হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-১৩+১৪

0
121

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ১৩

ব্যস্ত কোলাহল থেকে মাঝে মাঝে নিজেকে সুনসান নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে নিজেকে নিজে সময় দেওয়াটা আসলেই অন্যরকম। এই নিরিবিলির মাঝে চেনা যায় নিজেকে। ব্যস্ত কোলাহলের মাঝে থেকে মানুষ যেনো নিজেকেই নিজে চিনতে ভুলে যায়। যার ফলে কোমল হৃদয়টাও ধীরে ধীরে পাথরে পরিনত হয়।

সুনসান নিরিবিলি নিস্তব্ধ রাতে রাস্তার মাঝে গাড়ি থামিয়ে গাড়ির ডিকির উপরে বসে ভাবনায় বুঁদ হয়ে আছে তাজ। যদিও ছেলেটা এই নিরিবিলি জায়গায় নিজেকে সময় দিতে আসেনি বরং হঠাৎ উঠে যাওয়া নিজের অপ্রত্যাশিত রাগকে দমন করতে এসেছে। নিজের রাগ দমন করতে আসলেও এই নিরিবিলি প্রকৃতি যেনো তাজকে নিজেকে নিজের চেনার সুযোগ দিচ্ছে। তাজ এই নিস্তব্ধ নিরিবিলি প্রকৃতির মাঝে হুট করে হারিয়ে গেলো অন্য এক জগতে…

নীল শাড়ি পরিহিত এক শুভ্র পরীর পা জোড়া সবে ছাঁদে পড়তে থমকে গেলো এক তাগরা যুবজের হৃৎস্পন্দ। শুভ্র পরীর পাতলা ঠোঁটের ভাঁজে লেগে থাকা স্নিগ্ধ হাসি তীরের মতো যেয়ে বিধলো সেই যুবকের বুক পাঁজরে। শুভ্র পরীর মায়াবী চোখজোড়ার দিকে তাকাতে মনে হলো তার অনুভূতিহীন পাথর রাজত্বের বাহিরেও সুন্দর এক রাজত্ব আছে। শুভ্র পরীর মাঝে সেই রাজত্বের হদিস খুঁজত যেয়ে চোখে পড়ে গেলো শুভ্র পরীর পিঠে অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস অন্য কারো চোখে পড়ার আগে সেই যুবক শুভ্র পরীর সাথে যেচে কথা বলতে গিয়ে তাকে রাগিয়ে দিলো। শুভ্র পরী যখন রাগে নাকের পাটা ফুলিয়ে সেই যুবকের দিকে তাকিয়ে ছিলো তখন যুবক সেই অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসের কথা জানান দিতে মুহূর্তের মাঝে শুভ্র পরীর মুখের আদল পালটে গেলো। ফর্সা গালে ছড়িয়ে পড়লো রক্তিম আভা। কিছুক্ষণ আগেও নাকের পাটা ফুলিয়ে সেই যুবকের দিকে তাকিয়ে থাকা শুভ্র পরীর চোখ যেয়ে ঠেকলো পায়ের পাতায়। লজ্জায় হাসফাস করে শুভ্র পরী পিঠে আচল টেনে সেই যুবের থেকে পালাতে চোখমুখ খিঁচে ছুটে চলে গেলো তখন আচমকা অন্য এক যুবকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে সেই যুবক শুভ্র পরীর হাত আকরে ধরলো। শুভ্র পরীর হাত অন্যের হাতের অধীনে আবদ্ধ হতে মুহূর্তের মাঝে সেই যুবকের সবে ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠা শুপ্ত হাসির রেখাটা মিইয়ে গেলো। হুট করে মাথায় চেপে বসলো রাগের পাহাড় এই ভেবে শুভ্র পরীকে কেনো ছুঁয়ে দিলো অন্য কেউ। মনে মাঝে উকি দিলো শুভ্র পরীকে অন্য কারো ছোয়া বারন তাহলে কেনো অন্য কেউ স্পর্শ করলো শুভ্র পরীকে ভাবতে মুহূর্তের মাঝে ধপধপ করে মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো। ইচ্ছে করলো সেই যুবকের হাতটা তার শরীর থেকে আলাদা করে দিতে কিন্তু যুবকের দিকে তাকিয়ে নিজের ইচ্ছেটা মিইয়ে গেলো কিন্তু রাগ কমলো না। এই রাগ নিয়ে সবার মাঝে থাকলে কোনো একটা সিনক্রিয়েট করে ফেলবে এই ভেবে হনহনিয়ে কোলাহল থেকে বেরিয়ে এসে থামলো সুনসান নিরিবিলি নিস্তব্ধতায় ঘেড়া এই মাঝরাস্তায়।

হঠাৎ ফোনের শব্দে ভাবনার ছেদ ঘটলো তাজের। তাজ ফোন হাতে নিতে আরফি নামটা জ্বল জ্বল করে উঠলো। তাজ জানে কেনো এই নাম্বার থেকে ফোন এসেছে কিন্তু ফোন রিসিভ করার ইচ্ছে হলো না। আজ সব কিছু রেখে ছেলেটা চাচ্ছে নিজেকে চিনতে। কি আছে ওই মেয়ের মাঝে যার জন্য হুট করে ওই মেয়ের প্রতি উইকনেস কাজ করছে৷ ওতো এমন ছিলো না। সবাই এক বাক্যে অবলীলায় বলে দিতো অনুভূতিহীন তাজরিয়ান চৌধুরী। তাহলে সেই অনুভূতিহীন হৃদয় হুট করে এমন এলোমেলো হয়ে কেনো যাচ্ছে?

