#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৫০
পার্ক থেকে বেরিয়ে ওরা গাড়িতে বসে। ফাইয়াদ হাতে একটা কোক নিয়ে প্রিয়ন্তীর পাশে বসে পড়ল নির্বিকার ভঙ্গিতে। আকস্মিক পাশে একটা পরপুরুষের অস্তিত্ব অনুভব করতেই প্রিয়ন্তী ভড়কে গেল, কেঁপে উঠল। ফাইয়াদ হাসল ওর ভয়ার্ত চেহারা চোখে পড়তেই। কানের কাছে মুখ নিয়ে খুবই দৃঢ় কন্ঠে বলল,
‘ বেঙ্গলি মেয়েরা তোমার মটো ভীতু হয় প্রিয়ন?’
প্রিয়ন্তী তাজ্জব বনে গেল। হাসবে নাকি রাগবে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে সে। মটো!মত কে মটো বানিয়ে দিল শেষমেশ এই জার্মানির বাচ্চা।
সাফারাত ড্রাইভ করছে,পাশের আসনে চৈত্রিকা। জানালা দিয়ে
বাহিরের দৃশ্য দেখেছে সে। রাস্তায় তেমন মানুষ নেই। জনমানবহীন। প্রায় মিনিট দশেক পেরিয়ে ওদের গাড়ি এসে থামল একটা এপার্টমেন্টের সামনে। ফাইয়াদ আগেভাগে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। সাফারাত নামতেই ওর হাতে একটা চাবি ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘ ফ্ল্যাটের চাবি। ‘
‘ লট অফ থ্যাংকস ফাইয়াদ। ‘
চৈত্রিকা ও প্রিয়ন্তীকে নিয়ে সাফারাত লিফটে উঠল। পিছু পিছু ফাইয়াদ। পঞ্চদশী প্রিয়ন্তী বার কতক তীররেখা নজরে,আঁড়চোখে চাইল ফাইয়াদের দিক। লিফট থেকে বেরিয়ে সাফারাত ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ঢুকে পড়ল। অবাকতার বিষয় হলো চৈত্রিকা কিংবা প্রিয়ন্তী কাউকেই ঢুকতে দিল না। দরজার বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখে ওদের। মিনিট পেরুতেই দরজা খুলে বেরিয়ে আসে হাতে একটা কালো কাপড় নিয়ে। বিনা বাক্যে চৈত্রিকার চোখ বেঁধে দিয়ে ওকে অগ্রসর হতে বলে। চৈত্রিকা হতভম্ব, কিংকর্তব্য বিমূঢ়,তবে দ্বিরুক্তি করল না। অন্ধকারাচ্ছন্ন চক্ষুদ্বয় নিয়ে ও ভরসা যোগ্য মানুষ টার হাত ধরে ধীরে ধীরে ফ্ল্যাটের ভিতরে আসে। থেমে থায় একটা সময়। সাফারাত চোখের বাঁধন খুলে দিল। আবছা আবছা অস্পষ্ট নেত্র যুগলে চৈত্রিকা অবলোকন করলো একটা সাজানো গুছানো কক্ষ। বহুমূল্যের আসবাবপত্র দ্বারা ভরাট পুরো কক্ষ। ওর বিস্ময় বাড়িয়ে দিয়ে সাফারাত সাবলীল কন্ঠে বলে উঠল,
‘ এটা আমাদের ফ্ল্যাট চৈত্র। আমরা এখানে থাকব। ‘
নিমিষেই চৈত্রিকার কপালে ভাঁজ পড়ল। তার মস্তিষ্কে সর্বপ্রথম যেই ভাবনা উদয় হলো তা হচ্ছে আলো বেগমের বারংবার বলা কথাটা। তিনি চান সাফারাত, আয়ান সবাইকে নিয়ে সুন্দর একটা পরিবার। যেই মানুষ টা মায়ের মতো আগলে রেখেছে, কয়েক মাস দেখতে না পেয়ে ছুটে গিয়েছে বাংলাদেশ, সাফারাত তার থেকেই দূরে থাকতে চাইছে!বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথ খুঁজে ফেলেছে! চৈত্রিকার কন্ঠনালি যেন তালাবদ্ধ হয়ে পড়ল। উন্মুক্ত হয়ে উচ্চারিত হলো না একটা শব্দ কিংবা বাক্য। বাকরুদ্ধ চৈত্রিকা মুগ্ধ লোচনে পুরো ফ্ল্যাট টা ঘুরে দেখল। ফ্ল্যাটে চারটে রুম। কিচেন রুমের পাশেই একটা বড় বারান্দা। গুটিগুটি পায়ে চৈত্রিকা সেই বারান্দায় আসে। মুহুর্তেই এক পশলা বৃষ্টির ন্যায় দমকা হাওয়া চৈত্রিকার সমস্ত কায়া স্পর্শ করে গেল। খোলা চুল উড়ে এসে পড়ে ললাট জুড়ে। চৈত্রিকার সরানোর জন্য উদ্যত হলে আঁটকে গেল হাত। কপাল পর্যন্ত পৌঁছালো না। একটা হাত ওর সমস্ত কপালের, কর্ণ ধারের অলক সরিয়ে গুঁজে দিল কানের পিঠে। লহু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ফ্ল্যাট টা আপনার পছন্দ হয়েছে চৈত্র?’
