হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-৭৩

0
569

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৩)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৬৭)
নিলাদ্রের হোটেল রুমে সোফায় চিন্তিত ও রাগান্বিত মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে তাহির, হুমায়রা আর নিলাদ্র। ওদের সামনেই কুশল নিজের মুখশ্রীতে শান্ত ভাব স্পষ্ট রেখে বসে আছে। নিলাদ্র ওর ডান হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরে রাগী স্বরে বললো….

—“এই হা*রা*ম খো*রে*র এতো বড় সাহস আমার বউয়ের দিকে ন*জ*র দিয়েছে। ওর চোখ গরম সি*ক দিয়া উঠিয়ে ফেলবো আমি।”

তাহির নিলাদ্রের কাঁধের উপর আলতো ভাবে হাত রেখে বললো….
—“মাথা ঠান্ডা করো ভাই। রাগের বশে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না আমাদের। তবে এই রাজবীরের খেল খ*ত*ম করার সময় এসে গিয়েছে। কুশল ভাই তুমি কি কিছু চিন্তা করেছো?”

কিয়ৎক্ষণ পর কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“বলেছিলাম না ওদের নিজেদের তৈরিকৃত ষ*ড়*য*ন্ত্রে*র জা*লে ওরা নিজেরাই ফেঁ*সে যাবে! আর ওরা ফেঁ*সে গিয়েছেও।”

নিলাদ্র বললো…
—“মানে!”

—“মানেটা খুব সহজ। কিছুদিন আগে সিকদার ভিলায় যখন গিয়েছিলাম তখন আমি অরুনিমার ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠায় শহর থেকে দূরে যে পোড়াবাড়িতে রাজবীর সব মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের গু*ম করে দিতো সেই জায়গার ঠিকানাও লেখা ছিলো। রাজবীর সন্ধ্যাকে ঐ জায়গাতেই উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।”

—“হুম তো!”

—“সন্ধ্যাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা রাজবীরের জন্য আরো সহজ করে দিতে হবে।”

কুশলের এরূপ কথা শুনে ওরা তিনজনই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। নিলাদ্র অবাক স্বরে বললো….

—“৩দিন পর সন্ধ্যার আর আমার বিয়ে। এই বিয়ে নিয়ে ও কতোটা আনন্দিত সে সম্পর্কে তুই, আমরা সবাই অবগত। কিছুদিন আগেই নিজের অতীত সম্পর্কে জানার পর সন্ধ্যা কতোটা ভে*ঙে পড়েছিলো সেটাও জানিস তুই। এখন আমি কিছুতেই সন্ধ্যাকে এতোবড় বি*প*দে*র মুখে যেতে দিবো না। ঐ রাজবীরের খেল তো আমরা অন্যভাবেও খ*ত*ম করতে পারি।”

—“সন্ধ্যা আমার ছোট বোন ওর জীবন নিয়ে আমার চিন্তা কম নেই নিলাদ্র। তবে এই সামান্য রি*স্ক টুকু না নিলে তো চলবে না। সন্ধ্যার শরীরে চুল পরিমাণ আঁ*চ*ড় আমি রাজবীরকে কাটতে দিবো না নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস তুই।”

তাহির বললো….
—“নিলাদ্র যখন সন্ধ্যাকে এতো বড় ঝুঁ*কি*র মাঝে ফেলতে চাইছেই না তখন বাদ দাও না কুশল।”

—“যদি এখন আমরা রাজবীরের পরিকল্পনা সফল হতে না দেই তাহলে ওরা সবাই বুঝে যাবে যে আমরা ওদের রূপ সম্পর্কে অলরেডি অবগত হয়ে গিয়েছি। তখন পরিস্থিতি আমাদের হাতের বাহিরে চলে যাবে। এই ছোট্ট বিষয়টা কেনো তোমরা বুঝতে পারছো না! আমি বললাম তো আমার বোনের জীবনের সেফটির সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিবো।”

কুশলের এরূপ কথা শুনে নিলাদ্র, তাহির দু’জনেই নিরব হয়ে থাকে। কিছুসময় পিন-প*ত*ন নিরবতা বিরাজ করে পুরো রুম জুড়ে। পরক্ষণেই নিরবতার দেওয়াল ভে*ঙে সকলকে অবাক করে দিয়ে হুমায়রা বললো….

—“সন্ধ্যার জায়গায় যদি আমি যাই!”

ওরা তিনজন অবাক দৃষ্টি নিয়ে হুমায়রার দিকে তাকিয়ে আছে। হুমায়রা আবারও বললো….

—“এভাবে কি দেখছো তোমরা! আমি সিরিয়াস হয়েই বলছি কথাটা।”

নিলাদ্র বললো….
—“কিন্তু ভাবী এতো বড় একটা রিস্ক আপনি নিতে যাবেন যদি আপনার কোনো ক্ষ*তি করে বসে ঐ জা*নো*…টা!”

হুমায়রা হালকা হেসে নিজের কন্ঠে সাহসী ভাব স্পষ্ট রেখে বললো….
—“দেখো ভাই প্র*তি*শো*ধে*র খেলায় যখন নেমেছি আমরা তখন এর প্রতিটি ধা*পে*ই আমাদের কাওকে না কাওকে নিজের জীবনের মায়া ত্য*গ করে এগিয়ে আসতে হবেই। আমরা তো একে-অপরের প্রতি এতোটুকু বিশ্বাস রাখতেই পারি যে আমরা সবাই সবসময় একত্র হয়েই থাকবো, আমাদের মাঝে যে বা যারা নিজের প্রাণের ঝুঁ*কি নিয়ে শ*ত্রু পক্ষকে বি*না*শ করতে এগিয়ে যাবে তাঁকে বা তাদের জীবন শ*ত্রু পক্ষের হাত থেকে র*ক্ষা করার জন্য আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাবো। ওরা যেনো কেওই আমাদের কারোর আর সামান্যতম ক্ষ*তি করতে না পারে সে বিষয়ে সবসময় সম্পূর্ণ সতর্ক থেকেই প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহন করবো। তাই নয় কি! রাখতে পারি না নাকি আমরা সবাই সবার প্রতি এই বিশ্বাস, ভরসা বা আস্থাটুকু! কি বলো তোমরা!”

হুমায়রার এরূপ কথাগুলো শুনে ওরা তিনজনেরই মনে ভরসা, বিশ্বাসের জায়গাটা আরো মজবুত হয়ে যায়। তাহির বললো…

—“তোর মতো মা*থা মু*টি যে এতো সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে কথা বলে এমন একটা দ্বি*ধা*দায়ক পরিবেশকে শান্ত করতে পারবে এটা আমি ভাবতেও পারি নি। তোকে যতোটা অ*ক*র্মে*র আর ভি*তু বলে মনে করেছিলাম ততোটা তুই নোস।”

হুমায়রা তাহিরের এরূপ কথায় কিছু বললো না শুধু ওর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলো। পরক্ষণেই নিলাদ্র বললো…
—“কিন্তু সন্ধ্যাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে এসে রাজবীর তো আর স্বইচ্ছায় হুমায়রা ভাবীকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে না। আমরা এই কাজটা কিভাবে সম্পন্ন করবো!”

আবার কিয়ৎক্ষণ নিরবতা বিরাজ করে রুম রুজে। কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“ভাবী যখন এতোবড় একটা সাহসিকতা দেখাতে পেরেছেন তখন রাজবীরের চোখে ধু*লো দিয়ে সন্ধ্যার জায়গায় ভাবীকে পাঠানোর মতো এই সামান্য কাজটুকুও আমরা করতে পারবো না এটা কোনো কথা বললি নাকি তুই!”

নিলাদ্র অবাক দৃষ্টিতে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। কুশল বাঁ*কা হেসে ওর পরিকল্পনার বিষয়টা ওদের তিনজনের সাথে শেয়ার করে। পুরো পরিকল্পনা শোনার পর ওদের চারজনের ঠোঁটেই হালকা হাসির রেখা স্পষ্ট হয়। নিলাদ্র বললো….

—“বাহ দোস্ত কি পরিকল্পনাইটা করলি তুই..তোর ব্রেইন যে কতো ফাস্ট সে কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। এবার আল্লাহ আল্লাহ করে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজটা সম্পন্ন হলেই রাজবীরের খে*ল আজীবনের জন্য খ*ত*ম হয়ে যাবে। ওর লা*শ দেখার পর কামিনী, রিজবী, সাবরিনা, সায়মনের চেহারার অবস্থা যে কতোটা ক*রু*ণ হয়ে যাবে তা ভাবতেই আমার মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠছে।”

তাহির বললো….
—“ঐ রাজবীর হা*রা*ম-খো*রে*র মৃ*ত্যু এতোটাই ক*রু*ণ হতে হবে যেনো ওর হাতে অ*স*হ্যকর য*ন্ত্র*ণা সহ্য করে যতোগুলো নারী তাদের প্রা*ণ হা*রি*য়ে*ছে সবার আ*ত্মা তৃ*প্তি পায়। মৃ*ত্যু*কে নিজের কাছে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে দেখে ঐ জা*নো…রের চোখে-মুখে যে ভ*য়ে*র ছাপ পড়বে তা আমি নিজ চোখে দেখতে চাই। বাঁ*চা*র জন্য ও আমাদের কাছে নিজের জীবন ভি*ক্ষা চাইবে তখন অন্তত আমার ভিতর আরো পরিতৃপ্তি কাজ করবে ভাই।”

নিলাদ্র বললো….
—“হুম ঠিক বলেছো। তবে এমনটাই হবে।”

এই বলে নিলাদ্র ওর ডান হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দেয়। নিলাদ্রকে হাত বাড়াতে দেখে কুশল হাসিমুখে ওর হাতের উপর নিজের ডান হাত রাখে। অতঃপর তাহির আর হুমায়রাও একই কাজ করে।
.
.
.
কিছুসময় পর নিলাদ্রের থেকে বিদায় নিয়ে ওরা তিন জন নিজ নিজ গন্তব্য স্থলে যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়ে। তাহির আর হুমায়রা গাড়িতে পাশাপাশি সিটে বসে আছে। তাহির সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে ড্রাইভিং করছে। সেইসময় হুমায়রা তাহিরের উপর শান্ত দৃষ্টি স্থির রেখে বললো….

—“তাহির…তোমার আফসোস হবে না একটুও না!”

তাহির সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই বললো….
—“আফসোস! কিসের জন্য আবার আফসোস হতে যাবে আমার?”

—“রাজবীর তো আমায় নিজের অজান্তেই সাথে নিয়ে যাবে। আর ওখানে যাওয়ার পর যখন সে দেখবে যে সে সন্ধ্যাকে নয় আমাকে উঠিয়ে এনেছে তখন রাগের বসে যদি সে আমার বড় কোনো ক্ষ*তি করে দেয় বা আমাকে মে*রে ফেলে! তখন আমার জন্য তোমার মনে কি বিন্দুমাত্র খা*রাপ লাগা কাজ করবে না! আফসোস হবে না!”

হুমায়রার এরূপ কথাগুলো শুনে অজান্তেই তাহিরের বুকটা যেনো ধ*ক করে উঠে। তাহির তৎক্ষণাৎ গাড়ির ব্রেক কষে। হুমায়রা এখনও শান্ত দৃষ্টি স্থির রেখেছে তাহিরের উপর। তাহিরে ঘাড় বাঁ*কি*য়ে হুমায়রার দৃষ্টির সাথে নিজের দৃষ্টি মিলিয়ে বললো….

