হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব-৫+৬

0
834

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৫
‘ হাতে ব্যাথা পেলে কিভাবে?’

জড়সড় হয়ে বসা থাকা আরাবীর উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করলো জায়ান।আরাবী এহেন প্রশ্নে কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না।তবুও আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
-‘ আং..আংটিটা খুলার সময় একটু ছি..ছিলে গিয়েছিলো।’
জায়ান ভ্রু-কুচকালো আরাবীর কথা শুনে।ব্যান্ডেজটায় এখনো তাজা র’ক্ত ভেসে আছে।আলতো করে হাত ছোঁয়ালো সেখানে জায়ান।জায়ানের স্পর্শে জায়গাটা কেমন শিরশির করছে আরাবীর।জায়ানের ধীর আওয়াজ,
-‘ ব্যাথা আছে?’
-‘ উঁহু।’
-‘ এখনো র’ক্ত লেগে যে?’
-‘ ব্যাগের সাথে লেগে আবার ব্যাথা পেয়েছিলাম।’
-‘ চলো আমার সাথে।’

আকস্মিক জায়ানের এই কথায় আশ্চর্য হলো আরাবী।চোখ তুলে তাকালো জায়ানের দিকে।জায়ান নির্বিকারে ওর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু জায়ানের চোখে আরাবী দেখতে পাচ্ছে একরাশ ব্যাকুলতা,অস্থিরতা।তবে কি তা ওর জন্যেই?কিন্তু ওর জন্য কেনই বা এতো অস্থির আর ব্যাকুল হবে লোকটা?আজ নিয়ে মাত্র দু’দিন হলো ওদের দেখা।আরাবী বিরবির করলো,
-‘ আপনি আস্ত একটা ধাধা।এই ধাধার উত্তর আমি মিলাবো কিভাবে?’
-‘ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে অপেক্ষা করতে হয়।’

হকচকিয়ে গেলো আরাবী। এতো আস্তে কথা বললো তাও লোকটা শুনে ফেললো।কি ভয়া’নক ব্যাপার স্যাপার। আরাবীর ভাবনার মাঝে জায়ান গম্ভীর স্বরে বলে,
-‘ চলো।’

আরাবী মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ কো..কোথায় যাবো?’
-‘ ডাক্তারের কাছে।’
আরাবী অবাক।
-‘ কিন্তু কেন?’

কোন উত্তর দিলো না জায়ান।সে এখনো আরাবীর হাতের ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে।আরাবী শুকনো গলায় বলে,
-‘ লা..লাগবে নাহ তো।একটুখানি কেটেছে।আমার ব্যাগে ব্যান্ডেজ আছে।আমি আলিফাকে দিয়ে করিয়ে নিবো।’

কথাটা শোনা মাত্রই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো জায়ান আরাবীর দিকে।আরাবী ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।আশ্চর্য লোকটা এভাবে তাকাচ্ছে কেন? একটু আগেই তো কি সুন্দর নরম কন্ঠে কথা বলছিলো।এখন আবার সেদিনের মতো তাকাচ্ছে।

-‘ ভাই তুমি কিছু বলছো নাহ কেন?’
নূরের প্রশ্নে আরাবী দ্রুত জায়ান থেকে একটু সরে বসার চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু জায়ান তা হতে দিলে তো। সে এখনো আরাবীর হাত ধরে বসে।তবে খুব নরম স্পর্শে ধরেছে আরাবীর হাতটা।যেন আরাবী একটুও ব্যাথা না পায়।বুকের ভীতরটা কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে।জায়ানের একটুখানি ছোঁয়াতেই যেন আরাবীর মন আরাবীকে বলছে।ইনিই সেই জন যেইজন তোকে সবসময় সবকিছু থেকে আগলে রাখবে। তোর একমাত্র নির্ভরযোগ্য, ভরসাযোগ্য ব্যাক্তি।যার কাছে তুই নির্দ্বিধায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারবি।কিন্তু মন এমনটা কেন বলছে? কি কারনে এমন হচ্ছে? যেখানে অন্যসব ছেলে আরাবীর দিকে একটু আঁড়চোখে তাকালেই আরাবীর অসস্থি লাগে।সেখানে জায়ান আরাবীর সাথে প্রায় একপ্রকার গা ঘেসে বসে আছে।সাথে ওর হাত ধরে আছে।কিন্তু আরাবীর একটুও খারাপ লাগছে না।বরং সারা মনপ্রাণ জুড়ে ভালোলাগার প্রজাপতিরা এদিক সেদিক উড়াউড়ি করছে।আনমনেই আরাবীর ঠোঁটের কোণে লজ্জা রাঙা হাসি ফুটে উঠলো।এতোক্ষনের ভয়,ড’র,জড়তা সব যেন একনিমিষে কোথাও গায়েব হয়ে গেলো।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই নূর সিদ্ধান্ত নিলো দূরে কোথায় ঘুরতে যাবে।আরাবী আর আলিফাকেও ওদের সাথে যেতে হবে।তা শুনে আরাবী ভড়কে গেলো।সে কিভাবে যাবে? দুপুর তিনটা বাজে।বাড়ি ফিরতে হবে।নাহলে ওর বাবা চিন্তা করবেন।আর বাবাকে যে ফোন করে জানাবো।তো জানাবেটা কি?যে ও জায়ানের সাথে আছে?এটা আরাবী কখনই বলতে পারবে নাহ।লজ্জায় আরাবী তৎক্ষনাত ম’রে যাবে।কি মনে করবে ওর বাবা আর মা। বলবে বিয়ে ঠিক হয়েছে একদিনই হয়নি। এখনি হবু বর এর সাথে ঘুরাঘুরি শুরু করে দিয়েছে।আরাবী ইতস্ততভাবেই বলে উঠলো,
-‘ নূর বলছিলাম কি,তোমরা ঘুরতে যাও।আমি অন্য একদিন যাবো নেহ তোমাদের সাথে।আলিফাকে ওর বাড়ি ফিরতে হবে।আংকেল আবার একটু ইস্ট্রিক্ট ওর বিষয়ে।’

