#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_২০
লেখনীতেঃভূমি
‘ হেই মাইন্ড গেইমার রক্তিম মাহমুদ।হোয়াটস আপ? ‘
রক্তিম অদ্রিজাদের বাসায় ডুকা মাত্রই অত্রিয়ার শ্যামপুরুষের মুখে কথাটা শুনেই অবাক হয়ে তাকাল অত্রিয়া, অদ্রিজা দুজনই।রক্তিমের মুখে অন্য রকম হাসি তখন।গলার ট্রাইটা ঢিলে করে এগিয়ে এসেই অত্রিয়ার শ্যামপুরুষের সামনে দাঁড়াল।মুচকি হেসেই বলল,
‘ হাই, মিঃ রায়মান। ‘
অত্রিয়া অদ্রিজা দুজনই চোখজোড়া বড় বড় করে তাকাল।অত্রিয়ার শ্যামপুরুষ নামক ব্যাক্তিটার নাম যে রায়মান তা আজই শুনল তারা।চোখজোড়ায় বিস্ময় নিয়ে রক্তিম আর রায়মান নামক লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝেই রায়মান তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।তীব্র ঘৃণা নিয়ে বলে উঠল,
‘ তো? এখানে?কোন মেয়ের মাইন্ড নিয়ে খেলতে শুরু করলি আবার?কোন মেয়ের জীবন তছনছ করতে চাইছিস আবার?’
রায়মানের কথাগুলো শুনেই রক্তিম আওয়াজ করে হেসে উঠল।কিচেনে রান্নায় ব্যস্ত থাকা অদ্রিজার মায়ের কানে কথা গুলো পৌঁছানোর ভয়ে ঘেমে চুপসে গেল অদ্রিজা।শুকনো ঢোক গিলে তাদের কাছাকাছি এসেই রায়মানের উদ্দেশ্যে বলে বসল,
‘ ভাইয়া উনি আমার হাজব্যান্ড।এভাবে কথা বলতে পারেন না আপনি।’
অদ্রিজার কথাটা ঠিক বিশ্বাস হলো না বোধ হয় রায়মানের।চোখেমুখে তীব্র অবিশ্বাস নিয়েই ভ্রু কুঁচকাল সে।রক্তিমকে গাঢ় নজরে একবার দেখে নিয়েই বলে উঠল সে,
‘ হোয়াট?কিসব বলছো তুমি অদ্রি?ও?ও তোমার হাজব্যান্ড?আঙ্কেল জেনেশুনে তোমায় ওর সাথে বিয়ে দিয়েছে?’
অদ্রিজা ছোট্ট শ্বাস ফেলল।বিরক্ত নিয়ে বলল,
‘ আপনাদের মধ্যে কি সম্পর্ক আমি জানি না ভাইয়া।কিন্তু এভাবে কথা বলার অধিকার সত্যিই আপনার নেই।আর গলার সাউন্ডটা এভাবে উঁচিয়ে কথা বলছেন কেন আপনি?উনি আমার হাজব্যান্ড যেহেতু আমি জানি উনি কেমন।আপনি এভাবে বলবেন না।আম্মু শুনবে।’
রায়মান জেদ নিয়েই বলল,
‘ শুনুক।আমি চাই আন্টি জানুক ও কেমন।ও তোমায় ডিজার্বই করে না অদ্রি।ও তো শুধু মেয়েদের নিয়ে খেলতে পারে আর অ্যালকোহলে ডুবে থাকতে পারে।কদিন পর তোমাকেও ছুড়ে ফেলে দেবে যেভাবে আমার বোন আর তানিশাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।আমি চাই না তোমার জীবনটা নষ্ট হোক অদ্রি।’
অদ্রিজার বিরক্তিটা এবার রি রি করে বাড়ল।চোখজোড়া বন্ধ করেই তপ্তশ্বাস পেলেই দাঁতে দাঁত চেপে বলল সে,
‘ ওকে!আপনি আমার জীবনটা বাঁচাতে চান তাই তো?ঠিক আছে।ছাদে চলুন।এই বিষয়ে আমরা ছাদে কথা বলি সবাই বসে?আমি চাই না বাসায় এই নিয়ে কোন ঝামেলা হোক।আম্মু শুনলে সমস্যা হবে। ‘
