#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৩৯
আরফান ডায়েরি টা হাতে নিয়ে তার সামনে বসা মহিলাকে বলল
– ডায়েরী পড়ে তো জানতেই পারব কিন্তু তার আগে আপনার পরিচয় আর এই সবের সাথে সম্পর্ক জানতে চাই ।
মহিলাটি কিঞ্চিত হেসে বলল – রহস্য জানার আগে আমার পরিচয় টা তুমি বুঝতে পারবে না । মিহুর মা মানে প্রিয়ন্তি খুব ভালো একটা কাজ করেছে । সব তথ্য লিখে রেখে গিয়েছে । তুমি পড়লেই পরিষ্কার বুঝতে পারবে । একদম আমার পরিচয় ও
– আচ্ছা তাহলে ডায়েরি টা আপনার কাছে এলো কি করে ?
– সরোয়ার কাজী তোমার কাছ থেকে ডায়েরীটা সরিয়েছিল আর আমি সরিয়েছি তার কাছ থেকে ।
– তাহলে আপনি যদি জেনে থাকেন এই রহস্য , আপনি কেন এর সমাধান করছেন না ।
তিনি মৃদু হাসলেন । বললেন
– সবাই সব কিছু জানলেও সবার সব কিছু করার ক্ষমতা থাকে না । আমি পারিনি এর সমাধান করতে কিন্তু আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করতে পারি ।
– আমি আপনার কাছ থেকে জানতে চাই আসল কাহিনী কী ?
-আচ্ছা তোমাকে আমি বলছি বলে কয়েকটা দম নিলেন । তারপর বলতে শুরু করলেন
——–
সরোয়ার কাজী হলো কাজী বংশের ছোট ছেলে । পড়াশোনায় ভালো হওয়ার কারণে শহরে বসে পড়াশোনা করেছে । মেধাবী আর বুদ্ধিমত্তার কারণে বড় ভাইয়ের অনেক প্রিয় । কাজী বংশের কোনো কিছুতে কমতি ছিল না আর কখনোই কোনো কিছুর অভাব ছিল না । সরোয়ার কাজী যখন যা চাইতো কখনো তার ভাই না বলত না । সে ভাবতো আমি পড়াশোনা করতে পারিনি তো কি হয়েছে? আমার ভাই তো করছে । তার জন্য যত টাকা লাগে আমি দেবো । কিন্তু কথায় আছে না ? যত পাই তত চাই । সরোয়ার কাজীর টাকার নেশা হয়ে গিয়েছিল । তাই তো বৈধ অবৈধ এমন কি আপন পর কিছুই দেখেনি । পড়াশোনায় মেধাবী হওয়ার কারণে বিভিন্ন অফার তার কাছে আসত ।
– বিভিন্ন অফার বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
– বিদেশ থেকে অনেক কম্পানি তাকে অফার দিয়েছিল সেখানে গিয়ে রিসার্চ করার জন্য । কিন্তু তিনি সেটা করলেন না । কারণ তিনি চাইতেন নিজে একটা কিছু করবেন ।
– আপনি প্লিজ খোলসা করে বলুন বিষয় টা । আসলে তিনি কি কাজ করেছে বা কি কাজ এখন করছেন ?
– তার কাজ বলতে গেলে এক কথায় মানুষ নিয়ে । তিনি তার রিসার্চের জন্য মানুষকে ব্যবহার করেন । তিনি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক তৈরি করে মানুষের ওপর প্রয়োগ করেন । যেগুলোতে সফল হন সেগুলো তিনি বিদেশে বিক্রি করে দেন ।
– আরেকটু গুছিয়ে বলেন বিষয় টা । আমি যতদূর জানি তিনি শুধু মেয়েদের ব্যবহার করেন ।
– হ্যাঁ তুমি ঠিকই জানো । তিনি মেয়েদের ই ব্যবহার করতেন আর এখনো করেন । আর এর কারণ টা হলো মেয়েদের শিকার করা সহজ । মেয়েরা সহজেই তার শিকারে পরিণত হয় । তুমি কি তালেব মাস্টারের কথা জানো ?
