সে আমার বৌপ্রিয়া পর্ব-০৮

0
36

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৮
“এই তুমি এতো এতো শপিং করে নিয়ে আসছো কেনো?
‘প্রথমবার তোর ভাবির কাছে যাচ্ছি একটু স্পেশাল ব্যাপার আছে না?
‘রাহা মুখ ফুলিয়ে বেডের এক সাইডে বসলো, কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,আমি কি দেখতে সুন্দর না?
‘তুই তো লিটল প্রিন্সেস।
‘তাহলে তুমি আমাকে কেনো ভালোবাসো না!
‘আমি তো তোকে প্রচুর ভালোবাসি। তবে সেটা আমার ছোট বোন হিসেবে।
‘আমি তো তোমার থেকে জামাইয়ের ভালোবাসা চাই।
‘বয়স কত তোর?
‘১৮ হয়ে যাবে এক বছর পরেই।
‘আচ্ছা এক বছর পর তোকে সুদর্শন একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবো।
‘নাহহ আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। জানো তোর পরশে প্রেম নামে একটা গল্প পড়েছি সেখানে কাজিনকে বিয়ে করে নায়কটা। তাদের মধ্যে সে কি ভালোবাসা! এরকম আরো অনেক স্টোরি পড়েছি। তুমি আমাকে বিয়ে করে নাও।
‘মাথা থেকে গল্পের ভূত নামিয়ে পড়ালেখা কর।
‘তুই কাজিন বিয়ে করবি তাই তো?
‘হ্যা কাজিন বিয়ে করবো।
‘তোর চাচার ছেলে রাফিদকে কর৷ কারন আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমার বৌ এসব জানলে সোজা এনকাউন্টার।
‘সত্যি বিয়ে করেছো?
‘হ্যা সত্যি বিয়ে করেছি।
‘আচ্ছা তোমার বৌ তোমাকে ছেড়ে গেলে আমাকে বিয়ে করবে তো?
‘আমার বৌ আমাকে ছাড়বে কেনো?
‘ধর সেলসবয়ের সাথে পালিয়ে গেলো৷ তখন আমাকে বিয়ে করবে?
‘সেলসবয় আমি নিজেই। এবার যা রুম থেকে বের হ।
‘তোমার বৌয়ের নাম কি?
‘মিরহা।
রাহা মন খারাপ করে চলে গেলো। রুমে এসে মোবাইল নিয়ে আবার গল্প পড়া শুরু। সারাদিন রাত সুযোগ পেলেই গল্পে ডুবে থাকে।

