সে আমার বৌপ্রিয়া পর্ব-১৯+২০

0
68

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৯
কয়বার বিয়ে করার শখ তোমার? এক বৌ দিয়া হয় না?
‘ভরা মজলিসে মিরহার কথা শুনো সবাই হতভম্ব!
‘ফারজাদ নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। চোখ ডলে ভালো ভাবে তাকাচ্ছে।
‘এতো চোখ ডলাডলির কি আছে! বুইড়া হয়ে গেছো চোখে দেখো না নাকি!আমি তোমার বিয়ে করা বৌ মিসেস ফারজাদ সিকদার।
‘রাহার বিয়ের আলাপ বাদ দিয়ে সবার মধ্যে গসিভ চলছে, এই বিয়ে নিয়ে৷ ফারজাদ সিকদার বিবাহিত!কতজন মনে মনে আর কতজন প্রকাশও করেছে তাদের মেয়ের জামাই ফারজাদকে পছন্দ।
‘রুহি ও এসেছিলো রাহার বিয়ে খেতো। সবাই চুপ করে থাকলেও রুহি এসে বলে,আমার উডবির সম্পর্কে মিথ্যে অপবাদ দিলেই আমরা বিশ্বাস করবো?
‘তা আপনার উডবির আরেক জায়গায় বিয়ে দিচ্ছেন কেনো?
‘বিয়ে মানে!আজ ফারজাদের কাজিন রাহনুমা রাহার বিয়ে।
‘মিরহা থামলো। স্টেজে উঠে ফারজাদের কলার ধরে বলে,এই হাঁদারাম এমন শেরওয়ানি পরে মানুষ বিয়ে খেতে আসে!
‘রুহি রেগে এদিকে আসছিলো।
‘ফারজাদ হাত দিয়ে ইশারা করে মানা করে দিলো।
‘কেনো মানা করছো!এই মেয়ের এতো সাহস ভরা মজলিসে তোমার কলারে হাত দেয়?
‘রুবিনা সিকদার এসে বলে,কলার ছাড়ো। পারিবারিক আলোচনা চার দেয়ালের মধ্যে করতে হয় ভরা মজলিসে না।
‘আপনি কে?
‘আমি এই হাঁদারামের জন্মদাত্রী জননী।
‘স্যরি আন্টি।
‘ইটস ওকে
‘আন্টি আপনি এই মেয়েটার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলছেন কেনো?
‘আমি কার সাথে কি ভাবে কথা বলবো সেটা কি এখন তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে?
রুবিনা বেগম সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমার ছেলের বৌ আজকেই অস্ট্রেলিয়া থেকে আসলো। বাকি কথা আমি প্রেস ডেকে এনাউন্সমেন্ট করবো। দুঃখিত অনাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝির জন্য। প্লিজ ইন্জয়।
‘রাহা বারবার তাকাচ্ছে। ইশশ কত ভাগ্যবতী মেয়েটা। যার সাথে কথা বলতে ভাবতে হয় একশবার। কেউ তার কলার ধরলো কতো অধিকার নিয়ে! ভালোবাসলে মানুষ এমন ভাবেই মানুষটাকে নিজের ভাবে।
‘রুবিনা বেগম বললেন আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহল৷ তুমিই মিরহা তাইতো?
‘জ্বি আন্টি।
‘রুবিনা বেগম ফাবিহাকে দেখিয়ে বললেন ওর সাথে যাও ড্রেস চেঞ্জ করে এসো। ও হলো ফাবিহা সিকদার তোমার বোন৷
‘ফাবিহা বললো ভাবি চলুন।
‘মিরহা ফাবিহার সাথে যাচ্ছে আর ভাবছে এরা সবাই আমার সাথে এতো ভালো বিহেভিয়ার করছে! আমার সম্পর্কে তারা জানলে কি করে?
‘কি ভাবছো ভাবি?
‘কই কিছু না তো।
‘এই নাও শাড়ি,সাথে হালকা কিছু গহনাও আছে৷ শাড়ি পরতে পারো তো?
