সে আমার বৌপ্রিয়া পর্ব-২১+২২

0
61

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২১

মিরাহা পড়ে যাওয়ার আগেই ফারজাদ নিজের বাহুতে আগলে নেয় মিরহাকে৷ গর্জে উঠে বলে,বাবা তোমার এমন অধঃপতন হলো কি করে! কে সাহস দিলো আমার ওয়াইফের গায়ে হাত তোলার?
‘ফারজাদ ভুলে যেওনা তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো! আমি তোমার জন্মদাতা পিতা৷ মুখ সামলে কথা বলো!
‘স্যরি মিস্টার ফয়সাল সিকদার আপনার সাথে ভদ্র আচরণ এই মূহুর্তে আসছে না। আপনার এতো সাহস আপনি আমার অনাগত সন্তানের মায়ের গায়ে হাত তুলেছেন।
‘এই বেয়াদব মেয়েটাকে কিছুতেই আমি তোমার ওয়াইফ হিসেবে মেনে নিবো না৷
‘বিয়ে করেছি আমি, বৌ আমার, আপনার মানা না মানায় কি আসে যায়?
‘কি শুরু করলে তুমি!বাবা তো আমাকে আঘাত করেনি।নিজের পা কে আঘাত করেছে। ভুলবশত সেটা আমার পায়ে এসে পরেছে। কেউ নিজের বাবার সাথে এমন বিহেভিয়ার করে?
‘সত্যি বলছো?
‘মিথ্যে কেনো বলবো! স্যরি বাবা আমার জন্য মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি হলো৷
‘ইট’স ওকে। ফয়সাল সিকদার মনে মনে ভাবলেন বুদ্ধিমতী৷
‘ফারজাদ মিরহাকে কোলে তুলে নিলো৷
‘কি করছো বাবা সামনে তো!
‘তো! আমার বৌ অসুস্থ তাকে একা ছেড়ে দেবো?
‘রুমে এসে মিরহাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে সার্ভেন্ট ডেকে বরফ আনিয়ে নিজের হাতে মিরহার পায়ে লাগিয়ে দিচ্ছে। একটু পর পর জিজ্ঞেস করছে বেশী লাগেনি তো তোমার?
‘মিরহা বেশ অবাক হচ্ছে! প্রথম যে ফারজাদকে চিনতো সে ছিলো সাদামাটা, তেল চিপ চিপে চুল, আনস্মার্ট ভীতু তবে মনটা ছিলো কোমল। হঠাৎ সেই ফারজাদের বহিঃপ্রকাশ হলো ঠকবাজ হিসেবে। এরপর এই স্মার্ট, সুদর্শন, ক্লাসি, ড্যাশিং বড় লোকের একমাত্র ছেলেকে দেখলো। কিন্তু এখন যাকে দেখতে পাচ্ছে সেরকম একজন জীবনসঙ্গী তো প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্ন। কেয়ারিং, পজেসিভ, লাভিং একটা হ্যান্ডসাম বর।
‘এভাবে তাকিয়ে থাকলে নজর লাগবে তো আমার।
‘লাগুক আমার নজর ছাড়া আর কারো নজর লাগতে পারবে না।
‘এই বাবার সাথে তোমার কি হয়েছে সত্যি করে বলো তো।
‘আগে তুমি বলো বাবার সাথে কেউ এমন বিহেভিয়ার করে?
,কখনো করিনি কিন্তু তুমি কোনভাবে পড়ে গেলে বেবির জন্য রিস্ক ছিলো। তাই বলে ফেলছি।
‘ তোমার যে সন্তানকে এখন পর্যন্ত ফিল করতে পারেনি তার জন্য যিনি তোমাকে আদর যত্নে এতো বড় করলো তার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে! আজ পর্যন্ত বাবা তোমাকে কতটা ভালোবাসা দিয়েছে? সে ভালোবাসার বিনিময়ে তুমি তাকে কি দিয়েছো? তাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছো তাও তাদের লেভেলের চেয়ে নিচু লেভেলের মেয়েকে। হুট করে বৌ নিয়ে বাসায় চলে এসেছো! এতো বছর পর্যন্ত আয়েসি জীবন কাটাচ্ছ আর তার সাথে এমন রুড ব্যবহার!
