#সোহাগী
#পর্ব: ৬
Lutful Mehijabin
চৌকির এক কোণে দু হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে বসে রয়েছে সোহাগী। টকটকে লাল রংয়ের শাড়ি পরে আছে তার পায়ের সামনে। তার পিঠ ভর্তি চুলগুলো থেকে অঝোরে জল গড়িয়ে পড়ছে। এতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সোহাগীর। সে আপন মনে ভাব বিলাসী হয়ে! অপরুপ হাতের নকশা করা শাড়িতে, তার টলমলে চোখের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। তাকে এই অসহায় অবস্থায় রেখে কোথায় গিয়েছে তার আব্বা? তখন আমেনা সোহাগীর প্রশ্নের উত্তর দেন নি। বলেছে রাশেদ কোথায় গিয়েছেন তা তিনি নিজেই জানেন না! বাবার কথা মনে করে বুক চিরে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে। তাকে ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসবে? বিষয়টা একটা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের জন্য কতোখানি যন্ত্রনার তা হয়তো বলে বোঝানো যাবে না। অজানা আতঙ্ক সোহাগীর বুকটা ভরে গিয়েছে।
দরজা চাপানোর মৃদু আওয়াজ কর্ণপাত হতেই কেঁপে উঠলো সোহাগী। কে এসেছে! চোখ তুলে সামনে থাকা মানবীর মুখশ্রীতে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকালো। আমেনা এসেছে। অর্ধ বয়স্ক মহিলার চোখে মুখে উপচে পড়া আনন্দের রেখা! আমেনা ধীর পদে চৌকির সামনে এসে দাঁড়ালেন।
— কিরে মাইয়া এহনো চুল মুছোস নাই? তাগাদা কর মেজবাইন চইলা আইছে। আই দেহি উঠ শাড়ি পড়াই দেই।
কথাগুলো শেষ করেই চৌকির উপর থেকে শাড়ি তুলে হাতে নিলেন আমেনা। শাড়িটাতে একবার ঠোঁট ছুঁইয়ে আনমনে বলে উঠেন,
— জানস সোহা, তোর মাইরে যেদিন তোর আব্বাই বিয়া করলো হেদিন এই শাড়ি পড়ছিল তোর মা। তাই আজ তোরে এইডা দিয়া সাঁজামু। উঠ তো শেমরি।
সোহাগী ছলছল নয়নে আমেনা মুখের দিকে তাকালো। তার মোটেও শাড়ি পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। আকস্মিক একরাশ সাহসের জোয়ার বয়ে গেলো সোহাগীর অন্তরালে! আকস্মিক তেজি গলায় সে বলে উঠলো ,
— আমি শাড়ি পড়বো না নানী। আর কোথাও যাব না। আমি পড়তে চাই। বিয়ে করতে চাই না।
— চুপ একদম চুপ।
আমেনা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালেন। ঠোঁট আঙুল রেখে ধমকের স্বরে বললেন,
— তুই চাস তোর মাই কষ্ট পাক? কতো কষ্ট সহ্য কইরা সোহানা তোরে মানুষ করলো। আর তুই এর এই প্রতিদান দিতেছিস। বয়স হইছে বিয়া তো দিতেই হইবো। এখন তোর খারাপ লাগবো মানছি কিন্তু যখন বিয়া হইবো তখন স্বামীর সোহাগে সব দুঃখ ভুইলা যাবি। তখন কবি তোর নানীই ঠিক কইতো। মাইগো জীবন হইলো রংধনুর মতোন। স্বামী, সন্তান তাগো সবচায়তে বড়ো ধর্ম। এগো পালতে পালতে কবরে যাইতে হইবো, বুঝছিস? পড়ালেখা কইরা লাভ নাই। হাজার পড়ালেহা করলেও তোরে উনুন জালাইতে হইবো। বরের কাছে বন্দি থাকতে হইবো।
সোহাগী আহত দৃষ্টিতে আমেনার দিকে তাকিয়ে রইলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,
— নানী আমি তো কালকে রাতে তোমাকে কথা দিয়েছি যে কোন ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে থাকবো না। ছেলেদের সঙ্গে কথা বলবো না। তাহলে কেন নানী? কেন আমার বিয়ে দিতে চাইছো? আমি অনেক দূর অবধি পড়তে চাই।
