অচেনা শহর ২ পর্ব-২৩+২৪

0
888

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২৩]

সারা বাড়ি ফুল, ক্যান্ডেলা, বাতি দিয়ে সাজানো শুরু করে দিয়েছে। আদ্র একবার এ বাড়ি তো ও বাড়ি করছে। বাসা ঝলমল করছে আমি রুনা আপুর নাম্বার অনেক কষ্ট যোগার করে তাকে কল করলাম।
আমার আওয়াজ পেয়ে আপু অভিমান করে বসলো কতোদিন কথা হয়না।

সরি আপু আমি তোমার নাম্বার হারিয়ে ফেলেছিলাম তাই যোগাযোগ করতে পারি নি।

আমার নাম্বার কি করে হারাতে পারলি তুই। কতো মিস করেছি তোকে জানিস রানী কতোবার তোর সাথে কথা বলবে বলে।

ক্ষমা করে দাও আপু। রায়া কেমন আছে?

আলহামদুলিল্লাহ খুব দুষ্টু হয়েছে।

তাই ওর আমার কথা মনে আছে।

আছে তো তোর ছবি আছে না আমার ফোন সেটা দেখেই বলে স্নেহা আন্টি। তুই কোথায় নানান কথা জিজ্ঞেস করে?

কৌশিক ভাইয়ার কেমন আছে?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আদ্রর কি খবর?

ভালো। আপু তোমাদের ঢাকা আসতে হবে।

কেন?

আমাদের বিয়েতে আসবে না তুমি।

তোদের বিয়ে মানে? একবার না হয়েছিলো।

হুম সেটা তো সবার আড়ালে এখন সবাই মিলে অনুষ্ঠান করে হবে। তোমাদের কালকেই আসতে হবে‌।

কাল কি করে আমি কিছু বুঝছি না খুলে বল।

আসো তারপর সব বলবো কালকেই আসবা না হলে তোমার সাথে আড়ি।

আপু বিপাকে পড়ে গেল বলল ভাইয়ার সাথে কথা বলে জানাবে আমি সাফ সাফ বললাম আসতেই হবে না হলে আমি রাগ করে আর কথা বলবো না।
আপু আচ্ছা বলল। রায়া ও রানীর সাথে কথা বলে রেখে দিলাম। ভাইয়া নাকি দোকানে আছে গ্ৰামে গিয়ে দোকান করে এখন।

বিকেলে আদ্রকে নিয়ে আমি নিশাত দের বাসায় চলে এলাম। আদ্রকে এখনো জানানো হয়নি নিশাতদের সম্পর্কে। কাকার সাথে কথা বলেছি সে মানা করেছে বলতে তাই বলিনি। আদ্র কি ভাবে রিয়াক্ট করবে কে জানে।বাসায় এসে নিশাতকে পেলাম না কাকির সাথে কথা বললাম কাকি তো কেঁদে ফেললো। মানুষ খুব ভালো আমাকে মেয়ের মতো আগলে রেখেছিল আমিও কেঁদে উঠলাম। আদ্রর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে আদ্র তাকে পা ধরে সালাম করে। বিয়ের কথা আদ্র বলল আর কালকেই নিশাত কে নিয়ে চলে আসতে বললাম। অন্তরাদের বাসায় গিয়ে সবাইকে ইনভাইট করে অন্তরা আর অলিকে সাথে করে নিয়ে এলাম।
আমি আদ্রর সাথে সামনে পেছনে অন্তরা আর অলি।
আমি ভ্রু কুঁচকে একটু পর পর অন্তরার দিকে তাকাচ্ছি অলি অনেক কথা বলছে কিন্তু অন্তরা বলছে না মন খারাপ করে বসে আছে।

অন্তরা কি হয়েছে তোর মুখটা ওমন করে রেখেছিস কেন?

