#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_৯
#সামসুন_নাহার
“তুমি আজকে এই শার্ট পরে আসছো কেন।”
প্রিয়শার কথায় ফাইয়াজ নিজের পরনের শার্ট দেখে বলল,
“কেনো,এই শার্টে কি হয়েছে। আসার সময় আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখলাম তখন তো সুন্দর লাগছিল। তাহলে এখন আবার কি হলো।”
ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“ওহ সুন্দর করে সেজে আসছো যেন অন্য মেয়েরা তোমার দিকেই যেন তাকিয়ে থাকে।কিন্তু না তোমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে না।বরং খারাপ দেখাচ্ছে।”
ফাইয়াজ নিজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সত্যি আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে না।”
“না একদম সুন্দর দেখাচ্ছে না।”
“তাহলে কালকে থেকে অন্য সুন্দর দেখে পরে আসব।”
প্রিয়শা ফাইয়াজের কথা শুনে তেঁতে উঠে বলল,
“হ্যাঁ সুন্দর দেখে তো পরে আসবা।সুন্দর পরে না আসলে মেয়েরা পটবে কিভাবে।”
প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ হেসে বলল,
“আমি কখন এসব বললাম।আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে তাড়াতাড়ি আমার বাড়িতে অর্থাৎ আমার রুমে স্থায়ী করার ব্যবস্থা করতে হবে।তাহলে আমার প্রিয় এর দেওয়া পছন্দের শার্ট পরে আসতে পারব।ঠিক আছে প্রিয়।”
ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা হাসল।প্রিয়শা সে তো নিজেও চায় তাদের ভালোবাসা যেন পূর্ণতা পাক।কোনো কিছুই যেন বাধা হয়ে না দাঁড়াক।প্রিয়শার ভাবনার মাঝেই ফাইয়াজ হেসে প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বলল,
“তাহলে খুব দ্রুত তোমার আব্বুকে প্রস্তাব পাঠাতে হবে।কি বলো আজকে না কালকে কোনদিন প্রস্তাব পাঠাবো।”
প্রিয়শা মাথা নিচু করে বলল,
“এখন না। এই বছরটা যাক।”
ফাইয়াজ অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
“এই বছর প্রিয়। এইবছর কেনো অপেক্ষা করতে হবে।আমার তো ইচ্ছে করতেছে এখনই তোমাকে বিয়ে করে নিজের করে নেই।আচ্ছা তুমি কি ভাবতেছ আমরা তোমাকে পড়াবো না ।তোমার মত ফাঁকিবাজ আমরা না।বিয়ের পর তোমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে।”
“উহু! তা নয়।আমি জানি তুমি কেমন তাই আমার পড়াশোনা তুমি বন্ধ করাবে না।তবুও কিছু সময় অপেক্ষা করি।”
“আবার অপেক্ষা করতে করতে আবার হারিয়ে যেও না।বেশি কিছু ভালো না।আমার ভয় লাগে যদি তোমাকে নিজের করে না পাই।যদি তুমি শুধু আমার স্বপ্নেই থেকে যাও বাস্তবে যদি না পাই তোমাকে।তাহলে আমি শেষ হয়ে যাব।”
প্রিয়শা এগিয়ে এসে দুই পা উঁচু ফাইয়াজের কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
“আমি শুধু তোমার।আর তুমিও আমার।কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।আমার যে সবকিছু জুড়ে তুমি।আমার #স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি বুঝেছ আমার প্রানপ্রিয় ভালোবাসা।”
ফাইয়াজ প্রিয়শার কপালে গাঢ় একটা চুম্বন দিয়ে বলল,
