স্মৃতির শহর পর্ব-১৪

0
519

#স্মৃতির শহর
#পর্বঃ১৪
#তানিশা সুলতানা

বেলা পেরিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পরছে। পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও পাওয়া যায় নি রাইকে। আদির অবচেতন মনটা কেনো জানি বলছে রাইয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। অহি তো রীতিমতো কান্না শুরু করে দিয়েছে।আদির মায়ের কলিজা কাঁপছে। কোথায় খুঁজবে এখন মেয়েটাকে?
আদি এবার সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ির বাইরে খুঁজতে যাবে। বাড়িতে যে নেই এটা কনফার্ম।
গেটের কাছে গিয়ে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে আদি।
দারোয়ান দেখেছিলো রাইকে পুকুরের দিকে যেতে। তাই তার কাছে জিজ্ঞেস করা মাএই বলে দেয়। আদি দৌড়ে সেখানে যায়। আদির পেছন পেছন অহিও যায়।
পুকুরের সিঁড়ির ওপর মাথা ঠেকিয়ে পরে আছে রাই। চোখ দুটো বন্ধ। চোখের পাপড়ি গুলো ভিজে আছে। গাল বেয়ে পড়া পানি জানান দিচ্ছে একটু আগেও কেঁদেছে রাই। তারমানে বেশিখন হয় নি ঙ্গান হারিয়েছে। আদির পা দুটো থেমে যায়। বুকটা কেঁপে ওঠে। রাইয়ের বা গালে পাঁচটা আঙুলের দাগ স্পষ্ট। ফর্সা মুখটা একদম লাল হয়ে গেছে। ধীর পায়ে হেঁটে রাইয়ের পাশে হাঁটু মুরে বসে আদি। রাইয়ের মাথাটা নিজের কোলে নেয়। থরথর করে কাঁপছে আদি। ঘামে ভিজে গেছে সারা শরীর। অতিরিক্ত টেনশনের ফলে শ্বাস টাও দ্রুত গতিতে বইছে। চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।এখন নিজের ওপর রাগ হচ্ছে।
“এই রাই কি হয়েছে তোর?
অহি রাইয়ের দুই গালে হাত দিয়ে বিচলিত হয়ে বলে। রাই রেসপন্স করে না।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
অহির চোখ আটকে যায় রাইয়ের গালে। রাগে গজগজ করে ওঠে অহি। বুঝতে আর বাকি নেই আদিম মেরেছে রাইকে।
অহি চোখ পাকিয়ে তাকায় আদির দিকে।
” রাইয়ের গালে থাপ্পড়ের দাগ কেনো ভাইয়া?
তুই মেরেছিস মেয়েটাকে? কেনো?
অহির চোখেও পানি চিকচিক করছে। এক রাশ অভিমান জমা হয় আদির ওপর।
আদি অহির কথার কোনো উওর দেয় না।
“বোঝা হয়ে গেছে ও তোর? মানতে পারছিস না ওর বেবি টাকে? তাহলে ছেড়ে দে ওকে। ও ঠিক একা একা নিজেকে গোছাতে পারবে।
আদি চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
” তুই আর একদম রাইকে ছুঁবি না।ওর ধারের কাছেও আসবি না। সর তুই।
আদির কোল থেকে রাইয়ের মাথাটা সরিয়ে নিতে যায় অহি।
“বেশি পাকনামি করছিস তুই?
আদি অহির হাতটা সরিয়ে দেয়।
” তুই বেশি করছিস। তুই জানিস মেয়েটা ছোট বেলা থেকে কষ্ট করেছে।তারপরও তুই ওকে আঘাত করেছিস? তুই কাঁদলে আমি মেনে নিতে পারবো কিন্তু রাইয়ের চোখের পানি আমি সয্য করতে পারবো না।
“তুই বুঝবি না।
রাইকে কোলে তুলে হাঁটতে শুরু করে। অহিও আদির পেছন পেছন যায়।

বাড়িতে প্রবেশ করতেই আদির মা দৌড়ে আসে।
” কি হয়েছে ওর? বিচলিত হয়ে বলে।
“তোমার আদরের ছেলে মেরেছে ওকে।
অহি ফোঁড়ন কেটে বলে।
” ওর রেস্টের প্রয়োজন।
বলেই আদি আর এক মিনিটও অপেক্ষা করে না।

আদি রুমে এসে রাইকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। অহি বরফ নিয়ে এসেছিলো কিন্তু আদি ঢুকতে দেয় না অহিকে।
“ভাইয়া দরজাটা খোল
আদি পাত্তা দেয় না।
রাইয়ের পাশে কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে থাকে।
খুব বড় ভুল করে ফেলেছে আদি। মস্ত বড় ভুল করেছে।মেয়েটার গায়ে হাত তোলা উচিৎ হয় নি। বুঝিয়ে বললেই পারতো।
রাই নরেচরে ওঠে। আদি বুঝতে পারে রাইয়ের ঙ্গান আসছে। তাই চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান ধরে। এখন রাইয়ের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে নেই। রাগটা কমে নি। আবারও রাগের মাথায় কোনো ভুল করতে চায় না আদি।

