#অদ্ভুত_পূর্ণতা
writer – তানিশা
part – 3
— নীলা আর তানিশা সামনে তাকিয়ে দেখে তারা সত্যি মেলায় চলে এসেছে। ঝগড়া করতে করতে কখন যে মেলায় চলে এসেছে সেদিকে খেয়াল করেনি। গাড়ি থেকে নেমে দুজনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য গাড়ি পার্ক করে তাদেরকে নিয়ে ভিতরে চলে এসেছে। নীলা তানিশা যে যার মতো করে জিনিসপত্র কিনছে আর কাব্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে,,,
তানিশা : চুড়ি গুলো খুব সুন্দর তাইনা?
নীলা : হ্যা,, আর কত চুড়ি কিনবি?
তানিশা : ভাললাগার জিনিশ গুলো সবসময় নিয়ে নিতে হয়। সবকিছু সবার জন্য প্রযোজ্য থাকেনা। নয়তো অন্য কেউ এসে নিয়ে চলে যাবে। তখন হাজার চেষ্টা করেও ভাললাগার জিনিশ গুলো নিজের করতে পারবো না। তাই সময় থাকতে নিজের জিনিশটা নিজের করে নেয়াই ভালো। ( চুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে )
নীলা : হয়েছে,, এতো উপদেশ দিতে হবেনা।
তানিশা : উপদেশ দিলাম কই?
নীলা : উপদেশ দাওনি? ও আচ্ছা তুমি তো ভাষণ দিচ্ছো তাইনা? হুহ,, ( মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে )
তানিশা : চুপ, একদম চুপ থাকবি শাঁকচুন্নি কোথাকার। আচ্ছা ভাইয়া আমি কি কিছু ভুল বলছি? ( কাব্যর দিকে তাকিয়ে )
কাব্য : না, তবে সেটা যদি ভাললাগার মানুষের ক্ষেত্রে হয় তখন?
তানিশা : ভাললাগার মানুষটাকে ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখবেন।
— বলেই তানিশা চুড়ি গুলো দাম কারতে লাগলো। কাব্য মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে আছে তার মায়াবতীর দিকে। মাঝেমাঝে তানিশার কিছু কথায় কাব্য সত্যি মুগ্ধ হয়ে যায়। তানিশার হাত থেকে চুড়ি গুলো নিয়ে কাব্য নিজেই বিল মিটিয়ে দিলো। তার মাঝে হঠাৎ করে নীলার ফোনটা বেজে উঠলো। নীলা কল রিসিভ করে ফোনে কথা বলা শেষ হলে, কাব্যকে বলল,,,
নীলা : ভাইয়া আমার একটা important.. কাজ আছে, আমাকে এক্ষণ যেতে হবে।
কাব্য : এখন? কিন্তু তুই তো মেলায় ঘুরতে এসে ছিলি।
নীলা : ভাইয়া আমি নাহয় কালকে আবার আসবো, আজকে যেতে হবে।
তানিশা : কোথায় যাবি তুই?
নীলা : বললাম তো একটা important… কাজ আছে তুই ভাইয়ার সাথে থাক।
তানিশা : কিন্তু,, ( বলতে গিয়ে থেমে গেলো )
নীলা : আচ্ছা বাই।
কাব্য : ওকে।
— নীলা মেলার বাহিরে চলে এসেছে, ফোনটা হাতে নিয়ে মিটমিট হাসতে হাসতে তার ভাইকে কল করেছে। কাব্যর ফোনে রিংটোন বেজে উঠতেই কিছুটা চিন্তিত হয়ে কল রিসিভ করে বলল,,,
কাব্য : কি হয়েছে নীলা? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
নীলা : ভাইয়া শান্ত হও আমার কিছু হয়নি।
কাব্য : তাহলে?