চৈত্রিকা ঠোঁট চেপে নিরুত্তর রয়ে যায় কিয়ৎপরিমাণ সেকেন্ড, মিনিট,সময়। মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু খালামণি কি ভাববেন সাফারাত? উনি তো চান আমরা একসাথে থাকি। ‘
‘ কিন্তু আমি চাই না। আমি আপনাকে ও প্রিয়ন্তীকে নিয়ে থাকতে চাই। উনার চাওয়ার দাম কেন দিতে হবে আমার?’
চৈত্রিকা প্রতিবাদ করে বলে উঠল,
‘ উনি আপনাকে মায়ের মতো আদর দিয়েছেন সাফারাত। ‘
সাফারাতের চোখ জ্বালা করে উঠল। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই চৈত্রিকা পিছিয়ে গেল একটুখানি। ভয়ার্ত চক্ষু মেলে ধরল। কিছু বলতে নিলে সাফারাত দ্বিরুক্তি করে রোষপূর্ণ স্বরে চাপা গর্জন করে বলল,
‘ মায়ের মতোন। মা নই আমার। ‘
রাগমিশ্রিত এই স্বরে চৈত্রিকার ভূ তল কাঁপল ক্ষীণ। ঈষৎ বিস্ফোরিত হয়ে এলো নয়নজোড়া। কোনো ক্রমেই মানতে পারছে না ও সাফারাতের গলায় উচ্চারিত শেষোক্ত বাক্য খানা। এ কোন সাফারাত! যার চোখে আলো বেগমের জন্য অজস্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা দেখেছিল মাত্র দু’টো মাস পূর্বে বাংলাদেশে, এই গম্ভীর পুরুষ যেন একদমই সেই চরিত্রের ব্যতিক্রম। দু নেত্রে কেবল ঘৃণা। ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো চৈত্রিকার। সাফারাত কি বুঝল কে জানে! তৎক্ষনাৎ ভিতর হতে পানি নিয়ে এসে চৈত্রিকার মুখের সামনে ধরল। ঢকঢক পানি পান করে শরীরের ভর ছেড়ে দিল চৈত্রিকা শক্ত, পাথরের মতো বক্ষে। সাফারাত দৃঢ়বন্ধনে বেঁধে নিল। ক্রমাগত চুমু খেল চৈত্রিকার মাথায়,গালে,কপালে। নিশ্চুপ চৈত্রিকা পিটপিট করে দেখতে থাকল প্রিয় মানুষ টার অস্থিরতা। কর্ণকুহরে ঝংকার তুলে প্রবেশ করে– ‘ আত্মীয়তার সম্পর্কের বেইমানি টা আমি আর নিতে পারছি না চৈত্র। ‘
চৈত্রিকার অন্তস্থল নড়ে উঠল। বিষাদ, বেদনার স্পষ্ট আভাস যেন সাফারাতের কন্ঠে। কে আবার বেইমানি করল?
______________
দুপুর নাগাদ চৈত্রিকা,সাফারাত, প্রিয়ন্তী আয়ানদের বাড়িতে ফিরে আসে। ফাইয়াদ ওদের সাথে লাঞ্চ সেড়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় চৈত্রিকা ধন্যবাদ জানায় ফাইয়াদকে ওদের জন্য এত সুন্দর একটা ফ্ল্যাট খুঁজে বের করেছে বিধায়। মূলত সাফারাতের কথামতোই ফাইয়াদ এই কাজটা করে। আসার পর থেকে প্রিয়ন্তীর ফাইয়াদের বলা একটা কথা মনে পড়ে হাসি পাচ্ছে। কি সুন্দর করে নরম স্বরে ছেলেটা বলে গেল –‘ আবার দেকা হবে প্রিয়ন। ‘ কথাটা কেউ শুনতে পায় নি। শ্রবণ হয় শুধু প্রিয়ন্তীর। খুবই ক্ষীণ স্বরে ওর কানের নিকটে কৌশলে কথাটা বলে যায় ফাইয়াদ। ফাইয়াদের ওমন আজব ব্যবহারের কারণ প্রিয়ন্তীর অজানা। তবে ফাইয়াদের কারণেই বহুকাল,বহুদিন পর হাসতে পেরে সে নিজেই চমকিত।
চৈত্রিকা বিছানায় বসে আয়মানের সাথে টুকটাক আলাপন চালাচ্ছে। পিচ্চি একটা ছেলে অথচ বেশ বুদ্ধিমান সে। এবং মেধাবীও বটে। তখনই সাফারাতের ফোন বেজে উঠে। ওয়াশরুমে সাফারাত। অগত্যা চৈত্রিকা হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে দিহান ভিডিও কল দিয়েছে। মিমের কথা মনে পড়তেই চট করে কলটা রিসিভ করল। নিমেষে একটা হাসি মাখা,আদুরে মুখ ভেসে উঠল মোবাইলের স্ক্রিনে। মিম আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে বলে উঠল,
‘ তুমি জার্মানি গিয়ে একদিনেই আরো দ্বিগুণ সুন্দরী হয়েছ আপু। ‘
‘ ভালো আছি কিনা জিজ্ঞেস না করে এমন বলছিস?’
