#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা
হেঁচকা টানে পুরুষ টা ফিজা কে নিজের শক্ত-পোক্ত বক্ষে দেশে নিয়ে এলো। ফিজা আচমকাই এমন ঘটনায় অপ্রস্তুত হয়ে এঁটো হাতেই পুরুষ টার টি-শার্ট এর গলদেশ খামচে ধরলো। সাদা গেঞ্জিতে এঁটো হাতের তরকারির দাগ বসে গেলো। আবরাজ চোখে পিটপিট করে একবার ফিজার দিকে তো একবার নিজের গেঞ্জির দিকে তাকাল। এদিকে ফিজা নিজেও ভয় পাচ্ছে। কিন্তু দোষ তো এখানে ওর নেই। তবুও গেঞ্জি টা নষ্ট হয়ে গেলো সেটা ভেবে মনঃক্ষুণ্ন হলো।
আব্রাহাম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তার বুকের ভেতর দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। কেউ যেন এই মাত্র শাণ দেওয়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে হৃদপিণ্ডটা ক্ষত-বিক্ষত করছে। আব্রাহাম দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করলো। পৃথিবীতে বৃহত্তম কষ্ট হচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে অন্য কারোর হতে দেখা। মানুষ টা আর তার নেই। কোনো দিন আর সেই মানুষ টা তার হবে ও না। সারাজীবন অন্য কারোর হয়ে থাকবে। আর এটা মরার আগে পর্যন্ত নিজে স্বচক্ষে দেখে যেতে হবে।
ফিজা মোচড়ামুচড়ি করতে আবরাজ মেয়ে টার হাত ছাড়লো। কোমড়ে তখনও বা হাত টা স্থির। ফিজা অস্ফুটে বলে,
-“ছাড়ুন।”
-“রুমে এসো।”
আবরাজ গম্ভীর স্বরে বললো। ফিজা টেবিলে এঁটো থালাগুলোর দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলে,
-“আপনি যান।”
আবরাজ বুঝতে পারে এঁটো প্লেট ধুয়ে তবেই মেয়ে টা রুমে যাবে। আবরাজ আচমকাই ফিজার কোমড়ে রাখা হাত টা তুলে মেয়ে টার কবজি চেপে ধরলো। এরপর হাঁটা ধরলো রুমের দিকে।
ফিজা বিরক্ত হলো এবার। এসছে পর থেকে পুরুষ টা নিজের মর্জি অনুযায়ী যা খুশি বলে যাচ্ছে করে যাচ্ছে। এখন আবার জোরজবরদস্তি করে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
-“হাত ছাড়ুন। আমি যাচ্ছি।”
ফিজা বললো। আবরাজ মেয়ে টার দিকে তাকায় না। সামনে একের পর এক সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠতে উঠতে অদ্ভুত স্বরে জানায়,
-“তোমার হাত বেশ সফট সুগন্ধি ফুল।”
ফিজা চমকাল। থতমত খেলো। কি বলে পুরুষ টা? এ-সব কেমন কথাবার্তা? মেয়ে মানুষের হাত নরম হবে না তো কি পাথর হবে? এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এভাবে বলার কি আছে? মতিগতি ভালো দেখাচ্ছে না। ফিজা বুঝতে পারছে পুরুষ টার কথাবার্তা লাগামহীন এটা সে সন্ধ্যায় অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে। তাই অযথা কথা না বাড়িয়ে চুপ করে রইলো। আবরাজ সোজা রুমে এসে ফিজা কে ছাড়লো। দরজা বন্ধ করে এরপর মেয়ে টার সামনে এসে দাঁড়াল। ফিজা দুই কদম পিছিয়ে গেলো। আবরাজ এক কদম এগিয়ে দুরত্ব ঘুচিয়ে দিলো। একবার টি-শার্ট এর দাগ টার দিকে তাকিয়ে ফিজার দিকে তাকাল। এরপর গম্ভীর স্বরে আদেশ করলো,
