সুগন্ধি ফুল পর্ব-০৫

0
4

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“ছাড়ুন আমায়।”

ফিজা ছটফট করে। আবরাজ ছাড়ে না মেয়ে টাকে। দৃষ্টি কি তীক্ষ্ণ। ধারালো অস্ত্রের ন্যায় বুকে লাগে। চিনচিন করে পুরুষ টার বক্ষদেশ। মেয়ে টা তাকে কিভাবে এতো টা দুর্বল করে দিতে পারে? সে কি বউয়ের প্রেমে নতুন করে পড়ছে? রমণীর রণচণ্ডী রূপ কি তার হৃদয় জুড়ে ভালো লাগার দোল দিচ্ছে না? অবশ্যই দিচ্ছে। আবরাজ ফিজার চুলের ভাঁজে মুখ গুঁজে। ফিজা ঝট করে নিজের মাথা হেলিয়ে দেয়। মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলে,

-“আই ওয়ান্ট আ ডিভোর্স।”

-“কখনো না।”

আবরাজ যেমন কথা টা শুনে অবাক হয়েছে তেমন তার সোজাসাপটা জবাব। ফিজা আবরাজ এর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

-“মিথ্যাবাদী এবং একজন খুনীর সাথে আমি কখনো সংসার করবো না।”

-“করতে হবে। এবং খুব ভালো করে। এতোদিন তুমি যাও নি। এখন আমি তোমায় যেতে দেবো না।”

আবরাজ গম্ভীর স্বরে বলে। তবে মাথায় তার অন্য চিন্তা ঘুরে। মেয়ে টা কবে থেকে খবর টা পেলো? কিভাবে জানতে পারলো এতো সব? তবে কি এটাও জানে সে বিয়ের দিন কেনো জার্মানি চলে গিয়েছিল? আবরাজ সে-সব ভাবনা চিন্তা আপাতত স্থগিত করে। আবার বলে,

-“আমি সময় দিয়েছি। তুমি কাজে লাগাতে পারো নি। এখন আমি আমার বউ কে কিভাবে রাখব সেটা আমার ব্যাপার।”

-“এবং আমি কিভাবে নিজে কে রক্ষা করবো সেটাও আমার ব্যাপার।”

শক্ত কণ্ঠে জবাব। আবরাজ বউ কে নিজের আরও ঘনিষ্ঠ আনে। তর্জনী আঙুল বউয়ের অধর ছুঁয়ে দেয়। সেখানে আঙুল স্থির করে। ফিজা শক্ত হয়ে বসে থাকে। আবরাজ বউয়ের অধরপানে তাকিয়ে থেকে জানায়,

-“চেষ্টা করে দেখতে পারো।”

-“ছাড়ুন।”

ফিজা বিরক্তিকর স্বরে বলে। আবরাজ শান্ত। গম্ভীর স্বরে বললো,

-“তুমি ছুটে দেখাও।”

-“সকালের কথা ভুলে গিয়েছেন! মনে করিয়ে দেবো আবার?”

কঠিন তীক্ষ্ণ চাহনি। আবরাজ এর বক্ষে এই দৃষ্টি এফোঁড়ওফোঁড় করে হৃদয়ে আঘাত লাগে। মাদকাসক্ত স্বরে বলে উঠে,

-“উঁহু। ভুলি নি। তুমি চাইলে আবার আঘাত করতে পারো।”

পরপরই আবরাজ বাঁকা হাসলো। মেয়ে টাকে খুব কৌশলে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। ফিসফিস করে বলে,

-“হয় তুমি নিজে ছুটে যাবে না পারলে আমি এখানে এই মূহুর্তে তোমায় কিস করবো। এবং সেটার রেসপন্স করতে হবে তুমি। ডিল ইজ ডান?”

-“ডান।”

একজন পুরুষের শক্তির কাছে কি আদৌও কোনো নারী পারবে? যেখানে পুরুষ টার ওজন এবং উচ্চতা দুই টাই নারী টার থেকে দিগুণ বেশি।
ছোটাছুটি, মোচড়ামুচড়ি কোনো টাই ফিজা কম করল না। চেষ্টা ত্রুটি রইল না মেয়ে টার। আবরাজ মাথা এলিয়ে দেয় সিটে। চোখ বন্ধ করে কৌতূহল সহিত জিজ্ঞেস করল,

-“তোমার ওজন কত?”

