হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস পর্ব-২৬

0
327

#হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস
#পর্ব_২৬
#মোহনা_হক

-‘মা আজ তোমার ছোট বউমা’র জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিও। রুয়াত চলে আসবে।’

মায়া চৌধুরী আয়াজ কে দুপুরের খাবার বেড়ে দিচ্ছে। আজ সকালে বের হয়নি সে। একেবারে বারোটার সময় ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নিচে আসে। এখন খেয়েই বাসা থেকে বের হবে। আয়াজের এমন আশ্চর্যজনক কথা শুনে মায়া চৌধুরী অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে। কাল তো গিয়েছে আজ আসবে কেনো?

-‘সবেমাত্র কাল গিয়েছে। থাকুক না কয়েকদিন।’

শান্ত কন্ঠস্বর আয়াজের। গতরাতে রুয়াত বলেছে আজ আসবে। কাজ থাকার কারণে আয়াজ যাবে না। তাই ড্রাইভার কে পাঠিয়ে দিবে রুয়াত কে নিয়ে আসার জন্য।

-‘রুয়াতের সাথে কথা হয়েছে। বলেছে আসবে।’

মন মানলো না মায়া চৌধুরীর।
-‘দেখ বাবা রুয়াত চলে আসবে ইনিমা থেকে যাবে। মন খারাপ হবে তো তার। আর রুয়াতের মায়ের খুব ইচ্ছে হয়েছে মেয়েদের সাথে দু’টো দিন কাঁটাবে।’

-‘ইলেকশন শেষ হোক। তারপর আমিই দিয়ে আসবো তাকে।’

মায়া চৌধুরী মাথা নাড়ায়। আর কথা বাড়ালো না। রুয়াত যেহেতু বলেছে আসবে সেহেতু মায়া চৌধুরী আর কিই বা বলবে? আয়াজ খেয়ে চলে যায়। বাসায় তেমন কেউই নেই বলতে গেলে। শুধুমাত্র মায়া চৌধুরী ছাড়া। রুয়াত আর ইনিমা চলে যাওয়ার পর সবকিছু আরো খালি খালি লাগছে। আরহাম আর ফজলুল চৌধুরী ও বাসায় নেই। সে যার কাজে বের হয়ে গিয়েছে। বাসার বাহিরে এক গাদা সিকিউরিটি গার্ড। ইলেকশনের এ সময়টা তে আয়াজ সিকিউরিটি বাড়িয়ে দেয়। মায়া চৌধুরী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। চারটায় রুয়াতের জন্য ড্রাইভার পাঠিয়ে দিয়েছেন আয়াজের কথা মতো।

(*)

মেহরুবা মেয়ের পাশে বসে আছে। মনটা ভীষণ খারাপ। কাল মেয়েটা এসেছে আর আজ চলে যাবে। ইনিমা ঘুমিয়ে আছে। সে জানে না যে রুয়াত আজই আবার চলে যাবে। একটু আগেই রুয়াত মেহরুবা কে বলেছে। হান্নান মজুমদার বাসায় নেই। তিনিও তার কাজে বাহিরে গিয়েছে। রুয়াত তার অনেকগুলো কম্ফোর্ট ড্রেস নিয়ে নিলো। থ্রি পিস পড়ে ঘুমানোর অভ্যাস নেই তার। হঠাৎ কল আসায় রুয়াত সেদিকটার তাকায়। স্ক্রিনে আয়াজের নাম্বার। কল রিসিভ করে সে।

-‘আসসালামু আলাইকুম।’

প্রেয়সীর কন্ঠস্বরে আয়াজ স্মিত হাসে।
-‘ওয়া আলাইকুম সালাম। শুনো গাড়ি তোমার বাসার সামনে। আমার কাজ থাকায় আসতে পারিনি। তার জন্য সরি। তুমি চলে এসো।’

ছোট্ট করে উত্তর দেয় রুয়াত।
-‘জ্বী আচ্ছা।’

