অন্তরালে তুমি পর্ব-১৫

0
2596

#অন্তরালে_তুমি
#Part_15
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
আরিহা সোফায় বসে কাজ করছে। মাথাটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে বেশ ব্যথা করছে। শরীরও কেমন নেতিয়ে এসেছে। দূর্বলও লাগছে খুব নিজেকে। আরিহা মনে করে কাজের এত চাপ নেওয়ার ফলে এমনটা হচ্ছে। প্রেশার মেবি আবার লো হচ্ছে। এখন এক কাপ কফি হলে মন্দ হয় না। আরিহা এইবার ল্যাপটপ অফ রেখে যেই না উঠতে যাবে ঠিক এই সময় কেউ ওর সামনে এক কাপ কফি এগিয়ে দেয়। সাথে সাথে আরিহার ভ্রুকুটি কুঞ্চিত হয়ে আসে। সে মুখ তুলে উপরে তাকিয়ে দেখে ইহান। আরিহা এইবার সন্দেহজনক দৃষ্টিতে ইহানের দিকে তাকায়। ইহান আরিহার দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে,

— নাও ধরো। কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

আরিহা একবার কাপটির দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ইহানের দিকে। হুট করে এত কেয়ার নেওয়ার মানে কি তা বুঝার চেষ্টা করতে থাকে। কিছুক্ষণ এইভাবে থেকে আরিহা কফির কাপটা হাতে নেয়। কাপটি নিতেই ইহান মুচকি হাসে তারপর ওর পাশে বসে পরে। আরিহা এইবার শান্ত ভঙ্গিতে বলে,

— কফিতে বিষ মিশাও নেই তো?

কথাটা শুনে ইহান চমকে উঠে। কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে,
— তোমার কেন মনে হয় আমি এমনটা করবো?

আরিহা এইবার শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
— কারণের কমতি নেই। একে তো তুমি আমায় দুই চোখে দেখতে পারো না। ঘৃণা করো। তার উপর আমি তোমায় জোর করে বিয়ে করেছি। জীবনটাকে বিষাদময় করে দিয়েছি। প্রতিনিয়ত তোমাকে জ্বালাচ্ছি।
অবশ্যই জানি তুমি এইসব থেকে এখন বেশ বিরক্ত। আমাকে সহ্য হচ্ছে না। তাই রাস্তা থেকে সরাতে চাচ্ছো হয়তো বা।

ইহান এইবার আহত কণ্ঠে বলে,
— এতটাই নিকৃষ্ট ভাবো আমাকে? আমি কি এতটাই বাজে।

আরিহা এইবার কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে বলে,
— এর উত্তর হয়তো আমার কাছে আবার হয়তো নেই। কেন না অতীত আমি ভুলি নি। তোমার করা প্রত্যেকটা কাজ আমার মনে আছে। আমায় জানা মতে আমি তোমার চিরশত্রু। তাই আমার ক্ষতি তুমি করতেই পারো। হোয়াট ইজ দ্যা বিগ ডিল?

কথাগুলো শান্ত ভাবে বললেও ইহানের বুকে যেন তীরের মত লাগে। ইহান এইবার তাচ্ছিল্য হাসি হেসে মনে মনে বলে,

— সবসময় তুমি যে ঠিক হবে তা কিন্তু নয়। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতেই কফিটা এগিয়ে দিয়েছিলাম। তোমায় ভালো ভাবে জানার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করছিলাম। সম্পর্কটাকে নতুন ভাবে শুরু করার চেষ্টা করছিলাম।
আর তুমি কি না আমায় এতটা নিচে নামিয়ে দিলে। অতীতের তিক্ততা যে সত্যি বর্তমান নষ্ট করে দেয় তা আজ বুঝলাম।

এই ভেবেই এক দীর্ঘ শ্বাস নেয় ইহান। তারপর আরিহার দিকে শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে বলে,
— সবসময় সব ভাবনা ঠিক হয় না আরিহা। সব জিনিস নেগেটিভ ভাবে না নিয়ে একটু পজেটিভ ভাবে নিলেও হয়। আজ আমার এই কর্মকাণ্ডের পিছনে কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু তুমি..
এই বলে চুপ হয়ে যায়।

আরিহা এইবার মুখ তুলে ইহানের দিকে তাকায়। ইহানের মুখে পানে কতক্ষণ চেয়ে থাকে। অতঃপর বুঝতে পারে আজ ইহানের বলা প্রত্যেকটা কথা সত্য। আরিহা এইবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

— “বিশ্বাস এমন একটা বস্তু যা সহজের কাউরো সংস্পর্শে যেতে চায় না। কেন না বিশ্বাস “ভাঙা” নামক নিকৃষ্ট জীবকে প্রচন্ড রকমের ভয় পায়।
তাই তো বিশ্বাস স্থাপন করার আগে তার বডিগার্ড স্বরুপ সামনে এসে দাড়ায় চিন্তাভাবনা। কিন্তু অনেক সময় এটিও লোপ পেয়ে যায়। আর তখন তার উপর “ভাঙ্গা” নামক জীবের আক্রমণ হয়। ফলে ক্ষত বিক্ষত হয় বিশ্বাস নামক বস্তুটি। আর হারিয়ে যায় অন্ধকার রাজ্যে। ” ~~ বাণীতে জান্নাত।