-“৪২।”

ফিজা ছুটাছুটি বন্ধ করে জবাব দেয়। আবরাজ সেভাবে থেকে বলে,

-“আপাতত এতে হবে। কোলে তুলতে সুবিধা হবে। কিন্তু ওজন বাড়াতে হবে সুগন্ধি ফুল।”

পরে পুরুষ টা সোজা হয়ে বসে। আবরাজ ফিজার দিকে তাকাতেই ফিজা আচমকাই একটা হাত ছুটিয়ে নিজের গলার কাছের কুর্তির ফিতা টা ত্বরিত টান দিয়ে খুলে দিলো। ফিজা এমন কিছু করবে আবরাজ হয়তো কস্মিনকালেও ভাবে নি। বেচারার চোখ জোড়া অটোমেটিক বড়ো হয়ে গেল। গলদেশ বেশ আকর্ষণীয়। গলায় একটা চেইন। হয়তো স্বর্ণের। আবার একটা তিল ও রয়েছে। আবরাজ একবার ঢোক গিলে। পুরুষ টার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। তৎক্ষনাৎ ফিজা আবরাজ এর থেকে নিজে কে ছাড়িয়ে নিলো। সিটে বসে বিশ্ব জয় করা হাসি হাসলো রমণী। আবরাজ খান কে হারাতে পেরে মন যেন আনন্দে পুলকিত হচ্ছে। তবে সেটা যে বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না সেটা কি এই রমণী জানতো? উঁহু। জানলে কখনো নিজের সর্বনাশ নিজের হাতে করতো না। জিতে গিয়েও যে রমণী হেরে যাবে।
আবরাজ মেয়ে টাকে এবার নিজের দিকে টানলো না। নিজে এগিয়ে গেলো। গাড়ির জানালায় এক হাত রেখে অন্য হাত সিটে রাখলো। সম্পূর্ণ ঝুঁকে মেয়ে টার থুঁতনিতে অধর স্পর্শ করলো। ফিজার ভেতর এতো সময় বিজয়ের দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা অনল যেন নিভে গেলো। শরীর স্পর্শ করলো শীতল স্রোত। মেয়ে টা এই মূহুর্তে একটুর জন্য নিজের অবস্থান এবং অতীত ভুলে যাচ্ছিল। কিন্তু অতীত টা সে কি করে ভুলে যাবে? বাসর রাতে যেখানে প্রতিটা মেয়ে স্বামীর জন্য ঘরে বসে অপেক্ষা করে কত রকম কল্পনা জল্পনা করে, সেখানে সে লিভিং রুমে বসে কিছু মানুষের কটুক্তি সহ্য করেছে। এই মানুষ টাকে কিভাবে সে এতো দ্রুত মেনে নিবে? কোনো শাস্তি ছাড়াই? কখনো না। সে এতো দয়ালু না। ফিজা কম যায় কিসে? নিজেও আবরাজ এর নাকের ডগায় দাঁত বসালো। অনাকাঙ্খিত এই আক্রমণ আবরাজ সামলে উঠতে পারে না। সরে আসে তৎক্ষনাৎ। ফিজা সুচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে। আবরাজ নাকে আঙুল ছুঁয়ে বলে,

-“তোমার সাথে সবরকম এক্সপেরিয়েন্স করে রাখছি। যেন ফাইনাল খেলতে গিয়ে কোনোরকম প্রবলেমে না পড়তে হয়।

ফিজা কথা টার ইঙ্গিত বুঝে। একটু লজ্জা পায়। কিন্তু প্রকাশ করার মতো মেয়ে তো ফিজা নয়। তাই কোনো রকম এক্সপ্রেশন দিলো না।
চুপ করে বসে রইলো। আবরাজ ও ড্রাইভিং-এ মনোযোগ দেয়। তবে সেটাও যেন পাশে বসা রমণীর জন্য ঠিকঠাক করতে অক্ষম সে। তবুও নিজের দক্ষতার জন্য খুব বেশি একটা ঝামেলা হলো না। পাশে বসা সুন্দরী রমণী কে ড্রাইভিং করার ফাঁকে ফাঁকে ঠিকই দেখলো।