– আমি কিছুটা পড়েছি তালেব মাস্টারের কথা । তার বোনকে নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল ।
– হ্যাঁ তার বোন ই ছিল সরোয়ার কাজীর প্রথম শিকার । তার বোন লেখাপড়ায় ভালো ছিল এই জন্য সরোয়ার কাজীর নজরে পড়েছে । তাকে কোনোভাবে ভুলিয়ে তিনি তার প্রথম এক্সপেরিমেন্ট করেছেন । তবে ঐ সময় যন্ত্রপাতি তত উন্নত না হওয়ায় কারণে মেয়ে টা মারা গিয়েছিল আর সরোয়ার কাজীর টাকার জোরে তালেব মাস্টারকে ফাসিয়ে দেয় তার বোনকে খুন করার অভিযোগে । আমি জানি তুমি অনেক কিছুই বুঝনি । আমি তোমাকে সংক্ষেপে সরোয়ার কাজীর কিছু তথ্য জানিয়ে রাখছি । ডায়েরি তে তুমি বিস্তারিত জানতে পারবে । তবে দিন দিন উন্নত হওয়ার কারণে সরোয়ার কাজী নিজের কাজে সফল হতে লাগল । কিন্তু তিনি এক সময় একজন সহকারীর শূন্যতা অনুভব করতে লাগলেন যে কিনা রসায়ন বিষয়ে অভিজ্ঞ । কারণ তার কাজ তাহলে আরো সহজ হতো । তিনি অনেক খোঁজার পরেও তার সহযোগী পেলেন না । তারপর তিনি দেখলেন যে তার ভাইঝি ই অনেক ট্যালেন্টেড । তাই তিনি একটা বদ্ধ পরিকল্পনা করলেন । প্রিয়ন্তিকে এই বিষয়ে কাজে লাগাবেন । সব কিছু ঠিক ভাবেই চলছিল । কিন্তু এক সময় প্রিয়ন্তির ফুফু ওর চাচার বিষয় টা জেনে যায় কারণ তালেব মাস্টারের চিঠি টা তার কাছে ছিল । সেটা পড়ার পরে সরোয়ার কাজীর কাছে বিষয় টির সত্যতা জানতে চাইলে তিনি নিজের বোনকেই মেরে ফেলেন ।
বলার পরে মহিলাটি একটু থামলো । তার চোখে পানি চিক চিক করছে । তিনি বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে বলতে লাগলেন
– তাকে খুন করার পরে তার চেহারা থেতলে দেয় । তারপর ফেলে রাখে জঙ্গলে । আর সরোয়ার কাজী এমন খারাপ যে এই খুনের দায় দেয় নিজের বড় ছেলে করিমের ওপরে
– বড় ছেলে মানে মাহিনের বাবা ?
–হ্যাঁ ।
– কিন্তু কেন ?
– কারণ করিম সরোয়ারের বিরোধী ছিল । ও চাইতো প্রিয়ন্তিকে বাঁচাতে । এমন কি এই সম্পর্কে আগেই সতর্ক করতে চেয়েছিল কিন্তু সরোয়ারের জন্য পারেনি । সরোয়ার অনেক আগেই বিয়ে করেছিল শহরে বসে যে বিষয়টা সবার অজ্ঞাত ছিল । প্রিয়ন্তির কাছে ওদের পরিচয় করে দেওয়া হয়েছিল তার বন্ধুর পরিবার হিসেবে । আর সরোয়ার কাজী ই কারসাজি করে করিমকে ফাঁসির আসামি বানিয়ে দেয় ।
আরো কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই একটা গুলি এসে দেওয়ালে রাখা একটা পেইন্টিং ভেঙে দেয় । মহিলাটি তাড়াহুড়ো করে উঠে বলে
– সব কিছু তুমি ডায়েরি থেকেই জানতে পারবে । আমাকে এখন যেতে হবে । সরোয়ার কাজীর লোক জেনে গিয়েছে আমি এখানে । আর হ্যাঁ ডায়েরিটা যেন কেউ না দেখে কারণ তিনি এখন পর্যন্ত ডায়েরি সরানোর ব্যাপারটি জানতে পারেন নি ।
———–
– রুবেল তুমি নাকি একটা অপারেশন নিজ চোখে দেখতে চেয়েছিলে কীভাবে কিডনি বের করা হয় ?
