#হঠাৎ_বর্ষনের_রাতে💖
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💖
— পর্বঃ১২
—“আশ্চর্য!’তোর মাথা ঠিক আছে কিসব উল্টো পাল্টা বলছিস,দেখা হলো মাত্র দু’মিনিট এরই ভিতর আসফি স্যারকে ভালোবেসে ফেললি কি করে তুই?’
“প্রচন্ড হতশা ভরা কন্ঠ নিয়ে কথাটা উঠল ইরা জেরিনকে!’ইরার কথা শুনে জেরিন তেমন কোনো রিয়েকশন না দিয়ে মুচকি মুচকি হেঁসে বললোঃ
—“আমিও জানি না কি করে?বাট আই রিয়েলি লাভ হিম দোস্ত,,
—“তোকে সত্যি সত্যি ভূতে রয়েছে মনে হয়,কিসব বলছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছি না?’
“ইরার এবারের কথা শুনে জেরিন ইরার দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস গলায় বললোঃ
—“আমি তোকে কি এমন বললাম যে তুই বুঝতে পারছিস না…
—“বিশ্বাস কর আমার মাথা ঘুরাচ্ছে আমি বুঝলাম না দু’মিনিটের মধ্যে কি করে ভালোবাসা হতে পারে…
—“বিলিভ মি, লাইফে এখন পর্যন্ত অনেক ছেলেকে ভালে লেগেছে দোস্ত কিন্তু কাউকে কখনো ভালোবাসিনি,কিন্তু ওনাকে দেখার পর মনে হলো আমি ওনায় ভালোবেসে ফেলেছি…
—“তার মানে তুই সত্যি সত্যি…
“উওরে মাথা নাড়িয়ে নিজের দু’গাল চেপে ধরে ঢুলতে ঢুলতে বললো জেরিনঃ
—“আই এম ইন লাভ….
“জেরিনের কথা শুনে নিরাশ ইরা!’কারন তার মাথায় এখনো আসছে না এতটুকু সময়ের মধ্যে কেউ কাউকে ভালো কি করে বাসতে পারে…?
____
“পরেরদিন বিকেল_৪ঃ০০টা….
“অফিসের হাফ টাইম কাজ করে গাড়ি করে শপিং মলের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে ইরা আর জেরিন!’তবে ইরার শপিং এ যাওয়ার কোনো রকম ইচ্ছে ছিল না!’শপিং এ আসার একমাত্র কারন হলো জেরিন!’সেই কাল থেকে আজকে সন্ধ্যার পার্টিতে কি পড়ে যাবে, তাকে কিভাবে সাজলে ভালো লাগবে, বলতে বলতে এক প্রকার পাগল বানিয়ে ফেলেছে ইরাকে!’ইরা শুরুতে ভেবেছিল জেরিন হয়তো কাল এমনি বলেছিল সে আসফিকে ভালোবাসে কিন্তু এখন তার বিষয়টা সত্যি সিরিয়াস বলে মনে হচ্ছে!’
“গাড়ি থেকে নেমেই ইরার হাত ধরে চললো জেরিন শপিং মলের ভিতরে পুরোই এক্সাইটেড সে!’ইরাও বেশি কিছু না ভেবে চললো জেরিনের হাত ধরে!’…
“পাক্কা দেড় ঘন্টা শপিং করে শপিং মল থেকে বের হলো ইরা আর জেরিন!’তারপর দুজনেই চললো তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে!’অবশ্য বাড়ি যাওয়া আগে জেরিন বেশ কয়েকবার বলেছে ইরাকে ‘সে যেন বাড়ি গিয়েই চটজলদি তৈরি হয়ে থাকে!’খুব তাড়াতাড়ি আসছে জেরিন ইরাদের বাসায়…
“জেরিনের এমন পাগলামিতে বেশ অবাক ইরা!’তারপরও আপাতত কিছু বললো না সে!’…
.
.
“সন্ধ্যা_৬ঃ০০টা….
“নিজের রুমের বিছানার উপর বসে আছে অর্নব,আরিফের এংগিজমেন্ট পার্টিতে যাওয়ার জন্য তাকেও তাড়াতাড়ি আসতে হলো অফিস থেকে!’যদিও অর্নবের মটেও ইচ্ছে নেই সেখানে যাওয়ার তারপরও আসফি বার বার বলেছে তাকে সাথে আরিফও কয়েকবার কল করে যেতে বলেছে!’তাই শেষমেশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে তাকে!’…
“অর্নব ছোট্ট শ্বাস ফেলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর চললো সে তার আলমারির দিকে!’….
