অন্তরালে তুমি পর্ব-০২

0
3330

#অন্তরালে_তুমি
#Part_02
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
ইহান রুমে ঢুকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই যা দেখে তাতে আঁতকে উঠে। সে দেখে আরিহা ওর দিকে গান পোয়েন্ট করে দাড়িয়ে আছে মুখে তার বাঁকা হাসি। ইহান কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরিহা ধীর পায়ে ওর দিকে এগিয়ে আসে তার পর কাছে এসে সেই গানটি ওর কপালে ঠেকায়। তারপর আস্তে আস্তে তা স্লাইড করতে করতে গলা পর্যন্ত নিয়ে আসে আর সেখানে চেপে ধরে তারপর মুখ কাছে এবে ওর গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। এতে ইহান যেন একদম ফ্রিজড হয়ে যায়। মুখ দিয়ে একটা টু শব্দও বের হচ্ছিল না। আরিহা তা দেখে মুচকি হেসে বলে,

— যতটুকু আমি জানি আজকে আমাদের বাসর রাত আর নিয়ম অনুসারে আজকের দিনে যখন স্বামী রুমে আসে তখন নাকি বউ মাথায় ঘুমটা স্বামীর কাছে এসে সালাম করে। তারপর নাকি স্বামী তার বউর ঘুমটা উঠিয়ে তার চেহেরা দেখে তাকে কোন গিফট দেয়।
কিন্তু এস ইউ নো আমি অন্যের বানানো কোন নিয়মই মানি না। আমি নিজের নিয়ম নিজেই বানাই। যার জন্য আজ গিফটটা তুমি নয় বরং আমিই দিব।

এই বলে গানটা গলা থেকে আরেকটু নিচে নামিয়ে নিয়ে এনে ইহানের বুকে তাক করে। ঠোঁটের কোনেটা প্রসারিত করে ইহানের কানের সামনে গিয়ে বলে,

— আর ইউ রেডি ফোর দ্যা গিফট?

এই বলে একটু দূরে স্বরে দাড়ায়। তারপর উল্টোভাবে সংখ্যা গণনা শুরু করে,

— থ্রি….. টু….. ওয়ান!!

বলেই পিস্তলটি চালিয়ে দেয় সাথে সাথে ইহান চোখ বন্ধ করে ফেলে। বেশ কিছুক্ষণ পর ইহান যখন কোন সারাশব্দ না পেয়ে চোখ খুলে তখন আরিহা বলে উঠে,

— সাপ্রাইস!! কি ভয় পেলে বুঝি? চিন্তা নেই তোমায় কখনোই মারবো না। তুমি মরে গেলে আমার কি হবে বলো? আদুরে কন্ঠে।

ইহান এইবার সামনে তাকিয়ে দেখে পিস্তলটির মাথায় একটা কাগজ ঝুলে আছে। ইহান এইবার বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে আরিহার দিকে তাকায়। অতঃপর হুংকার দিয়ে উঠে,

— হোয়াট দ্যা হেল! এইসব ফাইজলামির মানেটা কি? আর কিসের কাগজ এইটা?

— অহ হো ইহান বেবি! এত তারাতারি তুমি আমার সকল অভ্যাস ভুলে গেলে? দ্যাট ইজ নোট ফেয়ের।
যেহেতু তুমি ভুলেই গিয়েছো তখন আমি এই তোমায় মনে করিয়ে দেই। আরিহা কখনো কোন কাজ সাধারণভাবে করে না। সি ইজ ওলোয়েস ইউনিক এন্ড ডিফারেন্ট। যার জন্য আমি সাপ্রাইসটা এইভাবে দিলাম। আর রইলো কাগজটির কথা। নিজেই পড়ে জেনে নাও।

ইহান এইবার কাগজটি হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে। পড়ার সাথে সাথে ইহান রীতিমতো ছোট খাটো একটা ঝাটকা খায়। ইহান কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরিহা বলতে শুরু করে,

— এইখানে লিখা আছে যে এখন থেকে আমার ফ্যাশন হাউসের ৪০% শেয়ারের মালিক তুমি। কি ব্যপারটা সাংঘাতিক না? বাঁকা হেসে।

