#হোম_পলিটিক্স
#আফসানানীতু
#পর্ব_১৩
– একেবারে চিপ কোয়ালিটির এডিট!
ভিডিওটা দেখে মুখ বাঁকা করে বলে নাফিসা।
– একটু মনোযোগ দিয়ে শুনলেই বোঝা যাবে মাঝে কথাগুলো এড করা হয়েছে। অবাক কান্ড হচ্ছে আপনার শ্বশুর বাড়ির কেউ এটা ধরতে পারল না কেন?
রুচিতা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
– ব্যাপার হচ্ছে কাল রাতে যখন আমার শাশুড়ি হইচই করে তখন পর্যন্ত এটা শুধু আমার শাশুড়ি আর শফিই দেখেছে। শফির ব্যাপারটাও আমি শিওর না। তবে কাল যখন আমার শাশুড়ি হইচই করছিলেন তখন সে একবারের জন্যও ভিডিওটা দেখতে চাইনি। পুরোটা সময় আমার মুখের দিকে চেয়েছিল। খুব সম্ভবত সে বোঝার চেষ্টা করছিল এটা কতদূর সত্য। দুঃখের বিষয় হচ্ছে তাদের দুজনের কারোরই প্রযুক্তি সম্পর্কে তেমন কোন আইডিয়া নেই। এটা যদি অভিরূপের কাছে যেত তাহলে অবশ্যই ও ব্যাপারটা ধরে ফেলত।
নাফিসা খানিকক্ষণ ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবে।
– কেন যেন আমার মনে হচ্ছে এই ভিডিওটা যে পাঠিয়েছে সে আপনাদের পরিচিতদের মধ্যে কেউ হবে। সে জানে এই ভিডিও কার কাছে পাঠাতে হবে। প্রথমে সে ভাইয়াকে পাঠিয়েছে, কাজ না হওয়ায় আপনার শাশুড়িকে পাঠিয়েছে। কিন্তু কথা হচ্ছে আসলে সে চায় কি?
– সেটা তো আমারও প্রশ্ন! আর তুমি যে বলছো পরিচিতদের কেউ পাঠিয়েছে, এমন কেউ হলে মাকে কেন পাঠাবে? মা আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না এটা আমার পুরো শ্বশুরমহল জানে। তাকে এই ভিডিও পাঠালে যে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বাড়ি ছাড়তে হবে এটা আমাদের সম্পর্কটা যারা জানে তারা যে কেউ চোখ বুঁজে বলতে পারবে। ব্ল্যাকমেল করতে হলে সে শফিকে পাঠাবে। মাকে কেন? আমাকে কেন নয়? এদিকে শফিও আমাকে কিছুই বলেনি। কাল রাতেও সে একবারের জন্য আমাকে এ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি, শুধু আমার মুখের দিকে চেয়েছিল।
– মুখের দিকে তাকিয়েও বুঝতে পারল না যে ব্যাপারটা মিথ্যে! বউয়ের উপর এতটুকু আস্থা নেই?
সালেহা এবার বিরক্ত কন্ঠে বলেন,
– সরি, কিন্তু এটা আমাকে বলতেই হচ্ছে রুচিতা! তোমার হাজবেন্ডের এই ব্যবহার সত্যি মানার মতো না।
– আসলে আন্টি আমি শফিকে খুব একটা দোষ দিতে পারছি না। ও একটু নরম মনের সহজ সরল মানুষ। ওর জীবনটা খুব সরল ছকে বাঁধা। ও ওর এই নিস্তরঙ্গ জীবনের বাইরে খুব একটা ভাবতেই পারে না, এটুকু আমি এই কয়দিনে বেশ বুঝতে পেরেছি। আপনাদের কাছে তো এখন আর কিছু লুকাবার নেই। আমার শাশুড়ি মাঝে মাঝে বিনা কারণে আমার সঙ্গে রাগারাগি করেন। শফি সেটা বুঝেও চুপ করে থাকে। এদিকে অভি কিন্তু তার ঠিকই প্রতিবাদ করে কম বেশি। এ থেকেই বুঝতে পারছেন ও কেওয়াস পছন্দ করে না।
– ঝামেলা পছন্দ করে না, না স্বার্থপর? নিজের টুক হলে বাদ বাকিদের সময় চোখ বুঁজে থাকে!
