হৃদস্পর্শে প্রেমসায়রে পর্ব-১১+১২

0
53

#হৃদস্পর্শে_প্রেমসায়রে
#রক্তিমা(লেখনীতে)
১১.
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

মিনিকে দেখতে আসা পাত্রের ছোট ভাইয়ের স্থানে ডাক্তার সয়নকে দেখে বেশ অবাক হয় ত্রয়ী।বা হাত তার শাড়ির আঁচলের সৌন্দর্য রক্ষায় কার্যরত।তাই ডান হাতে কপাল চেপে ধরে ত্রয়ী।সয়নের দৃষ্টি এখনো তার দিকে পরেনি কেননা সে দোতলায় অবস্থানরত।নিচের পরিবেশ প্রতক্ষ করে তারপর মিনিকে পাত্র পক্ষের সামনে হাজির করানো হবে তাই ত্রয়ী এদিকে উঁকি মারতে এসেছিল।ড্রয়িং রুমের সোফায় বসানো হয়েছে পাত্রের বাড়ি থেকে আসা লোকদেরকে।সামনে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে ফলমূল,মিষ্টি জাতীয় খাবার ও শরবত।আত্মীয়দের মাঝে বেশ কয়েকজন শরবত ও মিষ্টি খাওয়ার পর নিচ থেকে বেলা এসে খবর দেয় মিনিকে নিয়ে যেতে বলেছে। ত্রয়ী উঁকি দিয়ে এসে বিরক্ত মুখে এখানে বসে ছিল।বেলাকে দেখে সোজা হয়ে বসে সে।তারপর বেলা মিনিকে নিচে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই মিনি এসে একপ্রকার ত্রয়ীকে খামচে ধরে।বলে উঠে,

-আমি ত্রয়ী ভাবির সাথেই নিচে যাবো।উনি মুরুব্বি মানুষ!

ত্রয়ী নিজেকে মুরুব্বি ভেবে ভ্রু কুঁচকায়।তারপর করুন স্বরে বলে উঠে,

-না গেলে হবে না?তন্দ্রা, বেলা ওদের সাথে যাও।

মিনি দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠে,

-না হবে না।আসো।

-কেন তোমার কি মনে হয় আমরা তোমার থেকে বেশি মুরুব্বি টাইপের?ওকে নিয়ে পাত্র পক্ষের সামনে যাবে এতে এত ঢং করার কি আসে!আজব মহিলা!

বেলার কটাক্ষ করে বলা কথা শুনে ত্রয়ীর করুন চোখ মুখ মুহুর্তে বদলে যায়।এমনিতেই তার মতো যুবতী রমনীকে মুরুব্বি বলে সম্মোধন করছে তার উপর আবার বলা হচ্ছে সে ঢং করছে।ত্রয়ী কি এর উত্তর দিবে না?অবশ্যই দিবে।

-বার্থ সার্টিফিকেট ঘেঁটে দেখো বেলা কার বয়স বেশি।আর তুমি এমনভাবে আমায় বয়স্ক মিন করছো যেন আমার বিয়ের বয়সী বাচ্চা-কাচ্চা আছে।

-বার্থ সার্টিফিকেট ঘাঁটার কোন প্রয়োজন আছে?আমার মুখের কথায় যথেষ্ট!অবশ্যই আমি তোমার থেকে ছোট।

বেলার কথা শুনে তাচ্ছিল্য হেসে ত্রয়ী বলে,

-যে একবার জানে সামনের মানুষটি মিথ্যে কথা বলে,দ্বিতীয়বার তাকে কেবল বোকারাই বিশ্বাস করে।

তারপর বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ত্রয়ী।মিনির হাতে আলতো করে ধরে দরজা খুলে তাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে সে।ত্রয়ীর ইঙ্গিতপূর্ন অপমানে বেলা থমথমে মুখে নিজেও ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
ত্রয়ী মিনিকে পাত্রপক্ষের সামনের সোফায় বসিয়ে দেয়।তাকে দেখে মিসেস সুহৃদ বলে উঠেন,

-আমার ছেলের বউ ও।

সয়ন স্বাভাবিকভাবে তাকালেও ত্রয়ীকে দেখে থমকে রয়।সে যেন ভুল শুনেছে!তাই মিসেস সুহৃদের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

-ও আপনার ছেলের বউ?