তাজের ভাবনার মাঝে আবার আরফির ফোন বেজে উঠতে তাজ বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করতে আরফি বলে উঠলো কই তুই?

তাজ চোখমুখ কুঁচকে ঠিকানা বলতে আরফি অবাক হয়ে বলল, এতো রাতে ওই নির্জন রাস্তায় একা কি করছিস?

ভূতের সাথে স্বাক্ষাত করতে এসেছি, আর কিছু জানার আছে? দাঁতে দাঁত চেপে বলল তাজ।

আরে বাবা রেগে যাচ্ছিস কেনো? পার্টিতে থাকবি না? আঙ্কেল আন্টিরা চলে এসেছে। আঙ্কেল এসে তোকে না পেলেইতো বয়ান শুরু করে দিবে।

আজকের জন্য বাবাকে সামলে নে আমি যেতে পারবো না এ বলে খট করে ফোন কেটে দিলো।

তাজ ফোন কাটতে আরফি হতাশ চোখে কেটে যাওয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে শুধালো তোর এই হুটহাট রেগে যাওয়ার বদমেজাজি স্বভাব কি কোনো দিন যাবে না?

***
আদরিবার বার্থডে পার্টিতে চৌধুরী পরিবারের বড়রা সবাই উপস্থিত হলো। তাজ, সাফওয়ান আর রুশা আগে চলে এসেছিলো৷ বলা বাহুল্য চৌধুরী আর তালুকদার পরিবারের একে অপরের সাথে অমায়িক সম্পর্ক। আদরিবার বাবা আমজা তালুকদারের আর তিফাজ চৌধুরী ছোট বেলার বন্ধু সেই হিসেবে আস্তে আস্তে দুই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে এক গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠলো। এই দুই পরিবারের মাঝে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও সম্পর্কগুলো রক্তের চেয়েও আপন।

চৌধুরী পরিবারের সবাই উপস্থিত হতে আমজা তালুকদার হাসি মুখে তিফাজ চৌধুরীর সাথে হ্যান্ডসেক করে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। তাহমিনা আর রেহেনা বেগমকে দেখে আমেনা বেগম এক প্রকার ছুটে গিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। রশিক মানুষটা মুহূর্তে মাঝে সবার সাথে গল্পে ভান্ডার খুলে বসলো। তিনি গল্প করতে করতে তাহমিনা আর রেহেনা বেগমকে নিয়ে গেলো ফারজানা বেগমের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। ফারজানা বেগমের কাছে আসতে তাহমিনা বেগমের পা জোড়া থেমে গেলো গেলো।

এদিকে ফারজানা বেগম কারো সাথে কথা বলতে বলতে আমেনা বেগমের ডাকে পাশ ফিরতে বুঝতে ভিতর ধক করে উঠলো। তিনি অবাক হয়ে শুধালো তাহমিনা…

তাহমিনা বেগম ও একি ভাবে চমকে ফারজানা বেগমের কাছে যেয়ে এক নাগাড়ে বলে উঠলো,

ফারজানা তুই? হুট কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি তুই? কত খুঁজেছি তোকে কিন্তু কোনো খোঁজ পাইনি। আজ কত বছর পর তোর দেখা পেলাম।

ফারজানা আর তাহমিনা ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো৷ এক সাথে পড়ালেখা করতো। এসএসসির পর তাহমিনা বেগমের বিয়ে হয়ে গেলো তখনো দুই বান্ধবীর মাঝে সবসময় যোগাযোগ হতো। তারপর বিয়ের বছর খানেকের ভিতরে তাহমিনার কোল আলো করে তাজের জন্ম হয়। তাজ জন্মের পর তাহমিনা বেগমের ব্যস্ততা বেড়ে গেলো কয়েক গুন। এর ভিতরে হুট করে ফারজানা বেগমের বিয়ে হয়ে যায়। ফারজানা বেগমের বিয়ের পর হুট করে দুই বান্ধবীর মাঝে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাহমিনা বেগম অনেক খোঁজ নিয়েও বান্ধবীর কোনো খোঁজ পায়নি। আজ এতগুলো বছর পর বান্ধবীর সাথে দেখা পেয়ে তাহমিনা বেগমের চোখজোড়া জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো।

ফারজানা বেগমও এতো বছর পর বান্ধবীর দেখা পেয়ে আবেগে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা অশ্রু। ফারজানা বেগম যেয়ে তাহমিনা বেগমকে ঝাপটে ধরলো। এতগুলো বছর পর দুই বান্ধবী এক হওয়ায় দুজনের মনে খেয়ে গেলো এ খুশির ঢেউ। যেহেতু আজ আদরিবার বার্থডে পার্টি তাই ফারজানা বেগম নিজের অতীত সম্পর্কে বান্ধবীকে কিছু না বলে জানান দিলো অন্য এক সময় সব খুলে বলবে।

তারপর একে একে তাহমিনা বেগমের পরিবারের সাথে কুশল বিনিময় করলো ফারজানা বেগম। সবার সাথে কথা হলেও তাজের সাথে সাক্ষাৎ হলো না কারণ তাজ এখানে উপস্থিত নেই। তাজের জন্মের পর শুধু একবার তাজকে দেখেছিলো ফারজানা বেগম তারপর হুট করে ওলোট পালোট হয়ে গেলো তার জীবনটা। তাজের জন্মের পর যখন তাজকে দেখতে গিয়েছিলো তখন রেহেনা বেগম নতুন বউ ছিলো। তাহমিনা বেগম ফারজানা বেগমকে রুশাকে দেখিয়ে বলল এটা আমার আরেকটা মা।