‘মিরহা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ানো।
‘তাহলে দ্রুত রেডি হও আমি বাহিরে দাঁড়াচ্ছি৷ একটু দ্রুত কইরো ভাবি। বরযাত্রী আসার সময় হয়ে গেছে কিন্তু।
‘মিরহা বেডে বসে ভাবছে কি হলো! আমি কেস খেতে এসেছি নাকি কেস খাওয়াতে এসেছি?
‘শাড়ী পরে রেডি হয়ে নিলো। ভাবছে বের হবে কি না?
‘ভাবি আর কতক্ষণ লাগবে তোমার? আমার আবার গেট ধরতে হবে বরের জুতা চুরি করতে হবে।
এমন ভাবে বলছে ফাবিহা। যেনো জুতা চুরি আর গেট ধরা যেনো খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ।
মিরহা বের হয়ে আসলো। গাড়ো জাম কালারের শাড়ী হালকা গহনা।
‘হায়! ভাবি তোমাকে তো পরি লাগছে! তবে একটা কিছু মিসিং মনে হচ্ছে। ওয়েট। ফাবিহা লিপস্টিক বের করে হালাকা করে ঠোঁট দিয়ে দিলো। এবার পার্ফেক্ট।
‘মিরহা বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। কি করতে আসলো আর কি হচ্ছে তার সাথে! মাথাটা কেমন চক্কর দিচ্ছে, গা গোলাচ্ছে বমি পাচ্ছে। আসেপাশে তাকিয়ে পরিচিত কাউকে খুঁজচ্ছে। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির প্রথম দিন কেউ তো পরিচিত নেই তার! ফারজাদ পেছনে দাঁড়িয়ে বলে,বৌ এভাবে কেউ সারপ্রাইজ দেয়?ভাগ্যিস হার্ট এটাক করিনি! মিরহা ঘুরে ফারজাদের হাত নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরলো।
”কি হয়েছে তোমার।
‘মিরহা কোনমতে বললো ওয়াশরুম। মাথা চক্কর দিয়ে পরে যাওয়ার আগেই ফারজাদ মিরহাকে কোলে তুলে নিলো৷
আশেপাশের কয়েকজন তাকিয়ে আছে সেদিকে৷ সবার দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিকটস্থ ক্লিনিকে নিয়ে আসলো৷
‘ডাক্তার সাধারণ চেকার করে বলে,এই অবস্থায় রেস্ট প্রয়োজন সাথে পর্যন্ত ভিটামিন জাতীয় খাবার৷ ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে এখনো কিছু খায়নি৷ এমন ভাবে না খেয়ে থাকলে বেবির গ্রোথে সমস্যা হবে৷ সুস্থ সন্তান জন্মদিতে চাইলে নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে৷
‘ফারজাদ বোকার মত ডাক্তারের কথা শুনছে। কি বলছে ডাক্তার এসব?বেবি আসলো কোথা থেকে!
‘আপনার কিছু ভুল হচ্ছে। আমার ওয়াইফ তো প্রেগন্যান্ট না।
‘আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট। বিশ্বাস না হলে আল্ট্রা করে দেখতে পারেন৷
‘এসবের কোন দরকার নেই আমার ওয়াইফ আমি জানি৷আপনারাদেন কথা বিশ্বাস করবো না আমি। বলেই মিরহাকে আবার কোলে তুলে নিলো। গড়িতে বসিয়ে মিরহার চোখে মুখে পানির ছিটা দিতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর মিরহা পিটপিট করে চোখ খুললো।
‘ফারজাদ মিরহা সামনে কাচ্চি হাজির করলো৷ কাচ্চি তার পছন্দ কিন্তু কনসিভ করার পর থেকে কাচ্চি দেখলে বমি পায়৷
‘মিরহা নাক ধরে বলে,আমি ভর্তা ভাত খাবো৷
‘ফারজাদ আধঘন্টার মধ্যে ভর্তা ভাত এনে হাজির করে। মিরহা তৃপ্তি করে খেয়ে নেয়। এরপর বলে,আইসক্রিম আর বেল পুরি খাবো।
‘ফারজাদ মিরহার সব হুকুম পালন করে নিচ্ছে৷
‘খাওয়া শেষ করে বলে,আপনি কি ভেবেছেন? আমাকে বোকা বানাবেন?