আয়াজ কল কেটে দেয়। রুয়াত ড্রাইভার কে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করায়নি। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে যায়। মেহরুবার মন খারাপ। ইনিমা উঠেছে অনেক্ক্ষণ হয়েছে। সে একটু সুস্থ হলেই যাবে। এখন যেতে ইচ্ছে করছে না। রুয়াত আসার সময় মেহরুবা কে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো কিছু সময়। কিন্তু আবার আয়াজের কথাও ফেলতে পারছে না। আবার কোনো একদিন এসে থাকবে। ইনিমা মজুমদার বাড়িতে থাকায় মা কে রেখে আসতে এতো কষ্ট হয়নি। সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে সে।

(*)

ইকরামুলের সব রহস্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তার সবগুলো দোকান ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে জনগণ। শুধু পুলিশ ইকরামুলের আশেপাশে থাকায় তাকে কোনো রকম আক্রমণ করতে পারেনি।

কিছুক্ষণ আগে

এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত করা হয় ইকরামুল তাহের কে। যেখানে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া মানুষজন রয়েছে। ইকরামুল অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে অনেক অভিযোগ এসে জমা হয় তার নামে। অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। আয়াজের এক্সিডেন্টের পিছনে যে ইকরামুলের হাত ছিলো সেটাও সামনে এসেছে। সবার সামনে ইকরামুল সত্য যেটা সেটাই স্বীকার করে। মুহুর্তের মধ্যেই সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে কথাটি। ইকরামুলের সাথে জড়িত সবাইকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জনগণ। বহু মানুষের টাকা পয়সা নিয়েছে। অনৈতিক কর্যক্রম সবার আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছিল। যখন সব সামনে আসে তখনই চারপাশের অবস্থা আরও বেশি জটিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ইকরামুল পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এমন নির্লজ্জ মানুষ রাজনীতি নামক এমন একটি জায়গায় না থাকাই ভালো৷ সভায় উচ্চস্বরে আয়াজ কথাটি বলে। ইকরামুল অসুস্থ থাকা অবস্থায় তাকে পুলিশ নিয়ে যায়। আয়াজ বের হয়ে আসে সভা ছেড়ে। মন খারাপ শুধু আজ একটি কারণেই হয়েছে যখন ইকরামুল বলেছিলো তার দলের সাথে আয়াজের দলের দু তিনজন অগোচরে ইকরামুলের হয়ে কাজ করেছিলো। পুলিশ জিগ্যেস করেছিলো আয়াজ কে এদের মাফ করে দিবে কিনা! আয়াজ মাফ করলে তাদের আর পুলিশ এরেস্ট করবে না। ছেড়ে দিবে। কিন্তু আয়াজ বলেছিলো ইকরামুলের থেকে যেনো তাদের বেশি শাস্তি দেওয়া হয়।

(*)

সন্ধ্যা হওয়ার আগেই রুয়াত বাসায় চলে আসে। মায়া চৌধুরী আর ফজলুল চৌধুরীর জন্য চা বানাচ্ছে। ফজলুল চৌধুরী এসেছেন একটু আগেই। বসে বসে টিভি দেখছেন। রুয়াত চা বানিয়ে মায়া চৌধুরী আর ফজলুল চৌধুরী কে দিয়ে আসে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। আপাতত আর কোনো কাজ নেই। আয়াজ আর আরহাম আসার পর সবাই রাতের খাবার খাবে। রুমে এসে শুয়ে পড়ে। এক সময়ে সে ঘুমিয়ে যায়।

