হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব-৪৬+৪৭

0
499

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৬
সাখাওয়াত বাড়ির ভীতরে গাড়ি প্রবেশ করতেই তা থেমে গেল।গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল জায়ান।তারপর আবার অপারপাশে গিয়ে দরজা খুলে আরাবীকে কোলে তুলে নিলো।যাওয়ার আগে দারোয়ানকে বলে গেল গাড়ি ভালোভাবে পার্ক করে দিতে।আরাবীকে নিয়ে দ্রুত নিজেদের রুমে ফিরে আসে জায়ান।আরাবীর দূর্বল ছোট্টো শরীরটা বিছানায় রাখল।পরপর নিজের শক্তপোক্ত হাতটা নিয়ে আলত স্পর্শ করল আরাবীর নরম গালে।পিটপিট করে নেত্র মেলে তাকাল আরাবী।জায়ান চিন্তিত কণ্ঠে বলে,’ অনেক বেশিই কি খারাপ লাগছে?আমি ডক্টরকে ফোন করি।’
‘ তা..তার প্রয়োজন ন..নেই।একটু বি..বিশ্রাম নিলেই ঠিক হ..হয়ে যাব।’ থেমে থেমে বলল আরাবী।

জায়ান না চাইতেও ধমকে ফেলল ওকে, ‘ কি চাইছ টা কি তুমি? রাস্তায় দু দুবার বমি করেছ।আমি বললাম হসপিটালে নিয়ে যাই।তাও রাজি হলে নাহ।এখন দূর্বলতার কারনে ঠিকঠাকভাবে একটু কথাও বলতে পারছ না।তারপরেও আমাকে ডক্টর ডাকতে বারণ করছ কেন তুমি? আমায় এতোটা অস্থিরতার মাঝে রাখতে কি তোমার ভালো লাগে?’

আরাবী কিছুই বলল না।চুপচাপ জায়ানের সব অভিযোগ শুনল।মূলত ও কথা বলার শক্তিটুকও পাচ্ছে নাহ।জায়ান আরাবীর এমন অবস্থা দেখে চুল খামছে ধরে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করল।অতঃপর সোজা চলে গেল ওয়াশরুমে। একমগ পানি নিয়ে ফিরে আসল আরাবীর কাছে।ওর ছোটো রুমালটা ভিজিয়ে নিল।তারপর আরাবীর মুখে স্পর্শ করতেই ঠান্ডায় কাঁপল আরাবী।ধীর আওয়াজে বলে,’ ক..কি করছেন?’

‘ ওয়াশরুমে তো যেতে পারবে না।তাই এইভাবে আপাততো ফ্রেস হয়ে নেও।যেই অবস্থা শরীরের গায়ে সামান্য শক্তিও নেই।’

জায়ান ভালোভাবে রুমাল ভিজিয়ে আরাবীর গা মুছে দিল।এরপর আলমারি থেকে আরাবীর জামা কাপড় নিয়ে ফিরে আসল।আরাবীর শাড়ির আঁচলে হাত দিবে এমন সময় আরাবী আৎকে উঠে।বলে,’ এমন ক..করছেন কেন?’
‘ জামা কাপড় চেঞ্জ করবে নাহ?’
‘ ক..করবো।আমায় দিন। আমি চেঞ্জ করে নিচ্ছি।আপনার করা লাগবে নাহ।’

আরাবীর কথা শুনে জায়ান ভ্রু-কুচকালো। অতএব গম্ভীর গলায় বলে,’ শুধু শুধু লজ্জা পাচ্ছ তুমি।এখানে লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই।আমি তোমার স্বামি হই।তোমার অসুস্থতার সময় আমি তোমার সেবা করব এটা স্বাভাবিক।আর আমার অসুস্থতার সময়েও সেম কাজটা তুমিও করব।আর রইল জামা কাপড় চেঞ্জ করার কথা।তোমার শরীরের ইঞ্চি ইঞ্চির সম্পর্কে আমি জানি।সো লজ্জা টজ্জা পেয়ে লাভ নেই।’

আরাবী ঠোঁট কামড়ে ধরে ওপাশে ফিরিয়ে নিল মুখশ্রী।জায়ান আরাবীর জামা চেঞ্জ করে দিল।এরপর ল্যান্ডলাইনে সার্ভেন্টসকে খাবার আনতে বলল।
তারপর নম্র কণ্ঠে আরাবীকে বলে,’ তুমি থাকো।আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসছি।খবরদার ঘুমাবে নাহ।আমি এই যাব এই আসব।খাবার না খেয়ে ঘুমাতে পারবে না তুমি।ঠিক আছে?’
‘ ঠিক আছে।’
জায়ান ফ্রেস হতে চলে গেল।ঝড়ের গতিতে গিয়ে তুফানের গতিতে ফিরে আসল যেন।এসে দেখে আরাবীর নেত্রজোড়া বন্ধ।জায়ান ভরাট কণ্ঠে বলল,’ আরাবী ঘুমিয়েছ?’