রুশা মুচকি হেঁসে ফারজানা বেগমকে সালাম জানালো।

ফারজানা বেগম সালামের জবাব দিয়ে ফারিসতাকে ডেকে এনে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।

ফারিসতাকে এক দেখায় মুগ্ধ হয়ে গেলো সবাই। তাহমিনা বেগম ফারিসতার থুতনিতে হাত রেখে বলল, মা শা আল্লাহ ফারজানা তোর মেয়েতো তোকেও সৌন্দর্যের হার মানিয়ে দিলো।

তাহমিনা বেগমের কথায় ফারিসতা মুচকি হাসলো তখন রুশা পাশ থেকে বলে উঠলো এই যে কিউটিপাই আমার সাথেও ওতো পরিচিত হও। ধরে নেও আমি তোমার বড় বোন। ফারজানা আন্টির কথা অনেক শুনেছি বড় ময়ের মুখে। অনেক ভালো লাগছে তোমাদের সাথে দেখা হয়ে।

বড়দের মাঝে ফারিসতা এতক্ষণ মিইয়ে থাকলেও রুশার চঞ্চলতা দেখে যেনো নিজের চঞ্চলতা ফিরে পেলো। মুহূর্তের মাঝে ফারিসতা রুশার সাথে মিশে গেলো সাথে তাহমিনা, রেহেনা বেগমের সাথেও। ফারিসতার এমন চঞ্চলতা দেখে রেহেনা বেগম বলে উঠলো ভারী মিষ্টি মেয়ে তুমি। তখন ওখান দিয়ে সাফওয়ান যাচ্ছিলো তা দেখে তাহমিনা বেগম সাফওয়ানকে ডাক দিতে সাফওয়ান তাদের কাছে এগিয়ে আসতে তাহমিনা বেগম ফারজানা বেগম আর ফারিসতার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ও সাফওয়ান রেহুর বড় ছেলে।

তাহমিনা বেগমের কথা শেষ হওয়ার আগে রুশা মুখ ভেঙচিয়ে বলে উঠলো বেশি না আমার চেয়ে মাত্র পাঁচ মিনিটের বড়।

রুশার কথায় সবাই হেসে দিলেও ফারিসতার চোখ কপালে উঠে গেলো সাফওয়ানকে দেখে। এই ছেলেকে তখন যা-তা বলেছে আর এই ছেলে নাকি রেহেনা আন্টির ছেলে ভাবতে ফারিসতা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো।

এদিকে সাফওয়ান প্রথমে ফারিসতাকে দেখে চমকে উঠলেও তাহমিনা বেগমের কথার মানে কিছুই ঢুকলো না মাথায়। সাফওয়ান প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাহমিনা বেগমরে দিকে তাকাতে তাহমিনা বেগম বলে উঠলো,

এটা তোমার ফারজানা আন্টি আর ওর মেয়ে। অনেক বছর পড় দেখা হলো আমাদের তাই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলাম।

তাহমিনা বেগমের কথায় সাফওয়ান বিষয়টা বুঝতে পেরে ফারজানা বেগমের উদ্দেশ্যের বলে উঠলো আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন? বড় মায়ের কাছে অনেক শুনেছিলাম আপনার কথা।

সাফওয়ানের কথায় ফারজানা বেগম স্মিত হেঁসে সালাম এর উত্তর দিয়ে সাফওয়ানের সাথে কুশল বিনিময় করলো। সাফওয়ান কিছুক্ষণ তাদের মাঝে থেকে সেখান থেকে যাওয়ার সময় আরো চোখে একবার তাকালো ফারিসতার বিব্রতকর মুখশ্রীর দিকে। এই মেয়ে একটু আগে কতগুলো অপবাদ দিলো। একটু আগে দেখা রাগী মেয়েটার এখন বিব্রতকর মুখশ্রী দেখে মজা পেলো সাফওয়ান।

***
সবার কথা বার্তা খুনসুটির মাঝে ছাঁদে আগমন ঘটলো আদরিবার। হালকা আকাশী কালার শাড়িতে উজ্জ্বল বর্ণে মেয়টাকে অষ্পরীর চেয়ে কোনো অংশ কম লাগছে না। আদরিবা সবার আগে ফারিসতা আর রাশফিয়ার কাছে চলে গেলো। ফারিসতা আর রাশফিয়ার কাছে আদরিবার আসতে ফারিসতা আর রাশফিয়া এক সাথে বলে উঠলো মা শা আল্লাহ একদম পুতুলের মতো লাগছে তোমায়।

ফারিসতা আর রাশফিয়ার প্রশংসায় আদরিবা এক গাল হেঁসে জানান দিলো তোমাদের ও খুব সুন্দর লাগছে। ফারিসতা আর আদরিবা ওর রিকোয়েস্টে শাড়ি পড়ায় মেয়েটার খুশি দেখে কে৷ কেউ এতো অল্পতেও খুশি হয়ে যেতে পারে তা এই মেয়েটাকে না দেখলে বোঝাই যেতো না। তিনজন মিলে বেশ অনেক সময় ধরে আড্ডা দিলো। যেহেতু বার্থডে গার্ল আদরিবা তাই আজ সবাই ওকে ঘিরে ধরেছে তাই সবাইকে সময় দেওয়া লাগছে ওর তাই ফারিসতা আর রাশফিয়ার সাথে আর সময় কাটানোর সুযোগ না পেতে আদরিবা কাঁদো কাঁদো ফেইস করে ফারিসতা আর রাশফিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,

ঠিক মতো তোমাদের সময় দিতে পারছি না তই বলে আমার উপরে রাগ করো না প্লিজ।

আদরিবার বাচ্চা বাচ্চা কথায় ফারিসতা আর রাশফিয়া হেসে দিলো। এই মেয়ে হাতে পায়ে লম্বা হলেও এখনো বাচ্চামো স্বভাস রয়ে গিয়েছে তা দেখে ফারিসতা বলে উঠলো, ওলে আমাদের বাচ্চা বান্ধুবী। তুৃমি এত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের যথেষ্ট সময় দিয়েছো। বুঝতে পারছি তোমার অবস্থা। এবার ফ্যামিলি, কাজিনদের সময় দেও আমরা কিছু মনে করবো না। আমরা তো একা না আমি আর রাশফিয়া তো আছি তাই খারাপ লাগবে না।

আদরিবা দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে বলে উঠলো সত্যি তো?