—“হোটেলে থাকাকালীন সময়ে তো খুব বড় গলায় বলেছিলি যে আমাদের মাঝে যে বা যারাই বি*প*দ জেনেও সে পথে অগ্রসর হোক না কেনো তখন বাকিরা তার বা তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য সবরকম চেষ্টা করবে। তাহলে এখন আবার এমন কথা বলছিস কেন? তোর কি মনে হয় তোকে মৃ*ত্যু*র মুখে ঠে*লে দিয়ে আমরা দূরে দাঁড়িয়ে তা ইন্ঞ্জয় করবো!”

হুমায়রা তাহিরের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো….
—“যদি পরিস্থিতি আমাদের হাতের বাহিরে চলে যায়! তোমরা আমার কাছে পৌঁছাতে দে*ড়ি করে ফেলো তখন কি হবে!”

তাহির হুমায়রার কথার আর কোনো প্রতিত্তুর না করে আবারও গাড়ি চালাতে শুরু করে। তবে তাহিরের চোখ-মুখে চাপা রাগ স্পষ্ট হয়ে আছে।

(১৬৮)
নিজেদের রুমে বিছানায় মুখোমুখি বসে আছে কুশল আর তরুনিমা। কুশলের মুখে ওদের করা পুরো পরিকল্পনা শুনে তরুনিমা বললো….

—“সবই তো বুঝলাম, এমনটা হলে তো ভালোই হবে। কিন্তু কেন জানি না পুরো বিষয়টা জানার পর আমার মনটা কেমন যেনো অশান্ত বো*ধ করছে কুশল।”

—“হুমায়রার সেফটির বিষয় নিয়ে দু*শ্চি*ন্তা করছো তুমি!”

—“হুম..তা একটু হচ্ছেই। ঐ অ*মানুষ গুলো তো কারোর বড় ধরনের ক্ষ*তি করে দিতে একবারও চিন্তা করে না। হুমায়রার সাথে তো আমাদের এই প্র*তি*শো*ধ নেওয়ার বিষয়ে কোনো সংযোগ বা সম্পর্ক নেই। তবুও ও নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই এখানে যদি হুমায়রার সামান্যতমও ক্ষ*তি হয়ে যায় তাহলে কি আমরা নিজেদের ক্ষ*মা করতে পারবো কুশল!”

—“হুম সেটা তো আমিও বুঝতে পেরেছি তরুনিমা। তবে আমরা রাজবীরকে এমন কিছু করতে দিবো না ইনশাআল্লাহ।”

তরুনিমা হ*তা*শা*য় ভরপুর কন্ঠে বললো….
—“পরিস্থিতি সামলে না নেওয়া পর্যন্ত এই ভ*য়ং*কর রকম দু*শ্চি*ন্তা থেকে মুক্তি লাভ হবে না আমার।”

কুশল তরুর দু’হাত নিজের দু’হাতের মাঝে নিয়ে বললো….
—“চি*ন্তা করো না বউ, ইনশাআল্লাহ সবকিছু ভালোভাবেই সম্পন্ন হবে। আর হ্যা, সন্ধ্যাকে এইসব বিষয়ে এখন আর কিছু বলার দরকার নাই। ও খুশিমনে নিজের বিয়েটা পার করুক।”

—“ঠিক আছে, আপনি যেমন বলবেন।”

কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দেয়। পরক্ষণেই তরু বললো….
—“নিলাদ্র ভাইয়াকে একটা জিনিস সংগ্রহ করতে বলেছিলাম। উনি তো বলেছিলেন আপনার হাতে আজই আমায় দিয়ে দিবেন। আপনি কি সেই জিনিসটা এনেছেন!”

কুশল বিছানা থেকে নেমে ওয়ারড্রবের উপর থাকা ওর ব্যগ থেকে সাদা আর খয়েরী রংয়ের ২টো কাঁচের ছোট বোতল বের করে তরুর হাত দিয়ে বললো….

—“মুখে মাস্ক আর হাতে গ্লোবস পড়ার পরই এই বোতল গুলোর মুখ খুলবে। নিলাদ্র বলেছে এই ঔষধগুলো ভিষণই ক্ষ*তি*কর। এগুলা নিঃশ্বাসের সাথেও মানবশরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই খুব সাবধানে কাজটা সম্পন্ন করতে হবে তোমায় তরুনিমা।”

তরুনিমা হাসিমুখে বললো….
—“এবার দেখবেন আমার কা*মা*ল।”

#চলবে ইনশাআল্লাহ……….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৩ পর্বের ২য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৬৯)
২ দিন পর….
পুরো চৌধুরী মেনশন সন্ধ্যার বিয়ের আমেজে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। পুরো চৌধুরী মেনশন ও আশেপাশে রং-বেরংয়ের আলো ও বিভিন্ন ফুল দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। যা পুরো পরিবেশটা এক অন্যরকম সৌন্দর্যে মোড় নিয়েছে যেনো। বাগানের ফাঁকা অংশতেই বিয়ের স্টেজ তৈরি করা হয়েছে। চৌধুরীদের আত্মীয়-স্বজন, সমাজের পরিচিত অনেক সনামধন্য লোক তাদের পরিবার নিয়ে সেখানেই আনন্দে মেতে আছেন। সন্ধ্যাকে ভিষণ সুন্দর ভাবে নববধূর সাজে সাজিয়ে দেওয়ার কাজ হুমায়রা আর তরুনিমা সম্পন্ন করে। হুমায়রা শান্ত স্বরে বললো…

—“তোমরা থাকো আমি একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি।”

সন্ধ্যা নিজেকে আয়নায় দেখতে ব্যস্ত ছিলো। তরু হুমায়রার দিকে লক্ষ্য করতেই হুমায়রা চোখ ইশারা করলে তরু সন্ধ্যার পাশ থেকে সরে হুমায়রার সাথে দরজা পর্যন্ত অগ্রসর হয়। হুমায়রা ধীর স্বরে বললো…..

—“আমি গিয়ে চেইঞ্জ করে নিচ্ছি। আমাকে তো হুবহু সন্ধ্যার মতো বেশ ধারণ করতে হবে। নয়তো রাজবীরের চোখে ধু*লো দেওয়া সম্ভব হবে না। একটু পর কিছু একটা বলে তুমিও এই রুম থেকে বেরিয়ে যেও। রাজবীরকে সন্ধ্যাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ দিতে হবে আমাদের।”

—“আচ্ছা ঠিক আছে।”

অতঃপর হুরায়রা চলে যায়। তরু আবারও সন্ধ্যার পাশে এসে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে কাজলের ছোট্ট কৌটাটা নিয়ে নিজের বাম হাতে কনিষ্ঠা আঙুলে সামান্য কাজল নিয়ে সন্ধ্যার কানের পিছনে ছুঁইয়ে দিয়ে স্মিত হাসি দিয়ে বললো….

—“আজ মা বেঁচে থাকলে হয়তো এভাবেই তোমার নজর কা*টি*য়ে দিতেন।”

সন্ধ্যা ঘাড় বাঁ*কিয়ে তরুর দিকে তাকিয়ে একহাতে ওর এক হাত ধরে স্মিত হাসি দিয়ে বললো….

—“শুনেছিলাম বড় ভাইয়ের স্ত্রী নিজের মা সমতুল্য সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। আমার জন্মদাত্রী মা বেঁচে নেই তো কি হয়েছে তুমি আমার চোখে আমার ২য় মা হয়ে থাকবে সবসময় মেজো ভাবী। তোমার এই নি*খাঁ*দ ভালোবাসা, স্নেহ থেকে আমাকে কখনও ব*ন্ঞ্চি*ত করো না।”

তরুনিমা হাসিমুখে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে আর সন্ধ্যাও তরুনিমাকে জড়িয়ে ধরে। সেইসময় সন্ধ্যার রুমের দরজা থেকে একজন বাচ্চা ছেলের কন্ঠস্বর ভেসে আসলে ওরা দু’জনেই সেদিকে লক্ষ্য করে। তরুনিমা বাচ্চাটির কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে হাঁটু ভাজ করে বসে বললো….

—“তুমি কি তোমার মামনি-বাবাইকে খুঁজছো সোনা!”

বাচ্চাটি মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিলো। তরুনিমা আবারও বললো….

—“তাহলে এখানে কি করছো!”

—“মিত্তি আন্তি! আমাকে একতু আগে একতা আন্তেল এই কাগুজতা দিয়ে বললো তোমাকে দিতে তাহলে উনি আমাকে অনেকগুলো চকলেত দিবেন৷ তুমি কাগুজতা নাও না মিত্তি আন্তি। আমি আন্তেলের কাছে থেকে চকলেত নিতে চাই। মামনি তো আমাকে একতুও চকলেত খেতে দেয় না। শুধু বলে দাঁতে পোকা হবে। আমার ভালোই লাগে না।”

বাচ্চাটির আধ*ভা*ঙ্গা কথাগুলো শুনে তরুনিমা কিছুটা অবাক হয়। পরক্ষণেই তরুনিমা বাচ্চাটির হাত থেকে কাগজটা নিয়ে আবারও প্রশ্ন করতে নিবে কিন্তু বাচ্চাটি তা করার সুযোগ না দিয়ে এক ছুটে বাড়ির বাহিরে চলে যায়। তরু উঠে দাঁড়িয়ে কাগজরের ভাঁজ খুলতেই দেখে সেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘একটু বাহিরে এসো তোমার সাথে কিছু কথা বলার আছে’ (কুশল)। তরু চোখ ছোট ছোট করে লেখাগুলো আবারও দেখে কপালে কয়েকটা ভাঁ*জ ফেলে মনে মনে বললো….

—“আমার ফোন তো আমার হাতেই আছে। উনার যদি একান্তই আমার সাথে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার থাকতো তাহলে উনি আমাকে একটা কল বা মেসেজ করতে পারতেন বা উনি সরাসরি এখানে এসেও আমাকে ডাকতে পারতেন! কিন্তু একজন অবুঝ বাচ্চার হাত দিয়ে চিরকুট পাঠানোর মতো কাজ উনি করবেন বলে তো আমার মনে হচ্ছে না। তারমানে কি আমাকে সন্ধ্যার কাছে থেকে সরানোর জন্য এটা রাজবীরেরই কোনো চা*ল? হুম এটাই হবে হয়তো। হা*রা*ম*খো*র ম*রা*র জন্য অতিরিক্ত পাখনা নাড়াতে শুরু করেছে। আরে ব্যডা আমি নিজেই একটু পর এখান থেকে চলে গিয়ে তোর কাজ সহজ করে দিতাম। যাই হোক তুই বরং আমার কাজটা সহজ করে দিলি। সন্ধ্যাকে কি অজুহাত দেখিয়ে বাহিরে যেতাম তা তো ঠিকই করতে পারছিলাম না। এখন ভালো একটা অজুহাত হাতে পেলাম।”

এই বলে তরুনিমা ওর ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা স্পষ্ট রেখে সন্ধ্যাকে কুশলের চিরকুট পাঠানোর বিষয়টা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরুনিমা সোজা বাহিরে চলে আসে। তরুনিমাকে বাহিরে চলে যেতে দেখে রাজবীর সোফার আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসে। নিজের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে চারপাশটা একপলকে দেখে নিয়ে বললো….