ফিজা কে গেইটের সামনে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে আবরাজ নিজে আজ গাড়ি গ্যারেজে রাখতে গেলো। ড্রাইভার নেই তার আজ। ছুটিতে দিয়েছে সে। এখন থেকে সে নিজেই ড্রাইভ করে অফিস থেকে ফিরবে। তার মোক্ষম কারণ হচ্ছে বউয়ের আশেপাশে থাকা।
এদিকে ফিজা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করার আগেই দেখা হলো আব্রাহাম এর সাথে। সেও বাড়ির ভেতর যাচ্ছে। ফিজা আব্রাহাম কে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। কিন্তু কোনো কথা বলে না। আব্রাহাম নিজ থেকে কথা বলে,

-“তোমার হাসবেন্ড কোথায়?”

-“গাড়ি গ্যারেজে রাখতে গিয়েছে।”

ফিজা জানায়। আব্রাহাম হঠাৎ কিছু মনে পড়ার মতো করে কপালে তর্জনী আঙুল ঘষতে ঘষতে বলে উঠে,

-“ওহ হ্যাঁ আজ তো ড্রাইভার নেই।”

আব্রাহাম কিছু বলবে তার আগেই আবরাজ এসে সেখানে উপস্থিত হলো। শুধু উপস্থিত নয়। এসে ই বউ কে ঝট করে কোলে তুলে নিলো। এরপর আব্রাহাম এর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে ফিজা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“এখন আমার রোমাঞ্চ করতে ইচ্ছে করছে বউ। চলো রুমে। দেবর এর সাথে দিনে আড্ডা দিও।”

ফিজার চোখ দুই টা যেন তাদের নিদিষ্ট স্থান ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো। কি বলে এই পুরুষ? মাথা ঠিক আছে? ফিজার চট করে মাথায় এলো আবরাজ খান কি কোনো ভাবে কাল থেকে জেলাস? ফিজা চমকালো। থমকে গেলো। নিজের ভাই কে নিয়ে জেলাস! অদ্ভুত পুরুষ। কিন্তু কি কারণে?
আব্রাহাম পেছন থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সে আবরাজ এর নাকে বাইট দেখেছে। কিন্তু এটা তো হওয়ারই। তাহলে তার কেনো এটা দেখে কষ্ট হচ্ছে? বড়ো ভাইয়ের বউয়ের দিকে নজর। মোটেও ভালো চোখে দেখবে না কেউ। তার ভেতরের সত্তা ও যেন তাকে কেমন বিদ্রুপ করছে। সে ভালোবাসে এই রমণী কে। কিন্তু এটা এখন শুধুই একতরফা ভালোবাসা। এটার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ বর্তমানে রমণী তার বড়ো ভাইয়ের বউ। সম্পর্কে তার বড়ো ভাবি লাগে। সেক্ষেত্রে নিজের দৃষ্টি এবং অনুভূতি কে কন্ট্রোল করা উচিৎ।

আবরাজ ততক্ষণে সিঁড়ি ডিঙিয়ে কক্ষে পৌঁছে গিয়েছে। আচমকাই নিজে কে শূন্যে অনুভব করে ফিজা চোখ বন্ধ করে নিলো। পরপরই তুলতুলে নরম বিছানায় নিজের দেহখানা ঠেকেছে বুঝতে পেরে চক্ষুদ্বয় মেললো। আবরাজ তখন নিজের গলার টাই খুলছে। টাই একটু ঢিলে করে শার্ট এর বোতামে হাত চলে পুরুষ টার। ফিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিলো। আবরাজ বউয়ের দিকে ঝুঁকে যেতে ফিজা অন্য পাশে চলে গেলো। আবরাজ বিরক্ত হলো।
সাথে সাথে তার ফোন টাও বাজে। প্যান্ট এর পকেট থেকে ফোন বেড় করতেই নজরে আসে তৃণা।
ফিজা উঠে বসলো। নিজের গায়ের ওড়না ঠিকঠাক করতে করতে বলে,

-“আপনার বান্ধবী ডাকে। যান বান্ধবীর রুমে যান।”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
#জান্নাত_সুলতানা