সে আমার অপরাজিতা পর্ব-৩০

0
134

#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_৩০
#সারা মেহেক

চারিদিকে ঘুটঘুটে আঁধার। সেই কালো আঁধারের চাদর চিঁড়ে প্রাণপণে ছুটে চলছে বিন্দু। তার পিছু নিয়েছে আশরাফ। দম বেড়িয়ে আসছে, তবুও পা দুটোকে বিশ্রাম দিতে পারছে না। কেননা সামান্য বিশ্রামের আশায় থেমে থাকলেই নিজের সম্ভ্রম ও প্রাণ খোয়াতে হবে তাকে।
রুদ্ধশ্বাস ও অবসাদগ্রস্থ শরীর নিয়ে ছুটে চলছে বিন্দু। শক্ত হাতে ওড়না ধরে রেখেছে। অকস্মাৎ তার পদজুগল থমকে গেলো, পিছন হতে ওড়নায় টান পড়ায়। আতঙ্ক ও বিস্ময়ে ঘাড়ে ঘুরিয়ে দেখলো আশরাফ দাঁড়িয়ে আছে। আশরাফের চাহনিতে অশুভ ছায়া। ওষ্ঠে ক্রুর হাসির আয়োজন। বিন্দু এবার আর দম নিতে পারছে না। বোধহয় এখনই দমবন্ধ হয়ে মা’ রা যাবে।
আশরাফ বিন্দুর ওড়নায় যেই না টান দিতে যাবে অমনিই সেখানে বৃত্ত এসে উপস্থিত হলো। আশরাফের হাত মুচড়ে ধরে বিন্দুর ওড়নাকে রেহাই দিলো। তবে নিজের প্রাণ রেহাই দিতে অপারগ হলো। কেননা আশরাফ তৎক্ষনাৎ অপর হাতে থাকা পি’ স্ত’ লে’র পরপর দুটি গু’ লি বৃত্তর শরীরের প্রবেশ করালো। পি’ স্ত’ লে’ র ভ’ য়া’ ন’ ক শব্দে আপাদমস্তক কেঁপে উঠলো বিন্দুর। তৎক্ষনাৎ তার ঘুম ভেঙে গেলো। হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। জোরে জোর নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। হাপরের ন্যায় বুক উঠানামা করছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। গলার কাছে পুরোটা ভিজে গিয়েছে ঘামে। এই দুঃস্বপ্নের বাস্তবতা আছে কি না দেখতে তার দৃষ্টি গিয়ে ঠেকলো সরাসরি সোফার দিকে। বৃত্ত সেখানে ঘুমাচ্ছে। একদম নিশ্চিন্তে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো বিন্দু। ধীরে ধীরে নিজেকে ধাতস্থ করলো। লম্বা নিঃশ্বাস টেনে ওড়না দিয়ে গলা ও কপালের ঘাম মুছলো। অতঃপর উঠে টেবিলে রাখা পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এসেছে।

পানির বোতল রাখতেই স্বভাবতই বিন্দুর দৃষ্টি ঘড়ির কাঁটায় গিয়ে আটকালো। মাত্র ৭টা বাজে। মনে মনে ভাবলো, এখন একটু গোসল করা উচিত। শরীরটা ঘেমে গিয়েছে। গোসল করলে একটু স্বস্তি মিলবে। এই ভাবনায় সে ব্যালকনি থেকে তোয়ালে আর থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলো। কিন্তু সোফায় বৃত্তকে দেখে তার উদ্বিগ্ন মনটা একটুখানি আনচান করলো, বৃত্তর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হতে। সে গিয়ে বৃত্তর সম্মুখে দাঁড়ালো। বৃত্ত নির্বিঘ্নে ঘুমাচ্ছে। পাতলা সাদা টিশার্ট ও গ্রামীণ চেকের একটা প্যান্ট পরে আছে। একটা কুশন পেটের উপর রেখে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে শুয়ে আছে সে।
বিন্দুর দৃষ্টি আবদ্ধ হলো বৃত্তর মুখশ্রীতে। ঘুমালে ভীষণ নিষ্পাপ দেখায় তাকে,আজই প্রথমবারের মতো লক্ষ্য করলো বিন্দু। ইশ, ঐ নিষ্পাপ, সুশ্রী মুখশ্রীতে ক্ষতগুলো ভীষণ বেমানান দেখাচ্ছে।বিন্দু সামান্য ঝুঁকে গেলো। কি মনে করে তার অবাধ্য হাত ছুটে গেলো বৃত্তর ক্ষতের দিকে। একটুখানি ছুঁয়ে দিলো সে। অমনিই বৃত্তর বলিষ্ঠ হাত খপ করে তার হাতটা ধরে ফেললো। বুকটা যেনো ছ্যাঁত করে উঠলো। হকচকিয়ে গেলো সে। তবে কি বৃত্ত ঘুমানোর ভান করছিলো!

