স্বপ্ন জুড়ে আমি পর্ব-০৮

0
68

#স্বপ্ন_জুড়ে_আমি
#পর্ব_৮
#সামসুন_নাহার

“মা একটা কথা বলি। ”

প্রিয়শার কথা শুনে আতিফা বেগম মুখ তুলে মেয়ের দিকে তাকালেন।তার মেয়ে যে কিছু চাইতে এসেছেন তা তিনি বুঝতে পারছেন।তিনি মেয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,

“বলো কি বলতে চাও।”

প্রিয়শা নিচু কন্ঠে বলল,

“মা আমি একটু সুফিয়ার সাথে ঘুরতে যাব।যাব আর আসব।”

“আমি যেতে দিতে পারব না।”

প্রিয়শা কোমল স্বরে বলল,

“প্লিজ মা।মানা করিও না।সুফিয়া এত করে বলল যে আর না করতে পারলাম না।আমি না গেলে ও মন খারাপ করবে।”

আতিফা বেগম নিজের কাজে মগ্ন হয়ে বললেন,

“এতই যখন যাওয়ার ইচ্ছে তাহলে তোমার আব্বুকে জানিয়ে যাও।তিনি পারমিশন দিলে যাবে।তাছাড়া আমি যদি তোমাকে যেতে বলি আর তোনার আব্বু পরে শুনলে কি হবে জানো।”

আব্বুর কথা শুনতে প্রিয়শার মুখ চুপসে গেল।আব্বু যদি শুনে ঘুরতে যাওয়ার কথা তাহলে পারমিশন দিবে না।প্রিয়শা তার মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমার ভালো মা।আমার সোনা মা। প্লিজ মা আমাকে যাওয়ার পারমিশন দাও।আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। যেতে দাও মাআআআ।”

মেয়ের এমন বাচ্চামো কান্ডে আতিফা বেগম হেসে বললেন,

“এসব করে লাভ নেই।আমি কিছু করতে পারব না।”

“না, তুমি পারমিশন না দেওয়া অব্ধি আমি তোমাকে ছাড়ছি না।”

“থাকো তুমি জড়িয়ে ধরে তবুও আমি পারমিশন দিতে পারব না।”

প্রিয়শা মা’কে ছেড়ে বিছানায় বসে মুখ ভার করল।ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

“আমি শুধু ঘুরতে যেতে চেয়েছি আর তো কিছু চাইনি।আসলে আমাকে কেউ ভালোবাসে না।আমার সাথে তোমরা কেউ কথা বলবে না।”

প্রিয়শার কান্ডে আতিফা বেগম হেসে বললেন,

” ঠিক আছে যাও।তবে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে নাহলে তোমার আব্বু শুনলে খবর আছে।”

মায়ের কথা শুনে প্রিয়শা খুশি হয়ে নিজের মা’কে একটা চুমু দিয়ে বলল,

“থ্যাঙ্কিউ মা।আমার সোনা মা।”

বলেই প্রিয়শা নিজের ঘরে গেল।নিজের রুমে গিয়ে ভাবল আজ ফাইয়াজের জন্য তাকে তার মায়ের কাছে মিথ্যে বলতে হলো।আসলে প্রিয়শা সুফিয়ার সাথে দেখা করতে যাবে না।ফাইয়াজের দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী তার সাথে দেখা করতে যাবে।প্রিয়শা আর কিছু না ভেবে রেডি হতে লাগলো।

……………………………………….

ফাইয়াজের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে প্রিয়শা দেখল ফাইয়াজ আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত হয়েছে।প্রিয়শা খানিকটা দূরে থেকে দেখল ফাইয়াজ কালো শার্ট পরে আসছে।ফাইয়াজ একটা ছোট ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।ফাইয়াজের হাসি সবসময় প্রিয়শার পছন্দ।কালো রঙে ফাইয়াজকে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে।এই হাসি খুব মনোমুগ্ধকর। প্রিয়শার বুকের মধ্যে লাব-ডাব শব্দের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে আপন গতিতে। কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলিয়ে নিল।

