হোম পলিটিক্স পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
852

#হোম_পলিটিক্স

#আফসানানীতু

#শেষপর্ব

ঘটনার দিন রাত এগারোটা…

রুচিতা তার পরিচিত প্রিয় শোবার ঘরে ঢুকে দেখে শফি ঘরে নেই। আজ সারাদিনে অনেক ঝক্কি গেলেও সন্ধ্যাটা খুব ফুরফুরে কেটেছে রুচিতার। বিকেলে যখন খবর এলো সব ঝামেলা মিটে গেছে আর শাশুড়িকে নিয়ে অভিরূপ বাড়ি ফিরছে তখন রুচিতা নাফিসার দাদির সাহায্য নিয়ে সবার জন্য রান্না বান্না করেছে। সবাই বাড়ি ফিরলে রাতে একসাথে খাওয়া দাওয়া করেছে। সবার মাথার উপর থেকেই যেন একটা কালো মেঘের ছায়া সরে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা তার শাশুড়ি বাড়ি ফিরে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, যা তার বিবাহিত জীবনে এযাবৎকালের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা। তবে এই পর্যন্ত শফি তার সঙ্গে হুম হাঁ ছাড়া তেমন কোন কথাই বলেনি। অপরাধীর মতো মুখ করে ঘুরেছে পুরোটা সন্ধ্যা।

রুচিতাকে বারান্দায় আসতে দেখে শফি হাতের সদ্য ধরানো সিগারেটটা ঢিল দিয়ে ফেলে দেয়।
– বাব্বাহ, ফেলে দিলে!
– না তুমি পছন্দ করো না তো তাই…
– শরীরটা ভালো না, এ অবস্থায় এসব ছাই পাস না খেলে হয় না? তোমার ভালোর জন্যই তো বারণ করি। তাছাড়া আমি যা পছন্দ করি না তুমি কি তা করো না?

শফি খানিকক্ষণ অপরাধীর মতো মুখ করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর চোখ তুলে বলে,
– সরি রুচিতা! তুমি কি পারবে আমাকে ক্ষমা করতে?
– ছিঃ! এভাবে কেন বলছ? এখানে তোমার খুব একটা দোষ নেই। ভালবাসলে মানুষ ভালোবাসা হারাবার ভয় পাবে এমনটাই স্বাভাবিক, তোমার জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো এমন কিছু করতাম।
– মোটেই না! এই কয় মাসে আমি তোমাকে যতটুকু চিনেছি তাতে আমি জানি আমি তোমার সাথে যা ব্যবহার করেছি তেমন কিছুই তুমি করতে না। মা তোমার সঙ্গে প্রায়ই খারাপ ব্যবহার করত, তবু তুমি কখনো মুখ ফুটে আমার কাছে বলোনি। অভি আজ একটা খুব সত্যি কথা বলেছে।
– কী বলেছে?
– বলেছে জীবনসঙ্গীর মর্যাদা যদি না দিতে পারি তবে তার জীবনসঙ্গী না থাকাই ভালো।
রুচিতা এবার এক হাতে আলতো করে শফির মুখ চেপে ধরে।
– ও বাচ্চা ছেলে, রাগের মাথায় কি বলতে কি বলেছে! তাই তুমি মনে ধরে বসে আছো? তাই বুঝি পুরো সন্ধ্যা আমার সঙ্গে কথা বলোনি?
রুচিতার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে শফি বলে,
– আসলে ব্যাপারটা তা না। আমি আসলে ভীষণ লজ্জিত! কিভাবে তোমার মুখোমুখি হব সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না!
শফি মনে মনে রুচিতাকে হাজার বার ধন্যবাদ দেয় এত কিছুর পরেও তার এমন সহজ ব্যবহারের জন্য।
– দেখো, তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ সেজন্য আমি খুব একটা দুঃখ পাইনি। আমাদের পরিচয় তো খুব বেশি দিনের না, ভুল বুঝতেই পারো। কিন্তু আমি দুঃখ পেয়েছি ওই একটা ব্যাপারে…
– কী?
– তুমি কেন আমাকে ডেকে একবার পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলে না? কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কেন এত রাগারাগি করলে?
শফি ভারী কন্ঠে বলে,
– সেই জন্য তুমি আমাকে যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব রুচিতা। আর কথা দিচ্ছি, জীবনে আর কখনো তোমাকে ভুল বুঝবোনা। যদি কখনো ভুল বুঝাবুঝি হয় সবার আগে আমি তোমার সঙ্গে আলাপ করব।
– সত্যি তো?
– তিন সত্যি!এই তোমার গা ছুঁয়ে বলছি!
– ইস! আমি তোমার চালাকি বুঝি না ভেবেছো? খালি ছুঁয়ে দেবার চেষ্টা!
রুচিতার বলার ভঙ্গিতে শফি হেসে ফেলে।
– তা আমার জন্য কি শাস্তি নির্ধারণ করেছেন মহারানী?
– তোমার শরীরটা ভালো হলেই অফিস থেকে একটা ছুটি নিয়ে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য হলেও আমরা ঢাকার বাইরে কোথাও ঘুরতে যাব। শুধু তুমি আর আমি…
– ডান!
– আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে, আমাকে একটা মোটা জরির পাড়ের টুকটুকে লাল রঙের শাড়ি কিনে দিতে হবে। ওটা পরে পহেলা বৈশাখের দিন সকাল বেলা আমি তোমার সঙ্গে ঘুরতে বের হব। বসন্ত কিন্তু শেষের পথে। সপ্তাহখানেক পরেই পহেলা বৈশাখ ।
– জো হুকুম মহারানী, আপনার সকল আদেশ শিরোধার্য।
শফি রুচিতাকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে। রুচিতা ফিসফিস করে শফিকে বলে,
– বলতো পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর কী?
– তুমি।
– যাহ বোকা! জবাবটা হবে ভালোবাসা…ভালোবাসো বলেই তোমার চোখে আমি সবচেয়ে বেশি সুন্দর আর আমার চোখে তুমি।
শফি স্মিত হেসে রুচিতার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু এঁকে দেয়। রুচিতা শফিকে মৃদু ধমক দিয়ে বলে,
– বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব কি অসভ্যতা হচ্ছে? মা দেখলে বকবে কিন্তু!
প্রতিবাদে কাজ হয় না, বরং শফির মতো শান্ত ছেলেটা ভালোবাসার উন্মাদনায় আরো চঞ্চল হয়ে ওঠে।

