#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_____________১৯
।
।
।
।
বিভোরের কথার উওরে কুহু লজ্জায় লাল হয় মুখে লাজুক হাসি বজায় রেখে, মাথা নিচু করে ফেলল।বিভোর কুহুর এমন টমেটোর মতো ফেস দেখে মুচকি হাসলো।কুহু বলল,ঘুমাতে যাওয়া দরকার।বিভোর বলল,হুম যাও।কুহু উঠে রুমের ভিতরে ঢুকে পড়লো,তারপর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো আর ভাবতে লাগল সব কিছু এত সুন্দর লাগছে কেন, এই ভালো লাগা আনন্দ, সুখ শান্তি মনে হয় দীর্ঘ দিন পাই নিই।কুহু বুঝতে পারলো বিভোর রুমে চলে এসেছে।
কুহু পিছনে ঘুরে দেখে বিভোর সোফায় শুয়ে পড়েছে, কুহু বলে উঠল, আপনি চাইলে বেডে শুতে পারেন।বলেই কুহু লজ্জায় একাকার।কুহুর কথা শুনে বিভোর মুচকি হেসে, বিছানায় গিয়ে কুহুর পাশে শুয়ে পড়লো,বিভোর পাশে শুতেই কুহুর হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেলো।কুহু চোখ বন্ধ করে রাখলো।
ভোরের মিষ্টি আলো বিভোরের চোখে পড়তেই বিভোর চোখ খুলে তাকালো,হঠাৎ বিভোরের চোখ পড়লো নিজের বুকের উপর, বিভোরের বুকের সাথে কুহু লেপ্টে আছে।ঘুমন্ত অবস্থায় কুহুকে বড্ড মায়াবী লাগছে বিভোরের কাছে।বিভোর কুহুর ঘুমটা নষ্ট করলো না, নিজেও আগের ন্যায় শুয়ে রইলো।
কুহুর ঘুম ভাঙ্গতে দেখে বিভোর চোখ বন্ধ করে ফেলল,মিছে ঘুমের ভান করলো,কুহুর চোখ খুলে দেখে সে বিভোরের বুকে শোয়া এটা দেখে কুহু ভিশন অবাক হলো সাথে লজ্জাও কুহুকে ঘিরে ধরলো,কুহু বিভোরের বুক থেকে উঠে পড়লো,তারপর বিভোরের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো বিভোর জেগে আছে নাকি।বিভোরকে ঘুমাতে দেখে কুহু মনে মনে সস্তি পেল,মুচকি হেসে বিভোরের দিকে তাকালো। তাকিয়ে একা একা বলতে লাগল,আপনি এত কিউট কেন ইচ্ছে করছে টুপ করে ওই গালে চুমু খেয়ে নিতে।
কুহুর কথা শুনে বিভোর মনে মনে হাসলো,কুহু টুপ করে বিভোরের গালে চুমু খেল,সাথে সাথে বিভোর চোখ খুলে তাকালো,কুহু অবাক হয়ে বলল,আপনি জেগে ছিলেন ভিশন পাজি লোক তো আপনি।বিভোর কুহুকে টান দিয়ে নিজের বুকে নিয়ে এসে বলল,কি বললে আমি পাজি।
কুহু বলল,হুম। বিভোর বলল,তাহলে মাএ যে তুমি আমাকে চুমু খেলে সেটা কি।সাথে সাথে কুহুর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
কুহু লাজুক এক হাসি দিয়ে বিভোরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল,বিভোর কুহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,আমার লজ্জাবতী পাগলী টা।
কুহু ওয়াসরুমে যেতেই বিভোরের ফোন বেজে উঠল, বিভোর ফোন কল রিসিভ করে বলল,
– হ্যালো কে বলছেন
– বিব,বিভোর তুমি বিয়ে করেছো, কক,কিভাবে পারলে বিভোর [কান্না করতে করতে বল মিমি]
– মিমি প্লিজ আর এমন কর না
– আআ,আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি বিভোর , সত্যি বলছি তত,তোমাকে খুব ভালোবাসি
– মিমি প্লিজ জাস্ট স্টপ ইট আমি তোমাকে ভালোবাসি না