রাই চোখ পিটপিট করে তাকায়। মাথায় এখনো চক্কর দিচ্ছে। মাথা ধরে পুরোপুরি চোখ খুলে। চোখ খুলতেই পেটের মধ্যে মোচর দিয়ে ওঠে। পেট জানান দিচ্ছে সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয় নি।
কিন্তু বসার শক্তি টুকু পাচ্ছে না।
মনে মনে ভীষণ ভাবে মিস করছে অহিকে। ইসসস অহি এখানে থাকলে নিশ্চয় রাইয়ের জন্য খাবার নিয়ে আসতো।কিন্তু কোথায় ও?
রাই মাথা ছেড়ে আবারও উঠে বসার চেষ্টা করে। এবারও ব্যর্থ।নিজের ওপর বেশ রাগ হয় রাইয়ের। এমন শরীর কেনো হলো? আর একটু মোটা হলে শক্তি বেশি থাকতো।একবার না খেলে এতোটা দুর্বল হয়ে পড়তো না।

” ভাইয়া দরজা খোল। রাইয়ের খাবার প্রয়োজন।
অহি আবারও দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে।
রাইয়ের কানে স্পষ্ট অহির কন্ঠ ভেসে আছে। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
এবার খুব ধীরে ধীরে মাথা ধরে উঠে বসে রাই।দেয়াল ধরে হেঁটে দরজা ওববি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। এই রুমে যে আরও কেউ আছে সেদিকে রাইয়ের খেয়াল নেই।
“কি রে ঠিক আছিস?
অহি মিষ্টি করে হেসে বলে। রাই মলিন হাসে।হাসার শক্তি টুকুও পাচ্ছে না।
” হুমমমম। এক কেজি দুধ গরম করে এনে দিবি? আর চার পাঁচটা ডিম।
রাইয়ের কথা শুনে অহি চোখ বড়বড় করে তাকায়।
“এতো কেনো?
” সব এক সাথে খাবে।যাতে মোটা হয়ে যাই। আর প্রচুর শক্তি হয়। যাতে দুই তিন না খেলেও উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাই।
রাইয়ের বোকা বোকা কথা শুনে অহির হাসি পায়। খুব কষ্টে হাসি চেপে রাখে।
“আচ্ছা চল এনে দেবো। আগে কিছু একটা খেয়ে নিবি।
অহি রাইয়ের হাত ধরে এনে খাটে বসিয়ে দেয়।
এতখনে রাইয়ের খেয়ালে আসে আদি।
খাটের এক পাশে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে। মাথা নিচু করে ফেলে রাই। আদির সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না। আঘাতের কথা মনে আসছে আর চোখ ভিজে উঠছে।
আদির দিকে পেছন ঘুরে বসে রাই।
অহি রাইয়ের জন্য ভাত নিয়ে এসেছে।
রাই মাথা নিচু করে ভাতের প্লেটে হাত দিতে যায় আর তখনই আদি প্লেটটা টেনে নিয়ে যায়।
রাই তাকায় না আদির দিকে।তবে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে এইতো ঘুমিয়ে ছিলো উঠলো কখন?

” আমার জন্যও ভাত নিয়ে আয় যা।আমিও কিছু খায় নি।
অহিকে আদেশের সুরে বলে আদি।
“তোর না খেলেও চলবে। রাইকে খেতে দে।
অহি বিরক্ত হয়ে বলে।
” আমার খাবার না আনা পর্যন্ত ওকে খেতে দিচ্ছি না।
আদি তেরা ভাবপ বলে দেয়।
অগত্যা অহি বাধ্য হয়েই চলে যায় খাবার আনতে।
রাই এখনো মাথা নিচু করে আছে। আদির দিকে তাকানোর ইচ্ছে বা শক্তি কোনোটাই নেই।

“হা করো।
আদি ভাত মেখে রাইয়ের মুখের সামনে ধরে বলে।
” আমি মানুষটা আচল হলেও আল্লাহ হাত দুটোকে ভালো রাখছে।একাই খেতে পারবো।
তাচ্ছিল্য হেসে বলে রাই।
“আরও একটা থাপ্পড় খেতে ইচ্ছে হয়েছে?
কর্কশ গলার এই কথা শুনে রাই হা করে নেয়।আর একটা থাপ্পড় খেলে নরে যাওয়া দাঁত গুলো ভেঙেই যাবে।
গালটা খুব ব্যাথা জোরে হা ও করতে পারছে না।
তবুও কষ্ট করে জোরে হা করছে। যদি এখনই আবার আদি ধমক দিয়ে বলে ” জোরে হা করতে পারো না”

“রাহ্মস না কি তুমি? এতো বড় করে হা করো কেনো?
ভাত মাখাতে মাখাতে বলে আদি।
রাই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এটাই হওয়ার ছিলো।কোনো না কোনো দিক দিয়ে দোষ ধরবেই। এটা মাস্ট।

” আমি রেগে যাই এমন কাজ করো কেনো? আমি তোমার ভালো চাই।আর আমি যা করছি সবই তো আমাদের জন্য করছি। আমাদের ফিউচার বেবির জন্য করছি। চাকরিটা নতুন পেয়েছি। এখনো দুই মাস হয় নি। আমি চাইছি তোমার সিজারটা নিজের টাকায় করাবো।বাবার থেকে একটা টাকাও নেবো না। তাই পাশাপাশি টিউশনি করছি। দায়িত্ব নিতে হবে তো আমায়।বাবা হচ্ছি তো। আর বাবাদের না পরিশ্রমি হতে হয়। নিজের বউ বাচ্চা বাচ্চাকে নিজের টাকায় খাওয়াতে চাই আমি।
ভাত মাখাতে মাখাতে এতো গুলো কথা বলে সামনে তাকাতেই আদি চমকে ওঠে। রাই কোথায় গেলো? এত গুলো কথা বললো একটাও শুনলো না?🥺🥺🥺🥺

চলবে