নাফিসার কন্ঠে খেদ ঝরে পড়ে।
সালেহা তাকে মৃদু ধমক দিয়ে থামায়।
– চুপ কর নাফিসা। উনি তোর থেকে বয়সে বড়। কথাবার্তা বুঝে বলবি।
– শফির এই ব্যবহারে কিন্তু আন্টি আমিও সত্যি দুঃখ পেয়েছি! ও অন্তত একবার আমার সাথে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করতে পারত। তাহলে হয়তো ব্যাপারটা এত বিশ্রীভাবে ছড়াতো না। আমরা দুজনে মিলেই এর একটা সহজ সমাধান বের করতে পারতাম হয়তো।
– সেটাই তো! জিজ্ঞাসা করলেই তো আপনি বলে দিতেন যে এটা আপনার হোস্টেলে থাকাকালীন আপনার ফ্রেন্ডের সাথে করা একটা ভিডিও।
পিয়া হাত দিয়ে বাতাসে মাছি তাড়ানোর মত ভঙ্গি করে।
– যাক যা হয়েছে সেটা যাক! এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ভিডিওটা বাইরের কারো হাতে গেল কিভাবে? আপনার বান্ধবীই লিক করেনি তো?
নাফিসার কথায় রুচিতা তীব্রভাবে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– মোটেই না! ও এই ভিডিওটা আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে আমার গত জন্মদিনে পাঠিয়েছিল। আমি তাতে খুব রাগ হয়েছিলাম। বলেছিলাম তখন তখনই এটা মুছে ফেলতে। ও সরি বলেছিল এবং জানিয়েছিল ভিডিওটা ও ডিলিট করে দিয়েছে। তারপরও কাল রাতে আমি ওকে কল করে নিশ্চিত হয়েছি, ভিডিওটা ওর কাছে নেই। তাছাড়া ওর কথাবার্তায় বুঝতে পারছিলাম ও এ ব্যাপারে কিছুই জানে না! ওর সঙ্গে আমি তিন বছর রুম শেয়ার করেছি, এমন কিছু হলে ওর কথার ধরনেই আমি ধরে ফেলতাম। তাছাড়া ও আমার শাশুড়ির নাম্বারইবা পাবে কোত্থেকে? ও এখন দেশের বাইরে থাকে। শফির নাম্বার পেলেও আমার শাশুড়ির নাম্বার জোগাড় করা তো তার পক্ষে সম্ভব না।
– তাহলে কিভাবে লিক হল? আপনার মোবাইলে ভিডিওটা আছে?
– আমার মোবাইলেও সেভ করা নেই। তবে হ্যা, কনভারসেশন ডিলিট না করার একটা বদ অভ্যাস আছে আমার। বছর দুই আগের পুরনো কনভার্সেশনও আমার চ্যাটবক্সে আছে। ভিডিওটা ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিল। ওইখানে ওর সঙ্গে আমার কনভার্সেশন পুরোটা আছে। ওখানে ভিডিওটা আছে হয়তো।
– আপনার মোবাইল তো দেখছি ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক করা, তাহলে এইটা আপনার মোবাইল থেকেও লিক করা সম্ভব না। তাই না?
– মোবাইলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক শুরু করেছি বেশিদিন হয়নি। অভি বলল মোবাইল প্যাটার্ন লক না করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক করে রাখতে, তাই করেছিলাম দুমাস আগে।
– তাহলে তো আপনার মোবাইল থেকেই লিক হয়েছে জিনিসটা। নিশ্চয়ই কেউ আপনার প্যাটার্ন লক সিস্টেমটা জেনে গিয়েছিল।
পিয়া বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে বলে।
– সেজন্যই তো বলছি কাজটা আপনার পরিচিত কারো।
নাফিসা উত্তেজনায় পিয়ার পিঠে দুম করে একটা কিল মারে।
পিয়া তাতে মুখ বাঁকা করে বলে,
– দোস্ত, আমি কিছু জানি না। আল্লাহর কসম! ভাবীর সাথে আমার ওই একটা প্রোগ্রামেই দেখা হয়েছিল।
– তোকে সন্দেহের তালিকায় রাখবো কোন গাধায়? তুই তো নিজের মোবাইলই সামলাতে পারিস না, পরেরটা কেমনে সামলাবি!
