হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-৬১+৬২+৬৩

0
436

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৪৩)
কুশল আর তরুনিমার রুমের বাহিরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা দরজায় কড়া নাড়ে। কুশল আর তরুনিমা তখনও ঘুমিয়ে ছিলো। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ওদের। তরু কুশলের বুকের উপর থেকে সরে সোজা হয়ে বসে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো…

—“কে!”

সন্ধ্যা বললো….
—“মেজো ভাবী আমি..সন্ধ্যা।”

সন্ধ্যার কন্ঠ শুনতে পেয়ে তরু একপলক কুশলের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে এসে দরজা খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজা আটকে দেয়। কুশল বিছানার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে ওদের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। সন্ধ্যার আকস্মিক এমন কাজে তরু কিছুটা অবাক হয়ে বললো….

—“কি হয়েছে সন্ধ্যা! কোনো স*ম*স্যা!”

সন্ধ্যা তরুর হাত ধরে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
—“বসো ভাবী।”

সন্ধ্যা আর তরু দু’জনেই বিছানার উপর বসে পরে। সন্ধ্যা আবারও বললো….

—“জানি না এই বিষয়ে এভাবে কথা বলাটা ঠিক হবে কিনা! বা তোমরাও এটা মনে করো কিনা যে আমি বিষয়টা নিয়ে একটু বেশিই নেগেটিভলি চিন্তা করছি!”

সন্ধ্যার এমন কথা শুনে কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“কি হয়েছে তোর! কোন বিষয়ের কথা বলছিস তুই! সরাসরি বল।”

সন্ধ্যা কিছুটা ইতস্তত বোধ করে, নিজের একহাতের তালুতে অন্য হাতের পিঠ হালকা ভাবে ঘষা দিতে দিতে বললো….

—“ছোট ভাইয়ার দৃষ্টি, কথা বলার ধরণ, চাল-চলন আমার একদমই ভালো লাগছে না মেজো ভাইয়া।”

কুশল বললো….
—“মানে! কি বলতে চাইছিস তুই!”

সন্ধ্যার কথার ধরণ আর ও যে ইতস্তত বোধ করছে সেটা তরুনিমা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো…

—“আ-আব-কুশল..! আপনি বরং ফ্রেশ হয়ে নিন যান। আমি সন্ধ্যার সাথে এই বিষয়ে কথা বলছি।”

কুশল তরুর দিকে তাকায়, তরু ইশারায় কুশলকে যেতে বলে। কুশলও আর কথা না বাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে তোয়ালে আর পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে প্রবেশ করে। পরক্ষণেই তরু সন্ধ্যার হাতের উপর নিজের হাত রেখে শান্ত স্বরে বললো….

—“এখন নি*র্দ্বি*ধা*য় তুমি আমাকে তোমার স*ম*স্যার কথা বলতে পারো সন্ধ্যা।”

সন্ধ্যা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজবীরের আচারণ, দৃষ্টি ও বা*জে ই*ঙ্গি*তে বলা সব কথাগুলো তরুকে খুলে বলে। সব শোনার পর তরুর যেনো রাগে সর্বশরীর জ্ব*ল*ছে। তরু রাগী স্বরে বললো….

—“অ*মানুষদের বাচ্চা যে অ*মানুষ ই হয় তার প্রমাণ সে দিয়ে দিয়েছে। সব গুলো অ*মানুষের হা*ল এতোটাই খা*রাপ করে দিতে হবে যে তাদের অবস্থা দেখে চারপাশে থাকা বাকি অ*মানুষ গুলোরও শিক্ষা হয়ে যায়।”

—“ভাবী এই অ*মানুষ গুলোকে নিজের চোখের সামনে হাসি-খুশি ভাবে চলাচল করতে দেখলে আমার ভিষণ ক*ষ্ট হয়। এদের উচিত শা*স্তি দেওয়ার ব্যবস্থা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে হবে আমাদের। আমি চাই না বাবা-মায়ের মতো ক*রু*ণ অবস্থা আমাদের মাঝে আর একজনেরও হোক।”

—“চি*ন্তা করো না সন্ধ্যা৷ অ*মানুষ গুলোকে আর বিন্দুমাত্র সুযোগ ও দেওয়া হবে না কোনো ভালো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের ক্ষ*তি করার।”

সন্ধ্যার সাথে কথা বলতে বলতেই তরুর ফোন বেজে উঠে। বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে ওর মা তমালিকা সিকদার কল করেছেন। তরু ফোন রিসিভ করে বললো…..

—“কেমন আছো মা! বাবার শরীর ভালো তো?”

