হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-০৮

0
133

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ৮

নিরিবিলি একটা লেকের পারে এসে বসলো ফারিসতা আর রাশফিয়া। আজ যেনো একটু বেশি নিরিবিলি লেকপার্কটা, একটা মানুষ অব্দি নেই। এতো নিরিবিলি দেখে দুজনে অবাক হলো বেশ কিন্তু বিষয়টা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে লেকের ভিতরে বাঁধাই করা সিঁড়ির উপরে যেয়ে দুইজন বসলো। রাশফিয়া হাতব্যাগটা পাশে রেখে ফারিসতার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

এই গরমের ভিতরে এমন ফুল হাতার ড্রেস পড়েছিস কোন দুঃখে তুই?

পড়েছি কি স্বাদে? ওই বজ্জাত সাব্বিরের বাচ্চার জন্য আজ এই ঠাডা পড়া গরমের ভিতরে আমার এই লুকে থাকতে হচ্ছে। শা*লা একবার ওই বজ্জাতটাকে বাগে পাই তারপর দেখাবো মজা।

ফারিসতার কথার আগা মাথা কিছুই ঢুকলো না রাশফিয়ার মাথায়৷ যেনো ফারিসতার বলা সব কথা মাথার এক হাত উপর দিয়ে গেলো। রাশাফিয়া গালে হাত দিয়ে বলল, কিছুই বুঝলাম না কি আবল তাবল বলছিস।

ফারিসতা হাতের কব্জি উপর থেকে হাতা গুটিয়ে উপড়ে উঠিয়ে দুই হাত তাক করলো রাশফিয়ার দিকে। রাশফিয়া ফারিসতার লালচে হাতের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে বলে উঠলো,

এই হাতের এই অবস্থা কেনো? তুই না বললি তোর কিছু হয়নি তাহলে এটা কিভাবে হলো?

তোকে বলেছিলাম না ওইদিন বাসায় যাওয়ার সময় একটা খাডাইশ (খাটাশ) ছেলের হাতে বারি খেয়েছি।

হ্যা,,,,, তো? ওই ছেলে কি তোর হাতের অবস্থা ও এমন করেছে?

না বাট ওই খাডাইশটার বজ্জাত সাঙ্গপাঙ্গরা করেছে এমন।

কি হয়েছে ঝেড়ে কাশ তো। তোর কথার আগা মাথা কিছুই বুজতাছি না আমি।

রাশফিয়ার কথায় ফারিসতা একে একে শুরু থেকে সব খুলে বলতে রাশফিয়া চোখ গরম করে ফারিসতার দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলে উঠলো,

একদম ঠিক আছে। এই তোরে কতবার বলেছি এসব ঝামেলায় জড়াবি না তবুও পাকনামি করে কেনো গেছিস ওই ঝামেলায়?

তো কি করতাম? ওই বৃদ্ধার মার খাওয়া চুপচাপ দেখতাম? কোনো অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।

আসছে রে আমার মানবতার ফেরিওয়ালা। এক থাপ্পড়ে তোর এই মানবতা ছুটিয়ে দিবো। এই তুই জানতি ওই বৃদ্ধাকে কেনো মারা হচ্ছিলো? হতে ওতো পারতো ওই বৃদ্ধা কিছু করেছে তাই বলে ওতগুলো ছেলের সাথে তুই লড়াইয়ে নেমে যাবি? ছেলেগুলো যদি তোর কোনো ক্ষতি করে ফেলতো তখন কি করতি? জানি তোর মাথার তার তো আগে থেকেই ছিড়া। সেদিন ওই ছেলের হাতে বারি খেয়ে কি এখন মাথার সব তার ছিঁড়েছিস?