‘আচ্ছা স্যরি আর কখনো এমনটা করবো না৷ আর বাবা তো আমাকে অনেককক ভালোবাসে সেও ক্ষমা করে দেবে।
‘স্যরি আমাকে না বাবাকে বলবে। যদি কখনো বাবা,মায়ের সাথে আমার কোন ঝামেলা হয় তখন তুমি ধমক আমাকে দিবে শাসন আমাকে করবে। ভুল তাদের হলেও। তবে যখন আমি তাদের সামনে থাকবো না তখন তাদের বুঝিয়ে বলবে।কিন্তু আমার সামনে আমার জন্য তাদের সাথে রুড বিহেভিয়ার করবে না। তারা তোমার কাছে আগে তারপর আমি। ওনারা আছেন বলেই আমি তোমাকে পেয়েছি৷ তুমি আছো।
‘ফারজাদ মিরহার হাত দুটো নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলে,বৌজান তুমি এতো ভালো কেনো!আমি তোমাকে যতটা ভালো কল্পনা করেছি তুমি তার চেয়ে কোটি কোটি গুন ভালো! কিভাবে এমন মন মানসিকতা তৈরি করলে? কিভাবে এতোটা পার্ফেক্ট তুমি!তোমার প্রতি দিনদিন সম্মান আর ভালোবাসা বেড়েই চলেছে।
‘এই শিক্ষা তো আমার মায়ের। আমার মা কি বলে জানো?
‘তুমি জানালেই জানতে পারি।
‘ পৃথিবীতে বাবা মায়ের পরে বৌ। তাই তাদের যে সম্মান করতে পারে না সে নিজের বৌ কেও সম্মান করতে পারবে না৷
‘আম্মা অনেক ভালো। তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডি হও শ্বশুর বাড়ি যাবো।
‘এতো শখ শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার?
‘শখ হবে না! দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র শ্বশুর বাড়ি। তাও আজ পর্যন্ত জামাই আদর পেলাম না। জামাই আদর তো বহুদূরে। বৌ আদরই পেলাম। বিয়ে পর্যন্ত মনে আছে কিন্তু তারপর বাপ হওয়ার প্রসেসিং বুঝলাম না। না আসতো জ্বর আর না মিস হতো বাসর।
‘তোমার কপাল ভালো জ্বর এসেছিলো। জ্বরকে ধন্যবাদ দাও। জ্বর না আসলে মধুচন্দ্রিমা হতো না। আর আজ আমি তোমার সামনে ও থাকতাম না।
‘কোনদিন ক্ষমা করতে না আমাকে?
‘উঁহু তোমার বৌ হয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতাম কিন্তু তোমার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকতাম।
‘এতো জেদ কেন তোমার?
‘কিভাবে ধোঁকা দিছো?এরপর আর কি এক্সপেক্ট করো! আজ বাচ্চার অধিকার আদায়ের জন্য এসেছি। এসে ফ্রীতে নিজের অধিকারও বোনাস পেলাম।
‘ফারজাদ মিরহার পেটের উপর আলতো ভাবে হাত রেখে বলে,আম্মু তোমাকে স্বাগতম আমার জীবনে। তোমার জন্য অনেক ভালোবাসা৷ তুমি আমার পূর্নতার প্রধান কারণ। তাড়াতাড়ি এসে পরো তো আম্মু। তারপর দুজন মিলে তোমার আম্মুর জেদ কমাবো।
‘আমার ছেলে চাই আম্মু আম্মু শুরু করেছেন কেনো?