‘বোকা বানাবো মানে? আর তুমি ট্রেনিং ছেড়ে এখানে কি করছো? আমি তো তোমার জন্য অপেক্ষা করতাম বৌজান। আমার তো জানা ছিলো না আমার বৌ আমার জন্য এতো ডেস্পারেট!
‘ছাই আপনার জন্য আসিনি নিজের জন্য এসেছি৷ অধিকারের জন্য এসেছি।
‘মিরহা হুট করে ফারজাদের চুল ধরে টানাটানি করে বলে,আমার ইচ্ছে করছে আপনার গালে কামড় দিয়ে রক্ত বের করে আনতে। চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। আপনার গলার কাছটাতে ছুড়ি দিয়ে দাগ টানতে।
‘কি হয়েছে তোমার? তুমি আসলেই মিরহা তো! নাকি মিনহা বেশি ভূত।
‘ভুত না আমি পেত্নী আপনার ঘাড় মটকাবো।
‘এই চুল ছাড়ো লাগছে আমার। এই শাড়ীতে তোমাকে একদম আমার বৌ বৌ লাগছে।
‘মিরহা ফারজাদের চুল ছেড়ে দিয়ে মন খারাপ করে বলে আমি বাসায় যাবো।
‘বাসায় তো যাবো ফুপির সাথে দেখা করতে হবে। এতোক্ষণে হয়তো তাহাকে নিয়ে চলে গেছে। তোমার চক্করে বিয়ে এটেন্ট করতে পারলাম না। অন্তত তাকে সান্ত্বনা তো দিয়ে আসি।

🌿রুবিনা বেগম ফাবিহাকে বললো,কিরে মিরহা কোথায়?
‘ভাইয়ার সাথে ছিলো। এখন কোথায় বলতে পারছি না।
‘ভেবেছিলাম আজ ওদের এনগেজমেন্ট এনাউন্সমেন্ট করবো। আর দ্রুত বিয়েটা সেরে ফেলবো৷ কোথায় গেলো এই মেয়ে! আশেপাশে দেখতে দুইজনকে দেখতে পাস কিনা?
“আম্মু আজ আর বলতে হবে না৷ দেখো প্রায় সবাই চলে যাচ্ছে। এনগেজমেন্ট এনাউন্সমেন্ট না করে সবাইকে সোজা বিয়ের কার্ড পাঠিয়ে দিও৷
‘তা ঠিক বলেছিস। মেয়েটা যখন নিজের ইচ্ছেতে ফিরে এসেছে সসম্মানে তাকে আমরা গ্রহন করবো৷
‘কিন্তু বাবা কে কি করে মানাবে?
‘বানানোর কি আছে? বিয়েটা কি ছেলেখেলা! বিয়ে যখন হয়ে গেছে তখন আর কোন অপশন নেই।
‘তা ঠিক তবুও বাবা একটু ঘাপলা করবে মনে হচ্ছে।
‘করুক সাহস থককলে দেখি তার ঘাড়ে ক’টা মাথা!

‘ফারজাদ সিকদার ম্যানশনে নিয়ে আসলো মিরহাকে। আলিশান বাড়ি লাক্সারি ফার্নিচার। সুন্দর করে সাজানো মনে স্বপ্নের রাজ্য! মিরহাকে নিয়ে সোজা ফারজাদের রুমে আসলো। রুমে এসেই ফারজাদ বলে,ওয়েলকাম টু ইউর পার্সোনাল রুম। আজ থেকে আমিও কিন্তু তোমার পার্সোনাল।
‘মিরহার আবার বমি পেলো সামলাতে না পেরে হরহর করো ফারজাদরর পায়ের উপর বমি করে দিলো।
‘ফারজাদ কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে আসলো। আচ্ছা তোমার পেটে কি গ্যাস জমেছে? নাকি বমি করার রোগ হয়েছে তোমার?