ফোনের ওপাশ থেকে তমালিকা বললেন….
—“আমরা ভালো আছি রে মা। তোর কথা খুব মনে পড়ছিলো। তোকে দেখতে ভিষণ ইচ্ছে করছে। জামাই বাবাজিকে নিয়ে একবার সুযোগ করে আমাদের এখানে আয়। তোরা আসলে অরুনিমার জন্য মিলাদের ব্যবস্থা করবো। অনাথ আশ্রমের কিছু বাচ্চাদের খাওয়াবো আর ওদের মাঝে শীতের পোশাক বিতরণ করবো।”

তরু স্মিত হাসি দিয়ে বললো…
—“ঠিক আছে মা। আমি এই বিষয়ে ওনার সাথে কথা বলেই তোমাকে জানাচ্ছি কেমন!”

—“আচ্ছা ঠিক আছে।”

এই বলে তমালিকা কল রেখে দিলেন। তরুর মা ওকে কি বললো সেই বিষয়ে সন্ধ্যা ওকে প্রশ্ন করলে তরু সবটা বলে দেয়। সন্ধ্যা বললো…

—“ভাবী যদি কিছু মনে না করো তাহলে তোমাদের সাথে আমাকেও নিয়ে যাবে! আসলে এ বাড়িতে তো দাদীমা ছাড়া আমার আপন বলতে কেও নেই এখন তাই।”

তরু হাসিমুখে বললো….
—“পাগলী….এতে কি আলাদা করে অনুমতি নিতে হয় নাকি! তুমিও যাবে আমাদের সাথে। আর আমরা যাওয়ার সময় নিলাদ্র ভাইয়াকেও আমাদের সাথে নিবো কেমন!”

নিলাদ্রকে সাথে নেওয়ার কথা শুনতেই সন্ধ্যা কিছুটা লজ্জা পায়। সেইসময় কুশলও ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে বললো….

—“ননদ-ভাবীর কথোপকথন এর মাঝে এখন আমি প্রবেশ করলাম কিন্তু!”

কুশলের এরূপ কথা শুনে তরুনিমা ভ্রু কুচকে বললো…
—“দু’জন মেয়ের কথোপকথনের মাঝে প্রবেশ করে আপনার কাজ কি শুনি!”

কুশল তোয়ালেটা চেয়ারের উপর মেলে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চিরুনি নিয়ে চুলে চিরুনি করতে করতে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো….

—“বা রে…একজন আমার বউ হয় আর আরেকজন আমার বোন হয়। তাদের কথপোকথনের মাঝে ঢুকতে আমার আবার এক্সট্রা কাজের প্রয়োজন আছে নাকি যখন তখন যেকোনো পরিস্থিতিতে ঢুকতে পারি!”

কুশলের মুখে নিজেকে বউ বলে সম্বোধন করতে শুনে তরু কিছুটা লজ্জা পায়। সন্ধ্যা তরুর দিকে তাকাতেই তরুকে হালকা লজ্জা পেতে দেখে ডান হাতের শাহাদাত আঙুল দিয়ে নিজের নাকে হালকা ঘষা দিতে দিতে বললো….

—“এহেম এহেম…তোমরা বরং এখন রোমান্স করো আমি আর কাবাবের মাঝে হাড্ডি হয়ে না থাকি!”

সন্ধ্যার এমন কথায় তরু মাথা নিচু করে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চে*পে ধরে নিজের লজ্জাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে।
সন্ধ্যা বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতেই কুশল সন্ধ্যার ডান কান টেনে ধরে বললো….

—“বড্ড পেঁ*কে গিয়েছিস তুই। কান মু*লে না দিলে ঠিক হবি না।”

সন্ধ্যা বললো….
—“আআআ..মেজো ভাইয়া..ছাড়ো লাগছে তো!”

কুশল সন্ধ্যার কান ছেড়ে দিতেই সে একছুটে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে ওদের দিকে ঘুরে দাড়িয়ে হাসি দিয়ে বললো…..

—“দরজাটা ভিতর থেকে ভালোভাবে আটকে দিয়ে তারপর রোমান্স করো নয়তো কখন কে এসে পড়বে তোমরা লজ্জায় পরে যাবে।”

কুশল বললো….
—“তবে রে..!”

সন্ধ্যাকে আর পায় কে একছুটে নিচে চলে যায়। কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে বললো….
—“কিছু মনে করো না। জানোই তো ও কেমন চন্ঞ্চল।”

তরু আর নিজস্থানে বসে থাকতে পারে না। বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে অগ্রসর হতে নিলে পিছন থেকে কুশল তরুর একটা হাত ধরে নেয়। একে তো লজ্জায় তরুর যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে রুমের বাহিরে যেতে নিয়েছিলো সে তার মাঝেই কুশলের এভাবে বাঁধা প্রয়োগ করায় তরুর অবস্থা আরো সমীচীন হয়ে দাঁড়ায়। ওর হার্ট স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক জোরে বিট করতে শুরু করেছে। চোখ-মুখ খিঁ*চে রেখেছে সে। কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“কোথায় যাচ্ছো তুমি!”