জায়ান আরাবীর কথা শুনে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো।আরাবী সেটা বুঝতে পেরে এদিন ওদিক নজর ঘুরিয়ে নিলো।জায়ান বলে উঠলো,
-‘ আরাবী ঠিক বলছে।ইফতি..’
-‘ জি ভাই।’

ইফতি এগিয়ে আসতেই।
-‘ নূরকে নিয়ে তুই চলে যাহ।আমি আরাবী আর আলিফাকে ড্রপ করে সোজা অফিসে আসছি।’
-‘ আচ্ছা ভাই।’

আরাবী জায়ানের ড্র‍প করে দেওয়া কথা শুনে কিছু বলবে।তার আগেই জায়ানের ঠান্ডা কন্ঠ,
-‘ ডোন্ট স্যে আ ওয়ার্ড। আমি যেহেতু বলেছি ড্রপ করে দিবো।মানে দিবো।’

আরাবী সাথে সাথে বলতে চাওয়া কথাটা গিলে ফেললো।যেইভাবে তাকায় লোকটা।মানুষ কথা আর বলবে কিভাবে? ইফতি আর নূর মিটিমিটি হাসছে ওদের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে। জায়ান বিরক্ত হলো এই দুটোর কান্ডে। চাপা ধমক দিয়ে বললো,
-‘ কি সমস্যা তোদের?’
নূর হাসি বন্ধ করে সাথে সাথে বলে,
-‘ কোন সমস্যা নেই ভাইয়া।এইযে তুমি ভাবির সাথে আরেকটু টাইম স্পেন্ড করতে চাচ্ছো।আমার আর ইফতি ভাইয়ার এতে কোন সমস্যা নেই।তুমি চাইলে ভাবির সাথে আজ সারাটাক্ষন থাকতে পারো।এতেও আমার আর ইফতি ভাইয়ার কোন সমস্যা নেই।’

একনাগারে কথাগুলো বলে ফেললো নূর।নূরের এমন কথায় জায়ান কোন গুরুত্ব দিলো না।এদিকে ইফতি আর আলিফা হেসে দিয়েছে।আর আরাবী লজ্জায় পারে নাহ মাটি ফাঁকা করে তার মধ্যে ঢুকে যেতে। কি একটা অবস্থা।এইভাবে তাকে লজ্জা দেওয়ার কোন মানে আছে? নূর মেয়েটা অতিরিক্ত কথা বলে।আরাবী ঠোঁট ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।ইফতি হাসি থামিয়ে বলে,
-‘ নূর চল। দেরি হয়ে যাচ্ছে।আসি ভাবি।ভালো থাকবেন।’
-‘ আসি ভাবি।আমি কিন্তু আবার তোমার সাথে দেখা করবো।নেক্সট দেখা হলে কিন্তু আমরা ঘুরতে যাবো বলে দিলাম।আমরা শপিং ও করবো।এখন আমি একা নই তুমিও আছো আমার দলে।দুজন মিলে একসাথে ভাইয়ার পকেট খালি করবো।’

জায়ান বিরক্ত হয়ে ইফতিকে ইশারা করলো নূরকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ইফতি ইশারা বুঝতে পেরে সাথে সাথে নূরের মুখ চেপে ধরলো।
-‘ আরে বোন আমার চুপ যা। এতো কথা বলিস নাহ।’

নূর ইফতির হাতে কামড় দিয়ে দিলো।ব্যাথা পেয়ে ইফতি হাত সরিয়ে নিলো।নূর রাগি গলায় বলে,
-‘ আমার কথা বলার সময় ডিস্টার্ব করবা নাহ ভাইয়া।নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।’
-‘ আচ্ছা বুঝেছি।চল তো।ভাইয়া রেগে যাচ্ছে।’

নূর মুখ ভেংচি কেটে বাইকে গিয়ে উঠে বসলো ইফতি গিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।ওরা যেতেই জায়ান আরাবীর উদ্দেশ্যে বলে,
-‘ গাড়িতে উঠো।’