রাত নয়টা।
বাসায় আসে আয়াজ। আরহাম এখনো আসেনি। আজ তেমন কোনো কাজ না থাকায় তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে। সব কাজ দিনের মধ্যেই শেষ করে ফেলে। ফজলুল চৌধুরী আয়াজ কে দেখে কিছু বললেন না। আগে আয়াজ ফ্রেশ হোক তারপর খাবার খাওয়ার পর কিছু কথা বলবে। আয়াজ তার নিজ কক্ষে আসে৷ একজন মায়াবী প্রেয়সী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আনমনে হাসে আয়াজ। রুয়াতের দিকটায় না গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। সারাদিন এতো কাজ করার পর ধুলোবালিতে মিশে যায় শরীর। কাজগুলো যে এক জায়গায় বসে থেকে করবে ঠিক তেমনটাও নয়।

শাওয়ার নিয়ে আসে আয়াজ। এখনো রুয়াত ঘুমাচ্ছে। তোয়ালে দিয়ে চুলের পানি মুছে ফেলে। হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখে৷ অতঃপর রুয়াতের পাশে গিয়ে বসে। প্রেয়সীর গালে হাত বুলিয়ে দেয়। অধর ছুঁয়ে দেয় প্রেয়সীর পাতলা অধরে। আচমকা রুয়াত চোখ মেলে। চোখ খুলতেই দেখে আয়াজের মুখখানা। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।

-‘আপনি? কখন এসেছেন?’

আয়াজ একটু দূরে সরে আসে। রুয়াতের চোখ মুখে ভয়। ভয়টা আয়াজের আগমনে নয়। বরং আয়াজের এরূপ কাজে।

-‘এসেছি একটু আগে।’

রুয়াত উঠে দাঁড়ায়। ওড়না পেচিয়ে দেয় শরীরে।
-‘আমায় ডাকেননি কেনো? সে সন্ধ্যায় ঘুমিয়েছি। একা ভালো লাগছিলো না তাই! আসুন খেতে যাবেন।’

আয়াজ রুয়াতের সম্মুখে দাঁড়ায়। মেয়েটা কে টেনে নেয় তার কাছে।
-‘ভয় পেয়েছো?’

মাথা নিচু করে রুয়াত।
-‘ঘুমিয়ে ছিলাম বলে হঠাৎ ভয় পেয়েছি।’

আয়াজ রুয়াত কে তার বুকে টেনে নেয়। প্রথমে যেটা ভেবেছিলো সেটাই হয়েছে। মন শান্ত হয় রুয়াতের। এখন আর ভয় লাগছে না। বরং ভালো লাগছে। কিছু সময় আয়াজ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার প্রেয়সী কে। রুয়াত কে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

-‘নিচে আসো। আমি যাচ্ছি।’

আয়াজ চলে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দেয় রুয়াত। অতঃপর নিচে আসে। কেমন যেনো গম্ভীর ভাব সবার মধ্যে। যেখানে এতো গম্ভীর ভাব থাকলেও আরহাম হেসে তা উড়িয়ে দিতো আজ সে ও চুপ। মায়া চৌধুরী এখানে নেই৷ ফজলুল চৌধুরী টিভি দেখছেন। আয়াজ আরহাম দু’জন চুপচাপ ফোন দেখছে। রুয়াত মায়া চৌধুরী কে ডেকে আনে। তার সাহায্য নিয়েই সবাই কে রাতের খাবার বেড়ে দেয়। খেয়েদেয়ে সবাই বসেছেন। আয়াজ ধরতে পেরেছে কিছু একটা হবে হয়তো। রুয়াত একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। মায়া চৌধুরীর মুখটাও গম্ভীর হয়ে আছে।

-‘আয়াজ তুমি প্রথম থেকেই জানো আমরা তোমার রাজনীতি করা বিষয়ে অ’মত ছিলাম।

ফজলুল চৌধুরীর মুখ থেকে যেনো আয়াজ কথা ছিনিয়ে আনে। শক্তপোক্ত স্বরে রুয়াতের উদ্দেশ্যে বলে-
-‘রুয়াত তুমি উপরে যাও।’