– তুমি কীভাবে বিয়ে করলে বিভোর
– আমাকে রাগীও না মিমি, নিজেকে সামলাও আর লাইফে মুভ অন কর।
– আমার তোমাকে চাই বিভোর, তোমার ভালোবাসা চাই
– এইসব কথা আর বলবে না আর আমাকে ফোনও করবে না, আমি আমার ওয়াইফকে খুব ভালোবাসি, ও যদি জানে তুমি এখনো আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছো, ও খুব কষ্ট পাবে আর আমি ওকে একটুও কষ্ট দিতে চাই না।
– ওই মেয়ে কে, তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলো
– জাস্ট শাটআপ মিমি
– বিভোর একবার বল না তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমার মিথ্যে শান্তনার জন্য হলেও বল
– আর কল করবে না আমাকে মিমি
বলেই ফোন কেটে দিল বিভোর, মেজাজটা সাথে সাথে খারাপ হয়ে গেল,বিভোর পিছনে তাকিয়ে দেখলো কুহু দাড়িয়ে আছে, কুহুর মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে,বিভোর বুঝতে পারলো সব কথা কুহু শুনেছে।বিভোর কুহুকে বলল,কুহু তুমি কখন বের হলে মাএই তো গেলে।কুহু বলল,আসলে টাওয়েল নিতে ভুলে গিয়ে ছিলাম ওইটাই নিতে এসে ছিলাম।বিভোর বলল,ওহ তো নিয়ে নেও।কুহু বলল,মিমি আপু এখনো আপনাকে কল করে।বিভোর নিজেকে সাভাবিক করে বলল,আগে তো বলে ছিলাম মিমি প্রায় সময় কল করে।কুহু জ্বলজ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,আপনি এখনো ভালোবাসেন উনাকে।
কুহু মনে হয় এখনিই কেদে ফেলবে, বিভোর কুহুর এমন করুণ দৃষ্টি দেখে হেসে ফেলল,তারপর কুহুর কাছে গিয়ে কুহুকে জরিয়ে ধরে বলল,আরে না পাগলী আমি আমার এই মিষ্টি বউটাকে ভালোবাসি আর সারাটা জীবন তাকে ভালোবাসতে চাই আর সামান্য একটা বিষয়ে চোখে পানি চলে আসলো, তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না কখনো কাদবে না বুঝেছো।কুহু বলল,হুম।বিভোর ভ্রু কুচকে বলল, মুখে হাসি কোথায়। বিভোরের কথা শুনে কুহু হেসে উঠলো।
কুহু শাওয়ার নিয়ে এসে আয়নার সামনে চুল মুছ ছিল,পিছনেই সোফায় বিভোর বসে ছিল,কুহুকে দেখে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে কুহুর চুলে মুখ গুজে ফেলল,বিভোরের উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে কুহু কেপে উঠলো, সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল,তারপর কাপা কাপা কন্ঠে বলল,আপনি অফিসে যান নিই।বিভোর মুখ গুজে রেখে বলল,না আজ যাব না। কুহু বলল,কেন যাবেন না।বিভোর বলল,আমার ইচ্ছে যাব না। কুহু বলল,আ…
আর কিছু বলার আগে বিভোর কুহুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,শিশশ কোনো কথা না। কুহু চুপ হয়ে রইলো,বিভোর কুহুর কোমড় টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো,কুহুর বুকে কেউ মনে হয় হাতুড়ি পিটাচ্ছে,বিভোর কুহুর মুখের দিকে অগ্রসর হতে লাগল,