নাফিসা ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলে।
সালেহা এতক্ষণ চুপচাপ থেকে কি যেন ভাবছিলেন। তিনি এবার রুচিতাকে বলেন,
– সে যাই হোক, তুমি এখন কি করতে চাও সেটা বল? তুমি যদি বলো আমি তোমার আংকেলকে নিয়ে সাইবার ক্রাইমের আওতায় একটা অভিযোগ দায়ের করতে পারি।
– তা করা যায়। কিন্তু আন্টি এই ভিডিওটা তাতে আরো দশ জন দেখবে। এই ব্যাপারটা ভাবতেই আমার কেমন গা শির শির করছে।
– তাহলে কি করতে চাও?
নাফিসা হঠাৎ জানতে চায়,
– আচ্ছা আপু এই ভিডিওটা আপনার দেবর দেখেনি তো, না?
– আমার জানামতে দেখেনি।
– এক কাজ করলে কেমন হয়, এটা তাকে দেখানো যায়। ব্যাপারটা যে বানোয়াট সেটা তিনি তো স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।
– না, ছি ছি!
– বুঝতে পারছি! ঠিক আছে, তাহলে একটা কাজ করুন… ভিডিওটা তাকে দেখাবার দরকার নেই শুধু এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলি। বলব যে আমি ভিডিওটা দেখেছি এবং আমি নিজেই ধরতে পেরেছি ব্যাপারটা মিথ্যে। তিনি বুদ্ধিমান লোক। তিনি নিশ্চয়ই এর কোন সমাধান খুঁজে বের করতে পারবেন।
নাফিসার প্রস্তাবটা রুচিতার পছন্দ হয়। সে উৎসুক কন্ঠে বলে,
– এটা তুমি খুব ভালো বলেছ। তুমি যদি ওর অফিসে গিয়ে এই ব্যাপারটা নিয়ে খোলাখুলি ওর সঙ্গে আলাপ করতে পারতে, আমি নিশ্চিত অভি এই ব্যাপারে ভালো কোন পদক্ষেপ নিতে পারবে।
– ঠিক। উনি যদি ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে পারেন তাহলে আম্মার আর পুলিশি ঝামেলায় যেতে হবে না। কি বলো আম্মা?
– সেটাই! ধরো আমি তোমার হয়ে কোন স্টেপ নিলাম আর পরে তোমার শাশুড়ি তাতে আরো রেগে গেল। এখানে তাদেরও একটা অনুমতির ব্যাপার আছে, হাজার হোক তারাই এখন তোমার অভিভাবক। তুই বরং ওর দেবরের সঙ্গে কথা বলে দেখ।
– ঠিক আছে আপু, আপনি নিশ্চিন্তে ঘরে বসে মার সঙ্গে আড্ডা দিন। আমি যাচ্ছি, দেখি কি করা যায়!
***
অফিসে পালিয়ে চলে এলেও অভির মনে হচ্ছে এখন এভাবে চলে আসাটা তার বোকামি হয়েছে। বাড়িতে এখন কোন নাটক চলছে কে জানে! ভাবতে ভাবতেই তমালের মেইল করা ভয়েস মেসেজগুলো চোখে পড়ে অভির। হেডফোন কানে লাগিয়ে মনোযোগ সহকারে মেসেজগুলো শোনার পরে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। অর্থবহ তেমন কিছুই নেই মেসেজগুলোতে। নাফিসার কোন কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
এমন সময় মোবাইলে শফির কল আসে।
– হ্যালো অভি, রুচিতা কি তোর ওখানে গেছে?
– ভাবী আমার অফিসে আসতে যাবে কেন ভাইয়া? কী হয়েছে?
ওপাশে শফি খানিকক্ষণ নীরব থাকে তারপর কাঁপা কণ্ঠ বলে,
– রুচিতাকে সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
– হোয়াট? কখন থেকে?
– মা বলল ঘুম থেকে উঠেই নাকি ওকে খুঁজে পাইনি। ও একটা চিঠি লিখে রেখে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
– তার মানে আমি বাসা থেকে বের হবার আগেই এমনটা ঘটেছে? অথচ তোমরা কেউ আমাকে সেটা বলোনি পর্যন্ত!
– আমিও জানতাম না। তুই যাবার পরেই জেনেছি। তাছাড়া এই নিয়ে নাটকও কম হয়নি। মা-বাবা দুজন ঝগড়াঝাঁটি করেছে। বাবা মাকে রেগেমেগে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেছে। আর অমনি মাও রাগ করে ব্যাগ গুছিয়ে ছোট খালাদের বাড়ি চলে গেছে।
অভি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা বারোটা বাজে।
– ভাইয়া, সবে বেলা বারোটা বাজে! আমি বাসা থেকে বেরিয়েছি আটটা সাড়ে আটটায়। আর এর মধ্যেই তোমরা এতো কান্ড করে ফেলেছ! ভাবীর আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছো?