তরুর কাছে এই প্রশ্নের কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর নেই। তাই সে সেভাবে কিছু না ভেবেই বললো…..

—“ও-ওয়াশরুম…ওয়াশরুমে যাবো।”

—“ওয়াশরুম তো এদিকে, ওদিকে তো দরজা।”

কুশলের এমন কথায় তরু চোখ মেলে সামনে আর পাশে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টায়। এরকম পরিস্থিতিতেও কখনও পড়তে হতে পারে তা সে ভাবে নি। তরু আর মুখে কিছু না বলে কুশলের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চেয়ারের উপর রাখা তোয়ালে টা নিয়ে এক ছু*টে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে যায়। কুশল তরুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে একহাতে নিজের মাথার পিছনের অংশের চুলগুলো বোলাতে বোলাতে হাসি দিয়ে বললো…

—“ল*জ্জা পেয়েছে মেয়েটা।”

শাওয়ার শেষ হতেই তরুর খেয়াল হয় সে ওয়াশরুমে প্রবেশ করার সময় কাপড় নিতেই ভুলে গিয়েছে। তরু মনে মনে নিজেকে একশত একটা ব*কা দিতে দিতে বললো…..

—“একদিনেই আর কতো লজ্জার মাঝে পড়বি তুই তরু!
এখন তো লজ্জার কু*য়ো ডুব দিয়ে ম*রা*র মতো পরিস্থিতি দাঁড় করিয়েছিস। এখন ওনার কাছে কাপড় চাইতে হবে আমায়! আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দিন।”

তোয়ালেটা নিজের শরীরে ভালোভাবে পেঁ*চিয়ে নিয়ে তরু ওয়াশরুমের দরজা হালকা ভাবে খুলে উঁ*কি দিতেই দেখে কুশল রুমের ভিতর নেই। কুশলকে রুমে দেখতে না পেয়ে তরু যেনো হা*ফ ছেড়ে বাঁচে। তরু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দ্রুততার সাথে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে ওয়ারড্রবের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার খুলে নিজের একসেট কাপড় নিয়ে ড্রয়ার বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াতেই কুশলকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তরুর নিঃশ্বাস ব*ন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। চোখ বড় বড় করে কুশলের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তরু। পরমুহূর্তেই কুশল এক পা এক পা করে তরুর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তরু যেনো নিজ স্থান থেকে নড়ার কথা ভু*লে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কুশল যতোই তরুর কাছে অগ্রসর হচ্ছে তরুর হৃদপিণ্ড ততোটাই দ্রুত বিট করতে শুরু করেছে। তরুর পিঠ ওয়ারড্রবের সাথে ঠেকানো অবস্থায় আছে। কুশল তরুর একেবারেই সন্নিকটে এসে দাঁড়িয়ে একহাতে ওর থুতনি উঁচু করে ধরে নিজের মুখশ্রী উপর নিকট এগিয়ে নিতে থাকে। তরুর হাত-পা কাঁ*পতে শুরু করেছে। হাতে থাকা কাপড়গুলো মেঝের উপর ফেলে দিয়ে তরু সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঠোঁটের উপর হাত রেখে ওর আর কুশলের মাঝে বাঁ*ধা প্রদান করে। তরুর এমন কাজে কুশলের ঘোর কেটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সে তরুর থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। কি করতে নিয়েছিলো তা বুঝতে পেরে কুশল আর তরুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। দ্রুত কদমে বেলকনিতে চলে যায়। কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকার পর তরুও নিজের পায়ের কাছে পরে থাকা কাপড়গুলো তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৪৪)
বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে কুশল। সেইসময় তরুনিমা বেলকনিতে প্রবেশ করে কুশলের পাশে এসে দাঁড়ায়। কুশল তরুর উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরেও নিরব থাক। কিছুসময়ের জন্য পিন-প*ত*ন নিরবতা বিরাজ করে ওদের মাঝে। পরক্ষণেই কুশল নিরবতার দেওয়াল ভে*ঙে তরুর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির করে বললো….