-“গেঞ্জি খুলে দাও।”
আচমকাই যেন বজ্রপাত হলো কক্ষে। ফিজার চোখ জোড়া বিস্ময়ে বেশ বড়ো বড়ো আকৃতি ধারণ করলো। অপ্রস্তুত হয়ে এলোমেলো দৃষ্টি ঘুরালো। সে ভাবলো হয়তো ভুল শুনেছে সে। কিন্তু না পুরুষ টা তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আবার বলে,
-“গেঞ্জি তুমি ধুয়ে দিবে। নষ্ট তুমি করেছ।”
ফিজা ভ্রু কুঁচকে নিলো। সে কি ইচ্ছে করে নষ্ট করেছে? না-কি নষ্ট করার ইচ্ছে ছিলো তার? কোনোটাই না। তাহলে তার কি দোষ এখানে? তিনি নিজেই তো এমন ভাবে টেনে ধরে ছিলো যে ফিজা ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে ধরতে বাধ্য হয়ে ছিলো। এখন এখানে দোষ যদি কারোর হয়ে থাকে তাহলে সেটা এই সামনে দাঁড়ানো আবরাজ খান নামক পুরুষ টার। ফিজা মনে মনে এসব বললেও মুখে সাবলীল ভাবে বললো,
-“দেখুন এখানে দোষ টা বেশি আপনার। আমার এতে কোনো দোষ নেই। অযথা আমাকে ব্লেইম দেওয়ার কিছু নেই। আমি তবুও আপনার গেঞ্জি ধুয়ে দেবো। আপনি খুলে দিন।”
-“অফকোর্স দেখাদেখি হবে সুগন্ধি ফুল,,,
আবরাজ পুরো কথা শেষ করার আগে ফিজা উলটো ঘুরে দাঁড়িয়ে গেলো। কি সব কথা বলে পুরুষ টা? দেখাদেখি হবে মানে? অস্বস্তি না-কি লজ্জায় ফিজার কান গুলো দিয়ে যেন ধোঁয়া বেরুচ্ছে।
পেছনে দাঁড়ানো পুরুষ টা বিরক্ত হলো। তার কথা না শুনে মেয়ে টা ঘুরে গেলো কেনো? ইগনোর করলো তাকে? ফিজা ঘুরে দাঁড়ানো অবস্থায় আবার বলে,
-“আপনি গেঞ্জি খুলে দিন। আমি ওয়াশ রুমে আছি।”
এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করে দ্রুত ওয়াশ রুমে চলে গেলো ফিজা। আবরাজ এক মিনিট সময় এর মতো দাঁড়িয়ে কিছু ভাবলো। এরপর বাঁকা হেঁসে নিজেও ওয়াশ রুমে এলো। ফিজা মাত্র বেসিনে হাত ধুয়ে ফিরে ছিলো। তার মধ্যে আবার ধাক্কা খেলো পেছনে খাম্বার ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা আবরাজ খান এর সাথে। ফিজা নাকে ব্যাথা পেয়ে ব্যাথাতুর শব্দ করে। আবরাজ মেয়ে টার হাত টেনে ধরে নিজের গায়ে রাখলো। গম্ভীর স্বরে আদেশ করে,
-“তুমি খুলে তুমি ধুয়ে দিবে। কুইক।”
ফিজার রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে যেন। তবুও কথা বাড়িয়ে পুরুষ টার সাথে ঝামেলা করতে চাইছে না সে। তাই চুপচাপ গেঞ্জি খুলতে ব্যাস্ত হলো। কিন্তু বলিষ্ঠ পেটানো শরীর তারউপর লম্বা আবরাজ প্রায় ছয় ফিট্ হবে। তারমধ্যে ফিজা হচ্ছে পাঁচ ফিট্ দুই। এমনতর অবস্থায় সে কি করে এমন পুরুষ টার শরীর থেকে মাথার উপর দিয়ে গেঞ্জি খুলে দিবে? শেষমেশ না পেরে হাল ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে আসার জন্য উদ্যত হতেই আবরাজ মেয়ে টার কোমড়ে দুই হাত রাখলো। আচমকাই উঁচু করে ধরে নিলো। ফিজার অবস্থা বেহাল। এমনিতেই পুরুষ টার এতো কাছাকাছি ছিলো এতো সময় এখন আবার একদম শরীরের শরীর স্পর্শ করে আছে। এতো টা সংস্পর্শে এসে ফিজার শরীর মৃদু কম্পন অনুভব করে আবরাজ গম্ভীর স্বরে তাগাদা দিয়ে বললো,