রাশফিয়ার এমন ধমকে ফারিসতা ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো, আরে বাবা এভাবে বকছিস কেনো? তখন ওই বৃদ্ধাকে মারতে দেখে মাথা কাজ করেনি কে দোষী আর কে নির্দোষী তা বিবেচনা করার। আর আমি শিওর ওই তাজের সাঙ্গপাঙ্গরাই দোষী। ওদের ভয়ে এলাকার সব মানুষ চুপসে থাকে। এদের যেই পাওয়ার সেই হিসেবে কোনো দোষ ছাড়া একজন মানুষকে মারা ওদের বা হাতের কাজ।

মা/র/লে মে/রে/ছে তাতে তোর কি হ্যা? তুই কেনো সব বিষয়ে নাক গলাতে যাবি? ঢাকা আসতে না আসতে শুরু হয়ে গিয়েছে তোর। সারাক্ষণ তোর টেনশনে ডুবে থাকে আন্টি। ভেবেছিলো ঢাকা এসে তার মেয়ে একটু শান্ত হবে কিন্তু না এতো দেখছি ঢাকা পা দিতে না দিতে তোর গ্যাঞ্জামে জড়ানো শুরু তাও যেই সেই মানুষদের সাথে না এলাকার সবচেয়ে পাওয়ারফুল মাস্তানদের সাথে। দাঁড়া তুই আমি আন্টিকে এখনি সব বলছি এ বলে ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে নিলে ফারিসতা হাত আঁটকে দিয়ে ঠোঁট উল্টো ফের বলে উঠলো,

আম্মুকে কেনো টানছিস? তোকে বলাই আমার ভুল হয়েছে। যা তোকে আর কিছু বলবো না এ বলে ফারিসতা গাল ফুলিয়ে রাশফিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরে বসে রইলো।

রাশফিয়া চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষণ ফারিসতার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে ফারিসতার কাধে হাত রেখে শুধালো,

দেখ ফারু এই ছেলেমানুষী করার সময় এখন নেই। বড় হয়েছিস এখন অন্তত নিজের ভালোটা একটু বুঝতে শেখ। একটা মেয়ে যতই সাহসী হোক না কেনো একটা ছেলের সাথে সাহসে পেড়ে উঠলেও শক্তিতে পেড়ে ওঠা সম্ভব না। এভাবে ঝামেলায় জড়ালে কেউ যেকোনো সময় তোর কিছু করে ফেলতে পারে। তোর কিছু হলে আন্টির কি হবে একবার ভেবে দেখেছিস? নিজের রাগ এখন অন্তত কন্টোল করা শেখ। একটা মেয়ে চাইলেও সব কিছু করতে পারে না। মেয়েদের এতে শক্ত হতে নেই। একটু নরম হতে শেখ।

কেনো মেয়েদের নরম হতে হবে? মেয়েরা নরম বলেই আজ সব জায়গায় মেয়েরা এতো অসহায়।

ফারিসতার কথায় আশফিয়া হতাশ শ্বাস ফেললো। এই মেয়েকে আদো বুঝাতে পারলো না এভাবে ঝামালায় না জড়াতে। একে যতই বোঝাও যেই লাউ সেই কদু এই। রাশফিয়া হাতাশ হয়ে শেষে বলে উঠলো আচ্ছা বাদ দে চল ওই দিকটা থেকে হেঁটে আসি।

রাশফিয়াকে এই টপিক বাদ দিতে দেখে ফারিসতা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলো চল এ বলে দুজন এক সাথে বসা থেকে উঠে উপরে উঠতে নিবে তখন কারো গগনবিদারী চিৎকারে দুজনের পা জোড়া থেমে গেলো। এমন নিরিবিলি পরিবেশে হঠাৎ এমন চিৎকারের আওয়াজে ভড়কালো দুজনে। কোথা থেকে এমন চিৎকার ভেসে আসছে দেখার জন্য দুজন চিৎকারে উৎস অনুসরণ করে সিঁড়ি বেয়ে উপর উঠতে কিছুটা দূরে চোখ যেতে সহসা কেঁপে উঠলো দুজন। ওদের থেকে কিছুটা দূরে এক লোক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে চিৎকার করছে। লোকটার শরীরে ছোপ ছোপ রক্ত গড়িয়ে পড়ছে পিচ ঢালা রাস্তায়। লোকটার আশেপাশে কালো পোশাকধারী মানবগুলো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার ঠিক সামনে চোখ পড়তে কতগুলো চেনা মুখ দেখে চমকে উঠলো ফারিসতার। পড়ে থাকা লোকটার সামনে ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাজ আর ওদের সাঙ্গপাঙ্গরা। যদিও ফারিসতা তাজের নাম ছাড়া কারে নাম জানেনা কিন্তু প্রতিটি মুখ ওরা চেনা। এইতো দুপুরেও এ লোকগুলোর কাছে বন্দী ছিলো ও। সবার মাঝে তাজের হাতে রয়েছে ধারালো ছু/রি যেটা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে টাটকা রক্ত। সব কিছু অবলোকন করে তাজদের এমন ভয়ংকর রূপ দেখে ঝংকার দিয়ে ফারিসতার কেঁপে উঠলো পুরো শরীর।