প্রিয়শা ফাইয়াজের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে কেশে নিজের উপস্থিতি জানান দিল।ফাইয়াজ পিছনে ঘুরতেই স্তব্ধ হয়ে গেল।প্রিয়শা আজ শাড়ি পরে আসছে।চোখ দুটি শুধু প্রিয়শাকে দেখেই যাচ্ছে।অনুভূতিগুলো আবার জন্ম নিচ্ছে।প্রিয়শাকে দেখে ফাইয়াজের ঘোর লেগে যাচ্ছে।তার মন জানান দিচ্ছে এই প্রিয়শা নামক মেয়ে তোকে নিয়ন্ত্রণহীন করতে এইরকম করেছে।প্রিয়শাকে শাড়িতে আজ অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।

ফাইয়াজের এইরকম চাহনি দেখে প্রিয়শা নিজের হাত দিয়ে তুড়ি বাজালো। ফাইয়াজ মনোমুগ্ধকর কন্ঠে বলল,

“অসাধারণ লাগছে প্রিয়।তোমার থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাচ্ছে প্রিয়।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা লজ্জায় মাথা নিচু করল।প্রিয়শার সব অনুভূতিরা অভিমানের ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছে।কিন্তু কোনো এক অজানা দেয়ালের কারনে পারছে না।প্রিয়শা নিচের দিকে তাকিয়ে গলার স্বর নিম্ন রেখে বলল,

“কেন ডেকেছ আজ এখানে।”

ফাইয়াজ নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে মুচকি হেসে বলল,

“আজ তোমার সাথে ঘুরব ও সন্ধ্যা উপভোগ করব বলে।আসো আমার সাথে।”

ফাইয়াজ ছোট ছেলেটিকে টাকা দিয়ে বিদায় করে হাঁটতে লাগলো। প্রিয়শা ফাইয়াজের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।দুইজনেই নিরবতা বজায় রেখে চলছে।এই নিরবতা ভেঙ্গে প্রিয়শা বলল,

“কোথায় যাচ্ছি আমরা।”

ফাইয়াজ রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল,

“দুই চোখ যেদিকে যায়।সেদিকে যাব আজ।”

“আমি বেশি সময় দিতে পারব না। বাসায় তোমার জন্য মিথ্যে বলে আসছি।”

“সেটা আমার দেখার বিষয় না।তুমি আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবে আমার সাথে।”

“পারব না আমি।”

“এটা আমার দ্বিতীয় শর্ত।শর্তর কথা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে হবে।”

শর্তর কথা শুনে প্রিয়শা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

“ইশ!তোমার শর্তর জ্বালায় যে আর কি কি করতে হবে।তোমার শর্তে রাজি হওয়ার চেয়ে এসাইনমেন্ট করা অনেক ভালো ছিল।”

“এইজন্য তো বলে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।বুঝেছে।তুমি আমার শর্তে রাজি হওয়ার আগে ভাবতে পারো নাই।”

“এখন তুমি তো মজা নিবা।তোমার তো এখন খুব ভালো লাগতেছে।”

প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ হাসতে লাগল।ফাউয়াজের হাসি দেখে প্রিয়শা আবার থমকে গেল।প্রিয়শা হঠাৎ করে বলল,

“এভাবে আমার সামনে হাসবে না।”

ফাইয়াজ নিজের মুখ প্রিয়শার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“কেনো প্রেমে পরে যাবে এই ভয়ে।কিন্তু আমার সমস্যা নেই।তুমি আমার প্রেমে পরতেও পারো।আমি তো শুধু তোমার জন্য।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা লজ্জা পেল।হঠাৎ করে মুখ দিয়ে কি বের হয়ে গেল।প্রিয়শা কিছু না বলে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল। প্রিয়শার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ফাইয়াজ হাসল।নিজের গতি বাড়িয়ে প্রিয়শার পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।

সময়টা সূর্য ডুবার আগ মুহুর্ত। আকাশে মাঝে মাঝে লাল রক্তিম মেঘ জমা হয়ে আছে।সূর্য আসতে আসতে করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যাচ্ছে অর্থাৎ সন্ধ্যা হচ্ছে একটু পরে রাত হবে।সময়টা খুব উপভোগ করছে প্রিয়শা। হঠাৎ করে ফাইয়াজ প্রিয়শার খোঁপা করা চুল খুলে দিয়ে বলল,