-“ফাস্ট হাত চালাও।”
এতো সময় গলায় এসে গেঞ্জি আঁটকে ছিলো। ফিজা জোরে টানতে সেটা গলা থেকে খুলে এলো। আবরাজ তৎক্ষনাৎ মেয়ে টার কোমড় ছাড়লো। নিচে দাঁড়িয়ে ফিজার শরীর কাঁপতে লাগলো। সে মোটেও দুর্বল নয়। কিন্তু আবরাজ খান কাছাকাছি এলেই শরীর টা অবশ হয়ে আসে। ফিজা দৃষ্টি এতো সময় নিচু করে রাখলেও বুঝতে পারছে আবরাজ এর উন্মুক্ত লোমশ পেটটা ধবধবে ফরসা। ফিজা নিজের হাতের দিকে তাকালো। পুরুষ টা তার থেকে অনেক বেশি ফরসা। আবরাজ ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে গেলো,
-“দাগ যেন বসে না থাকে।”
ফিজা পুরুষ টার ধবধবে সাদা পিঠ টার দিকে তাকিয়ে রইলো। অদ্ভুত কোনো কারণে পুরুষ টার সৌন্দর্য তাকে বারবার পুরুষ টার দিকে তাকাতে বাধ্য করছে।
ফিজা মাথা নাড়ে দু’দিকে। কি হচ্ছে এসব? সে কেনো পুরুষ টাকে ইগনোর করছে না? তিন বছর আগে চলেই তো গিয়েছে। এখন তাকে শক্ত হতে হবে। ফিজা ঝটপট গেঞ্জি ধুতে লাগলো।
ফিজা ভীষণ কঠিন ধাঁচের মানুষ। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে সে নিজে কে সামলে নিতে পারে। যখন সে ক্লাস টেনে পড়ে তখন বাবা মারা গিয়েছে। ফিজার মা মোহিতা বেগম স্বামী কে হারিয়ে অনেক টা ভেঙে পড়েছিলো। তখন সে নিজের ছোট বোন আর মাকে সামলেছে। সংসার সব দিকে নজর রাখার চেষ্টা করেছে। যদিও টাকা তার মা ইনকাম করতো। তবে ফিজা সবার খেয়াল আর সংসার টা ঠিকই সামলেছে। এরপর বিয়ে হলো। বিয়ের দিন স্বামী বিদেশ চলে গেলো। তখন ও চারদিক থেকে মানুষের কটুক্তি সবার আঁড়চোখে তাকানো। সব টা সময় সে নিজে কে শক্ত রেখেছে। অথচ যেই মানুষ টার জন্য এতো কিছু হলো এখন সে সেই মানুষ টাকে এড়িয়ে চলতে পারছে না! বিষয় টা তার নিজের কাছেই লজ্জার। নিজেই নিজে কে এটার জন্য ধিক্কার জানাল।
ফিজা প্রায় আধঘন্টা সময় নিয়ে গেঞ্জি পরিষ্কার করলো। অথচ দাগ সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করতে পারলো না। এতে সে আপসেট। গেঞ্জি বিনে রেখে সে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আবরাজ তখন বিছানায় শোয়া। ফিজা এটা দেখা মাত্র মস্তিষ্ক সজাগ হলো। সে কোথায় ঘুমবে?
আবরাজ কি বুঝলো মেয়ে টার মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব? হয়তো। নয়তো কেনো শোয়া ছেড়ে উঠে এলো? আবরাজ এসে ফিজার ঠিক বরাবর দাঁড়িয়ে আচমকাই ঝুঁকে গেলো। মেয়ে টার হাঁটুর নিচে এক হাত রেখে আরেক হাত পিঠে রেখে ঝট করে শূন্যে তুলে নিলো মেয়ে টাকে। এতো দ্রুত ঘটলো ঘটনা টা যে ফিজা বিস্ময় হাত দু’টো নিজের বুকে গুটিয়ে নিলো। আবরাজ ফিজা কে বিছানার বা পাশে রাখলো। নিজেও মেয়ে টার উপর সামন্য ঝুঁকে শান্ত স্বরে বলে উঠলো,
-“ইউ উইল বি মাইন এন্ড অনলি মাইন। নো ম্যাটার হোয়াট এক্সকিউসেস ইউ মেক!”
#চলবে…..