রাশফিয়া আদরিবার পিঠে মৃদু চাপর মেরে বলল পাক্কা সত্যি তুমি একদম টেনশন নিও না। আমরাতো ভার্সিটিতে সারাদিন এক সাথে থাকি এই। আজ সবাইকে সময় দেও।

আদরিবা ফারিসতা আর রাশফিয়ার কথায় স্বস্তির ফেলে ওদের ওখান থেকে প্রস্থান নেওয়া সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগলো। কিছুক্ষণ খোঁজার পর চোখে পড়লো কাঙ্ক্ষিত মানুষটা ওর দিকেই আসছে তা দেখে আদরিবার বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো। কাঙ্ক্ষিত মানুষটা ওর সামনে আসতে আদরিবা দুরুদ দুরুদ বুকে মুচকি হেঁসে বলল,

সাফওয়ান ভাই আমাকে কেমন লাগছে?

সাফওয়ান একপলক আদরিবার হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে বলল ভালো।

সাফওয়ানের মুখে শুধু ভালো শব্দটা শুনে আদরিবার হাস্যজ্জ্বল মুখে নেমে আসলো একরাশ আঁধার। যার জন্য মন উজাড় করে তার পছন্দের কালার দিয়ে নিজেকে সাজিয়েছে তার মুখের একটু প্রশংসা পাওয়ার আশায় সেখানে তার মুখে প্রত্যাশিত প্রশংসা না পেয়ে আদরিবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো এই ভেবে যে এ আর নতুন কি। যার জন্য মনে বেঁধেছে হাজারো স্বপ্ন সেই খবর কি আদো সে রাখে?

কেক কাঁটার সময় হয়েছে চল এ বলে আদরিবার হাত ধরে সামনে হাঁটা দিলো সাফওয়ান। ব্যস মুহূর্তের মাঝে আদরিবার মন খারাপ ভ্যানিশ হয়ে গেলো। যদিও জানে সাফওয়ান ওকে ভালোবেসে হাত ধরেনি। পরিবারের সবার ছোট হওয়ায় আদরিবা সবার একটু বেশি আদরের৷ সেই হিসেবে চৌধুরী পরিবারের প্রতিটি সদস্য ও ওকে খুব ভালোবাসে। সেই ভালো পাওয়ার টানে সাফওয়ান ও কে আগলে রাখে আরফির মতো কিন্তু আদরিবা এই আগলে রাখার মাঝে হুট করে মন হারিয়ে ফেলেছে এই ভদ্র সভ্য ছেলেটার উপরে।

#চলবে?

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ১৪

আদরিবার বার্থডে পার্টিতে আরফিকে সব জায়গায় দেখে এবং নিজ দায়িত্বে সব কিছু করতে দেখে ফারিসতা চোখ গোল গোল করে বলে উঠলো উনি কি আদরিবার কেউ?

ফারিতার কথায় রাশফিয়া বলল কার কথা আরফি তালুকদারের কথা বলছিস?

হঠাৎ রাশফিয়ার উত্তরে ফারিসতা ভ্রু কুঁচকে বলল, তুই তার নাম জানলি কি করে?

ফারিসতার প্রশ্ন রাশফিয়া ফারিসতাকে তখন আরফির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া তারপর আরফির সাথে কথোপকথন সব কিছু খুলে বলতে ফারিসতার চোখ কাপলে উঠে গেলো। ফারিসতা মাথায় হাত দিয়ে এলোমেলো ভাবে বলে উঠলো দোস্ত তাহলেতো সর্বনাশ হয়ে গেছে। আর উল্টা পাল্টা কিছু করলে আম্মু আবার সিলেট চলে যাবে। জানিস এইতো আম্মু যা একবার বলে তা করেই ছাড়ে সেই জন্য এই তাজ ফাজদের গ্যাঙ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবো ভেবেছি সেখানে উল্টো এদের আরো কছে চলে এসেছি। দোস্ত এদের কোনো কাজ আমার পছন্দ না আমি শিওর এদের আশপাশে থাকলে আমি নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে পারবো না উল্টো এদের সাথে বাজিয়ে দিবো তখন মা আবার সিলেট নিয়ে যাবে আর আমার সব স্বপ্ন ভেঙে যাবে। এখন এই বাসাও ছাড়তে পারবো না কারণ বাসা আমি এই চয়েস করেছি। বাসাটা এক দেখায় এতো পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো যে আম্মুকে পাগল বানিয়ে ফেলেছি এই বাসায় এই উঠবো। এখন বাসা ছাড়ার কথা বললে আম্মু বুঝে যাবে কোনো ঝামেলায় জড়িয়েছি। এখন কি হবে দোস্ত? টেনশনভরা মুখে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে শেষের কথা বলে উঠলো ফারিসতা।