তিনদিন পর…

– যত যাই বলো নাফিসা, তুমি যা দেখালে! সত্যিই প্রশংসার যোগ্য! তোমার তুলনা হয় না! একসঙ্গে দু-দুটো কেস সলভ করে ফেললে? তোমার তো গোয়েন্দাগিরিতে নামা উচিত।
রুচিতার কথায় নাফিসা হেসে বলে,
– হ্যাঁ হ্যাঁ আরো বলেন… আমি একেবারে শোভনের মতন পারফেক্ট একজন গোয়েন্দা! আপু, আমি যদি গোয়েন্দাগিরিতে নামি না তাহলে অন্য কিছুর জন্য বিখ্যাত না হলেও পৃথিবীতে সর্বনিম্ন লেখাপড়া জানা গোয়েন্দা হিসাবে অবশ্যই বিখ্যাত হয়ে যাব রাতারাতি। তাই আগে পড়াশোনাটা শেষ করতে দিন। তবে আপনার আইডিয়াটা খারাপ না! লেখাপড়া শেষ করে ভাবছি গোয়েন্দা শোভনের সরকারি হতে চেয়ে তার কাছে লম্বা একটা চিঠি লিখব। আর চিঠির সঙ্গে প্রমাণপত্র স্বরুপ আমার হয়ে দুটো লাইন লিখে আপনি একটা সই দিয়ে দেবেন।
– দোস্ত আমারেও সাইন করতে দিস, একটার জায়গায় দুইটা করে দিবনে, জাফরেরটা সহ।
– ওই শুরু হলো! মানুষ হয় পতিব্রতা নারী আর সে হলো প্রেমিক ব্রতা প্রেমিকা!
নাফিসার কথা শুনে রুচিতা হেসে ফেলে। তারা এই মুহূর্তে নাফিসাদের বাসার বারান্দায় বসে আচার খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। রুচিতা এবার নাফিসাকে তাড়া দিয়ে বলে,
– আচ্ছা এসব বাদ দাও, আসল কথা বলো। সেদিন কি সত্যি সত্যিই ইয়ামিনের জন্য বাইরে পুলিশ ছিল?
– আরে নাহ্! ওটা তো আমি ইয়ামিন শয়তানটাকে আটকাবার জন্য বলেছিলাম। আমি যখন বললাম বাইরে পুলিশ দাঁড়ানো গাধার বাচ্চা ইয়ামিন তো ভয়ে একবারে জমে বরফ হয়ে গেল। গর্ধভ এইটাও বুঝলো না, ও না খু*ন করেছে না চু*রি ডা*কাতি! আর আমিও এমন কোন বড় হোমরা চোমরা কেউ না যে আমার এক ফোনে এখানে পুলিশ ফোর্স নিয়ে চলে আসবে। কিন্তু গাধাটার মাথায় কি আর অত বুদ্ধি আছে? পুলিশের ভয়ে পারলে সে ওখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করে দেয়। তবে আপনার দেবর আমার চালাকিটা বুঝে ফেলেছিলেন, তিনি চট করে দৌড়ে গিয়ে ইয়ামিনের কলার চেপে ধরে তার মুখে একেবারে বিরাশি শিক্কার একটা ঘু*ষি বসিয়ে দেয়। সকাল থেকে চ*ড় দেবে বলে হুমকি দিচ্ছিল তো তার একেবারে ষোল কলা পূরণ করে ছাড়ে এক ঘু*ষিতে! তাতে ইয়ামিন একেবারে ল্যাবা ছেবা খেয়ে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ে, তারপর তার পা চেপে ধরে সে কি কান্না হাউমাউ করে! বলে “ভাইয়া আমারে মাফ করে দেন, আমি আর জীবনে এমন কোন ভুল করবো না! আমার ভুল হইছে, কিন্তু দোষ আমার না। পরী আপাই আমারে বলছে ভাবীর সঙ্গে এমনটা করতে।”
– এহ, আর সে একেবারে সাধু পুরুষ! ধরা খেয়ে এখন সব দোষ পরীর!
রুচিতা ভ্রু কুঁচকে ক্ষেদ প্রকাশ করে।