জায়ান ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে দিতেই আরাবী গাড়িতে উঠে বসলো।আলিফা নিজেই গাড়ির দরজা খুলে পিছনে বসতে বসতে বলে,
-‘ আমি নিজেই উঠতে পারবো ভাইয়া।আপনি বরং আপনার বউয়ের দিকে নজর দিন।’

জায়ান নিস্তব্ধে বাঁকা হাসলো।বললো,
-‘ নজর আমার সবসময় তার দিকেই থাকে।’

কথাটা শোনা মাত্রই আরাবী চোখ বড় বড় করে তাকালো।লোকটা কিসব বলে আলিফার সামনে।একটুও কি লজ্জা নেই নাকি।হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসে আরাবীর ফোনে।আরাবী মেসেজটা ওপেন করে দেখে আলিফার মেসেজ। মেসেজটা পড়েই আলিফা লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো।এতো অস’ভ্য এই মেয়েটা।কিসব নির্ল’জ্জ কথাবার্তা লিখে মেসেজ পাঠাচ্ছে।মেসেজটা আবার পড়ল আরাবী।লাজুক হাসলো ও।আলিফার উদ্দেশ্যে লিখে পাঠালো,
-‘ অস’ভ্য কথা কমিয়ে বল।সে আছে এখানে।আমাকে আর লজ্জা দিস নাহ প্লিজ।’

বান্ধবীর মেসেজের উত্তর দেখে আলিফা মিটিমিটি হাসতে লাগলো।এদিকে জায়ান এসে গাড়িতে বসলো।তারপর বলে,
-‘ সিট বেল্ট বেধে নেও।’

আরাবী জিভ কাটলো।ইস,সে তো এটার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। আরাবী দ্রুত সিট বেল্ট লাগালো।জায়ান গাড়ি স্টার্ট দিলো।এর মধ্যে আর কোন কথা হলো নাহ।সবার আগে আলিফার বাড়ি পরায়। আলিফাকে আগে নামিয়ে দিলো জায়ান।আলিফা যাওয়ার সময় আরাবীকে চোখ টিপ মেরে গিয়েছে।বিনিময়ে আরাবী চোখ রাঙ্গানি দিয়েছে আলিফা। তারপর আবারও গাড়ি চলতে শুরু করলো।একেবারে আরাবীদের বাড়ির গেটের সামনে এসে থামলো।আরাবী সিট বেল্ট খুলেছে মাত্র।হঠাৎ জায়ান বললো,
-‘ তোমার ব্যাগটা দেও।’

বুঝতে পারলো না আরাবী।
-‘ অ্যাঁ?’
-ব্যাগ!’

জায়ান চোখের ইশারায় দেখালো।আরাবী এইবার বুঝলো জায়ানের দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিলো।জায়ান ব্যাগটা নিলো না।তবে বললো,
-‘ ব্যান্ডেজ বের করো।’

আরাবীর আজ কি হয়েছে কে জানে?ও মন্ত্রমুগ্ধের মতো জায়ান যা যা বলছে তাই করছে।আরাবী ব্যান্ডেজ বের করে জায়ানের দিকে এগিয়ে দিলো।জায়ান সেটা হাতে নিয়ে বিনাবাক্যে আরাবীর হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।খানিক কেঁপে উঠলো আরাবী তবে কিছু বললো না।জায়ান খুব যতনে আরাবীর হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে ফেললো।খুব নরমভাবে স্পর্শ করছে।যেন আরাবীকে একটু জোড়ে ছুঁলেই আরাবী ব্যাথা পাবে। জায়ানের প্রতিটা স্পর্শে আরাবী দেহ মন কেমন চনমনিয়ে উঠছে। পায়ের তলায় সুরসুরি লাগছে।আরাবী ঠোঁট কামড়ে বসে রইলো।জায়ান সুন্দরভাবে আবারও আরাবীর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর আরাবীর হাত দ্রুত ছেড়ে দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।আরাবী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে।জায়ান চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই শক্ত কন্ঠে বলল,
-‘ যাচ্ছো না কেন?’

আরাবী কথাটা শুনেই হুরমুরিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।এ কেমন লোক রে বাবা।এইভাবে বলার কি আছে? লোকটা অদ্ভুত। এই নরম তো আবার এই গরম।আরাবী বাড়ির দিকে পা বাড়াতে নিয়েও থেমে গেলো।এভাবে চলে যাওয়াটা ভালো দেখায় নাহ। হাজার হোক লোকটা ওর হবু বর।আরাবী আবার ফিরে আসলো।জায়ানের দিকের দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো।ইতস্ততভাবে জানালায় ঠকঠক আওয়াজ করলো।
-‘ আবার কি চাই?’

নাক মুখ কুচঁকে এলো আরাবীর।এটা কেমন প্রশ্ন?আরাবী নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে,
-‘ জি বাড়িতে আসুন।’

জায়ানের জবাব নেই।আরাবী জানালা দিয়ে ভীতরে জায়ান কি করছে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই দেখা যাচ্ছে না।ফোঁস করে শ্বাস ফেলে আরাবী নিজেই আবার বলে,
-‘ বাড়িতে আসুন।এইভাবে গেটের কাছ থেকে চলে যাবেন।বিষয়টা খারাপ দেখায়।’
-‘ আসলে কি খাওয়াবে?’