মিসেস সুহৃদ মা উপর-নিচ করে হ্যা বোঝালে সয়নের মুখশ্রী কিছুটা বহ্নির ভাষ্যমতে বাপ্পারাজের সেই বিখ্যাত কষ্টের ডায়লগের মতই হয়।সে এটা বিশ্বাস করতে পারছে না।কালকে সুপ্ত যখন ত্রয়ীকে হাতে ধরে টেনে নিয়ে এসেছিল তখন সে ত্রয়ীর প্রেমিক টাইপ কিছু হবে বলে ধারনা করেছিল। কিন্তু স্বামী!এটা তার ধারণার বাইরে ছিল।
.
-বাহ মিস ত্রয়ী বাহ!এটাই তবে তোমার হোস্টেল ছাড়ার কারণ!কেননা এখন তোমার থাকার পার্মানেন্ট জায়গা হয়ে গেছে।

ত্রয়ী রান্নাঘরে এসেছিল সালাদ নিতে।সব টেবিলে সাজিয়ে দেওয়া হলেও এটা দিতে ভুলে গেছেন শাশুড়ীমা রা।সেটা লক্ষ্য করেই ত্রয়ী আগেভাগে রান্নাঘরে চলে এসেছিল।কিন্তু এখানে পিছন পিছন যে সয়ন চলে আসতে পারে সেটা কল্পনা করনি ত্রয়ী।তাই অবাক নয়ন নিয়ে পেছন ফিরে তাকায় ত্রয়ী।শাড়ি পরিহিত ত্রয়ীকে ভালো করে লক্ষ্য করে সয়ন মুগ্ধ হয়।যাকে এতদিন মনে মনে এরূপে দেখার বাসনা ছিল তাকে অন্য জনের স্ত্রী হিসেবে কল্পিত রুপে দেখে বুকের ব্যথা অনুভত হয় সয়নের।ত্রয়ীর পানে তাকিয়ে কন্ঠে এক দলা কষ্ট নিয়ে বলে উঠে,

-অথচ আমার বাড়িতে এই রুপে দেখব বলে কল্পনা করে এসেছি এতদিন।

-আমাকে নিয়ে কল্পনা করুন এটা তো আমি বলিনি।আর না এমন কোন ইঙ্গিত করেছি যার দ্বারা বোঝায় আমি আপনাকে পছন্দ করি।দোষারোপ মূলক কথাবার্তা বলবেন না।

নিজের উপর বিনা কারণে দোষ পরছে দেখে শক্ত কন্ঠে জবান লাড়ে ত্রয়ী।যেদিন থেকে ত্রয়ী বুঝেছে যারা আঘাত করার উদ্দেশ্যই কথা বলে তাদেরকে কথাতেই ঘায়েল করতে হয় সেদিন থেকে নিজের নামে শোনা একটা মিথ্যা অপশব্দও সে চুপচাপ সহন করে নেইনি।

-কিন্তু তুমি তো বুঝতে আমি তোমাকে পছন্দ করি।তাহলে তখনই না করনি কেন?

-কেননা আপনি মুখে স্বীকার না করলেও মনে মনে অপমানিত হতেন।হয়ত এটাও বলতেন এটা তুৃমি ভাবলে কিভাবে রুপান্জেল?আমি তোমাকে নিয়ে এমনটা ভাবছি!কিন্তু আপনারতো বুঝে সরে যাওয়া উচিত ছিল যখন আপনার ক্লাসে একবার সকলের মাঝে থেকে বলেছিলাম নিজ কলেজের টিচার রা বর হয়ে যাবে এটা আমার পছন্দ নয়।এতটাও তো অবুঝ নয় আপনি!

ত্রয়ীর কথার যুক্তির গভীরতা পরখ সয়ন উত্তরে বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না।ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে উঠে,

-এতো অ্যাটিটিউড তোমার ত্রয়ী!