‘আমার মেয়ে চাই। আমার মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রিন্সেসের মত সাজিয়ে রাখবো।
‘আমার ছেলেই হবে দেখে নিয়েন৷ আর্মি বানাবো তাকে আমি। আমার স্বপ্ন আমার ছেলে পূরণ করবে৷
‘আচ্ছা যখন হবে তখন দেখা যাবে কে আসে। এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডি হও।তোমাকে বড্ড ভালোবাসি বৌপাখি৷ আমি তোমাকে এজন্মে আর হারাতে চাই না৷
“শত জনম না হোক তুমি আমায় এক জনম ভালোবাসো”
শত মান অভিমানের শেষে আমি শুধু তোমাকেই চাই।
‘আজকাল কবি কবি ভাব ঠিক আগের হাঁদারামের মত কারন কি?
‘সামনে যদি থাকে সুন্দরী বৌ তখন মনে উড়তে থাকে শতডানার প্রজাপতি। সেই রং প্রকাশ করলেই আমি হয়ে উঠি কবি।
‘আপনি খাবেন না?
‘নাহহ কত জনম হয়ে গেলো বৌয়ের মুখে ভালোবাসি শুনিনা!
‘অপেক্ষা করুন শতবার শতভাবে শুনবেন, অনুভব করবেন৷ এবার হাত ধুয়ে খেতে বসুন।

‘ফয়সাল সিকদার দরজার সামনে থেকে সরে আসলেন৷ চোখে অশ্রু মুখে মুচকি হাসি। নিজের করা ব্যবহারের জন্য লজ্জিত হলেন মনে মনে। এমন ছেলের বৌ পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যপার! তার ছেলে এমন হিরের টুকরো মেয়েকে কয়লার খনি থেকে খুঁজে নিয়ে এসেছে। সব রাগ অভিমান অভিযোগ নিমিষেই শেষ। মনের মধ্যে প্রশান্তি বিরাজ করছে।
সে ফারজাদের রুমে যেতে চেয়েছিলো তাদের এ বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলবে এরজন্য। কিন্তু সেখানে যেয়ে মিরহা কথা শুনে সে মুগ্ধ।

🌿দীর্ঘ ছয়মাস পর জেল থেকে মুক্ত হয়েছে রাফিন। বের হয়েই মিরহা আর ফারজাদের খোঁজ নিয়েছে। কাচের জগটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বলে,তোদের সাজানো সংসার ঠিক এভাবেই চুর্নবিচুর্ন করে দেবো ফারজাদ সিকদার। আমাকে ধোঁকা দেয়া! কি দোষ ছিলো আমার? ভালোবাসলাম আমি আর সংসার করবি তুই?তোদেরকে আমি শান্তিতে থাকতে দিতে পারিনা কিছুতেই না।নিজে মরবো তোদেরও মারবো৷ অথবা বেঁচে থেকে তোদের মরার মত বাঁচিয়ে রাখবো। বলেই বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগলো।
‘রাফিন তোকে আমি এসবের জন্য জেল থেকে মুক্ত করে আনিনি৷
‘কিন্তু আমি তো এরজন্যই বেঁচে আছি।
‘এসব কিছুই তুই করবি না।
‘আম্মু বিশ্বাস করো আমার কোন দোষ নেই। ওই ফারজাদ আমাকে বলেছিলো কথা দিচ্ছি যেভাবেই হোক মিরহাকে তোর হাতে তুলে দেবো৷ এসব বলে ও আমার সাথে মিথ্যে বলে,আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে দিনের পর দিন আমার চোখের সামনে প্রেম করে গেছে৷ আমি যতবার জিজ্ঞেস করেছি বলেছে, ওর কোন ইন্টারেস্ট নেই মিরহার প্রতি এসব আমার জন্য করছে। এরপর যখন বিয়ের প্ল্যান করলো আমি রাজি হইনি। ও বললো সাথে সাথে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। কিন্তু ও আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমি ওকে ছেড়ে দিতে পারি না আম্মু।
‘রেবেকা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,এসব ভুলে যা বাবা।
রাফিন গর্জে উঠে টি টেবিল উল্টে ফেলে বলে,পারছি না ভুলতে।
#চলবে

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২২

‘ তোমরা কোথায়?