অভিমানহত স্বর চৈত্রিকার। মিম তড়তড় করে বলে উঠে,
‘ তোমার সৌন্দর্য বলে দিচ্ছে তুমি ও তোমার পেটের টা ভীষণ ভালো আছে। বাই দ্যা ওয়ে আপু তোমার পাশে এই হ্যান্ডসাম বয় কি করছে?’
আয়মান এতক্ষণ মোবাইলের দিক চেয়েছিল ফ্যালফ্যাল করে। মিমের সাথে ওর বেশ সখ্যতা হয়েছে বাংলাদেশ থাকা কালীন। গম্ভীর স্বরে বললো,
‘ হাই রিদিতা আন্টি। ‘
মিম ভ্রুঁ কুঁচকালো। যেখানে সবাই ওকে মিম বলে ডাকে এই ছেলে ডাকে রিদিতা। ওর পুরো নাম রিদিতা আহি মিম। কিন্তু সবাই মিম ডেকেই অভ্যস্ত।
‘ কেমন আছো আয়মান? আমার ছেলের বউকে পাহারা দিচ্ছো?’
আয়মান অবুঝ মনে প্রশ্ন করে,
‘ আপনার ছেলের বউ কে আন্টি?’
‘ আপুর পেটে যে আছে ওই তো আমার ছেলের বউ। ‘
‘ কিন্তু আপনার তো ছেলে নেই। ‘
আয়মানের চিন্তিত কন্ঠস্বর শুনে মিম ঢের মজা পেল। বিস্তর হেসে বললো,
‘ এখন নেই। একবছর পর থাকবে। বউ এক বছর সিনিয়র হলে কিচ্ছু হবে না। সুন্দরী হলেই চলবে। ‘
আয়মান বিছানা থেকে নেমে গেল সাথে সাথে। চৈত্রিকার পেটের দিকে এক পলক চেয়ে দরজার কাছে চলে যায়। চৈত্রিকা আয়মানের এমন কান্ড দেখে প্রশ্ন করে,
‘ কোথায় যাচ্ছো আয়মান? ‘
আয়মান স্থির দৃষ্টি পাত করে প্রতুত্তর করলো,
‘ মাম্মার কাছে। মাম্মাকে বলব আমাকে আজকেই একজন ফাইটার ম্যানের কাছে নিয়ে যেতে। উনার কাছে আমি ফাইট করা শিখব। সুখ কে প্রটেক্ট করতে হবে তাই। ‘
মিম,চৈত্রিকা দু’জনের মুখ হা হয়ে গেল। আয়মান এতটুকু বয়সে একটা মেয়ের জন্য যে কি-না এখনও দুনিয়ায় আসে নি তার জন্য এত সিরিয়াস!এখন তো চৈত্রিকার ভয় হয় মেয়ে না হয়ে যদি ছেলে হয়ে যায়। এই ছেলের কি হবে!
.
.
শর্বরী ধরণীর দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র। সাফারাত নেই রুমে। আয়ানের সাথে বাগানে বসে কথা বলছে। কথার ফাঁকে ফাঁকে হাসছে মৃদু। সেদিকটায় নির্নিমেষ দৃষ্টে চেয়ে আছে চৈত্রিকা বিশাল কাঁচের উপর দিয়ে। একটা চিন্তা ওর মস্তিষ্ক অচল করে দিচ্ছে বারংবার। ঠাহর করতে পারছে না আলো বেগমের প্রতি সাফারাতের অকস্মাৎ ঘৃণার কারণ। আলো বেগম ব্যতীত বাকি সকলের সঙ্গে ঠিকঠাক কথা বলছে। কিন্তু ওনার সাথেই এমন আচরণ কেন?