—“পুরো বাড়ি এখন ফাঁকা। সবাই বাগানের ঐখানেই ব্যস্ত। আর এইসময় তো এদিকে কেও আসবে বলেও মনে হয় না। তবুও রি*স্ক নেওয়া যাবে না কখনও। সন্ধ্যাকে উঠিয়ে পিছন দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যেতে হবে আমায়। যা করার দ্রুত করতে হবে।”

এই বলে রাজবীর সন্ধ্যার রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রুমের সামনে এসে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে লো*লু*ভ দৃষ্টি নি*ক্ষে*প করে নিজের জিহ্বার অগ্রাংশ বের করে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বা*জে ই*ঙ্গি*ত দেয়। কিন্তু সন্ধ্যা নিজেকে নিয়ে এতোটাই ব্য*স্ত ছিলো যে সে রাজবীরের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারে না। পরক্ষণেই রাজবীর ওর প্যন্টের পকেট থেকে রুমাল আর ক্লোরোফেম এর বোতলটা বের করে রুমালের উপর কিছুটা স্প্রে করে নিয়ে ধীরপায়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করে সন্ধ্যার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা আয়নায় রাজবীরের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই রাজবীর ওর চেহারায় পৈ*শা*চি*ক হাসি ফুটিয়ে হাতে থাকা রুমালটা সন্ধ্যার নাক-মুখের উপর চে*পে ধরে। কয়েকসেকেন্ড সন্ধ্যা নিজেকে রাজবীরের ক*ব*ল থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালালেও পরপরই সে পুরোপুরি ভাবে সে*ন্স লে*স হয়ে যায়। সন্ধ্যা সেন্স লে*স হয়ে গিয়েছে বুঝতে পেরে রাজবীর সন্ধ্যাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বাঁ*কা হেসে বললো…..

—“তুলোর মতো নরম আর মাখনের মতো সুস্বাদু এই শরীরটা আজ আমার ভো*গে*র বস্তু হবে ভাবতেই কতো আনন্দ হচ্ছে।”

এই বলে রাজবীর সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। সন্ধ্যাকে নিয়ে ওর রুম থেকে বেড়িয়ে আবারও এপাশ ওপাশে চোখ বুলিয়ে কোনো মানবের চিহ্ন দেখতে না পেয়ে পিছন সাইডের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।
.
.
.
চৌধুরী মেনশনের পিছন পার্শে দরজার পাশেই রাজবীর পূর্ব থেকে ওর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো যেনো সন্ধ্যাকে নিয়ে আসা মাত্রই সে এখান থেকে দ্রুত বেড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু রাজবীরের এই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে নিলাদ্র এসে গাড়ির পিছন দিকের একটা টায়ার পামচার করে দিয়ে গাড়ির ডিকি থেকে এক্সট্রা টায়ার দুটো নিয়ে গ্যরেজের ভিতর রেখে দিয়ে অন্যপাশে আড়াল হয়ে দাঁড়ায়। যেখান থেকে রাজবীরের সকল কাজ নিলাদ্র স্পষ্ট ভাবে লক্ষ্য করতে পারবে। সেইসময় রাজবীর সন্ধ্যাকে পাঁজাকোলে করে নিয়েই গাড়ির কাছে আসে। রাজবীরের কোলে সন্ধ্যাকে অচেতন হয়ে থাকতে দেখে নিলাদ্রের বুক মো*চ*ড় দিয়ে উঠার পাশাপাশি ওর ভালোবাসার মানুষকে একজন নর*পি*শা*চ স্পর্শ করেছে দেখে রাগে শরীর জ্ব*ল*তে শুরু করে। তবুও নিলাদ্র নিজেকে ও নিজের রাগকে সংযত রাখার যথাযথ চেষ্টা করে। নিলাদ্রের পাশেই হুমায়রা হুবহু সন্ধ্যার মতো বেশ ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। হুমায়রা আড়ালে থেকেই একপলক নিজের আশেপাশে লক্ষ্য করে তাহিরকে খুঁজে। কিন্তু সে তাহিরকে দেখতে পায় না। পরক্ষণেই হুমায়রা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রাজবীর গাড়ির দরজা খুলে সন্ধ্যাকে পিছন সিটে শুইয়ে দিয়ে নিজে সামনের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করে কিন্তু গাড়ি সামনের দিকে অগ্রসর না হওয়ায় সে বুঝতে পারে গাড়ির কোনো সমস্যা হয়েছে। রাজবীর রাগ ও অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই দেখে পিছনের একটা টায়ার পামচার হয়ে গিয়েছে। রাজবীর গাড়ির চাকাতে একটা লা*থি প্রয়োগ করে বললো….

—“সি*ট এখুনি এমনটা হতে হলো! এখন তো আর পার্কিং সাইডে গিয়ে আরেকটা গাড়ি নিয়ে আসা সম্ভব না আমার পক্ষে। যতো দ্রুত সম্ভব এই গাড়িরই টায়ারটা পরিবর্তন করতে হবে আমায়।”

এই বলে রাজবীর গাড়ির ডিকি খুলতেই দেখে সেখানে কোনো এক্সট্রা চাকা রাখা নেই। এমনটা দেখে রাজবীরের বি*র*ক্তি যেনো আকাশ ছুঁ*ই ছুঁ*ই হয়ে যায়। রাজবীর অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে গ্যরেজের দিকে অগ্রসর হয়। রাজবীরকে চলে যেতে দেখা মাত্র নিলাদ্র আর হুমায়রা দ্রুত কদমে আড়াল থেকে বেড়িয়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়। নিলাদ্র গাড়ির দরজা খুলে সন্ধ্যাকে পাঁজাকোলে নিয়ে বের করে হুমায়রাকে ‘বেস্ট অফ লাক’ বলে পিছন সাইডের দরজা দিয়েই বাড়ির ভিতরে চলে যায়। হুমায়রা শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ির ভিতর সন্ধ্যার মতো করে শুয়ে পড়ে মুখের উপর ঘোমটা টেনে দেয়। হুমায়রা শুয়ে পড়ার পরপরই রাজবীর টায়ার নিয়ে গাড়ির কাছে এসে দ্রুত পামচার হয়ে যাওয়া টায়ারটা পরিবর্তন করে নতুন টায়ার লাগিয়ে দিয়ে ঐ টায়ারটা ডিকির ভিতরে রেখে ডিকি বন্ধ করে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে আবারও। অতঃপর ঘাড় বাঁ*কিয়ে সন্ধ্যার বেশে হুমায়রাকে একপলক দেখে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে চৌধুরী মেনশন থেকে বেড়িয়ে পরে। হুমায়রা বুঝতে পারে, রাজবীর বুঝতে পারে নি যে সে সন্ধ্যার জায়গায় হুমায়রাকে নিজের সাথে নিয়ে যাচ্ছে। রাজবীরের গাড়ি পিছন সাইডের দরজা দিয়ে বাহিরে বের হতেই তাহির ওর গাড়ি স্টার্ট করে। তাহির আগে থেকেই বাড়ির বাহিরে গাড়ি নিয়ে তৈরি ছিলো। তাহির রাজবীরের অনেকটা পিছন থেকে ওকে অনুসরণ করতে শুরু করে। গাড়ি চালাতে চালাতে তাহির কুশলকে মেসেজ দেয় ‘আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে, আমি ড্রাইভ করছি। রাজবীরকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি।’

(১৭০)
সন্ধ্যাকে কোলে নেওয়া অবস্থাতেই নিলাদ্র সন্ধ্যার রুমে প্রবেশ করে ওকে ওর বিছানায় শুইয়ে দেয়। অতঃপর বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে সন্ধ্যার চোখে-মুখে পানির হালকা ছিঁ*টে দেয়। সন্ধ্যা চোখ-মুখ কুঁ*চ*কে ফেলে। ওর সেন্স ফিরে আসে। সন্ধ্যা পিট পিট করে চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে নিজের ঘরে আবিষ্কার করে আর নিজের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ নিলাদ্রকে বসে থাকতে দেখে শোয়াবস্থা থেকে উঠে নিলাদ্রের বুকে হা*ম*লে পড়ে ওকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। নিলাদ্রও সন্ধ্যাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। সন্ধ্যা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো…..

—“ঐ অ*মানুষটা আমার রুমে এসেছিলো তারপর আমার মুখের উপর কি যেনো চে*পে ধরলো আমার আর কিছু মনে নেই। নিলাদ্র আমি ঠিক আছি তো! ঐ অ*মাণুষটা আমাকে ওর বা*জে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে পারে নি তো বলো!”

নিলাদ্র সন্ধ্যাকে শান্ত করার চেষ্টা নিয়ে বললো….
—“শান্ত হও সন্ধ্যা..তুমি সম্পূর্ণ ভাবে ঠিক আছো, সেইফ আছো। ঐ জা*নো..র তোমাকে বা*জে স্পর্শ করতে পারে নি। আমি বেঁচে থাকাকালীন দুনিয়ার কোনো খা*রা*প শ*ক্তি তোমার সংস্পর্শে আসতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। আমি এমনটা হতে দিবো না। একটু পর আমাদের বিবাহকার্য সম্পন্ন হবে। আমরা সারাজীবনের জন্য হালাল সম্পর্কে আবব্ধ হবো। আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা লাভ করবে। এটা ভেবে খুশি হও। মন ও মস্তিষ্ক থেকে সকল খা*রা*প লাগা, দু*শ্চি*ন্তা মুছে ফেলো হবু বউ। তোমার মুখশ্রী জুড়ে হাস্যোজ্জ্বল ভাব ফুটে থাকবে আর এভাবেই তোমাকে আমি আমার করে নিতে চাই প্রিয়তমা।”

নিলাদ্রের এরূপ কথাগুলো শুনে সন্ধ্যা শান্ত হয়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…………..

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৩ পর্বের ৩য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৭১)
একমাত্র বোনের বিয়ে কোনোদিক থেকে যেনো কোনো ত্রু*টি না থাকে তাই কুশল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিটি বিষয়ের প্রতি নজর রাখছে। সেইসময় প্যন্টের পকেটে রাখা ওর ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলে কুশল পকেট থেকে ফোনটা বের করে তাহিরের পাঠানো মেসেজটা দেখে। ওর ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। পরপরই কুশল তাহিরের মেসেজের প্রতিত্তুর পাঠিয়ে দেয় ‘পরিস্থিতি সামান্যতমও যদি বে*গ*তি*ক হচ্ছে বুঝো তাহলে আমাকে কল করো আমি সেখানে চলে যাবো।’ সেইসময় তরুনিমা কুশলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত ধীর স্বরে বললো…

—“কুশল…আমার মনকে আমি কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না। কেনো যেনো মনে হচ্ছে আজ খা*রা*প কিছু হতে চলেছে। আপনার তাহিরের সাথে যাওয়া উচিত ছিলো।”

কুশল তরুর দিকে মাথাটা কিছুটা ঝুঁকিয়ে বললো…
—“আমি তো যাওয়ার কথা বলেছিলাম তাহিরকে বেশ কয়েকবার কিন্তু ওরা দু’জনেই আমাকে বারবার বললো ওরা রাজবীরের বিষয়টা হেন্ডেল করে নিতে পারবে। আর এতো শ*ত্রু*র মাঝে তোমাদের একলা ফেলে আমার ওদের সাথে যাওয়া নাকি উচিত হবে না। এমনিই ছেলে পক্ষ থেকে তার বড় ভাই-ভাবী স*ম*স্যা*র কথা বলে চলে গিয়েছে এই বিষয়টা জানার পর অনেকেই ভালো চোখে দেখছে না এর ভিতর আমিও যদি না থাকি তাহলে শ*ত্রু পক্ষরা স*ন্দে*হ করতে পারে। তবুও আমি তাহিরকে বলেছি পরিস্থিতি যদি একটুও বে*গ*তি*ক হচ্ছে বা হতে পারে বুঝে তাহলে আমাকে যেনো অবশ্যই জানায়। কাজটা গো*প*নে করতে হচ্ছে তাই আমি কোনো গার্ডদেরও সে*ট করতে পারছি না। আজ যদি সাদিক বেঁচে থাকলো তাহলে ভরসা করার মতো একটা শক্ত হাত পেতাম। তবুও আমাদের সাহায্য করতে গিয়ে ওদের দু’জনের সামান্যতম ক্ষ*তি ও আমি মানতে পারবো না।”

কুশলের কথাগুলো শুনে তরু একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো মাত্র। সেইসময় সাবরিনা তরু-কুশলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বললেন….