– আর বলবেন না! ইয়ামিন পরীর নাম নিতেই বাড়ির সবার যা চেহারা হয়েছিল না! তবে আমি বুঝে ফেলি এবার পরীর ভাগবার পালা। কিন্তু আমি কি আর তা হতে দেবো? একটু আগে আমাকে যা বলেছে পর্দার ওপাশ থেকে তো আমি সবই শুনেছি। বলেছিল না আপনার দেবর বান্ধবী বগলে নিয়ে ঘুরছে? সেটার অনুভূতি বোঝাবার জন্যই তার হাতটা চট করে আমি আমার বগলের নিচে চেপে ধরি। আর যাবে কোথায়? যতই মোচড়া মুচড়ি করুক, নাফিসার হাত ছাড়াবে এমন বাপের বেটি এখনো পৃথিবীতে জন্মায়নি! এদিকে আপনার দেবর ইয়ামিনকে হিড় হিড় করে কলার ধরে টেনে আনে, তারপর দুজনকে একসঙ্গে ঘাড় চেপে ধরে জোর করে সোফায় বসায়। আমার দিকে তাকিয়ে জানতে চায় পুলিশ সত্যি সত্যি এসেছে কিনা। আমার তখন হাসার পালা। বললাম, পুলিশ ডাকতে হবে না মা চলে এসেছেন সিকিউরিটি নিয়ে। আমি এখানে আসার সময় আমার লোকেশন হোয়াটসঅ্যাপে আম্মাকে শেয়ার করে দিয়েছিলাম। বারান্দায় গিয়ে যখন দেখলাম ময়নাটা মদনকে ডাকছে আমার বুঝতে আর বাকি ছিল না যে এই বাসাতেই পিয়ার ব্ল্যাকমেলারও উপস্থিত আছে। তাই সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা আম্মাকে জানিয়েছিলাম। আমি আপনার খালা শাশুড়ির বাড়িতে যাচ্ছি শুনে মা’ও রওনা দিয়েছিলেন। মহীয়সী নারী সংস্থাটা আপনার খালা শাশুড়ির বাড়ির খুব কাছে, তাই মায়ের অনুরোধে খুব তাড়াতাড়ি তারা সেখানে তাদের নিজস্ব মহিলা সিকিউরিটি গার্ড পাঠিয়ে দিয়েছিল। ইয়ামিন গর্ধভ যখন দেখল পুলিশের বদলে আম্মা দুইজন মহিলা গার্ড নিয়ে ঢুকেছে তখন সে কাঁদবে না হাসবে বুঝে পায়না। দেখার মত একটা চেহারা বানিয়েছিল তখন।
– আচ্ছা দুটো কেসেই কি পরীও ইনভলভ ছিল?
– না আপু। পরী পিয়ার ঘটনাটা জানতোই না। ইয়ামিনটাই হোস্টেলে সুযোগ বুঝে জাফর ভাইয়ের ফোন থেকে ছবিগুলো সরিয়েছিল। গাধাটা বাসায় এসে বসে বসে ওইসব ভয়েজ মেইল পাঠিয়েছিল বলেই সেখানে তাদের ময়না পাখির কথা, পরীর মোবাইলের রিংটোন মানে বাড়ির আনুষঙ্গিক শব্দগুলো রেকর্ড হয়ে গিয়েছিল।
– আর ছাগলটা সেজন্যই তো ধরা খেলো।
পিয়া নিজের হাতের তালুতে নিজেই ঘুসি মারে রেগেমেগে।
– মূলতঃ আপনার কেসটাতেই পরী যুক্ত ছিল। সেদিন আপনি যখন মোবাইলটা আপনার শাশুড়িকে দিয়ে এসেছিলেন কথা শেষে সেটা ফেরত দেওয়ার জন্য পরীর হাতেই দিয়েছিল উনি। কিন্তু পরী ফোনটা আনলক পেয়ে সেটা ফেরত না দিয়ে বরং বসে বসে আপনার মোবাইল ঘাটছিল। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখনই আপনার বান্ধবীর ভিডিওটা পাঠায়। সঙ্গে সঙ্গে সেও সেটা খুলে দেখে, তারপর নিজের মোবাইলে শেয়ার করে নেয়। কাজ শেষে মোবাইল বন্ধ করে ভদ্র মানুষের মতো সেটা ইয়ামিনকে দিয়ে আপনাকে দিয়ে আসতে বলে। তার নাম যেন না আসে সেজন্যই সে চালাকি করে ইয়ামিনকে দিয়ে ফোনটা পাঠিয়েছিল। সেই সময় পর্যন্ত ইয়ামিন আসলে কিছুই জানতো না। পরে সে’ই ইয়ামিনকে ভিডিওটা দেখিয়ে এই ব্যাপারে প্রলুব্ধ করে ভাইয়াকে ব্ল্যাকমেইল করে। জাফর ভাইকে ব্ল্যাকমেইল করে ততদিনে ইয়ামিনেরও সাহস বেড়ে গেছে, তাই সেও নিজের মতো করে পরীকে বুদ্ধি দেয় এভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে যাতে ভাইয়া আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। তাহলে তো তার পথ খোলা! বাড়ির সবাই যে তখন চোখ বুঁজে শফি ভাইয়ের হাতে তাকে তুলে দেবে এটা তো সে জানতোই! তাদের প্ল্যান ছিল শফি ভাইকে ভয় ভীতি দেখিয়ে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়াবে। কিন্তু তিন দিনেও যখন কাজ হয় না তখন তারা আন্টিকে মেসেজটা পাঠায়। কারণ তাদের বাড়ির সবাই জানে আপনার বিরুদ্ধে একটা কিছু ছূতো পেলেই হল আন্টি হাঙ্গামা শুরু করে দেবেন। হয়েছিলও তাই! প্ল্যান মোটামুটি সফলভাবেই আগাচ্ছিল কিন্তু…