– অনলি এ স্ট্রং ম্যান ক্যান হ্যান্ডেল এ স্ট্রং ওম্যান।উইক ম্যান অলওয়েজ সে সি হ্যাজ অ্যাটিটিউড!

আচমকা পুরুষালী কন্ঠে উক্ত বাক্যখান ভেসে আসলে সয়ন চট করে পেছনে ফিরে চায়।সাদা শার্ট পরিহিত,কালো প্যান্ট পরিহিত সুদর্শন যুবকটি যে কলকে তার সাথে তর্ক করা যুবকটি এটা এক দেখাতেই ধরে ফেলে সয়ন।সুপ্ত এসে সয়নের মুখোমুখি দাঁড়ায়।পকেটে একহাত ঝুলিয়ে রেখে আরেক হাত সয়নের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

-আ’ম এডভোকেট সুপ্ত রেহনেওয়াজ মিনির বড় ভাই এন্ড সি ইজ মাই মিসেস।আপনি পাত্রের ছোট ভাই,রাইট?

সয়ন তাকে করা সুক্ষ অপমান দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে মেনে নিয়ে হ্যান্ডশেক করে।ত্রয়ী খেয়াল করে সুপ্ত সয়নকে আজকে প্রথম দেখছে এমন আচরণ করছে।

-আপনার জন্য সকলে ডাইনিং এ ওয়েট করছে।ইউ সুড গো নাও।

সয়ন একপলক ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে ডাইনিং এর উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।সে চলে যেতেই সুপ্ত ত্রয়ীকে ভালো করে অবলোকন করে।তারপর শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,

-বাড়িতে কোন পুরুষ মেহমান আসবে শুনলে যত পারো সিম্পল হয়ে থাকার চেষ্টা করবে।

তারপর ত্রয়ীর কাছে এসে হাত থেকে সালাদ ভর্তি থালা নিয়ে বলে,

-তুমি রুমে যাও।ওরা চলে না যাওয়া অবধি নিচে আসবে না।

তারপর সুপ্ত সালাত নিয়ে নিজেই ডাইনিং এর উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।
ত্রয়ী কিছুক্ষণ আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট উল্টিয়ে ধীরে ধীরে দোতলার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
.
লোকজন চলে যাওয়ার পর সুপ্ত ঘরে আসে।ততক্ষণে বাইরে আলো ফুরিয়ে অন্ধকার হয়ে পরেছে।দরজা লাগানোর আওয়াজ পেতেই ত্রয়ী দ্রুত বারান্দা থেকে রুমে এসে বলে,

-সুপ্ত আপনার ফোনটা একটু দিবেন?

সুপ্ত পকেটে হাত দিয়ে ফোনটা সবে ড্রেসিং এর উপর রাখতে যাচ্ছিল ত্রয়ীর কথা শুনে পকেট থেকে খালি হাতই বের করে আনে।কৌতুহলী সুধায়,

-কেন মিসেস?

-কারণ আপনার লকস্ক্রিনের পিকচারটা আমি দেখতে চাই।দিন ফোনটা।ফোন কোথায় আপনার?

-ওকে।বাট আই হ্যাভ এ কন্ডিশন!

কন্ডিশন!ভ্রু কুঁচকায় ত্রয়ী।তারপর জিজ্ঞেস করে,

-কি কন্ডিশন?

-আগে তুৃমি বল রাজি কি না?