—“মেজো বউমা…তুমি আর বড় বউমা ভিতরে গিয়ে সন্ধ্যাকে নিয়ে এসো যাও৷ শুভ কাজ যতো তাড়াতাড়ি সম্পণ্ন করা যায় ততোই ভালো।”

তরুনিমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে অনন্যার সাথে বাড়ির ভিতরে যায় সন্ধ্যাকে আনতে। রিজভী ওনার পরিচিত কিছু বন্ধুর সাথে একপার্শে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। সেইসময় কামিনী রিজভীর কাছে গিয়ে তার কোর্টের হাতা ধরে টানতে টানতে অন্যপার্শে এনে দাঁড় করায়। রিজভী কিছুটা বি*র*ক্তি নিয়ে বললেন…

—“বয়স হয়ে গিয়েছে তবুও সামান্যতম কমনসেন্স তোমার হলো না। এতোগুলো মানুষের ভিতর থেকে কোর্টের হাতা ধরে টানতে টানতে কেও নিয়ে আসে!”

কামিনী ধ*ম*কে*র স্বরে বললেন…..
—“আরে রাখো তোমার কমনসেন্স। আমি ম*র*ছি আমার জ্বা*লা*য় উনি এসেছে আমার দো*ষ বের করতে। বলি তোমার ছেলে যে সন্ধ্যাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলো বিয়ের আগেই তো সেইকাজে কি সে সফল হয়েছে! তোমার ছেলেকে তো অনেকসময় হলো কোথাও দেখছি না। ফোন করেছিলাম কোনো রেসপন্স করে নি।”

ওদের কথপোকথন এর মাঝেই তরুনিমা আর অনন্যা সন্ধ্যাকে নিয়ে বিয়ের জন্য সাজানো স্টেজের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। রিজভী আর কামিনী দু’জনেই সেদিকে লক্ষ্য করে। রিজভী বললেন…..

—“তোমার অ*কর্মঠ ছেলের শুধু রাগ আর চাপার জোড়টাই আছে ষোলো আনা। বুদ্ধি আর কাজের দিক থেকে পুরো জিড়ো। দেখছোই তো সন্ধ্যা দিব্বি হাসি হাসি মুখ নিয়ে বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়েছে। এরমানে এটাই দাঁড়াচ্ছে তোমার ছেলে ওর কাজে ব্য*র্থ হয়েছে। আর সেই রাগেই দেখো হয়তো কোনো ক্লাবে গিয়ে নেশা-ভা*ন খাচ্ছে। তাই ফোন দিয়েও তাকে পাচ্ছো না তুমি।”

কামিনী রাগী স্বরে বললেন…
—“একদম আমার ছেলেকে অ*কর্মঠ বলবে না তুমি। আর কেমন বাবা তুমি! ছেলে তোমার কাছে একটা ছোট্ট আবদার করলো আর তুমি ওকে সাহায্য করতে পারলে না! শ*র*ম তো তোমার নিজের করা উচিত। তুমি যদি ছেলেটাকে সন্ধ্যাকে উঠানোর কাজে সাহায্য করতে তাহলে আমার ছেলেটা কতোটা খুশি হতো। অ*কর্মঠ তো তুমি নিজে। নিজের মেজো ভাই-ভাবীর পায়ের তলা চে*টে খেয়েই জীবনের তিনভাগ সময় পার করে দিলে এখন নিজের একমাত্র ছেলের মনও রাখতে পারছো না।”

এই বলে কামিনী ঘনঘন নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে স্থান ত্যগ করলেন। রিজভী সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে রাগে শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললেন…..

—“হেসে নে হেসে নে, তোর আর তোর ভাইয়ের অবস্থাও তোদের বাবা-মায়ের মতো ক*রু*ণ করবো। তোর জন্য আমাকে এতোগুলো অ*প*মান মূলক কথা শুনতে হলো। এর শা*স্তি স্বরূপ খুব শীঘ্রই তোকে আমার ছেলের ভো*গে*র বস্তু বানিয়ে দিবো। আর তোর ভাইয়ের থেকে সব সম্পত্তি হা*তি*য়ে নিয়ে এই পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরের জন্য ওর অস্তিত্ত্ব মুছে ফেলবো।”

(১৭২)
তাহির রাজবীরের গাড়ি থেকে ২০ফিট দূরত্ব বজায় রেখে ওকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। তাহির লক্ষ্য করে রাজবীর পিচঘালা রাস্তার পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া রাস্তা দিয়ে জঙ্গলের ভিতরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাহির বুঝতে পারে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে আর খুব বেশিসময় লাগবে না। তাহির কুশলকে মেসেজ দিয়ে বিষয়টা জানায়। অতঃপর তাহিরও সেই মাটির রাস্তা দিয়ে নেমে জঙ্গলের ভিতরে যেতে শুরু করে। কিছুটা পথ অগ্রসর হতেই হঠাৎ একটা জং*লী প্রাণী তাহিরের গাড়ির সামনে এসে পড়লে তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে পাশে থাকা গাছের সাথে তাহিরের গাড়িটা ধাক্কা খায়। সিট বেল্ট থাকা স্বত্তেও গাড়ির স্টিয়ারিং সাথে তাহিরের মাথা লেগে যাওয়ায় ঐ স্থানেই সে সেন্স লে*স হয়ে যায়।

(১৭৩)
সকল নিয়ম কানুন মেনে ইসলামিক ও আইনত দুইভাবেই নিলাদ্র আর সন্ধ্যার বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। ওদের দু’জনের মুখেই পরিতৃপ্তির হাসির রেখা ফুটে আছে। বিবাহকার্য সম্পন্ন হওয়ার পরপরই সকলেই খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে। এরমাঝেই সন্ধ্যার বিদায় বেলার সময় হয়ে যায়। সন্ধ্যা না চাইতেও ওর মায়ের খু*নি*দের থেকে বিদায় নেয়। ওদের থেকে বিদায় নেওয়ার সময় সন্ধ্যার চোখে-মুখে বিন্দুমাত্র খারাপ লাগার ছাপ ফুটে উঠে নি। সন্ধ্যা কুশলের সামনে এসে দাঁড়াতেই ওর সব খা*রা*প লাগা দলা পেঁ*কে এসে দু’চোখে ভরিয়ে দেয়। সন্ধ্যা দু’হাতে কুশলকে জড়িয়ে ধরে হু হু কেঁ*দে দেয়। কুশল ওর নিজের খা*রাপ লাগা গুলোকে নিজের ভিতরেই দ*মি*য়ে রেখে সন্ধ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সন্ধ্যা অনেক ক*ষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তরুনিমাকে খুঁজে। তরুনিমাকে দেখতে না পেয়ে সন্ধ্যা বললো…..

—“মেজো ভাইয়া! মেজো ভাবী কোথায়? তাঁকে দেখছি না যে!”

কুশল কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই ওরা সকলে লক্ষ্য করে তরুনিমা ওর শ্বশুড় মশাই রায়হানুল চৌধুরীকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ওদের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। কুশল সন্ধ্যার একহাত শক্ত করে ধরে। সন্ধ্যা কুশলের চোখের দিকে তাকায়। কুশলের চোখের ভাষা সন্ধ্যার বুঝতে বাকি থাকে না। সন্ধ্যা এটাও বুঝতে পারে এইসময় ওর নিজের আবেককে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তবুও সকলের সামনে নিজের বাবাকে উপস্থিত হতে দেখেও তাঁকে বাবা বলে সম্বোধন করতে না পারার যে নি*ষে*ধা*জ্ঞা তা এই বিদায় বেলায় সন্ধ্যার ভিতরটা আরো ভে*ঙে দিচ্ছে যেনো। কুশল সন্ধ্যার হাত ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যা হা*হা*কার ভরা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে রায়হানুলের কাছে এগিয়ে যায়। সন্ধ্যা ওনার সামনে হাঁটু ভাজ করে বসে ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে কাঁ*পা স্বরে বললো…..

—“ব-বড়-বা-বাবা…দেখো তোমার মেয়ে কতো বড় হয়ে গিয়েছে! আজ তার বিয়ে হয়ে গেলো রাজপুত্রের মতো একজন পুরুষের সাথে। আমাদের মাথায় হাত রেখে দোয়া দিবে না তুমি! আর কতো কাল এভাবে পাথর মূ*র্তি*র মতো নিরব হয়ে থাকবে তুমি বড়বাবা! আমার চোখে চোখ রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া দাও না বড় বাবা। তোমার দোয়া না পেলে আমাদের বৈবাহিক জীবনটা যে অসম্পূর্ণ হয়ে থাকবে।”

সন্ধ্যার বলা এরূপ কথাগুলো শুনে কামিনী আড়ালে বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে মুখ বাঁ*কি*য়ে বললেন…..

—“ঢং দেখলে বাঁ*চি না, যত্তোসব আজাইরা নাটক।”

কুশল নিলাদ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে একহাত রেখে শান্ত স্বরে বললো…
—“সৌহার্দ্য! আমার বোনটাকে সামলাও। ওকে তোমাদের সাথে নিয়ে চলে যাও এখান থেকে যতো দ্রুত সম্ভব। ও যতো সময় এখানে থাকবে ততোই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বে।”

নিলাদ্র মাথা নাড়িয়ে কুশলকে হ্যা সূচক জবাব দিয়ে সন্ধ্যার কাছে গিয়ে ওর দু’কাঁধে দু’হাত রেখে বসাবস্থা থেকে দাঁড় করায়। অতঃপর সন্ধ্যাকে বুঝিয়ে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে নিলাদ্র নিজেও ওর পাশে বসে। একই গাড়িতে তাহিরের মা-বাবাও বসেছেন। পরক্ষণেই ওদের গাড়ি চৌধুরী বাড়ির মূল গেইট পেড়িয়ে ওদের চোখের আড়াল হয়ে যায়। সন্ধ্যা চলে যেতেই মেহোমানরাও সকলে এক এক করে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে চলে যেতে শুরু করে। সকলে চলে যেতেই চৌধুরী বাড়ির সদস্যরা বাড়ির ভিতরে চলে যায়। বাগানের ঐ অংশে কুশল আর তরুনিমা একাই দাঁড়িয়ে আছে। কুশল ওর প্যন্টের পকেট থেকে ফোন বের করে তাহিরের ৩০ মিনিট আগে পাঠানো মেসেজটা দেখে শান্ত স্বরে বললো…

—“এতোক্ষণে তো কাজ সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা।”

তরুনিমা বললো….
—“কাজ সম্পন্ন হলে ও তো আপনাকে জানিয়ে দিতো! একটা কাজ করুন আপনি নিজেই বরং তাহিরকে একটা কল করুন।”

কুশল তরুর কথানুযায়ী তাহিরকে কল করে। ফোন বাজে ঠিকই কিন্তু তাহির কল রিসিভ করে না। কুশল আরো কয়েকবার কল দেয় তাহিরকে। প্রতিবারই ফোন বাজতে বাজতে আপনা-আপনি কে*টে যায়। তাহিরের কোণো রেসপন্স না পেয়ে কুশল-তরু দু’জনের মুখশ্রী জুড়েই চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়। তরু চি*ন্তি*ত স্বরে বললো….