আরাবী ঘুমায়নি।চোখ বন্ধ করে ছিল এমনিতেই।জায়ানের ডাকে দ্রুত চোখ খুলল।ধীর আওয়াজে বলে,’ নাহ।এমনিতেই একটু চোখ বন্ধ করে ছিলাম।’

জায়ান সস্থির নিশ্বাস নিলো।যাক মেয়েটা ঘুমায়নি।এমন সময় দরজায় টোকা পরল।জায়ান গিয়ে দরজা খুলে দেখল সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে এসেছ।খাবারটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে আবার ফিরে আসল জায়ান।আরাবীর পাশে বসে ওকে দুহাতের সাহায্যে জড়িয়ে নিয়ে উঠিয়ে বসাল।বিছানার হেডবোর্ডের সাথে একটা বালিশ রেখে সেখানে হেলান দিয়ে বসাল আরাবীকে।তারপর খাবারের প্লেট হাতে নিল।মাছের ঝোলের তড়কারি দিয়ে ভাত মাখিয়ে আরাবীর মুখে সামনে ধরতেই আরাবী আতকে উঠে দুহাতে মুখ নাক ঢেকে ফেলল।জায়ান খাবারের প্লেট রেখে দিল আরাবী এমন করায়।অস্থির গলায় বলে,’ কি হলো তোমার? এমন করছ কেন?’
‘ আপ..আপনি কি দিয়ে ভাত মেখে দিয়েছেন?’
‘ কেন কি হয়েছে?মাছের ঝোলের তরকারি।’
‘ ভীষণ গন্ধ ওটায়।জঘন্য লাগল।আমি ওটা খাবো না।’

আরাবীর কথায় জায়ান অবাক হলো।গন্ধ কোথায় পেল মেয়েটা?তারপরেও মনের দ্বিধা দূর করার জন্যে খাবারের প্লেট হাতে তুলে নিল।ওই তরকারিটা দিয়ে মাখা ভাতটুক অনায়াসে খেয়ে নিল জায়ান। কপালে ভাঁজ পরল জায়ানের।আশ্চর্য ওর কাছে তো কোন গন্ধই লাগল নাহ।সব তো ঠিকই আছে।আর এই মাছের ঝোলের তরকারি তো আরাবীর অনেক পছন্দের তাহলে মেয়েটা আজ এমন করছে কেন?জায়ান আর অতোশতো ভাবল নাহ।হয়তো আজ ভালো নাও লাগতে পারে।সবসময় যে সবার একরকম লাগবে এমন তো কোন কথা নাহ।জায়ান নরম গলায় আরাবীকে বলে,’ আচ্ছা ওই তরকারি দিয়ে খাওয়া লাগবে নাহ।আমি ওটা খেয়ে নিয়েছি।তুমি অন্য তরকারি দিয়ে খাও।’

আরাবী জায়ানের পাশে রাখা ট্রেতে উকি দিল।মূলত ওখানেই বাটিতে করে রাখা আছে বাকি তরকারিগুলো।একটা বাটিতে করলা ভাজি দেখেই আরাবী বলল,’ আমি করলা ভাজি দিয়ে ভাত খাবো।’

জায়ান আরাবীর এহেন কথায় একবার আরাবীর দিকে তো একবার করলা ভাজির বাটির দিকে তাকাচ্ছে।ওকে এমন করতে দেখে আরাবী বিরক্ত হয়ে বলে,’ কি হলো এমন করছেন কেন?’