ফারিসতার আহাজারিতে রাশফিয়া ফারিসতার মাথায় গাট্টা মেরে বলে উঠলো নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে পারবি না কেনো? এখন থেকে নিজের রাগকে অন্তত কন্ট্রোল করতে শেখ। নিজের আর আন্টির ভালো চাইলে তাজ চৌধুরীর সাথে আর ঝামেলায় জড়াবি না। আর আরফি তালুকদার মনে হয়না তাজ চৌধুরীর মতো অতটা উগ্র স্বভাবের। ওনার সাথে বাজাবাজি না করে সাধারণ ভাবে থাকবি তাহলে বাসাও ছাড়ার প্রয়োজন পড়বে না।

রাশফিয়ার কথায় ফারিসতা টেনশন কমলো না। ওর নিজের মাথায় উপরে নিজের এই নিয়ন্ত্রণ নেই তাই হুট হাট মাথা গরম হয়ে গিয়ে কি কখন কি করে ফেলে নিজেও জানেনা।

****
ঝড় আসার পূর্ব মুহূর্তে যেমন নিরিবিলি শীতল এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে জানান দেয় ঝড় আসবে ঠিক তেমনি ঝড় বৃষ্টি পর পরিবেশটা নিরিবিলি শীতলতা ধারণ করে। এইতো কিছুক্ষণ আগেও এক পশলা ঝড়বৃষ্টি বয়ে গিয়েছে ব্যস্ত শরের প্রতিটি আনাচে-কানাচে। ঝড়ের তোপে পুরো এলাকার ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়েছে। শোনা গিয়েছে মেই রোডের তাড় ছিঁড়ে গিয়েছে তাই কারেন্ট আসতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে।

বেলকনিতে গালে হাত দিয়ে বসে আছে ফারিসতা। একেতো ঝড়বৃষ্টি তার উপরে ইলেক্ট্রিসিটি না থাকায় সবার অবস্থা নাজেহাল আর এই সমন ফারিসতার মনে জাগলে অবাঞ্চিত ইচ্ছে মোড়ের দোকানে যেয়ে আইসক্রিম খাওয়ার। জানে ফারজানা বেগম এই অবস্থায় কিছুতে যেতে দিবে না তাই গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো কি করে মাকে রাজি করাবে। অনেক ভেবে চিন্তেও ফাঁকা মাথায় একটুকরো বুদ্ধি আসলো না তা দেখে ফারিসতা বিরক্ত নিয়ে নিজের মাথায় নিজে মৃদু চাপর মেরে বলে উঠলো, কাজের সময় কোনো বুদ্ধি দিতে পারস না আর অকাজের সময় বুদ্ধির ঝুড়ি খুলে বসে আমাকে এক একটা কাজে ফারিসে দেস আর এখন সব বুদ্ধি উড়ে গিয়েছিস ঝড়ের সাথে।

ফারিসতা বকাঝকা করতে করতে অনেক ঘেঁটে ঘুঁটেও বাহিরে যাওয়ার অজুহাত খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফোনের ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে ফারজানা বেগমের কাছে যেয়ে বায়না ধরলো কারেন্ট নেই ভালো লাগছে না একটু নিচে যেয়ে হাটাহাটি করবে। একটুও দূরে যাবে না বাসার নিচেই থাকবে আরো কত কি বলতে লাগলো ফারজানা বেগমের থেকে অনুমতি নেওয়ায় জন্য। ফারজানা বেগম কিছুতে এই রাতে তারপর ইলেক্ট্রিসিটি নেই তাই নিচে যেতে দিবে না কিন্তু এই মেয়ে একবার যেই বায়না ধরে সেটা পূরণ না করা পর্যন্ত দম নেয় না। শেষ পর্যন্ত ফারিসতার বায়নায় কাছে হার মেনে ফারজানা বেগম যেতে দিতে রাজি হয়েছে সাথে শর্ত দিয়েছে আধাঘন্টার আগেই যেনো বাসায় ফিরে আসে।

ফারজানা বেগমকে রাজি করাতে পেরে ফারিসতা খুশিতে গদগদ হয়ে ফারজানা বেগমকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো লাভ ইউ আম্মু আধাঘন্টার আগেই চলে আসবো এ বলে চপল পায়ে ছুটে চলে গেলো।

ফারিসতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফারজানা বেগম হতাশ হয়ে শুধালো এই মেয়ে কবে বড় হবে? কবে একটু বুদ্ধি জ্ঞান হবে যে নিজের ভালোটা বুঝতে শিখবে?

এদিকে ফারিসতা বাসা থেকে নেমে সোজা গেলো মোড়ের দোকানে। দোকানের কাছে এসে দেখলো দোকান বন্ধ তা দেখে ফারিসতার মুখে নেমে আসলো কালো মেঘের ছায়া। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে আবার সেই আধার কেটে গেলো কারণ আরেকটু সামনে গেলে বেশ কয়েকটা দোকান আছে একটা না একটা তো খোলা থাকবেই এভেবে ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো সুপ্ত হাসির রেখা। আইসক্রিম খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে মানে যেভাবে হোক খেয়েই ছাড়বে এ ভেবে ফারিসতা সামনে পা বাড়াতে বাড়াতে ফোনের দিকে তাকিয়ে টাইম চেক করে দেখলো ১০ মিনিহ হয়েছে হাতে এখনো ২০ মিনিট সময় আছে এর ভিতরে যেয়ে আসতে পারবে এ ভেবে আরো ৫ মিনিট পর সামনের দোকানের কাছে দেখতে পেলো আসলেই সেখানে একটা দোকান খোলা আছে তা দেখে ফারিসতা মুখে ফুটে এক পশলা হাসি। ফারিসতা যেয়ে চটপটিয়ে নিজের পছন্দের দুটে আইসক্রিম নিয়ে বাসার দিকে ফের হাঁটা দিলো।