রায়মান রাগে হাঁসফাঁস করল। অদ্রিজা বুঝল না কিছুই।রায়মান আর রক্তিমের কি এমন সম্পর্ক? এত রাগ আর ঘৃণাই বা কেন রক্তিমের প্রতি রায়মানের?কথাগুলো ভেবেই রক্তিমের দিকে তাকাল সে।মুখের সে হাসিটা এখন ও বিদ্যমান।এই লোকটা এত কঠিন পরিস্থিতিতেও হাসে কেন?সবটা মেনে নিচ্ছেই বা কেন?রায়মানের বলা কথাগুলোর উত্তরে একটা উত্তর দেওয়াও কি তার উচিত নয়?বুঝে উঠল না অদ্রিজা।দীর্ঘশ্বাস পেলে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে আসতেই বলল,
‘ আপনারা দুইজনই আসুন।কিন্তু বাসায় এই নিয়ে কোন কথা বলতে পারবেন না।একটা ওয়ার্ড ও না।’
রায়মান ভ্রু কুঁচকে তাকাল অদ্রিজার যাওয়ার পথে।আর রক্তিম পা বাড়িয়েই মুচকি হাসল।মাথার ঘন কালো চুলগুলোতে আয়েশ করে আঙ্গুল চালিয়ে সিঁড়ি বেড়ে উঠতে লাগল আর পেঁছন থেকে অদ্রিজা নামক মেয়েটিকে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে লাগল।ছেড়ে দেওয়া কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো হাঁটার সময় দুলছে। রক্তিম হালকা হাসল অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই।সিঁড়ি বেয়ে ছাদ পর্যন্ত এসেই আরেক জোড়া চোখ রক্তিমকে দেখে স্থির হলো।বেশ পরখ করে সেই জোড়া চোখ রক্তিমকে দেখতে লাগল। রক্তিম অদ্রিজার থেকে নজর সরিয়ে এপাশ ওপাশ তাকাতেই সেই চোখজোড়া চোখে পড়তেই ভ্রু কুঁচকাল।অবাক হলো না অবশ্য।মুচকি হেসে এগিয়েই ডান হাত এগিয়ে সেই চোখজোড়ার মালিককেই বলে বসল,
‘ হেই রিমু!কেমন আছো?’
রাইমা এতক্ষন রক্তিমের দিকেই তাকিয়ে ছিল।অবিশ্বাস্য চোখে বারংবার রক্তিমকে পরখ করতে লাগল সে।বুকের ভেতর কোন এক তপ্তশ্বাস স্পষ্ট বলে উঠল এটা রক্তিম।তবুও বিশ্বাস হলো না।চোখজোড়া হাত দিয়ে কচলে নিয়ে আবারও তাকাল।কাঁপা কন্ঠে বলল,
‘ তু্ তুমি? ‘
রক্তিম নিঃশব্দে হাসল।কপালে ঝুকে পড়া চুলগুলো পেঁছন দিকে ঠেলে দিয়েই বলল,
‘ হ্যাঁ আমিই।কেমন আছো?তোমার হাজব্যান্ড?সে কোথায়?আলাপ হলো না কিন্তু তার সাথে।’
রাইমা সুপ্তশ্বাস ফেলল। মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়েই উত্তর দিল,
‘ হ্যাঁ, ভালো আছি রক্তিম।যতটুকু তুমি বলেছিলে তার থেকে ও অনেক বেশি ভালো আছি আমি এখন।তুমি কেমন আছো?’
রক্তিম মুচকি হেসেই বলল,
‘ আমি সবসময় ই ভালো থাকি রিমু।তোমার হাজব্যন্ড?’
রাইমা হাসল।বলল,
‘ ও একটু বাইরে গেছে।দুপুরের আগে চলে আসবে।আসলে আলাপ করিয়ে দিব তোমার সাথে।’
‘ কি বলে আলাপ করাবে?প্রাক্তন পরিচয়ে?’