‘ফারজাদ সব রেডি করে বের হয়ে পরলো নিজের গন্তব্যে। মনের মধ্যে কেমন অদ্ভুত ফিলিংস। প্রেম মানেই কেমন উড়ন্ত মন, দুরন্ত চাঞ্চল্যের বহিঃপ্রকাশ।
🌿
মিরহা কি হলো তোর আজ সপ্তাহ খানেক ধরে দেখছি মনমরা হয়ে থাকিস।
‘এই বল তো তোকে আবার পাইলট ছেলেটা ধোঁকা দেয়নি তো?
‘কি বলছিস এসব! সে আমাকে ধোঁকা কেনো দেবে? উল্টো আমিই তো বেচারাকে ধোঁকা দিয়েছি৷
‘তাহলে কি হয়েছে বল না আমাকে?
‘আমরা খুব সুন্দর করে ভেবে চিন্তে পরিকল্পনা করে কিছু ভুল করে বসি। আর সেই ভুলের মাশুল আমাদের সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। না পারি ভুল শুধরে নিতে আর না পারি কারো কাছে শেয়ার করতে!
‘এসব ভুলচুক জীবনে চলার পথে হয়েই থাকে। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয়, ভুলটাকে মনের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখে নিজেকে কষ্ট দেয়াটা বোকামি।
‘এ এমন এক মিষ্টি ভুল যা আমাকে কাঁদায় তবুও হৃদয় ছাড়ে না৷ এমন না যে আমি ধরে রাখতে চাই বরং সে আমাকে ছাড়েই না!
‘তোর কঠিন কথার জালে আমাকে আটকে ফেলছিস৷ তোর সাথে কথা বলে পারা যাবেনা। এই মিরহা ছেলেটাকে দেখবি?
‘কোন ছেলেটাকে?
‘আমার সাতদিনের বয়ফ্রেন্ড। জানিস না ছেলেটা এতো কিউট৷
‘তোর বয়ফ্রেন্ডকে আমি দেখে কি করবো?
‘তুই দেখে নাচবি! দিনদিন একদম দাদিআম্মা হয়ে যাচ্ছিস৷।
রসকষহীন কাঠখোট্টা সর তুই সামনে থেকে। জীবনে প্রথম একটা প্রেম করছি তাও এক সপ্তাহ চলছে কই বলবে দেখি তো তোর বফ দেখতে কেমন?উল্টো বলে দেখে কি করবো!
‘আচ্ছা রেগে যাস না দেখা৷
‘সর তোরে দেখাবো না। আমার চান্দের টুকরো কে আমিই একাই দেখবো।
‘কিন্তু এক সপ্তাহে প্রেম প্রপোজ সব হলো কি করে?
‘সে আমাকে বলেছে প্রেম তো এক পলকেই হয়৷ যখন তার দৃষ্টি আমার উপর পরেছে তখনই সে আমার হয়ে গেছে৷ জানিস ওর না এর আগে কোন রিলেশন ছিলো না। উফফফ কি কিউট ব্যাপার স্যাপার ভাবতেই লজ্জা লজ্জা লাগছে!
‘ তুই পিকটা দেখাতো দেখি কোন প্লেবয়।
‘প্লেবয় না সে আমার হিরো৷ এই নে দেখ৷
‘পিকটা দেখে মিরহা কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলে,হ্যা ছেলেটা সুদর্শন। তবে সুদর্শন ছেলেদের সহজে বিশ্বাস করতে নেই৷
‘তুই এভাবে আমার বাবু-কে এসব বলতে পারিস না৷
‘বাবু! হাসতে হাসতে মিরহা বলে, দামড়া ছেলে তোর বাবু! বিয়ে করলে এতোদিনে বাবুর আব্বা হয়ে যেতো।
‘পুস্প অভিমান করে উঠে চলে গেছে৷ মিরহা এখনো হাসছে৷
মোবাইল নিয়ে একজনকে কল করে বলে,তোর বর্তমানে কয়টা গার্লফ্রেন্ড?
‘বলিস নারে দুঃখের কথা এহন আর অতো সময় নাই তাই পটাতেও পারি না বেশি এই মাত্র সাতটা বর্তমানে। কমপক্ষে দশটা গার্লফ্রেন্ড না থাকলে মনডা খালি খালি লাগে।
‘দেশে আসলে তোরে আমি জুতামু। সাতটা প্রেমিকা তোর কম কম লাগে? জিসাইন্না তোর সাহস কি করে হলো আমার আলাভোলা ফ্রেন্ডের সাথে টাইমপাস করতে?
‘তোর ফ্রেন্ড কোনডা,রুমা,দিবা,অন্তরা, লায়লা, কথা,লিজা, নাকি বলদ একটা আছে পুস্প নাম। এইডা নতুন। কোনডা এদের মধ্যে থেকে?
‘পুস্প
‘জিসান নাম শুনে হাসতে হাসতে বলে নাইস জোক্স। এই বলদ মেয়ে করবে আর্মির জব!
‘জিসাইন্না ও বলদ না। মনের দিক থেকে সরল। তুই আর কাউকে পাইলি না! তোর জন্য তুই তোর টাইপ খুঁজে নিবি। আজকেই ব্রেকআপ করবি।
‘আচ্ছা প্যারা নিসনা ব্রেকআপ করে নেবো৷ এসব ব্রেকআপ কোন ব্যাপার না আমার জন্য।
‘সর এহনি যাবি আর ব্রেকআপ করবি৷ রাখ ফোন।
‘মিরহা বেডে এসে শুয়ে পরলো।বালিশে মাথা দেয়া মানে মিরহার কাছে মনে হয় এটা যেনো স্মৃতির বাক্স এখানে মাথা দিলেই সব স্মৃতি ভেসে উঠে। কিলবিল করতে থাকে নিউরনে নিউরনে। এরচেয়ে বসে থাকা ভালো। আবার উঠে বসলো৷ একবার ভাবলো বাহির থেকে একটু ঘুরে আসবে কিন্তু ক্যাপটেন শিউলি হয়ত এখন ঘুমাচ্ছে তার কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে তো বের হওয়া যাবে না।