– হ্যাঁ । কিন্তু মামা তো কাউকে তার কাজের কাছে এলাউ করে না । আমি তো আবার লেখাপড়া জানিনা
– তোমার মামার কাজে লেখাপড়া জানা লাগে না । আর তাছাড়াও তোমার কথাবার্তায় কিন্তু এগুলো বোঝা যায় না । থাক , তুমি কি দেখতে চাও ? আমাদের কাছে একটা মেয়ে বেশী আছে । সে অনেক কিছুই জেনে ফেলেছে আমাদের ব্যপারে । যেহেতু মেয়েটাকে রিসার্চের কোনো কাজে লাগবে না তাই আপাতত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো রেখে দিতে বলেছে ।
– কোন মেয়েটা বেশী আছে ?আমিতো সবগুলো এনেছি যেগুলো বলা হয়েছে ।
– ঐ যে একটা নীল শাড়ি পড়া আছে না ?
– তুলিদের বাসা থেকে যাকে এনেছি ?
– হ্যাঁ ।
– কিন্তু তুলি যে বলল মামা নাকি বলেছে ওকেও নিয়ে আসতে ?
– সে যাই হোক তোমার মামাই বলেছে মেয়েটাকে মেরে ফেলতে ।
– কিন্তু মেয়েটা কোথায়?
-রিসার্চ রুমে রাখা আছে । জ্ঞান ফেরেনি , এখনো অজ্ঞান ।
——-
নীলুর মাথাটা ভার হয়ে আছে । অনেকক্ষণ ধরে ক্লোরফর্মের কারণে অজ্ঞান অবস্থায় ছিল । সব কিছু মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়ে দাদুর রুমে থাকা অবস্থায় কোনো এক অচেনা ব্যক্তি এসেছিল । যে ওকে জোর করে একটা আতরের গোডাউনে এনে রেখেছিল আর অনেক কথাবার্তা বলছিল । তারা খেয়াল করেনি নীলুর জ্ঞান ফিরেছে । যখন বুঝতে পারল তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে কারণ নীলু সব কিছুই জেনে গিয়েছে তাই তাকে আবার অজ্ঞান করে রেখেছিল । চারদিকে তাকাতেই দেখতে পেল বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আর কম্পিউটার । রুমটা একদম সাদা । চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে একটা দরজার কাছে এলো । দরজাটা খুলতে একটা পাসওয়ার্ড চাইছে । নীলু ঐসময় অনেক কিছু শুনতে পেরেছিল তাই পাসওয়ার্ড টা জানে । কারণ ওরা বলেছিল সব দরজায় একই লক থাকে । পাসওয়ার্ড দিতেই দরজা খুলে গেল । নীলু এক আজব দুনিয়ায় প্রবেশ করল ।
অনেক বড় বড় কাচের পাত্রের মধ্যে বিভিন্ন কেমিক্যাল এর মধ্যে বিভিন্ন জিনিস রাখা । নীলু বুঝতে পারল না জিনিস গুলো কি । সামনে গিয়ে ভালো করে লক্ষ্য করতেই নীলুর মাথা ঘুরে এলো । এসব কি ?
#চলবে
#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৪০
মিহু আসার পর থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে । কারণ হঠাৎ করেই বিদিশার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা গায়ে হলুদের জিনিস পত্র পাঠিয়েছে আর বলেছে কালকেই বিয়ে হবে । বিদিশার শ্বশুরবাড়ি অনেক বড়লোক হওয়ার কারণে তাদের কথার ওপরে আর কেউ কথা বলতে পারেনি । ছেলে বিদেশে চাকরি করে আর হঠাৎ করেই তার আর্জেন্ট কাজ পড়ে যাওয়ার কারণে বিয়েটা তাড়াতাড়ি সারতে চেয়েছে । বিদিশার গায়ে হলুদ করার উপলক্ষ্যে অনেক লোকজন এসেছে সন্ধ্যার দিকে তাই সবাই ব্যস্ত । মিহুও ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে তাই নীলুর খোঁজ নিতে পারেনি । ও ভেবেছে হয়তো আশে পাশেই আছে সবার সাথে । মিহুর রান্নার হাত ভালো হওয়ার কারণে রান্নাবান্নার দায়িত্ব টা ওর কাঁধেই পড়েছে ।
–
-মা আমি কি এতই বোঝা হয়ে গেলাম যে আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছ ?