এদিকে তাজদের বৃদ্ধার ভেসে ফলো করা লোকটা সকালে সুযোগ বুঝে পালিয়ে গেলেও বিকেলের মাঝে তাকে খুঁজে বের করলো। যদিও সেই লোক এখন বৃদ্ধার ভেসে নেই। লোকটাকে খুঁজে পাওয়ার সময় তাজরা লেকপার্কের পাশেই ছিলো তাই তাজ হুকুম ছাড়ে বিশ মিনিটের ভিতরে লেকপার্ক পুরো ফাঁকা করে এখানে ওই লোককে উপস্থিত করতে। তাজের কথা মতো সব কিছু করতে ওই লোককে নিয়ে আসা হয়। ওই লোককে হাতের কাছে পেয়ে তাজের শরীরের রক্ত টগবগিয়ে উঠলো। প্রথমে ভালোয় ভালোয় জিজ্ঞেস করেছিলো কার কথায় এভাবে ফলো করছে কিন্তু ওই লোক কিছুতেই মুখ খুলছিলো না। ওই লোকের মুখ থেকে কথা বের না হতে নিজের রাগ আর কন্ট্রোল করতে না পেড়ে তাজ সজোরে শীররে কয়েক জায়গায় এলোপাতাড়ি ছু/রি চালিয়ে দিতে লোকটা গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে নিচে লুটিয়ে পড়লো। এর পর ও লোকটাকে শিকার করতে না দেখে তাজ লোকটার পাশে বসে গলা বরাবর ছু/রি তাক করে হুঙ্কার ছেড়ে বলে উঠলো,

শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করছি কার কথায় এমন করছিস…..

তাজের কাজে আর হুঙ্কারে লোকটার রুহু যায় যায় অবস্থা। মুখ দিয়ে কথা বলার শক্তিটাও ফুরিয়ে গিয়েছে যেনো আরেকটু হলেই রুহুটা বেড়িয়ে যাবে প্রাণ থেকে।

লোকটাকে এবারও কোনো কথা বলতে না দেখে তাজ যেই ছু/রি চালাতে যাবে তখন মাহিম বলে উঠলো, তাজ ভাবী…..

হঠাৎ মাহিমের কথা শুনে থেমে গেলো তাজের হাত। হাত থামিয়ে চট করে চোখ তুলে সামনে তাকাতে ওদের থেকে কিছুটা দূরে ভয়ার্তক দুটি মেয়ের মুখশ্রী ফুটে উঠলো। এই মুহূর্তে ফারিসতার ভয়ার্তক মুখ দেখে থমকালো না তাজ উল্টো রাগ এবার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো। তাজ হিতাহিত রাগে জ্ঞানশূণ্য হয়ে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার ছেড়ে গার্ডদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

২০ মিনিটে ভিতরে পুরে লেকপার্ক ফাঁকা করেতে বলেছিলাম তাহলে এরা আসলো কি করে?

