#সূখতারার_খোজে
#লেখক:আর আহমেদ
পর্ব ২১
হঠাৎ তারাকে কেউ হেঁচকা টানে সামনে এনে হাত থেকে ফাইলটা কেড়ে নিলো। তারা চকিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সামনের লোকটার দিকে। সায়ন! ফরসা ধবধবে গড়নের লোকটি টাওয়াল পড়ে দাড়িয়ে। অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে তারার দিকে। তারা ভয় পেয়ে গেলো। খুব দ্রুত হওয়ায় কিছুই বুঝতে পারলো না তারা। সায়ন ফাইল উল্টে দেখতেই কড়া গলায় বলে উঠলো,
-হাউ ডেয়ার ইউ, তোমার সাহস কি করে হলো ফাইলে হাত দেয়া?
তারা থমকালো। উনি কেন এতটা স্ট্রেট ওনার বাবাকে নিয়ে? আর এত রাগ? কেন? প্রশ্ন মুখ ফুটে বলতে পারলো না তারা। সায়ন আবারো ফাইলটা আলমাড়িতে রেখে কাপড়গুলো নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। মেঝেতে পানি! ভিজে টাওয়াল পড়ে এসেছিলো সায়ন। তারার সবটা গোল পাকিয়ে আসছে। বিছানায় বসতেই ফোন বেজে উঠলো সায়নের। কিন্তু এখনো সায়ন বেরোয় নি। তারা কাপাকাপা হাতে ফোন নিতেই ওয়াশরুম থেকে সায়ন বলে উঠলো,
-তারা ফোনটা রিসিভ করো।
ফোন স্ক্রিনে নাম্বারটা চেনা তারার। আনন্দের সহিত ফোন রিসিভ করলো তারা। বলে উঠলো,
-চাচী কেমন আছেন?
ওপাড়ে তারার চাচী তারার কন্ঠ পেতেই তড়িঘরি করে বললেন,
-কেমন আছিস তুই? আমরা সকলে ভালো আছি।
-তনয়া কই?
-আছে কোনখানে…
-চাচ্চু ভালো আছে তো চাচী?
-আছে রে মা। তুই বরং এক কাজ কর, সায়নকে ফোনটা একবার দে। কিছু কথা ছিলো।
-কিন্তু মা উনি তো ওয়াশ….
‘দাও আমাকে’ সায়নের স্বর পেতেই সামনে তাকালো তারা। কালো জিন্স আর কালো শার্টে অসাধারন লাগছে সায়নকে। তার সামনের বড়বড় ভেজা চুলগুলো সুন্দর্যতা বাড়াচ্ছে দ্বীগুনভাবে। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়েই রইলো তারা। একটা পুরুষ কতটা সুদর্ষন হতে পারে তা আজ সায়নকে সচক্ষে না দেখলে হয়তো জানাই হতো না তারার। তারার হাত থেকে কখন ফোনটা সায়ন নিলো তারা টের পেলো না। ফোন হাতে নিয়ে সালাম দিলো সায়ন। ধ্যান ভাঙলো তারার। এবারে সেও লজ্জিত হলো খানিক, কেউ এমন ব্যাহায়ার মতো তাকিয়ে থাকে? ইশশ্!
সায়ন বললো,
-কেমন আছেন?
-ভালোই আছি। তোমরা সকলে.
-খুব ভালো আছি। বলছিলাম কাল আমাদের রিসিপশন পার্টি হবে। সকলে চলে আসবেন!
মৃদু স্বরে ওপাড়ে হাসলেন ইলিমা। ক্ষিনস্বরে ‘যাবো!’ বললেন। এরপর বললেন,
-আচ্ছা তাহলে রাখি?
-জ্বি জ্বি। বিকেলে দেখা হচ্ছে।
সায়ন ফোন কেটে তারার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ আগের ঘটনায় সে মনমরা। সায়ন তারার গা ঘেষে পাশে বসে।
-তখনের আচরনের জন্য মন খারাপ তারা?
-না!