জায়ানের সোজাসাপটা প্রশ্ন।এমন প্রশ্নে আরাবী কি উত্তর দিবে জানে নাহ।জীবনেও শুনে নি কাউকে বাড়িতে আসার কথা বললে সে ব্যাক্তি সোজাসাপটা জিজ্ঞেস করে ‘আসলে কি খাওয়াবে?’। এই জায়ান নামক ব্যাক্তিটা অদ্ভূত, বড্ড অদ্ভূত।আরাবী ধীর আওয়াজে বলে,
-‘ আপনি আগে আসুন তো।আমি আপনার জন্যে চা,পাকোরা,পাস্তা,নুডুলস।যা যা আপনি খেতে চান বানিয়ে দিবো।’
-‘ বাট আই লাভ সুইটস মোর।’

আরাবী সরল মনে বললো,
-‘ হ্যা তাও বানিয়ে খাওয়াবো।আমি রসমালাই,গোলাপজাম, বানাতে পারি।’
-‘ এইগুলা না অন্য মিষ্টি।’

কথাটা বলেই জায়ান গাড়ির জানালা খুলে অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকালো আরাবীর দিকে।আরাবী সাথে সাথে দৃষ্টি নত করলো।জায়ান বাঁকা হেসে বলে,
-‘ বাড়ি যাও।আমি আসবো নাহ।কারন আমি জানি আমি যেই মিষ্টির কথা বলছি তুমি তা আমায় বিয়ের পর ছাড়া দিতে পারবে না।আর আমিও বিয়ের আগেই মিষ্টি খেতে চাই নাহ।’

গোলমেলে কথাটা বুঝতে পারলো না আরাবী।চিন্তায় বিভোর সে কথাটা নিয়ে।আরাবী ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।হঠাৎ পিছন থেকে জায়ান ডেকে উঠলো,
-‘ আরাবী…!’

ইস, কি সুন্দর সেই ডাক।একেবারে আরাবীর কলিজায় গিয়ে লাগে। কারো মুখে নিজের নামটা শুনতে এতো ভালো লাগে জানা ছিলো না আরাবীর।আরাবী সময় নিয়ে পিছনে ঘুরে তাকালো।আরাবী তাকাতেই জায়ান শীতল কন্ঠে বললো,
-‘ আর কখনো আমার সামনে ঠোঁট কামড়াবে নাহ।আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ দেন।’

কথাটা শেষ করতে দেরি জায়ানের গাড়ি ছুটিয়ে যেতে দেরি নেই।আরাবী হা করে জায়ানের যাওয়ার পথের পাণে তাকিয়ে রইলো।জায়ানের এমন অদ্ভূত কথাবার্তা ওর মাথায় কিলবিল করতে লাগলো।জায়ানের কথার অর্থ ভাবতে ভাবতে আরাবী নিজেদের ফ্লাটে চলে আসলো।লিপি বেগম দরজা খুলে দিলেন।ভ্রু-কুচকে আরাবীকে খানিক দেখলো তবে কিছু বললো না।কারন বসার ঘরে জিহাদ সাহেব বসে আছেন।তাই মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেন।আরাবী বাবার সাথে কিছু কথা বলে রুমে চলে আসলো।গোসল করে ফ্রেস হয়ে আসলো।এখনও ভাবছে জায়ানের কথা।বিরবির করে বার কয়েক জায়ানের কথা আওড়ালো।হঠাৎ কিছু একটা বুঝে চমকে উঠলো আরাবী।থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।র’ক্ত হিম হয়ে গিয়েছে ওর।আকস্মিক চাঁপা চিৎকার দিয়ে বালিশে মুখ গুজে দিলো আরাবী।ভাজ্ঞিস কেউ শুনেনি।কারন ওর রুমটা বসার ঘর থেকে একটু সাইডে।আরাবীর লজ্জায় দ’ম বন্ধ হয়ে আসছে।নাক,কান,গাল গরম হয়ে গিয়েছে।আরাবী বালিশে মুখ গুজে বিরবির করলো,
-‘ শেষমেষ কিনা এমন নির্ল’জ্জ ছেলেকেই আমার বর হতে হলো?অস’ভ্য, অ’সভ্য,অস’ভ্য।’

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৬
আজ শুক্রবার। সপ্তাহিক ছুটির দিন।সকাল থেকে আরাবী বসে নেই।একে একে ঘরের সব কাজ আজ সে একা হাতেই করছে।এখন রান্না করছে।অবশ্য রান্না প্রায় হয়ে এসেছে।ফাহিম বোনের হাতের পাস্তা খেতে চেয়েছে। সেটাই বানাচ্ছে আরাবী।চুলোয় পাস্তা সিদ্ধ দিয়ে কাটাকুটি করছে আরাবী।এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো।আরাবী ভ্রুক্ষেপ করলো না।বসার ঘরে লিপি বেগম আর ফিহা আছে। তাদের মাঝেই কেউ গিয়ে খুলে দিবে।আরাবী পেয়াজ,কাচা মরিচ কেটে নিয়েছে।পাস্তাটা চুলোয় বসিয়ে দিয়ে নাড়াচাড়া করছে আরাবী।এমন সময় রান্না ঘরে এসে হাজির হয় ফিহা।এসেই আরাবীকে দেখে মুখের বিকৃতি আকার করলো।ফিহা বলল,
-‘ তোর শশুড়বাড়ির লোক এসেছে। আম্মু তোকে ভালোভাবে হাত মুখ ধুয়ে পরিপাটি হয়ে আসতে বলেছে।’