সুফিয়া বেগমের দাফন কার্যকর্ম সম্পন্ন হওয়ার পর সেদিন সাফারাত তো সবকিছুই খুলে বলে। কোনো কিছুই লুকায় নি। চৈত্রিকার হুট করে মনে পড়ল সাফারাত দ্বিতীয় খু*নির বিষয় টা স্কিপ করে যায়। চৈত্রিকা সুফিয়া বেগমকে সেই ফোন আলাপের পর থেকেই সন্দেহ করে। পরে সুফিয়া বেগমের অশ্রুসিক্ত কন্ঠে, আকুতি শুনে বিশ্বাস করলেও ফারুক এহমাদকে যেদিন খুঁজতে বের হয় ওনাকে বলে কিন্তু উনি সাফারাতকে বলে দেয় বাহিরে যাওয়ার কথা সেদিনই চৈত্রিকা বুঝতে পারে সুফিয়া বেগম ছলনাময়ী। উনি সাফারাত থেকে ওকে সরাতে চাইছে। এসব বুঝেও চৈত্রিকা চুপ থাকে পুরো সত্য জানার অপেক্ষায়। আলো বেগম যখন বলেন সিয়ার মৃ’ত্যুর দিন সুফিয়া হসপিটালে ভর্তি ছিলেন হার্ট অ্যাটাক জনিত কারণে তখন আরো সন্দেহ দানা বাঁধে। ঘটনা কতটুকু সত্য তা জানার জন্য চৈত্রিকা সেই হসপিটালে যায় সাফারাতের এক্সিডেন্টের দিন যেখানে সুফিয়া বেগম সিয়ার মৃ’ত্যু’র দিন ভর্তি ছিল। সেখানে গিয়ে জানতে পারে সুফিয়া বেগমের সেদিন কোনো হার্ট অ্যাটাক হয় নি বরং সামান্য বুকে ব্যাথা হয়। কিন্তু তিনি ডক্টরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে হসপিটালে থাকেন। অবশ্য এই সত্য টা বের করতে চৈত্রিকার দুর্নীতির পথে চলতে হয়েছে। সেই ডাক্তারকে টাকা দিতে হয়েছে সত্যটুকু বলার জন্য। সুফিয়া বেগমের ফোনে একজনকে বলা যে আমার কারণেই তুই আমার ছেলের বউ হতে পেরেছিস এটাই ছিল ওনার উপর সিয়ার মৃ*ত্যুর পিছনে হাত আছে বলে সন্দেহ করার প্রথম কারণ। চৈত্রিকা পরবর্তীতে বুঝতে বাকি থাকে না এই কথাটা ফারুক এহমাদের দ্বিতীয় ওয়াইফকে বলেছেন সুফিয়া। তাছাড়া তিনিই সিয়ার মৃ*ত্যুর কয়েকদিন বাদেই ভাইকে রাজি করিয়ে ওনার মেয়েকে ফারুকের বউ বানান। এতই যদি সাফারাতের মায়ের প্রতি উনার মায়া থাকত তাহলে এসব কেন করতেন তিনি?প্রশ্নটা জাগতেই চৈত্রিকার মাথায় আসে মিনার মায়ের কথা। এহমাদ বাড়িতে যেদিন অগ্নিকান্ড হয় সেদিন মিনার মা উপস্থিত ছিল। তিনি অবশ্যই সিয়ার দেহে আগুন লাগতে দেখেছে?তাহলে কেন বাঁচানোর চেষ্টা করেন নি?চৈত্রিকা যা বুঝার বুঝে যায়। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে — সাপও মরল লাঠিও ভাঙলো না। ব্যাপার টা ঠিক এমন হয়েছে। সুফিয়া বেগম অতি সন্তর্পণে, সতর্কভাবে খু*ন করেছে সিয়াকে। নিজ হাতে না হোক, অন্যের মাধ্যমে। মিনার সাহায্য নিয়ে চৈত্রিকা ওর বিছানায় শয্যাশায়ী মা’য়ের নিকট উপস্থিত হয়। চৈত্রিকা একটু জোর দিতেই মিনার মা বলে দেয় সবটুকু। সুফিয়া বেগম কোনোদিনও সিয়াকে পছন্দ করেন নি। ওনার সবসময় ইচ্ছে ছিল ভাইয়ের মেয়েকে ছেলের বউ বানাবেন। শুধু মাত্র টাকার জন্য উপর দিয়ে মায়া দেখাতেন তিনি। একদিন মিনার মাকে টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের প্ল্যান কার্যকর করেন।
#চলবে,,!
