“সোনালী আলোর ঘ্রাণ”
পর্ব- ১৪
(নূর নাফিসা)
.
.
বিয়ের আয়োজনের বন্দোবস্ত চলছে দুই বাড়িতেই। এদিকে আমজাদ আলী বাবার সাথে পরামর্শ করে করে সকল তালিকা লিপিবদ্ধ করছে। ওদিকে মরিয়ম হিসাবনিকেশের ব্যাপার ভেবে ভেবে ছেলেকে ফোনে জানাচ্ছে। মায়ের পছন্দ মতোই আয়োজন সম্পন্ন করবে মাহতাব। তার মায়ের একটাই শখের ছেলে সে। শখের আয়োজনে কোনো ভিন্নমতের ছায়া ফেলবে না। বুধবার মাহতাব বাড়ি আসবে। মেহমান দাওয়াত ও অন্যান্য কাজের পরিকল্পনা তো মরিয়ম করেই যাচ্ছেন। আয়োজনের জন্য বাজারটা তাকে করতে হবে। মঙ্গলবার সকালে আহমদ আলীর ফোনে কল করেছে মাহতাব। আহমদ আলীর সাথে কথা বলা শেষ হলে মাহতাব রোজাকে ডেকে দিতে বললো। আহমদ আলী ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রোজাকে ডাকলেন। এসময় বাথরুমে থালাবাটি মেজে যাচ্ছিলো রোজা। দাদাজানের ডাকে হাত ধুয়ে এসেছে তৎক্ষনাৎ।
“জ্বি, দাদাজান?”
“মাহতাব কল দিছে। নে ভাই, কথা বল।”
ভেতরটা একটু নেড়ে উঠলো। হালকা অস্বস্তি জমে গেলো শরীর ও মনে। হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলো রোজা। আহমদ আলী ঘরের ভেতরে চলে গেছেন। সে বারান্দা দিয়ে নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাটতে হাটতে কথা বলছে।
“আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ। ব্যস্ত ছিলে?”
“না, তেমন কিছু না।”
“পরীক্ষা নেই আজ?”
“আছে। বাড়ি ফিরবে কবে?”
“বিয়ের দিন ফিরলে হবে না?”
“হবে না কেন। হবে।”
মাহতাব মৃদু হাসলো যা এপাশে থেকেই উপলব্ধি করতে পারলো রোজা। মাহতাব আবার বললো,
“দেখি, আগামীকাল ভোরের বাসে রওনা দিবো ইনশাআল্লাহ। আজ একটু কেনাকাটা করতে যাবো। সেজন্যই তোমাকে কল দেওয়া। বিয়ের শাড়ি কি রঙের হবে? মা বললো লালই নাকি সেরা। তোমার পছন্দটা শুনি একটু।”
“লালই তো ভালো।”
“অন্য রঙ পছন্দের হলেও বলতে পারো।”
“না, লালই থাকুক।”
“লাল কি উজ্জ্বল হবে নাকি খয়েরী রঙের মতো?”
“তোমার দেখে যেটা ভালো লাগে।”
“নিজে বলবে না তবু?”
“নিজেকে তো নিজে দেখবো না।”
মাহতাব দুষ্টুমি ঝেরে বললো,
“কে দেখবে?”
“আমি বাদে সবাই-ই। আমি বরং সবার চোখে তাকিয়ে দেখতে পারবো যে, কার চোখে কেমন দেখায়।”
“আমার চোখে বেশি বেশি দেখো।”
লজ্জায় পড়লো রোজা। প্রত্যুত্তর করলো না এর। মনে মনে বললো,
“আমার চাঁদ হবে আমার আয়না। সেই আমি চাঁদকে বেশি বেশি দেখবো না? তা তো হয় না।”
মাহতাব তার নিরবতায় উপলব্ধি করতে পেরেছে সে লজ্জা পেয়েছে। তাই পরবর্তী কথায় এগিয়ে গেলো,
“আরেকটা বিষয়। মামামামী তো কেনাকাটা করে ফেলেনি। তাই না?”
“না, আজই যাবে। আব্বাকে বলতে শুনেছিলাম গত রাতে। মেহমান দাওয়াতের কাজগুলো শেষ করলো গত দুদিনে।”
“ঠিক আছে। মামীকে বলো, মৌসুমীর বিয়ের শাড়িটা যেন না কিনে। আমি নিয়ে আসবো। এটা তোমার আর আমার পক্ষ থেকে তার জন্য উপহার থাকবে। বুঝলে?”
