অতলস্পর্শ পর্ব-১৭

0
507

#অতলস্পর্শ
#পার্ট_১৭
#জান্নাতুল_বিথী

পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে চারদিকে।লিভিংরুমে সবাই বসে আছে।সবাই বলতে আমি কুশান ভাইয়া জিদান ভাইয়া বাবা মা বড় বাবা আর বড় মা।সবাই আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছে।আমার বাবা কুশান ভাইয়ার বাবা মা কে ডেকে এনেছিলো এই বিষয়ে তাদের মতামত জানার জন্য।সব কিছু বড় বাবাকে বলে মাত্রই বাবা থামলো।বড় বাবা চোখ বন্ধ করে বসে আছে।কুশান ভাইয়া ও নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।আর সব চেয়ে বেশি শান্ত ভাবে বসে আছে জিদান ভাইয়া।কথার মাঝে বাবা একটু থেমে বলে…

“আমি এখন চাইছি জিদানের বিয়ের কাজ আগে সম্পন্ন করি।তারপর না হয় জিহার কথা চিন্তা করবো।এখন তাদের অপেক্ষা করতে বলি।”

বাবার প্রথম কথাটা শুনে আমি কিছুটা হেসে দেই।কিন্তু শেষ কথাটা শুনতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।বুঝিনা তাদের অপেক্ষা করানোর কি দরকার আছে।তাদের সামনেই তো পাত্র পক্ষ বসে আছে।তাদের দিকে বুঝি বাবার চোখ যায় না.??হঠাৎ বড় বাবার কথা শুনে আমি চমকে উঠি।উনি বলেন…

“উমমম জিহা মাকে তো আমি ছোট বেলা থেকেই ছিনি।তাই আগেই ভেবেছিলাম তাকে আমাদের থেকে দুরে সরানোর কি আছে। আমার ঘরে একটা ছেলে থাকতে।আমি অনেক আগে থেকেই জিহাকে পূত্র বধু করার কথা চিন্তা করছিলাম কিন্তু তোমাদের বলার সময় হয়ে উঠে নাই।বাট আজ এমন এক সময় বলতে হচ্ছে যেখানে.. কি বলবো আর.??”

বড় বাবার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাই।উনি বাবার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি চোখ নামিয়ে কুশান ভাইয়ার দিকে তাকাই।সেও বড় বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে এই কথা শুনে সে নিজেও অনেকটা অবাক হইছে।বড় বাবার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেও আমার দিকে তাকাতেই আমাকে চোখ মারে।আমি লজ্জায় মাথা নুইয়ে পেলি।বাবা মুখে হাসির রেখা টেনে বলে…

“আরে বাহ ভাইজান আমার সামনে ছেলে থাকতে আমি ওর জন্য ছেলে খুজতে যাচ্ছি কেনো।এটাতো খুব খুশির সংবাদ।আমার কোনো আপত্তি নেই এতে।কিরে জিহা তোর কোনো আপত্তি আছে এতে.??”

বাবার কথা শুনে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।লজ্জায় ইচ্ছে করছে ছুটে পালাতে।লজ্জায় আমি মায়ের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি।হঠাৎ জিদান ভাইয়া বলে উঠে..

“উপপপ বাবা তুমি ওকে জিজ্ঞেস করছো কেনো এতো জনন মানুষের সামনে।আর তাছাড়া ওর কি আপত্তি থাকবে।কুশানের মতো ছেলে খুজে পাওয়া যায় নাকি.???”

যাহ বাবা ভাইয়া আমার মনের কথাটা বলে দিরো।এখন তো ইচ্ছে করছে তাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেতে।বড় বাবা বলে..

