#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব২৫
মিরহা, কি করছো মরে যাবে ও!
আজকে আমার হাতে ওর প্রাণ যাবে। ফাস্ট সহ্য করছিলাম আমার অনাগত সন্তানের জন্য। ডাক্তার বলেছিলো তিনমাস সাবধানে থাকতে। ও হয়তো ভুলে গেছে ওর মতো তেলাপোকাকে এক মূহুর্তে পিষে ফেলার ক্ষমতা আমার আছে। বলেই পরপর আরো কয়েকটা আঘাত করলো রাফিনকে।
‘ফারজাদ মিরহাকে কোলে তুলে নিলো।
“পুলিশ রাফিনকে গ্রেফতার করে হসপিটালে ভর্তি করলো৷ কনস্টবল বলে,প্রতিটি মেয়ের নিজেকে রক্ষা করার জন্য হলেও আর্মি ট্রেনিং নেয়া উচিৎ। যে ভাবে মেরেছে এজন্মে কোন মেয়ের দিকে তাকাবে না। তাকিয়ে কি করবে আসাল জায়গা অকেজো করে দিয়েছে।
‘তখন বললাম আমি আসি? আমি আসলে এরকম হতো?
‘আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো। আমার এভাবে নড়াচড়া নিষেধ ছিলো। ডাক্তার বলেছিলো তিনমাস বেড রেস্টে থাকতে কারন মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভবনা আছে।
‘তাহলে কি দরকার ছিলো? এভাবে আক্রমন করার আমি তো আসছিলাম।
‘যাকে বাঁচানোর জন্য নিরবে অঘাত সহ্য করছিলাম তার জীবন সংকটে মরে যাওয়ার চেয়ে মেরে যাওয়া ভালো৷
‘শিরিন বেগমের মাথা ফুলে গেছে একটু। সেখানে বরফ ডলছে রাহাত।
‘আইরিন ফাস্টএইড বক্স এনে ফারজাদের হাতে দিলে৷ ফারজাদ খুব যত্নে মিরহার হাতে গলায় ব্যান্ডেজ করে দিলো।
‘মিরহার চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝড়ছে।
‘ফারজাদ মিরহার চোখের কোনের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে,কান্না করছো কেনো!
‘আমার বাচ্চাটার কোন ক্ষতি হয়নি তো! আমি ওকে চাই আমি ওর মুখদর্শন করতে চাই, ওর ছোট ছোট হাতের স্পর্শ চাই।
‘ফারজাদ মিরহার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,রিলাক্স হও বৌপাখি। আমাদের সন্তানের কোন ক্ষতি হয়নি। আমার কাছে এটাই ইম্পর্ট্যান্ট তুমি ঠিক আছো তোমার কিছু হয়নি। যাকে দেখিনি তারচেয়ে তোমার প্রতি ভালোবাসা বেশি। সে আসলেও তোমার স্থান সবার উপরে৷ আমাদের সন্তান। তোমার আমার ভালোবাসার চিহ্ন।আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ওকে সুস্থ ভাবে পৃথিবীর আলো দেখাতে। বাকিটা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে।
‘আমি ডাক্তারের কাছে যাবো প্লিজ নিয়ে চলো।
‘ভোর হোক নিয়ে যাবো তোমাকে। আচ্ছা এতো রাতে দরজা কেনো খুললে?
‘আমি ভেবেছিলাম তুমি এসেছো। তাই সাত পাঁচ না ভেবে দরজা খুলে দিয়েছি।
‘ বোকা পাখি আমি আসলে তোমাকে বলেই আসতাম। তাছাড়া আম্মার সাথে কথা হয়নি হুট করে কিভাবে চলে আসতাম! যাক যা হওয়ার হয়েছে তোমাদের কিছু হয়নি এতেই আমি হ্যাপি। তবে ও-ই রাফিনের বাচ্চাকে আমি ছাড়বো না।
‘তোমার কিছু করতে হবে না। যা অবস্থা করেছি এজন্মে আর কোন মেয়ের দিকে তাকাবে না৷ মিরহার তলপেটে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে। কলিজাটা ধুক করে উঠলো। এ-ই সন্তানের জন্য সে নিজের সব স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে এসেছে৷ সে ঠিক আছে তো? কিছু হয়নি তো?
