#হিমাদ্রিণী – ১৩
লেখনীতে – আয্যাহ সূচনা
-“মাশরুম আমাকে আই লাভ ইউ বলেছে।আমি কিন্তু আই লাভ ইউ এর মানে জানি। ও আমার বর,স্বামী…উম আর কি যেনো..ভুলে গেছি। ও আমাকে ভালোবাসে,তোমাকে ভালোবাসে না। শুনেছো অসভ্য মেয়ে?আমাকে চুমু….”
মাশুকের হৃদযন্ত্র আর একটু হলে বন্ধ হয়ে যেতো। ভরা মজলিশে তার মান ইজ্জত ধূলিসাৎ করছে এই মেয়ে।চিৎকার করে থামিয়ে দিতে বলে,
-“হেমা! তুমি.. ঘরে যাও।আমি আসছি।”
বসার ঘরে উপস্থিত বাবা,মা,ভাই,ভাবি এবং রাইমা। বাবা,মা মাথা নামিয়ে রেখেছে।মৃদুল অন্যদিকে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করলো।রিমি এবং রাইমা রীতিমতো হা হয়ে চেয়ে আছে।
হেমা নাছোড়বান্দা।কথা শেষ না করে যাবেনা।জেদি কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“তুমি চুপ থাকো মাশরুম! বেশি বেশি বুঝো শুধু।তুমি না বললে এই অসভ্য মেয়ে আমাদের একসাথে দেখলে হিংসে করবে?দেখো দেখো ওর মুখটা কেমন বানরের মত হয়ে গেছে।”
মাশুক যেনো স্থির থেকে দিশেহারা হয়ে গেলো।কি বলছে কি এই মেয়ে!মাশুক হেমার কাছে এসে দাঁড়ায়।হাত টেনে ঘরে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে বলে,
-“প্লীজ হেমা চুপ থাকো।”
-“না কেনো? চুমুর কথাটা বলি? ও তাহলে আরো হিংসা করবে।প্লীজ প্লীজ।”
জহির সাহেব উঠে চলে গেলেন। শান্তা বেগমও ইতিমধ্যে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়িয়েছেন।মৃদুল টিভির আওয়াজ বাড়িয়ে দেয়।মাশুক শূন্য মস্তিষ্কে দাঁড়িয়ে।
হেমা রাইমার উদ্দেশ্যে বললো,- “তোমার হিংসে হচ্ছে না? মাশরুম আমাকে ভালোবাসে বলে? আমি কিন্তু সব বুঝি।”
বলেই ঠোঁট টিপে হাসলো হেমা।মাশুকের চেতনা ফিরে আসে। ধমকের সুরে বলে,
-“খুব বুঝো তুমি! ঘরে এসো”
হেমাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে যেতে লাগলো মাশুক। হেমা থেমে নেই।রাইমার দিকে চেয়ে রাগী গলায় বলে,
-“তুমি আমার মাশরুম এর দিকে চোখ দিবেনা বুঝেছো।তোমার চুল ছিঁড়ে ফেলবো।একদম!”
মাশুক হেমার মুখ চেপে ধরলো আলতো করে।রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো।মান সম্মানের ফালুদা হয়ে গেছে। বেঁচেও কি লাভ!
অন্যদিকে রিমা মৃদুলের উদ্দেশ্যে ঠেস মেরে বললো,
-“তোমার ভাই পাগলের প্রেমে পাগল হয়েছে।”
মৃদুল কথাটির গুরুত্ব দিলো না।কাজ থেকে ফিরে এসব ঘ্যানঘ্যান শুনতে ভালো লাগছে না।
হেমাকে ঘরে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলো মাশুক।কোমরে হাত রেখে তুখোড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হেমার দিকে।হেমার ভনিতাহীন অবোধ মুখ।কি হয়েছে সে জানেনা।একইভাবে দুজন দুজনের দিকে চেয়ে।হুট করে হেমা উঠে দাঁড়ালো। মাশুককে শাসিয়ে বলতে লাগলো,
-“তুমি আমার কথা শেষ করতে দিলে না কেনো?”