“খোলা চুলে বেশি সুন্দর লাগছে।”

প্রিয়শা আর কোনো কথা না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।ফাইয়াজ প্রিয়শার হাত ধরলো। তখন প্রিয়শা ফাইয়াজের দিকে ঘুরল।ফাইয়াজ মোহময়ী আদুরে স্বরে বলল,

“প্রিয় আমি তোমাকে অসম্ভব রকমের ভয়ংকর ভালোবাসি।আমাকে কোনোদিন ছেড়ে চলে যেও না।”

প্রিয়শার উত্তরের আশায় ফাইয়াজ প্রিয়শার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়শা কোনো কথা না বলে চুপ করে আছে।ফাইয়াজ এবার ব্যাথিত কন্ঠে বলল,

“এভাবে চুপ করে আছো কেনো।তোমার নিশ্চুপতা আমাকে বড্ড পীড়া দেয়।তুমি কি তা বুঝতে পারো না।আমি তো আমার করা ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছি।”

ফাইয়াজ প্রিয়শার হাত ধরে নিজের বা বুকে ধরে বলল,

“এখানে শুধু তুমি আছো।তুমি ছাড়া এখানে কেউ নেই আর।তুমি তো সব জানো কেন আমি কথা বলা বন্ধ করেছিলাম।তারপরও এভাবে চুপ করে থেকো না প্রিয়।আমি সইতে পারব না।এর চেয়ে আমার মৃত্যু ভালো।আমার যেন মৃত্যু হয়।”

আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কথা শোনায় প্রিয়শা ফাইয়াজের বুকে মাথা রেখে ফাইয়াজকে শক্ত জড়িয়ে ধরলো।যেন ছেড়ে দিলেই আর খুজে পাওয়া যাবে না।
কাছের মানুষের মৃত্যুর কথা শোনা খুবই কষ্টকর। তেমনিভাবে এই কষ্টের মধ্যে প্রিয়শা নাম না জানা অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে তার স্বপ্ন পুরুষের কাছে এসেছি।সব পুরনো অনুভূতি নতুন করে জেগে উঠেছে।প্রিয়শা ফাইয়াজকে জড়িয়ে ধরেই হিচকি তুলে ফেলেছে।এত দিনের কষ্ট পাওয়া অভিমান সব চোখের জলে মুঝে ফেলছে।ফাইয়াজ তৎক্ষনাৎ কিছু বলল না।শুধু প্রিয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।কিছুক্ষণ পর ফাইয়াজ নিরবতা ভেঙ্গে বলল,

“প্রিয়।”

প্রিয়শা হিচকি তুলতে তুলতে বলল,

“আর কখনো মৃত্যুর কথা মুখে আনবে না।”

“প্রিয় তুমি ঠিক আছো।আমার কিছু হয়নি।আচ্ছা আর কখনো এসব কথা মুখে আনবো না।তুমি আমায় ভালোবাসো এই অনেক।তোমার উত্তর আমি বুঝে গেছি প্রিয়।সবকিছু বলতে হয়না কিছু কিছু অনুভব করতে হয়।তেমনিভাবে আমিও কিছু অনুভব করলাম।”

প্রিয়শার ঘোর ভাঙ্গতেই প্রিয়শা বুঝল সে এখন কোথায় আছে।লজ্জা পেল সাথে সাথেই।ফাইয়াজকে ছেড়ে মাথা নিচু করে বলল,

“তাহমিদ আমি বাড়ি ফিরতে চাই।”

ফাইয়াজ আর কোনো কথা বলল না। তার প্রিয় উত্তর দিয়ে দিছে তাতেই তার শান্তি।প্রিয়শা আর কোনো কথা না বলে সেখান থেকে প্রস্থান করল।আর ফাইয়াজ সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল,

“তার প্রিয়র রাগ ভেঙ্গেছে। তাদের আবার নতুন করে প্রনয়নের দিন শুরু হচ্ছে।আবার শুধু কাক্ষিত স্বপ্ন পূরন করার পালা।তারপর দুইজন দুইজনের আজীবনের জন্য হয়ে যাবে।তারপর কেউ তাদের আর আলাদা করতে পারবে না।”

#চলবে………………………….
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ)