#অতলস্পর্শ
#পার্ট_১৮
#জান্নাতুল_বিথী
আমি ভাইয়ার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে বলি..
“বার বার ভুলে যান কেনো যে আমাদের এখনো বিয়ে হয় নাই।তারপর ও বারবার স্পর্শ করেন কেনো শুনি.??”
আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া ফিক করে হেসে দেয়।আমি তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আর ভাবছি আল্লাহ তাকে কতোটা নিখুত হাতে সৃষ্টি করছে।কি সুন্দর মোহনীয় তার হাসি।আমাকে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে কি জিজ্ঞেস করে।আমি বলি..
“শুনুন ছেলে মানুষকে একদম এতো সুন্দর হতে নেই বুঝলেন.??বেশি সুন্দর হলে আবার সমস্যা বেশি।হারিয়ে ফেলার ভয় থাকে.??”
আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া হাসি থামিয়ে ফেলে।তারপর কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে..
“আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় সত্যি হয় তোর.??”
“হুমমমম অনেক..”
কথাটা শুনে ভাইয়া পিছিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়ায়।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে..
“কাউকে হারিয়ে ফেলার ভয় কেমন তা নিশ্চয় এখন বুঝতে পারছিস।তুই তো মাত্র সেদিন থেকে আমাকে ভালোবাসতে শুরু করছিস।কিন্তু আমি তো সেই ছোট বেলা থেকে তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় পেতাম।সব সময় তোকে একটটু দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে যেতাম।প্রতিটা মুহূর্তেই আমার ভয় হতো যে তুই যদি অন্য কাউকে ভালোবাসিস তাহলে আমার কি হবে।তোকে ছাড়া যে আমার একটা মুহূর্ত চলাও সম্ভব না।”
__________________________________
চারদিকে সব বিয়ের তোড় জোড় শুরু হয়ে গেছে।চৌধুরি পরিবারের দুই ছেলের বিয়ে বলে কথা।সবাই সব দিক দিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে অলরেডি।আমি লজ্জায় কারো দিকে তাকাতেও পারি না।আগে বড় মা দের বাড়িতে যাওয়া আসা করতাম।কিন্তু বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে এখন আর তেমন যাওয়া হয় না।কুশান ভাইয়াকেও অনেকটা এগিয়ে চলা ফেরা করি।সে আমাকে দেখলেই হলো। শুরু করে দিবে আমার বউ আমার বউ বলে।উপপপপ সারাক্ষন তার মুখে এইটা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছি।তাই তাকে যতোটা সম্ভব এগিয়ে চলি।ভাইয়া কিছু বলতে পারে না কারন সেও অনেক ব্যস্ত থাকে এখন।তারপর ও মাঝে মাঝে ফোন করে আমাকে বকা শুনায়।আমার আর কি করার চুপ করে সব বকা আমাকে হজম করতে হয়।আমি রুমে উপুড় হয়ে শুয়ে আছি।হঠাৎ আমার রুমে হুড়মুড় করে নাঈমা আর ফাহিম ঢুকে পড়ে।হঠাৎ ওদের দুজনকে দেখে আমি চমকে যাই।নাঈমা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আজ অনেক দিন পর তাদের সাথে দেখা।বিয়ের আর মাত্র তিন দিন বাকী।তাই আমি আগ বাড়িয়েই তাদের কে আসতে বলছি।এদিকে মিতুও শুরু করে দিছে তাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য।..
“ওই মিতু কোথায় রে.???”
কথাটা বলেই নিজের মাথায় নিজেই ফাটাতে ইচ্ছে করছে।এখন ওরা দুজন শুরু করবে আল্লাহ দিলে।এসব ভাবতে ভাবতেই ফাহিম আমার পিঠে কিল বসিয়ে দিয়ে বলে..
“জিহাইন্না রে তোর মন দেখছি সারাদিন জিজুর কাছে পড়ে থাকে।বাপ্রে বাপ আমার মতো একটা এতিম বিধবা ছেলেকে রেখে তুই বিয়ের পিড়িতে কিভাবে বসবি.??”
ফাহিমের কথা শুনে আমরা হুহা করে হেসে দেই।নাঈমা বলে..
“কিরে ফাহিম তুই আবার বিধবা হয়ে গেলি কোন দিন।তুই বিয়েও করে নিলি..??শুনলাম মেয়েদের স্বামী মারা গেলে তাদের বিধবা বলে।তুই তোর লিঙ্গ পরিবর্তন করলি আবার কোন দিন.??”