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি প্রিয়।এই তাহমিদ শুধু তোমার। ”
প্রিয়শা চোখ বন্ধ করে সবকিছু অনুভব করল।দুইজনেই কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করল।কিছুসময় পর প্রিয়শা বলল,
“তুমি সবসময় হুমায়রার কাছ থেকে দূরে থাকবে।”
“আমি লক্ষ্য করেছি হুমায়রাকে তুমি দেখতে পারো না।কেন বলোতো।”
“ওই মেয়ের কথা আমাকে বলবে না।আমার সাথে সবসময় হিংসে করে।তোমার দিকে আবার কেমন করে তাকিয়ে থাকে।আবার ক্লাসে তোমাকে তাহমিদ স্যার বলে ডাকছে। যেখানে সবাই তোমাকে ফাইয়াজ স্যার বলে ডাকে।বেশ করেছ তখন মানা করে যে তাহমিদ স্যার বলে ডাকতে।এভাবে সবসময় হুমায়রার থেকে দূরে থাকবে।”
ফাইয়াজ মুচকি হাসি দিয়ে বলল ,
“আচ্ছা আমার প্রিয়।এই তাহমিদ নামক ডাক শুধু আমার প্রিয়জনরাই দিবে। খুশি এবার।”
“হুম।শুনো সিনিয়রদের সাথে বেশি হেসে হেসে কথা বলবে না।অন্য স্যার যেভাবে গম্ভীর মুড নিয়ে থাকে সেভাবে গম্ভীর হয়ে থাকবে।”
“কেন আমি গম্ভীর মুড নিয়ে থাকব।”
“কারন তুমি যখন হেসে হেসে কথা বলো তখন সব মেয়েরা তোমার দিকে কেমন করে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।”
“কেন তোমার হিংসে হয় নাকি।”
“হুম হিংসে হয়।আমার ব্যক্তিগত তুমি। তোমার সুন্দর হাসি দেখে শুধু আমি মুগ্ধ হবো।অন্য মেয়েরা কেন হবে।”
ফাইয়াজ প্রিয়শার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা তাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু ফাইয়াজের মনে ভয় হচ্ছে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে তো।নাকি অন্যদের মত তাদের ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যাবে।শুধু এসব কথাই ফাইয়াজের মনে বেজে যাচ্ছে।মাথা থেকে যেন সরতেই চাচ্ছে না। নিজেকে ধিক্কার জানাল ফাইয়াজ।তারা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে তাই তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবেই।নিজের এসব নেতিবাচক ভাবনাকে দূরে ঠেলে ফাইয়াজ বলল,
“এতই ভালোবাসো আমাকে তুমি।”
“হুম।নিজের থেকে বেশি।”
ফাইয়াজ নিজের এক আঙ্গুল গালে দিতে ভাবুক হয়ে বলল,
“তাহলে এই মেয়ের জন্য তাহলে তো চেষ্টা করা যেতেই পারে। ”
ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা হাসল। প্রিয়শার সেই হাসির দিকে ফাইয়াজ মনোমুগ্ধকরভাবে তাকিয়ে রইল।এই হাসিতেই যেন ফাইয়াজের শান্তি।এই হাসি ফাইয়াজের সকল ক্লান্তির ঔষধ।
……………………………….
সময়টা রাত আটটা বেজে দশ মিনিট।প্রিয়শা ও আদিল টিভির সামনে বসে আছে।আদিল টিভি চালু করে হিন্দি মুভি লাগালো।মনের আনন্দে টিভি দেখছে।টান টান উত্তেজনায় ভরা মুভি।নায়ক মারামারি করছে আর পিছন থেকে নায়ককে মারতে আসছে।নায়ক কি পারবে নিজেকে রক্ষা করতে।লোকটা নায়কের পিছনে এসে মারবেই তখন প্রিয়শা রিমোট কেড়ে নিয়ে কার্টুন লাগালো।