—“তখনের কাজের জন্য আমি অনেক দুঃখিত। আমি জানি না তখন আমার কি হয়ে গিয়েছিলো। নিজের মাঝে আমি ছিলাম না। পুরোপুরি আমি কন্ট্রোললেস হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি আমার এরূপ আচারণের জন্য কিছু মনে করো না প্লিজ।”

তরু শান্ত দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। কুশলকে গি*ল্টি ফিল করতে দেখে তরুর ঠোঁটের কোণে আলতো হাসির রেখা ফুটে উঠে। পরক্ষণেই তরু কুশলকে অবাক করে দিয়ে দু’হাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওর পায়ের উপর নিজের পা জোড়া রেখে ওর ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে নিজের ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয়। এভাবেই পেরিয়ে যায় বেশ কিছু সময়। তরু কুশলের ওষ্ঠদ্বয়কে মুক্ত করে দেয়। দু’জনের নিঃশ্বাস এর গতি ও হার্টের বিট হওয়ার গতি স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। তরু কুশলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো…..

—“বউ হই আমি আপনার। আমার সামনে নিজেকে আজীবন ধরে কন্ট্রোলে রাখলে আমার বাবা-মায়ের নানা-নানী ডাক শোনার স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না। তাই বউয়ের কাছে এতোটাও ইনোসেন্ট হওয়া উচিত না, বুঝলেন মি.স্বামী সাহেব!”

এই বলে তরু কুশলকে ছেড়ে দিয়ে বেলকোনির অন্যপাশে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে চোখ-মুখ খিঁ*চে বন্ধ করে রেখে মনে মনে চিন্তা করে….

—“তরু..তরু..লজ্জা-শরমের মাথা খে*য়ে এ তুই কি করে বসলি! আল্লাহ..আমার হাত-পা এভাবে কাঁ*পছে কেনো!”

কুশল এখনও স্তব্ধ হয়ে নিজের আগের স্থানেই দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম কোনো নারী তার এতোটা কাছে এসেছে, তাঁকে চু*ম্ব*ন করেছে এই বিষয়টাকে হজম করে নিতে কুশলের একটু বেশিই সময় লেগে যায়। পুরো বিষয়টাকে হজম করে নিতেই কুশলের ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই একান্ত নিজের প্রিয় নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায়। অতঃপর কুশল মুখে কিছু না বলে দ্রুত কদমে তরুর কাছে গিয়ে দু’হাতে ওর পেট জড়িয়ে ধরে ওকে মেঝে থেকে কয়েক ইন্ঞ্চি উপরে উঠিয়ে নিয়ে হাসতে হাসতে গোল গোল ঘুরতে শুরু করে। কুশলের আকস্মিক এমন কাজে তরু কিছুটা ভী*ত হয়ে বলতে থাকে…..

—“আরে..আরে..পরে যাবো তো..কুশল..নামান আমাকে..কুশল।”

কিছুসময় পর কুশল তরুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ওকে নিচে নামিয়ে দেয়। কুশল তরুর কমোর দু’হাতে জড়িয়ে ধরে ওর কপালের উপর নিজের নাক ঠেকিয়ে রেখেছে। কুশলের গরম নিঃশ্বাস তরুর মুখশ্রীর উপর আ*ছ*ড়ে পড়ছে। তরু লজ্জায় সি*টে গিয়ে কুশলকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকায়। দু’জনের ঠোঁটেই তৃপ্তির হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।

(১৪৫)
নিজেদের রুমে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে রিজভী আর কামিনী দু’জনেই। সেইসময় ওনাদের ছেলে রাজবীর ওনাদের রুমে প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজা আটকে দেয়। রাজবীরের হঠাৎ এমন কাজে রিজভী আর কামিনী দু’জনেই কিছুটা অবাক হয়ে যায়। কামিনী অবাক স্বরে বললেন….

—“রাজ..আমার সোনা বাবা..কিছু কি হয়েছে তোর!”

রাজবীর বিছানায় এসে বসে শান্ত স্বরে বললো…
—“মা-বাবাই আই নো যে জন্মের পর থেকে আমি তোমাদের কাছে ছোট-বড় যেকোনো ধরনের আবদার করলে তোমরা যেকোনো ভাবে আমার সেই আবদার পূরণ করেছো। তাই এখন তোমাদের আমায় আরেকটা আবদার পূরণ করতে হবে। আর তোমরা সেটা কিভাবে পূরণ করবে সেই বিষয়ে আমি কোনো কথা শুনতে রাজি না৷”

রিজভী বললেন….
—“রাজ বাবা..শান্ত হও তুমি৷ আর বলো তোমার কোন আবদারটি এখন আমাদের পূরণ করতে হবে। আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে তোমার সেই আবদার অবশ্যই পূরণ করবো। বলো বাবা..!”

কামিনীও রিজভীর কথায় সায় প্রদান করে বললেন….
—“হুম..আমাদের একমাত্র মানিকের আবদার আমরা ফেলতে পারবো নাকি! বল তুই সোনা বাবা।”

রাজবীর ছোট্ট করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—“আমার সন্ধ্যাকে চাই।”

রাজবীর এর মুখে এরূপ কথা শুনে কামিনী আর রিজভী একে-অপরের দিকে হতভম্বতার দৃষ্টি নিয়ে একপলক দেখে রাজবীরের উপর দৃষ্টি স্থির করে। রিজভী হতভম্বতার স্বরে বললেন…

—“সন্ধ্যা…আমাদের সন্ধ্যা..! ওকে তোমার চাই মানে কি বলছো তুমি!”

