অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-২৮ এবং শেষ

0
1346

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট____২৮[ শেষ পর্ব ]




কুহু মিটমিট করে চোখ খুললো,চোখে খুলে দেখলো বিভোর সামনে বসা মাথা নিচু করে রয়েছে, কুহু ধিরে ধিরে হাত উচু করে বিভোরের হাতে হাত দিল,বিভোর সাথে সাথে কুহুর দিকে তাকালো,বিভোরের মুখ সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, চোখ দিয়ে পড়তে লাগল আনন্দের অশ্রু গুলো,কুহুর দু গালে হাত দিয়ে পাগলের মতো পুরো মুখে চুমু খেতে লাগল।তারপর কুহুর কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে কিছুখন চোখ বন্ধ করে রাখলো।

বেশ কিছুখন চুপ করে থেকে বিভোর বলল,ভালোবাসি খুব খুব ভালোবাসি। কুহু মুখে মিষ্টি হাসি টেনে বলল,আআ আমিও ভালোবাসি।
হোস্পিটালে অনেক দিন থেকে কুহুকে নিয়ে বাড়ি ফিরার উদ্দেশ্যে বের হলো বিভোর, মাঝ রাস্তায় কুহু হঠাৎ চিল্লিয়ে বলল,গাড়ি থামানননননননননননন।বিভোর সাথে সাথে ব্রেক করলো, ঘাবড়ে কুহুকে বলল,কি হয়েছে কুহু তোমার কষ্ট হচ্ছে। কুহু বলল, না আসলে ওই দেখেন সামনে একটা আইসক্রিম এর ভেন আছে আমি আইসক্রিম খাবো।বিভোর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তারপর বলল,তাই বলে কেই এত জোরে চেচায় আল্লাহ এর মাথায় একটু বুদ্ধি দিয়ে দেও।

কুহু ভ্রু কুচকে বলল,এইসব বাদ দিয়ে আইসক্রিম আনবেন।বিভোর বলল,যাচ্ছি ম্যাডাম।

বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে বিভোর কুহুকে কোলে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো, বিভোর কুহুকে নিয়ে রুমে ঢুকতেই কুহু অবাক হয়ে গেল,তারপর বলল,আজ কারও বাসর রাত নাকি এত সাজানো কেন রুম।বিভোর মুচকি হেসে বলল,হুম বাসর রাত তোমার আর আমার।
কুহু লাজুক হেসে বলল,যান। বিভোর বলল, কোথায় আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।কুহু বলল,আর আমি যেতেও দেব না।

বিভোর কুহুকে বিছানায় বসিয়ে বলল,তোমার শরীর এখন কেমন লাগছে।কুহু বলল,ভালো এখন আরও ভালো লাগবে বাড়ীতে চলে এসেছি যে।বিভোর বলল,রাত হয়েছে অনেক এখন খাওয়ার সময়।
বলে বিভোর বাহিরে চলে গেল,আর কুহু চারপাশ দেখতে লাগল, কি অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে রুমটা।এর মাঝে বিভোর খাবার নিয়ে আসলো, কুহুকে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিল।

বিভোর কুহুকে কোলে নিয়ে বারান্দায় গেল,কুহুকে চেয়ারে বসিয়ে বিভোর বসলো,কুহু বিভোরের এক হাত জরিয়ে ধরে বিভোরের কাধে মাথা রেখে বলল,এই ভাবে থাকলে আমার খুব শান্তি লাগে।বিভোর বলল,তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না এত গুলো দিন কতটা ভয়ে ছিলাম মনে হচ্ছিল তোমাকে হারিয়ে না ফেলি। কুহু মুচকি হেসে হাত আর শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,
– আপনাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব
– হুম
– আচ্ছা চাচার কি অবস্থা উনি সুস্থ তো
– হুম আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো, উনার অবস্থা ও খুব খারাপ ছিল।
– হুম
– আর মাহমুদ ও জেলে
– কি?? কিন্তু কেন, আমাদের গাড়ির তো ব্রেক ফেল হয়ে ছিল।
– না, এটা করানো হয়েছে মাহমুদ করিয়েছে
– কিভাবে জানলেন
– সবাই নরমাল এক্সিডেন্ট ভাবলেও আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না আমাদের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা আছে তা তো তুমি জানো
– হুম তারপর
– গাড়ি পার্ক করার ওখানেও সিসি ক্যামেরা ছিল, আমি চেক করে দেখি একটা ছেলে গাড়ি নিচ থেকে বেড়িয়ে দেয়াল টপকে অপাশে চলে যায় তারপর পুলিশ নিয়ে অনেক খোজ করার পর ছেলেটাকে খুজে পেলাম, জিজ্ঞেস করার পর প্রথমে বলতে চাইলো না তারপর কত গুলো লাঠি পিটাই করার পর বলে দিল মাহমুদ করিয়েছে, প্রমাণ সহ মাহমুদ কে ধরতে পুলিশ যায় কিন্তু তার আগেই ও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু এয়ারপোর্টে গিয়ে ওকে ধরে ফেলে।
– উনি কত ভয়ঙ্কর আচ্ছা উনার এত কিসের প্রবলেম আপনার সাথে
– আসলে আমরা ছোট থেকে বন্ধু, ভার্সিটি লাইফে ও একটা মেয়েকে পাগলের মতো ভালোবাসতো কিন্তু ওই মেয়ে ওকে না করে দেয় কারণ ওই মেয়েটা আমাকে ভালোবাসতো,কিন্তু ওই মেয়েটা আমাকে বলার পর আমি না করে দেই, তখন থেকে মাহমুদ আমাকে অপছন্দ করা শুরু করে, কিন্তু প্রকাশ করে নিই কিন্তু সময় বুঝে ক্ষতি করে বসে,তাও বেশী একটা গায়ে লাগায় নিই ওর সাথে মিশেছি কিন্তু যখন ও মিমিকে কেড়ে নিয়ে আমাকে অনেক কিছু বলেছে, ওর নাকি শান্তি লাগছিল আমাকে ওমন কষ্ট পেতে দেখে।তখন থেকে কোনো কথা হয় না তারপর তোমার সাথে ওই দিন গিয়ে দেখি ও, কিন্তু ও যে এমন ভয়ঙ্কর কিছু করার পরিকল্পনায় ছিল আমি ভাবতেও পারি নিই, তাই এবার ছাড় দেই নিই।