‘কি হলো আবার?
‘তুমি আম্মুকে দেখে আসো আমি একটু বিশ্রাম নেবো । তাড়াতাড়ি এসো। ফারজাদ চলে যেতেই মিরহা নিজের পেটে হাত রেখে বলে,আমাকে ছেড়ে চলে যাস না৷ আমি তোকে বাঁচানোর জন্য মরেও যেতে রাজি কিন্তু তোকে বেঁচে থাকতে হবে৷ বালিশে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। বারবার কানে ভাসছে, ডাক্তারের বলা কথাগুলো। আপনার জন্য সন্তান নেয়া ঝুঁকি। আর নিলেও সাবধানে থাকতে হবে তিনমাসের মধ্যে মিসক্যারেজ হওয়ার চান্স আছে। নিজেকে একদম বেডরেস্টে রাখবেন। মিরহা মনে মনে বলে,আমি কি তবে ব্যর্থ হলাম তোকে রক্ষা করতে! আমার কলিজা মায়ের সঙ্গে থাক মাকে ছেড়ে যাস না। আল্লাহ আপনি আমার সন্তানকে সুস্থ ভাবে পৃথিবীর আলো দেখার তৌফিক দিন।
‘আন্টি বেশি ব্যথা করছে?
‘না বাবা তেমন না তবে আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো?
‘হ্যা আন্টি৷ আপনি রুমে যেয়ে একটু রেস্ট নিন৷
‘আপু আন্টিকে একটা পেইনকিলার দিন।
‘আইরিন চোখ বড়ো করে ফারজাদের দিকে তাকালো। হুট করে আপু ডাকটা ঠিক হজম হলো না৷ তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিলো৷
‘আন্টিকে শুইয়ে দিয়ে এসে রাহাতের থাকার ব্যবস্থা করে দিও।
‘আইরিন হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।
‘ফারজাদ রুম ত্যাগ করার আগে রাহাতকে বলল কোন অসুবিধা হলে আমাকে কল করিস।
‘আরেহহ তুই যা ভাবির খেয়াল রাখ আমি এদিকটা সামলে নিতে পারবো৷ কত রাত মোবাইলে ফোনে গেমস আর মুভি দেখে কাটালাম! তুই যা তোর বৌয়ের সেবা কর।
‘ফারজাদ রুমে এসে বলে,তুমি এখনো কান্না করছো!এমন করলে হবে? এতে বুঝি বাবুর খুব ভালো হবে?
‘মিরহা ফারজাদের কোলে মাথা রেখে বলে,আমি আমার সন্তানকে চাই সুস্থ ভাবে চাই। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই।
‘তাহলে আমিও কান্না করি। একজন কান্না করলে হয়!সন্তান তো তোমার একার না আমারও তাই দুজনে একসাথে কান্না করি। কান্না করলেই যদি সবাই ঠিক হয় তাহলে চলো বাকি রাতটুকু কেঁদে কাটিয়ে দেই।
‘মিরহা চোখের পানি মুছে উঠে বসলো৷ অসহায় দৃষ্টিতে ফারজাদের দিকে তাকিয়ে বলে,আচ্ছা একটা কথা বলো,যদি ডাক্তার তোমাকে বলে,সন্তান আর মায়ের মধ্য থেকে যেকোন একজনকে বাঁচাতে পারবেন। তাহলে তুমি কাকে বাঁচাবে?
