#সুখ_অমৃত
#পর্ব_১৫/১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি
উমায়রা মা হতে চলেছে এই খবরটা জানার পর থেকে জাইন তাকে চোখে হারাচ্ছে। উমায়রার বিন্দুমাত্র অযত্ন হতে দিচ্ছে না। জাইনের থেকে এমন যত্নআত্তি পেয়ে উমায়রা খুশিতে আটখানা হয়ে গেছে। তার ভীষণ ভালো লাগছে জাইনের সান্নিধ্য পেয়ে। বিয়ের পর থেকে জাইনের থেকে যে কাঙ্খিত ভালোবাসা এবং সম্মান পায় নি সেটা যেন সে এখন পাচ্ছে।
জাইন আজ অনেক রাত জেগে উমায়রার পাশে বসে আছে। উমায়রা জাইনের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনি এখনো জেগে আছেন কেন? ঘুমিয়ে পড়ুন। আমার কিছু দরকার লাগলে আমি চেয়ে নিব।”
জাইন বলে,
“তুমি না ঘুমানো পর্যন্ত আমি ঘুমাবো না। যদি কোন অসুবিধা হয়। আমি চাই না, আমার অনাগত সন্তানের মা কোন কারণে কষ্ট পাক।”
উমায়রার শরীরে শীতল স্রোত বয়ে যায় জাইনের এই কথা শুনে। আজ তার নিজেকে এই পৃথিবীর সবথেকে সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছে।
জাইন উমায়রাকে খুশি হতে দেখে নিজেও মুচকি হাসে। বাবা হওয়ার খবর পাবার পর থেকে তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
জাইন উমায়রার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুমি তো তখন সেভাবে কিছু খেলে না৷ রাতে তোমার খিদে লাগতে পারে। তাই আমি তোমার খাবার আনতে বলছি আমাদের কক্ষে৷ তুমি একটু বিশ্রাম নাও।”
“আচ্ছা।”
জাইন মহলের এক নারী কর্মচারীকে ডেকে খাবার আনতে বলে। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে নেয় হাফসা। থেকে থেকে তার রাগ বাড়ছে উমায়রার প্রতি। তাই এবার সে বলে উঠল,
“এবার এই খাওয়াই তোর শেষ খাওয়া হবে।”
নারী কর্মচারীটি খাবার নিতে যাচ্ছিল তখন হাফসা তার পথ আটকে বলে,
“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
“উমায়রা বেগমের জন্য খাবার আনতে।”
হাফসা বেগম নারী কর্মচারীটির গলা চেপে ধরে বলে,
“আমি জানি, তোর মা অসুস্থ এবং বোন এখনো অনেক ছোট। তোর মা-বোনের ঠিকানাও আমি জানি। যদি তুই চাস ওদের কোন ক্ষতি না হোক, তাহলে আমি যা বলছি তাই করতে হবে। বুঝতে পারছিস?”
“জ..জ্বি..আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।”
হাফসা বেগম একটা শিশিভর্তি বস্তু নারী কর্মচারীটির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“এটা উমায়রার খাবারের সাথে মিশিয়ে দিবি। অতঃপর খাবার দিয়েই চেষ্টা করবি এই বাড়ি থেকে পালানোর। আর হ্যাঁ, ধরা পড়ে গেলে ভুলেও আমার নাম বলবি না। নাহলে তোর মা-বোনের মৃত্যু অনিবার্য। বুঝলি আমি কি বললাম?”
“জ্বি, বেগম।”
“এখন যা আমার সামনে থেকে।”
নারী কর্মচারীটি চলে যেতেই হাফসা বেগম পাগলের মতো হাসতে শুরু করল। যেন তার খুব অনেক দিনের ইচ্ছা আজ পূরণ হতে চলেছে। নিজের আধিপত্য বিস্তারের পথে দাঁড়ানো সবাইকে সে নিজের কাঁটা হিসেবে বিবেচনা করবে এবং তাদের উপড়ে ফেলতে নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে।
★★★
নারী কর্মচারীটি ভয়ে ভয়ে কাপা কাপা হাতে খাবার নিয়ে উমায়রার কক্ষে এসে উপস্থিত হয়। জাইন তাকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“খাবার নিয়ে এসেছ?”