জায়ানের কণ্ঠে স্পষ্ট বিষ্ময়,’ তুমি সিয়র তুমি এটা দিয়েই খাবে?’
‘ হ্যা।কেন কি হয়েছে।’
‘ না কিছু হয়নি।আচ্ছা ঠিকাছে।’

জায়ান করলা ভাজি দিয়ে ভাত মেখে আরাবীকে দিতেই আরাবী বিনাবাক্যে খেয়ে নিল।জায়ান প্রশ্ন করল,
‘ এখন ঠিক আছে?’
‘ হ্যা।দিন আমাকে।এটা অনেক ভালো।’

আরাবী করলা ভাজি দিয়েই অনায়াসে সবটুকু ভাত শেষ করে নিল।খাওয়া শেষে জায়ান বলে,
‘ আর ভাত নিব?আর খাবে?’
‘ নাহ।পেট ভরে গেছে।’

জায়ান এইবার নিজেও খেয়ে নিল।এঁটো থালাবাটিগুলো পাশের টি-টেবিলে রেখে হাত ধুয়ে আসল।রুমের লাইটগুলো নিভিয়ে গিয়ে আরাবীর পাশে সুয়ে পরল।আরাবী এসে জায়ানের বুকে মাথা রাখল।জায়ান দুহাতে আরাবীকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো ভালোভাবে।তারপর আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,’ ঘুমিয়ে যাও।শরীর ভালো না তোমার।’

জায়ানের আদুরে হাতের স্পর্শে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পরলো আরাবী।কিন্তু ঘুম নেই জায়ানের চোখে।মাথাটা চিন্তায় ফেটে যাচ্ছে।আরাবীর হঠাৎ কি হলো?মাছের তরকারি অনেক প্রিয় আরাবীর।সেই তারকারি ওর মুখের সামনেও নিতে পারলো না ও।আর করলা ভাজি তো দেখলেই আরাবী দশ হাত দূরে সরে যায়।আর আজ কিনা সেই মেয়ে করলা ভাজি দিয়েই ভাত খেলো।আর আরাবী স্বাভাবিকভাবে এতো ভাত খায় না।আজ তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশিই ভাত খেয়েছে।হঠাৎ আরাবীর এমন পরিবর্তনগুলো দেখে জায়ানের চিন্তা লাগছে মেয়েটার জন্যে।এটা সেটা ভেবে মধ্যরাতের দিকে জায়ানের চোখ লেগে আসল।আর সেইভাবেই ঘুমিয়ে পরলো।
__________
কোচিং-এর ক্লাসে একদম মনোযোগ নেই নূরের।ওর ধ্যানজ্ঞান সবটা মগ্ন সামনে থাকা পুরুষটার উপর।পুরুষটা বড্ড নিষ্ঠুর।তাইতো ভুল করেও তাকাচ্ছে না নূরের দিকে।কেন এমন করছে লোকটা?কি এমন করেছে ও? যার কারনে লোকটা এমন রেগে আছে?কোচিং-এ আসার পথে ফাহিমের সাথে দেখা হয়েছিল পথে নূরের।নূর ভেবেছিল ফাহিম ওকে দেখে ওর কাছে আসবে।কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে নূরকে দেখা সত্ত্বেও বাইক ছুটিয়ে চলে গিয়েছে।এমনটা মোটেও আশা করেনি নূর।ব্যথিত হৃদয় নিয়ে একলাই আসে এখানে।কিন্তু এখানে এসেও একই অবস্থা।ফাহিমের কাছ থেকে কোন প্রকার রেস্পন্সই পাচ্ছে না ও।হঠাৎ কারো তিক্ত কণ্ঠে হুশ ফিরে আসে নূরের।ফাহিম বলছে,’ মিস নূর।ক্লাসে এসে যদি প্রেম ভালোবাসা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে আমি বলব আমার ক্লাসে আপনি আর আসবেন নাহ।আপনার কারনে আমার অন্য স্টুডেন্ট্সদের সমস্যা হয়।’

ক্লাসের সবাই হেসে উঠল ফাহিমের কথায়।ফাহিম ধমকে উঠল,’ সাইলেন্স।হাসির কি আছে এখানে?চুপচাপ ক্লাসে মনোযোগ দিন সবাই।’

ফাহিমের ধমকে সবাই চুপ হয়ে গেল। নূরের পিছনে বসা একটা মেয়ে ফিসফিস করে বলছে,’ ফাহিমের স্যারের কি হয়েছে কে জানে?স্যার তো এতো রাগি না। কাল থেকেই দেখছি অযথা ভীষণ রাগারাগি করছেন।’
‘ আমিও জানি না দোস্ত।তবে যাই বলিস নূরকে যা বলল না স্যার। আমার অনেক হাসি পেয়েছে।’
‘ আমারও হা হা হা।’