আরাবী কথাটা শুনেই বড় বড় চোখে তাকালো।মনে মনে বললো,
-‘ ইয়া মাবুদ।হঠাৎ তারা আসলো যে?’

আরাবী ঝটপট পাস্তা বানিয়ে রুমের দিকে ছুট লাগালো।সুন্দরভাবে ফ্রেস হয়ে একটা বেবি পিংক কালার গোল জামা পরে নিলো।জামাটা আরাবীর খুব পছন্দ। স্পেশালি জামাটার ওড়না।ওড়নায় খুব সুন্দর কারুকাজ করা। আরাবী এইবার বসার ঘরে গেলো।গিয়ে দেখলো ওর হবু শাশুড়ি,চাচি শাশুড়ি আর নূর এসেছে।নূর আরাবীকে দেখা মাত্রই দৌড়ে উঠে গিয়ে আরাবীকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বলল,
-‘ জানো ভাবি আমি তোমায় কত্তো মিস করেছি।ভাইয়াটা না অনেক শয়তান।কতো করে বললাম ভাবির নাম্বারটা দেও। আমি ভাবির সাথে ভিডিওকলে কথা বলবো।শয়’তানটা দিলোই নাহ।তুমি কিন্তু ভাইয়াকে ব*কা দিয়ে দিবে এরজন্যে ঠিক আছে?’

আরাবীর নূরের একনাগারে বলা এতোগুলো কথা ঠাওর করতে সময় লাগলো। তারপর জোড়পূর্বক হেসে আরাবী মাথা দুলালো।আরাবী সাথি বেগম আর মিলি বেগমকে সালাম দিলেন।তারাও সালামের জবাব নিলেন।সাথি বেগম বলেন,
-‘ আমরা এসেছিলাম আরাবীকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ওকে নিয়ে আজ জুয়েলার্সের দোকানে গিয়ে গহনা বানাতে দিয়ে আসবো। আপনার এতে কোন আপত্তি আছে আপা,ভাই সাহেব?’

জিহাদ সাহেব হেসে বলেন,
-‘ নাহ নাহ আপা সমস্যা নেই।আপনারা যান নিয়ে ওকে।এমনিতেও তো আর কয়েকদিন পর মেয়ে আমার আপনাদেরই হয়ে যাবে।তখন উলটো ওকে নেয়ার সময় আমার অনুমতি লাগবে আপনাদের কাছ থেকে।’

বলতে বলতে জিহাদ সাহেব মন খারাপ করে আরাবীর দিকে তাকালেন।মেয়েটা তার বড্ড আদরের।কলিজার টুকরো মেয়েটাকে আর কয়েকদিন পর পরের ঘরে পাঠিয়ে দিবেন ভাবলেই তার দ’ম বন্ধ হয়ে আসে।আরাবীও বাবার দিকে মলিন হেসে তাকালো।চোখে ওর একরাশ কাতরতা।পরিবার, আপনজন ছেড়ে চলে যাবে কয়েকদিন পর।সেই দুঃখের হাহা*কারে ভীতরটা কেমন খালি খালি হয়ে আসছে এখনি।লিপি বেগম বলেন,
-‘ আরাবী যা রেডি হয়ে আয়।’

আরাবী নিচু স্বরে বলে,
-‘ আমি রেডিই মা। শুধু হিজাব বাধলেই হবে।’

আরাবী রুমে এসে সুন্দরভাবে একটা হিজাব বেধে নিলো।কি মনে করে যেন চোখে কাজল দিলো আর ঠোঁটে হালকা লিপগ্লোস।আনমনেই হাসলো আরাবী নিজেকে দেখে।সেদিন জায়ানের কথাগুলো মানে বুঝার পর থেকে আরাবী হুটহাট লজ্জা পেয়ে বসে। এইযে যেমন এখন হঠাৎই জায়ানের কথা ওর মনে পরে গেলো।আর এখন লজ্জায় গাল গরম হয়ে উঠেছে ওর। মনে মনে জায়ানকে আরেকবার অ*সভ্য উপাধি দিয়ে বেড়িয়ে আসলো আরাবী।এসেই দেখে ফিহাও তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে। ভ্রু-কুচকালো আরাবী।এই মেয়ে এমন সেজেগুজে আছে কেন? ওকে আরো অবাক করে দিয়ে ফিহা বলে,
-‘ চলুন আন্টি,আরাবী আপু এসে পরেছে।’

ফিহার মুখে আপু ডাক শুনে আসমান থেকে পরলো আরাবী।রাতারাতি এতো পরিবর্তন? ফিহার এসব নাটক সহ্য হচ্ছে না আরাবীর।দাঁত খিচিয়ে রয়েছে।নেহাত ওর শশুড়বাড়ির লোক আছে এখানে নাহলে।আরাবী ফিহা দুটো করা কথা নিশ্চিত শোনাতো।

সবাইকে বলে ওরা শপিংমলের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরলো।
——–
জুয়েলারি শপে আসতেই অবাক হলো আরাবী।কারন গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে আগে থেকেই জায়ান আর ইফতি দাঁড়ানো।তারা নামতেই জায়ান আর ইফতি এগিয়ে আসলো।জায়ান আরাবীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?’