#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৫১
সুফিয়া বেগম কোনোদিনও সিয়াকে পছন্দ করেন নি। ওনার সবসময় ইচ্ছে ছিল ভাইয়ের মেয়েকে ছেলের বউ বানাবেন। শুধু মাত্র টাকার জন্য উপর দিয়ে মায়া দেখাতেন তিনি। একদিন মিনার মা’কে টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের প্ল্যান কার্যকর করেন।
মিনার মা ছিলেন সুফিয়া বেগমের ডান হাত। সুফিয়া নিজের সকল জঘ*ন্য কাজ মিনার মা দ্বারাই সম্পন্ন করতেন। এমনই একটা জঘ*ন্য কাজের পরিকল্পনা করতে থাকেন তিনি বহুদিন,বেশ সময় নিয়ে। ছেলের পর*কীয়া সম্পর্কিত বিষয় টা তিনি সিয়ার অবগত হওয়ার আগে থেকেই জানতেন। সিয়া যখন দ্বিতীয় বার গর্ভবতী হয় তিনিই আড়ালে ছেলেকে উষ্কানি দিতেন,যেন সিয়ার উপর নির্ম’ম অত্যাচার করে। এসকল কু’ক’র্মের স্বাক্ষী ছিল মিনার মা। প্রিয়ন্তীর বাবা-মা,প্রিয়ন্তী,পৃথক যখন বিয়ের জন্য নানার বাড়িতে চলে যায় সেই সুযোগ বুঝে সুফিয়া বেগম নিজের মুখ্য চাল চালেন। মিনার মা’কে আদেশ করেন যেই করে হোক কৌশলে সিয়াকে মে’রে ফেলতে হবে। আর এটাই সুযোগ। এতে কারো উপর কারো সন্দেহ হবে না। মিনার মা প্রথমে ভয় পেলেও সুফিয়া বেগমের দেওয়া টাকার লোভে পড়ে যায়। পরিকল্পনা মতে,সুফিয়া বেগম মিথ্যে হার্ট অ্যা’টা’কের বাহানা ধরে হসপিটালেরে ভর্তি হয়ে যান। তখন সারা বাড়িতে সিয়া একা এবং মিনার মা। তার উপর অগাধ বিশ্বাস ছিল সিয়ার। সাফারাতের জার্মানি যাওয়ার পর সিয়ার আপন ও সবথেকে কাছের মানুষ ছিল ফারুক, সুফিয়া বেগম,মিনা। ফারুকের মুখোশ উন্মোচন হওয়ার পর থেকে সিয়া একদম ভেঙে পরে। খাবার পর্যন্ত নামত না তার গলা দিয়ে। সারাক্ষণ একা একা বসে থাকত। সেই সময় টায় সুফিয়া বেগম ভালো মানুষ সাজার নাটক চালিয়ে যায়,সঙ্গে মিনার মা। কারো আত্মার মৃ*ত্যু ঘটাতে হলে নিঃসন্দেহে প্রথমত তার কাছের মানুষ হতে হবে, তৎপরে পিছন হতে ছু’রি গাঁথতে হবে। ঠিক এমনটাই করেছিলেন সুফিয়া বেগম ও মিনার মা।
সময়টা ছিল মধ্যাহ্ন। সিয়া তখন বেলকনিতে বসে। সুফিয়া বেগমকে সকালে একবার দেখে হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরেছে। প্রেগন্যান্ট অবস্থা, মানসিক অসুস্থতা মিলিয়ে নিজের অসুস্থ হবার জোগাড়। তাই হসপিটালে অবস্থান সম্ভব হয়নি সিয়ার। কোনোমতে গোসল সেড়ে বেলকনিতে পাতানো মোড়ায় বসতেই মিনার মা’র আগমন ঘটে। দুপুরের খাবার নিয়ে এসেছেন তিনি একটা থালায়। প্রায় সময় তিনি এটা করে থাকেন। বলাবাহুল্য মিনার মা বয়সে সিয়ার থেকে বড়। মিনা ওনার একমাত্র সন্তান নই,আরো বড় বড় তিন তিনটে ছেলে আছেন ওনার। কিন্তু তিনজনই ওনাকে ফেলে আলাদা, বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের সংসার গড়েছেন। কখনও মা নামক মানুষটার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় নি,আর না ভুলেও একটা বার স্নেহের হাত বুলিয়েছে ছোট বোনটার মাথায়। খাবারের প্লেট টা সিয়ার সামনের টেবিলে রেখে খেয়ে নিতে বলেন তিনি। সিয়া বিনিময়ে ম্লান হাসে। কি নজরকাড়া ছিল সেই হাসিটুকু!মাঝে মাঝে মিনার মা অবাক হয়ে দেখত সিয়াকে। এত সুন্দর হয় কোনো নারী!সাফারাত যেন মায়ের অর্ধ সৌন্দর্য পেয়েছে। উনি প্লেট রেখে ভিতরে এসে লুকিয়ে থাকেন দরজার আড়ালে। খাবার খাওয়ার কয়েক মিনিট পর পরই সিয়া মেঝেতে ঢলে পড়েন। ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়েছিল সুফিয়া বেগমের আদেশক্রমে। অতঃপর সুফিয়া বেগমের পাঠানো একজন লোকের সাহায্যে সিয়াকে কিচেন রুমে শুইয়ে বাহির থেকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চোখের সামনেই যখন সিয়ার দেহে আগুন লাগতে শুরু করে মিনার মা কেটে পড়েন বাহিরে। মিনিট কয়েক বাদে চিল্লিয়ে দারোয়ানকে বলতে শুরু করেন রান্নাঘরে আগুন লেগেছে, সিয়া রান্নাঘরে। দারোয়ান যতক্ষনে পৌঁছান সিয়ার দেহ অর্ধেক জ্বলে যায়। যন্ত্রণায় ছটফট করছিল সিয়া। ছটফট করতে করতে হসপিটালে নেওয়ার পথে তার মৃ*ত্যু ঘটে। একটা মানুষ অগ্নিদাহে শেষ নিঃশ্বাস বিমোচন করে দেয় অথচ সে জানতেই পারে নি তার মনপাজরে থাকা মানুষগুলোই তার এবং তার সন্তানের নি’র্ম’ম মৃ’ত্যু’র কারণ,খু*নি।
মিনার মা’র কাছ থেকে এতটুকু জেনে ঠিক কতক্ষণ, কতক সময় স্থবির,নিস্তব্ধ ছিল চৈত্রিকা ওর সঠিক জানা নেই, তবে ইচ্ছে করছিল গলা টি’পে সেই নি’কৃ’ষ্ট মহিলাকে মে’রে ফেলতে। কাউকে খু*ন করার মতোন অপরাধ ও করতে পারবে না বলে সাথে সাথে বস্তি থেকে বেরিয়ে আসে। পিছু পিছু দৌড়ে আসে ক্রন্দনরত ছোট্ট মিনা।
সেদিন থেকে মিনা ওর মা’য়ের দিকে ফিরেও তাকায় নি। অতটুকু বয়সে তীব্র এক ঘৃ’ণা জন্মে তার মা’য়ের প্রতি।অবহেলায়,অসুস্থতায় বিছানায় শয্যাশায়ী মিনার মা’য়ের মৃ’ত্যু হয় ঠিক তার পরের দিন। সাফারাতের এক্সিডেন্টের পরের দিন সকালে সুফিয়া বেগম দ্বিতীয় বার হার্ট অ্যাটাক করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। হসপিটালে থাকা অবস্থায় স্ট্রোক করেন তিনি। অতঃপর প্যারালাইজড। কথা বলতে পারতেন না মুখ বেঁকিয়ে যাওয়ার ফলস্বরূপ। মাঝে মাঝে বলতেন কিন্তু তাও শুনতে হতো মানুষকে ওনার মুখের কাছে কর্ণ পেতে। বয়স্ক,চামড়া ঝুলে পরা দেহখানায় পচনও ধরে। বিশ্রী, উদ্ভট গন্ধে ওনার রুমে পর্যন্ত যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। কারো অঙ্গ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার কারণেই হয়ত জঘ*ন্যভাবে দিনের পর দিন পঁচে পঁচে ম’রে’ছে সুফিয়া বেগম।
সুফিয়া বেগমের লা*শ বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার পর চৈত্রিকা বিছানার উপর সাফারাতের এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা ওষুধ গুলো গুছিয়ে রাখতে গিয়ে একটা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ও ওষুধের বোতল পায়। ভ্রুঁ যুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে যায় চৈত্রিকার। সাফারাতের এমন কোনো ওষুধ তো দেয় নি ডাক্তার। তাহলে এটা এখানে এলো কি করে?না-কি দিয়েছে? সাফারাত যা গম্ভীর স্বভাবের কিছুই তো বলে না। চৈত্রিকা ডক্টর আদিকে কল দেয়। সাদা বোতলের গায়ে লেখা নামটা বলতেই আদি কিছুক্ষণ থেমে থেকে বলে এটা এক ধরনের বিষ,যা কোনো ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর দেহে গেলে শরীরে শীগ্রই পচন ধরবে। তৎক্ষনাৎ চৈত্রিকার মাথায় আসে সুফিয়া বেগমের কথা। ওনার ডায়াবেটিস ছিল। অল্প কয়েকদিনেই পচন ধরে ওনার সারা শরীরে হুট করে। নিমিষেই চৈত্রিকার মস্তিষ্ক সচল হয়ে যায়। ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সমস্ত কায়া অসাড়তা লাভ করে। আদি অপর পাশ হতে অনবরত হ্যালো বলতে থাকে,কিন্তু তা আর চৈত্রিকার কর্ণধার হয় না। সুফিয়া বেগমের হঠাৎ এমন পরিণতি সাফারাত করেছে?কিন্তু কেন?সাফারাত জানে সুফিয়া বেগম ওর মায়ের খু*নি?চৈত্রিকা ফোন টা কেটে দিয়ে হাতে সিরিঞ্জ টা নিয়ে অপেক্ষায় থাকে সাফারাতের আশায়।