নূর সবই শুনল।নূরের চোখে জল টলমল করছে।নূর সবসময়েই একজন ভালো স্টুডেন্ট। কখনও পড়া নিয়ে বা রেজাল্ট নিয়ে ওর বাবা মায়ের হা হুতাশ করতে হয়নি।আর এমনকি কখনও স্কুল,কলেজ থেকে বিচারও যায়নি ওদের বাড়িতে।কোনোদিন স্যারদের থেকে কটু বাক্যও শোনেনি।আর আজ এমন একটা কথা শুনলো ও।তাও নিজের প্রিয় মানুষটার কাছ থেকেই।সবার সামনে হাজির পাত্র বানাল ফাহিম ওকে।নূর নিজের অস্রু লুকাতে মাথা নিচু করে নিল।আর একবারও তাকাল না ফাহিমের দিকে।সম্পূর্ণ ক্লাস এইভাবেই শেষ করল ও।ক্লাস শেষ হতেই সবার আগেই বের হয়ে গেল।না চাইতেও এইবার গাল গড়িয়ে পরল চোখের জল।ও কি কোন ভুল করল?ফাহিম তো ওকে কোনোদিন বলেনি যে ফাহিম ওকে ভালোবাসে।ও কি অনেক বেশিই আশা করছে ফাহিমের কাছ থেকে? নাকি ভালোবেসে ও অনেক বেশিই বেহায়া হয়ে গিয়েছে?ফাহিম হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।নূরকে ও একটুও পছন্দ করে না।হয়তো অন্য মেয়েকে ভালো লাগতে শুরু করেছে এখন।আনমনা হয়ে হাটছিল নূর।রাস্তার পাশে অনেকগুলো ঝোপঝাড় হঠাৎ সেই ঝোপঝাড়ের মাঝে হঠাৎই নূরের হাত লেগে গেল।কাটা গাছের ঝোপ ছিল বোধহয়।তাই নূরের হাত ছি’লে রক্ত বের হয়ে আসল।ব্যথায় মৃদ্যু আওয়াজ করে উঠল।হঠাৎই কেউ এসে ওর সেই ব্যথাযুক্ত হাতটা টেনে নিল নিজের কাছে।নূর কান্নার কারনে লাল হয়ে যাওয়া চোখ দিয়েই তাকাল।নজরে আসল ফাহিমের উদ্বিগ্ন মুখশ্রী।ফাহিম নূরের হাত ওর দুহাতের মাঝে নিয়ে অস্থির হয়ে বলছে,’ কিভাবে হাটো?দেখে হাটতে পারো নাহ?দেখলে তো কিভাবে হাতটায় ক্ষ’র হলো।এমন কেন তুমি?নিজের প্রতি বিন্দু পরিমান কেয়ার নেই তোমার।’

নূর চোখ সরিয়ে নিল।মনের ব্যথার তুলনায় এই ব্যথা তার জন্যে কিছুই না।ও কিছু না বলে টেনে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো ফাহিমের হাতের থেকে।তারপর কিছু না বলে কাধের হাতটা ভালোভাবে আঁকড়ে ধরে সামন্ব্র দিকে হাটা ধরল।ফাহিম নূরের আচড়ণে হতবাক।কতো বড় সাহস মেয়েটার।ওকে কিছু না বলেই চলে যাচ্ছে।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসল ফাহিমের।তেড়েমেড়ে এগিয়ে গেল নূরের কাছে।বিনাবাক্যে নূরের বাহু খামছে ধরে ওকে নিজের দিকে ফিরালো।ফাহিম রাগে হিসহিস করে বলে,’ কি সমস্যা তোমার?কথা বলছিলাম না আমি?তাহলে আমায় উপেক্ষা করে চলে যাওয়ার সাহস পেলে কোথায় তুমি?’

নূর বরাবরের মতোই শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ফাহিমের দিকে।নূরকে কোনপ্রকার কথা বলতে না দেখে ফাহিম ধমকে উঠে,’ কি সমস্যা?কথা বলছিস না কেন?আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়?যে ফাউ কথা বলতে থাকব তোর সাথে?’
‘ আপনিই না বলেছিলেন আপনার চোখের সামনেও যেন না আসি?তাহলে সমস্যাটা আমার কোথায়?আমি তো আপনার কথাই পালন করছি।আপনি এমন করছেন কেন?আপনার সমস্যাটা কি?’ অভিমানি কণ্ঠে বলল নূর।