‘এসব তোমার কর্মের ফল। এই অবস্থায় এসব তো নরমাল।
‘কর্মফল এই অবস্থায় মানে! তুমি কি প্রেগন্যান্ট?
‘হুম।
‘ফারজাদ মিরহার হাতটা ছেড়ে দিলো। তার পৃথিবী জেনো মূহুর্তে অন্ধকার হয়ে গেলো।

#চলবে

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২০( সারপ্রাইজ)

ইয়ে ক্যায়্যা হুয়া! প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো! ধুর এতো সুন্দর বৌ এহনো বৌয়ের সাথে প্রপার রোমান্স করলাম না সোজা বাপ বানিয়ে দিলো! কি করেছিলাম ওই রাতে? আমার ব্রেন নাকি মাকাল ফল! মনেও পরছে না। এখন জিজ্ঞেস করলে ঠাসসস করে রেগে চলে যাবে। বৌ না জেনো নাগা বারুদ কিছু বলার আগেই ছ্যাত করে জ্বলে উঠে।
‘এমন ক্যাবলাকান্তের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে ওয়াশরুম থেকে বের হন।
‘এই শাড়ি পরবে না আর আমার সামনে। আদর ঠিকমতো করলাম না আর একটা বাপ বানিয়ে দিলে? এহন আবার শাড়ি পরে কোমড় আর নাভি দেখাচ্ছো!আমি এতো তাড়াতাড়ি দুইটা বাপ হতে চাই না।
‘মাথার স্ক্রু আছে নাকি কোথাও খুলে পরে গেছে! একটা বাপ দুইটা বাপ কি? হাঁদারাম সরেন চোখের সামনে থেকে।
‘ফারজাদ ওয়াশরুমের বাহিরে এসে গালে হাত দিয়ে বসলো৷ মনে মনে বলছে,বৌয়ের সাথে হানিমুন,ফুলসজ্জা কিছু হলো না অথচ আমি বাপ হতে যাচ্ছি। আচ্ছা সেদিন রাতে কি কি করেছিলাম। এই নাগা মরিচ কিছু বলল না! বাঁধা তো দিতে পারতো! ধুর ভাল্লাগে না কয়েকদিন পর কেউ পাপা পাপা বলে চেচামেচি করবে। অথচ বোকার মত তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলবো, আমার তো মনে নেই সেদিনের রোমান্স এখন একটু মনে করার সুযোগ দেবে গো? সাথে সাথে আমার চুল টেনে ধরে বলবে মেরে তক্তা বানিয়ে দেবো। ভাবতেই শরম পাচ্ছে এখন সবাই জেনে যাবে আমি বৌয়ের সাথে ইয়ে টিয়ে করেছি৷ কিভাবে মুখ দেখাবো সবাইকে?
‘এমন পঁচা আলুর মত মুখ করে বসে আছেন কেনো? পঁচা আলু আমার সহ্য হয় না কিন্তু। একদম ধরে ডাস্টবিনে ফেলে দিবো৷
‘তুমি এটা কোন কাজ করলে?
‘কোনটা?
‘সোজা প্রেগন্যান্ট! এতো এডভান্স কেউ হয়!
‘এসব আমি করেছি?
‘নয়তো কে করেছে আমি?