আমেনা আর কথা বাড়ালেন না। অনুমতি ব্যতীত সোহাগী কে তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সর্বপ্রথম সোহাগীর চুলগুলো আঁচড়াতে শুরু করলেন। সোহাগী কিছু বললো না। ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে স্থির রাখতে চেষ্টা করলো। আমেনা নিজের কর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। হঠাৎ মুচকি হেসে সোহাগী কে বলে উঠলেন,
— এমন মুখ করে থাহিস না সোনা। ভুঁইয়া বাড়ি তোর বিয়া হইবো। ওখানকার মানুষ মেলা ভালো। তারা তোরে পড়তে দিবো।
___________
রাশেদের তৈরি কৃত শক্ত কাঠের চেয়ারে বসে রয়েছে আমিরুল। লোকটার চোখে গম্ভীর্য দিয়ে ভরপুর। বয়স তাঁর বছর পঁয়ত্রিশ কিন্তু তাকে দেখে বোঝা মুশকিল! লোকে বলবে যৌবনের শেষ প্রান্তে পা রেখেছে আমিরুল। রাশেদের ঘরে প্রবেশ করার পর থেকেই ঘেমে একাকার সে। সোহাগীর ছোট ভাই লোকটা কে হাত পাখা নাড়িয়ে বাতাস করে যাচ্ছে অবিরাম! কিন্তু আমিরুল অস্থির হয়ে বারংবার দৃষ্টিপাত ফেলছে হাত ঘড়িতে। তার চোখে মুখে বিষন্নতা ছেয়ে।
আমিরুলের পাশে বসে রয়েছেন তার মা আসমা ভুঁইয়া। তারা মা ছেলে দু জন সোহাগী কে দেখতে এসেছে। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে একজন ড্রাইভার। যে চৌরাস্তায় গাড়ি ভেতর ঝিমুচ্ছে। আসমা কে হাত পাখা দ্বারা বাতাস করেছেন সোহানা। তার চোখে মুখে পুলকের রেখা স্পষ্ট! আজ মেয়ের একটা ব্যবস্থা করতে পারলেই হলো।
— আম্মা মেয়ে কোথায়? আমার ইমপটেন্ট কাজ আছে। একটু জলদি আনতে বলো।
আমিরুলের কথা শুনে সোহানার হাসির রেখা মলিন হয়ে এলো। জড়তা মাখা কন্ঠে সে বলে উঠলো,
— এইতো আব্বা, এখনই আইসা পড়বো। ওর নানী ওরে আনতে গেছে। তুমি একটু বইসো।
আসমা ছেলের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ম কন্ঠে বলেন,
— আহ্ আমিরুল এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেন!
শান্ত হয়ে বসলো আমিরুল। সোহাগী কে এখনো আসছে না দেখে সোহানার ভেতরে আগুন জ্বলতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। নিশ্চই জেদ ধরে রয়েছে সোহাগী! আজ একবার অতিথি বিদায় হোক সোহাগীর খবর করে ছাড়বেন সোহানা!
সোহাগী কে চুল মুঠি ধরে টেনে আনার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন সোহানা। মুহুর্তেই আমেনা সঙ্গে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে সোহাগী। আমেনা সোহাগীর বাহু ধরে আসমার সামনে এনে দাড় করালো।
সোহাগীর দিকে দৃষ্টিপাত ফেললো আমিরুল। ইয়া বড়ো এক হাত ঘোমটা দ্বারা মুখ ঢেকে রেখেছে মেয়েটা। সোহাগীর মুখ না দেখতে পেরে বিরক্ত হলো আমিরুল! স্থির মস্তিষ্কে ভালোভাবে পরখ করলো। সোহাগীর দেহের গড়ন মোটেও পছন্দ হলো না তার। অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবান মেয়ে!
আসমা সোহাগী কে লক্ষ্য করে উঠে দাঁড়ান। আস্তে করে সোহাগীর ঘোমটা তুলে দেন। অতঃপর সোহাগী কে পেছন ঘুরিয়ে আমিরুলের মুখমুখি দাঁড় করিয়ে শক্ত গলায় বলেন,
— দেখো বাবা কেমন লাগে? চলবে তো!
আমিরুল সোহাগীর মুখের দিকে তাকাতে হতবাক হয়ে গেলো। মোটা মেয়েরা এতো সুন্দর হয় বুঝি! সোহাগীর চোখ জোড়া হরিণের চোখের ন্যায় এক সাগর মায়ায় ভরপুর। লম্বা, সরু নাক। স্বল্প লাল রংয়ের পাতলা, চিকন ঠোঁট। আমিরুল সবচেয়ে বড়ো ধাক্কা খেলো সোহাগীর ভ্রূ জোড়া লক্ষ্য করে। জোড়া ভ্রু কিন্তু খুবই চিকন। যার দরুন মেয়েটা অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী বলে বলা চলে।
— কি হলো বাবা! পছন্দ হয়েছে তো?