—“আমার মনে হচ্ছে তাহির কোনো বি*প*দে ফেঁ*সে গিয়েছে বা ঐ অ*মানুষটা হয়তো বুঝতে পেরেছে তাহির ওকে অনুসরণ করছে। তাই হয়তো তাহির আর আপনার ফোন রিসিভ করতে পারছে না। খুব দেড়ি হয়ে যাওয়ার পূর্বেই আমাদের এক্ষুণি ঐ পোড়াবাড়ির ঠিকানায় চলে যাওয়া উচিত কুশল।”

তরুর কথাগুলো শুনে কুশলের মনও খ*চ-খ*চ করতে শুরু করে। তাই ওরা আর একমুহূর্ত সময় ন*ষ্ট না করে গাড়ি নিয়ে পোড়াবাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।

(১৭৪)
পোড়াবাড়ির সামনে এসে গাড়ির ব্রেক কষে রাজবীর। ঘাড় ঘুরিয়ে সন্ধ্যার বেশে হুমায়রার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে পৈ*শা*চি*ক হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো…..

—“অবশেষে তোমাকে নিয়ে নি*র্বি*ঘ্নে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হলাম। এবার তোমাকে পুরোপুরি ভাবে নিজের করে পাওয়ার পালা।”

এই বলে রাজবীর ওর সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে পিছন দরজা খুলে হুমায়রাকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। রাজবীরের হাতের স্পর্শে হুমায়রার সর্বশরীর যেনো ঘৃ*ণা*য় রিরি করে উঠছে। হুমায়রা মনে মনে বললো….

—“তাহির…তুমি কোথায়! পরিকল্পনা অনুযায়ী এতোক্ষণে তো তোমার এখানে পৌঁছে যাওয়ার কথা। তুমি কি এখনও পৌঁছাতে পারলে না! তবে কি আজ ভাগ্য আমাদের সহায় হবে না! এই জা*নো…রের শি*কা*র হতে হবে আমায়! হে আল্লাহ আপনি আমাদের সহায় হোন।”

#চলবে ইনশাআল্লাহ……….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৩ পর্বের ৪র্থ অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৭৫)
যতোটা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো সম্ভব কুশল ততোটাই দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে পোড়া বাড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তরুনিমা দু’হাত ভাঁজ করে চোখ বন্ধ করে আল্লাহর কাছে হুমায়রা আর তাহিরের সুস্থতা, নিরাপত্তা কামনা করে প্রার্থনা করছে।
.
.
.
রাজবীর হুমায়রাকে কোলে নিয়ে পোড়াবাড়ির ভিতরে একটা রুমে প্রবেশ করে মেঝের পর ধ*প করে হুমায়রাকে ফে*লে দেয়। আকস্মিক রাজবীরের এমন কাজে এতোটা উঁচু থেকে নিচে প*ড়ে গিয়ে সজ্ঞানে থাকা হুমায়রা কমোরে-পায়ে অত্যাধিক ব্য*থা অনুভব হয়। হুমায়রা ঘোমটার আড়ালে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে ধরে আ*র্ত*না*দে*র শব্দ আটকানোর আ*প্রাণ চেষ্টা করে। পরক্ষণেই রাজবীর হুমায়রার পাশে হাঁটু ভাজ করে বসে ওর দিকে মাথাটা কিছুটা নিচু করে ঘোমটার উপর থেকেই কমোর থেকে গলা পর্যন্ত এক নিঃশ্বাসে গন্ধ শুঁ*কে নিয়ে মাথা তুলে ঠোঁটে পৈ*শা*চি*ক হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো….

—“অবিবাহিত মেয়েদের শরীর থেকে আলাদা একটা গন্ধ ভেসে আসে আমার নাকে যা তার শরীর ভো*গ করার জন্য আমার নে*শা*র মাত্রা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তোমার শরীর থেকেও তেমনই একটা নে*শা*ক্ত গ*ন্ধ পাচ্ছি আমি। এই গ*ন্ধেই একটু একটু করে মা*তা*ল হয়ে যাচ্ছি আমি।”

রাজবীরের বলা প্রতিটি বা*জে শব্দ হুমায়রার সর্বশরীরে ঘৃ*ণা*র তী*রের মতো বি*দ্ধ হয়ে ক্ষ*ত-বি*ক্ষ*ত করে দিচ্ছে যেনো। হুমায়রা ওর দু’চোখ দিয়ে নিরবে নোনাজল ফেলতে ফেলতে মনে মনে বললো……

—“হে আল্লাহ…এই ন*র*পি*শা*চে*র লা*ল*সা*র শিকার হওয়ার পূর্বে আপনি আমার মৃ*ত্যু কবুল করুন। তাহির…..তুমি কোথায়! আমার যে তোমায় খুব বেশি প্রয়োজন। তাহির….!”

পরক্ষণেই রাজবীর এক টানে হুমায়রার মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলে চোখ বন্ধ করে নাকের সাথে ওড়নাটা ঠেকিয়ে তার গন্ধ শুঁ*কে। হুমায়রা ওর চোখ-মুখ খিঁ*চে বন্ধ করে রেখেছে। রাজবীর চোখ মেলে তাকাতেই নিজের সামনে সন্ধ্যার জায়গায় হুমায়রাকে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় যেনো। রাজবীর বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দু’চোখ বন্ধ করে একহাত বুকের কাছে ভাঁ*জ করে আরেকহাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে কপালের উপর কয়েকবার আলতো ভাবে বা*রি দিয়ে অমিলের হিসেবটা মিলানোর চেষ্টা করে। হুমায়রা চোখ মেলে সামনে তাকাতেই রাজবীরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। হুমায়রা একনজরে ওর চারপাশ লক্ষ্য করে চারদেওয়ালের উপর সে আর ঐ নর*পি*শা*চ ছাড়া ২য় কোনো প্রাণীর চি*হ্ন সে খুঁজে পায় না। পরক্ষণেই হুমায়রার দৃষ্টি সেইরুমেরই এক কোণায় গিয়ে ঠেকে। সেখানে ময়লায় জ*র্জ*রি*ত মেয়েদের কিছু পোশাক পরে আছে। হুমায়রার স্মরণ হয় রাজবীর এর আগেও আরো অনেক মেয়েকে এখানে উঠিয়ে এনে নিজের লা*ল*সা*র আ*গু*নে তাদের জ্বা*লি*য়ে পু*ড়ি*য়ে শে*ষ করে দিয়েছে। এই পোশাকগুলো সেই অসহায় মেয়েগুলোরই। হুমায়রার ভিতরে এখন ভ*য় কাজ করতে শুরু করে। রাজবীর চোখ মেলে হুমায়রার উপর নিজের রাগী দৃষ্টি স্থির করে। হুমায়রা বসাঅবস্থাতেই পিছনের দিকে পিছিয়ে যেতে শুরু করে। রাজবীর দ্রুত কদমে হুমায়রার কাছে এগিয়ে গিয়ে হাটু ভাঁ*জ করে বসে একহাতে ওর চো*য়া*ল শক্ত ভাবে চে*পে ধরে হি*স*হি*সি*য়ে বললো……

—“আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি সন্ধ্যাকেই সেন্স লে*স করে উঠিয়ে গাড়িতে শুইয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওর জায়গায় তুমি আসলে কি করে! তারমানে কি আমার সন্ধ্যাকে উঠিয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা সম্পর্কে তুমি আগে থেকেই অবগত ছিলে! কিন্তু….কিন্তু….কিন্তু….তোমার একার পক্ষে তো এতো বড় কাজ করা সম্ভব না। তোমার সাথে আরো কেও না কেও সংযুক্ত অবশ্যই আছে। কে সে? তোমার স্বামী? নাকি চৌধুরী বাড়ির প্রধান আকর্ষণ রওনাক আজমাইন কুশল চৌধুরী স্বয়ং যুক্ত আছেন এই পরিকল্পনায়! নাকি ওরা সবাই যুক্ত আছে! ওদের কি আমাকে অনুসরণ করে এখানে আসার কথা! নাকি তোমার শরীরে কোনো জিপিএস সেট করা আছে যেটার সাহায্য ওরা আমার কাছে পৌঁছাতে পারবে! কোনটা কোনটা? বলো কোনটা?”

এই বলে রাজবীর উ*ন্মা*দে*র মতো হুমায়রার শরীরে হা*তা-হা*তি করতে শুরু করে। রাজবীরের প্রতিটি স্পর্শে হুমায়রার ঘৃ*ণা বোধ হচ্ছে। দু’চোখ ফে*টে কান্নারা বেড়িয়ে আসছে। হুমায়রা ওর হাত দিয়ে রাজবীরকে বারং বার বাঁ*ধা প্রয়োগ করছে। কিন্তু রাজবীরের পুরুষালী শক্তির সামনে হুমায়রার এসব বাঁধা তু*চ্ছ বলেই গন্য করা যায়। পরক্ষণেই রাজবীর হুমায়রার মাথার পিছনের অংশের চুলগুলো মু*ষ্টি*ব*দ্ধ করে ধরে ওকে বসা অবস্থাতেই টে*নে-হিঁ*চ*ড়ে দেওয়ালের কাছে এনে দেওয়ালের সাথে ওর মাথা পর পর ৩বার জোড়ে জোড়ে বা*রি দিয়ে দেওয়ালের সাথে ওর মুখের একপাশ চে*পে ধরে হি*স*হি*সি*য়ে বললো….

—“আমার সব আনন্দ মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিস তোরা। এখন আমার হিং*স্র রূপের শিকার তোকে হতেই হবে। রাজবীর চৌধুরী কিছু চেয়েছে আর তা পায় নি এমনটা কখনও হয় নি। কিন্তু আজ এমনটা হলো। এর জন্য তোরা দায়ী। তুই আর তোর সাথে সংযুক্ত সবগুলোর পরিণাম আমি খুব খুব খা*রা*প বানিয়ে ছাড়বো।”

এতো জোরে মাথায় আ*ঘা*ত পাওয়ায় হুমায়রার মাথা ফেঁ*টে অ*ঝো*র ধারায় র*ক্ত ঝরতে শুরু করেছে। চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে। এর ভিতরেও রাজবীরের শক্ত হাতে হুমায়রার চুলগুলো পেঁ*চি*য়ে ধরে মাথা ঝাঁ*কা*তে ঝাঁ*কা*তে কথা বলায় ওর প্রা*ন*টা বুক চি*ড়ে বেড়িয়ে আসার মতো ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণা অনুভব হচ্ছে। পরক্ষণেই রাজবীর হুমায়রার চুলগুলো ছেড়ে দিতেই সে মেঝের উপর লু*টি*য়ে পড়ে। রাজবীর ওর পা দিয়ে লা*থি প্রয়োগ করে হুমায়রাকে ঘুরিয়ে চিত পার্শে শুইয়ে দেয়। হুমায়রার সম্পূর্ণ মুখ তাজা লাল র*ক্তে ভিজে গিয়েছে। হুমায়রা ওভাবেই শুয়ে হালকা ভাবে চোখ মেলে রাজবীরের দিকে তাকিয়ে আছে। রাজবীর হুমায়রার দিকে হিং*স্র দৃষ্টি নিয়েই তাকিয়ে ছিলো। সেইসময় রাজবীরের দৃষ্টি পরে হুমায়রার লেহেঙ্গার নিচের অংশ কিছুটা উপরে উঠে আছে। যার ফলে ওর ফর্সা বর্ণের পা জোড়া দেখা যাচ্ছে। রাজবীর কিছুসময় সেদিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর হাটু ভাঁ*জ করে হুমায়রার পায়ের কাছে বসে উঠে আসা লেহেঙ্গার অংশটা ধরে টেনে আরো উপরের দিকে উঠাতে শুরু করে। হুমায়রা ঝাপসা নয়নে তা দেখছে। রাজবীরকে বাঁধা প্রয়োগ করতে ও হাত উঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু ওর শরীর ওকে সায় দেয় না। হুমায়রার বুকের ভিতরটা হা*হা*কা*রে ছিঁ*ড়ে আসছে। চোখ যুগল দিয়ে অঝর ধারায় পানি ঝরছে। হুমায়রা মনে মনে আল্লাহর কাছে এই অ*মানুষের হাত থেকে নিজের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য আকুল কন্ঠে নিবেদন করতে করতে থাকে। রাজবীর লেহেঙ্গাটা হুমায়রার হাটুর কিছুটা উপরে উঠিয়ে থেমে যায়। এরপর হুমায়রার গলা থেকে কমোর পর্যন্ত কাপড় দিকে ঢাকা স্থানটুকুর উপর নিজের ল*লু*ভ দৃষ্টি স্থির করে। পরক্ষণেই রাজবীর ওর ঠোঁটে পৈ*শা*চি*ক হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো….