‘তোমাকে বাঁচাবো। তুমি আমার সব তারপর বাকি সব।
‘কেনো এমন বলছো! তোমার সন্তানকে বেছে নেয়া উচিৎ। দেখো না বাবা মা সন্তানের জন্য কত কষ্ট, কতটা ত্যাগ স্বীকার করে। সন্তানের তারে ভবিষ্যতের জন্য বাবা পুরোটা জীবন নিজের শ্রম ব্যায় করে।
‘তুমি কি জানোনা একজন স্ত্রী স্বামীর সাথে মৃত্যু পর্যন্ত সুখ, দুঃখ সব ভাগাভাগি করে একে অপরের ঢাল হয়ে থাকে।একজন ভালো স্ত্রী কখনো নিজের স্বামীকে ছেড়ে যায় না। ভালো সময় যেভাবে থাকে খারাপ সময় তারচেয়েও বেশি আগলে রাখে।
‘তবুও সন্তান তোমার শেষ বয়সের ভরসা। তোমাকে বাবা ডাকবে। তোমাকে পূর্নতা দেবে৷
‘এসব কেনো বলছো আমি জানিনা। সন্তান যেমনই হোক আমার কাছে আমার বৌয়ের প্রায়োরিটি তাদের আগে। জানো আমাদের পাশের বাসার আন্টির তিন ছেলে এক মেয়ে। ছেলেরা বিয়ে করে সেপারেট থাকে আর মেয়েটা শ্বশুর বাড়ি। তারা দুজন দুজনকে ছেড়ে যায়নি। ওনারা স্বামী স্ত্রী’ই একে অপরের ঢাল।দেখো এতো যুক্তি তর্কে আমি যেতে চাই না। এসব চিন্তা বাদ দাও।
‘মিরহা আর কোন কথা না বলে বালিশে মাথা রেখে পাশ ফিরে শুয়ে পরলো।
‘ফারজাদ মিরহার মাথাটা নিজের বাহুতে নিয়ে মিরহাকে নিজের দিকে ফেরালো। পরপর চোখে,কপালে, গালে, ঠোঁটে চুমু দিয়ে নরম স্বরে বলে,বৌজান আমি তোমাকে জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমার বাহুতে চাই৷ বেঁচে থাকার প্রার্থনায় তোমার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই।
‘মিরহা চোখ বন্ধ রেখেই বলল সন্তান চাওনা?
‘সন্তানের মা’কে আগে চাই তাকে সহ সন্তান চাই। পাগলি একটা এতো এডভান্স কেউ ভাবে? দেখবে তুমি আর আমার সন্তান আমার ভালোবাসায় ঠিক হয়ে যাবে। বড্ড বেশি ভালোবাসি আমার বৌপ্রিয়াকে।
‘মিরহা ফারজাদকে জড়িয়ে ধরলো। এতো পবিত্র স্নিগ্ধ নির্মল ভালোবাসা থেকে মুখ ফেরানোর সাধ্য তার নেই।
‘ফারজাদ পরম যত্নে নিজের বক্ষে আগলে নিলো প্রিয়তমাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
‘🌿
ভাইয়া আসুন আপনাকে আপনার রুম দেখিয়ে দেই৷
‘শিরিন বেগমের রুম থেকে বের হয়ে রাহাত বলে,আপনি ভাইয়া কাকে বললেন! আমাকে দেখে ভাইয়া মনে হচ্ছে?
‘আইরিন রাহাতের পা থেকে মাথা অব্দি পর্যবেক্ষণ করে বলে, উপসসস স্যরি আঙ্কেল।
‘হোয়াট! আসলেই সুন্দরী মেয়েদের মাথায় গোবর থাকে। এতো সুদর্শন যুবকে দেখে বলবে,হেই হ্যান্ডসাম চলেন আপনাকে রুম দেখিয়ে দেই। তা’না ভাইয়া, আঙ্কেল যাতা!
‘আপনি সুদর্শন?
‘কোন সন্দেহ আছে?