ফাহিম দুকদম এগিয়ে আসল নূরের কাছে।তারপর নূরের দু বাহু খামছে ধরে তীব্র আক্রোশপ্রসূত মনোভাব পোষণ করে বলে,’ আমার সমস্যা তুই।তুই-ই আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা।আমার সবকিছু তোর কারনে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।খেতে গেলে তোর কথা মনে পরে,বসতে গেলে তোর কথা মনে পরে,শুতে গেলেও তোর কথা মনে পরে।আমি খেতে পারি না,শান্তিতে বসতে পারি না,ঘুমোতে পারি না।সর্বদা তুই আমার মস্তিষ্কে কিলবিল করে ঘুরে বেড়াস।তুই তো আমাকে যন্ত্রনা দিয়ে শান্তি পাস।তাই তো কাল কি সুন্দর অনায়াসে ম’রে যাওয়ার কথা বললি।একবারও ভাবলি ওইপাশের ব্যক্তিটার কেমন লেগেছে তোর কথা শুনে।কতোটা কষ্ট পেয়েছে সে।যদি ভাবতিই তাহলে কাল ওইসব কথা বলতি না। এখন বল আমার এতো এতো সমস্যার একমাত্র কারন তুই।আমাকে এইভাবে যন্ত্র’না দেওয়ার জন্যে তোকে কি শা’স্তি দিব বল তো?’

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৭
সাখাওয়াত বাড়িতে আজ মানুষের আনাগোনায় ভরপুর।জিহাদ সাহেব তার পরিবার নিয়ে এসেছেন।আলিফাও এসেছে ওকে ইফতি গিয়ে নিয়ে এসেছে।বসার রুমে সবার আড্ডা চলছে।আরাবী চুপচাপ বসে।তার ভালো লাগছে না কিছুই।সকাল থেকেই প্রচন্ড খারাপ লাগছে ওর।আলিফা আরাবীর শুকনো মুখ দেখে ওর কাছে গিয়ে বসল।ধীর আওয়াজে ডেকে উঠে,’ আরাবী?’

আলিফার ডাকে চোখজোড়া খুলে আরাবী বলে, ‘ হুম কিছু বলবি?’
‘ তোর কি হয়েছে?খারাপ লাগছে তোর?’
‘ আসলে তেমন কিছুই না।সকাল থেকেই কেমন যেন লাগছে।’

আলিফাকে চিন্তিত দেখাল।কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে কিছু একটা ভাবল।অতঃপর ওর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।ওকে এমন হাসতে দেখে আরাবী ভ্রু-কুচকে বলে,’ আমি অসুস্থ আর তুই হাসছিস?’

আলিফা ওর বত্রিশ পাটি দাঁত দেখিয়ে দিল।তারপর আবার সিরিয়াস হয়ে গেল।অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে আরাবীকে জিজ্ঞেস করে, ‘ তোর কি খাবার দেখলে বমি পায়? সত্যি করে বলবি।’

আরাবী অতোশতো না ভেবে সত্যি কথাই বলল, ‘ হ্যা ইদানিং বমি পায়।’
‘ মাথা ঘুরায়।’
‘ ওতোটাও না। তবে মাঝে মধ্যে।’
‘ ঘন ঘন ক্ষিদে পায়?’
‘ হ্যা।আর আমি খাচ্ছিও অনেকগুলো করে খাবার।’
‘ হুট হাট মুড সুয়িং হয়?’
‘ হ্যা হয়!’
‘ তোর লাস্ট পিরিয়ড কবে হয়েছিল?’

এই প্রশ্নটা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল আলিফা।আরাবী চোখ বড় বড করে তাকাল আরাবীর দিকে।এইবার একনিমিষেই বুঝে গেল আলিফা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে।আলিফা শুকনো ঢোক গিলে বলে,’ সত্যিই কি এটা হবে আলু?’
‘ তুই তোরটা ভালো জানিস।আমি যাস্ট ইঙ্গিতগুলো ধরিয়ে দিলাম।বাকিটা তোর হাতে।’

আরাবী দুহাতে মুখ ঢেকে নিল।ওর শরীর কাঁপছে।সত্যিই কি এটা হবে? ও কি মা হতে চলেছে? ওর পিরিয়ডের ডেট অনেক অভার হয়ে গিয়েছে।এতো ঝুট ঝামেলার মাঝে তো সেটা খেয়ালই নেই আরাবীর। আলিফা আরাবীর অবস্থা বুঝতে পেরে ওর কাধে হাত রাখল।আরাবী ছলছল চোখে ওর দিকে তাকাল।আলিফা হেসে বলে,’ বোকা মেয়ে।কাঁদছিস কেন?’
‘ আমি কি সত্যি মা হবো আলিফা?’
‘ আল্লাহ্ যদি রহমত করেন। আর এতে কান্নার কি আছে?এটা খুশির খবর।’
‘ আমি তো খুশিতে কাঁদছি।’
‘ ধুর এতো কান্না কাটি করে লাভ নেই।আমি বলে কি তুই একটা প্রেগ্ন্যাসি কিট এনে টেস্ট করে দেখে নিস।অথবা তুই হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করতে পারিস।এটাই বেস্ট হবে।এটায় একেবারে ১০০% সিউর হতে পারবি।’