সেদিন দাফন কার্যকর্ম সম্পন্ন হওয়ার পর সাফারাত জানায় সুফিয়া বেগম ওর মায়ের খু*নি সেটা সে জানতে পারে পৃথকের মাধ্যমে। এক্সিডেন্টের ঠিক দু’দিন আগে পৃথকের সাথে জেলে দেখা করতে যায় সে। তখন পৃথক-ই জানায় সবটা। প্রথমত সাফারাত পৃথকের কথা বিশ্বাস করে নি। কিন্তু পৃথক তাকে বাড়িতে গিয়ে ওর রেখে আসা মোবাইলটা চেক করতে বলে, যেখানে সুফিয়া বেগম ও মিনার মা’র কথোপকথন সুযোগ বুঝে রেকর্ড করে ফেলে সে। ভিডিও টা প্রায় এক বছর আগের। তখনও মিনার মা এ বাড়িতে কাজ করতেন। সেখানে স্পষ্ট সুফিয়া বেগম বলছিলেন সিয়াকে আগুনে পুড়িয়েও লাভ হলো না, সাফারাতের জন্য ছেলেটাকে বাড়িতে আনতে পারি না। জার্মানি থেকেও ওর কড়া নিষেধাজ্ঞা ফারুক যেন এ বাড়িতে ঢুকতে না পারে। নিজের রক্ত বলে ছেলেটাকে কিছু করতে বিবেকে বাঁধে।
এই ভিডিওটা করে পৃথক দাদির থেকে টাকা লুটেছে ঢের। সুফিয়া এক প্রকার ভয়ে থাকতেন পৃথকের জন্য। ওর জেলে পড়ায় সবথেকে অধিক খুশি তিনিই হয়েছিলেন। জেলে বসেও ভিডিও টা কাজে লাগে পৃথকের। সাফারাতের অভ্যন্তর ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত করতে পেরেছে এটাই যেন প্রতি/শোধের চেয়ে কম নই। এতটুকু শুনে চৈত্রিকা থম মেরে যায়। এত বড় সত্য টা সাফারাত জানে অথচ একটাবারও নিজের কষ্ট টা কারো সামনে আসতে দেয় নি। নিজের মা’য়ের এত ভয়ংকর মৃ*ত্যু,আপনজনের ধো’কা কতটা নিরবে সয়ে যায় মানুষটা। শেষ পর্যন্ত এই মানুষটাকে পৃথকও ছাড় দিল না। সুযোগ বুঝে আঘা/ত করল।
হসপিটালে থাকাকালীন দিহানের মাধ্যমে সুফিয়া বেগমের শরীরে একজন নার্সকে দিয়ে এই বিষাক্ত মেডিসিন টা প্রবেশ করায় সাফারাত। তার লক্ষ্য সুফিয়া বেগমকে পুরোপুরি মা’রার উদ্দেশ্য ছিল না বরং শরীরের যন্ত্রণা কতটা কষ্ট দেয় তা-ই সুফিয়া বেগমকে উপলব্ধি করাতে চেয়েছে। সাফারাত এতটুকু অব্দি বলে একটাই প্রশ্ন করে– ‘ আপনি কি আমাকে খু*নি ভাবেন চৈত্র?’ চৈত্রিকা প্রশ্নের জবাব দেয় নি উল্টো তার প্রাণপুরুষের বুকে মাথা রেখে বলে — ‘আপনি অনেক স্ট্রং সাফারাত,প্রচন্ড। ‘
কাচের দেয়ালের কাছ হতে সরে বিছানায় বসে পড়ল চৈত্রিকা। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক চিরে। সেদিন সাফারাত এতটুকুই বলে। চৈত্রিকাও আগ বাড়িয়ে দ্বিতীয় খু’নির কথা জিজ্ঞেস করে নি। তার মন বলছে সাফারাত নিজ থেকে সেই মানুষটার নাম বলবে। কি দরকার বারংবার জিজ্ঞেস করে মানুষ টাকে এলোমেলো করে দেওয়ার?সামান্য বাবার অবহেলা সহ্য হয় নি কখনও কিন্তু সাফারাত! কি করে পারছে এই লোক এত বেই’মানি সহ্য করতে? কষ্ট মানুষকে ভেঙে নতুন করে গড়ে কি?নয়ত একটা মানুষ এত গম্ভীর, কঠোর কেমন করে হয়?
____________
চৈত্রিকা গুটি গুটি পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। সিনথিয়ার হাতে একটা বড় ঝুড়ি। ঝুড়িতে বড় বড় চিপসের প্যাকেট, কোল্ড ড্রিংকস আরো কত কি!চৈত্রিকাকে দেখে দ্রুত গতিতে বলে উঠল,
‘ তোকেই ডাকতে যেতাম এখন চৈত্র। ভালো হয়েছে আর সিঁড়ি ভেঙে যেতে হলো না। চল। সবাই বাগানে অপেক্ষা করছে। ‘
চৈত্রিকা কপাল কুঁচকে তাকালো। সিনথিয়া বাদে ঘরের মধ্যে কাউকেই দেখতে পেল না। ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করল ,
‘ বাগানে কেন?’
‘ আজ আমাদের প্রতিবেশী আন্টি তিয়ানা ও ওনার ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে ছোটখাটো একটা গেট টুগেদার আছে। প্রতিবছরই করি আমরা। সাধারণত শীতকালে আমরা একসাথে পার্টি করি কিন্তু তোদের আসার উপলক্ষে তিয়ানা আন্টি ও আম্মু এখনই করতে চাইছে। ‘
চৈত্রিকা ভাবুক হয়ে বলল,
‘ সবসময় শীতকালেই কেন?’