‘নাহ কিভাবে থাকে বলুন! কাক ও তো নিজেকে ময়ূর ভাবে। এ-ই যে আপনার রুম বলেই চলে গেলো।
‘মেয়েটা আমাকে কাক বলে গেলো!
#চলবে
#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৬
আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট আপনি এটা জানতেন না?
‘জ্বি জানতাম।
‘আজ-কালকের জেনারেশন দিনে দিনে কেয়ার/যত্ন এসব ভুলে যাচ্ছে। আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট তাও তার প্রেগন্যান্সি কম্পলিকেটেড এরপরেও কিভাবে আপনি তার প্রপার খেয়াল রাখলেন না?
‘স্যরি ডাক্তার আর হবে না৷
‘টেস্টগুলো করিয়ে রিপোর্ট আজকেই চেক করাবেন৷মিসেস মিরহা আপনার বয়স ২৪ একজন ২৪ বছরের মেয়ে নিশ্চয়ই ম্যাচিউর। এরপরেও এতো অযত্নের কারন? আমি আপনাকে শেষবারের মতো বলছি এখনো সময় আছে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। ভবিষ্যতে আপনার জীবন বিপন্ন হওয়ার রিস্ক আছে।
‘ডাক্তার আপনি কি বলছেন! এমন কোন আশংকা থাকলে আমি বাচ্চাটা চাই না। আপনি যে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন সেটা আমি নিয়ে ফেলেছি কি কি করতে হবে বলুন।
‘ফারজাদ তুমি এভাবে ডিসিশন নিতে পারো না৷ আমার বেবিকে আমি পৃথিবীর আলো দেখাবো।
‘মিস্টার এন্ড মিসেস সিকদার আপনারা বাসায় যেয়ে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। আপাতত টেস্টগুলো করিয়ে আনুন৷
‘ফারজাদ মিরহার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো সব টেস্ট করিয়ে মিরহাকে বাহিরে বসিয়ে রেখে নিজেই গেলো রিপোর্টগুলো নিয়ে চেম্বারে। এ-ই সময়টুকুর মধ্যে মিরহার সাথে কথা বলেনি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া।
‘কিছুক্ষণ পর ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হয়ে। মিরহার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালো।
‘আমরা কোন বাসায় যাচ্ছি?
‘জমের বাসায়। তুমি একা কেন মরবে! মরলে দুজন একসাথে মরবো। ওহহ স্যরি তিনজন একসাথে মরবো।
‘কি বলছো এসব! দেখো আমার কিছু হবে না। আমরা দুজন মিলে সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবো। আমরা দুজন মিলে আমাদের সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসবো। আচ্ছা তোমার কি দেখতে ইচ্ছে করে না আমাদের সন্তানের মুখ? তার ছোট ছোট হাত ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে না৷ মনে হয়না সে কারমত দেখতে হবে? তোমার মতো নাকি আমার মতো?
ফারজাদ এ-ই বেবিটা আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন। তাকে আমি কিভাবে মেরে ফেলবো?
‘আমরা একসাথে মারা যাবো। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে চাইনা।আর তুমি তোমার সন্তানকে ছাড়া।এরচেয়ে আমরা একসাথে মারা যাবো। একসাথে বাঁচা তো সম্ভব না। তাই একসাথে মরবো।
‘কেনো পাগলামো করছো? অসম্ভব না। তবে রিস্ক আমরা দুজন কি আমাদের বেবির জন্য এ-ই রিস্ক টুকু নিতে পারিনা?
‘তোমার সব মানতে রাজি তুমি যা বলবে তাই। কিন্তু তোমাকে হারাতে হবে এমন কিছু আমি মানতে পারবো না।
‘আমরা জিতে যাবো। একসাথে বাঁচবো।
‘ফারজাদ বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো। মিরহার হাত ধরে বাসার ভেতরে নিয়ে আসলো। বাসায় ঢুকতেই নিজের বাবা মাকে দেখে বলে,আপনারা? এ-ই মশার বাড়িতে হাতির পা!কি করে সম্ভব!