‘আপনি না করলে এই দূর্ঘটনা কিভাবে ঘটল।
‘কেনো তুমি বাঁধা দিতে পারলে না! সবাইকে এখন কিভাবে মুখ দেখাবো।
‘মিরহা ফারজাদকে বেডের সাথে চেপে ধরে ফারজাদের বুকের উপর বসে বলে,ও তোর মানসম্মান কমে গেছে? সেদিন মনে ছিলো না। পুরো রাতটা শান্তি দিস নি আর এখন বলছিস মুখ দেখাবো কি করে? ওসব করার সময় মনে ছিলো না তুই নিজেকে হিজরা হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করতে চাস।
‘একদম বাজে কথা বলবে না। আমার সুন্দরী একটা বৌ আছে। তার সাথে দিন রাত রোমান্স করবো।
‘আপনার রোমান্স পকেটে রাখুন। আগামীকাল থেকে বিজনেস জয়েন করবেন। গর্ভে বাচ্চা দিলেই বাপ হওয়া যায় না। আমার আর আমার সন্তানের ভরনপোষণ সব বহন করতে হবে। বেকার ঘুরে ফিরে বাপের টাকা উড়িয়ে বৌয়ের সাথে রোমান্স করে এরপর বলবেন এসব কেনো করেছো! এই ছেবলামি বাদ দিয়ে আমার সন্তানের যোগ্য পিতা হওয়ার মিশন শুরু করুন।
‘তুমি আমার ঠিকঠাক বৌ হলেই আমি ঠিকঠাক বাবা আর ঠিকঠাক বর হবো।
‘আমি কি বেঠিক বৌ!
‘তা নয়তো কি? কিছু বলার আগেই ফোঁসফোঁস করে উঠো। কেনো একটু ভালোবেসে একটু আদুরে স্বরে বলা যায় না?
‘মিরহা সরে আসলো তারপর ফারজাদের কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে ফারজাদের হাতে নিজের হাত আবদ্ধ করে আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল আলিঙ্গন করিয়ে বলে,জান আমি না আমার সন্তানের যোগ্য পিতা চাই। এই জান শুনছো?শুনোনা গো কাল থেকে অফিস যাওয়া শুরু করবে নিয়মিত।
‘ফারজাদ মিরাহাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু দিতে চাইলে মিরহা সরে এসে বলে,ব্যাডা মানুষ খালি সুযোগ খুঁজবে এসব করার। সরেন এবার বের হন আমার জন্য খাবার নিয়ে আসুন।
‘তুমি এতো.. বলতে যেয়ে চুপ হয়ে গেলো। ( তুমি এতো খাও কেনো।)
‘আমি এতো মানে!
‘তুমি এতো কিউট কি খাবে বলো? আমি তোমার পার্সোনাল ওয়েটার অর্ডার করো আমি হাজির করছি।
‘আপনি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন?
‘উত্তর পরে আগে ডিসাইড করো আপনি, তুমি, তুই কোনটা সম্বোধন করবে?
‘বলুন ভালোবাসেন সত্যি আমাকে?
*ভালোবাসবো না বলতে বলতে তোমারে আমি এক আকাশ সম ভালোবেসে ফেলেছি।
‘তা কিভাবে এই অসাধ্য সাধন হলো?
‘কিভাবে ব্যাখা করবো জানিনা। ‘তুমি আমার কাছে মধ্যে রাতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, যে পৃথিবীর সমস্ত আঁধারেও আমার জন্য আলোর ফুয়ারা। “তুমি আমার রক্তে মিশে গেছো, তোমাকে ভাবতে ভাবতেই আমার ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে স্নিগ্ধ হাসি। আমি এমন ভাবে নিজেকে তোমার মধ্যে হারিয়ে ফেলেছি এখন আর সেখান থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। এই যে রোজ বুকে জমছে তোমাকে হারানোর ভয়, খাঁচায় বন্দী পাখির মত মনটা ছটফট করে। কেউ তো জানে না হৃদয়ের দহন। শুধু আমি জানি ” তুমি বিহীন আমার নির্বাসন”
‘মিরহা কিছু সময় চুপ করে তাকিয়ে আছে ফারজাদের মুখের দিকে। এই কথাগুলোর সত্যতা প্রামন দিচ্ছে ফারজাদের ভেজা চোখ, ঠোঁটের কোনের অতৃপ্ত হাসি৷ মিরহা বেশ খানিকটা এগিয়ে এসে ফারজাদের পায়ের উপর ভর দিয়ে ফারজাদের কপালে উষ্ণ ছোয়া দিলো।
‘ফারজাদ মিরহাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি তোমাকে স্যরি বলবো না তবে আমি বলবো আর একটাবার ভালোবাসো আমাকে। আমি তোমাকে পৃথিবীর সব ভালোবাসা নিংড়ে দেবো।
‘এবার খাবার নিয়ে আসো খেয়ে বাসায় যাবো। আম্মু জানেনা আমি দেশে ফিরেছি।
‘বাহহ তা এই চমৎকার হলো কিভাবে?