—“বাবাই আই ওয়ান্ট সন্ধ্যা…ও আমাকে আজ অনেক বা*জে ভাবে অ*প*মান করেছে। আর আমি এই অ*প*মা*নের কড়া জবাব দিতে চাই ওকে। তাই সন্ধ্যাকে এক রাতের জন্য হলেও তোমাদের আমার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব।”

রাজবীরের মুখে এরূপ কথা গুলো শুনে কামিনী আর রিজভী দু’জনেই কয়েক সেকেন্ড এর জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন। পরক্ষণেই কামিনী বললেন…

—“রা..রাজ…মানিক আমার…আগে মাথা ঠান্ডা কর তুই। পরিস্থিতি এখনও আমাদের হাতের মুঠোয় আসে নি। তাই এখন যদি আমরা সামান্য তম ভু*ল করে বসি তাহলে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সব পরিকল্পনা পুরোপুরি ভাবে ভে*স্তে যাবে।”

রিজভী বললেন….
—“রাজ…বাবা…তোর মা যা বলছে একদম ঠিক বলছে। তুই মাথা ঠান্ডা কর। একবার এই চৌধুরী পরিবারের আমাদের প্রাপ্য সম্পত্তি আমরা নিজেদের হাতের মুঠোয় করে নেই তারপর ঐ কুশলের একটা উচিত ব্যবস্থা করবো। তখন তুই অনায়াসে সন্ধ্যার থেকে নিজের অ*প*মানের ব*দ*লা নিতে পারবি। তখন একরাত কেনো তুই যদি সারাজীবন ধরে সন্ধ্যাকে নিজের কাছে রেখে ওকে তিল তিল করে য*ন্ত্র*ণা দিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে চাস করিস। কিন্তু এখন এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝে*ড়ে ফেল।”

রাজবীর রাগ নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বললো…
—“আরে রাখো তোমাদের সঠিক সময় আর প্রাপ্ত সম্পত্তি পাওয়ার অপেক্ষা। আমি এসবের কোনো কেয়ার করি না। তোমরা যখন সন্ধ্যাকে আমার হাতে তুলে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা এখন করতে পারবেই না তখন আমাকে যা করার করতে হবে।”

এই বলে রাজবীর ওর বাবা-মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাদের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। রিজভী আর কামিনীর চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়। রিজভী চিন্তিত স্বরে বললেন……

—“তীরে এসে এভাবে তরী ডুবতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। যদি রাজ রাগের বশে সামান্যতম ভু*ল করে বসে আর সেই বিষয়ে কুশল অবগত হয়ে যায় তাহলে সব শে*ষ হয়ে যাবে কামিনী। সব শেষ হয়ে যাবে। তোমার পা*গ*ল ছেলেকে যেকোনো ভাবে সামলাতে হবে..বুঝলে!”

(১৪৬)
কুশল বিছানায় বসে ফোন স্ক্রলিং করছিলো। সেইসময় তরু কুশলের পাশে বসে শান্ত স্বরে বললো…

—“আব..কুশল..আপনার সাথে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিলো।”

তরুর কথা শোনামাত্র কুশল ওর ফোন পাশে রেখে তরুর উপর দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“হুম বলো কি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাও!”

তরু শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—“সকালে যে কারণে সন্ধ্যা আমাদের রুমে এসেছিলো সেই কারণটা আপনাকে জানানো জরুরী বলে মনে হচ্ছে সেই বিষয়েই কথা বলতে চাইছিলাম।”

—“হুম বলো!”

—“কথাটি শোনার পর আপনি রাগ হবেন না বা কোনোরকম উল্টোপাল্টা কাজ করবেন না কথা দিন।”

তরুর এরূপ কথা শুনে কুশল ভ্রু কুঁচকে নেয়। অতঃপর তরুর কথায় সম্মতি সূচক জবাব দেয় যে সে রাগ হবে না। অতঃপর তরু সন্ধ্যার সাথে করা রাজবীরের খারাপ আচারণ ও কথার ধরণ সম্পর্কে কুশলকে অবগত করে। তরুর মুখে সম্পূর্ণ কথাগুলো শুনে কুশল চোখ বন্ধ করে বাম হাতের শাহাদাত আঙুল দিয়ে কপালের একপাশ আলতো ভাবে ঘষা দিতে শুরু করে। কুশলের এই শান্ত ভাবের আড়ালে যে কতোটা রাগ চা*পা আছে তা তরুর বুঝতে বাকি নেই। তরু একবার শুকনো ঢোক গি*লে নিয়ে বললো….