বিন্দুর হৃৎস্পন্দন বাড়ছে। অস্বাভাবিক হারে বুকে যেনো দামামা বাজিয়ে চলছে। তার হাতটা বৃত্তর হাতের মুঠোয়। এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির শিকার হবে কল্পনাতেও ভাবেনি সে। এখন পালানোর উপায়!
বৃত্ত দৃষ্টি মেলে চাইলো। ঘুম ভাঙতেই বিন্দুর মুখখানা দেখে হৃদ উদ্যানে প্রশান্তির হাওয়া বইলো। মন মস্তিষ্কের অস্থিরতা দূর হলো। তবে মুখখানায় বজায় রাখলো মৃদু গম্ভীর ভাব। গমগমে কণ্ঠে শুধালো,
” কি করছিলে?”

বিন্দু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। তৎক্ষনাৎ জবাব দিতে পুরোদমে ব্যর্থ হলো। শুকনো ঢোক গিললো। বৃত্তর দৃষ্টি এড়ালো না এটি। বৃত্ত ভ্রু তুলে জড়তাহীন কণ্ঠে শুধালো,
” চোরের চুরি কি ধরে ফেললাম আমি?”

বিন্দু ঘাবড়ে গিয়েছে। ইশ, এভাবে ধরা পরে যাবে কে জানতো! কি এক অদ্ভুত মন! এমন অদ্ভুত অবাধ্যতা কে করে! বিন্দু সুস্থির হতে গিয়েও পারলো না। ফলস্বরূপ শুকনো গলায় আমতা আমতা করে শুধালো,
” কি- কিসের চুরি? আর কে চোর?”

বৃত্ত ডান পাশের ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। সেই হাতে বিন্দুর হাতটা বুকের উপর নিয়ে রাখলো। আর অপর হাত মাথার নিচে রেখে বললো,
” শোনো, আমাকে স্পর্শ করতেই পারো। আফটার অল তোমার একমাত্র স্বামী আমি। এখন কি আর সিনিয়র ভাই হিসেবে আছি নাকি!”

বিন্দু পরিস্থিতি সম্পর্কে ধাতস্থ হতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগালো। অতঃপর বৃত্তর মুঠোবন্দী শিকল হতে নিজের হাত ছড়িয়ে নিতে হাত মোচড়ানো শুরু করলো। বৃত্ত তার এহেন কান্ডে হাসলো। ঈষৎ কৌতুকের ছলে অনুরোধ করে বললো,
” একটু স্বামীর ক্ষতে হাত বুলিয়েও তো দিতে পারো! তাহলে দ্রুত সুস্থ হয়ে যেতাম। ”

এই বলতে বলতে বিন্দু লক্ষ্য করলো বৃত্তর হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আসছে। সেই সুযোগে তৎক্ষনাৎ হাত মুক্ত করে নিলো সে। বৃত্ত এ নিয়ে আর জোর করলো না। বরং অপর হাতটাও নিজের মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে রইলো।
এদিকে বিন্দু প্রত্যুত্তরে তীর্যক স্বরে বললো,
” এটা ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড না বৃত্ত সাহেব। কারোর হাতের ছোঁয়ায় কখনও ক্ষত সারে না। ক্ষত সারে মলমের কার্যকারীতায়। ”

বৃত্ত মৃদু দম ফেলে হাসলো। খানিকটা নড়চড়ে মাথার নিচে হাত দুটো পুনঃস্থাপন করলো। অতঃপর বললো,
” উপরের ক্ষত না সারলেও ভেতরের ক্ষত ঠিকই সেরে যায় মিসেস বিন্দু। তখন এই আলগা ক্ষত সেরে যাওয়া কি দুর্বোধ্য বিষয় নাকি!”