রাইমা হাসল।রক্তিমের দিকে একনজর তাকিয়েই বলল,
‘ প্রাক্তন?না প্রাক্তন ঠিক যায় না তবে প্রাক্তন ভালোবাসা বলা যায় । যদি তুমিও আমায় ভালোবাসতে তাহলে হয়তো তোমায় প্রাক্তন বলা যেত তাই না রক্তিম?কিন্তু তুমি তো ভালোবাসোইনি কোনদিন আমায়।তাহলে প্রাক্তন হলে কি করে?তুমি আমার প্রাক্তন ভালোবাসা রক্তিম প্রাক্তন নও।’
রাইমার উত্তর শুনেই রক্তিম হাসল।রাইমাও হাসল।অদ্রিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখে তাকিয়ে রইল রক্তিম আর রাইমার দিকে।তার মানে তানিশার ফ্রেন্ড রিমুই হলো তার রাইমা আপু।অদ্রিজা ভাবলেশহীন ভাবে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল তাদের দিকে।পুরো বিষয়টা বুঝে উঠতে উঠতেই হতাশ হলো সে।চোখজোড়ার দৃষ্টি এবার ক্ষীণ হয়ে উঠল।মৃদু গলায় বলল,
‘ রাইমা আপু?তানিশা তোমার বেস্টফ্রেন্ডের নাম?’
রাইমা প্রথমে কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও পরমুহুর্তেই মাথা দুলাল।যার অর্থ, হ্যাঁ, তানিশা তার বেস্টফ্রেন্ডের নাম। এবার আরও হতাশ হলো অদ্রিজা।বার কয়েক নিঃশ্বাস নিয়েই একবার রক্তিম তো একবার রাইমার দিকে তাকাল।ছাদের একপাশে গিয়ে মুখ ফুলিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়াতেই ছাদের টিনের দরজার সামনে রায়মান আর অত্রিয়ার দেখা মিলল।রায়মানের কোলে অত্রিয়া।অদ্রিজা ভ্রু জোড়া এবার দ্বিগুণ সংকুচিত করল।কপাল কুঁচকে রায়মান আর অত্রিয়াকে ভালোভাবে পরীক্ষণ করেই বলে উঠল,
‘ অত্রি?উনার কোলে কেন তুই?কি হয়েছে? ‘
অত্রিয়া চোখমুখ কালো করে বোনের দিকে তাকাল।মুখচোখ ঘেমে গিয়েছে এক মুহুর্তেই।কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই রক্তিম চোখ টিপে বলল,
‘ উহ!অদ্রিজা!আপনি আসলেই বাচ্চা রয়ে গেছেন। আপনার বোন অত্রিয়া মিঃ রায়মানের ফিউচার ওয়াইফ তা আপনি জানেন না? তাও তাদের মাঝখানে বাঁধ সাঁজছেন?কি তাইতো মিঃ রায়মান?’
রায়মান সঙ্গে সঙ্গে কেঁশে উঠল।অত্রিয়াকে দ্রুত কোল থেকে নামিয়ে দিয়েই রক্তিমের দিকে ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকাল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ তোর সাথে আমার একবছর আগেই সব সম্পর্ক শেষ।একবছর আগে আমার সম্পর্কে যা যা জানতি তা তা যে এখনো সত্যি রয়ে গেছে তেমন নয়।সো যেখানে সেখানে যা তা বলবি না রক্তিম।’
রক্তিম মুচকি হাসল।রায়মান রাগটাকে বিন্দুমাত্রও পাত্তা না দিয়েই বলে উঠল,
‘ বাট আই নো দ্যাট,আমি যেটা বলেছি ওটা তখন যেমন সত্যি ছিল এখনও তেমনটাই সত্যি আছে। শুধু আপনি স্বীকার করছেন না মিঃ রায়মান।’
অদ্রিজা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল।মাথার ভেতর কিছুই ডুকছে না তার।অত্রিয়াকে এক পা খুড়িয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে আসতে দেখেই এগিয়ে যেতে নিতেই অত্রিয়া ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আপু? পা টা বোধ হয় মচকে গেল রে।সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় ঠাস করে পড়ে গিয়েছি। তারপর ঐ লোক কোলে করে উপরে নিয়ে আসল।কি অস্বস্তিতে যে পড়েছিলাম আপু।নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছিল আমার।চেনা নেই, জানা নেই, কোন এক ছেলে আমায় কোলে তুলে নিল।অদ্ভুত!’