ইহান এইবার রাগান্বিত হয়ে সেই কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে দূরে ছুঁড়ে মারে আর আরিহার সামনে এসে ওর হাত মচকে ধরে বলে,

— টাকার গরম দেখাচ্ছিস আমার সামনে? আমাকে দয়া দেখাচ্ছিস? ইহান মাহমুদকে! ভুলে যাস না আমি তোর সাথে আমার কখনোই মিলে না। কেন না তুই তো চলিস তোর বাপের পয়সায় কিন্তু ইহান চলে নিজের পয়সায়। ভিক্ষার টাকায় চলিস তুই। আর সেই ভিক্ষা টাকার গরিমা দেখাস আমার সামনে?

আরিহা এইবার মুচকি হেসে চোখের পলকেই নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ইহানের শার্টের কলারটা টেনে ধরে বলে,

— আরিহা যে কি জিনিস তা তুমি কখনো জানোই নি। বুঝা তো দূরের কথা। আরিহাকে জানার আর বুঝার ক্ষমতা কাউরো নেই।
আর কি যেন বলছিলে আমি বাপের পয়সায় চলি? হাহ! তুমি ভুলে যাচ্ছো যে আহমেদ ফ্যাশন হাউসের মালিক আমি। এর মধ্যে কাউরো কোন ভাগ নেই আর না এইটা বিল্ড আপ করতে কাউরো চার আনি পয়সাও আছে।

এই বলে আরিহা ইহানকে ছেড়ে দেয় তারপর এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে নিজেকে সংযত করে। তারপর আবার মুখে এক রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে বলে,

— চল বেবি ডিনার করবে। আজ তোমার পছন্দের সকল আইটেম অর্ডার দিয়েছি আমি।

ইহান এইবার রেগে গিয়ে বলে,

— নিজের আলগা দরদ দেখাতে আসবে না তো। আই জাস্ট হেট ইট। ইন ফেক্ট আই হেট ইউ। আর এইটা আমিও ভালো করেই জানি তুমি এইসব আমায় ভালবেসে না বরং আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই করছো।
তো একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো ইহান মাহমুদকে বিয়ে করে তুমি তোমার লাইফের সবচেয়ে বড় ভুল করেছ। তোমার লাইফ যতক্ষণ না আমি হেল করছি ততোক্ষণ পর্যন্ত আমি দম নিব না। কষ্ট আমি না বরং তুমি পাবে। গেট রেডি মিস আরিহা আহমেদ ইউ লাইফ ইজ গোয়িং টু বি হেল।

এই বলে ইহান রুম থেকে গটগট করে চলে যায় আর আরিহা সেই দিকে তাকিয়ে রহস্যময় একটা হাসি দেয়। আর বলে,

— ফাইনালি দ্যা গেম ইজ বিগেন।

.
?
.

সকাল হয়েছে বেশ আগেই। সূর্যও খিলখিলিয়ে চারদিকে নিজের রশ্মি ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। বারান্দা দিয়ে এক মুঠো রোদ এসে উঁকি দিচ্ছে রুমের ভিতরে। ইহান বিছানায় চ্যাপ্টা হয়ে শুয়ে আছে। ঘুমে একদম আচ্ছন্ন। এতটা যে বেলা হয়ে গিয়েছে তার দিকে তার কোন খেয়ালই নেই। হঠাৎই গুলি চলার আওয়াজে ইহানের ঘুম ভেঙে যায় আর সে ধরফরিয়ে উঠে। পরপর ৩ টি গুলির আওয়াজ ইহানের কানে আসতেই ওর ঘুম একদম উঁড়ে যায়।

ইহান এইবার কৌতূহল নিয়ে রুমের বাইরে বের হয়। ড্রয়িংরুমে এসে শব্দের প্রতিধ্বনিটা অনুসরণ করে টিভিটির দিকে তাকায়। আর সাথে সাথেই ওর চোখ চড়কগাছ। টিভির স্ক্রিনে আরিহা তার গান শুটিং এর প্রেক্টিস করছে। শুধু প্র‍্যাকটিস করলে ভুল হবে সামনে থাকা শুটিং বোর্ডটির নাজেহাল অবস্থা করছে। লাগাতার একের পর এক গুলি নিক্ষেপ করেই চলেছে তাও একদম শার্প ভাবে। একটু এইদিকও না আবার ওইদিকও না। ইহান হা হয়ে তা দেখছে তখনই ওর কানে মিষ্টি সুরে একটি কণ্ঠ ভেসে আসে।