—“শুনুন…এখন রাগের বশীভূত হয়ে যদি আমাদের মাঝে একজনও সামান্যতম ভু*ল করে বসি তবে তার খে*সা*রত আমাদের খুব বা*জে ভাবে পোহাতে হবে। আমি বলছি না যে অ*ন্যায়*কারীর অ*ন্যায়কে মুখ বুঝে মেনে নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দিতে। আমি বলছি যে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করে সব অ*ন্যায় কারীকে এক এক করে কঠোর থেকে কঠোরতম শা*স্তি প্রদান করতে।”

তরুর কথা শেষ হওয়া মাত্র কুশল বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…..
—“সন্ধ্যাকে নিয়ে নিচে ড্রয়িংরুমে এসো জলদী।”

এই বলে কুশল তরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত কদমে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু বিছানা থেকে নেমে কপালের চিন্তার ভাঁজ ফুটিয়ে বললো….

—“আল্লাহ…এখন কি হবে! এই মানুষটা এখন যদি রাগের বশে উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলেন! ধূর আমারই ভু*ল হয়েছে এই পরিস্থিতিতে ওনাকে এসব জানানো।”

এই বলে তরুও রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে নিজের জন্য নির্ধারিত সোফায় বসে কুশল উপস্থিত সার্ভেন্টদের অর্ডার করে পরিবারের সকল সদস্যদের যতো দ্রুত সম্ভব ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হওয়ার কথা বলতে।

কিছুসময়ের ভিতর চৌধুরী পরিবারের সকল সদস্য ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়। তরুনিমা আর সন্ধ্যা নিজেদের মাঝে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনাকে দমিয়ে রাখার যথাযথ চেষ্টা করছে। বাকিরা কুশলের উপর দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে কি কারণে তাদের একত্র হতে বলা হয়েছে তা জানতে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৩)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৪৭)
কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“সকলকে একত্র করার পিছনের কারণ হলো সন্ধ্যার বিয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত করা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সকলকে অবগত করা।”

হুট করে সন্ধ্যার বিয়ের বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত কুশল চূড়ান্ত করেছে জানার উপর উপস্থিত সকলেই অনেক অবাক হয়ে যায়। সন্ধ্যা আর তরুনিমা একে-অপরকে একপলক দেখে একবার লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে। কুশল কি বলবে না বলবে তা ভেবে উত্তেজনায় ওদের কা*বু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিলো। রাজবীর একপার্শে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে রাগে নিজের দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। সায়মন বললেন….

—“বাড়িতে এতোগুলো গুরুজন থাকা সত্ত্বেও সন্ধ্যার বিয়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তুমি চূড়ান্ত করতে পারো না কুশল।”

কুশল স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো….
—“সন্ধ্যা আমার ছোট বোন। ওর বিষয়ে ভালো-মন্দ বিচার করে যেকোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে। আর রইলো গুরুজনদের সাথে আলোচনা করার বিষয়! যেই গুরুজনরা মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ব আছে কি না তা যাচাই না করে তাদের কতো অর্থ-সম্পত্তি আছে তা যাচাই করে একটা সম্বন্ধ পাঁকা করার মতো নিচ পদক্ষেপ গ্রহন করতে চায় সেই গুরুজনদের সাথে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করার প্রয়োজন আমি মনে করি না।”

কুশলের এমন অ*প*মান মূলক জবাব শুনে রাগে সায়মনের সর্বশরীর থর থর কাঁপছে। তিনি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বললেন….

—“কুশল…বিগত বছরগুলো থেকে তোমার সব বাড়াবাড়ি চুপচাপ সহ্য করে এসেছি বলে এর মানে এই নয় যে তুমি আমাদের সাথে যা নয় তাই ব্যবহার করে যাবে। ভুলে যেও না সম্পর্কে আমি তোমার বাবা হই। আর এখানে উপস্থিত সকলের সাথেই তোমার র*ক্তে*র সম্পর্ক আছে। তুমি আমাদের এভাবে অ*প*মান করতে পারো না।”

কুশল সায়মনের উপর দৃষ্টি স্থির করে শান্ত স্বরে বললো….
—“আমি কখন বললাম যে আপনি আমার বাবা হন, আর এই পরিবারের সকলের সাথে আমার র*ক্তে*র সম্পর্ক তা আমি ভুলে গিয়েছে! বিগত বছর গুলোতে আমি কারোর লাইফ নিয়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করি নি যে আমার নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে তাকে চরম ভো*গা*ন্তি*র সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি যখনই কোনো বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা সে সম্পর্কে সকলকে অবগত করতে গিয়েছি তখনই প্রতিবারই একমাত্র আপনি আমার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িছিলেন। যেখানে একজন বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো যখন তার সন্তানরা কোনো বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করে তখন সেই সিদ্ধান্তের পিছনে আসল কারণ কি, কারণটা তার জীবনের সাথে জড়িত, কতোটা গুরুত্ব রাখে সে সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তাকে সাপোর্ট করা। আপনি চিন্তা করে বলতে পারবেন যে আপনি একজন বাবা হয়ে এই দায়িত্বটা একবারের জন্যও পালন করেছিলেন কি না!”