‘নিজের বাবা মায়ের সাথে এমন ভাবে কেউ কথা বলে?তোমাকে আমরা এ-ই শিক্ষা দিয়েছি? যাও মিরহাকে রেডি করে নিয়ে আসো আমরা বাসায় যাবো।
‘আমি কোথাও যাবো না।
‘ঘর জামাই তো আমি রাখবো না বাবা। শিরিন বেগমের কথা শুনে ফারজাদ বলে,আমিও ঘর জামাই থাকবো না আম্মা। কয়েকটা দিন রাখুন এরপর ওকে নিয়ে চলে যাবো৷
‘অন্য বাড়ির বৌ আমাদের বাসায় কেনো রাখবো? যে বাড়ির বৌ সে বাড়িতেই চলে যাক।
‘ফয়সাল সাহেব বললেন, ফারজাদ মান অভিমান ভুলে যাও। বৌমাকে নিয়ে বাসায় চলো। শুক্রবার রিসিপশনের আয়োজন করেছি। ভুলবোঝাবুঝি সব সম্পর্কে সব পরিবারেই থাকে তাই বলে জন্মদাতা পিতা মাতাকে ভুলে যাবে?
‘মিরহা সোফায় হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। শিরিন বেগম মেয়ের প্রেগন্যান্সির সংবাদ এখনো জানেননা। মিরহার মাথায় হাত রেখে বলে, কিরে মা তোর কি শরীর খারাপ? কি হয়েছে তোর?
‘এ-ই সময় একটু উইক তো থাকবেই। সকালে ঠিকমত খেয়েছো?
‘ফারজাদের মায়ের কথা শুনে, শিরিন বেগম বলে এ-ই সময় মানে?
‘আপনি সুখবর এখনো জানেন না? আপনি নানি হতে যাচ্ছেন। আমাদের বংশের প্রদীপ আসছে। আপা আপনার মেয়েকে আমার ছেলে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। আমার ছেলে তার জীবনে সবচেয়ে বেস্ট একটা কাজ করেছে।
‘দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয়। তবে আমি প্রার্থনা করবো সারাজীবন ওদের বন্ধন অটুট থাকুক।
🌿 আপনার জন্য আমি কতক্ষণ অপেক্ষা করবো? তাড়াতাড়ি চা টা নিন।
‘এভাবে কাকের মতো কা কা কা কা করে কেউ ঘুম ভাঙ্গায়!
‘কাকের কানে কোকিলের কন্ঠও কাকের মতই শোনায়। আমার এতো সময় নেই এ-ই রেখে গেলাম চা গিলে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসুন।
‘আইরিন চলে যেতেই রাহাত উঠে বসলো। মান ইজ্জত একটুর জন্য রক্ষা পেলো। লুঙ্গী পরে কেউ ঘুমায়?ঘুমানোর পরে লুঙ্গী আকাশে মানসম্মান বাতাসে! এদিক ওদিক তাকিয়ে খাটের পাশ থেকে লুঙ্গীটা তুলে নিয়ে পরলো৷ টেবিল থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিয়ে বলে, ফিলিংস নতুন জামাই। বিয়েটা কি এবার করেই ফেলবো? হ্যা এবার করেই ফেলবো। জীবনে এতো শান্তি সহ্য হচ্ছে না। দেখে শুনে একটা অশান্তি ঘরে তুলতেই হবে এবার৷
‘ফারজাদ রুমে ঢুকে বলে,শা’লা তুই কি শ্বশুর বাড়ি এসেছিস?এখন দশটা বাজে চায়ে আয়েশ করে চুমুক দিচ্ছিস!