ত্রয়ী কিছু না ভেবেই বলে উঠে,

-আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাজি।

ত্রয়ীর নিকট এই মুহুর্তে সেই রমনীর স্পষ্ট চেহারা দেখাতে সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। তার সাথে মিশে আছে তার সকল প্রশ্নের উত্তর।
সুপ্ত স্মিত হেসে পকেট থেকে ফোন বের করে একবার নিজেই স্কিনে চোখ বুলায়।তারপর ত্রয়ীর দিকে বাড়িয়ে দেয়।ত্রয়ী ছো মেরে ফোনটা হাতে নিয়ে তাতে দৃষ্টি রাখে।কালকে দেখা অস্পষ্ট ছবিটা এই মুহুর্তে তার কাছে ভাষ্যমান হয়ে উঠে।

লেমন কালার থ্রি-পিচ পরিহিতা রমনী আর কেউ নয় স্বয়ং সে।কোলে ইউনিফর্ম পরা একটা বাচ্চা মেয়ে।একহাতে তাকে কোলে নিয়ে অপর হাত দেখিয়ে রাস্তা পারে ব্যস্ত সে।চুলের লম্বা বিনুনি এক সাইট করে সামনে এনে রাখা।ত্রয়ী অবাক হয়ে বলে,

-এটা তো ছয় মাস আগের ঘটনা!এই ছবি আপনার কাছে কিভাবে?আপনি তো আমাকে চিনেন দুমাসের মতো হলো!

সুপ্ত এতক্ষণ বুকে হাত গুঁজে মুগ্ধ নয়নে অর্ধাঙ্গিনীর অবাক নয়ন অবলোকন করছিল।ত্রয়ীর প্রশ্ন শেষ হতেই সে ত্রয়ীর হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে বলে,

-আমি আমার শর্তটা বলিনি কিন্তু।

-আগে আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দিন।

সুপ্ত চালাকি হেসে বলে উঠে,

-আমার শর্ত হলো এটা নিয়ে আমাকে কোন প্রশ্ন করা যাবে না আর আমি এখন তোমাকে যা করতে বলব তাই করতে হবে।

ত্রয়ী সুপ্তের চালাকি দেখে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়।বলে উঠে,

-আপনি আগে কেন শর্ত বললেন না?

-তুমি জিজ্ঞেসই করনি।আর আমি এখন যা বলব তুমি তা করতে বাধ্য।

সুপ্ত ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে থেকে একটা টিকলি বের করে এনে ত্রয়ীর রিক্ত সিঁথি ভরাট করে দেয়।তারপর ত্রয়ীর খোঁপা করা চুল খুলে দেয়।সুপ্তের এহেন কার্যে ত্রয়ী থেমে থেমে বলে উঠে,

-এটা..কি হলো?

-মনের ইচ্ছা পূরণ করে নিতে হয়।তোমাকে যে রুপে দেখতে ইচ্ছা করবে আমি সে রূপেই তোমার সাজাবো।আজ তোমার হাত পা বাঁধা বউ!কেননা তুমি একবার বাধা দিলে বুঝে নিব ত্রয়ী মেহরোজ কথা দিয়ে কথা রাখতে জানে না।

ত্রয়ী করুন চোখে সুপ্তের দিকে চায়।এ কি মুসিবত!এই অসভ্য লোক আজ কি করবে কে জানে?কথা বার্তার ধরন কেমন অসুবিধে লাগছে।আজকে ত্রয়ী বুঝতে পারছে কেন এই লোক আজ অবধি একটা কেসও হারে নি। এতদিন কিছু না করলেও আজ উকিলি বিদ্যে প্রয়োগ করেছে ত্রয়ীর উপর।

সুপ্ত ফোনে কিছু একটা প্লে করে ত্রয়ীর মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।ভয়েরা ত্রয়ীর শিরদাঁড়ায় জড়ো হয়।আঁচল ধরে থাকা হাতটা মুঠো করে ফেলে সে।ত্রয়ীর ডান হাতের আঙুলে আঙুল পুরে দিলে বড় বড় চোখে সুপ্তের পানে চায় ত্রয়ী।কিন্তু সুপ্তের আরেক হাতের স্পর্শ তার উন্মুক্ত পেটে পরতেই সমস্ত দেহ শিরশির করে উঠে তার।বক্ষপটে শুরু হয় হৃদ যন্ত্রের দ্রুত সংকোচন-প্রসারন।সুপ্ত ত্রয়ীকে টেনে কাছে এনে ফিসফিসয়ে বলে উঠে,

-লেটস ডান্স বধূ সাহেবা!