অদ্রিজা হাসার চেষ্টা করল অত্রিয়ার কথায়।কিন্তু হাসি আসল না।মাথার ভেতর ঘুরতে লাগল বিশাল চিন্তা। রক্তিম, রায়মান, রাইমা এই তিনজনকে নিয়ে তৈরি হলো বিশাল এক প্যাচ লাগানো জটলা।বার কয়েক জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়েই পা জোড়া এগিয়ে রক্তিম আর রায়মানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে।মৃদু গলায় বলল,
‘আপনারা একে অপরের কে হন?কি সম্পর্ক?একবছর আগে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে মানে?বলুন আমায়।’
রক্তিম নিঃশব্দে হাসল অদ্রিজার প্রশ্নগুলো শুনে। শান্ত গলায় বলল,
‘ আমরা একে অপরের বন্ধু হতাম কোন এক সময় অদ্রিজা।বিষয়টা এটুকু। আর কিছু না।’
রক্তিমের কথাটা বোধ হয় সহ্য হলো না রায়মানের।রাগে তেড়ে এসেই রক্তিমের কলার চেপে ধরল সে।রাগে হাঁসফাঁস করতে করতেই বলে উঠল,
‘ আর কিছু না?আর কিছু না কি করে বলছিস তুই?তুই যে রাইমার জীবনটা নষ্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলি সেটা লুকিয়ে যাচ্ছিস কেন তুই?কেন?’
অদ্রিজা হতবিহ্বল চাহরি নিয়ে তাকিয়ে রইল দুইজনের দিকে। রক্তিমের প্রতি রায়মান লোকটার রাগ আর ক্ষোভ দেখেই বিস্ময় খেলে গেল তার চোখ মুখে।অথচ রক্তিমের মুখে চমৎকার মুচকি হাসি।অদ্রিজা ভবলেশহীন ভাবে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকেই রায়মানের দিকে হাত বাড়াল।রায়মানের হাতজোড়া রক্তিমের কলার থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেই চিৎকার করে বলে উঠল,
‘ কি হচ্ছে কি ভাইয়া?বাচ্চা ছেলের মতো মারপিট করতে চাইছেন? রক্তিমের কলার ছাড়ুন বলে দিলাম।’
রক্তিম এবার আওয়াজ করে হেসে উঠল।ট্যারাব্যাকা দাঁত গুলো ঠোঁট সরিয়ে চোখে পড়তেই মুগ্ধ নয়নে তাকাল অদ্রিজা।সেই দৃষ্টিটাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেই রক্তিম তার হাতজোড়া ছাড়িয়ে দিল।অথচ এতক্ষন রায়মানের হাতজোড়া একবারও ছাড়ানোর চেষ্টা করে নি সে।কেন?অদ্রিজা বুঝল না।রক্তিম ক্লান্ত চাহনিতে তাকিয়েই শান্ত গম্ভীর গলায় বলে উঠল,
‘ আপনি আমাদের মাঝখানে কেন আসছেন অদ্রিজা?দূরে থাকুন।মিঃ রায়মানকে উনার রাগ ক্ষোভ মিটিয়ে দিতে নিন।প্লিজ।’
অদ্রিজা অবাক হলো রক্তিমের শান্ত গম্ভীর গলা শুনে।চোখজোড়ায় বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকতেই রায়মান হাতজোড়া ছাড়িয়ে নিল রক্তিমের কলার থেকে।জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে মাথা চেপে ধরল হাতজোড়া দিয়ে। চোখজোড়া কয়েক সেকেন্ড বন্ধ রেখেই আবার খুলল চোখজোড়া।আক্ষেপ নিয়ে বলে উঠল,
‘ কেন রক্তিম?কেন করলি এমনটা? কেন সম্পর্কটা নষ্ট করলি তুই? ‘
অদ্রিজা এখনও বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল।রায়মানের দিকে তাকিয়েই সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,
‘ আপনি না আমার জীবন বাঁচাতে চান ভাইয়া?তাহলে আমায় কেন বলছেন না সবটা?বাসায় তো বেশ জোরে জোরে বলছিলেন সব।তাহলে এখন যখন জানতে চাইছি বলছেন না কেন?আপনারা কি হন একে অপরের? ‘