“আমি চাইছি জিদান আর কুশানের বিয়ে টা একই দিনে দিতে।তাতে আনন্দটাও দ্বিগুণ হবে।ঝামেলাটাও কম হবে।কি বলো.??? ”

ব্যস এতো টুকু শুনেই আমি উঠে চলে আসি।রুমে এসেই খাটে ছিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি।চোখ বন্ধ করতেই কুশান ভাইয়ার?? হাস্যজ্জ্বল মুখ খানা চোখের উপর ভেসে উঠে।আমি ধড়পড়িয়ে উঠে বসি।জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকি।হঠাৎ কুশান ভাইয়া দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।তাকে দেখেই আমি লজ্জায় মিইয়ে যাই।আমার গাল গুলো রক্তিম আভা ধারন করে।আমি নিচের দিকে তাকানো অবস্থাতেই উনি আমার সামনে এসে হাটুগেড়ে বসে পড়ে।কিন্তু তারপরও আমার তার দিকে তাকানোর সাহস টুকু হয় নাই।ভাইয়া একহাত দিয়ে আমার মুখ খানিকটা উপরে তুলে বলে..

“বউ এভাবে লজ্জা পাবে না প্লিজ।একদম নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না তোমার রক্তিম চেহারা দেখলে।উপপপ ইচ্ছে করছে…”

তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে হঠাৎ আমি উঠে দাড়িয়ে যাই।..

“আ-আপনি এখানে কি করছেন।সবাই লিভিংরুমে বসে আছে আর আ-আপনি কি না এখানে.??”

আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া দাড়িয়ে যায়।এক হাত দিয়ে আমাকে সোজা করে তার দিকে ফিরে দাড় করিয়ে বলে..

“তোর কি মনে হয় আমি তাদের কে ভয় পাই.??তারা কি ভাবলো না ভাবলো তা নিয়ে ভাববার সময় আমার নেই।আমার সবটা সময় শুধু মাত্র আমার বউকে উজাড় করে দিতে চাই।”

“ওই একদম বউ বউ করবেন না।কিসের বউ হুমম এখনো বিয়ে হয় নাই তাহলে আবার কিসের বউ.??”

“বাহ রে তুই শুনলি না বাহিরে বাবা কি বললো চাচ্চু কে.??আর মাত্র দশ দিন পর তুই শুধু আমার হয়ে যাবি।আমার এই সারা হৃদয় জুড়ে শুধু তুই থাকবি।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।এদিক থেকে ওদিকে তাকাতে থাকি।কেমন অস্ততি লাগছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি..

“বড় বাবা হঠাৎ এই সিদ্বান্ত নিলো কেনো.??আপনি কি তাকে কিছু বলছেন.??”

“না তো আমি বাবা কে কি বলবো।বরং আমি যখন শুনলাম তোর কোথাকার রিমন না পিমনের সাথে বিয়ের কথা চলকে তখন দিশেহারা হয়ে পড়ছিলাম।কি থেকে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।ঠিক তখনই বাবা চাচ্চু কে এই কথাটা বলে দিলো।জানিস কতো খুশি হয়ে ছিলাম আমি তখন।??”

কথাটা বলতে বলতে ভাইয়ার চোখের কোনে পানি জমা হয়।কাদছে সে।এটা দেখে আমি চমকে উঠি।ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার পায়ের উপর ভর দিয়ে তার চোখের পানি মুছে দেই আমি।আমার কাজে কুশান ভাইয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।..

“এভাবে কাদছেন কেনো আজিব.??আজ কি কান্না করার মতো কিছু ঘটছে.??”

কথাটা বলতে বলতে আমি পিছিয়ে আসতে নিলে ভাইয়া আমার কোমড় জড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে নেয়।তারপর কানে কানে ফিসফিস করে বলে..

“আরে পাগলী এটা হলো খুশির কান্না।আমার নীল পরী আমার ব্যস্তকুমারী কে কাছে পাওয়া খুশিতে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।চোখের পানি গুলোও না বড্ড অবাধ্য হয়ে গেছে।সে নিজের জন্য না কেদে অন্যের জন্য কাদে।”

তার কথা শুনে আমি লজ্জায় তার বুকে মুখ লুকাই।সেও দুই হাতে আমাকে আগলে নেয়।কিন্তু পরক্ষনে আমার কিছু একটা মনে পড়তেই আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই।আর তার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে বলে…

চলবে