কথা শেষ হতেই পুরুষালি সুন্দর স্বরে মুখরিত হয় কক্ষটি।

“একটা ছিল সোনার কন্যা
মেঘ বরণ কেশ।
ভাটি অঞ্চলেতে ছিল সেই কন্যার দেশ।
দুচোখে তার আহারে কি মায়া..
নদীর জলে পড়লো কন্যার ছায়া।
তাহার কথা বলি,তাহার কথা বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি..
আমি তাহার কথা বলি,
তাহার কথা বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি।”

লেটেস্ট সম্পূর্ণ অন্য ভার্সনে খাওয়া গানটায় ত্রয়ীকে নিয়ে সুপ্ত কাপল ডান্স শেষ করে।ত্রয়ী মুগ্ধ চোখে একদৃষ্টিতে সুপ্তের পানে তাকিয়ে আছে।তার মনে হচ্ছে যেন সে কল্পনার জগতে প্রবেশ করে ফেলেছে।সেই সুন্দর পুরুষালি সুর,সুপ্তের স্পর্শ সব মিলিয়ে মুগ্ধ সে।তার হৃদযন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণ,কন্ঠে তৈরি হওয়া কম্পন সুপ্তের প্রতি তার দূর্বলতা বাজেভাবে ইঙ্গিত করছে।
গান শেষেও দুজন আঙুলে আঙুল পুরে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে।ত্রয়ীর চোখের সমস্ত তেজ ধূলিসাৎ হয়ে মায়াময় হয়ে উঠেছে।সুপ্তের প্রগাঢ় চাহনি ঝলছে দিচ্ছে তাকে।কোমড়ের উপরে সুপ্তের স্পর্শ তাকে নাজুক করে তুলেছে।সুপ্ত হঠাৎ কানের কাছে ফিসফিসয়ে বলে উঠে,

-জানেন বধূ সাহেবা চারমাস আগে এটা আপনার উদ্দেশ্য রেকর্ড করি আমি।

সুপ্তের কথায় ত্রয়ী অবাক হয়ে তাকায়।করুন চোখে চেয়ে বলে উঠে,

-কখন থেকে চেনেন আমায় আপনি?

সুপ্ত বাঁকা হেসে বলে উঠে,

-নো মোর কুয়েশ্চন।রিমেম্বার কি বলেছি আমি।

ত্রয়ী আরো করুন চোখে সুপ্তের পানে চায়।
সুপ্ত ত্রয়ীকে লজ্জায় বাজেভাবে ফেলার জন্য বলে উঠে,

–বউ,লেটস ক্রিয়েট সাম মোস্ট রোমান্টিক সিনস!

সুপ্তের হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে ত্রয়ীর আঙ্গুল আবদ্ধ।কোমড়ে সুপ্তের মোলায়েম স্পর্শ।দুজনের মাঝে দু ইঞ্চি পরিমান ব্যবধান।ত্রয়ীর কাজল ঘেরা নেত্রদ্বয়ে মুগ্ধতা লেপ্টে।সুপ্ত নামক শুদ্ধপুরুষের শুদ্ধতায় সিক্ত তার হৃদয়।
ত্রয়ী সুপ্তের চোখ বরাবর দৃষ্টি রেখে বলে,

-মিস্টার সুপ্ত রেহনেওয়াজ,ডু ইউ নো হোয়াট ইস দ্যা মোস্ট রোমান্টিক থিংক ইন লাভ?

সুপ্ত ত্রয়ীর দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে চেয়ে ত্রয়ীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।তারপর মন্ত্র মুগ্ধ ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,

-টেল মি হোয়াট?

ত্রয়ী সুপ্তের গম্ভীর চোখজোড়ায় দৃষ্টি রাখে।সুপ্তের সাথে এখন একদম লেপ্টে সে।শুকনো একটা ঢোক গিলে সে বলে উঠে,

-দ্যা আই কন্টাক্ট!