রায়মান কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকল।রক্তিমের দিকে একনজর তাকিয়েই বলল,
‘ রক্তিম আমার সেই হাইস্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।খুব কাছের ফ্রেন্ড। ওর সাথে যতোটা শেয়ার করতাম সবটা তেমনটা বোধ হয় আর কারোর সাথে করতাম না।জীবনের সবথেকে ক্লোজ হয়ে উঠেছিল।সম্পর্কের সমাপ্তি হয় যখন জানতে পারলাম রাইমা ওকে ভালোবাসে। রাইমারও মনে হতো ও রাইমাকে ভালোবাসে। কিন্তু রক্তিম কোনদিন স্বীকার করেনি। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম রক্তিম মেনে নিবে সবটা খুব সহজেই।বন্ধুর একমাত্র বোনকে নিশ্চয় ফিরিয়ে দেবে না?কিন্তু ও ফিরিয়ে দিল।মুখের উপর বলে দিল, রাইমাকে নিয়ে ওর কোন ফিলিংস নেই।কিন্তু রক্তিমের প্রতি রাইমা এতটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে মানসিক ভাবে রাইমা ভেঙ্গে পড়েছিল।বারবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।পুরো ছয় ছয় মাস রাইমা মানিসক ট্রমাতে ছিল এই বিষয় নিয়ে।আমি সেই ছয়মাসে নিজের একমাত্র বোনকে এভাবে দেখতে পারিনি।আড়ালে গিয়ে কেঁদেছি ও।রক্তিমকে বারবার বুঝিয়েছি যাতে মেনে নেয়। কিন্তু ও মেনে নেয়নি। কেবল পায়ে পড়া বাকি ছিল আমার। তবুও ও রিজেক্ট করেছে।এরপর কি বন্ধুত্বটা থাকার কথা অদ্রি?তুমিই বলো?ও ইচ্ছে করে রাইমার জীবনটাকে ঐ ছয়মাস এমন নরকে পরিণত করেছিল।ইচ্ছে করেই।রাইমাকে রিজেক্ট করে রাইমার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে রিলেশনে গিয়েছিল।’
রক্তিম আবারও হাসল।রাইমা, রায়মান, অদ্রিজা, অত্রিয়া সবার দিকে একনজর তাকিয়েই ছোট্ট শ্বাস ফেলল।রায়মান আবারও বলল,
‘ আরো কি ঘটেছে জানো অদ্রি?রক্তিম রাইমার ব্রেস্টফ্রেন্ডকেও ঠিক সেই ট্রমাতেই ঠেলে দিয়েছে।ওর কাজই এটা।একের পর এক মেয়েকে নিয়ে কয়েকদিন খেলবে। তারপর শেষ!সব শেষ! ঐ মেয়েটাকে একটা অন্ধকার জীবনে ঠেলে দিবে।এটাই ওর কাজ।তবুও বলছো তোমার জীবন নষ্ট হবে না অদ্রি?এখনও সময় আছে। ঐ লোকটার ভয়ানক জাল থেকে বেরিয়ে আসো অদ্রি।তুমি জানো ও সারা দিন রাত ড্রিংকে কিভাবে ডুবে থাকে?জানো?এরকম একজনের সাথে তুমি সংসার করতে পারো না।আমি সবটা বলব আন্টিকে।নিজের বোনকে যেমন কষ্ট পেতে দেখেছিলাম চাই না তুমিও সেই কষ্টটা পাও অদ্রি।’
অদ্রিজা ছোট্ট শ্বাস ফেলল।মৃদু চাহনিতে একবার রক্তিমের দিকে তাকাল।মুখেচোখের তেমন কোন ভাবাবেগ দেখা গেল না রক্তিমের।আগের মতোই হাসি রয়েছে মুখে।অদ্ভুত না লোকটা?নিজের সম্পর্কে এত এত কথা। অথচ সে একটা কথাও বলছে না?বরং হাসছে?অদ্রিজা দ্বিধান্বিত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকতেই রক্তিম চোখ টিপল তার দিকে তাকিয়ে।হেসেই বলল,
‘ নিজের জীবনটা ওদের মতো নষ্ট না করে মুক্ত হয়ে যান অদ্রিজা।বারবার বলছি আমি আপনাকে।পরে যাতে আপনিও ওদের মতো এলোমেলো হয়ে কষ্টে না থাকেন সেজন্যই বলছি।আমায় ছেড়ে নিজের মতো থাকুন অদ্রিজা।মুক্ত হয়ে বাঁচুন।’
#চলবে….
[কেমন হয়েছে জানাবেন।ভালোবাসা রইল সবার জন্য।]