সুখ অমৃত পর্ব-২২

0
131

#সুখ_অমৃত
#পর্ব_২২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মানতাশা নিজের কক্ষে চলে যাবার পরই জাইন এলো হাফসার সামনে। তাকে এভাবে হাসতে দেখে বেশ রেগে বলল,
“আমার ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে আর তুমি এভাবে হাসছ!”

তারপর একটু ভেবে বলল,
“আচ্ছা, তুমি নেই তো এসবের পেছনে?”

হাফসা আচমকা জাইনের কলার চেপে ধরে। তার কোলে থাকা ছোট্ট উসমান ভয়ে কেঁদে দেয়। হাফসা চরম আক্রোশ নিয়ে বলে,
“যদি নিজের আর নিজের ছেলের ভালো চাও তাহলে আমার পথে বাধা হতে এসো না। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করব। তোমার বাবা তার সমস্ত অর্থ-সম্পদ আমার নামে করে দিয়ে গেছেন। তাই এখন সব কিছুর মালিক শুধু আর শুধু আমি। তোমরা যে এখানে আছ সেটাও আমার অনুগ্রহ তে। তাই বিদ্রোহ করার চেষ্টা করো না।”

জাইম দমে না গিয়ে বলে,
“কি পেয়েছ টা কি তুমি? এত স্বৈরাচারী মনোভাব কেন তোমার?”

হাফসা বেগম হাসতে হাসতে বলে,
“একদম ঠিক ধরেছ। আমি সবকিছু নিজের ইচ্ছামতোই চাই। আমার মধ্যে লোভ আছে ক্ষমতার লোভ…আর তার জন্য আমি সব করতে পারি সব..এর কিছু ঝলক তুমি আর এক সপ্তাহ পরই দেখতে পারবে।”

বলেই হাফসা বেগম চরম ক্রোধের সাথে চলে আসে ঐ স্থান থেকে। জাইন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“জানি না, তুমি কোন ধ্বংসের খেয়াল মেতে উঠেছ এবং এর পরিণামই বা কি হবে!”

অতঃপর নিজের সদ্যজাত শিশুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“কিন্তু আমাকে আমার ছেলের জন্য হলেও চুপ থাকতে হবে।”

১ সপ্তাহ পর,
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলো। এই ৭ টা দিন মানতাশার কাছে ছিল একজন দুঃস্বপ্নের মতো। কতবার থানায় দৌড়াদৌড়ি করেছে, কত উকিলের কাছে গেছে কিন্তু কেউ তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায় নি। কারণ জাদের বিরুদ্ধে শক্তপোক্ত প্রমাণ থাকায় কেউ তার হয়ে কেস লড়তে চাইছে না। আবার রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জাদের নামে মামলা করা হয়েছে তাই মানতাশা এই ব্যাপারে নিরুপায়। মানতাশা শেষে অনেক আশা নিয়ে আজ এসেছে একজন স্বনামধন্য উকিল খালিদ বিন ওসমানের সাথে দেখা করতে। মানতাশা ওনার সাথে দেখা করতে এলে খালিদ বিন ওসমান বলেন,
“বলুন আপনি কি বলতে চান।”

“আমি তো আপনার সেক্রেটারিকে সবটাই বলেছি।”

“হুম, শুনেছি আমি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই।”

“কেন জনাব? আমার স্বামী কি এমন অপরাধ করেছে? সে তো কোন নিরপরাধ মানুষের ক্ষতি করেনি, অন্যায়-দূর্নীতিও করেনি না তো রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজ করেছে। একটি গ্যাং তৈরি করেছিল নিজের এবং তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য। এটাই কি খুব বড় অপরাধ হয়ে গেছে?”

“দেখুন,আমি বুঝতে পারছি আপনার ব্যাপারটা। কিন্তু বিষয়টা এত সহজ না। এটা এই দেশে একটা নিষিদ্ধ এবং আইনবিরোধী একটা কাজ। তাই এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। আইনের এমন কোন ধারা নেই যার মাধ্যমে আপনার স্বামীকে বাঁচানো যাবে।”

মানতাশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। সে বুঝতে পারল তার হাতে আর কিছু নেই। মানতাশা উঠে দাঁড়ালো। কিছু দিন থেকে নিজেকে বেশ দূর্বল লাগছে। প্রেগ্যান্সির অবস্থায় এত দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে,ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না। তাই বোধহয় খুব ভেঙে পড়েছে। মানতাশা উঠে দাঁড়িয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো।

★★★
মানতাশা বাড়িতে প্রবেশ করতে যাবে এমন সময় হাফসা বেগম তার সম্মুখে এসে বলে,
“আর এক পাও সামনে বাড়াবে না।”

মানতাশা ওখানেই থেমে যায়। মাথা উঁচু করে হাফসার চোখে চোখ রেখে বলে,
“আপনি আমাকে বাঁধা দেয়ার কে?”