– সবার কাছে ফোন দিয়েছি, কিন্তু কেউ বলতে পারছে না ওর কথা।
– তোমরা যে কি করোনা ভাইয়া! কালকে যখন মা চেঁচামেচি করছিল তখন তুমি ভাবীর পক্ষ নিলে না কেন বলতো? অন্তত দুটো কথাও যদি ভাবীর পক্ষে বলতে তাহলে ভাবী আজ বাড়ি ছেড়ে বের হতো না! মাঝে মাঝে তোমরা এত ছেলে মানুষী করো! আমি জানিনা ভাবীর কি ভিডিও দেখে তোমার আর মায়ের এত হইচই, তবে আজকাল যে কত রকমের ভিডিও এডিট করা যায় সেটা তুমি জানো? আমি নিজেই তোমার এমন বিশ্রী ভিডিও বানাতে পারবো যেটা অভিজ্ঞ চোখ ছাড়া ধরা অসম্ভব। সেখানে কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই একটা মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেললে তোমরা? গত তিন চার দিন ধরে তুমি ভাবীর সঙ্গে এত খারাপ ব্যবহার করে চলেছ তাহলে এর জন্য? তুমি নিজেও জানো মা ভাবীর সঙ্গে খুব একটা ভালো ব্যবহার করে না। সেখানে তুমিও যদি তাকে সাপোর্ট না দাও তাহলে ভাবী যাবে কোথায় বলতো? এখন তো আমারও মনে হচ্ছে ভাবীর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াটাই ঠিক হয়েছে। আমি তাকে সাপোর্ট দিচ্ছি। জীবনসঙ্গীর মর্যাদা যদি না দিতে পারো তাহলে জীবন সঙ্গী না থাকাই ভালো।
– অভি, তুই আমাকে যা দোষারোপ করবি সব আমি মাথা পেতে নিতে রাজি। শুধু তুই আমার রুচিতাকে খুঁজে এনে দে। ও যা করে করুক ওকে আমি আর কষ্ট দেবো না। এই তোকে কথা দিচ্ছি!
ফোনের ওপাশে শফি হঠাৎ বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। অভি একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
– বুঝলে তো ঠিকই ভাইয়া, শুধু দেরি করে ফেললে! আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি অস্থির হইয়ো না। এমনিতেই তোমার শরীর ভালোনা। ফোন রাখো, আমি দেখছি কি করা যায়।
শফির সাথে কথা শেষ করে অভি তার ছোট খালাকে কল দেয়। শফির শরীর ভালো না, বাড়িতে সে একা। বাড়িতে রুচিতাও নেই, তাই এই মুহূর্তে তার মার বাড়িতে থাকা খুব প্রয়োজন।
– হ্যালো খালা? মা কি তোমাদের বাসায়?
– তাইতো থাকবে! তোরা আর বাড়িতে থাকতে দিলি কই? একজন বয়স্ক মানুষকে এভাবে অপমান করা কি ঠিক?
– আমি কি করলাম? সেই সময় তো আমি বাসাতেও ছিলাম না!
– সেটা অবশ্য আপা আমাদের বলেছে। বলেছে, আমার অভি বাড়িতে থাকলে আমাকে বাড়ি থেকে এক পা’ও বের করতে দিত না। দেখ বাবা, একমাত্র তোর উপরেই আমাদের ভরসা আছে। তবু এতোটুকু বলি, নিজের মাকে বিশ্বাস করবি সবার আগে। তোরা তো সব অফিসে চলে যাস, একমাত্র আপাই কিন্তু সারাদিন থাকে ওই মেয়ের সঙ্গে। ওই মেয়ে ভালো না মন্দ সেটা তোদের চাইতে আপাই ভালো বলতে পারবে।
খালার কথায় অভি একটু বিরক্ত হলেও সেটা প্রকাশ করে না। এখন সে কড়া করে কিছু বলতে গেলে এটাও একটা জবরদস্ত ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। এমনিতেই তো জল কম ঘোলা হয়নি! তাই সে মনের ক্ষেদ দমিয়ে রেখে বলে,
– আচ্ছা খালা, আমি একটু পরে তোমাদের বাসায় আসছি তাকে নিয়ে যেতে। ততক্ষণ পর্যন্ত তার খেয়াল রেখো।
***
হাতের কিছু অফিশিয়াল কাজ সারার মাঝেই রিসেপশন থেকে কল এলো।
– স্যার, আপনার সঙ্গে একজন দেখা করতে এসেছেন, নাম বলছেন নাফিসা।
অভি বেশ অবাক হয়! এই সময় নাফিসা তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে? হঠাৎ মনে পড়ে, তাই তো তার মেসেজগুলো তো তাকে পাঠানো হয়নি! এত ঝামেলার মাঝে ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল সে। হয়তো সে কারণেই এসেছে মেয়েটা।
একটু পরে দরজায় টোকার শব্দে মুখ তুলে তাকায় অভি। নাফিসা একটা হালকা বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ পরে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। রংটার জন্যই বোধহয় তাকে এই মুহূর্তে বেশ শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে বলে মনে হচ্ছে।
– ভেতরে আসতে পারি?