🌿 আমাকে একটা চুমু দেয়া যাবে?
‘দুঃখিত স্যার এখানে চুমু বিক্রি হয় না৷
‘এভাবে বললে তো হবে না আমার চুমু চাই৷ বলতে পারেন বিদায়ী চুমু ।
‘তাহলে তো আরো আগে পাবেন না৷ কারন আমি চুমু দিয়ে ঠোঁট উদ্বোধন করবো যে ঠোঁটের আলিঙ্গনে সেই ঠোঁট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চাই৷
‘বাপরে আমি তো ভয় পেলাম মিস৷
‘ভয়কে জয় করুন। বিয়ে করে নিন আর শত শত কোটি কেটি চুমু খান এই ঠোঁটে। আচ্ছা একটা বাজে প্রশ্ন করতে পারি?
‘আপনার আমার মধ্যে কোন বাজে কিছু নেই যা ইচ্ছে প্রশ্ন করুন।
‘আপনি আমার ঠোঁটের দিকে লক্ষ্য করছেন কখনো?
‘একটা সেল্ফি দেন তো।
‘উঁহু ওয়াক্ত গ্যায়া বাত গ্যায়া।
‘ আমি একটা পিক পাঠাচ্ছি দেখুন তো চিনতে পারেন নাকি?
‘ইশশ কেউ এভাবে দেখে?
‘দেখতে দেখতে তারে আমি চোখ বুঝিয়া জাড়াই ধরি৷
‘আপনি তো ভারি রোমান্টিক!
‘তাহলে কি হালকা রোমান্টিক হবো?
‘উঁহু আমি বলতে চাইছি আপনাকে দেখে বোঝা যায় না আপনি এতো রোমান্টিক হতে পারেন।
‘মানুষ চেনা কি সহজ নাকি মিস? আগে আগে আরো কত কিছু জানতে পারবেন আর অবাক হবেন।
‘আমি অপেক্ষায় আছি আপনাকে দেখে আবাক হওয়ার৷
জানালার বাহিরে লেকের মত সেখানে কপোত-কপোতী দেখে ফারজাদের সামনে কাটানো স্মৃতি গুলো ভেসে উঠলো চোখের সামনে৷ স্মৃতি হচ্ছে এমন এক কাঁটা যা উপড়ে ফেলা যায় না আবার গিলেও ফেলা যায় না৷ যতবার মিরহা ভুলতে চায় তত যেনো গভীর ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকে। মোবাইলের লক এ্যাপে ঢুকে ফারজাদের একটা ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে বলে….. “সবাই বলে,শূন্যস্থান ধুলাবালি দিয়েও পূরণ হয়ে যায়! অথচ পুরা পৃথিবী দিয়ে কেউ আমাকে ‘তোমার শূন্যতা পূরণ করতে পারবে না!!
“তুমি আমার জীবন জুড়ে এক মহাকাল শূন্যতা,সে শূন্যতার পূর্নতা কেবল তুমিই!!

#চলবে