– সে কথা আসছে কেন ? বিয়ে তো এক সময় করতেই হবে সেটা পড়ে হোক আর আগে ।
– মা বিয়ে নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই ।
– তাহলে তোর সমস্যা টা কোথায়?
– তুমি আমাকে কোথায় বিয়ে দিচ্ছ ? বিয়ের আগেই নিজেদের প্রতিপত্ত দেখাচ্ছে । তাদের কথা মতো সাজতে হবে । তাদের কথা অনুযায়ী চলতে হবে ।
– তো তাতে সমস্যার তো কিছুই দেখছি না ।
– মা এসব বাদ দিলেও তারা আমাকে কেন আর পড়াশোনা করতে দেবে না ? আমার তো ইচ্ছা ছিল আমি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াব ।
– শোন মা তোর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের টাকা পয়সার কোনো শেষ নেই । তুই নিজের পায়ে দাঁড়ানো বলতে তো টাকা কামাইকে বোঝাচ্ছিস । তাদের তো এমন অবস্থা না যে তোর কামাই করা টাকায় চলতে হবে । আর তাদের বাড়ির বৌ দের টাকা ইনকাম করা লাগবে না ।
– মা এসব কথা তুমি কোনোদিন বলতে পারো না । তুমি নিজেই ছোট বেলা থেকে আমাকে শিখিয়েছ মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয় । আর তুমি এখন এই সব কথা বলছো ?
বিদিশার মা বললেন – আমায় ভুল বুঝিস না । তোর ভাইকে দিয়ে লেখাপড়ার বিষয় টা বলিয়েছিলাম কিন্তু তারা তারপরে বলেছে তাদের টাকা পয়সার অভাব পড়েনি যে তোর ইনকাম করা টাকায় চলতে হবে ।
বিদিশার মা চলে যেতে উদ্যত হলেই বিদিশা বলে
– মা আমার ফেব্রিক্সের স্বপ্ন টা ?
– যেখানে তোকে লেখাপড়া ই করতে দেবে না সেখানে এই কথা বলাটা মহা অন্যায়
বলে তিনি চলে গেলেন । বিদিশা ধপ করে বসে পড়ল । একে তো পিয়াস কোনো কথাই বলেনি । আরেক হলো স্বপ্ন ভাঙার প্রহর । বিদিশা কি করবে বুঝতে পারছে না । শুধু চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে ।
পিয়াস এতক্ষণ বিদিশার রুমের পাশে বসে কথা গুলো শুনছিল । তবে কি বিদিশাও ওর মতো স্বপ্ন ভাঙার দলে পড়তে যাচ্ছে ?
পিয়াস কিছু একটা ভেবে বিদিশার ঘরে ঢুকে বলল
– বিদিশা আপনাকে আমি একটা কথা বলবো যদি মত থাকে তাহলে বলবেন
হঠাৎ পিয়াসের আগমনে বিদিশা কিছুটা হলেও থমকে গিয়েছে ।
———–
রাতে বিদিশার গায়ে হলুদের পরে সবার নিজেকে ক্লান্ত লাগছে তাই সবাই ঘুমানোর উদ্দেশ্যে গেল । মিহুর এবার মনে আসল যে নীলু ঘুমাবে কোথায়? এত মানুষের মধ্যে ঘুমাতে পারবে ? তাই সারা বাড়ি খুঁজল কিন্তু কোথাও নীলুকে পেল না । মিহুর মনে ভয় ঢুকে গেল নীলু আসলে ঠিক আছে তো ?
মিহুকে এমন অস্থির হতে দেখে বিদিশার ভাবি জিজ্ঞেস করল – মিহু কিছু হয়েছে ?
– ভাবি নীলুকে কোথাও দেখছিনা । তুমি দেখেছো কোথাও?
– নীলু এখানে আসবে কি করে ? ও তো নাকি বাসায় চলে গিয়েছে ?