“আচ্ছা, বলবো।”
“মৌসুমী কেমন পছন্দ করে? আশেপাশে থাকলে জিজ্ঞেস করো। নাহয় মামীকে জিজ্ঞেস করো কেমন ঠিক করেছেন।”
“আচ্ছা, দেখছি।”
রোজা ততক্ষণে নিজের ঘরে চলে এসেছিলো। এখন বারান্দায় এসে মৌসুমীকে ডাকলো। মৌসুমী সাড়া দিলে সে জরুরী ভিত্তিতে কাছে ডাকলো৷ গুড় ও দুধে মুড়ি মেখে খাচ্ছিলো সে। এঁটো হাতেই ছুটে এলো।
“কি?”
“ঘরে আয়।”
“কি, বলো?”
“বিয়ের শাড়ি কেমন রঙের পছন্দ তোর?”
“অবশ্যই লাল। সাথে একটা লাল দোপাট্টা। দুই মুঠ লাল চুড়ি। হাতেপায়ে লাল আলতা। চোখে মোটা কাজল। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।”
“হয়েছে, হয়েছে। আলতা চুড়ির হিসেব পরে।”
“বড় মা আজ কেনাকাটা করতে যাবে, তাই না?”
“হুম। তোর কি কি লাগবে, পরে জেনে যাবে। এখন শুধু শাড়ির ব্যাপারটাই জানার ছিলো। যা এবার।”
“কেন, কেন?”
“শাড়ি ভাইয়া আনবে।”
“ভাইয়া আবার কে?”
“মাহতাব ভাইয়া।”
মৌসুমী জিভ কেটে হাতের দিকে লক্ষ্য করে দেখলো তার হাতে দাদাজানের ফোন। সে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাইয়া কি এতোক্ষণ লাইনে ছিলো?”
“হুম।”
“আল্লাহ! সব শুনে ফেলছে, না? আচ্ছা, লাল শাড়িই।”
“ওকে, যা।”
রোজা ফোন কানে তুললো। মৌসুমী যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়িয়েও আবার ফিরে তাকালো। তার দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো,
“ভাইয়া বলো ক্যা? হবু বরকে কেউ ভাইয়া ডাকে?”
মৌসুমীটা এবারও লক্ষ্য করেনি ফোনটা যে এতোক্ষণে কান পর্যন্ত উঠে এসেছে। রোজা চোখ রাঙিয়ে তাকালে সে দাত চেপে হেসে চলে গেছে। রোজা আবার ফোনে মনযোগ দিয়ে বললো,
“হ্যালো, মৌসুমীও লাল রঙের কথাই বললো ভাইয়া।”
“মৌসুমী তো ভাইয়ার ব্যাপারেও বললো কিছু। ঠিকই তো, হবু বরকে ভাইয়া বলে ডাকে কেউ?”
রোজা লজ্জা পেয়ে হেসে উঠলো। মাহতাব আরও বললো,
“ওকে, দুজনের একইরকম নিয়ে আসবো তবে। হুম?”
“ওকে।”
“সাথে আলতা, চুড়ি, কাজলও থাকবে। রাখি তবে। পরীক্ষা দাও ভালোভাবে।”
রোজা দাদাজানের কাছে ফোন দিয়ে নিজের অর্ধসম্পন্ন কাজ পুরোপুরি শেষ করলো। রান্নাঘরে থালাবাটি গুছিয়ে রাখতে রাখতে মাকে বললো মাহতাবের শাড়ি সম্পর্কিত ফোনকলের ব্যাপারে।
কিছু ধান বিক্রি করে দিয়েছে মোয়াজ্জেম। ভাইয়ের সাথে মেহমান দাওয়াতেও ছোটাছুটি করলো। মৌসুমীর জন্য সোনার আংটি বানাতে দিয়ে আজমাইনের পোশাকের জন্য টাকা দিলো জমানো ও সংগৃহীত অর্থ থেকে। রোজাদের পরিবারে কেনাকাটার পর্ব শেষ হলো আজমাইনকে সাথে নিয়েই। এই কাজ, সেই কাজ কত কাজই করতে হচ্ছে তাকে। আবার ওদিকে খেলার কাজেও সময় দিতে হচ্ছে। বাবার তল্লাসিতে ফের ছুটে আসতে হচ্ছে। মাহতাব বুধবারে গ্রামে এলেও আর আসেনি এই বাড়িতে। শুক্রবারের জন্য তার গুটিয়ে রাখা প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার সকালে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে সিয়ামকে ডাকছিলো রোজা। দোকানে পাঠাবে প্রয়োজনে। পাশের বাড়িতে খেলা করছে সিয়াম। আসছি আসছি বলে অপেক্ষা করাচ্ছে তাকে। এমনি জাবেদ কাকা হাজির।
“ভালোই আছো?”
“জ্বি, কাকা। আপনি ভালো আছেন?”
“জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ। আরেকটা চিঠি আইছে তোমার।”
রোজা চিঠি রিসিভ করলো মনে মনে হেসে। এক সপ্তাহ না যেতেই চিঠি ওয়ালা আবার চিঠি লিখলো! আর সে না বাড়িতেই চলে এসেছে? তবে আবার চিঠি কেন? ঘরে বসেই লিখলো নাকি? জাবেদ কাকা চলে যেতেই সে খামের ঠিকানায় তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লো। প্রাপক তো সে-ই, কিন্তু প্রেরক তো মাহতাব না! এখানে নামের জায়গায় “আলো” লেখা। ঠিকানা শহরের। আলোটা আবার কে? সিয়াম এলে সিয়ামকে টাকা দিলো শ্যাম্পু এনে দেওয়ার জন্য। সে ঘরে ফিরে এসে চিঠি খুলে লেখা পড়লো। ছোট্ট একটা লেখা,
“নতুন সংসারে সুখী হও৷ সবাইকে সুখে রেখো।”
চিঠি লেখার তারিখটা গত পরশুর। প্রেরক সংসারী জীবনের অভিনন্দন জানালেন। কিন্তু এই প্রেরক নিয়ে রোজা একটু বেশিই চিন্তিত হয়ে পড়লো। কারণ প্রেরককে সে চিনতে পারছে না। মাহতাবের হাতের লেখার সাথেও মিল নেই। এটা মাহতাব হতেই পারে না। খুব মনে করার চেষ্টা করছে কোনো বন্ধুবান্ধব আছে কিংবা ছিলো কি না আলো নামে। কিন্তু তেমন কিছুই মনে পড়ছে না তার। একটা অভিনন্দন যেন প্রশান্তির বদলে উল্টো দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়ালো। যাকে সে চিনতেই পারছে না, সে কেন অভিনন্দন জানাবে? চিঠি প্রেরক অপরিচিত বলে তো মনে হচ্ছে না। অপরিচিত হলে তো জানতোই না সে নতুন সংসারী কি না। নিশ্চয়ই তার বিবাহের ভিত্তিতে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোনো ঝামেলা বাঁধানোর উদ্দেশ্যে কেউ এমন সময়ে এমন কিছু করলো না তো? কিন্তু কেন? কিংবা কে? পরপর দুইটা প্রহর কেটে গেলো এই দুশ্চিন্তা নিয়ে। দুপুরের পর বাড়িটা জমজমাট হয়েছে অনেকটা। নানাবাড়ির লোকজন চলে এসেছে কেউ কেউ। মরিয়ম এসেও একবার ঘুরে গেছে। মাহতাবের নিয়ে আসা শাড়ি আর গহনাগাঁটি দিয়ে গেছে। হালিমা খাতুন যত্নে তুলে রাখলেন সেগুলো। সন্ধ্যায় উঠুনে ও বারান্দায় হলুদ, মেহেদী বাটার ধুম পড়েছে। চাচী মামীদের মুখে সে কি রসিকতা জুড়েছে। পাশের বাড়ির চাচীরাও মিলিত হয়েছে৷ বাচ্চাগুলো মেতেছে অন্যরকম খেলাধুলা আর আনন্দে। দুহাত ভরে মেহেদীর রঙ ফুটিয়েছে কনেগন। আগের দেওয়া মেহেদীর রঙই এখনো বসে আছে হাতে। তার উপর দিয়েই আরও গাঢ় রঙ ফুটিয়েছে রোজা এবং মৌসুমী। গায়ে মেখেছে হলুদের আবরণ। এতোকিছুর মাঝে সকালের চিঠির কথা ভুলেই গেছে রোজা। বিকেল পর্যন্ত নানান কাজে আজমাইনকে দেখা গেলেও সন্ধ্যার সময়টাতে সে বাড়িতে ছিলো না। ফিরেছে রাতে। খেলার আয়োজনের বন্দোবস্ত করে রেখে এসেছে সে। এসময় মৌসুমী তাকে ঘরের বাইরে বাচ্চাদের ধমকাতে দেখলো। চেয়ার নিয়ে বাচ্চারা দুষ্টুমি করছে। একটা চেয়ার ভেঙে গেলেই জরিমানা! মৌসুমী তাকে দেখার পর হাতে করে এক চিমটি বাটা মেহেদী নিয়ে ছুটে এসেছে। আজমাইন যেন না দেখে তাই হাত পেছনে লুকিয়েই এসেছে। হলুদের সাজে সেজে আছে সে। আজমাইনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“সারাদিন পালিয়ে বেড়াও ক্যা? সবাই খোঁজাখুঁজি করছে।”
“ক্যা?”
“দরকার থাকতে পারে না?”
“না।”
“তোমার হাতটা দাও দেখি।”
“ক্যা?”
