায়ও সে পেয়ে গেছে। হাফসা বেগম একটা গা জ্বালানী হাসি দিয়ে বলল,
“এই আবু সুফিয়ান নামক লোক টাই হবে এখন আমার তুরুপের তাস। তাকে দিয়েই এই মানতাশা নামক আপদকে উপড়ে ফেলতে হবে। নাহলে এই মেয়েই আমার পথের কাটা হয়ে থেকে যাবে। আর হাফসা আর যাইহোক নিজের পথের কাটাকে কোন মূল্যেই সহ্য করতে পারে না।”
হাফসা এমন ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নেয় তার লোকের দ্বারা খোঁজ লাগিয়ে সুফিয়ানের সাথে যোগাযোগ করবে। তারপর তার সাথে মিলেই এই মানতাশাকে দূর করার বন্দোবস্ত করবে। হাফসা বেগম এর এমন ভাবনার মাঝেই হঠাৎ তার ঘরে একজন কর্মচারী ছুটে আসে। তাকে আসতে দেখেই হাফসা বেগম রাগান্বিত হয়ে বলে,
“এভাবে বলা নেই কওয়া নেই তুই কোন সাহসে আমার কক্ষে এলি?”
“মার্জনা করবেন বেগম সাহেবা। কিন্তু আমাকে যে এখানে আসতে হতোই। আপনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা খবর দেয়ার আছে।”
“কি খবর?”
“হুমায়রা বেগম হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেছে। তাকে তার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
হাফসা বেগম দ্বিগুণ রেগে বলে,
“তুই আমাকে এই ফালতু খবর দিতে এসেছিস! ঐ উমায়রা জাহান্নামে যাক তবুও আমার কিছু যায় আসে না।”
“আসলে সেটা না, আপনার শ্বশুর মশাই আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছে। সবাই উমায়রা বেগমের কক্ষেই আছে শুধু আপনিই নেই!”
হাফসা বেগম কোনরকমে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
“ঠিক আছে। তুই যা আমি আসছি।”
কর্মচারী বেরিয়ে যেতেই হাফসা বেগম একটা শোপিচ তুলে নিয়ে আঁচড়ে ফেলে বলে,
“যত সব নাটক।”
বলেই সে রওনা দেয়। উদ্দ্যেশ্যে উমায়রার কক্ষে যাওয়া। উমায়রার কক্ষে গিয়ে হাফসা বেগম দেখতে পায় উমায়রাকে তার কক্ষে শায়িত করে রাখা হয়েছে এবং তার শিয়রের কাছে বসে আছে মানতাশা। দৃশ্যটা দেখেই তার গা জ্বলে গেল। এত আদিখ্যেতা তার একদম সহ্য হয়না। একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে জাইন। তার চোখমুখেও বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। এটা দেখে হাফসা পৈশাচিক আনন্দ পায়৷ তার কাছে এই জিনিসিটা ভালো লাগে যে তার স্বামী যেমন তাকে খুব একটা পছন্দ করে না তেমনি উমায়রাকেও করে না। আর হাফসা তো এটাই চায়। যেন তার স্বামীর চোখে তার জন্য ভালোবাসা না থাকলেও আর কারো জন্য যেন ভালোবাসা না থাকে। এজন্য তো সে চায়নি তার স্বামীর জীবনে কখনো এমন কেউ আসুক যে তার সব ভালোবাসা পায়।
হাফসার এমন ভাবনার মাঝেই ডাক্তার এসে হাজির হলেন সেখানে। ডাক্তার এসে উমায়রাকে দেখতে লাগল। উমায়রার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল৷ মোহাম্মদ জাফর বললেন,
“কি দেখছেন ডাক্তার? সবকিছু ঠিক আছে তো?”
“ঠিক আছে মানে? আপনি আগে বলুন মিষ্টি কোথায়?”
জাইন অবাক হয়ে বলে,
“আপনি হঠাৎ মিষ্টির খোঁজ কেন করছেন ডাক্তার?”
ডাক্তার হেসে বললেন,
“উনি মা হতে চলেছেন!”