—“কোথায় যেনো শুনেছিলাম রাগ করে যে, হে*রেও যায় সে। আমার অবস্থাও তো তেমনই হতে যাচ্ছিলো। সন্ধ্যার মো*হে এতোটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে আমার সামনে তোমার মতো তাজা গোলাপ যে আছে আমি সন্ধ্যার অভাব তোমাকে দিয়েও পূরণ করতে পারি এতো সুন্দর চিন্তাটা করেও দেখি নি। যদি আরেকটু আগে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে নিতে পারতাম তাহলে এমন র*ক্তা*র*ক্তি অবস্থা তোমার হতো না। অবশ্য এমনটা হয়েও খা*রা*প হয় নি। এখন তো সামান্য মাথা ফাঁ*টি*য়ে দিয়েছি। পরে তোমাকে ভো*গ করার সময় তুমি আমাকে তোমার সর্বশক্তি দিয়ে বাঁ*ধা প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে অবশ্যই আর তোমার এমন কাজে আমার বি*র*ক্তি চলে আসতো তখন তোমার অবস্থা এর থেকেও বেশি ক*রু*ণ করে দিতাম। হয়তো বা মে*রে*ই ফেলতাম। ম*রা মানুষের শরীর ভো*গ করে এতো মজা পাওয়া যায় না। তাই তখন তোমার শরীরকে এতো এতোগুলো টুকরো করতাম যে কেও হিসাব করে কুল পেতো না। তারপর সেই টুকরো গুলো বিভিন্ন ন*র্দ*মায় ফেলে দিতাম। আর এই জায়গা থেকেই তোমার অস্তিত্ব এই পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরের জন্য বি*লী*ন হয়ে যেতো। তোমার সঙ্গে যারা আছে তারাও শত চেষ্টা করেও তোমার শরীরের একটা টুকরোও খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে না। আর না আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ বের করতে পারবে। যাই হোক অনেক কথা বললাম এখন আর কথা বলে সময় ন*ষ্ট করতে চাই না। চোখের সামনে তোমার মতো একটা সুন্দরী গোলাপ ফুল থাকলে কি আর নিজেকে এভাবে বেশিক্ষণ কন্ট্রোলে রাখা যায়!”

এই বলে রাজবীর হুমায়রার বুকের দিকে হাত বাড়াতেই পিছন থেকে তাহিরের কন্ঠস্বর ভেসে আসে…..

—“জা*নো….র! তো ঐ নোং*ড়া হাত আমি কে*টে ফেলবো। আমার স্ত্রীকে স্পর্শ করার দুঃ*সা*হস করলি কি করে তুই!”

রাজবীর থেমে গিয়ে ঘাড় বাঁ*কি*য়ে দরজার দিকে তাকাতেই তাহিরকে দেখতে পায়। চোখের আকার কিছুটা ছোট করে তাহিরের উপর দৃষ্টি স্থির করে সে। কপালে ডান পার্শে কে*টে গিয়ে তা থেকে র*ক্ত বের হয়ে তাহিরের মুখ ও বুকের একপাশ ভিজে গিয়েছে। রাজবীর লক্ষ্য করে তাহিরের পা দু’টো কাঁ*প*ছে। তাহিরের এমন অবস্থা দেখে রাজবীরের ঠোঁটে বাঁ*কা হাসির রেখা ফুটে উঠে। রাজবীর হুমায়রার পাশ থেকে উঠে তাহিরের দিকে কিছুটা অগ্রসর হয়ে বললো…..

—“নিজের কি অবস্থা হয়েছে তা কি ভালোভাবে দেখেছো একটাবার তালুকদার সাহেব! ঠিক ভাবে তো দাঁড়াতেও পারছো না পা দু’টো কেমন থর থর করে কাঁ*প*ছে। এই অবস্থা নিয়ে আমার হাত থেকে তুমি তোমার সুন্দরী স্ত্রীকে বাঁ*চা*তে পারবে বলে তোমার মনে হয়!”

তাহির ওভাবেই রাজবীরকে ধরার জন্য একহাত বাড়িয়ে ওর দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু ওর শরীর ওকে সায় দেয় না। মাথা ঘুরে উঠায় সেখানেই দুই হাঁটু ভে*ঙে বসে পরে তাহির। রাজবীর স্বশব্দে হেসে উঠে বললো….

—“আজ এতো ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় ঘটবে তা তো আমি চিন্তাও করি নি। এর আগে বহু মেয়েকে রে*প করে তাদের চিহ্ন নিপুন ভাবে পৃথিবীর বুক থেকে বিলীন করে দিয়েছি। কিন্তু এই ১ম একজন স্বামীর সামনে তাঁর সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীর রে*প করবো। বিষয়টা সত্যিই ভিষণ ইন্টারেস্টিং আর আনন্দদায়ক হতে চলেছে। তো মি.তাহির তালুকদার তোমার সামনে যে একটু পর তোমার স্ত্রীর ই*জ্জ*ত লু*টে নিবো আমি এ নিয়ে তোমার ভিতর এক্সাইটমেন্ট কেমন কাজ করছে? বলো বলো শুনি! তোমার মূল্যবান অনূভুতি প্রকাশ করে এই বিষয়টাকে আরো একটু রোমান্ঞ্চকর বানিয়ে দিতে পারো তুমি।”

—“জা*নো…র, তোর সব আনন্দ আজ ধুলোর সাথে মিশে যাবে। খুব বেশি সময় তোর হাতে নেই। সে আসছে, তোর খেল খ*ত*ম করতে সে আসছে। তোর পা*পে*র কলস আজ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।”

রাজবীর ভ্রু কুঁচকে বললো……
—“কে আসছে? কার কথা বলছিস তুই!”

—“তোর জান ক*ব*জ করতে আ*জ*রা*ইল আসছে।”

রাজবীর রাগ নিয়ে তাহিরের কাছে গিয়ে একহাতে ওর পাঞ্জাবির কলার্ট চে*পে ধরে অন্যহাত দিয়ে ওর নাকে একের পর এক ঘু*ষি প্রয়োগ করতে করতে বললো…..

—“আমার জীবন ক*ব*জ করবে এমন বুকের পা*ঠা নিয়ে এই পৃথিবীতে জন্ম নেই নি বুঝলি! যে আমার শরীরে সামান্যতম আঁ*চ*র ও কাটার চেষ্টা করবে তাকে আমি এই পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিবো।”

রাজবীরের থেকে পরপর এতোবার ঘু*ষি খাওয়ার পর তাহিরের নাক ও ঠোঁট ফেঁ*টে র*ক্ত বের হতে শুরু হয়েছে। তাহির তবুও হালকা হাসি দিয়ে বললো…..

—“পিপীলিকার পাখা গজায় ম*রি*বার তরে। তোর মৃ*ত্যু*র ঘন্টাও বে*জে গিয়েছে। ইতিহাসের পাতায় তোর থেকেও বড় বড় শ*য়*তা*নের ধ্বং*সের কাহিনী উল্লেখ আছে। ফেরাউন নিজেকে আল্লাহর সাথে তুলনা করেছিলো। আর সেই ফেরাউনের পা*পে*র কলস যখন পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো তখন ওর মৃ*ত্যু*র ঘন্টাও বে*জে গিয়েছিলো। সমুদ্র দু’ভাগ হয়ে গিয়ে মাঝ দিয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছিলো ইমানদার ব্যক্তিরা সেই রাস্তা অতিক্রম করতে সক্ষম হলেও ফেরাউন তার দলবল নিয়ে সেই সমুদ্রের মাঝেই প্রাণ ত্য*গ করেছিলো। পা*পী*দের শেষ পরিণতি যে ভিষণ ভ*য়া*বহ হয় তার প্রমাণ ফেরাউন দিয়ে গিয়েছে।”

তাহিরের কথাগুলো শুনে রাজবীরের রাগ যেনো আকাশ ছুঁ*ই হয়ে যায়। রাজবীর তাহিরের পাশ থেকে উঠে হুমায়রার কাছে যায়। তাহির মুখ থু*ব*রে মেঝের উপর পড়ে যায়। রাজবীর হুমায়রার মাথার পিছনের অংশের চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে ওকে শোয়া অবস্থা থেকে টেনে উঠে বসায়। মাথায় আ*ঘা*ত পেয়ে এমনিই হুমায়রার অবস্থা আগের থেকে আরো খা*রা*প হয়ে গিয়েছিলো। এরভিতর চুলে টান পড়ায় ওর মাথা যেনো ব্য*থা*য় ছিঁ*ড়ে আসছিলো। হুমায়রা কোনো মতে একহাত উঠিয়ে রাজবীরের হাত থেকে নিজের চুলগুলো ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু ওর শরীর ওকে বরাবরের মতোই সায় দেয় না। হুমায়রা অ*স*হায় র*ক্তা*ক্ত মুখশ্রী নিয়ে ওর থেকে কিছুটা দূরে মেঝের উপর উপুর হয়ে পড়ে থাকা তাহিরের দিকে ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়। হুমায়রার দু’চোখ বেয়ে ঝরঝর করে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। রাজবীর ওর পকেট থেকে ছোট ধাঁ*রালো একটা ছুঁ*ড়ি বের করে হুমায়রার গালের উপর একটা টা*ন দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ওর গা*ল কে*টে র*ক্ত পড়তে শুরু হয়। হুমায়রা য*ন্ত্র*ণা*য় নে*তি*য়ে যাওয়া শরীর নিয়ে আরো নে*তি*য়ে পড়ে। তাহির রাজবীরকে এমন করতে দেখে অস্থির কন্ঠে বললো…..

—“এ…এই..ছেড়ে দে ওকে। এভাবে আ*ঘা*ত করিস না। ছে*ড়ে দে।”

তাহিরের কথা শুনে রাজবীর ওর ঠোঁটে পৈ*শা*চি*ক হাসির রেখা ফুটিয়ে হুমায়রার অন্যগালে ছু*ড়ি দিয়ে আরেকটা টান দিয়ে বললো….