-“তুমি আমার মান সম্মান রাখলে না হেমা”
হেমা জিজ্ঞাসা করলো, -“মান? সম্মান? এরা আবার কারা?”
মান সম্মান কারা? হেমা মাঝেমধ্যে এমন প্রশ্ন করে বসে যার উত্তর মাশুকের অজানা।অদ্ভুত কাজ কারবার।মাশুক গম্ভীর স্বরে জবাব দেয়,
-“এরা আমার চাচা মামা”
হেমা আরো অবাক হয়।মাশুকের শার্ট কিছুটা ভিজে গেছে। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে হেমা সামনে এসে দাঁড়ায়।বলে,
-“তুমি আমাকে চুমু খেয়েছো,আমি সবাইকে বলতে পারলাম না মাশরুম।আমার রাগ হচ্ছে।”
-“এসব বাহিরে বলতে নেই”
-“আমি বলবো”
মাশুক হাতজোড় করলো। বললো,
-“না প্লীজ।এসব লজ্জার কথা।তুমি কাউকে বলবে না আর।”
হেমা মাশুকের গলা পেঁচিয়ে ধরলো।বললো,
-“আবার চুমু খাও।তাহলে বলবো না”
হেমা গাল এগিয়ে দিলো।মাশুক অবাক হয়ে চেয়ে আছে হেমার দুষ্টু মুখের দিকে।তার কাছে নিতান্তই খেলা এসব আর মাশুকের অনুভূতি।তার আবদার ফেললো না।পাশাপাশি নিজের অনুভূতিগুলোকে হাওয়ায় ভাসালো।
-“খুশি? এবার ছাড়ো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
হেমা সরে গেলো। আঙুলে গুনতে গুনতে বললো,
-“তুমি আমাকে একবার,দুইবার আর তিনবার চুমু খেয়েছো।একবার কপালে,একবার গালে,আবার গালে।আমি তোমাকে একবার চেয়েছি।”
হিসাব শুনে মাশুক মাথা চুলকে বলে,
-“গুনে রেখেছো? তোমার মনে রাখার শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
-“হুম! কিন্তু তুমি আমার চেয়ে এগিয়ে গেছো।”
মাশুক ঘরের কাপড় হাতে নেয়।গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে হেমার চুলগুলো হাতের সাহায্যে এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
-“ফ্রেশ হয়ে আসছি।হিসাব সমান সমান করে দিও,কেমন?”
____
তিনদিনের কঠোর পরিশ্রম শেষে শান্তনু একটি দৃঢ় ক্লু হাতে পেলো। ঋণদাতা জব্বার সাহেব নন, তারই পুরোনো এক বন্ধু।যিনি দশ লক্ষ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন খায়রুল সরোয়ারকে।জব্বার সাহেব এবং হেমার বাবার পরিচয় বহুদিনের পুরোনো ও গভীর।
এর পাশাপাশি, আরেকটি নাটকের অবতারণা করা হয় আসামী এবং তার পরিবারকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে যে, তাদের সাজা মওকুফ করা হয়েছে, যা মূলত একটি ভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল মাত্র।
-“পয়েন্ট নাম্বার ওয়ান – এই তিন পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক।পয়েন্ট নাম্বার টু – জব্বার সাহেব নিজে টাকা দিতে পারতেন,কিন্তু দেননি।পয়েন্ট নাম্বার থ্রি – যেহেতু ঋণ জব্বার সাহেবের বন্ধু দিয়েছিলেন সেহেতু এটা ক্লিয়ার যে খুন তার বন্ধু করিয়েছে।তার বন্ধুকে কেনো আটক করা হলো না?”