‘আমি শ্বশুর বাড়ি তোমাদের বাসায় আর ফিরবো না আম্মু।
‘ফিরবে না মানে! সমস্যা কি তোমার? যা করেছো মেনে নিয়েছি এরজন্য মাথায় চড়ে বসেছো?
‘আম্মু বাবা নিতে আসলে তবেই যাবো৷
‘তুমি এ-ই মূহুর্তে বাসায় আসো বাকিটা আমি পরে দেখে নিচ্ছি।
‘এক ঘন্টা পর বের হবো৷
‘মিরহাকে নিয়ে আসতে হবে না এখন৷ তুমি একা আসবে।
‘আচ্ছা।
‘কার সাথে কথা বলছো বৌকে লুকিয়ে?
‘তোমার শ্বাশুড়ি।
‘এ-ই তুমি এদিকে আসতো।
‘আমি তো এদিকেই।
‘কাছে আসো।
‘কতটা কাছে?
‘ফারজাদ মিরহার হাত ধরে নিজের অনেকটা কাছে টেনে নিয়ে বলে আপাতত এতোটা কাছে হলেই হবে।
‘কেউ দেখে ফেলবে ছাড়ো।
‘ছাড়ার জন্য ধরিনি। আম্মুর আরও বেশ কিছু সময় লাগবে ফিরতে।
‘ফারজাদ মিরহার পিঠের চুল সরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিরহার কাঁধে মাথা রেখে কোমরে হাত রেখে বলে, তুমি আমাকে মিথ্যে কেন বলেছিলে!
‘কি মিথ্যে!
‘মনে আছে তুমি রাফিনকে বলেছিলে তোমার বাবা গার্মেন্টসে জব করে। তোমাদের ফিনানশিয়াল অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আবার গতকাল বললে,আমাদের লেভেল এক না নিচু লেভেলে বিয়ে করেছি।
‘প্রথম মিথ্যেটা বলেছিলো জিসান৷ তোমার সাইকো বন্ধুর থেকে মুক্তি পেতে। দ্বিতীয়টা তো সত্যি কথা ।
‘কিভাবে সত্যি কথা হলো? তোমার বাবা একজন সাবেক সেনাপ্রধান। তোমাদের বংশ মর্যাদা অর্থ কোন দিক থেকে তো আমার চেয়ে কম না। অনায়াসে তুমি আমার চেয়ে ভালো ছেলে বিয়ে করতে পারতে।
‘অবশ্যই কম।তোমার বাবার চোখে কম।সে ভাবছে তুমি কাকে না কাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছো যে কিনা বিয়েটা তোমার টাকার জন্য করেছে। আর তাছাড়া তোমাদের মতো আমাদের এতো এতো টাকা পয়সা লাক্সারিয়াস জীবন যাপন ও নেই। তবে আমাদের যা আছে আলহামদুলিল্লাহ।
‘কিন্তু তুমি তো জানতে না আমি বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে৷
‘জানতাম না সেটা তুমি জানো না৷
‘তা ঠিক তবে বাবা যখন জানবে সে আরো অনুতপ্ত হবে।
‘আমারও তো তার সাথে আরেকটু নরম স্বরে কথা বলা উচিৎ ছিলো।
‘ফারজাদ মিরহার কাঁধে কামড় বসিয়ে বলে,তুমি কি আসলেই নরম স্বরে কথা বলতে পারো!
‘মিরাহা সামনে ঘুরে কিছু বলতে চাইলে। ফারজাদ বলে,দাঁত বসিয়ে দেবো কিন্তু। যেভাবে আছো সেভাবেই কথা বলো৷
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি।
‘মিরহা মৃদু হেসে বলে,আর কতবার বলবে!