হাফসা ভীষণ রেগে যায় মানতাশার কথা শুনে। দৌড়ে গিয়ে মানতাশার গলা চেপে ধরে বলে,
“এই বাড়ি এখন থেকে আমার নামে। তাই আমি ঠিক করব এখানে কে থাকবে আর কে থাকবে না..”

“এই বাড়ি আমার স্বামীর এখানে আমারও অধিকার আছে..”

মানতাশার জবাবে হাফসা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।

“তোমার স্বামীর নামে এই বাড়ির ছিটেফোঁটা অংশও নেই। আমার শ্বশুর মশাই সবটাই আমার নামে করে দিয়েছেন। আর তাই এখন থেকে আমিই সিদ্ধান্ত নেব এখানে কে থাকবে আর কে থাকবে না। আমি চাই না আমার বাড়িতে কোন অপরাধীর বউ আর তার বংশধরেরা থাকুক।”

তারপর মানতাশার পেটের দিকে আঙুল তাক করে বলে,
“এর বাবা তো একটা জঘন্য অপরাধী। এও নিশ্চয়ই এমন হবে।”

মানতাশা রেগে বলল,
“খবরদার আমার সন্তানকে নিয়ে কোন খারাপ কথা বলবে না। ও একদম নিষ্পাপ।”

হাফসা মানতাশার চুল টেনে ধরলো জোরে। মানতাশার আর্তনাদে পুরো আকাশ বাতাস ভারী হয়ে গেল। হাফসা মানতাশাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলল। অল্পের জন্য মানতাশা বড় আঘাত থেকে বেঁচে গেল। নাহলে এক্ষুনি তার এবং তার সন্তানের বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেত।

এদিকে চেচামেচির শব্দ শুনে জাইনও সেখানে ছুটে এলো কি হয়েছে তা দেখার জন্য৷ এসে হাফসার এই নিষ্ঠুরতা দেখে সে বলে উঠল,
“এসব কি করছ তুমি হাফসা? মানতাশার সাথে তুমি এমন করতে পারো না। এই বাড়িতে ওর অধিকার আছে।”

“এই বাড়িতে আমি ছাড়া আর কারো কোন অধিকার নেই। তুমি খবরদার ওর হয়ে কথা বলতে আসবে না। নাহলে তোমাকে আর তোমার ছেলেকেও আমি বাড়ি থেকে বের করে দেব। তারপর ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরো।”

হাফসার এই ধমকিতে জাইন বাধ্য হয়ে চুপসে যায়। মানতাশার দিকে অপাগর দৃষ্টিতে তাকায়। তার চোখে অপরাধবোধের গ্লানি স্পষ্ট। তার ভাই তাকে মানতাশার খেয়াল রাখতে বলেছিল কিন্তু সেটা সে করতে পারল না। এদিকে হাফসা নির্দয়তার সব সীমা অতিক্রম করে মানতাশার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো। তারপর জাইনকে ধমক দিয়ে বলল,
“যদি তুমি ঐ মেয়েকে কোনভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করো তাহলে আমি তোমাকে আর তোমার ছেলেকেও এভাবেই বাড়ি থেকে থেকে বের করে দেব।”

★★★
মানতাশা জাদের নিজস্ব ফ্ল্যাটে আসে। কিন্তু এখানে এসে দেখতে পারে পুলিশ যায়গাটা খালি করতে। সে সামনে এগিয়ে যেতে নিতেই কয়েকজন তাকে বাধা দেয়। মানতাশা বলে,
“এটা আমার স্বামীর ফ্ল্যাট। আপনারা আমাকে এভাবে বাধা দিতে পারেন না।”

একজন পুলিশ অফিসার বলেন,
“এটা একজন অপরাধীর ফ্ল্যাট যাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। তাই সরকার থেকে অনুমতি দেয়া হয়েছে এই অপরাধীর সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার জন্য।”

পুলিশের বলা সম্পুর্ণ কথাটা মানতাশার কানে আসে না। তার কানে তো শুধু একটা লাইনই বাজতে থাকে, “জাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে” মানতাশা আর নিজেকে সামলাতে পারে না। তার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসতে থাকে। চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসতে থাকে। সে সেখানেই জ্ঞান হারায়।

এদিকে,
অন্ধকার জেলে বসে ঈশান কোণে তাকিয়ে একটা ছোট গর্তের মধ্যে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে জাদ। একটু আগেও আকাশ রোদে ঝলমল করছিল কিন্তু হঠাৎ করেই কেমন যেন অন্ধকার নেমে এলো আকাশে। জাদ সেদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল এর মাধ্যমে কি তার জীবনে নেমে আসা অন্ধকারকেই উপমিত করা হলো!

জাদ চোখ বন্ধ করে মানতাশার মুখশ্রীটা মনে করলো। মনে পড়ে গেলো নিজের অনাগত সন্তানের কথা। তাদের দেখা কি আর কখনোই পাবে না ও! এসব ভাবতে ভাবতেই জাদের চোখে জল চলে এলো। বদ্ধ কারাগারে সে চেচিয়ে উঠে বলল,
“মানতাশা আমার মানতাশা….”

চলবে….