চলবে…

#হৃদস্পর্শে_প্রেমসায়রে
#রক্তিমা(লেখনীতে)
১২.
যখন দিবসের প্রারম্ভের শুরু,প্রকৃতিতে আঁধার নিঃশেষ হয়ে দিবাকরের দ্যুতি ছড়িয়ে পরতে আরম্ভ করেছে সেই মুহুর্তে ঘুম ভাঙে ত্রয়ীর।তার কোমল দেহের উপরে ভারী অর্ধনগ্ন পুরুষ দেহ শুয়ে আছে বোধগম্য হতেই তড়াক করে চোখ মেলে তাকায় ত্রয়ী।অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষটাতে বেলকনি থেকে আসা ক্ষীণ আলোয় কোনকিছুই ভালোভাবে দৃশ্যমান নয়।কিন্তু ত্রয়ী ভয় পায় না বরং লজ্জায় একাকার হয়ে আসে মন,অবশ হয়ে আসে দেহ।

ত্রয়ী মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে কালকে রাতের কথা মনে করে।সুপ্তের চোখের দিকে পাঁচ সেকেন্ডের বেশি একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠেছিল স্বর্ণাভ কপোল।আচমকা তাকে কোলে তুলে নিয়েছিল সুপ্ত।ভারসাম্য রক্ষায় ত্রয়ী আঁকড়ে ধরেছিল সুপ্তের গলায়।তবে প্রতিবারের ন্যায় রাগে কিংবা আক্রোশে ক্ষত সৃষ্টি করেনি!পরম যত্নে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরেছিল স্বামীর গলা।প্রতিবারের ন্যায় অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেনি অর্ধাঙ্গের পানে।লাজে নিম্নমুখী হয়ে ছিল তার মুখশ্রী।সুপ্ত এসে পরম যত্নে বিছানায় শুইয়ে দেয় ত্রয়ীকে।তারপর নিজের অর্ধেক ভার ছেড়ে দিয়ে ত্রয়ীর উপর শুয়ে পরে সে।
অবাক হয়ে ত্রয়ী তারপানে তাকালেই দুষ্ট হাসে সে।ত্রয়ীর মস্তিষ্কের সকল স্নায়ু উদ্দীপ্ত হয়ে জানায় দেয় কি হতে চলেছে!
হঠাৎ সুপ্তের বলিষ্ঠ হস্তদ্বয় ত্রয়ীর কোমল হাত নিজের দখলে নিয়ে নেয়।ত্রয়ী নেত্রখানা দু’সেকেণ্ডের জন্য বন্ধ করেছিল।বিদ্যুৎের গতিতে চোখ মেলে তাকায় সে।করুন চোখে তাকিয়ে সুপ্তকে শব্দছাড়া প্রশ্ন করে কি হতে চলেছে।সুপ্ত মুচকি হেসে ত্রয়ীর দিকে এগোয়।তার চোখদ্বয় ত্রয়ীর মুখশ্রীজুড়ে বিচরণ করতে করতে ত্রয়ীর ঘন পাপড়ি ঘেরা চোখে এসে থামে।ত্রয়ী সুপ্তকে এভাবে কাছে আসতে দেখে শুকনো ঢোক গিলে।সুপ্তের নিঃশ্বাস তার উপর তীব্রভাবে আছড়ে পরতেই চোখ খিঁচে বন্ধ কটে নেয়।সেকেন্ডের ব্যবধানেই ললাটের মধ্যিখানে সুপ্তের কালচে লালাভ ওষ্ঠদ্বয়ের গভীর স্পর্শ অনুভব করে সে।