– ভাবি একথা আপনাকে কে বলেছে ?
– মাহিন ভাইয়া ই তো বললো নীলু নাকি বাসায় চলে গিয়েছে ।
মিহুর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল । নীলু বাসায় গেল কখন ? বাসায় তো মিহু ছিল । আর মাহিন ভাই ও বা কেন এরকম কথা বলবেন ?
– ভাবি মাহিন ভাই কোথায় ?
– ওনাকে তো দেখলাম বাইরে পুকুর পাড়ের দিকে যেতে ।
মিহু কথাটি শোনা মাত্রই পুকুর পাড়ে দৌড় দিল । মাহিন উদাস মনে বসে ছিল পুকুর পাড়ে । নীলুর কথা মাথা থেকে যাচ্ছিলই না । তখন মিহু এসে হাজির হয় । মিহুকে এমন হাঁপাতে দেখে মাহিন বলল
– মিহু এমন করছিস কেন ?
– ভাইয়া নীলু বাসায় গিয়েছে কথাটি তুমি সবাইকে বলেছো ?
– হ্যাঁ কিন্তু কেন ?
মিহু করুণ চোখে তাকিয়ে বলল – ভাইয়া এমন মিথ্যা কথা বললে কি করে ?
– আমি মিথ্যা কথা বললাম কখন ?
– আমি বাসায় ছিলাম আর নীলু বাসায় থাকলে আমি দেখতাম না ?
মাহিনের প্রাণ পাখি উড়ে গেল কথাটি শুনে । নিজেকে শান্ত করে বলল – তুই ঠিক বলছিস মিহু ?
– হ্যাঁ ভাইয়া । কিন্তু তুমি এরকম কেন করলে ?
মাহিনের রাগ উঠে গেল । তুলির কথায় আগেই বিশ্বাস করা উচিত হয়নি । মাহিন মিহুকে কিছু না বলে তুলির উদ্দেশ্যে বাড়িতে রওনা হলো । মিহুও কান্না করতে করতে মাহিনের পেছনে পেছনে গেল । মাহিন চিৎকার করে তুলিকে ডাকতে শুরু করল । বিদিশার মা দৌড়ে এসে ওকে শান্ত করে বলল
– মাহিন এরকম চিৎকার করছিস কেন ? ঘরে মেহমান আছে । বিদিশার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আছে । তারা এমন অবস্থা দেখলে ভালো মনে করবে ?
– ফুফু আগে তুলিকে এখানে আসতে বলো ।
তুলির মা বলে উঠল – কেন মাহিন ? কি হয়েছে?
– মা নাটক করবে না । আমি জানি তুলি যা করে সব তোমাকে জানিয়ে করে । আগে বলো নীলু কোথায়?
-আজব তো নীলু তো ওদের বাসায় আর সেটা তো তুই নিজেই বলেছিস
মাহিন চিৎকার করে বলে ওঠে – আমাকে তুলি বলেছিল নীলু ওদের বাসায় গিয়েছে কিন্তু নীলু ওখানে নেই । তাহলে নীলু কোথায় গেল ?
মাহিনের চিৎকারে ঘরের প্রতিটা সদস্য জেগে উঠেছে । সবাই তুলি খোঁজ করেও ঘরের কোথাও পেল না । নেহাল চিন্তিত হয়ে বলল
– মাহিন তোমার সাথে নীলুর শেষ দেখা হয়েছিল কোথায় ?
– আমাদের বাসায় ।
মিহু কি করবে বুঝতে পারছে না । আরফানকে অনেক আগেই ফোন দেওয়া উচিত ছিল । কিন্তু কথাটি এখন মাথায় আসায় আরফানকে ফোন দিলেও ফোন বন্ধ শোনা যাচ্ছে । অনেক বার ট্রাই করেও যখন পেল না তখন ও একটা এস এম এস লিখে দিল । নেহাল বলল
– আমাদের মনে হয় তোমাদের বাসায় দেখা উচিত একবার ।
নেহালের কথায় মাহিন সহমত হলো । ওদের সাথে মিহু পিহু ও রওনা দিলে তুলির মা বলে উঠে
– কালকে সকালে গেলে হয় না ? না মানে এখন রাতে কোথায় কি খুঁজবি আর তুলিকেও তো খোঁজা দরকার ।
– জাহান্নামে যাক তুলি ।
– মাহিন ! নিজের বোনকে নিয়ে এরকম কথা বলে ?