আদিল বিরক্ত হলো প্রচুর।টান টান উত্তেজনার মধ্যে কেউ চ্যানেল পালটায়।আদিল প্রিয়শার থেকে রিমোট কেড়ে নিয়ে আবার মুভিতে লাগালো।প্রিয়শা আবার আদিলের কাছ থেকে রিমোট নিয়ে কার্টুন লাগালো।আদিল বিরক্ত হয়ে আবার নিজের চ্যানেলে দিয়ে রিমোট নিজের হাতে লুকিয়ে রাখল।প্রিয়শা আদিলের হাত থেকে রিমোট টানতে টানতে বলল,
“আদিল রিমোট দে আমাকে।আমি কার্টুন দেখব।”
আদিল রিমোট শক্ত করে ধরে বলল,
“না আমি রিমোট দিব না।আমি মুভি দেখব।”
“এইটুকু ছেলে তুই মুভি কি দেখবি।তোর কার্টুন দেখার বয়স।কার্টুন দেখ।”
“আর তোমার এখন কি কার্টুন দেখার বয়স যে তুমি কার্টুন দেখবা।”
“অবশ্যই আমার কার্টুন দেখার বয়স।”
আদিল মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“বিয়ে দিলে এখন বুড়ি হয়ে যাবে। তার নাকি এখন কার্টুন দেখার বয়স।”
“বেশি জানিস তুই চুপ কর।”
রিমোট নিয়ে বিশাল এক যুদ্ধ শেষ করে প্রিয়শা আবার কার্টুনের চ্যানেলে দিল।আদিল আবার ধস্তাধস্তি করে রিমোট নিয়ে ছবির চ্যানেলে দিল।প্রিয়শা আদিলকে পিঠে এক ঘা মারতেই আদিলের হাত হালকা হতেই প্রিয়শা রিমোট হাতে নিল।
প্রিয়শা রিমোট হাতে নিতেই আদিল দৌড়ে উঠে টিভির সাইডে দেওয়া পাশে ছোট বাতিটি চেপে ধরল।প্রিয়শা চ্যানেল পাল্টাতে চাইল।কিন্তু পারল না।আদিল এক হাত দিয়ে নিজের পিঠ ধরে কুটিল হেসে বলল,
“পাল্টাও এবার কত চ্যানেল পাল্টাবে।”
প্রিয়শা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“আদিল সরে যা ওখান থেকে।”
“সরবো না আমি।কি করবা করো।”
“আদিল শেষ বারের মত বলছি।”
“আমিও শেষবারের মত বলছি। সরবো না।”
প্রিয়শা রিমোট এর ব্যাটারি খুলে ফেলে টিভি বন্ধ করে দিয়ে হেসে বলল,
“থাক পড়ে এখন ওখানে।আমার কি।”
আদিল টিভি ছেটে এসে বসে মুখ কালো করে বলল,
“ঠিক করলে না তুমি এটা।”
প্রিয়শা মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“ঠিক করেছি।আমি দেখতে পাব না আর তুই দেখবি।”
“ঠিক আছে।আমিও আম্মুকে তোমার সব সিক্রেট কথা বলে দিব।”
“আমি মনে হয় চুপ করে থাকব।আমিও বলবো।”
“আমি বলে দিব তোমার লুকানো সব কাজ। ”
“ওহো!শখ কত।”
দুই ভাই-বোন এর ঝগড়ার সময় আতিফা বেগম এসে গম্ভীর মুখে রাগ নিয়ে বললেন,
“কি হচ্ছে এখানে।এত শব্দ শোনা যাচ্ছে কেন।”
মায়ের রাগান্বিত চেহারা দেখে আদিল ও প্রিয়শা একে অপরকে দেখে হাসলো। তারপর দুইজন দুইজনের ঘাড়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।আদিল হেসে বলল,
“কিছু না তো মা।আমরা তো মজা করছিলাম।আমি কি আপুর সাথে ঝগড়া করতে পারি।আপু যা চায় আমি আপুর জন্য সব করতে পারি।সেখানে আমি কিভাবে ঝগড়া কর।আমরা তো মজা করছিলাম।”
বলেই আদিল প্রিয়শার দিকে তাকালো। প্রিয়শা দাঁত কিড়মিড় করে আদিলকে দেখল অর্থাৎ দেখে নিবে পরে। আপাতত প্রিয়শা হেসে বলল,
“হ্যাঁ মা।আদিল ঠিক বলেছে। আমরা তো মজা করছিলাম। ”
আতিফা বেগম গম্ভীর স্বরে বললেন,
“অনেক হয়েছে মজা করা।যাও নিজের রুমে গিয়ে বই ধরে বসো।”
“আচ্ছা মা।”
আদিল ও প্রিয়শা মায়ের কথা অনুযায়ী নিজের ঘরের দিকে যাওয়া শুরু করলো। আতিফা বেগম সেখান থেকে চলে যেতেই দুইজন দুইজনকে ছেড়ে দিয়ে কড়া চোখে দেখল।যার অর্থ সময় বুঝে দেখে নিবে।
#চলবে……………………