কালকের কথা মনে পরতেই একদফা লাজে রাঙা হয় ত্রয়ী।তারপর সুপ্তকে সরিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে সে।রাতে প্রচন্ড গরম লাগায় শার্ট খুলে ফেলেছিল সুপ্ত।ত্রয়ী ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সুপ্ত খালি গায়েই উপুর হয়ে ঘুমাচ্ছে।ফর্সা,বলিষ্ঠ পিঠের দিকে ত্রয়ী কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে।তারপর সুক্ষ্ম হেসে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।কিচেনে এসে চা বসাই ত্রয়ী।পড়তে হবে তাকে এখন তাই চোখে অবশিষ্ট থাকা সামান্য ঘুমটুকু দূর করার জন্য চা খাওয়া প্রয়োজন।
চা হয়ে গেলে দু কাপ চা ঢেলে ট্রে তে করে রুমের দিকে এগোয় ত্রয়ী।সুপ্ত তখনো ঘুমে।বাইরে ভালোভাবে আলো ফুটেছে সবে।
সুপ্ত তখনো ঘুমে।ত্রয়ী কিছু না বলে এক কাপ চা বিছানা বরাবর থাকা ট্রি টেবিলে রেখে।পড়ার টেবিলে বসে পরে।কিন্তু সুপ্তকে না ডাকলে চা ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই ত্রয়ী সুপ্তকে ডাকার জন্য পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠবে তখনি সুপ্ত বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে পা বাড়ায়।দশ মিনিট বাদে সুপ্ত একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হয়।চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসতেই ত্রয়ী বলে উঠে,

-বিছানার কাছের টেবিলটায় চা রাখা আছে আপনার জন্য।খেয়ে নিন নয়ত ঠান্ডা হয়ে যাবে।

সুপ্ত ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে ত্রয়ী গালে একহাত দিয়ে বইয়ের দিকে মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে আছে।সুপ্ত ট্রি টেবিলে এককাপ চা দেখতে পায়।সে সচরাচর চা খায় না। সুপ্ত ত্রয়ীকে প্রশ্ন করে,

-তুমি বানিয়েছো?

ত্রয়ীর হঠাৎ ত্যাড়া উত্তর দিয়ে বসে,

-এত সকালে তো আর বউ ছাড়া অন্য কেউ চা বানিয়ে দিবে না।

সুপ্ত স্মিত হেসে বলে,

-আমার বউ হঠাৎ বউ বউ আচরণ করছে কেন?স্বামীর ঐপর করা সমস্ত আরোপ তুলে নিয়েছে?

ত্রয়ী কিছু না বলে বইয়ে চোখ ডুবিয়ে রাখে।সুপ্ত বেলকনিতে এসে চায়ে চুমুক দেয়।সকালের সতেজ বাতাসে বউয়ের হাতের চায়ে চুমুক দিয়ে তার মনে হলো এই রমনীকে বধূ করতে বড্ড দেরি হয়ে গেল না তো!
.
-স্যার!বাইরে আসুন।আপনার জামিন হয়ে গেছে।

কন্সটেবলের কথায় চমকিত হয়ে তাকায় আরসালান।চুলগুলো লম্বা হয়ে যাওয়ায় চোখ অবধি ঢেকে রেখেছে সেগুলো।দাঁড়ি-গোফে ঢেকেছে গৌর বর্ণ চেহারা।উপরোক্ত সংবাদটি শোনার পর ক্রুর হাসি ফোটে তার মুখে।ধীরে ধীরে সেল থেকে বের হয়ে আসে সে।জেলারের সাথে বাবা ফারহাদকে কথা বলতে দেখে তার দিকে এগিয়ে আসে সে।একমাত্র ছেলেকে জেল থেকে বের করতে পেরে ছেলের দিকে তাকিয়ে বিজয়ের হাসি হাসেন তিনি।কিন্তু আরসালানের মুখে কোন কৃতজ্ঞতা বোধ নেই।সে বাবাকে একপলক দেখে জেল থেকে বেরিয়ে আসে।
বহুদিন পর সূর্য রশ্মি চোখে পড়তেই চোখ জ্বলে উঠে তার।দ্রুত চোখ বন্ধ করে নেয় আরসালান।সময়ের সাথে আলোর তীব্রতা সয়ে আসে।তখনই একটা ফুলের মালা এসে তার গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়।পাশেই ফারহাদ চৌধুরী হাসোজ্জল মুখে দাঁড়িয়ে আছে।অবশেষে ছেলেকে জেল থেকে বের করতে পেরেছে।আরসালান গলায় পড়ানো আর্টিফিশিয়াল ফুলের মালাটা খুলে ছুড়ে মারে দূরে।তাতে ফারহাদ চৌধুরী ভরকে ছেলের দিকে তাকান।আরসালান তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