“কালো কোট,কালো প্যান্ট,ওয়াইট শার্ট,গলায় কালো টাই,হাতে ব্লাক ওয়াচ,চুলগুলো বরাবরেরই মতোই গোছালো,পায়ে ব্লাক জুতো পড়ে তৈরি অর্নব!’অল্প সাজেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে,অর্নব আয়নার দিকে তাকিয়ে পাশেই পারফিউমের বোতলটাকে হাতে নিয়ে একটু গায়ে মাখিয়ে নিলো!’তারপর জোরে এক নিশ্বাস ফেলে নিজেকে পারফেক্ট মনে হতেই চললো সে আরিফের এংগিজমেন্ট পার্টিতে!’….
____
“আয়নার সামনে বসে আছে ইরা,তার একদমই মন নেই এই অজানা এংগিজমেন্ট পার্টিতে যাওয়ার!’ কাউকে চেনে না জানে না অথচ ঢেং ঢেং করতে করতে যাচ্ছে সেখানে!’শুধুমাত্র এই জেরিনের জন্য বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে তাকে!’আজকে ইরা একটা মেরুন রঙের গাউন পড়েছে চুলগুলো খোলা,চোখে কাজল,আইলাইনার মাসকারা দিয়ে একটু সাজিয়েছে সে,মুখে হাল্কা মেকাপ,ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক,হাতে রয়েছে কিছু ব্যাচ,গলায় আর কানে মেচিং করা জুয়েলারি!’
“একটু সাজতে ব্যস্ত ইরা,এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল ইরার!’ইরা ফোন তুলেই বললোঃ
—“আর পাঁচ মিনিট দোস্ত আমি এক্ষুনি আসছি…
—“এতক্ষণ কি করছিস বলতো..
—“আসছি আসছি বোন আসছি…
—“আচ্ছা আয়,আমিও আসছি তোদের বাসার নিচে…?’
“বলেই ফোন কাটে জেরিন!’
এদিকে জেরিনে বার বার এত কল করায় চরম বিরক্ত ইরা!’এই নিয়ে পাঁচবার কল করেছে তাকে জেরিন!’কলের চক্করে ঠিকভাবে সাজতেও পাচ্ছে না!’কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো ইরাঃ
—“এই মেয়েটা সত্যি সত্যি হয়তো পাগল হয়ে গেছে!’নিজে এখনও গাড়ি করে আসছে বাসায় ওদিকে বার বার শুধু বলে যাচ্ছে হয়েছে তোর হয়েছে তোর হয়েছে,আরে বাবা তুই তো আগে আয় আমার বাসায় তারপর না হয় আমার হবে,এ মেয়েকে সত্যি ভূতে ধরছে!’…
“এমন সময় ইরার আম্মু এসে বললো ইরাকেঃ
—“কই তোর হলো জেরিন তো এসে পড়ছে…
—“এর ভিতর আসছেও…
—“হুম নিচে দাঁড়িয়ে আছে আমার ফোনে ফোন করছিল,,
—“এই মেয়ে সত্যি, এতক্ষন আমায় জ্বালিয়ে মেরেছে এখন তোমায় জ্বালাচ্ছে..
—“আরে জ্বালালো কোথায় শুধু তো বললো তোকে নিচে যেতে…
—“হুম বুঝছি,,
“বলেই ফোনটা হাতে নিয়ে বললোঃ
—“আমায় ভালো দেখাচ্ছে মা…
—“হুম,খুব সুন্দর…
“উওর শুনে হাসে ইরা!’তারপর বলেঃ
—“ঠিক আছে মা,আমি তবে গেলাম!’
—“কখন ফিরবি…
—“হুম তাড়াতাড়ি চলে আসবো তুমি চিন্তা করো না আব্বু কি ফোন করছিল কবে আসবে চিটাগাং থেকে…
—“হুম কিছুদিনের মধ্যেই আসবে…
—“আচ্ছা বাকি কথা পড়ে হবে মা…
—“ঠিক আছে সাবধানে যাস…
—“হুম মা…
“এরই মাঝে আবারো ফোন বেজে উঠল ইরার!’উপরে জেরিন নাম্বার দেখে কল না ধরেই বললোঃ
—“এই মেয়ে সত্যি পাগল হয়ে গেছে,সাথে আমায়ও পাগল বানাচ্ছে,আরে বাবা আসছি তো…
“বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেল ইরা!’…
____
“পুরো বাড়ির বাহির জুড়ে আলোকিত লাইটেরা জ্বল জ্বল করছে!’সাথে গেট জুড়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ভিতরে যাওয়ার পথটাকে!’এই সুন্দর আলোকিত পরিবেশের মাঝে এসে গাড়ি থামালো অর্নবের ড্রাইভার!’অর্নবও বেশি কিছু না ভেবে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো!’এরই মাঝে আসফি আর আরিফ হাজির!’অর্নবকে দেখে এগিয়ে আসলো তাঁরা দুজনেই, তারপর খুশি মনে বললো আরিফঃ
—“মিস্টার অর্নব আপনি এসেছেন আমরা খুব খুশি হয়েছি?’