হঠাৎ দরজায় কেউ টক্কা দিতেই বিভোর কুহুকে ছেড়ে দেয়,দুজনই দরজার দিকে তাকায়, বিভোর চরম মাএ রায় বিরক্ত হয়ে বলল,ডিস্টার্ব করার আর সময় পায় না।বিভোরের এমন ফেস দেখে কুহু ঠোট টিপে হেসে উঠলো,বিভোর কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,খুব হাসি পাচ্ছে তাই না হিসাব তোলা রইলো। সেকেন্ডের মধ্যে কুহুর মুখের হাসি উধাও, বিভোর বাকা হেসে চলে গেল।
ব্রেকফাস্ট করতে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসলো,কুহু খেয়াল করলো,লিজা নেই।কুহু বলল,লিজা আপু কোথায় কাল থেকে দেখছি না।ওর দাদু বলল,লিজা রুমে আছে মেয়েটা রুম থেকে বেরই হচ্ছে না খাবারও খাচ্ছে না।কুহু বলল,আমি ডেকে নিয়ে আসি।বিভোর বলল,তোমার যাওয়ার দরকার নেই আমি ডেকে আনছি।ওর দাদু বলল,হুম তুই যা নইলে দেখা গেল কুহুর সাথে খারাপ আচরণ করে বসলো।
বিভোর লিজার রুমে কাছে গিয়ে বলল,লিজা এই লিজা কোথায় তুই নিচে আয় সবাই এক সাথে খাব।লিজা ভিতর থেকে বলল,আমি খাব না তুমি চলে যাও।বিভোর বলল,সত্যি চলে যাব। লিজা বলল,হুম।বিভোর বলল,আচ্ছা দরজাটা খোল একবার ।লিজা গিয়ে দরজা খুললো, বিভোর লিজার দিকে তাকিয়ে বলল,কি হাল করেছিস নিজের।
লিজা কিছু না বলে মাথা নিচু করে রেখেছে।বিভোর বলল,দেখি আমার দিকে তাকা।লিজা মুখ তুলে তাকালো,চোখ দুটু ফুলে লাল হয়ে আছে। বিভোর লিজার হাত ধরে বিছানায় বসালো,তারপর বলল,আমার দিকে তাকা।লিজা কিছু বলল না।বিভোর আবার বলল,কিরে চুপ হয় আছিস কেন।লিজা মিনমিন করে বলল,বিভোর ভাইয়া আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। বিভোর বলল,দেখ আমি কি কখনো তোকে কোনো ইশারা করেছি বা আমার কোনো বিহেভিয়ারে তোর মনে হয়েছে তোর প্রতি আমার কোনো অনুভূতি আছে।লিজা বলল, না।
বিভোর বলল,তোকে তো আমি ভালোবাসি কিন্তু ছোট বোন হিসেবে বুঝেছিস।লিজা বলল,হুম।
বিভোর মুচকি হেসে বলল,এই তো লক্ষী মেয়ে এখন চল আমাদের সাথে খেতে বসবি।লিজা বলল,কুহু দরজার ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন ভিতরে আসো।
কুহু আতকে উঠললো, তারপর ছোট ছোট পা ফেলে ভিতরে ঢুকলো, তারপর বল,লিজা আপু নিচে খেতে আসুন।লিজা বলল,হুম আমি তোমাকে ভাবী বলতে পারব না তুমি আমার থেকে অনেক ছোট। কুহু মুচকি হেসে বলল,ঠিক আছে।বিভোর বলল,চল এবার। লিজা উঠে পড়লো তারপর বলল,আরেক টা কথা কুহু। কুহু বলল,জ্বি। লিজা বলল,আই এম সরি ফর এভ্যারিথিং।কুহু বলল,ইটস ওকে।
দাদুর সাথে কথা শেষ করে রাতে কুহু রুমে এসে দেখে বিভোর ওর কাপড়চোপড় ব্যাগে ঢোকাচ্ছে, কুহু অবাক হয়ে গেল,বিভোর এইসব কি করছে রুম ছেড়ে চলে যাচ্ছে কিন্তু কেন?
আমি কি কিছু করেছি,আমার তো মনে পড়ছে না,কুহুর মনে বিভোরকে হারিয়ে ফেলার ভয় লাফালাফি করছে,কুহু চিন্তিত হয়ে বিভোরের সামনে গিয়ে বলল,আপনি এইসব করছেন কেন?বিভোর একবার তাকিয়ে দ্বিতীয় বার আবার ব্যাগ গুচ্ছাতে গুচ্ছাতে বলল,এখানে আর থাকবো না।বিভোরের কথা শুনে কুহু ভয়ে আতকে উঠলো তা।
চলবে……..
ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