হোয়াইট বোর্ডে কালো মার্কারের সাহায্যে লিখে যাচ্ছে শান্তনু। জট খুলতে গিয়ে আরো জট লেগে যাচ্ছে।আরো একজন এসে হাজির।জব্বার সাহেবের বন্ধু।মাশুক চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। তর্জনী আঙ্গুল ঠিক ঠোঁটের উপরে রেখে ভাবুক ভঙ্গিতে।শান্তনু জিজ্ঞাসা ছুড়লো,
-“শুনছিস?”
ঘোর কাটে এবং মাশুক বলে, -“ওই লোক কোথায় এখন?”
-“লাপাত্তা”
মাশুক নির্লিপ্ত মনোযোগীভাবে মাথা দোলায়।বলে,
-“সে গায়েব হয়ে যাওয়ার আগে জব্বার সাহেব এবং তার বন্ধুর সম্পর্ক কেমন ছিলো?”
শান্তনু ঝটপট বলে উঠে, -“ভালো কথা বলেছিস।তাদের সম্পর্ক বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে উঠেছিল।”
-“আচ্ছা এখানে ফরিদা বেগমের কি রোল?”
শান্তনু বলে, – “সেটাইতো বুঝতে পারছি না।”
মাশুক শান্তনুর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো, – “খুঁজতে পারবি তো সেই লোককে?”
শান্তনু চেয়ারে এসে আয়েশ করে বসলো।মাশুকের দিকে চেয়ে বললো,
-“অলরেডি মানুষ লাগিয়ে দিয়েছি।তাদের সময় দিয়েছি ৭২ ঘন্টার।দেখি কি ফলাফল আসে।”
-“হুম.. আর আসামীদের ছাড়া পাওয়ার নিউজে তাদের আর তাদের পরিবারের কি প্রতিক্রিয়া সেটিও দেখবার বিষয়।”
-“ওসব আমি দেখে নিবো মাশুক।তুই বল হেমার কি অবস্থা? ওর কি কিছু মনে পড়ে?”
মাশুকের মুখে ভর করেছে গভীর হতাশা।সেই চিরচেনা হেঁয়ালিভরা চপল ভাবটি যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। যে মানুষ সবসময় ঝড়ো বাতাসের মতো উড়ে বেড়ায়, সে আজ দুশ্চিন্তার ভারে নুইয়ে পড়েছে। শান্তনু জানে কিছু বলে লাভ নেই। মাশুক কখনোই অন্যের সহানুভূতিতে গ্রহণ করবে না।সে শান্তি পায় না এসবে।নিজের যন্ত্রণার উত্তর খুঁজে না পেলে তাকে কোনোভাবেই প্রবোধ দেওয়া যায় না।
-“তুই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।আমি যদি এখন মোটিভেশন দেই তুই সেটিও নিবি না।”
-“কেনো আমার সমস্যার সমাধান অন্য কেউ দেবে?কেনো আমাকে সহানুভূতি প্রদান করবে?আমার মস্তিষ্ক এসব মেনে নিতে চায় না।আমার মন এবং মস্তিষ্ক নিজের মতো চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।”
-“কারণ তুই ঘাড়ত্যাড়া,একঘেয়ে, ঘরকুনো।”
-“আমি যদি এসবে শান্তি পাই তাহলে ক্ষতি কিসে?”
-“তুই তো এখন একা না। হেমা আছে তোর কাছে।”
মাশুক হুট করেই শরীর ছেড়ে দেয়।হালকা অনুভূতি তার মাঝে।শান্তনুর কথার উত্তরে বললো,
-“আমি হেমাকে সম্পুর্ণ আমার করে মেনে নিয়েছি।তার আশপাশে আমি শান্তি পাই।সে অবুঝ।কিন্তু অনেক বুঝদার।”
শান্তনু অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, -“দুটো একসাথে হয় কি করে?”