“দাও না।”
“না।”
“আরে, দাও না একটু।”
“এই যে দিলাম।”
আজমাইন হাত সামনে আনতেই একহাতে মৌসুমী তার হাত ধরে, পেছন থেকে অন্যহাত এনে বাটা মেহেদী বসিয়ে দিলো হাতের তালুতে। আঙুলে চেপে চেপে মনের মতো বৃত্ত এঁকে দিচ্ছে হাসিমুখে। আজমাইন চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আর বিরক্ত হচ্ছে। উহুম, মৌসুমীকে না। তার আঁকা মেহেদীর বৃত্ত দেখছে। বৃত্ত আঁকানো শেষ হতেই আজমাইনের দিকে তাকালো মৌসুমী। আজমাইন তার চোখেই তাকিয়ে আছে এবার। মৌসুমী বললো,
“বিয়ের সময় একটু হলুদ মেহেদী না দিলে কেমন দেখায়, হুম?”
আজমাইন আবার নিজের মেহেদী বসানো হাতের দিকে তাকিয়েছে। এরপর হুট করেই সেই হাত মৌসুমীর কপালে চেপে বসিয়ে দিয়ে বললো,
“তোর বিয়া লাগছে, তুই দে বেশি বেশি।”
কিছুটা কপালে লেগেছে, বাকিটা মৌসুমীর আঁচলে মুছে চলে গেলো সে। মৌসুমী সাথে সাথেই কপাল মুছে নিলো হাতে। তারপর আঁচলে কপাল মুছতে মুছতে মনে মনে বকে যাচ্ছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। একদম পাটায় ফেলে পিষতে ইচ্ছে করছে হারামিটাকে। শেষে কি না এই গরুর সাথে বিয়েতে রাজি হয়েছে সে? এ তো আস্ত একটা ঘাস খাওয়া ছাগল। প্রেম বুঝে না। আরও অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কি যে বলবে আর বললেই লাভটা কি হবে, সেটাই বুঝতে পারছে না।
“সোনালী আলোর ঘ্রাণ”
পর্ব- ১৫
(নূর নাফিসা)
.
.
অতঃপর আজ বিয়ে। মাথায় ঘোমটা, পায়ে আলতা দিয়ে। আরও আছে শাড়ি, গহনাগাঁটি, রেশমি চুড়ি, চুলের খোপাফুল। রঙিন ঠোঁটের রঙটাও বাদ যায়নি। বধূ সাজের পরিপূর্ণ প্যাকেজ পাঠিয়েছে মাহতাব, রোজা ও মৌসুমীর জন্য। মৌসুমীর বিয়ে উপলক্ষে মরিয়ম তাকে একটা চেইন গড়ে দিয়েছে। ফুপুর উপহার, শ্বাশুড়ির উপহার, মায়ের উপহার সব নিয়ে বড্ড খুশি মৌসুমী। বিয়েতে এতোকিছু পেতে হয় জানলে তো আরও আগে থেকেই একদম প্রস্তুত হয়ে বসে থাকতো সে। দাদাজানের উপহারটা আরও বেশি পছন্দ হয়েছে তার। আস্ত একটা গাধা উপহার দিয়েছে দাদাজান। যাকে নিয়ে বিয়ের মতো সুন্দর একটি ব্যস্ত দিনেও পরিবারের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সকাল থেকে পরিবেশ পরিস্থিতি ভালোই ছিলো। দুপুরে মেহমান এলো, মধ্যভোজের আয়োজন হলো। চাচামামারা সবাই আপ্যায়নে ব্যস্ত। যেহেতু আজমাইন এই বিয়ে বাড়ির পাত্র, সেহেতু এই ব্যস্ততায় তাকে জড়ানো হয়নি। সকালে বাবুর্চিদের পাশে ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনীয় সব কিছুই এগিয়ে দিচ্ছিলো। কিন্তু দুপুরে সে উধাও! তার খেলা পড়ে আছে। ফাইনাল ম্যাচ আজ। এই খেলা না খেললেই নয়। কত কষ্ট করতে করতে ফাইনালে উঠেছে। তাই সে সেদিকেই চলে গেছে। প্রথমত প্রয়োজন হলে জিজ্ঞেস করে, আজমাইন কোথায়? পরবর্তীতে ব্যস্ততায় আবার তাকে ভুলে যায় সবাই। সময় হলে বের হবে। কিন্তু এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় ছেড়ে যে চলে যাবে, এমনটা কেউই ভাবতে পারেনি। বাড়ি ভর্তি মেহমান, রোজার ঘরে একত্রে বউ সেজে বসে আছে দুই বউ। ওদিকে মাহতাবের বাড়ির সদস্যরাও চলে এসেছে। সবাই ছুটেছিলো ‘বর এসেছে’, বর এসেছে’ বলে। এখন যেন জরুরী ভিত্তিক মনে পড়লো আজমাইনকে। কাজী মৌলভী শীঘ্রই বসবে বিয়ের কার্য সম্পাদন করতে। অথচ আমজাদ আলীর মনে হলো অনেক্ক্ষণ যাবতই আজমাইনকে দেখছেন না। তিনি স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করলেন,
“আজমাইন কই?”