নীলা : all the best… ভাইয়া সারাদিন ঘুরে ফিরে enjoy করো। তোমার জন্য শুভকামনা রইলো। ( হাসি দিয়ে )
কাব্য : মানে? ( অবাক হয়ে )
নীলা : মানে তোমরা দুজন একান্তে কিছুটা সময় কাটাও। তানিশাকেও তো তোমাকে একটু বুঝতে দাও। দুজনের মাঝে understanding… ভাল হলে তখনি তো সম্পর্কটা সামনে এগিয়ে যাবে।
কাব্য : thanks…
— কলটা কেটে কাব্য মিটমিট হাসছে আর ভাবছে, নীলার মতো একটা বোন থাকলে পৃথিবীতে আর কি লাগে। কাব্যকে এভাবে হাসতে দেখে তানিশা বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া আপনি হাসছেন কেন?
কাব্য : এমনি। আচ্ছা তুমি যে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকো, আমাকে কি দেখতে ভাইয়া টাইপের মনে হয়?
তানিশা : না,, তো। আপনাকে দেখতে পুরাই মাদ্রাজি হিরোদের মতো লাগে। যেগুলো ইয়া লম্বা তরোয়াল হাতে নিয়ে কারো মাথা কাটে, কারো হাত, পা কাটে। যারা মারপিট, কোপাকোপি, কাটাকাটি, হানাহনি করা ছাড়া কিছুই বুঝেনা। আপনাকে ঠিক তাদের মতোই লাগে। ( একগাল হেসে )
— তানিশার কথা শুনে কাব্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে একবার ভাল করে নিজের দিকে তাকালো। কোনদিকে থেকে তাকে এমন মনে হচ্ছে বুঝতে পারছেনা। কাব্য অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,
কাব্য : হিরো নাহয় ভিলেন ডাকলেই পারো। ভাইয়া ডাকার কি দরকার??
তানিশা : কারণ আপনি নীলার ভাইয়া।
কাব্য : মনে করো আমি নীলার ভাইয়া না। অন্য কেউ এখন কি বলে ডাকবা? ( ভ্রু কুচকে )
তানিশা : ভাইয়া বলেই ডাকবো।
কাব্য : কেন?
তানিশা : আপনি মনে হয় বললে তো আর সত্যিটা বদলে যাবেনা।
কাব্য : আমি নীলার ভাই, তোমার না। তুমি আমাকে ভাইয়া ডাকবে না।
তানিশা : তো কি বলে ডাকবো?
কাব্য : তুমি আমার নাম ধরে ডাকো।
তানিশা : ভাইয়া নীলার মতো দেখি আপনিও অর্ধেক পাগলা হয়ে গেছেন। বড় ভাইয়াদের দেখছেন কেউ কখনো নাম ধরে ডাকতে? আল্লাহ এতো বড় পাপ কাজ আমি কিভাবে করবো? নাউজুবিল্লা। আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করো। ( চোখদুটি বন্ধ করে )
কাব্য : সমস্যা নেই, তোমার পাপ করার দরকার নেই, তুমি ভাইয়া বলেই ডাকো। বিয়ের পর না ডাকলেই হলো।
তানিশা : মানে?
কাব্য : কিছুনা,, চলো।
— কথাটা বলেই কাব্য তানিশার হাত ধরে সামনে এগুতে লাগলো,,,
তানিশা : ভাইয়া আমার হাত ছাড়েন।
কাব্য : ছেড়ে দিলে যদি হাড়িয়ে যাও?
তানিশা : আমি ছোট নাকি? যে হারিয়ে যাবো?
কাব্য : সেটা তুমি বুঝবে না, চলো তো।
— কাব্য তানিশার হাত ধরে মেলায় ঘুরছে, এটা ওটা কিনছে। ভালই কাটছে তানিশার সাথে কাব্যর সময়টা। কখন যে দুপুর হয়ে গেছে সেদিকে খেয়াল করেনি। মেলা থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের লাঞ্চ সেরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো অন্য গন্তব্যে। কেমন যেন রাস্তাটা অপরিচিত মনে হচ্ছে তানিশার কাছে। তাই সে কাব্যকে বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি?