কুশলের বলা কথাগুলো শুনে সায়মন সহ উপস্থিত সবাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। পরক্ষণেই সায়মন আর কোনো প্রতিত্তুর না করে স্থান ত্যগ করেন। কুশল আবারও শান্ত স্বরে বললো….

—“যদি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে উপস্থিত আর কারোর বিন্দুমাত্র স*ম*স্যা থেকে থাকে তাহলে সে এখান থেকে চলে যেতে পারে। কিন্তু আমার এই কথাটা মাথায় ভালো ভাবে ঢুকিয়ে নাও সবাই যে, সন্ধ্যার বিয়ে নিয়ে আমি যেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি দুনিয়া উলোট-পালোট হয়ে গেলেও এই সিদ্ধান্তের কোনো নড়চড় হবে না।”

কুশলের এরূপ কথা শুনে উপস্থিত আর কেও কোনো প্রতিবাদ মূলক কথা বলে না। সাগরিকা চৌধুরী শান্ত স্বরে বললেন….

—“দাদুভাই…জানিস ই তো তোর বাবা কেমন র*গ-চ*টা স্বভাবের মানুষ। কোনো বিষয় নিয়ে ভালো ভাবে চিন্তা করেই রিয়েক্ট করে বসেন। আমি চাই না কোনো বিষয় নিয়ে তোদের বাবা-ছেলের মাঝে মনোমালিন্য হোক। আমি এটা খুব ভালোভাবে জানি যে তুই আমাদের পরিবারের যেকোনো সদস্যের বিষয় নিয়ে যেই সিদ্ধান্তই নিস না কেনো তা তাদের জীবনে ভালো দিকটাই বয়ে আনবে। তোর সিদ্ধান্তের উপর আমাদের সবারই পুরো আস্থা আর বিশ্বাস আছে দাদু ভাই।”

সাগরিকার কথাগুলো শুনে কুশল, তরু, সন্ধ্যার ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। কামিনী নিজের দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির করে রেখে দ্রুততার সাথে নিজোর বিনুনী নাড়ছে। সাবরিনা বললেন….

—“কুশল…বল এখন বাবা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তুই।”

কুশল একপলক সন্ধ্যা আর তরুর দিকে তাকিয়ে বললো….
—“কিছুদিন আগে বড় ভাইয়া-বড় ভাবীর জীবনে নতুন সদস্য আসার উপলক্ষে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো সেখানে শেষ মূহূর্তে যে দূ*র্ঘ*ট*না হয়েছিলো সেই বিষয়ে তোমাদের খেয়াল আছে নিশ্চয়ই! আমাকে বাঁচাতে গিয়ে যেই ছেলেটা গু*লি-বি*দ্ধ হয়েছিলো ওর নাম হলো মি.তওকির তালুকদার তাহির। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মি.তমিজ তালুকদারের বড় ছেলে তাহির। ওকে আমরা যেই হাসপাতালে সু চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ভর্তি করিয়েছিলাম সেই হাসপাতালে ওর ছোট ভাই ডা.সৌহার্দ্য তালুকদারের সাথে পরিচয় হয়। সে সন্ধ্যাকে দেখামাত্রই পছন্দ করে ফেলেছে। সন্ধ্যার জন্য বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিলো সৌহার্দ্য আমায়। আমি ওর আর ওর পুরো পরিবারের ব্যকগ্রাউন্ড সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে খোঁজ খবর নিয়েছিলাম। ওনারা সবাই অনেক ভালো মানসিকতার মানুষ। তাই সৌহার্দ্যের সাথেই সন্ধ্যার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি আমি। খুব তাড়াতাড়ি সৌহার্দ্য ওর পরিবারকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবেন। এরপর বিয়ের জন্য একটা ভালো দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। আমি চাই খুব ধুমধামের সাথে সৌহার্দ্য আর সন্ধ্যার বিবাহকার্য সম্পন্ন হোক।”

তরু আর সন্ধ্যা কুশলের মুখে সৌহার্দ্যকে তাহিরের ছোট ভাই বলে সম্বোধন করতে শুনে অনেক অবাক হয়ে যায়। তরু মনে মনে বললো….