আরাবী মাথা দুলিয়া ‘ না ‘ বুঝালো।লজ্জায় আরাবীর গালে লাল আভা দেখা দিলো।সেদিনের ঘটনার কথা মনে পরে গিয়েছে জায়ানকে দেখে।আরাবী লজ্জা পাচ্ছে এদিকে অ’সভ্য লোকটার কোন হেলদোল নেই।ফিহা হা করে তাকিয়ে আছে জায়ান আর ইফতির দিকে।কেউ কারো থেকে কম নাহ।দু ভাই-ই সুদর্শন।সাথি বেগম ফিহাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।জায়ান ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করল,
-‘ ভালো আছো?’

ফিহা কেমন যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গিয়েছে।বেশ ভাব নিয়ে বলে,
-‘ আমি ভালো আছি জায়ান ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?বাই দ্যা ওয়ে আপনাকে এই ব্লাস স্যুটে দারুণ লাগছে।’

আরাবী ফিহার কথা শুনে রাগান্নিত দৃষ্টিতে ফিহার দিকে তাকালো।ছ্যা’ছড়ামো শুরু হয়ে গিয়েছে অসহ্য।আরাবীর মস্তিষ্কে যেন ঈর্ষা’রা কিলবিলিয়ে উঠলো। জায়ান ফিহার কথার কোন গুরুত্বই দিলো না।সবার উদেশ্যে বলল,
-‘ ভীতরে চলো সবাই।’

সাথি বেগম,মিলি বেগম ফিহাকে নিয়ে ভীতরে চলে গেলেন।নূর দাঁড়িয়ে আছে দেখে জায়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
-‘ যাচ্ছিস না যে?’
-‘ ভাবিকে নিয়ে যাবো।’
-‘ তুই যা।ও পরে আসবে।’
-‘ নাহ, ভাবি আমার সাথেই যাবে।’
-‘ তোর অনলাইনে যেই যেই ড্রেসগুলো অর্ডার দিয়েছিলি সব কেন্সেল।’
-‘ ব্লেকমেইল করা হচ্ছে? ভালো হবে দেখো।এর শোধ আমি তুলবই।’
-‘ ইফতি, ওকে নিয়ে যাহ।’

ড্রেস কেন্সেল করে দেবার ভয়ে নূর ইফতির সাথে চলে গেলো।আরাবী ভাই বোনের খুনশুটি দেখে হাসছিলো।জায়ান তাকাতেই সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে দিলো।জায়ান পকেটে দু-হাত ভরে টান টান হয়ে দাড়ালো।এদিক ওদিক ঘার নাড়িয়ে বললো,
-‘ হাসি থামালে যে?’

জবাব দিলো না আরাবী।এই লোকটার সামনে কেমন যেন মিইয়ে যায় ও লজ্জায়। কন্ঠ হতে শব্দ-রা বেরই হতে চায় না।
-‘ লজ্জা পাচ্ছো কেন?আমি তো কিছুই করি নি?’

এইবার ভয়ংকর রকম লজ্জা পেলো আরাবী।এই লোকটা ইচ্ছে করে ওর সাথে এমন করছে আরাবী ভালোভাবেই জানে।জায়ান আরাবীর অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।আরাবী মিস করে গেলো জায়ানের সেই হাসি।হাসলে ছেলেটাকে যে মারাত্মক সুন্দর লাগে।
জায়ান আরাবীর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকলো।হঠাৎ জায়ান বলে উঠলো,
-‘ ভীষণ সুন্দর লাগছে।’

ঘোরলাগা এমন কন্ঠস্বর শুনে চকিতে তাকালো আরাবী।জায়ান ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।নে’শাগ্রস্ত সেই চাহনী।যা আরাবীর ভীতর শুদ্ধ কাঁপিয়ে দেয়।জায়ানের এই ছোট্টো প্রসংশাতেই যেন আরাবীর মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেলো।আকস্মিক জায়ান এসে আরাবীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।হালকা কাঁপলো বোধহয় আরাবী। জায়ান আরাবীর হাত ধরে শপিংমলে ভীতরে প্রবেশ করলো।জুয়েলারি শপে যেতেই ফিহা এসে জায়ানের ডানহাত হঠাৎ করে চেপে ধরে বলে,
-‘ কোথায় ছিলে ভাইয়া? আমি অপেক্ষা করছিলাম তোমার?’