আলিফার কথায় আরাবী মাথা নাড়িয়ে সায় জানাল।ইস,সত্যিই কি ও মা হবে? উপরওয়ালার কাছে দোয়া করল আরাবী যাতে এটা যেন সত্যি হয়।আচ্ছা জায়ান যখন জানবে সে বাবা হতে চলেছে। তখন লোকটা কি করবে?খুশিতে কি করবে লোকটা?যদিও এটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হয়ে গিয়েছে।এখনও বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কোন প্লানিং করেনি ওরা।তবুও উপরওয়ালার রহমত বর্ষণ করে দিয়েছেন।তাই উপরওয়ালার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করে নিল।এটাই যেন হয়।আরাবীর খুশিতে তো পাগল পাগল লাগছে। ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে জায়ানের কাছে।লোকটা সেইযে বেড়িয়েছে কোন খবর নেই।কে বলে স্পেশাল একজন নাকি আসবে।তাকে আনতে গিয়েছে।কে এমন স্পেশাল মানুষটা কে জানে।আরাবী বুকের মাঝে চাপা উত্তেজনা নিয়ে অধীর আগ্রহে প্রিয় মানুষদের অপেক্ষা করতে লাগল।
——
এদিকে আলিফা খুশিতে পারে না চিল্লিয়ে বাড়ি মাথায় উঠিয়ে ফেলতে।নিজ বাড়িতে হলে এতোক্ষণে তাই করত।এখন আছে শশুড়বাড়ি।নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে রেখেছে।এইবার আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে ওর ভাবনাটা একশো পার্সেন্ট সিউর হলেই হলো।আলিফা যখন নিজের ভাবনায় ব্যস্ত।এমন সময় ওর ফোনের টোন বেজে উঠল।ভাবনা চ্যুত হয়ে আলিফা ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইফতির মেসেজ।মেসেজটা ওপেন করল আলিফা।সেখানে লিখা,
‘ একটু উপরে আসবে।কথা আছে।’

আলিফা মেসেজটা পড়া শেষ করেই আশেপাশে তাকাল এখানে সবাই আছে।ইফতির কাছে যেতে হলে সবার সামনে দিয়ে গিয়ে সিড়ি পেড়িয়ে তারপর যেতে হবে।যা ওর কাছে লজ্জার বিষয়।আর এখন এটা ওএ শশুডবাড়ি।বাগদানের পর এইটাই ওর প্রথম আসা।আলিফার রিপ্লাই মেসেজ লিখল,
‘ এখানে সবাই আছে।কিভাবে আসব?’
‘ সবাই আছে তো কি হয়েছে?’
‘ সবার সামনে দিয়ে সিড়ি ডিঙিয়ে আপনার রুমে যাব আমি।মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে আপনার?’
‘ মাথা তো অনেক আগেই খারাপ হয়ে গিয়েছে।যবে থেকে তোমার প্রেমে পরেছি।’
‘ ফ্লার্টিং বন্ধ করুন।আর এতোগুলো মানুষ আমরা নিচে আপনি উপরে কি করছেন?’
‘ ভাবছিলাম তোমার সাথে একটু রোম্যান্স করব।তাই রুমে এসেছিলাম।এখন সেই ঘুরে বালি।’

আলিফা হেসে দিল ইফতির মেসেজে।তারপর লিখে,
‘ রোম্যান্সের ধান্দা বাদ দিন।এই মুহূর্তে ভদ্র ছেলের মতো।’
‘অভদ্র হ‌য়ে‌ছি আমি তো‌মা‌রি প্রে‌মে , তাই
কা‌ছে আসো না আরো কা‌ছে আসো না’
‘উফ কি শুরু করলেন।নিচে আসুন।’
‘ আসছি।’

আলিফা লাজুক হেসে মাথা নত করে নিল।ইফতি টাও যে এমন।লোকটার কথায় এতো লজ্জা পায় আলিফা।তবে যাই হোক ভালোলাগে আলিফার ইফতির এই স্বভাবটা।
______
আরাবী জিহাদ সাহেব আর লিপি বেগমের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। উশখুশ করছে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্যে।জিহাদ সাহেব অনেকক্ষন যাবত মেয়েকে এমন আনচান করতে দেখে এইবার বলে উঠলেন,’ কিরে মা কিছু বলবি?’

বাবার কথায় যেন ভরসা পেল আলিফা।
‘ তোমাকে অনেকদিন একটা কথা জিজ্ঞেস করব।কিন্তু তুমি আর মা যদি কষ্ট পাও তাই সাহস করে উঠতে পারছি না।’

লিপি বেগম বলেন,’ তুই নির্দ্বিধায় আমায় বল মা।’

আরাবী সাহস পেয়ে বলে উঠে,’ মা ফিহা কোথায়?ওকে কেন দেখিনা।প্রায় মাস পেড়িয়ে গেল ওর কোন খবর পেলাম নাহ।কি হয়েছে ওর?ও কি এখনও আমায় ঘৃ’না করে মা?’

আরাবীর কথায় তারা জিহাদ সাহেব আর লিপি বেগমের মুখ অন্ধকার হয়ে গেল।চুপ হয়ে গেলেন তারা।নিহান সাহেব বলে উঠেন,’ আসলেই ভাই। মানছি ফিহা যা করেছে সেটা অন্যায়।তবে এভাবে আর কতোদিন চলবে?ওর কোন খবরই নেই একদম।’

ফাহিম বাবা মায়ের দিকে তাকাল।তারপর আরাবীর দিকে তাকাল।বাবা মায়ের কষ্টটা বুঝল ফাহিম।ওর নিজেরও কম কষ্ট হচ্ছে না ফিহার জন্যে।হাজার খারাপ হোক বোন তো ওর।ফাহিম বাবা মা’কে চুপ থাকতে দেখে নিজেই বলে উঠল,’ ফিহাকে আমরা লন্ডন পাঠিয়ে দিয়েছি।ওর এখানে থাকা ভালো হবে না।ওর মনে তোর প্রতি এতোই ঘৃ’না যে ওর মস্তিষ্ক কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তাও মানছে না।উন্মাদের মতো হয়ে গিয়েছে।মা যখন নিজের ভুল বুঝতে পারে।তখন ওকেও বলেছিল তোর কাছে এসে যেন ও ক্ষমা চায়।ও মাকেও আক্রমন করতে গিয়েছিল।তাই সবটা বিবেচনা করে তোর জন্যে,ওর জন্যে মোট কথা আমাদের সবার ভালোর জন্যে ওকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছি।দূরে গিয়ে যদি মেয়েটা পরিবারের গুরুত্ব বুঝে।’

ফাহিমের বুক ভার হয়ে আসল।চোখটা জ্বলছে।বোনের জন্যে বুকের ভীতর হাহাকার করছে।কেমন আছে মেয়েটা কে জানে? অভিমান করে আছে অনেক ওদের প্রতি।তাই তো লন্ডন যাওয়ার পর কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি ওদের সাথে।জিহাদ সাহেবও মেয়ের জন্যে বুকটা পু’ড়ে যাচ্ছে।সন্তান যতোই খারাপ হোক।সন্তান তো সন্তানই।লিপি বেগম চোখ থেকে পানি ঝরছে।মেয়েটার সাথে আজ কতোদিন হলো তিনি কথা বলেন নাহ।কতোদিন হলো ফিহার কণ্ঠে মা ডাক শোনা হয় না।এসবই যে উনার পাপের ফল তা উনি ভালো ভাবেই জানেন।তবুও উপরওয়ালার কাছে উনি সর্বদা চান তার মেয়েটাকেও যেন তার মতো সুবুদ্ধি দান করেন।সময় থাকতে ভালো পথে ফিরে আসে।পরিবার, পরিজন যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা যেন মেয়েটা বুঝতে পারেন।