প্রথমে ফজলুল চৌধুরীর কথা তারপর আয়াজের কথা দু’টো বুঝতে খানিকটা সময় লাগলো তার। ঠাঁয় সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। আবারও আয়াজ বললো-

-‘উপরে যেতে বলেছি রুয়াত।’

কোনো রকম কথা না বলেই রুয়াত উপরে চলে আসে। আয়াজের কথা বলা সময়ে সবার নজর তার দিকেই ছিলো। পূনরায় ফজলুল চৌধুরী বলে-

-‘কে বুদ্ধি দিয়েছিলো তোমায় রাজনীতি তে যোগ দিতে। কখনো তোমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলিনি। আরহামের সাথে ও বলিনি। তোমার মায়ের বিয়ের আট বছর পর তুমি জন্ম নেও। আরহাম তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়। যখন আমার দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার আগাম বার্তা শুনি তখন আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হয়নি। বলতে পারো তোমরা দু’জন আমার শখের। আমি তোমাদের ভালো চাই। আর পৃথিবীর কোনো বাবা মা সন্তানের খারাপ চায় না। আরহাম যেমন শান্ত ছিলো ছোটবেলা থেকে তুমি ছিলে তার উল্টোটা। রগচটা স্বভাব তোমার। তোমার রাগের কাছে হেরে যাই বারবার। তেমনই তুমি যখন রাজনীতিতে যোগ দাও তখনও তোমাকে ক’টা কড়া কথা শোনাতে পারিনি। কথায় আছে পিতা মাতার অধিক স্নেহ সন্তানের জন্য মঙ্গলজন নাও হতে পারো। আশাকরি কথাটা তুমি বুঝেছো। আমি এটাও বলবো না যে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তুমি খারাপ কিছু করেছো। না আজ পর্যন্ত আমি খারাপ শুনেছি তোমার নামে। আমি আমার নিজের পরিচয় বাদ দিলে সর্বপ্রথম তোমার সাথে সম্পর্কিত আমার পরিচয় চলে আসে। সবাই আমাকে চিনে এমপি আয়াজ ত্বায়ীম চৌধুরীর বাবা হিসেবে। তোমার জন্য মানুষ আমাকে বিশেষ এক নজরে দেখে। সম্মান করে। একজন বাবার আর কি চাই? তোমার জন্য মানুষ আমায় চিনে। আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারবো আমি একজন গর্বিত বাবা। শুধুমাত্র তোমার কাজের জন্য। আজ ইকরামুলের দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে। সে অনৈতিক কাজে জড়িত ছিলো। পদত্যাগ করেছে। অবশ্য তুমি সেখানে উপস্থিত ছিলে ভালো করেই কথাগুলো জানো। তোমার দলের কিছু লোক ইকরামুলের সাথে জড়িত ছিলো। তুমি শুধু ভাবো তোমার দলের লোক শত্রুতা করেছে তোমার সাথে। এগুলো আর কতদিন? এই যে কিছুদিন আগে এক্সিডেন্ট হলো তোমার। তার জন্য কিন্তু ইকরামুল দায়ী ছিল। কেনো দায়ী ছিলো? তোমাদের মধ্যে মনমালিন্য ছিলো। আর সেটার উৎপত্তি রাজনীতি। রুয়াত কে কিন্তু তার বাবা কখনো তোমার হাতে তুলে দিত না। আমরা তাকে বুঝিয়ে বলেছি। তাকে কথা দিয়েছিলাম তার মেয়ে ভালো থাকবে তোমার সাথে।’