‘ জার্মানিতে শীতকাল ভারী তুষারপাত হয়। বাহিরে তখন উৎসব উৎসব আমেজ থাকে। দেখলেই প্রশান্তিতে ছেয়ে যায় মন। কেবল আমরা না,সকল জার্মান অধিবাসীরা আনন্দ করে অনেক। আমি তো প্রথমত দেখে পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। এত সুন্দর সবকিছু। তুই যখন একেবারে পার্মানেন্ট জার্মানিতে থাকবি তখন অনেক মজা হবে। ‘
চৈত্রিকা সিনথিয়ার মুখের হাসি হাসি ভাব দেখে অধর ছড়িয়ে হাসে। প্রিয়ন্তীর কথা জিজ্ঞেস করতেই সিনথিয়া জানায় সবাই বাহিরে। দরজা পর্যন্ত আসতেই পা জোড়া মেঝেতে আটকে গেল উভয়ের। সাফারাত দরজার অভিমুখে দাঁড়িয়ে। নির্নিমেষ দৃষ্টি তার চৈত্রিকার মুখশ্রী পানে। বিশাল দরজা। আরো দু’জন একটা মানুষকে কাটিয়ে যেতে পারবে অনায়সে। সিনথিয়া বোকা বোকা চাহনি নিক্ষেপ করল। তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে গেল সে। সাফারাত দুই পা এগিয়ে আসতেই তিন পা পিছিয়ে গেল চৈত্রিকা। কন্ঠে একরাশ বিস্ময় ঢেলে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে সাফারাত?’
‘ আমার মন, হৃদযন্ত্র ঠান্ডায় জমে অচল হয়ে যাচ্ছিল চৈত্র আপনাকে দেখতে না পেয়ে। চৈত্র মাসের তাপ বড্ড প্রয়োজন তাই ছুটে আসা। ‘
কথাটা সমাপ্ত করেই সাফারাত দু হাতে চৈত্রিকাকে টেনে বাহুডোরে বন্দী করে নেয়। চৈত্রিকা হকচকিয়ে যায়। অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে চারপাশে চোখ বুলায়। পুরো ড্রইং রুম জুড়ে পিনপতন নিরবতা। কেউ নেই তবুও চৈত্রিকার ভয় হচ্ছে যদি অকস্মাৎ কেউ চলে আসে!উফ!সাফারাত তো ওর হাসবেন্ড। কিশোরী বয়সে প্রেম করলে মেয়েরা যেমন ভয়ে ভয়ে থাকে,তেমনই লজ্জা, ভয়ে মাখামাখি অবস্থা ওর। সাফারাত ওষ্ঠদ্বয় গালের কাছে আনতেই মৃদু চিল্লিয়ে উঠল ও। এতেই সাফারাতের কান যেন ফেটে গেল। তীক্ষ্ণ চাউনি নিক্ষেপ করল সে। এক ভ্রুঁ উঁচিয়ে বিরক্ত স্বরে প্রশ্ন করে,
‘ হোয়াট হ্যাপেন্ড চৈত্র? ‘
কাঠ কাঠ কন্ঠস্বর। বিরক্তির সঙ্গে রাগ মিশ্রিত। চৈত্রিকা রোষপূর্ণ দু’চক্ষে বিচলিত দৃষ্টিতে চেয়ে প্রতুত্তর করলো,
‘ কেউ দেখে ফেলবে। ‘
সাফারাত আগ্রহ নিয়ে চেয়ে বলল,
‘ আপনি কি আমার প্রেমিকা?’
চৈত্রিকা নেত্রদ্বয় নিচু করে আওড়ালো,
‘ বউ। ‘
‘ তাহলে আপনাকে আদর করার লাইসেন্স আছে আমার। নো টেনশন। একটা চুমুই দিব, কেউ দেখবে না৷ ‘
দ্রুত গতিতে সাফারাত রুক্ষ শুষ্ক ঠোঁট জোড়া দিয়ে চৈত্রিকার কপোলে চুমু খেল। তৎপরে অন্য একটা গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে গেলে দু’জনের শ্রবণগ্রন্থিতে হুড়হুড় করে পৌঁছালো একটা চিকন,সূক্ষ্ম মেয়েলি কন্ঠস্বর । চৈত্রিকা চোখ তুলে সেদিকে তাকাতে পারল না, তার পূর্বেই মেয়েটা ওদের কাছে এসে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলে উঠল,
‘ নিজের হবু বউ রেখে তুমি অন্য একটা মেয়েকে কিস করছো সাফারাত?ঠকালে আমাকে?তুমি এখনই আমায় কিস করবে,এখনই। ‘
কথাটা বলতে বলতে চৈত্রিকাকে ঠেলে সরিয়ে মেয়েটা পলকেই সাফারাতের অতি সন্নিকটে এসে হাজির হয়।
#চলবে,,,!