“উওরে হাসে অর্নব!’অর্নবের হাসির মাঝে বললো আসফিঃ
—“আপনার আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো?’
“আসফির কথা শুনে অর্নব বললোঃ
—“না তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি…
—“ওহ,তাহলে ভিতরে চলুন অর্নব(আরিফ)
—“হুম চলুন…
“বলেই আরিফ আর অর্নব এগিয়ে গেল ভিতরের দিকে!’কিন্তু আসফি গেল না!’আসফিকে যেতে না দেখে বললো আরিফঃ
—“কি হলো তুই আবার দাঁড়িয়ে পড়লি যে,,
—“না মানে তোমরা যাও ভাইয়া আমার কিছু বন্ধু আসবে আমি ওদের নিয়ে আসছি…
—“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসিস,আপনি চলুন মিস্টার অর্নব,,
“উওরে অর্নব মাথা নাড়িয়ে চললো আরিফের সাথে!’
___
“গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আসফি আর বার বার ঘড়ি দেখছে সে!’মুলত এখানে দাঁড়ানোর কারন হচ্ছে ইরা আর জেরিনের জন্য!’আসফি ভেবেছিল হয়তো ইরা জেরিন আসবে!’তাই বেশ কিছুক্ষন যাবৎই দাঁড়িয়ে আছে আসফি ওদের জন্য কিন্তু ইরা আর জেরিনের খবর নেই!’এর মধ্যে আসফিরও ডাক পড়লো কারন আর কিছুক্ষনের মধ্যেই এংগিজমেন্ট শুরু হবে!’আসফি কিছুটা নিরাশ হয়ে বললোঃ
—“তাহলে কি ওনারা আসবে না…
“ভেবেই উল্টো দিক ঘুরে চলে যেতে লাগলো আসফি!’এমন সময় সেখানে এসে থামলো একটা গাড়ি!’গাড়ির শব্দ কানে আসতেই পিছন ঘুরে তাকায় আসফি,সামনেই ইরা জেরিনকে দেখে মুহূর্তেই খুশি হয়ে যায় সে!’অটোমেটিক খুশি হয়ে বলে সেঃ
—“আপনারা এসেছেন…
“গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা চমকে উঠলো ইরা!’পরক্ষণেই আসফিকে দেখে নিজেকে সামলে নেয়!’ইরা কিছু বলবে তার আগেই জেরিন নীরব কন্ঠে বললোঃ
—“হুম আপনি এতবার বলেছে তাই আসতেই হলো,আপনাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে…
জেরিনের কথা শুনে হাসলো আসফি!’তারপর বললোঃ
—“আপনাদের সুন্দর লাগছে
—“থ্যাংক ইউ (জেরিন)
—“আপনারা এসেছেন আমি খুব খুশি হয়েছি এখন তাড়াতাড়ি ভিতরে চলুন এংগিজমেন্ট এখনই শুরু হবে….
“আসফির এবারের কথা শুনে জেরিন বলার আগেই ইরা জেরিনের হাত ধরে বললোঃ
—“হুম আপনি যান আমরা এক্ষুনি আসছি…
—“ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু..
—“হুম আপনি যান আমরা যাচ্ছি….
“উওরে আসফি আর কিছু না বলে চললো ভিতরে!’
“এদিকে আসফি যেতেই ইরা জেরিনকে বলে উঠলঃ
—-“তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে,এমন করছিস কেন?’
“ইরার কথা শুনে জেরিন আসফির দিকে তাকিয়ে নীরব কন্ঠে বলেঃ
—“কি করেছি আমি…
—“কি করেছিস মানে,আর কি কখন থেকে মরা মরা কন্ঠে কথা বলছিস ঠিকভাবে কথা বলতে পারিস না….
—“তোর সমস্যা কি বলতো,আমি কাল থেকে দেখছি তুই আমার বিষয়টা সিরিয়াসভাবে নিচ্ছিস না…
—“দেখ বোন আমরা একটা এংগিজমেন্ট পার্টিতে আসছি প্লিজ কোনো সিনক্রিয়েট করিস না,আর মনে রাখিস এখানে কিন্তু অর্নব স্যারও আছে…
“এবারের কথা শুনে জেরিন অবাক হয়ে বললোঃ
—“কি এটা তুই আমায় আগে বলিস নি কেন?’
____
“সোফার উপর বসে আছে অর্নব হাতে তার সফট ড্রিংক!’এত এত মানুষের ভিড়ে বসে থাকতে তার মটেও ভালো লাগছে না!’তারওপর আশেপাশের মেয়েগুলো তাকে কিভাবে দেখছে!’বিরক্তির চরম সীমানা নিয়ে বসে আছে অর্নব!’এরই মাঝে হঠাৎই চোখ যায় তার সামনে…..
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️