-“ও সাধারণ পরিস্থিতি বুঝতে অক্ষম।কিন্তু ওর মধ্যে মায়ার অনুভূতি প্রখর। ও আমার,শুধু আমার রাগ বুঝে, আমার কষ্ট বুঝে,আমাতেই মগ্ন হেমা।আর তার এই মায়ার চাদরে আমি জড়িয়ে গেছি।”
-“আশিক মাশুক।” হেসে বললো শান্তনু।
মাশুকের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে।জবাব দেয়,
-“কি জানি?… কিন্তু আমি বিশ্বাসী হেমা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।”
-“নেক্সট প্ল্যান কি ওকে নিয়ে? তোদের ডাক্তারদের থেরাপি টেরাপি আমি বুঝি না।সহজ বাংলায় বল।”
মাশুক হেমার ফাইলগুলো একত্রিত করতে করতে বলে উঠলো,
-“একটু ভয়ে আছি।আগামীকাল ওর এমআরআই (MRI) করাবো। হেমা ওই বিশাল MRI মেশিনের সামনে গিয়ে কেমন রিয়েক্ট করবে।”
শান্তনু আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলো, – “MRI? কিন্তু কেনো?”
-“হ্যাঁ দরকার।মস্তিষ্কের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অথবা হয়েছে কিনা?কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা?সেটা জানার জন্য আপাতত একটা MRI প্রয়োজন।”
_____
সকাল আটটা থেকে শুরু হয় এক অমানুষিক ধকল। বিকেল চারটায় শেষ হয় অসংখ্য মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষের সাথে মাশুকের কঠিন দিন। বাড়িতে ফিরে নতুন দায়িত্ব তার অপেক্ষায়। আজকের পরনে আছে আসমানী রঙের শার্ট ও কালো প্যান্ট, তবে আয়নায় নিজেকে দেখার ফুরসত নেই। বাড়ির দরজায় এসে ব্যাগটি শক্ত করে চেপে ধরল, এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে কলিং বেলটিতে আঙুল রাখে।
শান্তা বেগম দরজা খুললেন।আজকাল মায়ের মুখ বিরস থাকে।মাশুক বুঝে।মায়ের দিকে চেয়ে হাসি দেওয়ার সাথে সাথে শব্দ শুনতে পেলো। হেমা সোফায় বসে বারংবার বলছে,
-“মাশরুম আমার স্বামী,মাশরুম আমার বর, মাশরুম আমার অর.. অর… অর্ধাঙ্গ।”
মাশুকের চোখজোড়া গোলগোল হয়ে যায়।কপালে তীক্ষ্ণ ভাঁজ। এ আবার কোন নতুন জ্বালা?মায়ের চোখে চোখ রাখতে পারলো না। শান্তা বেগম বললেন,
-“তসবির মত জপে যাচ্ছে সকাল থেকে।রাইমা চলে যাচ্ছিলো তার হাত টেনে কানের কাছে গিয়ে জোরে চিৎকার করে এসব বলেছে।”
মাশুক সর্বপ্রথম প্রশ্ন করলো, – “ওই মেয়ে চলে গেছে?”
-“হ্যাঁ”
-“এসেছিলো কি সার্কাস দেখতে না দেখাতে?”
রাগান্বিত দৃষ্টিতে চাইলেন শান্তা বেগম।মাশুকের চোখ নিচে নেমে যায়। শান্তা বেগম বললেন,
-“আজ নার্স আসলো না কেনো?”
মাশুক শার্টের মোড়ানো হাতা ঠিক করতে করতে হেমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“না করেছি।”
-“কেনো?”
-“আচ্ছা মা আজ হেমা কোনো এমন পাগলামো করেছে,যেটায় মনে হয়েছে যে ও তোমাদের জন্য আতঙ্কের কারণ?”
শান্তা বেগম সাবলীল সুরে জবাব দিলেন, -“নাতো”
-“হুম.. ওর নার্স আর আসবে না তাহলে।”
শান্তা বেগম কোনো প্রশ্ন করার আগেই মাশুক হেমার দিকে এগিয়ে গেলো।এখনও সে পা দুলিয়ে জপে যাচ্ছে।এতটাই মগ্ন যে মাশুক এসে তার পাশে বসেছে সেখানে তার খেয়াল নেই। মাশুক চাইলো তার দিকে।বললো,
-“শেষ?”
