#স্মৃতির শহর
#পর্বঃ১৩
#তানিশা সুলতানা
মায়ের ভালোবাসাটা অন্য রকম হয়। সেটার কোনো তুলনা হয় না। আর মা মা ই হয়। মায়ের মতো কেউ হয় না। মায়ের ভালোবাসাটা পৃথিবীর কেউ দিতে পারে না।
এই তো এখন আদির মা রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তবুও রাইয়ের মন ভরছে না। মনে হচ্ছে মা হলে আরও একটু বেশি শান্তি লাগতো।
পেটের ব্যাথা অনেকটাই কমেছে কিন্তু বমি বমি ভাবটা এখনো কমে নি।
আদিকে কল করেছেন উনি কিন্তু এখনো আসছে না। মনে মনে বেশ অভিমান হয় রাইয়ের। কেনো দেরি হচ্ছে? সুপারম্যানের মতো উড়ে উড়ে আসতে পারে না? কেনো বুঝতে পারছে না রাইয়ের ওকে খুব প্রয়োজন?
চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে রাইয়ের।
“কি রে খুব খারাপ লাগছে তোর? ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করবো? না কি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো?
অহি রাইয়ের হাত ডলতে ডলতে বলে।
” ঠিক আছি আমি। এখন অনেকটা ভালো লাগছে। ডাক্তারের কাছে যাবো না।
রাই মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে।
কথার ভাজে লুকিয়ে থাকা অভিমানটা বুঝতে পারেন আদির মা।
“কি খেয়েছিলে? এমন পেট ব্যাথা হলো কেনো?
রাইয়ের কপালে হাত রেখে বলেন উনি।
” সিঙ্গারা
রাই ছোট করে উওর দেয়।
“আর খাবে না। সিঙ্গারা খেলে পেট ব্যাথা তো করবেই। এখন তুমি একা না। বুঝে শুনে খেতে হবে। বুঝলে?
” হুমমমম
একটু ঘুমাবো আমি।
“আচ্ছা ঘুমাও। আমি আসছি।
শাশুড়ী চলে যায়।
অহি রাইয়ের পাশে শুয়ে পরে।
” দেখলি তোর ভাই এখনো আসলো না। আমি এতোটা অসুস্থ হলাম তাও আসলো না। আসুক আজ কথাই বলবো না।
রাগে গজগজ করতে করতে বলে রাই।
অহি মুখ চেপে হাসে।
“আমার ভাইয়ের তো আর তোকে কোলে করে বসে থাকলে চলবে না। ভার্সিটি আছে ওর। বুঝতে হবে তোকে।
” ভালো
তুই যা এখান থেকে। ঘুমতে দে আমায়।
বালিশ মুখের ওপর দিয়ে বলে।
“থাকি না এখানে?
” নাহহহ বললাম তো যা
রাইয়ের এক ধমকে অহি চলে যায়।
আদি কপালে ভাজ ফেলে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে রাইয়ের দিকে। ইচ্ছে করছে চিবিয়ে খেতে। কিন্তু আবার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হচ্ছে। এক বেলায় মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে। বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
কে বলেছিলো ওকে সিঙ্গারা খেতে?
ট্রাইটা খুলে শার্টের দুটো বোতাম খুলে রাইয়ের পাশে শয় আদি।
কপালে লেপ্টে থাকা চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে কপালে চুমু দেয়।
রাই নরেচরে ওঠে। চোখ পিটপিট করে তাকায়।
আদিকে দেখেই জোরে ধাক্কা মারে। কিছুটা পিছিয়ে যায় আদি।
রাই এক লাফে উঠে বসে।
“একদম টাচ করবেন না আমায়। আদিহ্মেতা দেখাতে এসেছেন? এতখনে কতো অসুস্থ ছিলাম আমি। কই আসলেন না তো? এখন যান এখান থেকে। একদম কথা বলবেন না আমার সাথে।
একদমে কথাগুলো বলে রাই। তারাহুরো করে কথা বলার ফলে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। গলা শুকিয়ে গেছে।
আদি হাতের ওপর মাথা রেখে আয়েশ করে শয়।
” তুমি অসুস্থ ছিলে তো আমার কি? কে হও তুমি আমার? তুমি অসুস্থ হলে আমাকেই কেনো আসতে হবে?
দায় ছাড়া ভাব দেখিয়ে বলে আদি।
রাই আরও হ্মেপে যায়। অন্য সময় হলে মন খারাপ হয়ে যেতো।ইমোশনাল হয়ে যেতো।
আদির কপলার চেপে ধরে রাই।
“বউ আমি আপনার। বুঝলেন? আমি অসুস্থ হলে আপনাকে আসতে হবে। কেয়ার করতে হবে। সব কিছুর আগে আমি আর আমর সন্তান বুঝলেন আপনি?
না বুঝে থাকলে কাগজে কলমে লিখে চোখের সামনে লাগিয়ে রাখবো।
আদি ভরকে যায়। এ কোন রাই? এতো চেঞ্জ?