বিন্দু বিরক্ত হলো। চোখমুখ কুঁচকে বিতৃষ্ণায় বললো,
” আপনার মাথায় সমস্যা হয়েছে বৃত্ত। আপনি আপনার জায়গায় ঠিক নেই। নিশ্চয়ই গতকাল কোনোভাবে মাথায় বাড়ি খেয়ে এসেছেন। ”
বলেই সে হনহনিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। পাছে বৃত্ত মুচকি মুচকি হাসলো। বিন্দুকে এভাবে বাগে আনতে বেশ লাগছে তার! বিন্দুর উদ্দেশ্যে এবার আপনমনে সে বললো,
” আমি এতোটা এগিয়ে যেতাম না বিন্দু। কিন্তু গতকাল রাতে তোমার চোখে যা দেখেছি তাতে মনে হলো, এবার আমার পক্ষ হতে কোনো এফোর্ট না দিলে আমাদের সম্পর্কটা কখনোও গড়ে উঠবে না।”

ভেজা চুলে তোয়ালে জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো বিন্দু। বৃত্ত বিছানায় বসে তার বাবার সেক্রেটারি জহিরের সাথে কথা বলছিলো। কথার মাঝেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে ঘুরিয়ে পিছে ফিরলো সে। এলোমেলোভাবে চুলে তোয়ালে পেঁচানো বিন্দুকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রায় হা হয়ে রইলো বৃত্ত। সকালের স্নিগ্ধতায় যেনো বিন্দুর রূপ ঠিকরে পড়ছে। উপরন্তু ল্যাভেন্ডার রঙের থ্রিপিছ তার সৌন্দর্যে বিস্তর মাত্রা যোগ করেছে। তার সমস্ত মুখমন্ডল জুড়ে অবিন্যস্ত পানির ফোঁটাগুলো তার সৌন্দর্য যেনো আরোও বর্ধিত করছে।
ওপাশে জহির বৃত্তকে ডাকছে। কিন্তু বৃত্তর কোনো হুঁশ নেই। সে যে এখন বিন্দুর দুনিয়ায় মগ্ন হয়ে আছে। বৃত্ত নিষ্পলক কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর আনমনে ওপাশে জহির কে বললো,
” পরে কথা বলছি আমি।”
এই বলেই কল কেটে দিলো। ফোনটা রেখে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বিন্দু আর তাকে খেয়াল করেনি। সে নিজের মতো ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে কাপড় মেলে দিতে গিয়েছে। ওদিকে বৃত্ত এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। নাহ, মেয়েটার সৌন্দর্য প্রতিনিয়ত তাকে এত মুগ্ধ করছে কেনো! এ যে বড় জ্বালা! নিজেকে তো সামলে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়বে।

বিন্দু কাপড় মেলে রুমে এলো। আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে মাথার চুল হতে তোয়ালে খুললো। বা পাশে সমস্ত চুল এনে তোয়ালে দিয়ে আলতো ঘষে অতিরিক্ত পানি মুছে নিলো। অতঃপর সেই আধভেজা তোয়ালে ড্রেসিং টেবিলের ছোট্ট টুলে রাখলো। ভেজা চুলগুলো বা পাশ হতে নিয়ে পিছনে ছেড়ে দিলো। আর এই প্রথমবারের মতো তার চুলের সৌন্দর্যের সাক্ষী হলো বৃত্ত। আগের জুগে যেমন ছেলেরা চুলের সৌন্দর্য দেখে প্রেমে পড়তো, বৃত্তর ক্ষেত্রেও বোধহয় তাই হলো। ফের বিন্দুর প্রেমে পিছলে পড়লো সে। তার নিষ্পলক বিমুগ্ধ নয়নজোড়া সমস্ত বিন্দুতে আবদ্ধ হয়ে আছে। বিন্দুকে আপাদমস্তক দেখছে সে। বিন্দুর স্নিগ্ধতায় জড়ানো মায়াবী মুখশ্রী, নিঝুম রাতের ঘন কালো মেঘের ন্যায় কোমড় ছাপানো চুল সবই বৃত্তকে অবিন্যস্ত করে তুলছে। হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি করে মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা ধীর করে তুলছে। এ কেমন অনুভূতি!