ইহান এইবার বুঝে যায় আরিহা কি মিন করতে চাচ্ছে। ইহান কিছু না বলে উঠে দাড়ায় তারপর ধীর পায়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। তা দেখে আরিহা সোফায় হেলান দিয়ে চোখটা বন্ধ করে থাকে। আর মনে মনে বলতে থাকে,

— জীবনে দ্বিতীয়বারের মত কাউকে বুঝতে আমি ভুল করেছি। প্রথমও তুমি ছিলে আর দ্বিতীয়ও তুমি। গাড়িতেও তোমায় বুঝতে পারি নি আর এখনও না। এ কি হচ্ছে আমার সাথে? আমার ভাবনা কি “তুমি” নামক মানবের সামনে ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে?

?

আকাশের বুকে হাল্কা কালো মেঘ এসে জমা হয়েছে। শীতল বায়ু বয়েছে বাইরে। চারদিকে পিন পিন নিরবতা। মাঝে মধ্যে ছাদে থাকা বেলি আর জবা ফুলের গাছের পাতাগুলো মচমচ করে উঠছে। ছাদের এক কিনারে পানি শূন্য সুইমিংপুলটি পড়ে আছে। গাছের দুই একটা পাতা সুযোগ বুঝে উড়ে গিয়ে পড়ছে সেখানে।বর্ষণের ধারা কখন বইবে কে জানে।
রেলিং গেসে এক কোনে ইহান সিগারেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মধ্যে জলন্ত সিগারেটটি ঠোঁটের মধ্যে চেঁপে ধরে বিষাক্ত ধোঁয়া গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে সে। সাথে অতীতের তিক্ত স্মৃতিতে ডুব দিচ্ছে যার জন্য আরিহা আজ হয়তো চেয়েও ওকে বিশ্বাস করতে পারে নি।

?
সেইদিনের পর প্রায় ১ সপ্তাহ লেগেছিল জনগণের শান্ত হতে। সেই এক সপ্তাহে ইহানকে বিভিন্ন ধরনের কথা শুনতে হয়েছিল। বিভিন্ন সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল। অহেতুক গালি তো লাগাম ছাড়া পেয়েছিল। সে কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে রেখেছিল আর সাথে ঘরে বন্দী করে রেখেছিল।
অতঃপর আসল সত্যটা যখন ছড়াছড়ি হয় তখন সকলে হিনাকে নিয়ে ট্রল করা শুরু করে। ওকে অপদস্ত করতে শুরু করে। হিনা সেইসব সহ্য করতে না পেরে জেলে থাকা অবস্থায় আত্নহত্যা করে। এই নিয়েও কম ট্রল হয় নি।

এইসব ঝামেলার জন্য আরিহার ফ্যাশন শোটি পিছিয়ে যায়। যেহেতু এই অনুষ্ঠানে ইহান আর হিনা দুইজনেই জড়িত ছিল তাই তাদের সাথে হওয়া ঘটনার ইফেক্ট পড়ে এতে। তাই আরিহা আর বাকি সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে পরিবেশ শান্ত হলেই তারা শোটা হোস্ট করবে। অতঃপর সব শান্ত হতেই শোটি আবার হোস্ট করা হয়।
ইহান যেহেতু চুক্তিবদ্ধ ছিল যে, তাকে এই শোয়ে মডেলিং করতেই হবে আর না করলে ওর ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ার চান্স আছে সেহেতু তাকে না চাওয়া সত্ত্বেও সেখানে যেতে হয়। ইহান তখনও আরিহার উপর ক্ষেপা। তার ভাষ্যমতে আরিহা যদি আগেই সকলকে সত্যিটা জানাতো তাহলে হয়তো ওকে এতটা অপদস্ত হতে হতো না। প্রথমত ইহান আরিহার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল কিন্তু অতঃপর ওকে যা সহ্য করতে হয় তার জন্য তার আরিহার প্রতি রাগ, ঘৃণা চেপে বসে।একমাত্র দায়ী সে আরিহাকেই মানে। রাগ, ক্ষোভ আর ঘৃণার তলে কৃতজ্ঞ শব্দটা যেন চাপা পড়ে যায়। আরিহাকেও অপমানিত করার তীব্র বাসনা জেগে উঠে মনে।
অতিরিক্ত রাগ মানুষের ভালো মন্দ বুঝার ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। তাকে একদম নিঃস্ব বানিয়ে দেয় আর তাকে অন্ধকারের দিকে ফেলে দেয়। রাগের মধ্যে থাকলে একটা মানুষ যা বুঝে আর যা ভাবে তার জন্যই তাই সত্য। এর উপরে আর কোন সত্য নেই। কেউ দোষী মানে তো দোষী। ইহানের বেলায়ও তাই হয়েছে। আরিহাকে সে দোষী ভেবে এসেছে বিধায় তার মনে আরিহার প্রতি রাগ আর ঘৃণা চেপে বসে ছিল।