নারী কর্মচারীটি ভয়ে ভয়ে জবাব দেয়,
“জ্বি..”
“দাও তাহলে আমায়। আমি নিজের হাতে উমায়রাকে খাইয়ে দেব।”
উমায়রা ভীষণ খুশি হয় জাইনের এই কথা শুনে। জাইন খাবারটা হাতে তুলে নিতেই নারী কর্মচারীটা দ্রুত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। এখনই তাকে পালাতে হবে।
জাইন উমায়রাকে খাবারটা খাইয়ে দিতে যাবে তার আগেই মানতাশা এসে খাবারটা ছুড়ে ফেলে দেয়। আচমকা এমন ঘটনায় জাইন ও উমায়রা দুজনেই হতবাক হয়ে যায়। মানতাশা ভীষণ হাফাচ্ছিল। জাইন রেগে বলে,
“কি হলো এটা?”
উমায়রা দেখতে পায় মেঝেতে পড়ে যাওয়া খাবারটা তার পোশা বিড়াল খেয়ে নিলো এবং সাথে সাথেই সেই বিড়ালটা কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লে। এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে উমায়রা চেচিয়ে উঠল। জাইন উমায়রার কাছে এসে বলল,
“কি হয়েছে তোমার?”
উমায়রা বিড়ালটার দিকে ইশারা করলো৷ জাইনও সেদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। মানতাশা বলতে লাগল,
“আমি দূর থেকে দেখেছি যে ঐ মেয়েটা এই কক্ষে প্রবেশের আগে খাবারে কিছু একটা মেশাচ্ছে। তখনই আমি দৌড়ে দৌড়ে এখানে চলে আসি।”
জাইন বলে ওঠে,
“কে আমাদের এত বড় ক্ষতি করতে চায় আমাকে জানতে হবে। ঐ মেয়েটা মনে হয় বেশিদূর যেতে পারেনি আমি দেখছি..তুমি উমায়রার পাশে থাকো।”
বলেই জাইন দৌড়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে নরম মনের উমায়রা কান্না শুরু করে দেয়। মানতাশা তাকে স্বান্ত্বনা দিয়ে বলে,
“তুমি চিন্তা করো না আপু। কিচ্ছু হয়নি।”
উমায়রা কান্নামিশ্রিত স্বরে বলল,
“আমার অনাগত সন্তান..যে এখনো পৃথিবীর আলোই দেখে নি তার সাথে কার এত শত্রুতা? কেন কেউ তার ক্ষতি করতে চায়?”
মানতাশা বলে,
“আমি বোধহয় ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরেছি যে, কে এমনটা করেছে। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া আমি কিছু বলতে চাই না।”
উমায়রা মানতাশার কথা শুনে আতকে উঠল। এমন কে থাকতে পারে?
এদিকে মহিলা কর্মচারীটা বেশিদূর পালাতে পারে নি। তার আগেই জাইন সিকিউরিটি গার্ডের মাধ্যমে তাকে ধরে ফেলে। তাকে অনেকক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু হাফসার দেখানো ভয়ের জন্য সে মুখ খোলে না৷ অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বানিয়ে বানিয়ে বলে, তাকে একটা মুখোশ পড়া লোক অনেক টাকার বিনিময়ে এমনটা করতে পারছিল।
সবাই এই কথাটা মেনে নিলেও মানতাশার মনে খটকা থেকেই যায়। এদিকে এই ঘটনার পর মোহাম্মদ জাফর বাড়ির নিরাপত্তা অনেক বাড়িয়ে দেয়। উমায়রার আশেপাশেও কড়াকড়ি করা হয়। যা হাফসার মাথাব্যাথার কারণ হয়ে ওঠে।
এই ঘটনার কয়েকদিন পরে…
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাফসা বেগম এবং মানতাশা। হাফসা বেগম মানতাশাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতেই মানতাশা বলে ওঠে,
“আপনিই সেদিন উমায়রা আপুকে বিষ খাইয়ে মারার প্ল্যান করছিলেন, তাই না?”