—“এখনও পর্যন্ত তাহিরের সাথে এই বিষয়ে কথা বলা হলো না আর উনি নিলাদ্র ভাইয়াকে তাহিরের ছোট ভাই বলে সম্বোধন করলেন! এখন পুরো বিষয়টা উনি ম্যনেজ করবেন কি করে! যদি তাহির এসবের মাঝে আসতে রাজি না হয় তখনই বা কি করবেন! আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। জানি না আগামীতে কি হতে চলেছে।”

সন্ধ্যার কথার তরুর চিন্তার ঘোর কাটে। সন্ধ্যা সকলের সামনেই বললো….
—“মেজো ভাবী..তুমি না সকাল বেলা বললে যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আঙ্কেল আন্টি তোমাকে তাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলেছেন! অলরেডি অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। মেজো ভাইয়া আর তুমি রেডি হয়ে নাও যাও। আমিও রেডি হয়ে নিচ্ছি।”

সাবরিনা বললেন….
—“তুইও যাবি ওদের সাথে!”

সন্ধ্যা বললো….
—“হুম…সারাদিন রাত বাড়ির ভিতর থাকতে থাকতে কেমন বোর ফিল করছি। তাই ভাবলাম ওদের সাথে যাই।”

—“ওহহ..আচ্ছা।”

অতঃপর একে একে সবাই ড্রয়িংরুম ত্যগ করে নিজ নিজ রুমে চলে যায়। রাজবীর ওর রুমে এসে ভিতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের পাশে থাকা ছোট্ট ফুলদানীটা হাতে নিয়ে আয়নার উপর ছুঁড়ে মারে। সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ আয়না কয়েক শত টুকরো হয়ে মেঝের উপর পরে। রাজবীর সেখান থেকে একটা টুকরো বাম হাত দিয়ে উঠিয়ে তা মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে। রাজবীর হাত কে*টে গিয়ে টপটপ করে র*ক্ত মেঝের উপর পড়তে শুরু করে। রাজবীর দাঁতে দাঁত পি*ষে বললো…..

—“আমার আগে ২য় কোনো পুরুষ তোর সংস্পর্শে আসতে পারবে না সন্ধ্যা। এমনটা আমি হতে দিবো না। খুব তাড়াতাড়ি আমার প্রতি*শো*ধ নিবো আমি। তৈরি হয়ে নে তুই।”

(১৪৮)
তরু আর কুশল নিজেদের রুমে আসতেই তরু ভিতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে কুশলের হাত ধরে বিছানায় গিয়ে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে বললো….

—“আমাদের পরিকল্পনা ছিলো আমরা তাহিরের সাহায্য নিতে ওর সাথে আগে কথা বলবো ও যদি রাজি হয় তবেই আমরা এই স্টেপ গ্রহন করবো। কিন্তু ও যে আমাদের সাহায্য করতে রাজি হবে এ বিষয়ে ওর সাথে কথা না বলেই আপনি আগেই নিশ্চিত হয়ে এই পদক্ষেপ গ্রহন কেনো করলেন? এখন যদি তাহির রা…!”

তরুকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই কুশল ওর ওষ্ঠদ্বয়ের উপর নিজের শাহাদত আঙুল ঠেকিয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বললো….

—“শুউউউ….শান্ত হও তরুনিমা। আমি এমন একটা সেন্সিটিভ বিষয় নিয়ে পুরোপুরি ভাবে শিওর না হয়ে সকলকে জানানোর মতো বোকামি কেনো করবো বলো! আমার বউ সাহেবা আপনার স্বামী সাহেব এতোটাও বোকা না।”

এই বলে কুশল তরুর ওষ্ঠদ্বয়ের উপর থেকে নিজের আঙুল সরিয়ে নেয়। তরু থ হয়ে বসে আছে। কুশল বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বললো….

—“রেডি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি। অনেকদিন পর জামাই আদর পেতে শ্বশুড় বাড়িতে যাবো।”

তরু অবাক স্বরে বললো…
—“আপনি তাহিরের সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বললেন কখন!”

—“সকাল বেলা তুমি যখন ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গিয়েছিলে তখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তাহিরের সাথে কলে এই বিষয় নিয়ে ডিসকাস করেছিলাম। সবটা শোনার পর তাহির বলেছে, সে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে যথাসম্ভব সহযোগীতা করবে। আর সে নিজেই ওর পরিবারকে রাজি করাবে সৌহার্দ্যকে তাদের ছোট ছেলে হিসেবে আমাদের পরিবারের সামনে পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে।”

এই বলে কুশল বেলকনিতে চলে যায়। তরুও আর চিন্তা না করে ওয়ারড্রব থেকে একসেট জামা বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..