আসমার কথাই আমিরুলের ধ্যান ভাঙল। তৎক্ষণাৎ সোহাগীর মুখশ্রী হতে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। শুকনো ঢোক চেপে নিজেকে সংযত রেখে বললো,
— জী আম্মা। বাকিটা তোমার হাতে। তোমার পছন্দই আমার পছন্দ।
সামনে অবস্থানরত ব্যক্তির গম্ভীর কন্ঠস্বর পেয়ে কেঁপে উঠলো সোহাগী। লোকটা উত্তর শুনে সোহাগীর হাত পা অসাড় হয়ে এলো নিমিষেই! মাথা তুলে লোকটা মুখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার মতো সাহস জুটে নি তার হৃদয় মনে।
আমিরুলের কথা শুনে আনন্দের উৎসারিত হয়ে গিয়েছেন আমেনা এবং সোহানা। খুশিতে দাঁত বের করে নিরবে হেসে চলছেন তারা। অপরদিকে একই অবস্থা আসমার। ছেলের উত্তরে ভীষণ পুলকিত তিনি। অবশেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পর দ্বিতীয় কোন এক মেয়ে কে তার ছেলের মনে ধরেছে! ঠোঁটের কোণে লম্বা এক হাসির রেখা ঝুলিয়ে রেখে আসমা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সোহাগী কে দেখতে লাগেন। ঘোমটা তুলে চুলগুলো হাত দিয়ে মেপে দেখেন। হঠাৎ সোহানা কে আতঙ্ক করতে বলে উঠেন,
— মেয়ে তো পছন্দ হয়েছে কিন্তু,,,
চমকে উঠেন সোহানা। মুহুর্তেই আতঙ্কিত কন্ঠে বলেন,
— কিন্তু কী আপা?
সোহানার প্রশ্নের জবাবে আসমা তুচ্ছতাচ্ছিল্য স্বরে বলে উঠেন,
— কিন্তু মেয়ে যে অতিরিক্ত মোটা আর খাটো। আর চুলগুলোর অনেক গুচ্ছ আছে কিন্তু পিঠ পর্যন্ত কেন?
কথাগুলো শুনে ক্ষুন্ন হলেন সোহানা। লহমায় আমেনা উত্তেজিত হয়ে দ্রুত বলেন,
— আমার নাতি ছয় মাস আগেও এমন ছিলো না। হঠাৎ চৌদ্দ তে পা দিতেই ফ্যালফ্যালাই বড়ো হইয়া গেছে। মোটাও হইয়া গেছে। আপনারা এসব লইয়া চিন্তা করবেন না। আর চুল বড়ো হয় নাই তো কি হইছে! এহন থাইকা চুল রাইখা বড়ো করবো।
আসমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনমরা হয়ে বলে উঠেন,
— ঠিক আছে। আপনারা তো জানেন না আমার বউমার অনেক বড়ো চুল ছিলো। গায়ের রং ছিলো ধবধবে সাদা। কিন্তু এই মেয়ের গায়ের রং ময়লা ,,,
আসমার শেষোক্ত বাক্য সম্পূর্ণ শেষ করার সুযোগ দিলেন না সোহানা। নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন,
— আমার মাইয়ার গায়ের রং কইলাম শ্যামলা না। ও আমার মতো ফর্সা। দেখেন আমার হাত। আমার মতো আমার মাইয়ার গায়ের রং। সোহা খালি গ্রাম ঘুইরা বেড়ায়, নিজের যত্ন নেই না তাই এমন ময়লা হইয়া গেছে।
আসমা সত্যি সত্যি সোহানার হাত খুঁটিয়ে দেখলেন। মেয়ে মাইয়ের মতোই গায়ের রং পেয়েছে। অযত্নের ফলে সোহাগী একটু শ্যামলা। আসমা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে বলেন,
— ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু বিয়ের পর কিন্তু গ্রাম ঘুরা বন্ধ করতে হবে। শুনেন খালা, আমার বউ যদি বাঁচা থাকতো তাহলে কখনোই আপনাদের ভিটায় পা রাখতাম না।
— আহ্ মা। এসব বাদ দেও তো। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিন তারিখ ঠিক করো। আমাকে আগামী সপ্তাহে কম্পানির কাজে নেপালে যেতে হবে। তাই আমি চাইছি দু তিন দিনের মধ্যে শুভ কাজ সেরে ফেলতে।
আমিরুলের লাগামহীন কথাগুলো শুনে লজ্জায় রঞ্জিত হলো আমেনা মুখশ্রী। এ কেমন ছেলে, লাজ লজ্জা ভুলে বিয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে! আসমা ছেলের কথা উপেক্ষা করে আচমকা সোহাগীর থুতনিতে স্পষ্ট করলো। মুহুর্তেই সোহাগীর জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথাগুলো বলতে আরম্ভ। যা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সোহাগী।