হাফসা রেগে বলে,
“এসব কি বলছ তুমি? কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে? কোন প্রমাণ ছাড়া তুমি আমার নামে এমন মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারো না।”
মানতাশা দৃঢ় কন্ঠে বলে,
“এই বাড়িতে উমায়রা আপুর ক্ষতি করার মতো আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। উমায়রা আপুর বাচ্চা হবার খবরটা পাওয়ার পর যে আপনার মুখটা কালো হয়ে গেছিল এটাও আমি খেয়াল করেছি। তবে প্রমাণ নেই জন্য আপনার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তবে একটা কথা মনে রাখবেন…দ্বিতীয় বার আর এই ভুল করার চেষ্টাও করবেন না। এরপর কিন্তু আমি উমায়রা আপুর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াবো। কথাটা মাথায় রাখবেন।”
বলেই মানতাশা চলে যায়। হাফসা বেগম সেদিকে তাকিয়ে বলে,
“এই মেয়েটার খুব বার বেড়েছে। এরও একটা ব্যবস্থা আমায় করতে হবে।”
★★★
জাদ ল্যাপটপে কি যেন জরুরি কাজ করছে। আর এদিকে মানতাশা জাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। জাদ আড়চোখে ব্যাপারটা খেয়াল করেও কিছু বলে না। নিজের জরুরি কাজ শেষে মানতাশার দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। সাথে সাথেই মানতাশা চোখ ফিরিয়ে নেয়। জাদ হালকা হেসে বলে,
“এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখতে হবে না। আমি তো পুরোপুরি তোমারই। যখন দেখতে ইচ্ছা হবে আমায় বলবে..আমি তোমার সামনে এসে দাড়াবো।”
“আপনি যে কি বলেন না। প্রথমদিন দেখে আপনায় কত গম্ভীর ভেবেছিলাম। আর এখন আপনার এ কোন রূপের সাক্ষী হচ্ছি!”
জাদ মানতাশাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,
“গম্ভীর আমি বাইরের মানুষের কাছে। কিন্তু নিজের স্ত্রীর কাছে কিসের গাম্ভীর্য? তোমার কাছে আমি একদম খোলা বইয়ের মতো।”
বলেই আরক্তি মেশানো চোখে তাকায় মানতাশার দিকে। মানতাশাকে একদম নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। অতঃপর আরো কাছে এসে ভালোবাসায় মাতিয়ে তোলে মানতাশাকে।
ভালোবাসায় মেশানো কিছু মুহুর্ত পার করার পর মানতাশার কপালে হালকা করে একটা চুমু খায়। মানতাশাকে নিজের বুকের কাছে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মানতাশা জাদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমার আজকাল অনেক ভয় লাগে, জানেন আপনি?”
জাদ জিজ্ঞেস করে,
“ভয় কেন?”
মানতাশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“কেন জানি আমার মনে হয়…আমার কপালে কি এত সুখ সইবে? কোন বিপদ নেমে আসবে না তো আবার!”
জাদ বলে,
“যখনই কোন বিপদ তোমার উপর ঘনিয়ে আসবে তখন আমি ঢাল হয়ে দাঁড়াবো। আমাকে এড়িয়ে কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”
মানতাশা মুচকি হাসে। সে জাদের মধ্যেই নিজের খুশি খুঁজে নিয়েছে। এখন জাদকে ঘিরেই বাকি জীবনটা খুশি খুশি কাটিয়ে দিতে চায়। মানতাশার এই চাওয়া কি সত্যি কখনো পূরণ হবে? নাকি এই চাওয়া আজীবন অপূর্ণই থেকে যাবে!