এদিকে চুলগুলো পিছনের দিকে দিতেই আয়না দিয়ে বিন্দুর দৃষ্টি পড়লো বৃত্তর উপর। হকচকিয়ে উঠলো সে। এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো বৃত্ত! আপনমনে শুধালো সে। ঐ দৃষ্টিজোড়া এ মুহূর্তে এক অস্বাভাবিক ইন্দ্রজালে আবদ্ধ হয়ে আছে, যার এক পলক ভেতরটা উথাল-পাথাল করে দিতে পুরোপুরি সক্ষম। আয়নার প্রতিবিম্বেই বৃত্তর প্রগাঢ় অন্তঃকলহে আবৃত দৃষ্টিজোড়া বিন্দুর অস্থিরতা বাড়িয়ে তুললো। সে দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করতে উদ্যত হলো। কিন্তু তার মোহে ডুবে যাওয়া বৃত্ত তার পথ রোধ করলো। বিন্দুর হাতটা নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখের পলকে বিন্দুর কোমড়ে সেই হাত পেঁচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিঃশ্বাস নিতে ভুলে বসলো বিন্দু। থম মেরে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাকরুদ্ধ হয়ে বড় বড় দৃষ্টিতে বৃত্তর পানে চেয়ে রইলো সে। কণ্ঠে বিস্ময় ও অভিযোগ তুলে ক্রোধিত স্বরে বললো,
” এসব কোন ধরণের অসভ্যতা বৃত্ত! না জানিয়ে এভাবে স্পর্শ করছেন কেনো আমাকে? ”

বৃত্ত এক হাত দিয়ে বিন্দুর কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে। আর অপর হাত তার কোমল ঠোঁটে চেপে মোহগ্রস্ত স্বরে বললো,
” রোম্যান্সের জন্য সবসময় এতো অনুমতি নিতে হয় না মিসেস। ”

পুনরায় বিস্ময়ে চোখ দুটো বড়ো হয়ে এলো তার। রোম্যান্স! কি বলছে বৃত্ত! সকাল সকাল কি নেশা করে এসেছে? তৎক্ষণাৎ নিজের হাতে বৃত্তর হাতখানা ঠোঁটের উপর হতে সরিয়ে চরম বিস্ময়ে শুধালো বিন্দু,
” বৃত্ত! আপনি কি সকাল সকাল নেশা করে এসেছেন? আপনার কথাবার্তার ধরণ এমন লাগছে কেনো?”

বৃত্ত হাসলো। তার সুগভীর দৃষ্টিজোড়া বিন্দুকে নিজের মোহে আচ্ছন্ন করতে উদ্যত হলো। পূর্বের ন্যায় বললো,
” মাত্রই নেশা করলাম। আমার সদ্য বিবাহিতা বউয়ের রূপে নেশা করলাম। ”

শুকনো ঢোক গিললো বিন্দু। নাহ, লক্ষণ সুবিধের লাগছে না। বৃত্তর মাঝে হুট করে এমন আচরণগত সমস্যার দেখা দিলো কেনো? বাইপোলার ডিসওর্ডার আছে নাকি ওর? বিন্দু আর টিকে থাকতে পারছে না। তার হৃদপিণ্ড অনবরত দামামা বাজাচ্ছে। বোধহয় এখনই বক্ষ খাঁচা হতে বেরিয়ে পালাবে সে। তার গলাটাও শুকিয়ে আসছে। পরিস্থিতি গতকাল রাতের তুলনায় ভয়াবহ। কেননা গতকাল রাতে বৃত্তর দৃষ্টিতে ঐ অস্থিরতা আর আকাঙ্ক্ষার দেখা মিলেনি। যা আজ, এ মুহূর্তে ঢের উপলব্ধি করতে পারছে বিন্দু।
বিন্দু নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে উদ্যত হলো। কিন্তু বৃত্তর বলিষ্ঠ শরীরের শক্তির নিকট তার ক্ষুদ্র অঙ্গের শক্তি ফিকে পড়ে গিয়েছে। এবার ছটফট করতে লাগলো সে। কিন্তু বৃত্ত মুক্তি দেয়ার বদলে উল্টো দ্বিগুন শক্তিতে তাকে নিজের সাথে চেপে ধরলো। ফলস্বরূপ দুজনার মধ্যকার দূরত্ব ঘুঁচে শূন্যে নেমে এলো। এ মুহূর্তে তারা দুজন একে অপরের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের উঠানামার শব্দ ভীষণ নিকট হতে উপলব্ধি করতে পারছে। দুজনার নিঃশ্বাস এলেমেলোভাবে আছড়ে পরছে একে অপরের উপর। বিন্দুর মাঝে অস্থিরতা অস্বস্তিতা বেড়ে চলছে। এমতাবস্থায় সে বললো,
” বৃত্ত, আপনার মাথায় নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা হয়েছে। আমাকে ছেড়ে দিন। এভাবে থাকতে পারছি না আর। ”
বৃত্ত মন্থর গতিতে দম ফেলে হাসলো। অকস্মাৎ তার মুখখানা বিন্দুর একেবারে নিকটে নিয়ে এলো। অতঃপর প্রগাঢ় গলায় মোহাচ্ছন্নতায় উন্মুক্ত হয়ে বললো,
” ছেড়ে দেওয়ার জন্য তোমায় ধরিনি মিসেস। সকাল সকাল নিজের রূপে পাগল করে আবার ছাড়া পাওয়ার আশা করো কিভাবে? ঘরে যে একটা জলজ্যান্ত ছেলে আছে, তা কি মাথায় নেই? এই স্নিগ্ধ শীতল রূপে দেখলে কে না পাগল হবে বলো? তার উপর আমি তোমার স্বামী।”
এই বলে সে কয়েক সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে পুনরায় বললো,
” আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে জানি বিন্দু। তাই বলে এতোটাও কন্ট্রোল করতে জানি না। পরিস্থিতি লিমিটের মধ্যে হলে কন্ট্রোল সম্ভব। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে যা হলো তা তো লিমিটলেস ছিলো মিসেস। ”