“ক্যা, নাই এদিকে?”
“দেখি না তো তারে অনেক্ক্ষণ যাবত। তৈরি হয় নাই নাকি?”
“আমিও তো খেয়াল করি নাই। ভাবছি এদিকেই কাজ করে। দেখি, কোনদিকে আছে।”
সারাবাড়ি খুঁজেও যখন আজমাইন পাওয়া গেলো না, হালিমা খাতুনের মনেই সাড়া দিলো আজমাইন বিয়ে করবে না বলে জেদ করেছিলো তার আজ ফাইনাল খেলা আছে বলে। তবে কি সত্যিই সে এমন একটা শুভকাজ ফেলে খেলায় চলে গেলো! ব্যাস, প্রকাশ হতেই কেউ কেউ রাগান্বিত আর কেউ হাসিঠাট্টায় জমে উঠলো। আমজাদ আলী অতিরিক্ত রাগান্বিত হয়েই বাড়ির গেইটের বাইরে বেরিয়ে গেলেন সাথে সাথে। ‘দুলাভাই’ ডাকতে ডাকতে পিছু নিলো আজমাইনের ছোট মামা। পিচ্চি মমো, বধূসাজের ঘরে এলো আলতা রাঙা তুরতুর পায়ে। হাতের চুড়িগুলোও ঝনঝন শব্দ তুলছে। বিয়ে উপলক্ষে সে-ও সেজেছে বেশ। ঘরে এসেই খাটে ঝুঁকে কচি গলায় বললো,
“আজাম ভাই হারায় গেছে।”
প্রথমে কথা স্পষ্ট বুঝতে না পারায় রোজা জিজ্ঞেস করলো,
“কি?”
“আজাম ভাই হারায় গেছে।”
“হারিয়ে গেছে? কোথায় হারিয়ে গেছে?”
“জানি না। জেঠু আনতে গেছে।”
মৌসুমী চমকে উঠে বললো,
“আল্লাহ! বলে কি! দিনদুপুর বেলা আমার জামাই নিয়া গেলো কে?”
পাশের বাড়ির কাশেম মোল্লার বউ পান চিবাতে চিবাতে দরজার কাছে থেকে তার কথা শুনে হেসে বললো,
“আরে, নেয় নাই। নেয় নাই। তোমার জামাই খেলতে গেছে গা মাঠে।”
“কিহ!”
“হয়।”
রোজা যেন দুশ্চিন্তাজনক ভঙ্গিতে মাথার কোণে হাত রাখলো। এ-ও সম্ভব এই ছেলের দ্বারা! বাড়ির মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে হাসির অগ্রভাগে রাখবে। মৌসুমী তো মনে মনে ক্ষিপ্ত হচ্ছেই। ইচ্ছে করছে সে-ই বেরিয়ে যাক। খুঁজে নিয়ে আসুক। কিন্তু তার নড়া বারণ। রোজা খানিক চুপ থেকে মমোকে বললো,
“তোর জেঠু গেছে ভাইয়াকে খুঁজে আনতে?”
“হু।”
“আচ্ছা।”
“আপু…”
“জ্বি?”
“একটা জামাই আইছে। অনেক সুন্দর জামাই।”
রোজা চিন্তিত মুখেও হাসি ফুটিয়ে তুললো তার কথায়। বললো,
“জামাইকে চিনিস?”
“হু।”
“কি হয় তোর?”
“জামাই।”
মৌসুমী চোখ পাকিয়ে বললো,
“দুলাভাই হয়, দুলাভাই।”
শিখে নিয়ে মমো আবার রোজাকে জবাব দিলো,
“দুলাভাই।”
“ভাইয়া হয়। ফুপু আছে না? চিনিস?”
“হু, আমার ফুপু।”
“হুম, ফুপুদের বাসার ভাইয়া।”
“আচ্ছা।”
“ভাইয়ার কাছে গিয়েছিস?”
“না। সিয়াম ভাই গেছে। জামাইর টুপি পরছে। আবার দিয়া দিছে।”
মৌসুমী বললো,
“তুইও যা। একেবারে জামাইর কোলে গিয়ে বসে থাকবি।”
“এহ! যাইতাম না।”
“আজাম ভাইয়ের কোলে যাবি?”
“হু।”
“এইটা তো যাবিই। আমার বরের দিকে খালি সবার নজর। এজন্যই বরটা পালায় যায়। ভাগ এখান থেকে!”