রাত বাজে প্রায় নয়টা। এলাকায় এখনো ইলেক্ট্রিসিটি আসেনি। জ্যোৎস্নার আলোয় আইসক্রিমে ছোট ছোট কামড় মেরে গুটিগুটি পায়ে সামনে হেঁটে চলেছে ফারিসতা। ফারিসতা তৃপ্তিসহ একটা আইসক্রিম শেষ করে আরেকটা প্যাকেট ছিড়ে সেটা মুখে দিয়ে মোড়ের দোকানের কাছে আসতে সহসা চমকে উঠলো। মোড়ের বন্ধ দোকানের সামনে ছোট বেঞ্চিতে ৪ জন ছেলে মিলে কিছু একটা খাচ্ছে আর টাস খেলছে। দোকানের সামনে ঝুলে থাকা ছোট্ট হলদেটে লাইটের আলোয় ছেলেগুলোর মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এরা মাতাল। ফারিসতা এবার কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। ও এই বখাটেদের সাথে সাহসে পেরে উঠলেও চারটা ছেলের সাথে শক্তিতে পেড়ে উঠবে না ভাবতে ফারিসতা শুকনো ঢোক গিলে আশপাশে তাকাতে লাগলো ভরসাযোগ্য কাউজে খুঁজে পায় কিনা সেই আশায়। কিন্তু এতো রাতে কাকেই বা খুঁজে পাবে ও ভাবতে ফারিসতা চিন্তায় পড়ে গেলো। অনেক সময় চিন্তিত অবস্থায় ভাবনার পর ফারিসতা নিজের দিকে তাকাতে চট করে মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো।
ফারিসতা নিজের মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে ওই দোকানের পাশ দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করার সময় চারটা শকুনের লোলুভ দৃষ্টি এসে পড়লো ফারিসতার উপরে তা দেখে ফারিসতা মনে মনে ভড়কালেও নিজেকে শক্ত রেখে দ্রুত সেখান থেকে যেতে নিবে তখন হুট করে সেই চারজন ওর সামনে এসে পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে একেকজন বাজে ভাসায় এক একটা মন্তব্য করতে লাগলো৷

এর ভিতরে একজন বলে বলে উঠলো আরে সোনামণির হাতে দেখি আইসক্রিম ও। তা আমাদেরও ও একটু আইসক্রিম খাওয়ার সুযোগ দেও সোনামণি।

যেই ছেলেটা এই কথাটা বলল কথাটা শুনে ধাপ করে ফারিসতার মাথায় আগুন ধরে গেলো। ফারিসতা দিক বেদিক ভুলে ঠাস করে ওই ছেলেটার গালে শরীরের সব শক্তি দিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে রাগে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো আইসক্রিম খাওয়ার খুব শখ তাইনা এই নে আইসক্রিম খা এ বলে আরো একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো গালে।

আকস্মিক ফারিসতার এমন আক্রমণে ছেলেগুলোর মুখ হা হয়ে গেলো। কেউ বুঝে উঠতে পড়েনি এতগুলো ছেলের মাঝে এমন দুঃসাহস এই মেয়ে দেখাবে। ফারিসতার এমন দুঃসাহস দেখে চারজন এবার ক্ষেপে গিয়ে ফারিসতার চারপাশে ঘেরাও করে হাঁটতে হাঁটতে রাগে হিসহিসিয়ে একজন বলে উঠলো, এই শা* এতো তেজ? আজ তোর তেজ ছুটিয়ে দিবো।

সবাই এভাবে ঘেরাও করে ধরতে ফারিসতার হুঁশ আসলো রাগের বসে কি করে ফেলেছে। ফারিসতা এবার নিজের কাজে নিজেই আঁতকে উঠলো যে রাগে বসে ভুল করে ফেলেছে এখন কি হবে? ওর একার পক্ষে কখনো সম্ভব না চারটা ছেলের সাথে শক্তিতে পেড়ে ওঠা ভাবতে ফারিসতা আতঙ্কে আঁতকে উঠলো।

ফারিসতার আতঙ্কের মাঝে আরেকটা ছেলে বলে উঠলো
শা* কত বড় সাহস আমাদের এতগুলো ছেলের মাঝে আবার আমাদের গায়ে হাত তুলিস। জানের মায়া নেই? ভয় নেই শরীরে?

ছেলেটার কথায় ফারিসতা তাৎক্ষণিক তখনের ভেবে রাখা কথাটা মনে করে কণ্ঠস্বর ভূতুড়ে করে হঠাৎ শব্দ করে হেঁসে বলে উঠলো, ভয় পেতাম যদি আমি বেচে থাকতাম।

ফারিসর এহেন কথায় ফারিসতার চারপাশে ঘুরতে থাকা ছেলেগুলো পা গুলো থেমে গেলো। ফারিসতার আপাদমস্তক সবাই পর্যবেক্ষণ করে দেখলো সাদা ধবধবে পোষাক পড়া এই সুন্দরী মেয়ে ওদের মাঝে দাঁড়িয়ে। লোক মুখে শুনেছিলো ভূতেরা চোখ ঝলসে যাওয়ার মতো সুন্দরী মেয়েদের রূপ নিয়ে আসে। এখন এই মুহূর্তে ওদের মাঝে থাকা এই মেয়ের সৌন্দর্য আসলেই চোখ ঝলসে যাওয়ার মতো। তারপর ও সব সময় দেখেছে সুন্দরী মেয়েরা হয় সবচেয়ে ভিতু আর এই মেয়ের তো ওদের ভিতরের একজনের গায়েও হাত তুলেছে তার মানে সত্যি কি এই মেয়ে মানুষ না ভাবতে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে বখাটেদের ভিতর একজন ঢোক গিলে ফিসফিস করে আরেকজনের কানের কাছে বলল, মামা এটা মানুষ নাকি সত্যি ভ,,ভূত?