মাহিন তেড়ে এসে বলল – নীলুর যদি কিছু হয় না , তাহলে আগে তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াব আর তোমার মেয়েকে কি করব তা ভাবতেও পারছ না ।
তুলির খালা ওর মাকে বলল – দেকছো । তোর পোলায় পরের মাইয়্যার লাইগ্গা নিজের বোইন আর মার লগে কেমন কতা কয় ।
– খালা তুমি বেশি কুটনিগিরি করলে তোমার বোনের সাথে সাথে তোমাকেও লাল দালানের ভাত খাওয়াব ।
মাহিনের থ্রেড শুনে খালা চুপ হয়ে গেল ।
– আমার মেয়ের যদি কিছু হয় তাহলে আমি এর সাথে জড়িত প্রতিটা সদস্য কে শাস্তি দেবো।
রেবেকা এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার শুধু এই কথাটি বললেন । তারপর ওদের সাথে রওনা দিলেন ।
তবে এই সোরগোলের মধ্যে কারো মনেই খেয়াল এলো না ঘরের আরো দুজন সদস্য মিসিং । হয়তো সকাল বেলা সবার টনক নড়বে কিন্তু তখন তাদের হাতে করার কিছু থাকবে না ।
—————
বিদিশা চুপচাপ পিয়াসের সাথে সাথে হাঁটছে । নিজেকে বার বার স্বার্থপর ও মনে হচ্ছে । কারণ যে মা এত কষ্ট করে ছোট থেকে মানুষ করেছে কালকে তাকে অসম্মানিত হতে হবে । তবে একদিক থেকে ভালো লাগছে পিয়াস ওকে ভালো না বাসলেও ওর স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ওকে নিজের জীবনে জড়িয়ে নিয়েছে । হোক না সম্পর্কের শুরুটা অন্য কিছু দিয়ে তবে বিদিশার বিশ্বাস পিয়াস একদিন নিশ্চয়ই ওকে ভালোবাসবে । কিছুক্ষণ আগেই একটা কাজী অফিসে পিয়াসের বন্ধুদের উপস্থিতিতে ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে । এখন পিয়াস নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে । যদিও ও জানে বাসায় গেলে কি হবে । কারণ যেখানে ওকে ওর স্বপ্ন ছাড়তে হয়েছে সেখানে এই বিষয়ে তো ওকে অবশ্যই ঘর ছাড়তে হবে । তবে যতই হোক পিয়াস জানে স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট কেমন তাই নিজে না পারলেও অন্যকে এই একটা বিষয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত ।
– এখন কি করবেন ? আপনার বাবা তো আপনাকে তাজ্য পুত্র করে দিল ।
পিয়াস মুচকি হাসল । তারপর বলল – তোমার কি আফসোস হচ্ছে এখন ? আমাকে বিয়ে করার পরে ?
– না , হচ্ছে নাতো ।
– পারবে আমার সাথে গাছ তলায় থাকতে ?
– আপনি আমাকে ভালো না বাসলেও আমি বাসি । তাই আপনার সব পরিস্থিতিতে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি ।
– দেখা যাবে । ভালোবাসা কতক্ষণ থাকে । সে যাই হোক তোমার স্বপ্ন পূরণ হলে তুমি চাইলেই আমার থেকে আলাদা হতে পারবে । আমার কোনো আপত্তি থাকবে না । এই নাও এটার এগ্রিমেন্ট পেপার ।
বিদিশা একটু কষ্ট পেল ঠিকই তবে এ কথা গুলো পিয়াস বিদিশা কে আগেই বলেছে । আর বিদিশাও ওর শর্তে রাজি হয়েই এসেছে ।
———————-
আরফান নিজের ফোন বন্ধ করে বাসা থেকে অনেক দূরে একটা নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থান করছে । ওকে যে করেই হোক এই সব রহস্য জানতে হবে । মিহুকে এই অমঙ্গল থেকে রক্ষা করতে হবে ।
#চলবে