কপাল কুচকে তাকিয়ে সরে গেছে মমো। মাহতাবও আসরে থেকে শুনেছে। কিছুটা বিরক্তবোধ করেছে আজমাইনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মে। মামার পেরেশানির একটা বড় কারণ দেখা যাচ্ছে এই আজমাইন। এমন ছেলেপুলে বাবামায়ের দুশ্চিন্তাজনিত রোগের কারণ। ফেরার অপেক্ষায় আছে সে-ও। আহমদ আলীও তার পাশেই বসে আছেন। ভাবছেন, উপলব্ধি করছেন নাতির জন্য ছেলের হয়রানিকে। এ তো তাদের সম্মানকে ঠাট্টাতামাসায় রূপান্তর করে ফেলছে৷ সে বড় হয়েই এতোটা বাঁদরামি করলে ছোটটা কি শিখবে? বয়সের সাথে পাগলামোর বৃদ্ধি অনুচিত। এখন শোধরানো শেখার বয়স।
গম্ভীরমুখে মাঠে হাজির হয়েছেন আমজাদ আলী। ভালোই খেলা চলছে। দর্শকও যথেষ্ট। আমজাদ আলীর ছোট শ্যালকও আছে সাথে। পুরোটা পথ দুলাভাইয়ের উত্তেজনা রোধের চেষ্টায়ই পেরিয়েছে। এখানে এসে আজমাইনের উপর ধমকে উঠলো। আজমাইন তাদের দেখে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মামা ধমকে বাড়ি যাওয়ার জন্য বললেই বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আব্বা, আমি কিন্তু আগেই বলছিলাম ফাইনাল খেলা আছে। কালও মার কাছে বলছিলাম আমি আজ খেলমু। কাজকাম তোমার সবই কইরা দিয়া আইছি।”
“বাড়ি যা।”
“বুঝতাছো না ক্যা, আজ আমার ফাইনাল খেলা। বিয়া করতে হইলে রাতে করমু। যাও৷ খুশি?”
“হারামজাদা! আমি আইছি দেইখাই তো তোর দৌড়ায় যাওয়ার কথা। আবার কথা বলছ, খেলা দেখাছ!”
কথার সাথে আমজাদ আলী স্টাম্প তুলে নিলেন হাতে। আজমাইন ব্যাট ফেলে রেখে দৌড়। আমজাদ আলী স্টাম্প হাতেই ঘনঘন পা ফেলে যাচ্ছেন তাড়া করতে। মাঠের বাইরে যাওয়ার আগে ছোট শ্যালক হাত থেকে স্টাম্প টেনে নিয়ে বললেন,
“দুলাভাই, এইটা দিয়া যান। তাগো খেলার জিনিস। পোলাপান খেলুক। আজমাইন বাড়ি গেলেই হয়।”
আমজাদ আলী স্টাম্প ছেড়ে দিয়েই ক্ষিপ্র গতিতে হাটতে লাগলেন। তারা বাড়ি পৌঁছানোর বহু আগেই আজমাইন বাড়িতে হাজির। কারণ সে দৌড়ে এসেছে। এসেই কারো দিকে নজর না দিয়ে গোসলে ঢুকেছে। ছোট মামা বাড়ি এসে বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়েই কতক্ষণ বকাঝকা করলেন। সেই বকা যেন সাবানের সাথে ধুয়ে এলো আজমাইন। বিষণ্ণ মনে ঘরে গেলো মাথা মুছতে মুছতে। ঘরেও মামীরা পাশের বাড়ির মুরব্বিরা বসে৷ জিজ্ঞেস করছে কোথায় ছিলো সে। কারো জবাব দেয়নি। বড্ড মেজাজী হয়ে আছে খেলা ছেড়ে আসায়। দরজার সামনে এসে তেজী গলায় মাকে ডাকলো,
“মা? কাপড়চোপড় দিবা নাকি?”
পরক্ষণে উঠুনে বাবাকে দেখে গলা নামিয়ে নিয়েছে। চোখ মটকে যেন তাকিয়ে আছে আমজাদ আলী। গম্ভীরমুখে হালিমা খাতুন রান্নাঘরের কাছ থেকে এগোতে এগোতে বললেন,
“এই ঘরে আয়। আলমারিতে পাঞ্জাবি।”
“তাড়াতাড়ি দাও।”
বাবার ভয়ে গলা নিচু হলেও কথায় জেদ মাখানো। মায়ের ঘরে গিয়ে পোশাকাশাক পরে এলো সে। হালিমা খাতুন পাশে দাঁড়িয়ে থেকে চোখ জুড়ালেন ছেলেকে অন্যরকম সাজে দেখে। মনে মনে দোয়া করলেন, ছেলে বড় দায়িত্ববান হোক। যে কন্যার হাত নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, তার দায়িত্ব মনেপ্রাণে নিক। এই বাবামাকে পরবর্তী জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত করুক। যত্নবান স্বপ্ন গড়ে বাস্তবায়িত করুক। বাবামায়ের সম্মানটা শেষ পর্যন্ত মনে রাখুক। আর কি চাওয়ার থাকে এই বাবামায়ের? আর কিছু না। নিজের সর্বস্ব যত্নে গুটিয়ে রাখুক নিজের কাছে। এখনই বুঝে নিতে শেখার উপযুক্ত সময়। নতুন জীবন নতুনত্বে পুলকিত হয়ে উঠুক বাচ্চাদের। ভেবেই আঁচলে চোখ মুছলেন তিনি। পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে আজমাইন লক্ষ্য করে কপালটা কুচকানো রেখেই বললো,
“কাঁদো ক্যা? আইছি তো।”
ছেলের জিজ্ঞাসায় মুচকি হাসলেন হালিমা খাতুন। পাগড়িটা মাথায় তুলে দিতে দিতে বললো,
“তোর বড় হওয়ার প্রত্যাশায় কাঁদি। আর দুষ্টুমি করিস না, বাবা। এবার বুঝতে শিখ। যা, কাজী সাহেব অনেক্ক্ষণ যাবত অপেক্ষায় আছে।”
“আরও কোনো রীতিনীতি আছে তোমার?”