নাঈমার কথা শুনে ফাহিম ফুসে উঠে।তারপর শুরু হয় তাদের দুই জনের ঝগড়া।তাদের ঝগড়া দেখে আমি হাসতেছি।হঠাৎ নাঈমার ফোন বেজে উঠতেই সবাই চমকে উঠি।মিতু ভিডিও কল দিছে।এবার আমরা কল রিসিভ করে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে তিন জন মিলে অনেক মজা করি।মিতু কিছুক্ষণ কথা বলে রাগে ফুসতে ফুসতে ফোন কেটে দেয়।ও ফোন কেটে দিতেই আমরা তিনজন হো হো করে হেসে দেই।তারপর আমি উঠে গিয়ে ফাহিমকে তার রুম দেখিয়ে দেই।আসার পথে হঠাৎ কুশান ভাইয়ার ডাক শুনে আমি চমকে উঠি।কুশান ভাইয়া আমাকে দ্বিতীয় বার ডেকে ছাদে যেতে বলে।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।এতো দিন তো ভাইয়া আমাকে ফোন করে ধমক দিতো।কিন্তু এখন যদি থাপ্পড় দেয় তাহলে আমার কি হবে.??কথাটা ভাবতে ভাবতেই আমার গালে হাত চলে যায়।আমি গালে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ছাদে যাই।গিয়ে দেখি ভাইয়া রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি দরজার সামনে দাড়িয়েই ভয়ে ভয়ে বলি…
“কুশান ভাইয়া কিছু ক-কিছু কি বলবেন.???”
আমার কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে রাগী লুকে তাকায়।ব্যস এতো টুকুই দেখার বাকী ছিলো।ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে নেই।ভাইয়া কিছুটা রাগী স্বরে বলে..
“কাছে আয়…?”
আমি এক চোখ খুলে ভাইয়ার দিকে তাকাই।এখনো রেগে আছে।না গেলে সত্যিই থাপ্পড় দিয়ে দিবে।ভেবে চোখ বন্ধ করে তার দিকে এগিয়ে যাই।ভাইয়ার সামনে দাড়াতেই সে বলে..
“দুদিন পর বিয়ে এখনো কিসের ভাইয়া ভাইয়া করিস.??”
……………….
“আমার সাথে দেখা করিস না কেনো।ইগনোর করিস কেনো আমাকে.??”
…………………
“জিহু কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি তোকে.??”
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই জিদান ভাইয়া পেছন থেকে বলে..
“জিহু মা ডাকছে তোকে।তাড়াতাড়ি যেতে বলছে…”
ব্যস আর কি লাগে আমার।আমি কুশান ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে ছাদ থেকে চলে আসি।জিহা যাওয়ার পর কুশান বলে..
,
কুশান,,,,,
“এটা কি হলো জিদান।মাত্রই কথা বলা শুরু করলাম।”
“বাহ রে আমারই সামনে আমাদের বাড়িতে আমার বোনের সাথে তুই প্রেম করবি তা আমি মেনে নিবো কি করে।কন্ট্রোল ব্রো।এই আমাকে দেখ।তিনদিন পর বিয়ে কিন্তু হবু বউকে সেই কোন দিন দেখেছি মনে নেই।আর তো মাত্র তিনদিন তারপর তুই তোর বউয়ের সাথে ইচ্ছে মতো কথা বলিস আমি কিছুই বলবো না.??”
“ওহহহহ রিয়েলি তাহলে তার আগে নিজের বোনকে আমার সাথে একা ঘুরতে পাঠাতি কেনো.??তখন বুঝি এতো এতো নিয়ম ছিলো না.??”
“এতোদিন বাড়িতে কোনো মেহমান ছিলো না তাই ঘুরতে সমস্যা হয় নাই।এখন কেউ দেখলে প্রবলেম টা তোরই হবে আমার না।”
জিদানের কথা শুনে আমি হেসে দেই।একমাত্র এই একটা ছেলে যে কখনো আমার খারাপ চাইবে না।এই ছেলেটার জন্য নিজের প্রান দিতেও দ্বিধাবোধ করবো না।এতোটা ভালোবাসি তাকে।..
“বাবাকে বিয়ের ব্যাপারে তুই রাজি করিয়েছিস তাই না.??”
#চলবে