কাব্য : তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো। জায়গাটা অনেক সুন্দর।
তানিশা : ভালই হয়েছে, বাসা থেকে তেমন কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনা, মামনি দেয়না।
কাব্য : তুমি চাইলে মাঝেমধ্যে আমার সাথে সপ্তাহে একবার যেকোনো জায়গা ঘুরতে যেতে পারো।
তানিশা : মামনি দিবে না ( মন খারাপ করে )
কাব্য : সমস্যা নেই, বিয়ের পরে ঘুরবা।
তানিশা : বিয়েটা কবে হবে? সেই অপেক্ষা করতে করতে মনে হয় আমি বুড়ি হয়ে যাবো। বিয়ের বয়স চলে যাচ্ছে, অথচ আমার বিয়ে নিয়ে মামনির কোনো টেনশন নেই। ( হতাশ হয়ে )
— কাব্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। সবেমাত্র এই মেয়ে ১৮ তে পা দিয়েছে আর ও বলছে, ওর বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। কথাটা শুনে কাব্যর প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। তবুও নিজের হাসিটাকে চেপে রেখে বলল,,,
কাব্য : তোমার পছন্দের কেউ আছে?
তানিশা : না। কেউ propose… করলে আমার আগে নীলাই না করে দেয়।
কাব্য : কেন?
তানিশা : নীলা বলেছে যাকে বিয়ে করবি, তার সাথেই প্রেম করবি। আমারও তো ইচ্ছে করে প্রেম করতে। এখন আমি আমার বজ্জাত বরকে কই পাবো প্রেম করার জন্য?
— কথাটা বলেই তানিশা মনটা খারাপ করে ফেলল। কাব্য তার দিকে তাকিয়ে কোনোরকম কথাটা হজম করে নিয়ে বলল,,,
কাব্য : ও,, আচ্ছা আমার সাথে time spend… করতে কেমন লাগে তোমার?
তানিশা : অবশ্য আপনার সাথে সময় কাটাতে ভালই লাগে আজকে বুঝলাম। আপনি মানুষ হিসেবে এতটাও খারাপ না। আজকের সময়টা কিভাবে চলে গেলো বুঝতেই পারলাম না।
কাব্য : চাইলে সারাজীবন কাটাতে পারো রানী করে রাখবো।
তানিশা : মানে?
কাব্য : তুমি যদি কাউকে এটা বলো, যে তার সাথে সময় কাটাতে তোমার ভাললাগে। সে তার প্রতি উত্তরে তোমাকে এটাই বলবে। আর এটা তো স্বাভাবিক তাইনা??
তানিশা : হয়তো। আচ্ছা ভাইয়া আপনি ঐ মেয়েকে বলে ছিলেন?
কাব্য : এখনো বলিনি ভাবছি খুব জলদি বলবো। আচ্ছা ও যদি আমার proposer expect… না করে তখন কি করবো?
তানিশা : করবেনা মানে, অবশ্যই করবে। প্রয়োজনে ঐ বজ্জাত মেয়ের চুলের মুঠি ধরে টেনে হেঁচকে রাজি করাবেন। তারপরও রাজি না হলে দুগালে থাপ্পড় মেরে মুখ দিয়ে রক্ত বের করে ফেলবেন। তখন দেখবেন বোধগম্য হারিয়ে মুখ দিয়ে কথা বের হবেনা কিন্তু মাথা নেড়ে হ্যা বলবে ঠিকি। ও proposer except… করবেনা তো ওর চৌদ্দ গুষ্ঠি করবে।
কাব্য : যদি কেউ তোমার সাথে এমন করে তুমি কি করবে?
তানিশা : কোন বজ্জাতের হাড্ডি আমার সাথে এমন করবে? যদিও কেউ এমন করে তার নামে সাথে সাথে পুলিশ কেস করবো। ( রাগে গজগজ করে )
কাব্য : সেই সুযোগ পাবেনা।
তানিশা : কেন?
কাব্য : সেটা সময় হলে বুঝবে।
— কথাটা বলতে বলতে কাব্য গাড়ি থামালো।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)