ফজলুল চৌধুরী এক নাগাড়ে কথাগুলো বললেন। কিছুক্ষণের জন্য একটু থামলেন।

-‘তোমার কথা রাখার জন্য আমি রুয়াতের বাবা হান্নান সাহেব কে জোর করি। তিনি আমায় ভরসা করে বলেই রাজি হয়েছেন। তার আদরের মেয়েকে তুলে দিয়েছেন নির্দ্বিধায়। আমরা সবাই জানি রুয়াত রাজনীতি পছন্দ করে না। তাও তোমার সাথে থাকছে। বাবার ঊর্ধ্বে কথা বলেনি। মেনে নিয়েছে তার বাবার কথা। আমার শুধু একটাই কথা তুমি নিজে ভালো থেকো। যেই পেশায় থাকো না কেনো তুমি আগে নিজেকে নিরাপদ রাখো। আর আমার সম্মানটা রেখো হান্নান সাহেবের কাছে তার মেয়েটা কে ভালো রেখো। তোমাকে আমি তোমার জায়গা থেকে সরে আসতে বলবো না। তুমি দিনশেষে সৎ থাকো। এখন যেভাবে আছো ঠিক সেভাবেই থেকো। আমি যেনো পরবর্তী সময়ে ও তোমায় নিয়ে একই ভাবে গর্ববোধ করতে পারি।’

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে ফজলুল চৌধুরী উঠে চলে গেলেন। আয়াজ চুপচাপ বসে শুনেছে। আরহাম আর কিছু বলার সাহস পেলো না। আর এখানে সবগুলো কথাই যুক্তিসম্মত কথা। মায়া চৌধুরী ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর তিনিও চলে গেলেন। আয়াজের কানে শুধু তার বাবার কথাগুলো ভাসছে। আরহাম আয়াজের দিকে তাকালো। শান্ত হয়ে বসে আছে তার ভাই। তাকে স্বাভাবিক করার জন্য আরহাম বলে-

-‘এমপি আয়াজ ত্বায়ীম চৌধুরী কে এমন নিস্তব্ধতা মানায় না। তার সাথেই যায় না এটা।’

আয়াজ মাথা তুলে আরহামের দিকে তাকায়। কথার কোনো উত্তর দিলো না। উপরে তার রুমে চলে আসলো। রুয়াত বেডে বসে পা দুলাচ্ছে। আয়াজ রুয়াতের সামনে বরাবর হাটু গেড়ে বসে পড়লো। কিছুটা অবাক হয় সে। উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আয়াজ রুয়াতের হাত ধরে। শান্তস্বরে বলে-

-‘তুমি রাজনীতি পছন্দ করো না। অথচ আমি সে জিনিসটার সাথেই জড়িত। আমি বলেছিলাম আমি মা’রা গেলেও তোমাকে অক্ষত রেখে যাবো। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করবো কথাটি রাখতে। বাকিটা আল্লাহর হাতে। কাল তোমায় কেনো বলিনি আমরা কাল কোঁথায় যাচ্ছি? আজ কেনো আমাদের কথা বলার সময়ে তোমাকে উপরে পাঠিয়েছি জানো? কারণ এই দু’দিনের ঘটনার সাথে রাজনীতি নামক শব্দ বিদ্যমান ছিলো। তোমাকে আমি রাজনীতি পছন্দ করতে বলছি তা নয়, তুমি শুধু আমায় ভালোবাসো। আর কিছু চাই না। আমার খারাপ সময় ভালো সময় শুধুমাত্র আমার পাশে থেকো। আমি বেঁচে থাকতে কখনো রাজনীতি রিলেটেড কিছু তোমায় ফেস করতে দিবো না। আমায় বিশ্বাস করো না? নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বুঝো? যারা কোনো রকম স্বার্থ ছাড়াই ভালোবাসে! আমি ঠিক সেরকম তোমায় ভালোবাসি। যেখানে কোনো স্বার্থ নেই। মানুষের মধ্যে কিছু ত্রুটি থাকে যেমন তার স্বভাব, কথাবার্তা। পৃথিবীর সব মানুষ শুদ্ধতম নয়। হয়তো আমার মধ্যেও কিছু ত্রুটি আছে। রাজনীতি করাটাকে সবাই ভাবে খারাপ। আমি তোমায় জোর দিয়ে বলতে পারবো আয়াজ এই প্লাটফর্মে এসে খারাপ কিছু করেনি। না একটা মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলেছে। আমার পেশা ঠিক এমন যে সবার সাথে কথা বলতে হয়। হয়তো কিছু কিছু সময়ে কয়েকজনের দিকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে চোখ পড়েছে কিন্তু নিজ ইচ্ছায় কখনো তাকায়নি। তোমায় আমি সম্মান করি প্রেয়সী। তুমি আমার সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ ভালোবাসা। তুমি শুধু আমার সঙ্গে থেকে যেও সারাজীবন।’