আরেকজন কেঁপে বলল, এতো রাতে কোনো মানুষ সাদা জামা পড়ে কেনো আসবে এটা নিশ্চয়ই ভূত পালা মামা পালা এ বলে উড়া ধুরা দৌড় দিলো সেই ছেলেটা। সেই ছেলেটার দেখাদেখি বাকি সবকয়টায়ও আতঙ্কিত হয়ে চোখকান ভুজে দৌড় দিতে গিয়ে এক জনের সাথে আরেকজন ধাক্কা খেয়ে ধিরিম করে নিচে পড়ে গিয়ে আবার উঠে পুটে দৌড় যেনো জীবন হাতে নিয়ে পালাচ্ছে।

সবগুলোকে এ এভাবে পালাতে দেখে জীবন ফিরে পেলো যেনো ফারিসতা। এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে ভাবতে ফারিসতা বুকে ফু দিয়ে দ্রুত সামনে হাঁটা দিলো। কিছুদূর যেতে ফারিসতা অনুভব করলো ওর পিছে কেউ আছে সেটা অনুভব করতে বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠলো। সাথে পুরো শরীর অজানা আতঙ্কে ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠল। ফারিসতা ভয়ে ভয়ে কাঁপা শরীরে পিছু ঘুরতে কারো বুকের সাথে মাথা যেয়ে ঠেকলো। আকস্মিক কাজে ফারিসতা থমকালো সাথে চমকালো। ফারিসতা চট চোখ তুলে উপরে তাকাতে এক ঝটকা খেলো।

এদিকে তাজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে আরফিদের বাসায় যাচ্ছিলো তখন হুট করে রাস্তার বা পাশে একটা দোকানের মোমবাতি মৃদু হলদে আলোয় ফারিসতাকে দেখে চমকে ওঠে। ইলেক্ট্রিসিটি বিহীন এমন নির্জন নিরিবিলি রাতে ফারিসতাকে এখানে দেখে তাজ সত্যি চমকালো। তখন ফারিসতাকে দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে ফিরে যেতে দেখে তাজের মুখ কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেলো এই ভেবে এতো ঝড়বৃষ্টির পর এই নির্জন রাতে এই মেয়ে এসেছে আইক্রিম খেতে ভাবতে তাজ তব্দা খেয়ে গেলো।
মনে মনে ভাবলো এই মেয়ের দম আছে বলতে হবে এই বলে তাজ গাড়ি নিয়ে সামনে এগোতে দেখলো ফারিসতাও সামনে যাচ্ছে। তাজ আর বিষয়টা নিয়ে না ঘেটে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে মোরের দোকানের কাছে চারজন কে এলকোহল সেবন করতে দেখলো। তাজ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিবে তখন মনের ভিতর উকি মারলো ওই মেয়ে যদি এই দিকে আসে তাহলে তো এদের কবলে পড়বে। ওই মেয়ে যথেষ্ট সাহসী বাট একটা মেয়ের পক্ষে চারটা পুরুষের সঙ্গে শক্তিতে পেড়ে ওঠা সম্ভব না। অন্য কারো ব্যাপার হলে বিষয়টায় তাজ পরোয়া না করলেও ফারিসতার কথা চিন্তায় আসতেই তাজের রক্ত টগবগিয়ে উঠলো। শক্ত হয়ে আসলো চিবুক। তাজ কিছু একটা ভেবে গড়ি থেকে নামতে যাবে তখন খেয়াল করলো গাড়ির লুকিং মিররে ফারিসতা আসলেই এই দিকে আসছে তা দেখে তাজ ফের কিছু একটা ভেবে কিছুটা দূরে যেয়ে গাড়ি থামালো…
তারপর একে একে সবকিছু অবলোকন করতে লাগলো যখন দেখলো ফারিসতাকে ওরা হ্যাড়াস করছে তখন তাজ সামনে এক পা বাড়াতে ফারিসতাকে ওদের ভিতরে একজনের গালে থাপ্পড় বসাতে দেখে আবার এক কদম পিছিয়ে গিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে বলে উঠলো,

বাঘিনী ক্ষেপেছে দেখা যাক কোন পর্যন্ত যায় এ বলে বুকে হাত গুঁজে সামনের সব কিছু অবলোকন করতে দেখলো ফের ফারিসতা ওই ছেলের গায়ে চর বসিয়েছে। ফের চর খেয়ে সবগুলো ছেলে মিলে ফারিসতাকে ঘেরাও করে ধরতে তাজ আর দাঁড়িয়ে না থেকে সেদিকে পা বাড়াতে তখন আচমকা সব ছেলেদের দৌড়ে পালাতে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। হঠাৎ এরা এমন পালিয়ে কেনো গেলো বুঝে উঠতে তাজের কিচ্ছুক্ষণ সময় লাগলো কারণ ওদের কাছাকাছি চলে আসায় ফারিসতার বলা কথা ওর কানেও পৌঁছালো।