– শিওর,আসুন!
নাফিসা ভেতরে এসে কিছু বলার আগেই তার সামনের চেয়ারটায় বসে পড়ে।
– আপনি হঠাৎ!
– কেন আমি আসাতে খুব সমস্যা হয়েছে?
– আরে না না! মানে আপনি তো কখনো আসেন না। তাছাড়া আপনি যে আমার অফিসের ঠিকানা জানেন সেটাও আমার জানা ছিল না।
– এলাম! কলেজের কাজে এসেছিলাম, পকেটে লাঞ্চ করার টাকা নেই, ভাবলাম আপনার সঙ্গে লাঞ্চটা সেরে আসি। তাছাড়া আমার ভয়েস মেসেজগুলো যে পাঠিয়েছিলাম ওটার কাজটা করেছেন কিনা সেটাও তো জানালেন না! তাই ভাবলাম এই সুযোগে রথও দেখে আসি কলাও বেচে আসি।
নাফিসা নির্বিকার চিত্তে কথাগুলো বললেও অভি তার কথায় হেসে ফেলে।
– ভালোই করেছেন এসেছেন। ওগুলোর কাজ তো হয়ে গেছে!
– তাহলে জানালেন না কেন?
– আসলে কাল রাত থেকে আমি খুব একটা ঝামেলার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তাই সকালে মেসেজগুলো হাতে পেয়েও আপনাকে জানাতে পারিনি।
– কী ঝামেলা?
– ব্যাপারটা একটু ব্যক্তিগত, মানে একেবারে পারিবারিক।
অস্বস্তিতে অভি নড়ে চড়ে বসে।
– তাই বুঝি? আপনি আবার পারিবারিক সমস্যা নিয়ে ভাবেন নাকি?
– মানে?
– মানে বলার সময় তো খুব বলছেন ব্যক্তিগত সমস্যা! তাহলে ঘরের কথা বাইরে যায় কি করে?
– বুঝলাম না! আপনার হেঁয়ালি আমার সত্যিই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
– আপনার ভাবী কোথায়?
অভি এবার নাফিসার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকায়।
– আপনি জানেন ভাবী কোথায়?
– প্রশ্নটা তো আমি আপনাকে করেছি। উত্তরটা আমার জানা নেই বলেই তো আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি।
– দেখুন আপনি যদি জানেন ভাবী কোথায় আছে তাহলে আমাকে একটু বলবেন প্লিজ। সকাল থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাপারটা আমি একটু আগেই জানতে পেরেছি। এদিকে মাও বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে রাগ করে। ভাইয়া অসুস্থ, ফোন করে ভাবীর খোঁজে বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে। আমি পড়েছি মহা ঝামেলায়!
– দেখুন, আমি অনেক বকবক করি বিধায় অনেকেই ভাবে আমার বোধহয় পেট পাতলা। ঘটনা কিন্তু সত্যি না। আমার পেট আর জিভ দুটোই বেশ ভালই মোটা! তবে হ্যাঁ, খাবার দাবার খেলে পেট কিছুটা পাতলা হয়… তখন কিছু কথা বের হলে হতেও পারে!
– তার মানে আপনি জানেন!
জবাবে নাফিসা মিষ্টি করে হাসে দুর্লভ ভুবনজয়ী হাসি। আর তার গোলাপি ঠোঁটের সেই হাসিটুকু এত ঝামেলার মাঝেও অভির হৃদস্পন্দনে তবলার দ্রুত লয়ের অজানা কোন বোল তোলে ।
চলবে