— গুড মর্নিং ইহান বেবি।

শব্দটি কানে এসে বারি খেতেই ইহান টিভির স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে সোফাতে বসে থাকা আরিহার দিকে স্থির করে। আরিহাকে দেখার সাথে সাথে ইহানের ভ্রুকুটি একত্রিত হয়ে যায়। আরিহা টি-টেবিলের উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। এক হাতে তার আপেল। পড়নে তার হোয়াইট লং সেলোয়ার-কামিজ। উজ্জ্বল শ্যামলা হওয়ার ফলে সাদা রঙটি যেন মেয়েটির গায়ে একদম ফুটে উঠেছে। চোখ ভরা মায়া তার। চুলগুলো উঁচু করে ঝুঁটি করা। ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি৷
বাঁকা হাসিটি নজরে পড়তেই ইহান মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তারপর কর্কশ কণ্ঠে বলে,

— ভেরি বেড মর্নিং। যার দিন শুরু হয়েছে এমন এক অশুভ চেহারাটি দেখে তার দিন কিভাবে ভালো হয়?

ইহানের কথা শুনে আরিহা নিজের জায়গায়টি ছেড়ে ধীর পায়ে গিয়ে ইহানের সামনে দাড়ায়। তারপর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে দেয়।
সদ্য ঘুম থেকে উঠার ফলে ইহানের চোখটি কেমন নেশাগ্রস্তময় হয়ে আছে। মাথা ভরা ঝাঁকড়া সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে এসে ঘাপটি মেরে বসে আছে। গায়ে এখনো কালকের সেই লেমন কালারের শার্টটি। হলুদ ফর্সা হওয়ায় ডান গালের তিলটি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
আরিহা এইবার ইচ্ছে করে ইহানের গালে হাত রেখে বাঁকা হেসে বলে,

— বাহ বেবি! তোমাকে তো ঘুম থেকে উঠার পর একদম সেই লাগে। ইচ্ছে করে একদম খেয়ে ফেলি।

ইহান এইবার এক ঝাটকায় আরিহার হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,

— মেয়ে হয়ে এত নির্লজ্জ কিভাবে তুমি? তার উপর সাত সকাল এইসব কি ছেড়ে রেখেছ তাও ফুল ভলিউম বারিয়ে?

— আমি কেমন তা তোমার ধারণার বাইরে। তাই আমি আসলে কি তা জানতে এসো না। আর রইলো এই ভিডিওর কথা, আমি বুঝছিলাম যে আমার শুটিং ঠিক কেমন? ভালো নাকি বাজে। তাই ভিডিওটা দেখে বুঝার চেষ্টা করছিলাম।

— হোয়াট এভার। আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।

— হুম যাও! এমনেও কিছুক্ষণের মধ্যেই মিডিয়ারা এসে পড়বে।

ইহান এইবার ভ্রুকুটি জোড়া করে বলে

— কেন?

— আরেহ বাহ! দ্যা মোস্ট ফেমাস ইউটিউবার ইহান মাহমুদ বিয়ে করেছে তাও আবার দ্যা ফ্যাশন ডিজাইনার আরিহা আহমেদকে তাহলে তো প্রেস মিডিয়ারা তো হুমড়ি খেয়ে পড়বেই।

এই কথাটা শুনে ইহান কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায়। তারপর বাঁকা হেসে বলে,

— হ্যাঁ তাই তো। আফটার অল ইহান বিয়ে করেছে প্রেস মিডিয়ারা তো হানা বলবেই। তার উপর নিজের বউকে পরিচয় করাবো না? আজকের মিটিংটা একদম ধামাকেদার হবে।

এই বলে ইহান রুমে চলে যায়। আরিহা কিছুক্ষণ ইহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে। ইহানের বলা কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করতে থাকে। বেশ কিছু বুঝার আগেই আরিহার ফোন বেজে উঠে। আরিহা এইবার ভ্রুকুটি একত্রিত করে সেই দিকে তাকায় ধীর পায়ে ফোনটির কাছে গিয়ে ফোনটি হাতে নেয়। ফোনটির স্ক্রিনে ভেসে উঠে “আজমির সাহেব” – এর নামটি। আরিহা এইবার ফোনটি ধরে তা কানের সামনে ধরে। তখনই আজমির সাহেব বলে উঠে,