বলেই চপু করে রইলো তারা। সায়ন একহাত তারার ঘারে রাখতেই তারার শরীর শিতল স্পর্শের অনুভূতি অনুভব করলো। সায়ন এবারে মুখে হাসির ঝুড়ি নিয়ে বললো,
-তখন কার জন্য আ’ম রিয়েলি রিয়েলি সরি। ক্ষমা চাইছি! তখন মাথা ঠিক ছিলো না আমার। আচ্ছা শোন, এখন একটু বেরোবো আমি। দুপুরে পার্লারের লোক আসবে। ফুটফুটে হয়ে সেজে নিও তো? আমি যেন চোখ’ই সরাতে না পারি। মনে থাকবে?
তারার মুখে লাল আভা। সায়ন সে গাল আলতো ছুঁয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। ঘ্যাট হয়ে বসে রইলো তারা। আজকাল অনুভুতি গুলো খুব বেশি বিষাক্ত! ব্যাহায়া! তার স্পর্শে কাঁপায় আমাকে! রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণের মেলা বসায়।
সূর্য হেলে গেছে। সাবিহা কোথথেকে ছুটে রুমে চলে এলো। তারা তখন ফোনে ব্যাস্ত। এসেই ফোনটা ছো মেরে কেড়ে নিলো সাবিহা। তারা পুরোই হতবাক!
-ভাবি? তুমি তো দেখি এখনো লেহেঙ্গা টাও বের করোনি। পার্লারের লোক এসে গেছে। কার সাথে কথা বলছো শুনি?
-কবিতার সাথে। ও আসবে তারপর সাজবো।
সাবিহা উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
-আরেক ভাবি? দাড়াও।
সাবিহা ফোন কানে নিয়ে বললো,
-ক্যাসা হে ভাবিজি?
…….
-থোরা জলদি আইয়ে প্লিজ!
এরপর ফোন কেটে দিলো কবিতা।
______
সায়নদের চৌধুরী ভিলা সাজানো হচ্ছে। বড়বড় ডিস্কোগুলোয় বাজতে আরম্ভ করেছে ইতিমধ্যে গান। সাজানো হচ্ছে সায়নদের পুরো গার্ডেন। কিছুক্ষণ আগে আসলো কবিতা। এসেছেন পুরো এখতেয়ার বাড়ি। সবাইকে নিজে আমন্ত্রণ করছেন আরমান চৌধুরী। আয়রা অবাক চোখে তাকিয়ে। অদ্ভূত! তখনি এলেন তইমুর পরিবার। অর্নব আর আরিশা এসেছে সাথে। হাফ ছেড়ে বাচঁলেন আরমান। এতক্ষন বুকে দামামা বাজছিলো তার। তিনি খুব গুরুত্বরে সহিত নিয়ে গেলেন ড্রইংরুমে,স্পেশাল আথিতেয়তায়।
তারাকে সাজাচ্ছে কবিতা। পুরো ঘরে খুনশুটি! সকলের মুখে হাসি। তারা ইচ্ছে হচ্ছে মাটি খুড়ে ডুকে যেতে। এদিকে বাইরে উলুক ভুলুক করছে সায়ন। এত ভিরে তারাকে খুজেই পেলো না সে। আশাহত হয়ে পাশের রুমে বসে রইলো। তনয়া আর সাবিহার বেশ জমে উঠেছে। ওরা বিছানায় পায়ে পা তুলে গল্প করছে। তখনি প্রবেশ করলো তূর। ভির ঠেলে ভিতরে ডুকলো। তনয়া ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে বলে উঠলো,
-ভাই তুই এখানে কি করছিস? এত মেয়ের মাঝে তুই ঠেলে ঠুলে কই যাচ্ছিস?
-লাইন মারতে এসেছি রে….জালাস না তো!
তূরের কথায় সকল মেয়ে উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো। কেউ ঠেস দিয়ে বললো,
-আরে ভাইয়াকে কেউ একটা জি এফ খুজে দাও। উনাকে দেখে কষ্ট লাগছে রে…
আবারো সকলে হাসলো। তূর আরেকটু এগিয়ে তারার কাছাকাছি চলে গেলো। কবিতাও সেখানে। তূর তারাকে ডাকলো,
-তারা….