ঢোক গিলে রুয়াত। এমন কঠিন মানবের কাছ থেকে এগুলো শুনতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। আয়াজ কে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করে। কখনো গ’লা কেঁটে দিলেও যেনো মানুষটা কে অবিশ্বাস করতে পারবে না। আয়াজের হাতের উপর হাত রাখে রুয়াত।

-‘আমি ভালোবাসি তোমায়। খুব বেশি ভালোবাসি। আচ্ছা প্রেয়সী তুমি আমার বাহিরের দিকটায় না তাকিয়ে আমার ভিতরের দিকটা দেখো। আমার সাথে কি থাকা যায় না? তুমি থাকবে না আমার সাথে? আমার জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত? বলো না প্রেয়সী! তুমি শুধু আমার হয়ে থেকে যাও আমি আর কিছু চাই না।’

বুক কেঁপে উঠে রুয়াতের। আয়াজের ভাঙ্গা স্বরের কথাগুলো শুনে। আয়াজ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। আর কন্ট্রোল করতে পারলো না নিজেকে। আয়াজের বক্ষে মাথা রেখে কেঁদে দিলো।

-‘আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না এমপি সাহেব। ভালোবাসি আপনাকে। আমি আপনার বাহিরের দিক ভিতরের দিক, আপনার স্বভাব, চরিত্র, কথাবার্তা সবকিছু ভালোবাসি। আমি আপনার হয়ে থেকে যেতে চাই সব সময়।’

কান্নারত কণ্ঠে রুয়াত কথাটি বলে। রুয়াতের মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটি শুনে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে আয়াজের। অদ্ভুত শান্তি অনুভব হচ্ছে। রুয়াতের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

-‘উহু প্রেয়সীকে কাঁদানোর জন্য তো তাকে আমি তার বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসিনি। ভালোবাসা স্বীকার করেছো এবার ভালোবেসে দেখাও। তৈরি হয়ে নাও রুয়াত ফাইরোজ তয়ত্রী।’

আয়াজের বুক থেকে মাথা তুলে তাকায় রুয়াত। একটু আগেই তো কি সুন্দর কথা বলছিলো এখন আবার শুরু হয়েছে উল্টো পাল্টা কথা। রুয়াতের চাহনি দেখে আয়াজ হেসে ওঠে। প্রেয়সীর কানে তার অধর ছুঁয়ে দেয়। কোমড় উঁচু করে তার সম্মুখে নিয়ে আসে। রুয়াত আয়াজের পিঠের উপরিভাগ খামচে ধরে। অধর ছুঁয়ে দেয় প্রেয়সীর পাতলা অধরে। সাথে সাথেই আবার নিজ থেকে সরে আসে। রুয়াত কে কোলে করে নিয়ে বেডে শুইয়ে। আয়াজের হাত প্রেয়সীর বস্ত্রবিহীন জঠরে। রুয়াতের সে পরিচিত স্বভাব আর গেলো না। কেঁপে ওঠার সাথে সাথেই আয়াজের উন্মুক্ত বক্ষে মুখ লুকায়। সে রুয়াতে মত্ত। আশেপাশে মনোযোগ নেই। পরিশেষে প্রেয়সীর ঘামতে থাকা গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। অতঃপর হেসে বলে-

-‘ এ #হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস।’

#চলবে….