আমার কথায় আদ্র ও তাকালো অন্তরা দিকে।

আমার মনে অন্তরা হৃদয়ের জন্য এমন মুখ করে আছে। চলো তাকেও নিয়ে যাই। তাহলেই মনটা খারাপ থেকে ভালো হয়ে যাবে তাই না শালিকা।

অন্তরা মুখ বেকা করে বলল, আমার কিছু হয়নি।
আর তাকে কোথায় পাবেন সে দেশে থাকলে তো?

আদ্র ড্রাইভ করতে করতে বললো,,
কেন সে আবার আমার শালিকে একা রেখে কোথায় গেছে যে তার বিরহে মুখটা কালো করে বসে আছো?

এক সপ্তাহ হলো সে বিদেশে গিয়ে বসে আছে।

আমি বললাম,, কেন?

ওর বাবার ব্যবসার জন্য নাকি ওকে পাঠিয়েছে উনি একটু অসুস্থ তাই।

ওহ এই ব্যাপার তা আসবে কবে।

জানি না।

আমি অবাক হয়ে তাকালাম,
জানিস না? কেন কথা হয় না বলে নি তোকে?

না যাওয়ার পর আর কথা হয়নি।

এক সপ্তাহ কথা না বলে আছিস?

হুম।

আহারে এই জন্য তো এমন শুখে কাতর হয়ে আছে। কেঁদো না শালিকা আসবে নি।

অন্তরা কড়া চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
ভাই আপনি মজা করছেন কেন? আমি কাঁদছি কোথায়?

ও কাদছো না আমি ভাবলাম কেঁদে ভাসিয়ে সাগর বানিয়ে আমার গাড়ি ডুবিয়ে দিচ্ছো।

ভাইয়া
মৃদু চিৎকার করে।

আমি আর অলি হাসতেছি।

এতো হেসো না ব‌উ এক্সিডেন্ট করে ফেলবো তো।

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে অন্তরার দিকে তাকিয়ে হাসছিলাম আদ্রর কথা শুনে হাসি অফ হয়ে গেল। চোখ পাকিয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম,

কি বললেন আপনি ? আমি হাসলে আপনার এক্সিডেন্ট কেন হবে?

তুমি এমন করে হাসলেই তো সব হবে আমি খুন হয়ে যাব।

কি বলতে চাইছেন?

সিম্পুল তুমি এমন মিষ্টি করে হাসলে আমার এই চোখ যে না চাইতেও গাড়ির চালানোতে মনোযোগ দিতে পারবে না চোখ তোমার দিকে স্থির হয়ে যাব।
তখন তো এক্সিডেন্ট ই হবে তাইনা।

আদ্রর কথা শুনে আমি লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেলাম।
পেছনে থেকে অন্তরা আর অলি হাসতেছি। আমি এবার আদ্রর এমন কথা শুনে আমি রাগী চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। ফাজিল লোক একটা। এইভাবে বলল কেন ওরা দুজন আছে সেটা কি উনি দেখতে পাননা।
এই ভাবে কেউ লজ্জা দেয়।
আমি লজ্জা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। ফুসকার একটা দোকান দেখেই অলি চেঁচিয়ে উঠলো।
খাবে বলে আদ্র গাড়ি থামিয়ে ফেলল। সবাই মিলে ফুসকার দোকানে চলে এলাম।

অলি গপাগপ খাচ্ছে আদ্র এক প্লেট নিয়ে আমার মুখে তুলে দিলো আমি লজ্জা নিয়ে আদ্রর হাতে খাচ্ছি হঠাৎ চোখ পরলো অন্তরার দিকে খাচ্ছে না হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি একটা হাত তুলে আদ্রর মুখে দিয়ে অন্তরার জন্য নিয়ে গেলাম আর ফট করে মুখে পুরে দিলাম।

ওই এখন ও মন খারাপ করে আছিস কেন? ভাইয়া আসবে নি তাড়াতাড়ি হয়তো কাজে বেশি বিজি তাই ফোন করতে পারছে না এসে সারপ্রাইজ দিবে।

খা।

হুম।

আমি আদ্রর কাছে এসে প্লেট নিয়ে নিলাম।

কি হলো নিলে কেন?