‘আমার বৌকে আমার যতবার ইচ্ছে হবে ততবার বলবো তাতে তোমার কি? আনরোমান্টিক রসকষহীন এক বৌ পাইছি একটা৷
‘আমি রসকষহীন!
‘তা নয়ত কি? এতো কিউট একটা হ্যাসবেন্ড, কই তাকে কথায় কথায় চুমু খাবে। তা’না উল্টো রাগ দেখানোর অজুহাত খুঁজো।
‘আমি চুমু খাইনা।
‘ফারজাদ মিরহাকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে বলে,আই লাভ চুমু। চুমু খেতে সেই স্বাদ।
‘প্রায় তিন মিনিট পরে ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলে,এমন একটা বৌ থাকলে কাজকাম কিছু হবে না৷ সারাদিন বৌকে চুমু খাওয়ার জন্য বৌয়ের পেছন পেছন ঘুরতে হবে।
‘মিস্টার চুমুখোর শুনুন৷ আপনি এখন চলে যান৷ আগে আমি আম্মুর সাথে কথা বলে সামলে নেই তারপর তুমি এসো কাল৷
‘কাল এসো মানে!আমি আমার বৌয়ের সাথে ঘুমাবো।
‘সারাজীবন পরে আছে। এখন আদিক্ষেত্যা না করে বাসায় যান৷
‘কিউট করে বলো আর মিষ্টি করে চুমু দাও তাহলেই যাবো৷
‘মিরহা ফারজাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,মিস্টার হ্যাসবেন্ড এখন তুমি বাসায় যাও খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে জান বলেই আলতো করে গালে চুমু খায়।
‘ফারজাদ মিরহাকে জড়িয়ে ধরে বলে ভালোবাসি তোমাকে বৌজান।

‘🌿ফারজাদ বাসায় ঢুকতেই দেখে রাফিন সোফায় পা তুলে বসে আছে। রাফিনের কলার ধরে বলে,তোর সাহস কি করে হলো আমার বাসায় ঢোকার!
‘ওর কলার ছাড়ো।
‘আম্মু ওকে আমি মেরেই ফেলবো৷
‘আমি ছাড়তে বলেছি তো।
‘ফারজাদ কলার ছেড়ে বলে, তুমি আমাদের বাসায় ওকে কেনো ঢুকতে দিলে!
‘আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
‘কিসের প্রশ্ন?
‘মিরহা কি প্রেগন্যান্ট? হ্যা বা না।
‘হ্যাঁ।
‘দেখো ফারজাদ আবেগে জীবন চলে না। একটা সন্তানের কাছ থেকে তোমরা তার বাবাকে কেনো কেড়ে নিবে! তুমি মিরহাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও৷
‘হোয়াট! তুমি এসব কি বলছো আম্মু? আমার ওয়াইফ আমার অনাগত সন্তান আমি তাদের এ-ই লম্পটের হাতে তুলে দেবো?
‘তোমার অনাগত সন্তান! কিন্তু রাফিন বলছে ওর! এমন মেয়েকে..
আর কিছু বলার আগেই ফারজাদ চিৎকার করে বলে,একটা শব্দ ও যদি মিরহার চরিত্র নিয়ে করো তাহলে আমি সবাই ধ্বংস করে দেবো। আমার বৌয়ের চরিত্র সম্পর্কে আমি ভালো করেই অবগত।
‘কিন্তু রাফিন যে বলল।
‘সিরিয়াসলি আম্মু তুমি রাফিনের কথা বিশ্বাস করলে! আমি তোমাদের সাথে থাকবো না৷ প্রয়োজন পড়লে রিকশা চালাবো, বালু টানবো তবুও যেখানে আমার বৌয়ের চরিত্রের দিকে আঙুল তোলা হয় সেখানে থাকবো না৷ বলেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো।
‘ফারজাদ আমার কথাটা তো শোন। এভাবে হটকারিতা কেনো করছো।
‘রুবিন বেগম রাফিনের গালে ঠাসসসস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলেন মিথ্যে বলার সাহস হলো কি করে?