তাজের ভাবনার মাঝে ফারিসতাকে এদিকে আসতে দেখে তাজ একটু আড়াল হতে ফারিসতা তাজকে অতিক্রম চলে গেলো। দেখে বোঝা গেলো মেয়েটা উপরে যতটা নিজেকে শক্ত রাখুক ভিতরে ভিতরে ভীত হয়েছে যার জন্য আশেপাশের কিছুই চোখে পড়েনি। এই রাতে ফারিসতাকে এভাবে আর একা ছাড়া মন সায় দিলো না তাই তাজ ফারিসতাকে ডাকার জন্য ওর পিছু আসতে আচমকা ফারিতা পিছু ঘুরতে বুকের সাথে ফারিসতার মাথা ঠ্যাকার সাথে সাথে তাজের হার্টবিট ও থেমে গেলো। এই মেয়ে কাছে আসলে কেনো এমন হার্টবিট থমকে যায় বুঝে উঠতে পারলো না তাজ।

অপ্রত্যাশিতভাবে তাজকে দেখে চমকে ছিটকে দূরে যেয়ে ফারিসতা অস্ফুট সেই বলে উঠলো আ..আপনি।

ফারিসতার অস্ফুট স্বরে বলা কথায় তাজ বাঁকা চোখে ফারিসতার দিকে তাকিয়ে বলল উঠলো, দেখতে ভেজা বেড়ালের হলেও তোমার সাহস আছে সত্যি বলেতে হবে। ছেলেগুলোর গায়ে যে হাত তুললে ওরা যদি তোমার কিছু করে ফেলতো সেটা মাথায় আসেনি?

তাজের কথায় ফারিসতার মুখ হা হয়ে গেলো তার মানে এই লোক সব দেখেছে কিন্তু সাহায্য করতে যায়নি। সাহায্য করতে যাবেই বা কেনো ইনি নিজেইতো একটা গুন্ডা কথাটা ভেবে ফারিসতা ভাব নিয়ে বলল,

আমি ফারিসতা কাউকে ভয় পাইনা।

ফারিসতা কথায় তাজ ফিচলে হেঁসে বলে উঠলো এই জন্যই জ্যান্ত একটা মানুষকে মৃত বানিয়ে ফেলেছো এক মুহূর্তের মাঝে খুব সাহসী মেয়ে তুৃমি আসলেই।

তাজের এবারের কথায় ফারিসতা চোরা চোখে তাজের দিকে তাকালো তার মানে সব কথাও এই বজ্জাত লোক শুনেছে ভাবতে চোখ পাকিয়ে তাজের দিকে তাকিয়ে তেতে উঠে বলে উঠলো, নিজেকে প্রটেক্ট করার জন্য জাস্ট বলেছি ওই কথা সরুন সামনে থেকে এ বলে ফারিসতা হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হতে তাজ ধমকে বলে উঠলো,

এই মেয়ে যেতে বলেছি তোমায়?

তাজের কথায় ফারিসতা যেতে উদ্যত হলেও আবার দুই কদম পিছিয়ে এসে তাজের দিকে অনামিকা আঙুল তাক করে বলে উঠলো,

লিসেন আপনি যেই হোন না কেনো তাতে আমার কিছু যায় আসে না সো আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য না।

তাই নাকি? তা এখানে চারজনকে ভুংভাং বুঝিয়ে বিদায় করেছো সামনের মোড়ে চারজন নয় এর চেয়ে দ্বিগুণ বখাটে এই রাতে এলকোহল সেব করতে মত্ত ওদের সামলানোর শক্তি আছে তো শরীরে?

তাজের এবারের কথায় ফারিসতা নিভে গেলো। আসলেই কি সামনের মোড়েও এমন বখাটে রয়েছে ভাবতে ফারিসতা ঢোক গিললো। চারজনকে নাহয় কোনো রকম সামাল দিয়েছে তাহলে ওগুলোর সাথে কিভাবে পেরে উঠবে ভাবতে ফারিসতার মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো। এবার কি করবে ভেবে না পেয়ে ফারিসতা দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো আর মনে মনে নিজেকে শাসাতে লাগলো খা আরো খা বেশি করে আইসক্রিম। চিরতরের জন্য আইসক্রিম খাওয়ার শখ মিটিয়ে নে। সব সময় ত্যাড়ামো করে মাথায় যেটা আসবে সেটাই আমাকে দিয়ে করিয়ে ছাড়বি। এখন আমার কি হবে….?

গাড়িতে ওঠো….

ফারিসতার ভাবনার মাঝে তাজে রাশভারী কণ্ঠে বলা কথায় সহসা চমকে উঠলো ফারিসতা। গাড়িতে উঠবে মানে? ভেবে ভ্রু কুঁচকে তাজের দিকে তাকাতে তাজ বলে উঠলো,

আমার দিকে তাকাতে বলিনি গাড়িতে উঠতে বলেছি পৌঁছে দিয়ে আসবো আমিও ওইদিকেই যাচ্ছি।

তাজের কথায় ফারিসতার চোখ এবার বড় বড় হয়ে গেলো। এক বখাটের হাত থেকে বাঁচার জন্য নাকি আরেক বখাটের গাড়িতে উঠবে। বখাটে বললে ভুল হবে এতো আস্ত এক ডাকাত সেদিন কি নিঃসংশ ভাবে ওই লোককে মারছিলো ভাবতে ফারিসতা তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো অসম্ভব….

তাজ ফারিসতার মুখের দিকে অবলোকন করে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

তাজ চৌধুরী হ্যাজ নো ইন্টারেস্ট ইন গর্লস, সো চুপচাপ গাড়িতে ওঠো।

ফারিসতা এবার দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুগতে লাগলো কি করবে। সামনে একা যেতেও ভয় লাগছে আবার তাজকেও বিশ্বাস করতে পারছে না এমতাবস্থায় ফারিসতা কি করবে ঠিক মাথায় আসলো না।

#চলবে?