— সরি বাচ্চাটা! কালকে না বলেই এসে পড়তে হয়েছিল আমার। এক কাজের জন্য আর্জেন্ট ঢাকার বাইরে চলে আসতে হয় আমাকে। তোমার জীবনের এত ইম্পোর্টেন্ট দিনেও আমি পুরোপুরি ভাবে থাকতে পারলাম না। সরি! অনুতপ্ত সুরে।

— অহহ বাবা প্লিজ! এত এক্সপ্লিনেশন দেওয়া লাগবে না। ইউ আর এ বিজি পার্সোন আই নো দ্যাট। আর এমনেও কালকে আমি তোমায় ডিস্টার্ব করতাম না যদি না বাবা দরকার পড়তো বিয়েতে। জীবিত বাবাকে তো আর মৃত বানাতে পারি না তাই বাধ্য হয়ে ডেকেছিলাম তোমায়।
তুমি সেই টাইমে ছিলে এইটাই এনাফ। বাদ বাকিটা আমি একাই হেন্ডেল করতে পারবো। আরিহা একাই নিজের দায়ভার নিজেই বহন করতে পারে। তার কাউরো দরকার নেই। না কাল ছিল, না আজ আছে আর না আগামীতে থাকবে। এক দমে কথাগুলো বলে শেষ করে।

— বড্ড বড় হয়ে গিয়েছিস তাই না? বাবাকে তো এখন আর দরকারই হয় না। সব কিছু এখন একা একাই সামলাতে পারিস তুই।
কিন্তু কি করবো বল তুই আমার জন্য যে সেই ছোট পরীই রয়ে গিয়েছিস। এখনো তোর চিন্তা হয় রে মা। বিনয়ী সুরে।

— অহহ প্লিজ বাবা এখন মেলোড্রামা করো না তো। এইটা বিরক্তিকর।

আজমির সাহেব এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
— বাসায় কবে আসবি? তোর মা প্রায়ই…

আরিহা এইবার এক রাশ বিরক্তি নিয়ে চেঁচিয়ে উঠে,
— উইল ইউ স্টোপ নাও? রাগিও না তো। প্রত্যেক বার একই প্রশ্ন করলে আমার উত্তর পাল্টাবে না। আমার উত্তর তখনো “না” ছিল এখনো নাই আছে। তাই খামাখা আমাকে সেই প্রশ্ন করে বিরক্ত করো না তো। আমাকে দেখার ইচ্ছে হলে বাসায় এসে পড়ো অথবা অফিসে৷ আর যদি তা না পারো কোন একটা জায়গা মিক্সড করে আমায় ডাক দিও আমি এসে পড়বো নে। আর কিছু কি বলবা?

— না। তবে যখন এই বুড়ো বাবাটার কথা মনে পড়বে তখনই একটা কল দিয়ে দিস। যেখানেই থাকি না কেন তোর এক ডাকে চলে আসবো নে।

— হুম। এখন রাখছি।

এই বলে কট করে ফোনটা রেখে দেয় সে। আজমির সাহেব কিছুক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে এক দীর্ঘ শ্বাস নেয়। টেবিলের মধ্যে থাকা ছোট আরিহার ছবিটি হাতে নিয়ে বলে,

— তোকে কি স্ট্রোং বানাতে গিয়ে হার্টলেস বানিয়ে ফেললাম? তোর অন্তরাল হতে কি সকল মায়া-মমতা, ভালবাসা, অনুভূতি ভুলিয়ে দিলাম আমি? দূরে সরিয়ে দিলাম নিজের মেয়ে নিজের কাছ থেকে?
কবে যে তুই ঠিক আগের মত আমার সাথে সেই মিষ্টি সুরে কথা বলবি? আমার গলা জড়িয়ে ধরে সেই আগের ন্যায় বায়না করবি?