‘আপনার সাথে রাহার তিনটা পিক পোস্ট করেছেন সেটা থেকে।
‘আরেহহহ বাহহহ বৌ আমার এতো পজেসিভ এতো জেলাসহ জানলে তো আরো আগেই কয়েকশ কাপল পিক আপলোড দিতাম। বৌ আমার উড়ে চলে আসতো।
‘আমি কি হাত গুটিয়ে বসে থাকতাম? আপনার হাত পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতাম।
‘কি ডেঞ্জারাস বৌ গো তুমি!
‘কথা কম খাবার নিয়ে আসেন দ্রুত।
‘ফারজাদ চলে যাওয়ার পর মিরহা ঘুরে ঘুরে বাসাটা দেখলে লাগলো। সার্ভেন্ট ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। ঘুরতে ঘুরতে চোখে পরলো একজন মধ্য বয়স্ক লোক চোখে চশমা পরে বই পড়ছে। দ্যা আর্ট অফ ডেথ। বইয়ের নামটা দেখার জন্য একটু সামনে এগিয়েছিলো মিরহা।
‘কার এতো বড় সাহস আমার পার্সোনাল স্পেসে প্রবেশ করে! নাম কি তোমার? কে কাজে রেখেছে তোমাকে?
‘আমার নাম মিরহা ভূইয়া। আর কাজে রাখবে কেনো আমি এই বাড়ির বৌ।
‘চোখের সামনে থেকে বই নামিয়ে বলে, বৌ! এ বাড়িতে বৌ নেই কোন।
‘ নেই মানে কি? একজন তো ছিলোই শ্বাশুড়ি আম্মা আর এখন আমিও।
‘তুমি জানো আমি কে?
‘কে আপনি? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাকি নেইমার নাকি রোনালদো?আপনাকে জানতে হবে!
‘বেয়াদবি করার সাহস পাচ্ছো কোথা থেকে? ফয়সাল সিকদার। সিকদার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক।
‘আসসালামু আলাইকুম শ্বশুর বাবা। আমি মিরহা সিকদার৷
‘হোয়াট?
‘আপনার ছেলের ওয়াইফ।
‘তাহলে তুমিই সেই মেয়ে? আচ্ছা আমার ছেলের জীবন থেকে একেবারে চলে যাওয়ার জন্য কি নেবে বলো? যা চাও পাবে। যত টাকা ইচ্ছে ডিমান্ড করো বাড়ি গাড়ি কি চাও।
‘আপনার ছেলেকে দিলেই হবে৷ আমি বাসায় বসে ঝালমুড়ির মশলা বানিয়ে দেবো আর আপনার ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রি করবে। দারুন না আইডিয়াটা?
‘আমার ছেলের জন্য তো আসোনি! এসেছো টাকার জন্য তোমাদের মত মেয়েদের আমার চেনা আছে।
‘আমাদের মত মেয়েদের সাথে এতো বেশি চলাফেরা বুঝি?
‘মুখ সামলে কথা বলো।
‘যে শ্বশুর নিজের ছেলের বৌয়ের সাথে মুখ সামলে কথা বলতে পারে না তার সাথে আবার কিসের মুখ সামলে কথা!
আপনার ছেলের বৌ হিসেবে না হোক একজন বাবা হিসেবে আপনার উচিৎ ছিলো নিজের মেয়ের বয়সী মেয়ের সাথে ভদ্র আচরণ ভদ্র ব্যবহার করা।
‘ফয়সাল সিকদার গর্জে উঠে সামনে থাকা টেবিলে স্বজোড়ে লাথি দিলেন৷ টেবিল এসে মিরহার পায়ের উপর পরতেই মিরহা চিৎকার করে নিচে পরে গেলো।
#চলবে