হুট করেই পুরুষালি কণ্ঠস্বরে চমকে উঠে হেমা।ঘুরে তাকিয়ে বিশাল হাসি ফুটে মুখে।বলে,
-“আরেহ মাশরুম! তুমি এসেছো? জানো আজ আমি ওই অসভ্য মেয়েকে ভাগিয়ে দিয়েছি। ও আমাকে হিংসা করে।…. আমিও করি একটু একটু”
মাশুকের কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না।মাথা ধরেছে। ভ্রুদ্বয় উঁচু করে বললো,
-“আচ্ছা ঠিক আছে… আমাকে এক গ্লাস পানি দেবে?”
হেমা কিছুটা বিস্মিত হয়। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ডাইনিং টেবিলে।এটা খুব ছোট কাজ।হেমার মনে হলো সে পারবে। চট করে উঠে কদম বাড়ায় সেখানে।ঠোঁট কামড়ে খুব যত্ন সহকারে পানি নিয়ে মাশুকের কাছে এসে তার দিকে দিলো।মাশুক তাকে এপ্রিশিয়েট করে বলে,
-“থ্যাঙ্ক ইউ হেমা।তোমাকে একটা টাস্ক দিচ্ছি। প্রতিদিন আমি ফেরার পর আমাকে পানি এনে দিবে ঠিক আছে?”
-“কেনো?”
-“কারণ হচ্ছে বাহির থেকে ফিরে আমরা ক্লান্ত থাকি।তোমার ক্লান্ত লাগেনা?তুমি যখন বাহির থেকে আসবে আমি তোমাকে পানি এনে দিবো।আমি ফিরলে তুমি এনে দিবে।ওকে?”
হেমা হাসি মুখে জবাব দেয়,- “ওকে”
মাশুক উঠে দাঁড়ালো।ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘরের দিকে যাওয়ার পূর্বে বললো,
-“আজ তোমাকে কফি বানানো শেখাবো।তুমি এখানে বসো।একদম চুপচাপ বসবে,কোনো কথা না।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
হেমা আবার ধপ করে বসে পড়ে সোফায়। শান্তা বেগম কাঁথা সেলাই করছেন।মৃদুলের ঘর আলো করে খুব শীগ্রই আসছে এক নতুন মেহমান।এখন থেকেই হবু দাদীর সমস্ত কাজকর্ম শুরু। হেমা দেখছে বসে।আবারো বুলি জপতে শুরু করলে নিজের মুখ নিজে চেপে ধরে।মাশুক তাকে চুপ থাকতে বলেছে।কিন্তু তার পেট যে ফেটে যাচ্ছে। শান্তা বেগম কি করছেন সেটা না জানলে তার ভালো লাগবে না। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে প্রশ্ন করেই ফেললো হেমা,
-“তুমি কি করছো নতুন মা?”
নতুন মা?কথাটি শুনে হাসা উচিত নাকি বিষন্ন হওয়া উচিত? কোনোটিই হলেন না শান্তা বেগম।বললেন,
-“আমাদের বাড়িতে একটা নতুন বাবু আসবে।তার জন্য কাঁথা সেলাই করছি।”
হেমা মুহূর্তেই খুশিতে দিশেহারা হয়ে পড়লো।এক লাফে উঠে গিয়ে বসলো শান্তা বেগমের পাশে।হাত দিয়ে ছোট্ট আকৃতি দেখিয়ে বললো,
-“বাবুটা কি এতটুকু হবে?”
এক আঙুলের চেয়েও ছোট আকৃতি দেখাচ্ছে হেমা। শান্তা বেগম নিজের অজান্তে হেসে বলেন,
-“হ্যাঁ”
-“আমি ওকে কোলে নিবো কেমন?”