—“সরানোর জন্য তো এমন করছি না। ভেবেছিলাম তোর বউকে রে*প করবো তারপর মা*র*বো। কিন্তু তুই এমন কিছু কথা বললি আমার মুড পুরোপুরি ভাবে ন*ষ্ট হয়ে গেলো। এখন তোর সামনে তোর বউকে তি*লে তি*লে য*ন্ত্র*ণা দিয়ে দিয়ে মা*র*বো তারপর তোকেও মা*র*বো। আর যার কথা বললি! সে আসলে তাকে-ও মা*র*বো।”

এই বলে রাজবীর হুমায়রার দুই হাতের মাংসপেশীতে পর পর বেশ কয়েকবার ছু*ড়ি দিয়ে আ*ঘা*ত করে। ল্যহেঙ্গার হাতা চিঁ*ড়ে হুমায়রার হাতের মাংসপেশী বেশ গভীর হয়ে কে*টে গিয়ে অঝোর ধারায় র*ক্ত ঝড়তে শুরু করে। হুমায়রা নি*স্তে*জ হয়ে পড়ে। একের পর এক এতো আ*ঘা*ত সহ্য করার ক্ষমতা ওর মাঝে আর জু*গি*য়ে উঠতে পারে না ও। তাহির অনেক ক*ষ্ট করে দুইহাতে ভ*র দিয়ে উঠার চেষ্টা করে রাজবীর সঙ্গে সঙ্গে ছু*ড়ি*টা হুমায়রার গলার সাথে চে*পে ধরে। হুমায়রা যদি ভু*লেও একটু নড়ে তাহলে ছুঁ*ড়ি*টা দিয়ে ওরা গলা বেশ গভীর হয়ে কে*টে যাবে। তাহির রাজবীরকে এমন করতে দেখে অনুরোধের স্বরে বললো…

—“এ..এই..এই…না…না…ছুঁ*ড়িটা সরা ওর গলার উপর থেকে। ও..ওর গলা থেকে ছুঁ*ড়ি*টা সরা…পি-প্লিজ…সরা ছুঁ*ড়ি*টা..আর আ*ঘা*ত করিস না ওকে।”

রাজবীর স্বশব্দে হাসতে হাসতে বললো….
—“একটু আগেই তো জোর গলায় কতোকিছু বলছিলি এখন এমন ভেজা বেড়ালের মতো নেতিয়ে গেলি যে! খুব ক*ষ্ট হচ্ছে তাই না নিজের প্রিয়তমাকে নিজের চোখের সামনে য*ন্ত্র*ণা পেতে দেখে! তোকে ক*ষ্ট পেতে দেখে আমার ভিষণ আনন্দ হচ্ছে বিশ্বাস কর। ভিষণ আনন্দ হচ্ছে।”

তাহিরের দু’চোখ ভিজে এসেছে। তাহির কান্নামিশ্রিত স্বরে বললো…
—“প্লিজ ওকে ছে*ড়ে দে..প্লিজ..!”

রাজবীর বললো…..
—“আচ্ছা ঠিক আছে তোর কথাই মেনে নিলাম যাহ। আর খুব বেশি য*ন্ত্র*ণা দিবো না তোর প্রিয়তমা স্ত্রীকে। শুধু গলায় এই ছু*ড়ি*টা দিয়ে একটা টান দিবো। তাহলে সব য*ন্ত্র*ণা থেকে একবারে মুক্তি লাভ করবে সে।”

রাজবীর এই কথা বলে যেই না হুমায়রার গলায় ছু*ড়ি*টা দিয়ে টান মা*র*তে যাবে সেইসময় দরজার সামনে কুশল এসে দাঁড়িয়ে রাজবীরের বুক বরাবর একটা গু*লি করে। সঙ্গে সঙ্গে রাজবীর পিছন পার্শে চিৎ হয়ে পড়ে যায়। কুশলের পিছন থেকে তরুনিমা একছুটে হুমায়রার কাছে গিয়ে হাঁটু ভাঁ*জ করে বসে। হুমায়রা শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে পুরোপুরি ভাবে নিস্তেজ হয়ে যায়। তরুনিমা লক্ষ করে হুমায়রার গলায় ছু*ড়ি দিয়ে টান পড়েছে। তরুনিমা কা*পা হাতে ওর গলার ক্ষ*ত স্থান চে*পে ধরে উচ্চস্বরে বললো….

—“হুমায়রাকে এই মূহূর্তে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ওর গলায় ছু*ড়ি টে*নে দিয়েছে জা*নো….রটা।”

তাহির মেঝের উপর হাত দিয়ে বা*রি দিয়ে কান্নামিশ্রিত স্বরে একবার ‘আল্লাহহ’ শব্দটি উচ্চারণ করলো।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…..

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৩ পর্বের ৫ম অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৭৬)
কুশল বাধ্য হয়েই ওর দু’জন পুরোনো গার্ড যারা সাদিক বেঁচে থাকাকালীন ও এরপরেও কিছু কাজে বিশ্বস্ততা বজায় রেখে ওর অর্ডার ফলো করেছিলো তাদের পোড়াবাড়িতে আসতে বলেছিলো। কিছুসময়ের মধ্যেই ওরা দু’জন সেখানে আসলে গোপনীয়তা বজায় রেখে রাজবীরকে নিয়ে নিজের গোপন আস্তানায় গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলে হুমায়রা আর তাহিরকে নিয়ে কুশল-তরুনিমা হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গাড়ির পিছন সিটে তাহিরের কোলের উপর মাথা রেখে হুমায়রা সেন্স লে*স হয়ে আছে। তাহির গাড়ির ভিতর থাকা ফাস্ট এইড বক্স থেকে ঔষধ আর তুলো নিয়ে হুমায়রার ক্ষ*ত স্থান গুলো আলতো হাতে পরিষ্কার করে দেওয়ার চেষ্টা করে। যেনো হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই হুমায়রার ক্ষ*ত স্থান থেকে র*ক্ত পড়া বন্ধ করা যায়। হুমায়রার ক্ষ*ত স্থান গুলো পরিষ্কার করতে করতে বারবার তাহিরের দু’চোখ নোনাজলে ভরে আসছিলো। নিজের শারীরিক ক্ষ*ত গুলো এখন তাহিরের কাছে এতোটা য*ন্ত্র*ণা দায়ক মনে হচ্ছে না যতোটা হুমায়রার ক্ষ*ত স্থান গুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে ওর বুকের বাম পাশটায় য*ন্ত্র*ণা অনুভব হচ্ছে। তরুনিমা একটু পর পর ছল ছল নয়ন নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাহির আর হুমায়রার দিকে লক্ষ্য করছে। ওদের দেখে তরুর চোখের সামনে সন্ধ্যার কোলে মাথা রেখে সাদিকের শেষ নিঃশ্বাস ত্যগ করার মূহূর্ত টুকু চোখের সামনে ভাসে। পরক্ষণেই তরু সোজা হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তাহির অস্থির কন্ঠে বললো….

—“কুশল আর কতোসময় লাগবে হাসপাতালে পৌঁছাতে?”

শীতের রাত, কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে পুরো শহর। গাড়ির হেডলাইট দিয়ে সামনের অংশ আলোকিত থাকলেও ধোঁয়াশায় ভরপুর হয়ে আছে। কুশল গাড়িতে সেট করে রাখা গুগোল ম্যপ চেক করে বললো…

—“বেশি সময় লাগবে না। কিছুসময়ের মধ্যেই আমরা শহরের ভিতর প্রবেশ করবো। তাহির..হুমায়রার গলার ক্ষ*ত স্থানটা একহাতে আলতো ভাবে চে*পে ধরে থাকো।”

তাহির কুশলের কথানুযায়ী হুমায়রার গলার ক্ষ*ত*স্থান আলতোভাবে চেপে ধরে রাখে।

(১৭৭)
নিজ রুমে বিছানার সাথে পিঠ ঠেখিয়ে বসে আছেন রিজভী। কামিনী ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বললো…

—“ছেলেকে তো বিয়ে শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো বাড়িজুরে কোথাও দেখলাম না। এখনও যে বাড়িতে ফেরে নি সে নিয়ে তোমার মাঝে কি বিন্দুমাত্রও চিন্তা কাজ করছে না রাজের বাবা?”

রিজভী শান্ত স্বরে বললো…
—“এতো দু*শ্চি*ন্তা করার কিছু নেই কামিনী। আমাদের ছেলে এখন আর বাচ্চা নেই। ৫বছর ধরে বিদেশে একা থেকে এসেছে। তাই সারারাত বাহিরে কাটানো ওর জন্য কিছুই নয়। ওকে বাহিরে থাকতে দাও। সন্ধ্যাকে উঠিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ব্য*র্থ হওয়ায় ওর মাথার ঠিক নেই। যখন ওর রাগ ও নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে তখন ঠিকই বাসায় ফিরে আসবে।”

—“হুম ফিরলেই ভালো। এতো দু*শ্চি*ন্তা আর নিতে পারছি না।”

এই বলে কামিনী ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে খোপা খুলে চিরুনি হাতে নিয়ে চুল চিরুনি করতে শুরু করে। চিরুনি করা শেষ হতেই কামিনী লক্ষ্য করে আজকে চিরুনিতে প্রতিদিনের তুলনায় অনেক বেশি চুল উঠে জমে আছে। কামিনী ওভাবেই নিরব হয়ে চিরুনির দিকে তাকিয়ে থাকে।

(১৭৮)
হাসপাতালের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কুশল দ্রুততার সাথে গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করে রিসেপশনে এসে দাঁড়িয়ে বললো….

—“এক্ষুণি একটা স্ট্রেচার বাহিরে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। গাড়িতে একজন সিরিয়াস অবস্থার পেশেন্ট আছেন তাকে ভর্তি করাতে হবে।”

কুশলকে দেখে রিসেপশনে থাকা মহিলাটির চিনতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয় না। এর আগে নিলাদ্রকেও এই একই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলো কুশল। মহিলাটির চোখের সামনে সেদিনের দৃশ্য ভাসতে থাকে। মহিলাটি শুকনো ঢো*ক গি*লে সঙ্গে সঙ্গে দু’জন ওয়ার্ডবয়কে ডাকে স্ট্রেচার আনার জন্য। তারা স্ট্রেচার আনলে কুশল তাদের নিয়ে বাহিরে এসে গাড়ির পিছনের দরজা খুলে বললো…

—“তাহির হুমায়রাকে বাহিরে বের করো।”

অতঃপর তাহির হুমায়রাকে পাঁজাকোলে নিয়ে বাহিরে এসে স্ট্রেচারে শুইয়ে দেয়। ওয়ার্ডবয় দু’জন, তাহির হুমায়রাকে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করে। ওদের পিছন পিছন কুশল আর তরুনিমাও ভিতরে প্রবেশ করে। ভিতরে আসতেই নিলাদ্রের চিকিৎসা করেছিলেন যিনি ডাক্তার আকরাম সাহেব তার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায় ওদের। কুশলকে দেখামাত্র তিনি বললেন….

—“আরে কুশল তুমি এখানে! আর এই পেশেন্টের এমন ক*রু*ণ অবস্থা কি করে হলো!”