– কিন্তু শেষমেষ নাফিসার বুদ্ধির সঙ্গে পেরে উঠল না তারা।
রুচিতার চেহারায় বিজেতার হাসি।
– আচ্ছা নাফিসা, ভিডিও আর ছবি… এসব নিয়ে আর আমাদের কোন ভয় নেই তো?
– আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন আপু। আপনার দেবর আর ওই দুইজন গার্ড মিলে বাড়ির প্রতিটা কম্পিউটার মোবাইল চেক করেছে এবং খুঁজে খুঁজে সেগুলো ডিলিট করেছে। সবকিছু মুছে ফেলার পরও পরী আর ইয়ামিনের মোবাইল আর ল্যাপটপ তো রাগের চোটে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছেন উনি। তাছাড়া মহীয়সী দেশের সবচেয়ে বড় নারী সংস্থা গুলোর একটা। আম্মা সেই সংস্থার উকিল দিয়ে আইনগতভাবে তাদের পরিবারের সবাইকে দিয়ে বন্ডে সই করিয়ে নিয়েছে যে ভবিষ্যতে যদি আবারও এমন কোন ঘটনা ঘটে বা এসব ছবি আর ভিডিওর একটাও যদি কোথাও লিক হয় সবার আগে তাদের পরিবারকে দোষী অভিযুক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। সো চিল!
– সেই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ হিসেবে উল্টো আমাদের দুই লাখ টাকা দিতে হয়েছে তাদের। খালাম্মা আসলে লা জবাব একজন মহিলা!
পিয়া দুই লাখ টাকা পাবার আনন্দে ঢেকুর তোলে।
– আপনি ওসব নিয়ে ভাববেন না ভাবী। খালাম্মা এই সবে একেবারে পাকা খেলোয়ার! তাছাড়া অত বড় সংস্থার চিপায় যে একবার পড়বে সে জিন্দেগীতে আর ওসব করার সাহস করবে বলে মনে হয় না।
– আপনার দেবর তো ইয়ামিনকে পুরো সময়টা জুড়ে যখনই সুযোগ পেয়েছে চ*ড় থা*প্পর দিয়েছে। বেচারার ফর্সা গাল একেবারে টমেটোর মতন ফুলে ফেঁপে লাল হয়ে গিয়েছিল! দেখতে মজাই লাগছিল! সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হচ্ছে, সবাই যখন বেরিয়ে আসছে তখন আপনার খালা শ্বাশুড়ি কি বলার জন্য যেন দৌড়ে এসেছিল তার বোনের কাছে, আপনার শাশুড়ি তো তাকেও চ*ড় মারতে গিয়েছিল। আম্মা থামায় তাকে।
“যদি লজ্জা থাকে তাহলে আর কখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ করবি না!” বলে শাসিয়ে চলে এসেছেন আপনার শাশুড়ি।
রুচিতা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
– বেশ করেছে! পুরো পরিবারটাই আসলে কুমতলবি। আর তাদের জন্য আমার শাশুড়ি পর্যন্ত আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে! কি বাঁচা যে বেঁচেছি! দুই এক দিন কষ্ট গেছে, মানসিক চাপ গেছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এমনটা হয়ে একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে। আমার শাশুড়ি তো আজকাল আমার হাতের চা খেয়েও আমার এত এত প্রশংসা করেন! রাঁধতে বসলে দৌড়ে এসে বলেন, চলো দুজন মিলে করি। বিরাট তেলেসমাতি! আর এ সবই সম্ভব হয়েছে তোমার আর আন্টির জন্য। আমি আসলে তোমাদের কাছে চির ঋণী হয়ে গেলাম।