★★★
৮ মাস পর,
চোখের পলকে দেখতে দেখতে যেন অনেক সময় পেরিয়ে গেল। দীর্ঘ ৮ টি মাস পেরিয়ে গেলো। এই ৮ মাস ছিল অনেক স্বস্তি এবং শান্তির।
মানতাশা জাদের সাথে নিজের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় কাটিয়েছে এই ৮ মাসে। উমায়রার উপরেও এই ৮ মাসে বিপদের কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে নি। জাইনের সাথে তার সম্পর্কও এখন অনেক গভীর।
এত সবকিছুর মাঝে হাফসাও যেন এই ৮ মাস অনেকটাই নীরব। মানতাশা তো ভেবেছিল হাফসা আবারো কোন চক্রান্ত করবে উমায়রা এবং তার সন্তানের ক্ষতি করার জন্য কিন্তু এমন কিছুই হয়নি।
তবুও মানতাশা কেন জানি নিশ্চিত হতে পারে না। তার মনে হয় হাফসার এই নীরবতা বড় কোন প্রলয়ের পূর্বাভাস।
সালমা বেগম, হুসনেয়ারা বেগম, উমায়রা, মানতাশা সবাই মিলে একসাথে গল্প করছিল। তাদের গল্পের মূল প্রেক্ষাপট ছিল উমায়রার অনাগত সন্তানকে নিয়ে। একেকজন তো তার নামও ঠিক করতে শুরু করে দিয়েছে। সবাই যখন একেক নাম ঠিক করছিল তখন মানতাশা হঠাৎ বলে ওঠে,
“ওর নাম উসমান রাখলে কেমন হয়? উমায়রা আপুর নামের সাথে নামটার মিলও আছে।”
নামটা উমায়রার বেশ পছন্দ হয়। কিছুদিন আগেই আল্ট্রাসোনোগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে উমায়রা ছেলে সন্তানের মা হতে চলেছে। এজন্যই এই নামটির কথা বলে মানতাশা। উমায়রা বেশ আনন্দের সাথে বলে,
“তুমি চমৎকার নাম ভেবেছ। আমার ছেলের নাম আমি এটাই রাখব।”
বলেই নিজের পেটে হাত বুলায়। তখনই জাইন সেখানে চলে এসে উমায়রাকে এত খুশি দেখে নিজেও খুশি। নিজের সন্তানের উছিলায় হলেও জাইন উমায়রাকে ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছে। তাই উমায়রাকে খুশি দেখলে ইদানীং তার মনও খুশি হয়ে যায়। জাইন উমায়রার কাছে আসে। এসে বলে,
“এত হাসির কারণ কি?”
উমায়রা জাইনকে দেখে হেসে বলে,
“আমাদের অনাগত ছেলের নাম ঠিক করলাম। নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”
“তো কি নাম ঠিক রাখলে?”
“উসমান!”
“বাহ! বেশ সুন্দর নাম। আমাদের ছেলের নাম এটাই রাখা হবে।”
জাইনের কথা শুনে উমায়রার খুশি যেন আরো বেড়ে যায়। এত আনন্দের মাঝেও দূর থেকে একজনের মনে চলছে ঝড়ের তাণ্ডব। হাফসা বেগম দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে রেগে বলে ওঠে,
“এখনই যা আনন্দ করার করে নেও তোমরা। খুব শীঘ্রই তোমাদের এইসব আনন্দ চিরতরে হারিয়ে যাবে।”
★★★
“আপনার এই সময় আমেরিকা না গেলে হয়না?”
বেশ অভিমান নিয়ে জাদের উদ্দ্যেশ্যে এই কথাটা বলে মানতাশা। জাদ টাই পড়তে পড়তে হালকা হেসে বলে,
“যেতে যে আমাকে হবেই। অনেক জরুরি একটা মিটিং আছে। আমি না গেলে যে মিটিংটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তুমি তো জানোই আমেরিকার একটা কোম্পানি আমার কোম্পানিতে ইনভেস্ট করতে ইন্টারেস্টেড। আর এতে আমারই লাভ। তাই এই মিটিংটা হওয়া খুব দরকার।”
মানতাশা একটু মন খারাপ করে বলে,
“তো আপনি ফিরছেন কবে?”