কুশল ডাক্তার আকরাম সাহেবের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো…..
—“ডাক্তার সাহেব সব কথা আপনাকে আমি পরে খুলে বলবো। আপনি যতো দ্রুত সম্ভব হুমায়রার চিকিৎসা শুরু করুন। আল্লাহর পর আমাদের আপনার উপরেই পুরো ভরসা আছে। সৌহার্দ্যকে যেভাবে মৃ*ত্যু*র মুখ থেকে বাঁচিয়ে এনেছিলেন সেভাবেই হুমায়রাকেও সুস্থ করে দিন ডাক্তার সাহেব।”

ডাক্তার আকরাম কুশলের কাঁধের উপর হাত রেখে বললেন….
—“আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো কুশল। তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। সবকিছুই তার হাতে। আমরা চিকিৎসকরা শুধু উছিলা মাত্র।”

এই বলে ডাক্তার আকরাম সাহেব হুমায়রাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন। তাহির হুমায়রার হাতের ভাজে হাত রেখে ওর দিকে অশ্রুভেজা দৃষ্টি স্থির করে রেখেছিলো। ধীরে ধীরে সেই হাতের ভাঁ*জ ছুটতে শুরু করে। তাহিরের হুস ফিরে। অতঃপর তাহির আবারও হুমায়রার হাত শক্ত ভাবে ধরে ওর সাথে যেতে নিলে কুশল তাহিরের দু’কাধ ধরে ওকে আটকায়। তাহির কান্নাভেজা কন্ঠে বললো….

—“ভাই…আমায় আটকিও না। যেতে দাও আমায় ওর সাথে। এই হাত যুগলের ভাঁজ তুমি ছু*ট*তে দিও না। তাহলে যে আমি ওকে চিরতরের জন্য হারিয়ে ফেলবো ভাই। ওর যে খুব ইচ্ছে ছিলো আমার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শোনার।”

কুশল বললো….
—“নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করো তাহির। পা*গ*লা*মো করো না। হুমায়রার চিকিৎসার জন্য ওকে আমরা সঠিক হাতে তুলে দিয়েছি। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। ইনশাআল্লাহ হুমায়রা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে। তুমি তোমার হিমু আবারও আগের রূপে ফিরে পাবে। তখন তুমি মনখুলে তোমার মনের সব অনুভূতিগুলোর বহিঃপ্রকাশ করো ওর সামনে।”

একজন বাচ্চার কাছে থেকে তার সবথেকে প্রিয় খেলনার বস্তুটিকে কেঁ*ড়ে নিলে সে যেমন অসহায়ের মতো কা*ন্না করে তাহিরের বর্তমান অবস্থাও যেনো তেমন হয়েছে। এ*ক্সি*ডে*ন্টে*র কারণে মাথায় আ*ঘা*ত পেয়েছিলো তাহির। তাই সামান্য চা*প আর নিতে না পেরে আবারও সেন্স লে*স হয়ে যায় সে। দু’জন ওয়ার্ডবয় তাহিরকে নিয়ে অন্য একটি কেবিনে সিফট করে। তাহিরের চিকিৎসার জন্য অন্য আরেকজন ডাক্তার ওর কেবিনে প্রবেশ করে। একপার্শে অপারেশন থিয়েটারে হুমায়রার অপারেশন চলছে। অন্য পাশে কেবিন রুমে তাহিরের চিকিৎসা চলছে। মাঝামাঝি স্থানে কুশল আর তরুনিমা চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে। পরক্ষণেই তরুনিমা কুশলের দিকে ঘুরে বসে কান্নাভেজা
কন্ঠে বললো….

—“এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না কুশল। আমাদের খুব বড় ভু*ল হয়েছে ওদের দু’জনের কথা মেনে নেওয়া। একদমই ঠিক হয় নি ওদের একলা ছাড়া। আমাদের আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো। আজ হুমায়রার বা তাহিরের এই অবস্থার জন্য আমরাই দায়ী। ওদের তো কোনো সংযোগ ছিলো না রাজবীরের সাথে। আমার খুব ক*ষ্ট হচ্ছে কুশল।”

কুশল নিরব থেকে দু’হাতে তরুনিমাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ওর মাথায় নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে রাখে। তরুনিমাকে শান্তনা দেওয়ার মতো শব্দ কুশল নিজেও খুঁজে পাচ্ছে না।
.
.
.
৩ঘন্টা পর…….
অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বসে চেয়ারে বসে আছে কুশল আর তরুনিমা। তাহিরের ক্ষ*ত স্থান গুলো পরিষ্কার করে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছিলেন ডাক্তার। সে এখনও ঘুমিয়ে আছে। কিছুসময় পর কুশল তরুনিমা দু’জনেই লক্ষ্য করে অপারেশন থিয়েটারের দরজার উপর জলতে থাকা লাল বাতিটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভিতর থেকে ডাক্তার আকরাম সাহেবকে বেড়িয়ে আসতে দেখামাত্র কুশল তরুনিমা দু’জনেই বসা অবস্থা থেকে উঠে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। আকরাম সাহেব স্মিত হাসি দিয়ে বললেন….

—“আল্লাহর অশেষ রহমতে পেশেন্ট এখন বি*প*দ মুক্ত। কিছুসময় পরই পেশেন্টকে কেবিনে সিফট করা হবে। শরীরের বিভিন্ন স্থানের ক্ষ*ত গুলো কিছুটা গভীর তো তাই পুনঃরায় ঠিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। গলার ক্ষ*তটাও ততোটা গভীর নয়। তাই পেশেন্টকে নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।”

তরুনিমা হাসিমুখে বললো….
—“আলহামদুলিল্লাহ, ইয়া আল্লাহ আপনার লক্ষ-কোটি শুকরিয়া আদায় করছি।”

পরক্ষণেই ডাক্তার আকরাম স্থান ত্যগ করলেন।
.
.
.
১ঘন্টা পর….
তাহিরের কেবিনের বাহিরে দরজার পাশে রাখা চেয়ারে বসে আছে তরুনিমা। কুশল রিসেপশনে গিয়েছে ওদের দু’জনের চিকিৎসার জন্য কতো পেমেন্ট করতে হবে সেই বিষয়ে কথা বলতে। সেইসময় কেবিনের দরজা খুলে তাহিরকে বাহিরে বেরিয়ে আসতে দেখে। তাহিরের মাথায় আর নাকে ব্য*ন্ডে*জ করা আছে। তরুনিমা বসা অবস্থা থেকে উঠে তাহিরের সামনে দাঁড়িয়ে ওর পথ আটকায়। তাহির ওর চেহারায় অস্থির ভাব ফুটিয়ে বললো….

—“হিমু কোথায়! আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলুন ভাবী। ও ঠিক আছে তো! কোথায় ও? আমি এক্ষুণি ওর কাছে যেতে চাই।”

তরুনিমা তাহিরকে শান্ত করার চেষ্টা নিয়ে বললো….
—“তাহির ভাই..আপনি শান্ত হোন। হুমায়রা এখন ঠিক আছে। ডাক্তার বলেছেন ও এখন সম্পূর্ণ ভাবে বি*প*দ মুক্ত। কিছুসময় পূর্বেই ওকে ওর কেবিনে সিফট করা হয়েছে। আর এখন আমাদের সকলের ওখানে প্রবেশ করা নিষেধ। লম্বা সময় ধরে অপারেশন চলেছে। তাই হুমায়রাকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে ঘুম পারিয়ে রেখেছেন ডাক্তার সাহেব। ওর ঘুম ভাঙলে নার্সরা নিজ থেকে ওর সাথে দেখা করতে আমাদর ডেকে নিবেন।”

তরুর কথাগুলো শুনে তাহির কিছুটা শান্ত হয়ে বললো….
—“আচ্ছা আমি কেবিনের ভিতর প্রবেশ করবো। কেবিনের বাহিরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দূর থেকে তো ওকে দেখতে পারি তাই না! এ নিয়ে নিশ্চয়ই ওনাদের কোনো স*ম*স্যা হবে না!”

তরুনিমা বুঝতে পারে তাহির হুমায়রাকে নিজের চোখে অন্তত একপলকের জন্য হলেও না দেখলে পুরোপুরি ভাবে শান্ত হবে না। অগত্যা তরুনিমা তাহিরকে নিয়ে হুমায়রার কেবিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো….

—“বাহির থেকেই দেখতে হবে কিন্তু ভিতরে এখন প্রবেশ করা যাবে না।”

তাহির বাধ্য ছেলের মতো তরুনিমার কথা মেনে নিয়ে হুমায়রার কেবিনের দরজার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে দরজার উপর থাকা ছোট চতুর্ভুজ আকৃতির কাঁচের দেওয়াল ভে*দ করে নিজের দৃষ্টি ঘুমন্ত হুমায়রার মুখশ্রীর উপর স্থির করে। হুমায়রাকে এতো দূর থেকে দেখেও তাহিরের মনে অনেকটা প্রশান্তি কাজ করছে।

(১৭৯)
পরেরদিন সকালবেলা……
চৌধুরী মেনশনে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে মুখের সামনে খবরের কাগজ ধরে আছেন রিজভী। সেইসময় কামিনী নিজের মুখশ্রীতে রাগী ভাব স্পষ্ট রেখে রিজভীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে টান মে*রে খবরের কাগজটা কে*ড়ে নিয়ে মেঝের উপর ছুঁ*ড়ে ফেলে দেয়। ড্রয়িংরুম জুড়ে তখন আর কোনো প্রাণীর চিহ্ন ছিলো না। রিজভী কিছুটা বি*র*ক্তি নিয়ে একবার খবরের কাগজটির দিকে তাকিয়ে পরপরই কামিনীর উপর দৃষ্টি স্থির করে বললো….

—“এই সাত সকালে তোমার আবার কি হলো কামিনী! খবরের কাগজটা এভাবে টেনে নিয়ে ফেলে দিলে কেনো?”

কামিনী দ্রুততার সাথে বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে রাগী স্বরে বললো…
—“পুরো একটা রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলো তোমার ছেলেটা না বাড়িতে ফিরিছে আর না তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে। সকাল থেকে যতোবার আমি কল করেছি ততোবারই ফোন বন্ধ দেখিয়েছে। এখন একটু তো ট*ন*ক নড়াও। আমাদের চারপাশে মু*খো*শ*ধা*রী মানুষদের অভাব নেই। সম্পত্তির জন্য কে কে কতোটা নিচে নামতে পারে সে বিষয়ে যথেষ্ট ভালো ভাবে অবগত তুমি। যদি ওরা কোনো গোপন পরিকল্পনা করে আমার ছেলের কোনো ক্ষ*তি করে বসে তখ…..!”

রিজভী ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে একহাত দিয়ে কামিনীর মুখ চে*পে ধরে ওকে কথা শেষ করার পূর্বেই থামিয়ে দিয়ে ধীর স্বরে বললো….

—“এতো জোড়ে জোড়ে এসব কথা কেও বলে নাকি! বয়স যতো হচ্ছে মাথার বুদ্ধি সব নামতে নামতে পায়ের গোঁড়ায় এসে ঠেকছে তোমার। চুপ করো আর একটা শব্দও উচ্চারণ করবে না তুমি। আমি দেখছি কি করা যায়। যেকোনো ভাবে ছেলের খোঁজ বের করে তোমায় জানিয়ে দিবো। এখন রুমে যাও আর মাথা ঠান্ডা করো। যদি এমনি এমনি না ঠান্ডা হয় তাহলে বালতির পর বালতি ঠান্ডা পানি মাথায় ঢা*লো। যাও।”

এই বলে রিজভী কামিনীর মুখ থেকে হাত সরায়। কামিনী আর কিছু না বলে দ্রুতপায়ে স্থান ত্যগ করে। রিজভীও সোফার উপর থেকে নিজের ফোন আর ওয়ালেটটা নিয়ে চৌধুরী মেনশন থেকে বেড়িয়ে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…