শান্তা বেগম সম্মতি দিলেন, -“ঠিক আছে নিও।”
শান্তা বেগমকে হতবিহ্বল করে দিয়ে হেমা তার গালে চুমু খায়।জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আমি ওই বাবুটাকে সবার আগে কোলে নিবো।কাউকে দিবো না। ও আমার সাথে খেলবে?”
ধাক্কা লেগে সুই শান্তা বেগমের হাতে বিধে গেলো। শান্তা বেগম মৃদু আর্তনাদ করে উঠলেন। আঙ্গুলে রক্ত দেখে ভরকে উঠে হেমা।আতঙ্কিত হয়ে উঠে ঘরে দৌঁড় লাগায়। মাশুককে টেনে নিয়ে এলো। কাঁপতে কাঁপতে বললো,
-“মাশরুম রক্ত! রক্ত! আমি মাকে ব্যথা দিয়েছি।ঠিক করে দাও! ঠিক করে দাও”
বলে চেঁচিয়ে উঠলো হেমা।কান্না করে দিবে এক্ষুনি।মাশুক দ্রুত ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে শান্তা বেগমের হাতে এন্টিসেপটিক লাগিয়ে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো।অন্যদিকে হেমার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে।বললো,
-“আমি… ইচ্ছে করে করিনি”
শান্তা বেগমের মমত্ববোধ জাগ্রত হলো যেনো। মাশুককে চমকে দিয়ে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন হেমাকে।বললেন,
-“আমি ব্যথা পাইনি।তুমি কান্না থামাও।কিছুই করোনি তুমি”
বিস্ময়ের সাথে এই সুন্দর দৃশ্য চোখে ধারণ করলো মাশুক।আড়ালে মৃদু হাসলো।হেমার শুধু তার জন্যই নয় তার আশপাশে সবার জন্যই মায়া জাগ্রত হচ্ছে। পূর্বের কিছু আঘাতের ফল এসব।নতুনভাবে তার জীবন সাজাচ্ছে।
-“হেমা এসো।আমরা সবার জন্য কফি বানাই।মায়ের কিছুই হয়নি।”
হেমার হাত ধরে কিচেনে নিয়ে এলো মাশুক। দুহাত সিক্ত মুখমন্ডল মুছে দিয়ে বললো,
-“ভয় পেয়েছিলে?”
হেমা মাথা উপর নিচ দুলিয়ে বলে, – “হুম”
-“তুমি সাহসী মেয়ে।একেবারে ভয় পাবে না।এসো কফি বানাই”
পুরোনো ঘরোয়া পদ্ধতিতে কফি তৈরি হচ্ছে। দুধের সাথে তিন চামচ কফি মিশিয়ে সামান্য একটু চিনি যোগ করলো মাশুক।চুলোর আঁচ একেবারে কমিয়ে দিলো।ধীরেধীরে এর স্বাদ আর ভালো হবে। হেমা কোথা থেকে যেন একটি চামচ এনে বললো,
-“আমিও বানাবো। সরো”
-“হাত পুড়ে যাবে।”
হেমা মানতে নারাজ।মাশুক হেমার হাতে কিচেন গ্লাভস পরিয়ে দেয়।কফি চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করবে।এটাই তার ইচ্ছে। হেমা কাজে লেগে পড়ে।খুব মনোযোগের সহিত।
পেছন থেকে একজোড়া পুরুষালি হাতে আবদ্ধ হয়ে যায় হেমার দেহ।কানের কাছে উষ্ণ নিঃশ্বাস ঝেড়ে কপোলে ওষ্ঠের নরম ছোঁয়া অনুভব করলো।মাশুক কাঁধে মুখ ঠেকিয়ে বললো,
-“গতরাতে হিসাব বরাবর না করেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলে।আজ আমি তোমার থেকে আরো এগিয়ে গেলাম।হিসাবটা কবে সমান করছো?”
চলবে….
[রিচেক দিতে পারিনি।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]