এদিকে আরাবী স্তব্ধ। ও কোনদিন ভাবতেও পারেনি।বাবা মা এমন একটা সিদ্ধান্ত নিবেন।শেষে কিনা ফিহাকে সবার থেকে এতো দূরে পাঠিয়ে দিলেন।তারা তো ওর জন্মদাতা পিতা মাতা না।তাও ওর ভালোর জন্যে নিজের জন্ম দেওয়া সন্তানকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন।আরাবী কি বলবে ভেবে পেল না।আপন মা বাবারাও তো সন্তানের জন্যে এতোটা করে না।আর ও তো দত্তক নেওয়া।কুড়িয়ে পাওয়া সন্তান তাদের।কৃতজ্ঞতায় বুক ভার হয়ে আসে আরাবীর।সোজা গিয়ে ঝাপিয়ে পরে জিহাদ সাহেবের বুকে।কাঁপা গলায় বলে উঠে,’ আমার জন্যে আজ ফিহাকে এতো কষ্ট করতে হচ্ছে।আমার জন্যে ওকে এতো দূরে গিয়ে পরিবার ছাড়া থাকতে হচ্ছে।আমায় ক্ষমা করে দিও বাবা।আমার জন্যে তোমাদের এতো কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।’

জিহাদ সাহেব মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলেন,’ কে বলেছে তোর জন্যে?আমরা ওর জন্যে,ওর ভালোর জন্যেই ওকে দূরে সরিয়েছি।তাই একদম নিজেকে দোষারপ করবি না।’

আরাবী ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে তারপর আবার মায়ের দিকে তাকাল।কান্নারত গলায় বলে,’ আমায় ক্ষমা করে দিও মা।আমার কারনে তুমি তোমার সন্তান থেকে দূরে।’

লিপি বেগম আরাবীর গালে মমতাময়ী হাতের স্পর্শ দিয়ে বলেন,’ এইসব কি ক্ষমা টমা চাচ্ছিস তুই।লন্ডন পাঠিয়েছি ফিহার ভালোর জন্যেই।ওখানে গিয়ে ওর পড়ালেখাও ভালো হবে।নিজেকে সময় দিতে পারবে।পরিবারের ভালোবাসা কি সেটাও বুঝবে।আর আমার এক মেয়েকে দূরে পাঠিয়েছি তো কি হয়েছে?আরেক মেয়ে তো এখানেই আছে।’

আরাবী লিপি বেগমকে জড়িয়ে ধরল।সবার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল বাবা মা আর সন্তানের এই আবেগঘন মূহুর্ত দেখে।ঠিক এমন সময় বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠল।সাথি বেগম বলেন,’ ওই তো জায়ান এসে পরেছে বোধহয়।মুন্নি যা তো দরজাটা খুলে দিয়ে আয়।’

মিহান সাহেব বলে, ‘ কে এমন স্পেশাল মানুষটা এসেছে দেখতে তো হবেই।যার জন্যে আজ জায়ান কাউকেই কোন কাজে যেতে দেয়নি।’

‘ এইতো চাচ্চু।এখন অনায়াসে তাকে দেখে নিতে পারো।’

জায়ানের কণ্ঠস্বর পেয়ে সবাই দরজার দিকে তাকাল।আরাবীর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল জায়ানকে দেখে।পরক্ষণে ওর পাশে দাঁড়ানো একজন মধ্যবয়স্ক থেকে একটু বেশি বয়স হবে এমন একজন মহিলাকে দেখে ভ্রু-কুচকালো। কে এই মহিলা?একে তো কোনদিন দেখেনি আরাবী? আরাবী সাথি বেগমের দিকে তাকিয়ে ধীরে বলে উঠে,’ ইনি কে মা?’

সাথি বেগম নিজেও আজ প্রথম দেখলেন এই মহিলাকে।তাই আরাবীর প্রশ্নে তার ভাবুক গলার উত্তর,’ আমি নিজেও জানি না মা।আমি তো আজ তাকে প্রথম দেখলাম।’

সাথি বেগমও চিনেন না।আরাবী অবাক নজরে তাকিয়ে রইল জায়ান আর ওই মহিলাটির দিকে।

এদিকে দরজার দিকে একজনের নজর যেতেই যে ওর বুকের কাঁপন বেড়ে গিয়েছে।হাঁপা’নি রোগের ন্যায় শ্বাস নিচ্ছেন তিনি।ভয়ে তার হাত পা কাঁপছে। বরফের ন্যায় শীতল হয়ে পরেছে দেহ।বাইশ বছর পর আবার সেই মুখের সাথে দেখা পেলেন তিনি।বাইশ বছর আগের অতীত কি এইবার সবার সামনে আসতে চলেছে?আর কি পারবেন না তিনি তা লুকিয়ে রাখতে?এদিকে জায়ান তার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিল।এতে যেন তার গলা আরও শুকিয়ে গেল।মরুভূমির মতো।তার কণ্ঠনালি ভেদ করে কাঁপা স্বরে একটা নাম বেড়িয়ে আসল অস্ফুটস্বরে, ‘ রোজি?’

#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।