‘এ-ই শা’লা বলবি না বলে ভাইরা বল।তোর শালীকা ঝগড়াটে আছে আমি রাজি।
‘একরাতে মেয়ে দেখে বিয়ে করতে রাজি?
‘আরেহহহ ইয়ার একরাতে মেয়ে দেখতে যেয়ে সাথে সাথে পছন্দ করে বিয়ে হওয়ার নজির কমে নাকি? বহুত শান্তিতে জীবন কাটিয়েছি এবার তোর শ্যালিকার মতো একটা ঝগড়ুটে অশান্তি হলেই হয়।
‘তোর বিয়ে তুই কর।আমি খুব টেনশনে আছি।
‘টেনশন ভাগাভাগি করে করবো। তবুও ব্যাপারটা সিরিয়াস ভাবে নে।
‘তার এ-ই বাসায় ঘরজামাই থাকার শখ?
‘কি বলছিস এসব?
‘তো যাবি না? চল তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা করে বের হবো।
‘আমার বিয়ের ব্যপারটা একটু ভাবিস।
‘তোর বিয়ে করতে হবে না, চিরকুমার থাক। তাড়াতাড়ি আয় নয়তো এখানেই লক করে রেখে যাবো।
🌿পুস্প জিসানকে বলছে, আপনি সিগারেট খান?
‘মাঝে মাঝে।
‘ব্রেকআপ।
‘এ-ই ব্রেকআপ মানে? এসব মানিনা আজকে থেকে আর সিগারেট খাবো না। আমার শত প্রেমিকা যখন ছাড়তে পেরেছি সিগারেট আর তেমন কি?
‘লজ্জাও করে না। শত প্রেমিকা কথাটা বলতে? এবারের মতো প্রেম করবো তারপর তোমাকে বিয়ে করবো।
‘এ-ই না প্লিজ ওসব তো টাইমপাস ছিলো৷ তুমিই প্রথম তোমাতেই শেষ হতে চাই।
‘আমি কখন বললাম সিরিয়াস প্রেম করবো! টাইমপাস করবো৷
‘টাইমপাস করার মতো টাইম তোমার নেই। ট্রেনিং আর আমি এটাই তোমার টাইম।
হুকুম চললে আমার চলবে তোমার না। আফটারঅল সিনিয়র বলে কথা।
‘আমি হ্যাসবেন্ড সো কোনো সিনিয়র জুনিয়র মানিনা।
‘মানো বা না মানো সংসারে রাজ চলবে আমার।
‘হ্যা জানি আমার ঘরে আমি মেম্বার আমার বৌ চেয়ারম্যান।
‘ডিয়ার জুনিয়র প্রেমিক এখন রাখি জান। পরে কথা হবে।
🌿ফারজাদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে মিরহা জানালা দিয়ে পুর্নিমা আলো এসে মিরহার মুখশ্রীতে পরছে। ফারজাদ কয়েকটা চুমু খেলো মিরহার কপালে৷
মিরহা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের পূর্ন চাঁদের দিকে।
‘ফারজাদ বলল,বৌজান তোমার রুপের কাছে এ-ই চাঁদের আলোও ফিকে পরে গেছে। ওর সৌন্দর্যের চেয়ে হাজার গুণ বেশি তোমার সৌন্দর্য। তুমি এতো স্নিগ্ধ কেনো বৌজান!
এ-ই রুপালি আলো ঝলমলে চাঁদ তোমার রুপের কাছে তুচ্ছ। তুমি আমার চোখে সৌন্দর্যের প্রতিমা।
‘জানো আমার খুব ইচ্ছে একদিন এমনই পূর্ন চাঁদের আলোতে তুমি আমি আরও আমাদের বেবি পুর্নিমা বিলাস করবো। হাজার তারার ভিতরে জ্বলজ্বল করে আমাদের ভালোবাসার উজ্জ্বল নক্ষত্র।
‘ফারজাদ গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো তার পাশে শুয়ে থাকা চাঁদকে।
#চলবে