তাজের ছোঁড়া হুঙ্কারে আত্মাশুদ্ধ উড়ে গেলো সব গার্ডদের। সবাই এক সাথে ভয়ার্তক চোখে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। ওরাতো পুরো লেকপার্ক ফাকা করেছিলো তাহলে এই মেয়ে দুটো আসলো কোন সময় ভাবতে শুকনো ঢোক গিললো।

এদিকে তাজের হুঙ্কারে গার্ডদের সাথে ফারিসতা আর রাশফিয়ার প্রাণপাখি ও উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো। এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়ে দুজনের অবস্থা শোচনীয় হলো। দুজন যখন ভয়ে কাঁপছিলো তখন দেখলো তাজরা ওদের দিকে এগিয়ে আসছে যেটা দেখার সাথে সাথে দু’জনের আত্মা শুদ্ধ কেঁপে উঠলো। এমতাবস্থায় এখান থেকে দৌড়ে পালাবে নাকি কি করবে কিছুই মাথায় আসলো না। তাজদের প্রতিটি কদমে কেঁপে উঠছে ওদের পুরো শরীর। সেই কাঁপুনি বাড়িয়ে দিয়ে তাজ ওদের সামনে এসে বাজখাঁই গলায় ধমকে ফারিসতার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার? সব জায়গায় ঝামেলা করতে কোথা থেকে উড়ে আসো? এখানে প্রবেশ করলে কোন সাহসে হ্যা?

তাজের ধমকের সাথে প্রতিটি করা প্রশ্ন কেঁপে উঠলো ফারিসতা। একটা মানুষের এমন ভয়ংকর রূপ থাকতে পারে ভাবতে ফারিসতার মাথা ঘুরে উঠছে। তাজের কথার এন্সার দিবে তো দূরের কথা ভয়ে নিঃশ্বাস নিতেই যেনো ভুলে গেলো।

এই মেয়ে কি জিজ্ঞেস করেছি কানে যায়নি? Asked to answer my question….

তাজের এমন ধমকে ফারিসতার প্রাণ পাখি যায় যায় অবস্থা। কেনো যেনো ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানবকে আজ খুব হিংস্র মনে হচ্ছে। যেই হিংস্রতায় ওর পুরো শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। ফারিসতা ভয়ে পাশে থাকা রাশফিয়ার হাত খামচে ধরলো। ফারিসতার মতো রাশফিয়ার ও একি অবস্থা হলো। রাশফিয়া কোনো রকম মনে একটু সাহস জুগিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলতে লাগলো আ..আসলে হ..হয়ে…

আর কিছু বলার আগে তাজ ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,

ডিড আই আক্স ইউ?

তাজের প্রশ্নে রাশফিয়া ভয়ার্ত হয়ে তড়িৎ গতিতে দু পাশে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।

সো শাট আপ… এরপর ফারিসতার দিকে তাকিয়ে ফের বাজখাঁই গলায় হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলো,

এই মেয়ে আমাকে একদম রাগিয়ো না তাহলে খুব খারাপ কিছু ঘটবে। কি বলছি আমি শুনতে পাওনি?

অবস্থা বেগতিক দেখে আরফি দ্রুত তাজের সামনে এসে বলল, শান্ত হ আমি দেখছি এ বলে ফারিসতার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, এই মেয়ে.. আই মিন ফারিসতা এখানে আসলে কি করে?

তাজের ধমকে চোখমুখ খিঁচে দম আঁটকে দাঁড়িয়ে ছিলো ফারিসতা তখন তাজকে সরিয়ে আরফিকে সামনে আসতে দেখে দম ছাড়লো মেয়েটা। আরেকটু হলে যে নিঃশ্বাসটা আঁটকে যেতো। দুপুরের মতো এবার ও তাজের হাত থেকে বাঁচিয়ে আরফি সামনে আসায় একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুধালো,

আ..আসলে এখানে প্রবেশ ক..করা যাবে না তা জানতাম না। আ..আমরা এখানে আসার সময় কেউ ছ..ছিলো না।

ফারিসতার কথা শুনে তাজ আগুন চোখে তাকালো গার্ডদের দিকে তা দেখে গার্ডরা ঘামতে লাগলো। আজ যে কারো রক্ষা নেই ভাবতে সবার কলিজায় পানি চলে আসলো।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