দাঁতেদাঁত চেপে আরাবী। আপনি থেকে সোজা তুমিতে এসে পরেছে? এটা যে ওর বোন ভাবতেও আরাবীর ঘৃনা লাগে।এদিকে জায়ান ভয়া*নক রেগে তাকালো ফিহার দিকে।ফিহা জায়ানের রাগত মুখশ্রী দেখে ভয় পেয়ে সাথে সাথে জায়ানের হাত ছেড়ে দিলো।জায়ান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-‘ আই সুড নেভার সি ইউ ডুয়িং দিস এগেইন।আদারওয়াইস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।জাস্ট বিকয ওফ ওর বোন বলে আমি কিছু বললাম নাহ।বাট বি কেয়ারফুল নেক্সট টাইম।’

ফিহা ভয় পেয়ে সরে গেলো।আরাবী বোনের এমন কান্ডে ভীষন লজ্জিত হলো।আহত সুরে বললো,
-‘ আমার বোনটা একটু ছটফটে।ওর পক্ষ থেকে আমি মা…’

জায়ান আরাবীকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো।বললো,
-‘ ডিড আই টোল্ড ইউ টু এপোলোজাইয ওন হার বিহাফ?’

আরাবী জায়ানের এমন হারকাপানো ঠান্ডা কন্ঠের কথায় ভয় পেয়ে বলে,
-‘ নাহ।আসলে…’
-‘ জাস্ট বি সাট আপ।’

আরাবী চুপ মেরে গেলো জায়ানের ধমক খেয়ে।লোকটা রেগে গিয়েছে ভীষণ।আরাবী জায়ানের অগোচরে ফিহাকে চোখ রাঙানি দিলো।ফিহার এতো কোন হেলদোল হলো নাহ।ও চলে গেলো জুয়েলারি দেখতে।
————-
পুতুলের মতো বসে আছে আরাবী।আর দুই শাশুড়ি একের পর এক গহনা ওকে পরিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।জায়ান আরাবীর বরাবর বসে।সে ওর মাকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে কোনটা ভালো লাগছে নাকি ভালো লাগছে না।অবশেষে অনেক বাছাই দাছাইয়ের পর গহনা সিলেক্ট হলো।আরাবী যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো।আরাবী উঠে একটু সাইডে গিয়ে দাড়ালো।একেরপর এক গহনা পরতে পরতে ও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।সিলেক্ট করা গহনা গুলোর দিকে তাকিয়ে আরাবী শুকনো ঢোক গিললো।এতোগুলো গহনা ওর জন্যে নেওয়া হচ্ছে।এগুলো কিভাবে পরবে আরাবী?গহনা ভারে না জানি ও বিয়ের দিন হাটতে নিয়ে উল্টেই না পরে যায়।মান সম্মান আর থাকবে না তাহলে।

জায়ানের দৃষ্টি সর্বদা আরাবীর দিকে।মেয়েটার থেকে একপলকের জন্যে যেন ও চোখ সরাতে পারে নাহ।এমন সময় ফিহা আসলো হাতে একটা আংটি নিয়ে। এসেই বলে,
-‘ ভাইয়া আংটিটা আমার পছন্দ হয়েছে।আমায় কি এটা আপনি কিনে দিবেন?’

জায়ান তাকালো না পর্যন্ত ফিহার দিকে।সেভাবে বসে থেকেই ইফতির উদ্দেশ্যে বলে,
-‘ ইফতি ফিহা যেটা পছন্দ করেছে তা ওকে প্যাক করে দিয়ে দে।’
-‘ আচ্ছা ভাই।’

ফিহা দাঁতেদাঁত চেপে চলে গেলো।কেমন ছেলে এটা?সামনে এমন সুন্দরী মেয়ে ঘুরঘুর করছে।আর সে তাকাচ্ছেও নাহ।ওই মেয়েটার মাঝে কি আছে যা ফিহার মাঝে নেই? আরাবীর থেকে ফিহা আরো দ্বিগুন সুন্দর।আর মেয়েটার ড্রেসাপ দেখো আর ওকে দেখো।ও কি সুন্দর লেডিস জিন্স আর শর্ট টপ্স পরেছে। ওর ফিগার এমনিতেও সুন্দর।আরো ও আজ টাইট ফিট পোষাক পরায় তা আরো বেশি দৃশ্যমান।তাতে ওকে আরো আকর্শনীয় লাগছে।এইযে শপিংমলে প্রবেশ করার পর বেশ কয়েকজন ছেলে ওর দিকে তাকিয়েছিলো।কিন্তু এই ছেলেটা ওর দিকে ফিরিয়েও তাকালো নাহ। ফিহা বিরবির করলো,
-‘ কে জানে ওই কালি পে’ত্নিটাকে কি দেখো এতো এই ছেলে।’
————
আরাবী স্বর্ণের খুব সুন্দর একটা ব্রেসলেট হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে।এমন সময় ফিহা এসে ওর হাতটা আরাবীর মুখের সামনে এনে বললো,
-‘ দেখ দেখ জায়ান ভাইয়া আমাকে এই আংটিটা গিফট করেছে সুন্দর নাহ?’