“বেশি দেরি করব না। এক সপ্তাহের মধ্যেই ফিরে আসবো।”
“মনে থাকে যেন। এক সপ্তাহের এক দিন বেশি হলে কিন্তু আমি আপনার সাথে আর কথাই বলবোনা।”
“ঠিক আছে আমার মহারাণী, আমার মনে থাকবে। এবার একটু আদর করতে দিন তো। আর ৭ দিন আপনাকে আদর করতে পারব না, ভাবলেও কষ্ট হচ্ছে।”
“আদর পরে করবেন, আগে আমার কথা শুনুন। ওখানে গিয়ে একদম বাইরের খাবার খাবেন না। আপনার তো আবার ফাস্টফুড অনেক পছন্দ। ওসব খেয়ে শরীর খারাপ করবেন না। আর মোস্ট ইম্পোট্যান্টলি..কোন বিদেশিনী মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবেন না।”
“আরে এত জেলাস হচ্ছ?”
“হবো না তো কি? আমেরিকার মেয়েরা যা গায়ে পড়া। আমার এত সুদর্শন স্বামীকে নিয়ে চিন্তা হবে না?”
“ঠিক আছে..ঠিক আছে।”
বলেই হেসে ফেলে মানতাশা। জাদের হাসিটা মুগ্ধ করার মতো। হাসলেই গালে টোল পড়ে যায়।
★★★
জাদকে বিদায় দেয়ার জন্য এয়ারপোর্ট অব্দি আসে মানতাশা। তার মনটা ভীষণ ভার হয়ে আসছে। জাদের ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে তাই সে মানতাশাকে শেষবারের মতো বিদায় জানায়। মানতাশা জাদের দিকে আকুল দৃষ্টিতে তাকায়। কেন জানি তার মনে ভীষণ কষ্ট অনুভূত হচ্ছে। যদিও জাদ বলেছে এক সপ্তাহের মধ্যেই আবার ফিরে আসবে তবুও তার মনে হচ্ছে আজ যেন তাদের দীর্ঘ বিচ্ছেদের সূচনা হচ্ছে। এই মনে হওয়ার কার জানে না মানতাশা।
এসব ভাবনা পাশ কাটিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। ততক্ষণে জাদও ফ্লাইটে করে রওনা দিয়েছে।
মানতাশার গাড়িড়া রওনা দিতেই পেছন থেকে কেউ একটা গাড়ি থেকে নেমে আসে৷ নিজের চোখের সানগ্লাস খুলে গাড়িতে হেলান দিয়ে বলে,
“আমি ফিরে এসেছি মানতাশা। নিজের দেয়া কথা রাখতে। এখন তো তোমার স্বামীও তোমার কাছে নেই..আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে তোমায়?”
বলেই হাহা করে হাসতে থাকে আবু সুফিয়ান। তখনই তার ফোনে কারো ফোন আসে। সুফিয়ান ফোনটা রিসিভ করতেই হাফসা বেগম বলে ওঠে,
“আজ রাতে বাড়ি একদম ফাকা থাকবে। আমি ও জাইন দুবাই রাজপ্রাসাদে থাকব আমিরের আমন্ত্রণে তার সাথে রাতের ডিনার করব। আর আমার শ্বশুরও অফিসের কাজে বাইরে যাবে। আমার চাচা শ্বশুর এবং শ্বাশুড়ীও তাদের ছেলেকে নিয়ে বাইরে আছে। বাড়িতে থাকবে শুধু আমার পঙ্গু শ্বাশুড়ি, গর্ভবতী সতীন আর মানতাশাম বাড়ির নিরাপত্তা যাতে কম থাকে সেই ব্যবস্থা করে দেব। বাকিটা আপনি বুঝে নিন।”
বলেই ফোন রেখে দেয়। সুফিয়ান বাকা হেসে বলে,
“এই দিনটার অপেক্ষাতেই ছিলাম।”
মানতাশা বাড়িতে পৌঁছে দ্রুত রুমে চলে যায়। কয়দিন থেকেই শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। মাথা ব্যাথা করছে এবং বমি বমি ভাব। বেশ দূর্বল বোধ হচ্ছে। তাই ভাবলো এখন একটু বিশ্রাম নেবে কিন্তু আবারো গা গুলিয়ে উঠল। মানতাশা বমি করে এসে বিছানায় গা ছেড়ে দিলো। জাদ ফিরলে ব্যাপারটা জানাতে হবে।
চলবে….