পেছন ফিরে তাকালো তারা। মুখ জ্বলজ্বল করছে,শরীর ভর্তি গহনা! সাথে লাল লেহেঙ্গা। অপরুপ লাগছে তারাকে। তূর হেঁসে বলে উঠলো,
-তোকে একটা কথা বলবো?
তারার খানিক ভয় লাগলো। কি এমন বলবে? কিন্তু তারাকে অবাক করে মুখে হাসি ফুটালো তূর। বললো,
-তোর এ বিয়ে,আর আরমান সাহেবের খানিক সাহায্যের জন্য আমি খুব’ই ভালো আছি। এখন তোর ভালো আশা করি।
তারা কিছুই বুঝলো না। বললো,
-মানে?
-মানে অনেককিছু। আজ না হোক কাল তুই সবটা বুঝবি।
বলেই তূর চলে যেতে চাইছিলো। তারা পিছু ডাকলো। সাবধানে বললো,
-আপনি যা বললেন তার মানে কি?
-ওইযে বললাম…
-হেয়ালি করবেন না তূর ভাই!
কবিতা দু’পক্ষের হেয়ালি দেখে বিরক্ত কন্ঠে বললো,
-আরে ভাইয়া আপনি যানতো। অনেক মেয়ে এসেছে! লাইন মারবেন বলছিলেন না? যান যান যান।
তূর ফোকলা হেঁসে চলে গেলো। হতবিহ্বল হয়ে বসে রইলো তারা। আরমান সাহেবের রহস্যটা কি? সাথে তূর’ই বা জড়ালো কিভাবে?
-সকলে একটু ফাঁকা হও তো। আর তনয়া,সাবিহা তোমরাও যাও। তারাকে একটু স্পেস দাও!
কবিতার বলা কথায় ক্ষুদেরাগে বললো সাবিহা,
-আমরা কেন?
তালে তাল মিলালো তনয়াও। বললো,
-তাইতো। আমরা যাবো কেন?
-বললাম না যাও।
তারা বললো,
-আরে তুই ওদের যেতে বলছিস কেন? থাকুক না..
-তুই চুপ কর! কি হলো? যাও তোমরা!
সকলে বেজার মুখ করে চলে গেলো। সবাই যেতেই তারা বলে উঠলো,
-তুই ওদের যেতে বললি ক্যান?
তারা সয়তানি হেঁসে দরজার কাছে গেলো। তারাও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। হঠাৎ লাইট অফ করে দিলো কবিতা৷ তারা ভ্রু কুঁচকে এগোতেই দরজা দিয়ে বিরাট আকৃতির কেউ ডুকে পড়লো। কবিতা হেঁসে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। এদিকে কেউ ভেতরে ডুকেই তারার বাহুজোড়া খিচে দেয়ালে চেপে নিলো। তারার বুক ছেত করে উঠলো। কারো গরম নিশ্বাস সরাসরি হৃদয়ে হানা দিতে লাগলো তার। কোমরের ফাঁকা জায়গায় আলতো স্পর্শে কেঁপে উঠলো তারা। কেউ খুব গাঢ় চুম্বন করলো তখনি।
এদিকে কবিতা বেড়িয়েই হি হি করে হাসতে লাগলো। বললো,’আমার দুলাভাই বড্ড লুচু’ বলে ড্রইংরুমে চলে গেলো কবিতা।
কিন্তু ড্রইংরুমে গিয়েই মাথায় হাত কবিতার। সেদিনের সেই মদমাস,পাজি বড়লোক্স ছেলেটা। এখন এটা পাড় হবে কি করে? এদিকে অর্নব ও সেদিকেই তাকিয়ে। গলার ওড়নাটা মাথা থেকে মুখ অব্ধি ডেকে আসতে আসতে হাটতে লাগলো কবিতা। কিন্তু অর্নবের তুখোড় দৃষ্টি থেকে পার হতে পারলো না কবিতা। অর্নবের বাজখাঁই কন্ঠে থেমে গেলো,
-এই মেয়ে দাড়াও।
ঠোঁট চেপে দাড়িয়ে রইলো কবিতা। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়! কথাটা মহা সত্য।
#চলবে….