আমি নিজের হাতে খেতে পারি আপনার খাইয়ে দিতে হবে না।

হবে আসো তো আর তুমি খেতে পারো কিনা জানতে চাইনি।‌তুমি আমাকে খাইয়ে দাও আমি তোমাকে।

উফ আপনার লজ্জা করে না আসে পাশের মানুষেরা কেমন করে তাকিয়ে আছে দেখুন।সবাই কি ভাবছে বলুন তো। আর দুইবার তো খেয়েছি আপনার হাতে আর না না হলে কিন্তু আমি আর খাব না।

মানুষের জন্য তুমি আমার ভালোবাসাটা উপলদ্ধি না করে ঠেলে দিচ্ছে ইজ নট ফেয়ার স্নেহা। আর
কে কি ভাববো আই ডোন্ট কেয়ার। আমি শুধু জানি তুমি আমার বউ।তাই আমার ব‌উকে নিয়ে যা খুশি তাই করবো।

বলেই আমার হাত থেকে ফুসকার প্লেট নিয়ে নিলো সাথে আমার বাম হাত শক্ত করে ধরে নিজের কাছে নিয়ে গেল আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে। আল্লাহ আগেই তো ভালো ছিলো এখন লজ্জায় আমি আশেপাশে তাকাতে পারছি না মন চাইছে আদ্রর মাথা ফাটিয়ে দিতে।ডান হাত দিয়ে কামিজ এর কোনা শক্ত করে ধরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,,

আচ্ছা সরি ছারুন প্লিজ। আপনার হাতেই খাব। এভাবে ধরে রাখবে না আমি লজ্জায় মরেই যাব।

এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে।

তুমি সারা জীবন তেরাই রয়ে গেলে সোজা কথা মানতে চাও না আমি জানি তো কি করে মানাতে হয়। কেন জান এই ভাবেই‌তো ভালো সবাই এখন মজা নিচ্ছে দেখো।

ছাড়ুন না।

আমার অসহায় মুখ দিয়ে দেখে আদ্র ছেড়ে দিলো প্লেট ও আমার হাতে দিয়ে বলল,

তুমি খাও নিজের মতো।

আদ্র অন্য দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
রাগ করেছ মুখ দেখেই বুঝতে পারছি কিন্তু আমার তো লজ্জা করে সবার তাকানো দেখে। সেটা এই মানুষটি কে বুঝাবে কে?
এই ভাবে কি আমি খেতে পারবো একটা তুলে নিয়ে আদ্রর সামনে ধরলাম।
আদ্র গম্ভীর হয়ে বলল,

কি হলো আমাকে দিচ্ছ কেন?

আপনি খাবেন না।

না।

কেন?

এমনিই।

রাগ করেছেন?

রাগ করলেই তোমার কি?

আচ্ছা সরি খান প্লিজ না হলে আমি ও খাব না কিন্তু।

আচ্ছা না খেলে রেখে আসো।

তাও খাবেনই না।

না।

করতেই আমি আদ্রর মুখের ফুসকা পুরে দিলাম। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি মিটিমিটি হাসছি।

কি হলো খাবেন না?

আদ্র কথা বলতে পারছেনা না তাই খাচ্ছে।

তুমি খুব পাজি হয়েছো?

আগে খুব ভালো ছিলাম বুঝি।

একদম ই না আগে ঝগড়ুটে ছিলে! আর এখন…

এখন কি?

এখন আরো ঝগড়ুটে হচ্ছো।
বলেই ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসি দিলো।

আমি রেগে ফুসকার প্লেট রেগে আদ্রর বাহুতে কিল ঘুষি মারতে লাগলাম।

~~চলবে~~

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২৪]

সারা বাড়ি মানুষে গমগম করছে চিৎকার চেঁচামেচি লেগেই আছে। কান আমার জ্বালা পালা করে দিচ্ছে তার মূল হচ্ছে রায়া।কাল বিকেলেই তাদের আগমন ঘটেছে আমার ধমক শুনে আর কথা ফেলতে পারেনি। কাকিমা ও চলে এসেছে কিন্তু নিশাত আসেনি‌। সে নাকি বিয়ের দিন আসবে ফোনে বলেছে।কাকিমা ড্রাইভারের সাথে চলে এসেছে।
আপু সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে বিয়ের। সাথে ভাইয়া কৌশিক। রানী আমাকে দেখেই বলেছে,