– কি সব যে বলেন আপনি আপু! তবে সত্যি বলছি, আপনাদের হয়তো মনে হয়েছে এটাই তাদের জন্য যথাযথ বিচার হয়েছে, আমার কিন্তু তেমনটা লাগেনি। মজা হতো যদি পরিবারের সবগুলোকে ধরে জেলের ভাত খাওয়ানো যেত। পিয়া আর জাফর ভাইয়ের কাউমাউ আর আপনার শ্বাশুড়ির জন্য পারলাম না। সবাই দেখলাম এই ব্যাপারে পুলিশের কাছে যেতে নারাজ, তাই আর হলো না! তবে তাদের একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার ছিল। মাত্র দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে আর দুই চারটা চ*ড় থা*প্পড় খেয়ে পার পেয়ে গেল তারা।
– আমি বাবা খুশি! বাবা মা দেশে আসার আগেই সব ঝামেলা মিটে গেছে। আমার ধারনা তারা ওখানে বসে আমার জন্য দোয়া করছেন বলেই হয়তো এত সহজে আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।
– তা তো অবশ্যই!
নাফিসা রুচিতার কথায় সমর্থন জানায়।
এমন সময় ভেতর থেকে সালেহার ডাক শোনা যায়,
– কিরে, তোরা কি কেবল আচারই খাবি? অন্য কিছু খাবিনা?
তাই শুনে পিয়া অমনি লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
– তাইতো! আমরা খালি আচার খাচ্ছি কেন? আন্টি নিশ্চয়ই আরো কিছু বানিয়েছেন।
– তুই না দিন দিন একটা পেটুক হচ্ছিস! যে হারে মটু হচ্ছিস কয়দিন পরে জাফর ভাইকে তোর ছোট ভাই মনে হবে। এমনিতেও তো তুই তাকে পারলে কোলে নিয়ে নাচিস, তখন কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই তাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে হবে।
পিয়া এবার মুখ কালো করে বলে,
– লাগলে ঘুরবো! কিন্তু তার আগে বল তুই সব কথাই ঘুরেফিরে জাফরের কাছে নিয়ে আসিস কেন? সত্যি করে বল দেখি তুই জাফরকে দেখতে পারিস না কেন? কি নাই তার মাঝে?
– আমি যদি এখন তোর জাফরের কি নাই সেটার লিস্ট করি না কমসে কম দুই দিস্তা কাগজ লাগবে। বাসায় আপাতত দুই দিস্তা কাগজ নাই তাই তোকে লিস্ট দিতে পারছি না। যা দেখে আয় আম্মা কি বানিয়েছে। আবার একাই সব খেয়ে আসিস না, আপুর জন্য নিয়ে আসিস।
পিয়া মন খারাপ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু বারান্দা পেরিয়ে ঘরে ঢুকতেই শুনতে পায় রুচিতা নাফিসাকে বলছে,
– মেয়েটা জাফরকে এত পছন্দ করে আর তুমি কি না ওর সঙ্গে এমন আচরণ করছো! জাফরকে অপছন্দ করার কারণটা কিন্তু আমিও জানতে চাই। ছেলেটা তো দেখতে সুন্দর, ব্যবহারও অমায়িক! তাহলে তোমার তাকে এত অপছন্দ কেন?