-অবশেষে বের করতে পারলেন,নয়ত আমি তো ভেবেছিলাম আপনার দ্বারা কিছুই সম্ভব নয়।কিন্তু চিন্তার কিছু নেই এবার আমি সবকিছুর প্রতিশোধ নিব।

ক্লাস শেষে ত্রয়ী প্রতিদিন সুপ্তকে কলেজের গেটের সামনে পায়।কিন্তু আজ সুপ্তের কোন খোঁজ নেই।আজ সকালেও ত্রয়ী রিক্সা করেই কলেজে এসেছিল।যদিও এর আগেও ত্রয়ী একা একায় কলেজে এসেছিল কিন্তু প্রতিদিন সুপ্তই তাকে বাড়িতে নিয়ে গেছে তাই ত্রয়ী ভাবলো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা যাক।
ফোন বের করে সুপ্তের নাম্বারে ডায়াল করে ত্রয়ী কিন্তু কল রিসিভ হয় না।দুবার ফোন করার পরও যখন রিসিভ হয় না তখন থমথমে মুখে কিছুক্ষণ কলেজের গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকে ত্রয়ী।তারপর একটা রিক্সা ডেকে নিজেই বাসায় চলে আসে।
বেলকনিতে আনমনে দাড়িয়ে ছিল ত্রয়ী।রাতের আকাশের দিকে বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার চোখদুটো।পরনের এখনো কলেজে পরে যাওয়া কমলা রঙের সেলোয়ার-কামিজ।কলেজ থেকে এসে সে ড্রেস অবধি চেঞ্জ করেনি।কোন এক বিষন্নতায় মন মস্তিষ্ক ছেয়ে গেছে।সুপ্ত কেন তার ফোন রিসিভ করলো না?এতটায় ব্যস্ত ছিল যে ত্রয়ীকে আজকে নিতে আসছে না সেটুকুও বলতে পারলো না।
গাড়ির আওয়াজে নিচে তাকায় ত্রয়ী।সুপ্তের গাড়ি দেখে সুক্ষ্ম হাসি ফুটে মুখে।সুদর্শন পুরুষটি বেরিয়ে আসতেই চওড়া হয়ে হাসি।কিন্তু সেটা মিলিয়ে যেতে এক সেকেন্ডও লাগে না যখন দেখে বেলাও গাড়ি থেকে নেমে আসছে।হাতে অনেকগুলো ব্যাগ তার।সুপ্ত কিছু না বলে আগে আগে হেঁটে আসছে।ত্রয়ী দ্রুত নিচ থেকে দৃষ্টি সরায়।বেলকনি থেকে এসে পড়ার টেবিলে বসে রোবটের মতো।কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খোলার আওয়াজে ত্রয়ী বুঝতে পারে সুপ্ত এসেছে।কাবার্ড থেকে অফ হোয়াইট রঙের টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।ত্রয়ী আড়চোখে সবটাই লক্ষ্য করে অথচ এমন ভান করে আছে যে সে পড়ার মাঝে ডুবে আছে।
সুপ্ত ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ত্রয়ীর দিকে একদন্ড তাকিয়ে থেকে বিছানায় এসে বসে।ত্রয়ী খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে ভেবে সে কিছু বলে না।চুপচাপ শুয়ে পরে।মাথাব্যথায় আর টেকা যাচ্ছে না!
ত্রয়ী হঠাৎ লক্ষ্য করে তার চোখ দিয়ে একেক পর এক অশ্রু কণা বইয়ে পড়ছে আর সেগুলো শুষিত হয়ে বইয়ের পাতা ভিজিয়ে তুলছে।ত্রয়ীর আড়চোখে সুপ্তের দিকে তাকিয়ে দেখে বিছানায় শুয়ে পরেছে সে।ত্রয়ী হঠাৎ টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ায়।গাল বেয়ে পড়া অশ্রুদের অবহেলায় মুছে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।

চলবে..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।