“ও নাকি অনেক মিস করেছে আমাকে।”

আদ্র নিজের বাসায় চলে গেছে আসলে যেত না অন্তরা ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে। এটা এখন শশুর বাড়ি হয়ে গেছে বিয়ের আগে ব‌উ এর কাছে থাকা যাবে না। আদ্র গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আমার কিছু বলার আমি নিরব থেকেছি। বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয়েছে সাথে জাইন চলে গিয়ে ওই বাসায়।
কালকে গায়ে হলুদ। আজকে মেহেদী পড়াবে তাই নিয়ে সবাই মিলে একটু আনন্দ করবে। মেহেদী দেওয়ার জন্য আলাদা কোন লোক ঠিক করেনি। আর করবেই কেন আদ্র নিজেই নাকি আমাকে নিজের। ইচ্ছে মতো মেহেদী পড়াবে?
তখনই আশা ফোন করে বলেছে,,

” ভাবি তোমার হাতের অবস্থা খারাপ করে দেবে ভাইয়া দেখো?”

উওর এ আমি শুধু ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুলছি। আমি চাই আদ্রর সমস্ত আবদার পূরণ করতে অনেক তো হলো। আদ্রর ভালোবাসার পাগলামো অনুভব করতে চাই।

অন্তরার চিৎকার এ ছুটে নিচে এলাম। আদ্রর সাথে চেঁচামেচি করছে।
তার মূল কারণ ও কেন এসেছে বিকেলের আগে। আর আদ্রর আমাকে ডাকতে বলছে তাই নিয়ে ঝামেলা করছে আমি নামতেই আদ্রর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোমার দর্জাল বান্ধবী কি ভাবে আমার সাথে ঝগড়া করছে দেখো ব‌উ। আমি নাকি আমার ব‌উ এর সাথে দেখা করতে পারবো না এটা কোন কথা তুমি বলো এতো বড় অন্যায় কি করে মানবো বলোতো।”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না? আদ্রর কথার সাথে সাথে অন্তরা বলে উঠলো,,
“আপনি যাবেন কোন কথা না ও কি বলবে? আর এখন ব‌উ কিনা বাদ দিন দুইদিন পর কোলের উপর বসিয়ে রাইখেন এখন যান।”

কোলের উপর বসিয়েই তো রাখবো সেটা তোমাকে বলতে হবে না আমার ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে। সরো।

কোন সরা সরি নাই দরজা দিয়ে চলে যান এখন। যা দরকার সব বিকেলে মিটায়েন।

আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সার্কাস দেখছি। আর মিটিমিটি হাসছি। অন্তরার সাথে না পেরে আদ্র ফট করেই অন্তরার হাত দিয়ে আগলে রাখ হাতে নিচ দিয়ে মাথা নিচু করে ছুটে আমার কাছে চলে এলো।

অন্তরা চিৎকার করে উঠল,, চিটিং বাজ।

আদ্র আমার হাত ধরে টেনে রুমে এনে দরজা লক করে দিলো।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি কিছু বুঝার চেষ্টা করছি।

এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেন? জীবনে আমাকে দেখো নি যাও রেডি হয়ে আসো।

আদ্রর কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম সাথে রেগে গেলাম,

” কি বললেন আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি?”

আদ্র আমার কথা শুনে মাথা চেপে ধরে বিরক্তিকর চাহনী দিয়ে বলল,
” রেডি হ‌ওনা গো ব‌উ প্লিজ লেট হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা সরি।”

আমি কটমট চোখে তাকিয়ে বলল,
” কোথায় যাবো?”

“গেলেই দেখতে পাবে?”

“আমি যেতে পারব না।”

“কেন?”