বিন্দু বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে রইলো। বৃত্ত কি নিজের ধ্যানজ্ঞানে আছে? নাকি জ্বিন ভূতে আছর করেছে?
বৃত্ত ফের বললো,
” আমি একজন ছেলে। সুতরাং আমার সামনে বুঝেশুনে চলাফেরা করবে। তোমার কর্মকাণ্ডে আমার নিয়ত পিছলে গেলে কিন্তু আমার দোষ হবে না। এরপর যা হবে তার সমস্ত দায়ভার তোমার।”

বিন্দু বিস্ময়ে ফের হা হয়ে এলো। তার অস্থিরতা তুমুল গতিতে বেড়ে চলছে। পেটের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতির উৎপত্তি হয়েছে।
এবার আর নড়াচড়া করতে পারছে না। তার সমস্ত শরীর যেনো জমাট বেঁধে গিয়েছে। উপরন্তু বৃত্তর হাতখানা তার কোমড়ের সাথে যেনো আঁটসাঁটভাবে লেগে আছে। তার আঙুল জোড়া বিচরণ করছে সেখানে। শিউরে উঠছে বিন্দু। হাত পা শীতল হয়ে আসছে। এমতাবস্থায় বহু কষ্টে মৃদুস্বরে বললো,
” আপনি এমন ছিলেন না বৃত্ত। আপনি এমন ছিলেন না। ”

বৃত্ত এবার তার ঠোঁটজোড়া বিন্দুর কানের কাছে নিলো। ধীরলয়ে বললো,
” গতকাল আমার প্রতি তোমার চিন্তা, যত্ন আমাকে আবারও আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ভাবাতে বাধ্য করেছে। আমি কিন্তু এতোটাও ভালো না মিসেস। এতদিন যা দেখেছো, তা আমার উপরিভাগ ছিলো। আমি যা দেখাতে চেয়েছি তাই দেখেছো। মনে রেখো, আমাদের সম্পর্কটা স্বামী স্ত্রীর। কতদিন এভাবে থাকতে পারবে তুমি? আমাদের সম্পর্কটার যত্ন প্রয়োজন। তাই এ যত্নের সূত্রপাত আমার দ্বারাই করলাম।
আর হ্যাঁ, এটা মাথায় রেখো, তুমি আমার দায়িত্ব। তোমাকে রক্ষা করা, তোমার সম্মান রক্ষা আমার সর্বপ্রথম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সুতরাং তোমাকেশ তোমার মান সম্মান বাঁচাতে যা যা প্রয়োজন সবটাই করবো আমি। তোমাকে সারাজীবন আমি ঘিরে রাখবো। বিন্দুকে ঘিরে বৃত্ত আজীবন থাকবে।”
#চলবে
®সারা মেহেক