‘আন্টি বিশ্বাস করুন আমি সত্যি বলছি।
‘এ-ই মূহুর্তে আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাও৷ যদি তোমার কথার সত্যতা থেকে থাকে আমি তোমাকে ইনসাফ পাইয়ে দেবো। আরও যদি মিথ্যে প্রামাণ হয়ে তাহলে এ-র ফল ভালো হবে না। দূর হও চোখের সামনে থেকে।
‘আম্মু আমার মনে হয়না ভাবি এমন। এ-ই রাফিন ছেলেটা হয়তো মিথ্যে বলছে।
‘মনে হওয়া না হওয়া দিয়ে সত্য চাপা দেয়া যায় না৷ আমাকে জানতে হবে সত্যিটা কি। কিন্তু দেখলে তোমার ভাই কে!বৌয়ের আঁচলের তলায় কিভাবে দৌড় দিলো? দুদিন হয়নি বিয়ে করেছে এখনি বৌয়ের কথায় উঠবস করে।
‘আম্মু কি যে বলো, ভাইয়া কবে কার কথা শুনেছে!সে তো বরাবরই রগচটা। রাগ কমলে ঠিক চলে আসবে।
‘আসতে হবে না। দেখুক দুনিয়া।বাপের টাকায় আয়েশ করেছে আর মায়ের হোটেল খেয়েছে তো তাই বাহিরের দুনিয়া টের পায়নি। যে বৌয়ের জন্য হনহনিয়ে চলে গেলো টাকা না থাকলে সেও ফিরে তাকাবে না।
‘এমন কি হয় নাকি! সবাই ছেড়ে চলে যেতে পারে বৌ কেন ছেড়ে যাবে!
‘দুনিয়া টাকায় চলে, অভাব যখন দুয়ারে এসে কড়া নাড়ে ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। যাও যেয়ে নিজের কাজ করো তোমাকে এসব বুঝতে হবে না৷ আর হ্যাঁ বাপ আসলেই রেডিওর মতো সবাই বলা শুরু করে দিওনা যা বলার আমি বুঝিয়ে বলবো। বাপের পার্সোনাল টেপরেকর্ডার। ছেলে মেয়ে দুটোই হইছে বাপের মতো।আমার কি আমি তো কেউ না।
‘ফাবিহা মুখ চেপে হেসে নিজের রুমে চলে গেলো। সব সময় কিছু হলেই তার মা এটা বলবেই বাপের মতো স্বাভাব।
🌿 তুমি এ সময় বাসায়? দেশে ফিরলে কখন আরও কেনই বা ফিরলে? সবাই ঠিক আছে তো? কোন ঝামেলা বা কোন মেজর এক্সিডেন্ট হয় নি তো? ঠিক আছো তো কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন।
‘আম্মু তুমি ডাক্তারের কাছ থেকে এসেছো একটু বসো রিলাক্স হও আমি তো আছি সবটা তোমাকে বলছি।
‘আছি বলছি এসব না বলে আগে কারনটা বলো।
‘একটু ফ্রেশ তো হও।
‘কি ফ্রেশ হবো আমি? হাকিম সাহেব আমাকে কল করে তোমার কর্মের কথা বলেছেন৷ এরজন্য তোমাকে বড় করেছিলাম! কিভাবে পারলে আমাকে না জানিয়ে এতো সব করতে! খুব বেশি ভালোবেসেছিলাম বলে প্রতিদান এভাবে দিলে! বড় হয়ে গেছো এখন আমি কে? আম্মু তো ডাকার মতো একটা শব্দ, তাই তাকে পাত্তা, বলা গুরুত্ব দেয়ার মতো কিছু নেই! এ-ই দিন দেখার জন্য বেঁচে ছিলাম!
#চলবে