‘সবাই কি ভাববে আর অন্তরা এখন আপনার সাথে কোথা ও যেতে দিবে না।”

“ওর কথা বাদ দাও আমি ম্যানেজ করে নেব। প্লিজ।”

আদ্রর অনুরোধ ফেলতে পারলাম না‌।বাইরে থেকে অন্তরা দরজায় টোকা দিয়ে ই যাচ্ছে।
বের হয়ে আদ্র এগিয়ে গিয়ে অন্তরাকে ফিসফিস করে কি যেন বললো আর অন্তরা রাগ কমে গেল যেতেও রাজি হলো আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে রাজি হতেই আদ্র আমার হাত শক্ত করে ধরে মুঠোয় নিয়ে বেরিয়ে এলো।

“আপনি অন্তরাকে কি বললেন ফিসফিস করে? যে এতো সহজে মেনে নিলো।”
আদ্রর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,

“ক‌ই কিছু বলিনি তো।”

“একদম মিথ্যা বলবেন না সত্যি করে বলুন।”

আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুখে দুষ্টু হাসি দিয়ে আমার একদম কাছে চলো এলো আমি হকচকিয়ে ঘাড় পিছিয়ে নিলাম।

“কি হচ্ছে রাস্তায় এমন করছেন কেন?”

“শুনবে না কি বলেছি।”

“সেটা বলার জন্য এতো কাছে আসার কি দরকার?”

“আরে শুনো ওকে বলেছি দুইদিন তো ব‌উয়ের কাছে আসতে পারবো না এখন একটু আমাদের একা সময় কাটাতে দাও। বিকালে তো অনেকে থাকবে তখন কি সবার সামনে রোমান্স করতে পারবো।”

আদ্রর কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম,,
“আপনি সত্যি এসব বলেছেন?”
চরম অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম।

“হুম।”

“আমি আপনার মতো অসভ্য লোকের সাথে যাবনা কোথাও। ছিঃ কি নির্লজ্জ লোক এসবের জন্য এতো কিছু করে বাসার বাইরে আসলেন। অন্তরা কি ভাবছে ছিঃ লজ্জা আমি ওর সামনে মুখ দেখাবো কি করে?”

আদ্রর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বাসায় ভেতরে
আসতে গেলাম।
আদ্র পেছনে থেকে আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে হাঁটতে লাগলো গাড়ির দিকে।

“আরে ছারুন আপনার সাথে যাব না আমি।”

“ইম্পসিবল ব‌উ এই হাত আমি জীবনে ছারতে পারবোনা।”

বলেই হাতের পিঠে চুমু খেলো।
আমি থমকে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্র টেনে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি।

গাড়ি চলছে আদ্র একটু পর পর আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে আমি কিছু বলছি না চুপ করে বসে আছি।
গাড়ি থামতেই বাইরে তাকিয়ে দেখি শপিং মলে এসেছি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি এখানে কেন এলো আদ্র? আমাদের বিয়ের শপিং সব করেছে আদ্রর মা আর আদ্র আমাকে বলেছে। আমাকে বলছিলো আমি না করে দিয়েছি তাদের পছন্দ মত হলেই হবে।
আমাকে আদ্র হবে কিছুর ছবি পাঠিয়েছে‌। গায়ে হলুদের জন্য পিন কালারের লেহেঙ্গা তার উপরে সাদা পাথরের কাজ যা মুক্তর মতো লাগে। জামা ক্রিম তার উপরে সুতার কাজ করা।ওরনা ক্রিম এর মাঝে পিন কাজ করা। ওইটা আশার পছন্দের। ও নাকি ওর ভাবিকে বিভিন্ন রঙের ড্রেস পরাবে সবাই হলুদ পড়ে সেখানে ও পিন কালার চয়েজ করেছে। বৌভাতের জন্য মিষ্টি কালারের শাড়ি যেটা শাশুড়ির পছন্দের। আদ্র নিজের পছন্দের করতে চেয়েছিল কিন্তু মার বিরুদ্ধে যাওয়াটা আমার পছন্দ হয়নি তাই আমি মানা করেছি।
আদ্র বলেছে বিয়ে ড্রেস ওই পছন্দ করবে কাউরোটা হবে না।
বিয়ের ড্রেসটাই দেখি নি ওইপারে কোন পিক দেয়নি আমাকে।

“এখানে কেন এসেছেন?