জায়িন বিস্ময়ের চোখে তাকালো। সে বাবা হতে চলেছে! এ যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি। উমায়রাও ততক্ষণে জ্ঞান ফিরে পেয়েছে। এত খুশির খবর শুনে তার চেহারাতেও আলোর ঝিলিক দেখা দেয়। পাশে বসে থাকা মানতাশা মৃদু হেসে বলে,
“তোমাকে অনেক অভিনন্দন আপু। তুমি এক নতুন প্রাণের সাক্ষী হতে চলেছ। যে তোমার মাঝে বেড়ে উঠছে।”
মোহাম্মদ জাফর বলেন,
“এতো অনেক খুশির খবর। জাইন..তোমাকে অভিনন্দন।”
সালমা বেগম, হুসনেয়ারা বেগম তারা সবাই ছিল সেখানে। হুসনেয়ারা বেগম এগিয়ে এসে নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। সালমা বেগম মোহাম্মদ জাফরের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“তুমি দ্রুতই কর্মচারীদের খবর দাও। তারা যেন অনাথ আশ্রমে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। আর উট কোরবানি করার ব্যবস্থা করো। এত খুশির খবর! আমাদের বংশধর আসতে চলেছে।”
এত জনের খুশির মাঝেও একজনের মনের মাঝে জ্বলে উঠল প্রতিহিংসার আগুন। হাফসা এটা মেনে নিতে পারছে না যে উমায়রা জাইনের সন্তানের মা হতে চলেছে। একবার জাইনের দিকে তাকালো হাফসা। যেই জাইন এতক্ষণ বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে উমায়রার দিকে তাকিয়ে ছিল সেই কিনা এখন হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে! দেখে বোঝাই যাচ্ছে বাবা হবার খবরে সে কতই না খুশি। হাফসা আর কিছু ভাবতে পারল না। চূড়ান্ত ক্ষোভ নিয়ে সেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো। নিজের কক্ষে এসে দরজা বন্ধ করে বলল,
“আমি এটা কিছুতেই হতে দিব না। আমার একক আধিপত্যে এভাবে ধস নামতে পারে না! এই উমায়রার বাচ্চা হলে তো সবাই ওকে মাথায় তুলে নাচবে। আর এদিকে তো আমি কখনো মা হতে পারব না। এই সত্যটা জেনেই তো আমার শ্বশুর মশাই জাইনের দ্বিতীয় বিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও তিনি আমায় কথা দিয়েছিলেন যে এই সংসারে আমার কতৃত্ব বজায় থাকবে কিন্তু এখন তো সেটা মনে হচ্ছে না। যদি এমন হয়, তো আমি ঐ উমায়রার সন্তানকে এই পৃথিবীর আলো দেখতে দেব না। কিছুতেই না। ”
বলেই ক্ষোভে ফুসতে থাকে।
★★★
জাদ আজ বাড়িতে ফিরে আসতেই মানতাশা তাকে খুশির খবরটা শুনিয়ে দেয়। উমায়রা কত খুশি এই নিয়েই তখন থেকে গল্প করে যাচ্ছে। জাদ এসব শুনে মুচকি হেসে বলে,
“তোমার আনন্দ দেখে তো মনে হচ্ছে যে উমায়রা ভাবি নয়..তুমি বাচ্চার মা হতে চলেছ।”
“ধুর! আপনি কি যে বলেন না। মা না হলেও আমি তো খালা হতে চলেছি কিংবা চাচি। যাইহোক, মোদ্দাকথা এই বাড়িতে নতুন একটা প্রাণ আসতে চলেছে। সবাই কত খুশি!”
“আমিও অনেক খুশি। একসময় তুমিও আমাকে এরকম একটা সুখবর দিয়ে খুশি করে দিও।”
মানতাশা লজ্জা পেয়ে বলে,
“ধ্যাত! আপনি যে কি বলেন না।”
বলেই উঠে যেতে নিলে জাদ মানতাশাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে,
“সবসময় এত পালিয়ে বেড়াও কেন? একটু ভালোবাসার সুযোগ তো দেবে।”
★★★
হাফসা বেগম বিচলিত হয়ে পুরো ঘরময় পায়চারী করতে থাকে। উমায়রার খবর টা শোনার পর থেকে তার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। হঠাৎ কিছু একটা মনে করে সে উমায়রার কক্ষের দিকে পা বাড়ায়। উমায়রার কক্ষের দিকে চোখ পড়তেই তার মাথায় রাগ উঠে যায়।
জায়িন নিজের হাতে উমায়রাকে খাইয়ে দিচ্ছে। এদিকে উমায়রা নিজেও আপ্লুত। অনাগত সন্তানের জন্য হলেও জায়িন তাকে এত গুরুত্ব। একদিনেই কত খেয়াল রাখতে শুরু করে দিয়েছ। হাফসা রুমের পর্দা টেনে ধরে বলে,
“যত আহ্লাদ করার করে নাও..পরে এই সুযোগ আর নাও পেতে পারো।”
বলেই ত্রস্ত পায়ে স্থান ত্যাগ করে। তার মাথায় এখন কিছু দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যাচ্ছে।
চলবে….