“না, নাই। তোর আব্বারে সালাম দিয়া তারপর কাজী সাহেবের কাছে যা। কাজী, মৌলভী সাহেবরেও সালাম দিস। তোর চাচারেও দিস। শ্বশুর তো। দাদাজানরেও দিস।”
“একটা মাইক আইনা দেও, একবারে সবাইরে গলা ফাটাইয়া সালাম দিয়া দেই। একজন একজন করে আর কতজনরে দিমু? মামা থাকবো, মামা শ্বশুররা থাকবো, চাচারা থাকবো, ফুপুর বাড়ির লোকজন আছে। মুরব্বিদের অভাবে চারদিকে? আবার কও আব্বারে সালাম দিতে? দৌড়াইয়া যেই হাপাইছে, ভাববো সালাম দিয়া ফাইজলামি আর টিটকারি করতাছি।”
“হইছে, যা।”
বদমেজাজী আজমাইন বেরিয়ে গেলো। বাবাকে কাজী সাহেবের কাছেই দেখতে পেয়েছে। দাদাজান এবং চাচাও সেখানেই আছে। তাই জনে জনে সালাম দিতে হলো না তাকে। কাছে গিয়েই সবার উদ্দেশ্যে একটা সালাম দিলো, জবাব দেওয়ার দায়িত্ব যার যার। সোনালী আলোর শেষ বিকেলে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর বাড়িতে কান্নার ধুম পড়লো। সবার কান্নাই রোজার বিদায়ের জন্য, তবে সেলিনা বেগম দুয়ে মিলেই কাঁদলেন। মেয়ে তো দূরে নয়, তবুও কেমন একটা শূন্যতায় পড়ে যেতে হয় পরের ঘরে তুলে দিতে। মনটা কাঁদে, অন্যের হাতে দায়িত্ব সপে দিয়ে। ভাবতে বাধ্য হয়, ছোট থেকে কোলেপিঠে বেড়ে উঠা মেয়েটা বড় হয়েছে। মেয়ের সংসার হয়েছে, ব্যাপারটা আনন্দের হলেও এই আনন্দ বুকের হাহাকার জাগায়, চোখদুটোকে কাঁদায়। রোজার বিদায় এবং মেহমানদের সমাগম কেটে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় দাদা, বাবা, চাচা, মামাদের একটা বৈঠক বসলো আজমাইনের জন্য। ঠিক বৈঠক না, এক প্রকার বিচার কার্য। যেখানে সবাই মিলে আজমাইনকে বকাঝকা করলেন এবং বুঝালেন। তার কৃতকর্মে সকলেই যেন একটু হতাশ হয়ে জ্ঞানবিদ্যার ভাণ্ডার খুলে বসলেন এক একজন। আমজাদ আলী একটু কমই কথা বললেন। তার ক্ষিপ্র ভাবটা রয়ে গেছে এখনো। পরক্ষণে আগামী পরশু মরিয়মের বাড়িতে যাওয়ার সময় এবং সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করার একটা মৌখিক তালিকা সাজিয়ে ফেললেন। আজমাইন তখনো এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। এই আসর ভাঙলেই সে একটু গেইটের বাইরে ডু মেরে এলো। পাশের বাড়ির সমবয়সী একজনের কাছে খেলার খবরটা নিয়ে এলো। তার দল হেরে গেছে। দলের একজন পাকাপোক্ত সদস্য তো সে-ই ছিলো, শুনতেই বড্ড আফসোস হলো। পরপর আবার বাড়ির ভেতর চলে এসেছে। এই বাড়িতে খাওয়া দাওয়া আজ একসাথে হবে সবার। ঘরের সামনে বারান্দায় বসে বসে চাপা কান্না কেঁদে যাচ্ছে হালিমা খাতুন। তার ঘরটা যেন রোজা ছাড়া এখনই শূন্যতা উপলব্ধি করছে। পাশে বসে আছে সেলিনা বেগম ও মামীরা। আজমাইকে ঘরের দিকে যেতে লক্ষ্য করে হালিমা খাতুন বললো,
“সারাদিন কিছু খাস নাই। পাঞ্জাবি পাল্টাইয়া খাইতে আয়। মৌসুমীরেও ডাক।”