আরাবী কথাটা শুনে চটজলদি ফিহার হাতের দিক তাকালো।অবাক হয়ে বলে,
-‘ মানে কি?তোকে গিফট করবে মানে?’
-‘ মানে আবার কি?আমি আংটিটা দেখছিলাম।সে এসে বলে পছন্দ হয়েছে।আমি হ্যা বলে দিতেই সে আমাকে এটা ঝটপট কিনে গিফট দিলো।’

আরাবী নাক মুখ কুচকে ফেললো।জায়ানের দিকে একবার তাকালো।লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে।আরাবী দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।আরাবী জানে ফিহা মিথ্যে বলছে।তবে এর মাঝে একটু সত্যিও আছে।আংটিটা ওকে সত্যিই হয়তো জায়ান কিনে দিয়েছে।নাহলে এই আংটি কিনার মতো কোন টাকা ফিহার কাছে নেই তা আরাবী ভালোভাবে জানে।মনটা কেমন যেন একটু খারাপ হয়ে গেলো আরাবীর।জায়ান ফিহাকে আংটিতা কিনে দিয়েছে শুনে বুকের ভীতরটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো ওর।আরাবী মুখটা মলিন করে হাতের ব্রেসলেট’টা রেখে চলে গেলো ওখান থেকে।গিয়ে নূরের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।এদিকে আরাবীকে মন খারাপ করতে দেখে পৈচা*শিক আনন্দ পেলো ফিহা।আংটিটার দিকে তাকিয়ে খুশিতে গদগদে হয়ে গেলো।
____________
শপিং শেষে সাথি বেগম আর মিলি বেগম চলে গেলেন।জায়ান,আরাবী,নূর,ইফতি,ফিহা ওরা রেস্টুরেন্টে যাবে। ছোটদের মাঝে তারা বড়রা অহেতুক না থেকে চলে গিয়েছেন। রেস্টুরেন্ট’টার ছাদে এসে বসেছে ওরা।খুব সুন্দর ভাবে সাজানো ছাদটা।আরাবীর মন খারাপ থাকায় ও সবার থেকে একটু সাইডে গিয়ে ছাদের রেলিং ঘেসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। উত্তাল হাওয়া বইছে।ছাদে নানান রকম ফুলের গাছ রয়েছে সেখানে হরেকরকম ফুল ফুটেছে। বাতাসের সাথে সেই ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।আরাবী লম্বা শ্বাস টানলো।ভীষন সুন্দর একটা ঘ্রাণ ফুলগুলোর সংমিশ্রণের।হঠাৎ নিজের পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ খুললো আরাবী।ঘার ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে জায়ান দাঁড়িয়ে।দৃষ্টি তার ওর দিকেই।আরাবী চোখ সরিয়ে নিলো।জায়ান গম্ভীর গলায় বলে,
-‘ কোন সমস্যা?’

আরাবীর মিনমিনে কন্ঠ,
-‘ কি সমস্যা আবার?’
-‘ সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি। কোন সমস্যা?’
-‘ কোন সমস্যা নেই।’
-‘ মন খারাপ যে?’
-‘ একটুও নাহ।’
-‘ আমি তো দেখছি।’
-‘ আপনার চোখের সমস্যা,জেনে রাখুন।’
-‘ আচ্ছা জেনে নিলাম।’

বলতে বলতে জায়ান আরাবীর হাত টেনে ধরলো।আরাবী হকচকিয়ে গেলো। ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
-‘ কি করছেন?’

জায়ান কিছুই বললো না।নিজের পকেট থেকে সেই স্বর্ণের ব্রেসলেটটা বের করে আরাবীর হাতে খুব যত্নে পরিয়ে দিতে দিতে বলে,
-‘ পছন্দের জিনিস কখনো হাতছাড়া করতে হয় নাহ।সময় করে নিজের করে নিতে হয়।’

ব্রেসলেট পরানো শেষে আরাবীর হাতের কবজি চেপে জায়ান আরাবীর ব্রেসলেট পরা জায়গায়টায় খুব আলতোভাবে ঠোঁটের নরম স্পর্শ করলো।হৃদপিন্ড থমকে যায় আরাবীর।মাথাটা ভণভণ করছে।চোখ খিচে দাঁড়িয়ে রইলো ও। এ কি করলো জায়ান ওর সাথে।আরাবী নিজের ভারসাম্য সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলেই জায়ান আরাবীকে আগলে নিলো নিজের কাছে।আরাবীর শরীর ভীষণভাবে কাঁপছে।আর হবেই বা না কেন?এই প্রথম কোন পুরুষ ওর এতোটা কাছাকাছি এসেছে।তাই আরাবীর অবস্থা এমন হয়েছে।নিস্তব্ধে হাসলো জায়ান আরাবীর অবস্থা দেখে।আরাবীর কানের কাছে ফিসফিস করে আওড়ালো,
-‘ কৃষ্ণচূড়া,রাধাচূড়া অনেক আমি দেখেছি।
সব ভুলেছি যেদিন আমি কাঠগোলাপের প্রেমে পরেছি।’

#চলবে___________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।