কুহু বুঝতে পারলো বিভোরের মন খারাপ হয়ে গেছে,কুহু তাই এই কথাটাকে বাদ দিয়ে বলল,আচ্ছা আমাদের কবে বেবি হবে আমি তো সেই কত গুলো বছর ধরে বলছি কিন্তু আপনি তো শুধু নাই করছেন।বিভোর মুচকি হেসে বলল,
– হুম আমারও মনে হয় আমাদের ছোট সংসারে একজন ছোট সদস্যের আসার দরকার
– সত্যি বলছে
– তিন সত্যি
– ইয়েয়য়য়, আচ্ছা আয়াশ কেমন আছে
– ভালো কাল তো দৌড়ে চলে আসবে, শুধু পাকা পাকা কথা বলে
– হিহিহি আচ্ছা দাদু কবে আবার আসবে
– দাদু বলেছে এই মাসের ভিতরে আসার চেষ্টা করবে
– তাহলে তো খুব ভালো
– হুম তোমার পায়ের ব্যথা কেমন
– এখন তো একটু নাড়াতে পারি
– হুম উন্নতি হচ্ছে
– আচ্ছা আমাদের কত গুলো হবে
– কি হবে?
– আরে বেবি
– তোমার ইচ্ছে কি
– ফুটবল টিম বানাবো
– তুমি পারবে তোমার ধারা সম্ভব না
– কি বললেন
– হাহহাহাহা কুহু তুমি রাগলে না আর কিউট লাগে হাহাহা বাচ্চাদের মতো গাল ফুলাও পুরো হাহাহা
– আপনি হাসলে না আমার কলিজায় গিয়ে লাগে এত সুন্দর করে হাসেন কিভাবে
– তাই বুঝি, তাহলে ভাবো আমার কেমন লাগে যখন তুমি কিউট কিউট কান্ড ঘটাও
– কি করলাম
– দেখাচ্ছি

——————————– ২ বছর পর ———————————-

বিভোর ধির পায়ে কেবিনে গেল, বেডে কুহু আধ শোয়া হয়ে বসে আছে আর কোলে একটা বাচ্চা, বিভোরের মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো,কুহু বিভোরকে দেখে মুচকি হাসলো।বিভোর কুহু কাছে গিয়ে কুহুর কপালে ঠোট ছোয়ালো তারপর বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে বিভোরের মন শিতল হয়ে গেল,কি মায়া ভরা মুখ এই ছোট নিষ্পাপ বাচ্চাটার বাবা বিভোর,বিভোর আলতো করে বাচ্চাটার হাতে নিজের এক আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করলো যেনো ধরলে ব্যথা পাবে বাচ্চাটা।কুহু এটা দেখে মুচকি হেসে বলল,আপনার মেয়েকে আপনি কোলে নিন।

বিভোর খুব সাবধানে বাচ্চাটাকে কোলে নিলো,তারপর আলতো করে কপালে একটা চুমু খেল, খুশিতে বিভোরের চোখে পানি গুলো মুক্তের মতো চকচক করছে,বাবা হবার সুখ এতটা আনন্দের জানা ছিল না।
বিভোর কুহুর দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল,এই সুখটা ওর জন্য উপলব্ধি করতে পারছি কতটা যন্রণা সহ্য করে আমাকে এই সুখটা দিয়েছে, বিভোর কুহুর পাশে বসে বাচ্চাটাকে কুহুর কোলে দিল,তারপর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল,ভালোবাসি।কুহুও মুচকি হেসে বলল,ভালোবাসি।

এর মাঝে আকাশ বিভা আর আয়াশ কেবিনে ঢুকলো,কুহু সবাইকে দেখে কুহুর ঠোটে এক রাজ্য হাসি ফুটে উঠলো।বিভা বলল,কুহু তুমি ঠিক আছো।কুহু মুচকি হেসে বলল,হুম ঠিক আছি।আকাশ বিভোরকে হাগ করে বলল,অভিনন্দন বন্ধু। ছোট আয়াশ কখন থেকে কুহুর কোলে বাচ্চাটাকে দেখেই চলেছে, চোখের চশমা ঠিক করে কুহুকে বলল,মিষ্টি মা।
কুহু বলল,কি হয়েছে বাবা।আয়াশ বলল,তোমার মেয়েটা অনেক সুন্দর দেখতে আমি ওকে বিয়ে করব।আয়াশের কথা শুনে সবাই অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো।

ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙

★★★★★★ সমাপ্ত ★★★★★★