এতটুকু বলেই থামে সে। হুট করে তার চোখ বেয়ে দুই ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে। হয়তো কোন এক চাপা কষ্ট তাঁকে ঘিরে ধরছে তাই। আজমির সাহেব দ্রুত নিজের চোখ মুছে ফেলে। সে যে দূর্বল হয়ে পড়তে পারবেন না। তার যে দূর্বল হওয়া মানা।

.
?
.

প্রেস – মিডিয়ার সকলেই এসে উপস্থিত। সকলের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আরিহা। আরিহা আরামসে সোফায় বসে আছে। পড়নে তার সেই সাদা সেলোয়ার-কামিজটি। মুখে তার সেই চিরচেনা রহস্যময় হাসি।
সকলেই এখন এই মিটিংয়ের দ্বিতীয় কেন্দ্রবিন্দু ইহানের অপেক্ষায় বসে আছে। দেখতে দেখতেই ইহান এসে পড়ে। পড়নে তার ব্ল্যাক শার্ট আর ব্ল্যাক ডেনিম পেন্ট। শার্টের হাতাটা কুনোই পর্যন্ত ফোল্ড করা। চুলগুলো ব্রাশ করা। ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি। এইভাবেই ছেলেটা সকল মেয়ের ক্রাশ তারউপর তার এই বাঁকা হাসিটা যেন সকল মেয়েদের হৃদয় রক্তক্ষরণ করতে যথেষ্ট।

ইহান এইবার একভাব নিয়ে এসে আরিহার পাশে বসে আর আরিহার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটি হাসি উপহার দেয়। আরিহা এইবার কিছুটা সন্দেহ দৃষ্টিতে ইহানের তাকায়। অতঃপর রিপোর্টাররা ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানায় আর প্রশ্ন নিক্ষেপ করায় সে চোখ সরিয়ে সেই দিকে তাকায়।

এক রিপোর্টারটি জিজ্ঞেস করে,
— ম্যাম এইটা কি সত্যি আপনার দুইজন একে অপরকে বিয়ে করেছেন?

আরিহা এক মিষ্টি হাসি হেসে বলে,
— ইয়েস। ডু ইউ হ্যাভ এনি ডাউড?

— নো।

পাশ থেকে আরেক রিপোর্টার জিজ্ঞেস করে,
— তা ম্যাম আপনারা কি একে অপরকে ভালবেসে বিয়ে করেছেন? মানে ইজ ইট লাভ মেরেজ?

— ইয়েস ইট ইজ লাভ মেরেজ।

তখন পিছন থেকে আরেকজন রিপোর্টার প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে।
— তা আপনারা দুইজন দুইজনকে ঠিক কতটা ভালবাসেন? আর কে কাকে ফাস্ট প্রাপোস করেছিল?

— অনেক বেশি। যাকে বলে অসীম। আর ফাস্ট ইহান আমাকে প্রাপোসড করে। তাই না বেবি?

ইহান এইবার আরিহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— ইয়েস আরিহা বেবি। কিন্তু আজ আমার একটা ইচ্ছে আছে? পূরণ করবে কি?

— কি? কৌতূহলী চোখে

— আজ তুমি আমায় সবার সামনে প্রাপোস করবে। ইন ফ্রোন্ট অফ হোল মিডিয়া। উইল ইউ?

— কেনো নয়! অবশ্য! ওয়েট আ মিনিট।
এই বলে আরিহা পাশে থাকা সেই তাজা ফুলের তোড়া থেকে তিনটে তাজা গোলাপ নিয়ে হাটু গেড়ে বসে মুচকি হেসে বলে,

— আই লাভ ইউ।

ইহান এইবার মুচকি হেসে আরিহার ফুলটি নেয় আর আরিহাকে দাড়ায় করায়। তারপর ফুলটা ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে থাকে। হুট করেই ইহান আরিহার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আর ফুলগুলো মেঝেতে ফালিয়ে পা দিয়ে পিশে ফেলে। আর চিৎকার করে বলে উঠে,

— আই জাস্ট হেট ইউ। তোকে আমি নিজের বউ হিসাবে মানি না। আর না কখনো মানবো।

ইহানের কথা শেষ হতে আরিহা ইহানের দিকে তাকায় আর ঠোঁট প্রসারিত করে এক রহস্যময় হাসি দেয়।

.
.
#চলবে