— নাম কি যেন তোমার, একবার বলো তো? জানো মা, অনেক সময় দেখা যায় ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ে করার পর বাসর ঘরে জানা যায় যে বউ কথা বলতে পারে না। তাই আমি সেই ঝুঁকি একদমই নিতে চাইছি না। আমার একমাত্র ছেলে বলে কথা।
আসমার কথা বলার ভাব ভঙ্গি পছন্দ হলো না সোহাগীর। কিন্তু মায়ের কথা ভেবে মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পেলো না সোহাগী। তার বুক ফেটে কান্না আসছে। আব্বা তুমি কোথায় বলে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার! এখন যে খুব করে রাশেদের উপস্থিতি তার প্রয়োজন। নিজেকে ধাতস্থ রেখে সোহা কাঁপা কাঁপা গলায় প্রত্যুত্তর করে,
— আমার নাম মোসাম্মত সোহাগী।
সোহাগীর কন্ঠস্বর শুনে আমিরুল ফিসফিসিয়ে কিছু বললো। কিন্তু তা কারো কান অবধি পৌঁছাতে পারলো কি সন্দেহ! আসমা হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। মুচকি হেসে সোহাগীর মাথায় হাত রাখলেন। অতঃপর ঠোঁট জোড়া সংকুচিত করে মলিন কন্ঠে বলে উঠেন,
— শোনো খুকি, আগে থেকেই তোমাকে বলে রাখা ভালো। আমি বা আমার ছেলে চাই না বিষয়টা তুমি বিয়ের পরে জানতে পারো। তুমি আমার ছেলের দ্বিতীয় বউ হতে চলছো। আমার বউ মা মাস ছয়ের আগে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মারা যায়। শুধু তাই নয় আমার বউমার একটা পুত্র সন্তান আছে। মূলত তার জন্যেই তোমাকে ঘরে তুলেছি। আর যাই করো না কেন আমার নাতির যত্ন আত্মি করতে হবে তোমাকে। সৎ মায়ের মতো আচরণ করলে একদম বাপের বাড়ি ছুড়ে ফেলে দিবো। যদি নিজের মা হয়ে উঠতে পারো তাহলে আমরা সবাই তোমাকে ভালোবাসবো।
আসমার কথাগুলো শুনে চমকে উঠলো সোহাগী। পরিশেষে তাকে কিনা এক ছেলের বাপ কে বিয়ে করতে হবে! সে যদি লোকটার বাচ্চা কে লালন পালন করে তাহলে সে পড়বে কখন? এরা কি তাকে পড়তে দিবে না? ইতিমধ্যে সোহাগীর মাথা ঘুরতে আরম্ভ করেছে।
আমিরুলের অতীত সম্পর্কে আমেনা এবং সোহানার পূর্বে থেকে অবগত ছিলো যার দরুন তারা অবাক হয় নি। অবশ্য আমিরুল বিবাহিত শুনে প্রথমে রাজি হন নি আমেনা। কিন্তু সোহানার অযৌক্তিক বানী শুনে, নাতীনের সুখের কথা চিন্তা করে তিনি রাজি হয়েছেন।
আসমা ছেলে কে ইশারা করে কিছু দিতে বলেন। আমিরুল তৎক্ষণাৎ মুচকি হেসে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। পকেটে থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার বানডেল বের করে মায়ের হাতে দিলেন। আসমা টাকার বানডেল নিয়ে তড়িঘড়ি সোহাগীর হাতের মুঠোয় পুড়ে দিলেন। পুনরায় বলে উঠলেন,
— আর একটা কথা আগে থেকেই বলে রাখি, বিয়ের পর কোন সন্তান নেওয়া যাবে না। আমার নাতির মুখে মা ডাক শুনে তোমাকে মাতৃত্বের স্বাদ নিতে হবে চিরকাল। আশা করে বুঝতে পেরেছো?
আসমার কথাগুলো শুনে হতবম্ব হয়ে পড়লো সোহাগী। বিষয়টা বুঝতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে তার। আসমার এতো বড়ো মারাত্মক কথার সারমর্ম বুঝতে ব্যর্থ হলো সোহাগী। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। এখন থেকে এই মানুষ গুলোর সামনে থেকে সরে যেতে বড্ড ইচ্ছে করছে তার। অন্যদিকে আমিরুল মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে ভদ্র ছেলের মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আসমার কথাগুলো প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে নি সোহানা। তিনি লোভনীয় দৃষ্টিতে সোহাগীর অবস্থানরত টাকাগুলোর উপর তাকিয়ে রয়েছেন। কিন্তু আসমার বলা বাক্যগুলো মোটেও পছন্দ হলো না আমেনার। তার নাতি কোনদিনই নিজের গর্ভের সন্তানের মা ডাক শুনতে পারবে না!
(চলবে)