রোজা চলে যাওয়ার কারণে মনটা খারাপ হয়ে আছে মৌসুমীরও। কান্নাও করেছিলো। কান্নার ফলে কাজলের রেখাটা একটু মোটা হয়ে এসেছে। তবে নিজের নতুন জীবনের নতুন আমেজকে ভেবে ভেবেই মনের বিষণ্ণতা দূর করছে। মানুষজনের আনাগোনা কমলে মনটা খারাপ রেখেই মৌসুমী ঘরটা নিজ হাতে গুছিয়েছে। যদিও শুরুটা ছোট মামী করেছিলেন। মৌসুমীকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে হাত লাগিয়েছে সাথে। সামনে কাজ ফেলে রেখে একাকী অবসর বসে থাকার মেয়ে সে না। বিছানা গুছিয়ে দুজনে মিলেই গাঁদা ফুলের জারটা লটকে দিয়েছে বিছানার উপর। মাঝখানে গোলাপগুচ্ছও আছে। ভারি সুন্দর একটা রূপ নিয়েছে ঘরটা। মামী চলে গেলেও সে বারবার এই ঘরটাকেই দেখছে। এই ঘরটা এখন তার নামে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। ভাবতেই অন্যরকম আনন্দ বয়ে যায়।
আজমাইন নিজের ঘরে এসে মৌসুমীকে দেখা মাত্র ধমক দিয়ে বললো,
“হেই! আমার ফাইনাল খেলার দিন তোর বউ সাজা লাগবো? আগে পরের দিন তোর চোখে পড়ে নাই? শালীর জন্যে আমার এতো বড় ক্ষতি!”
তার ধমকের কারণে মৌসুমী বিষণ্ণতার চাদর মন থেকে ছুঁড়ে ফেলে স্পষ্টতার সাথে জবাব দিলো,
“এই, বকবা না আমারে। আমি তোমার বউ এখন। শালী শালী করবা না। মমো তোমার শ্যালিকা হয়, বুঝছো? আমি বউ।”
“ই…শ! বউ আইছে! ও… ঠিকই তো। বকমু ক্যা! বউরে লাত্থি দেওয়া দরকার। কাশেম মোল্লায় দেখছ না, দুইদিন পরে পরেই তার বউরে কেমন লাত্থি মাইরা ঘর থেকে বাইর কইরা দেয়।”
“দেখো, আজমাইন। আমি কিন্তু দাদাজানের কাছে বিচার দিমু আমারে এইসব বললে। একদম শ্বশুর আব্বার কাছেও নালিশ জারি করমু। তোমারে মাঠ থেকে দৌড়ায় আনছে, সেইটা ভেবেই লজ্জা হওয়া উচিত।”
“কি কইলি তুই? আবার আমার নাম ধইরা ডাকছোস?”
মৌসুমী ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ লাজুক ভাব নিয়ে বললো,
“তুমি এখন স্বামী না? স্বামীরে কেউ ভাই ডাকে? নাম ধইরা ডাকে। আর নইলে মা, বড়মার মতো, ওগো…,ওগো…”
“থাপড়াইয়া সবগুলা দাত ফালায় দিমু। তুই একশো বার ভাই ডাকবি আমারে।”
“একশোর পরে একশো এক এর বেলা হইতে তবে নাম ধইরা ডাকমু?”
“জ্বি, না। একশোর পর আবার একশো বার ভাই ডাকবি৷ সেই একশোর পর আবারও একশো বার ভাই-ই ডাকবি। এমন কইরা চলতেই থাকবো।”
“শালার ভাই!”
বিড়বিড়িয়ে বললো মৌসুমী। বিড়বিড় শুনে আজমাইন ক্ষেপে বললো,
“কি কইলি?”
“তুমিও তো ওইসময় শালী কইছো আমারে।”
“তো কইতাম না? তোর জন্যে আমার কত বড় ক্ষতি হইছে, জানোস!”
মৌসুমী ঠমকে বললো,
“কি ক্ষতি করছি আমি তোমার?”
“তোর জন্যে খেলার মাঝখান থেকে আমার চলে আইতে হইছে। নইলে টুর্নামেন্ট কাপটা আজ আমি পাইতাম!”
মুখ চেপে ফিক করে হেসে উঠলো মৌসুমী।
“ও…ফেইল কইরা আইছো তবে? যাক, একদিকে ফেইল মারলেও আরেকদিকে পাস করছো। ইন্টার পাস ছাড়াই বিয়ে পাস কইরা ফেলছো।”