– শুনুন আপু, জাফর ভাইয়ের আসলে কোন কমতি নাই। সমস্যাটা হচ্ছে আমি আর পিয়া সেই ক্লাস থ্রি থেকে বন্ধু। একটা সময় ছিল যখন ওর আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না! কিন্তু জাফর ভাই ওর জীবনে আসার পর ভালোবাসা বলেন আর বন্ধুত্ব! সব ভাগাভাগি হয়ে গেছে। জাফর ভাইকে তাই আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবি। আর প্রতিদ্বন্দ্বিকে কেউ কখনো ভালবাসতে পেরেছে নিঃস্বার্থভাবে, বলেন?
– আহারে! তার মানে তুমি তাকে তোমার বন্ধু চুরির দায়ে হিংসে করো?
– এই তো ধরতে পেরেছেন।
নাফিসা হাসে। আর ঠিক তখন পেছনে পিয়ার হর্ষধ্বনি শোনা যায়। পিয়া দুই হাত উঁচু করে দৌড়ে এসে নাফিসা কিছু বলার আগেই তার গলা পেঁচিয়ে ধরে গালে থ্যাবড়ে চুমু খায়।
– করছিসটা কি, অশিক্ষিত মহিলা! আমার পুরো মুখটা থুতু দিয়ে ভরে দিলি! সকালে কি দিয়ে দাঁত মেজেছিলি, গরুর গোবর দিয়ে? মুখে এত গন্ধ কেন তোর?
– দোস্ত তুই আমারে যা খুশি বল, কোন সমস্যা নাই! কিন্তু আজকে একটু আগে আমি যা শুনলাম এরপর বিশ্বাস কর তোর মত বন্ধুর জন্য আমি জাফরের সঙ্গে ব্রেকআপ করতেও দ্বিধা করবো না।
নাফিসা সঙ্গে সঙ্গে কথাটা হাওয়া থেকে লুফে নেয়।
– আপু শুনলেন তো কি বললো মেয়েটা? তাহলে এখনই হয়ে যাক! আমার মত বন্ধুকে পেতে হলে তোর জাফরের মতন প্রেমিককে ছাড়তে হবে, বল ব্রেকআপ।
পিয়া এবার একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মুখ কাচুমাচু করে ফেলে। বেচারী অতি আবেগে যে উল্টোপাল্টা বকে ফেলেছে সেটা বুঝতে পেরে নাফিসা হেসে বলে,
– গাধা কোথাকার! এত বড় অগ্নিপরীক্ষা তোরে দিতে হবে না। তুই যেমন আমার জন্য জাফর ভাইয়ের সঙ্গে ব্রেকআপ করতে রাজি আছিস তেমনি আমিও তোর মত বন্ধুর জন্য জাফর ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্বটুকুকে ভাগাভাগি করতে রাজি আছি।
পিয়া আনন্দে চিৎকার করে আবারো নাফিসার গালে ঠেসে চুমু খায়। নাফিসা বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,
– চুমু খাচ্ছিস না গলা চিপে মেরে ফেলার প্ল্যান করছিস? ছাড় বলছি গোবরখেকো গুবরেপোকা কোথাকার!
নাফিসার ধমকে কাজ হয় না। উল্টো পিয়া তাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ওদের বন্ধুত্বের এই খুনসুটি দেখে রুচিতা হাসে, ইচ্ছে হয় নিজেও উঠে গিয়ে দুজনকে জড়িয়ে ধরে। রুচিতা চোখ ভরা মায়া নিয়ে তাদের সুন্দর বন্ধুত্বকে উপভোগ করে মন ভরে।

সমাপ্ত