“চলো” বলেই গাড়ি থেকে নেমে গেল আমাকেও বের করে এনে তিনতলা নিয়ে এলো।আমি বার বার জিজ্ঞেস করছি তা আদ্রর কানেই যাচ্ছে না।
ব্যর্থ হয়ে আদ্রর সাথে এলাম একটা দোকানে এসে লোকটা আদ্রকে দেখেই বলল,

আপনার ড্রেসতো কমপ্লিট স্যার আনবো।

আদ্র হুম বলতেই লোকটা একটা শপিং ব্যাগ এনে দিলো।

কিসের ড্রেস?

বিয়ের ড্রেস!

এটা নেওয়ার জন্য এসেছেন?

হুম।

তাহলে আমাকে কেন আনলেন?

তুমি না এলে এটা পড়াবো কাকে?

মানে।
অবাক হয়ে বললাম।

মানে আমি এখন আমার ব‌উকে এই ড্রেসটা পরিয়ে দেখবো তাকে কতো সুন্দর লাগে বিয়ের দিন তো আগে দেখতে পারবো না তাই আজকে।

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। পাগল হয়েছে এই লোকটা। আমি নিশ্চিত।
আদ্র ড্রেসটা দিয়ে চেন্জিং রুমে নিয়ে এলো।আর ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে বলল,,

“পাঁচ মিনিট এ বের হবে।”

ড্রেস হাতে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্রর সব আবদার মানবো ভেবেছিলাম তাই কিছু বলতেও পারছি না। সব মানতে হচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর ড্রেসটা লাল টকটকে লেহেঙ্গা ওতো গর্জিয়াস না কাসটা হালকা ভার না ওতো। এটা পড়ে আমার একটু ও খারাপ লাগবে না।
লেহেঙ্গা নিচের পাটে ছোট ছোট ফুল ডিজাইন সোনালি ফুলের মাঝে একটা করে পাথর অদ্ভুত পাথর গুলো আর কাচ গুলো এতো টা চকচকে যেন এগুলো সুতো না র্স্বন আর মুক্ত ঝলমল করছে।পুরো লেহেঙ্গা ছোট ছোট ফুল দিয়ে ভড়া আমি ড্রেসটা চেঞ্জ করে দরজা খুললাম। আদ্র এতোক্ষণ কতোবার দরজা ধাক্কা দিয়েছে তার হিসেব নাই‌। আমি খুলতেই বলে উঠলো,

“উফফ এতো সময় কেন লাগে আমি কতোক্ষণ ধরে ধাক্কাচ্ছি দেখছো না?”

বলতে বলতে আমার দিকে তাকিয়ে ওর চোখ স্থির হয়ে গেল। আদ্র হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর চোখে মুখে মুগ্ধতা বিরাজ করছে চোখে পলক পরছে না আমি বলল,

“এখন আপনি এমন হা করে তাকিয়ে আছেন?”
তখন আমাকে বলেছিলেন এখন আমার বলবো‌ হু।

আমার সামনে একটা লাল পরী দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে না থেকে পারা যায় না।

বলতে বলতে আমার কাছে এসে ওরনা টেনে আমার মাথা দিয়ে দিলো।

আমার লাল পরীর মতো ব‌উ।

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি‌।
আদ্র কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

“এই ড্রেসটার কাজ গুলো আলাদা একদম তাইনা। কোন সুতা দিয়ে করেছে বলেন তো?”

এটা তো সুতার কাজ না।

তাহলে?

গুল্ড দিয়ে করা হয়েছে তার আর হিরো বসানো হয়েছে।

কথাটা শুনে আমার চোখ দুটো মার্বেল এর মতো বড় বড় হয়ে গেল।

~~চলবে~~