আদি রাইকে জড়িয়ে ধরে। আদির বুকের ওপর পরে যায় রাই। এখনো রাগে গিজগিজ করছে। রাগটা কমছেই না। আদির বুকে এলোপাতাড়ি কয়েকটা কিল দেয়।
“বাহহ বাহহহ বউ বউ ফিলিং আসছে। তবে এতো জ্বরে মারলে কিন্তু তোমার বরটা মরেই যাবে।
ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে বলে আদি।
রাই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। শান্ত হয়ে যায়।
” কাজ ছিলো।
আদি আস্তে করে বলে।
“ভালো
রাই আদির হাতটা সরিয়ে দিয়ে উঠে বসে।
” আজকে যদি আমার বাচ্চাটা আপনার হতো তাহলে কখনোই এভাবে দেরি করে আসতে পারতেন না। এতে আপনার কোনো দোষ নেই।
আদি ততখনে রাইয়ের সামনে চলে এসেছে। রাইয়ের কথায় ভীষণ রাগ হয়। সবটা সময় এমন কথা বলে। আদিও তো মানুষ। ওর তো খারাপ লাগে। সবটা দিয়ে চেষ্টা করে রাইকে আগলে রাখার তবুও এসব কথা।
আদি ঠাস করে রাইয়ের গালে এক চর বসিয়ে দেয়।
গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে আদির দিকে এক পলক তাকায় রাই।
“কখনো একটু ভুল হলেই এক ডাইলোক শুরু করে দাও। পবলেম কি তোমার? খুব জরুরি কাজ না থাকলে নিশ্চিয় আমি দেরি করতাম না। তাছাড়া এতোটা রাস্তাও তো আসতে হবে।
এতো অবুঝ কেনো তুমি? ছোট থেকেই ত্যারা তুমি। নেক্সট টাইম এমন কথা বলার আগে থাপ্পড়টার কথা মনে রাখবা।
রাই ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে।
আদি মাথা চেপে ধরে বসে। কি করে ফেললো এটা? এখন একে মানাবে কিভাবে?
রাই হাঁটু মুরে বসে কেঁদেই যাচ্ছে।
আদি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে একটা ঢোক গিলে। জোরে শ্বাস নিয়ে রাইয়ের কাঁধে হাত রাখতে যায়। রাই সরে যায়।
” সরি এমনটা আর হবে না। প্লিজ জান রাগ করিস না। প্লিজ
হাত জোর করে বলে আদি।
রাই এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এক বারও পেছন ঘুরে তাকায় না।
আদি ডাকতে গিয়েও ডাকে না।
একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন ওকে। একটু পরে গিয়ে কান ধরে সরি বলবে।
আদিদের বাড়ির পেছন দিয়ে একটা পুকুর আছে। রাই সেই পুকুরের পাড়ে গিয়ে বসে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। আদির থাপ্পড়টাও বেশ জোরে লেগেছে যার ফলে পাঁচটা আঙুলের দাগ বসে গেছে।
“সত্যিই তো অনেকটা বারাবাড়ি করে ফেলেছে রাই। এতোটা বারাবাড়ি করা ঠিক হয় নি। কেনো আদির থেকে এতো কিছু আশা করে বসে থাকে ও? কিসের টানে? যাকে ভালোবেসে সবটা দিলো কই তার ওপর তো এতোটা আশা কোনো কালেই ছিলো না রাইয়ের। আশ্রয় দিয়েছে আদি ওকে। ওর সন্তানের দায়িত্ব নেবে বলে কথাও দিয়েছে। এটাই তো অনেক। আর কি চাই? আর কিছু আশা করাটা বোকামি ছাড়া কিছুই না। দিন দিন বড্ড লোভী হয়ে যাচ্ছে রাই।
এতোটাও লোভ ঠিক না।
চোখ মুছে তাচ্ছিল্য হাসে রাই।
কতোটা পাগল ও। আদি দেরি করে এসেছে বলে অভিমান করেছিলো। বড্ড ভুল করে ফেলেছে।
শরীর খারাপ লাগছে। চোখের পাতা ভাড়ি হয়ে আসছে। বসে থাকাটাও দুষ্কর হয়ে পরেছে।
বেশ খানিকটা পরে অহি রাইয়ের জন্য খাবার নিয়ে আসে।
” ভাইয়া রাই কোথায়? খাবে তো? সেই সকালে খেয়েছে।
আদি উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলো। অহির কথা শুনে ধপ করে উঠে বসে।
“কি বললি? ও তোর রুমে যাই নি?
” নাহহহ তো
ও তো বাড়িতেই নেই।
“কিহহহহ বলিস? কোথায় গেলো?
তারাহুরো করে আদি রাইকে খুঁজতে যায়। অহিও খাবার রেখে যায়।
পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রাইয়ের দেখা মেলে না। কোথায় গেলো?
“ওকে পেলে না আমি আজকে মেরেই ফেলবো। সব সময় টেনশন দেবে। চাপকে সিধে করতে হবে ওকে।
আদি দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
চলবে