কাজ শুরু হতেই ইহান বিভিন্ন ভাবে আরিহার খোঁজ খবর নিতে শুরু করে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেটেও ইহা৷ আরিহা সম্পর্কে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে নি। আরিহার ফ্যামিলির সম্পর্কে কোন তথ্যই সেখানে ছিল না। এর মূল কারণ আরিহা কখনোই তার ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করেনি। সকলের কাছেই সে একজন রহস্যময় নারী। ইহান এইবার বাধ্য হয়ে আরিহার পিছনে লোক লাগায় ওর ইনফরমেশন বের করার জন্য। তখন সে এতটুকু জানতে পারে আরিহার দুইটা ফ্রেন্ড আছে। অনেক চেষ্টা করে সে জানতে পারে আরিহার বাবা হচ্ছে বিখ্যাত ব্যবসায়ী আজমির হক। ইহান এইটক শুনে অবাক হয়েছিল যে এত বড় একজন ব্যবসায়ীর মেয়ে যে আরিহা তা কেন সকলের থেকে লুকিয়ে রেখেছে সে? কিন্তু উত্তরটা সে পায় নি।

একদিন আরিহা ইহানকে নিজের কেবিনে ডাকে। ইহান সেখানে হাজির হতেই আরিহা শান্ত ভঙ্গিতে তাকে জিজ্ঞেস করে,

— তা মি. ইহান আপনি দেখছি আমার ব্যাপারে অনেক ইন্টেরেস্টেড। আমার ব্যাপারে জানার জন্য আমার পিছেই লোক লাগিয়েছেন। ইম্প্রেসিভ!
এই প্রথম কেউ আরিহা আহমেদকে জানার জন্য এত উথলিয়ে পড়েছে। তাকে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে নজরে রাখা হচ্ছে। বাই দ্যা ওয়ে আমার ব্যাপারে কি কি জানলেন? নিশ্চয়ই অনেক বড় তথ্য তাই না?

ইহান এইবার মুখ খুলে,
— জানার তো আরও ইচ্ছে ছিল কিন্তু তা আর হতে দিলে কই? তার আগেই তো ধরে ফেললে। কিন্তু আফসোস নেই। তোমাকে জানবো এইবার কাছ থেকে।
আর তুমি করে সম্মোধন করছি কারণ তুমি আমার থেকে ২ বছরের ছোট।

আরিহা এইবার শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
— আপনার সাহস যে বড্ড বেশি তা বুঝতেই পারছি। আমার কেবিনে দাঁড়িয়ে আমারই সাথে ফ্লাট করছেন? বাহ!
আর এই ধারণা রাখবেন না যে আপনি আমাকে জেনেছেন। আমি আপনাকে জানার সুযোগ দিয়েছি বিধায় আপনি আমায় জানতে পেরেছেন। একবার কি ভেবেছেন যে যেখানে মিডিয়ার মত গোয়েন্দারা আমার কোন ইনফরমেশন বের করতে পারে নি সেখানে আপনি এত সহজে কিভাবে সব জেনে গেলেন? আপনার সাহসীকতা আমায় মুগ্ধ করেছে বিধায় আপনাকে জানার সুযোগ দিয়েছি।
কিন্তু সাবধান করছি যা জেনেছেন ততোটুকুই জানেন। এর বেশি জানতে আসলে আরিহা নামক অগ্নিপিণ্ডের প্রকোপে জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাবেন।

ইহান সেইদিন কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসে আর রুম থেকে চলে যায়। এরপর থেকেই ইহান আরিহার পিছে লেগে পড়ে। প্রতিদিন ওর কেবিনে ফুল দিয়ে আসা আর ওর জন্য নিজে খাবার নিয়ে যাওয়া শুরু করে। আরিহাকে বিভিন্ন ভাবে কেয়ার করা শুরু করে সে। এতে আরিহা বেশ কিছুটা অবাকই হয় সাথে বেশ বিরক্তও। কেন না আজ পর্যন্ত কোন ছেলে তার আশে পাশেও আসার চেষ্টা করে নি এইসব করা তো দূরের কথা। আরিহা এইবার খোঁজ নিতে শুরু করে ইহান এইসব কেন করছে। কিন্তু কিছু জানতে পারেনি।
ইহান একদিকে কাজ ঠিক মত করে যাচ্ছিল আর অন্য পাশে আরিহার মনে নিজের জায়গা তৈরি করছিল। আরিহার মনে ইহানের জন্য জায়গা তৈরি না হলেও ওর সাহস ওকে বরাবরই অবাক করতো। আরিহা বেশ অনেকবার ওকে ওয়ার্ন করেছে কিন্তু ইহান শুনে নি। অতঃপর আরিহা এইসবে আর মাথায় ঘামায় নি।
একদিন ইহান ওর কাছে এসে বলে,

— আচ্ছা তুমি কি হার্টলেস? পাথর! একটা মানুষ তোমাকে খুশি করতে এতটা কষ্ট করছে আর তুমি তাকে দামই দিচ্ছো না? ওর ফিলিংসের দাম দিচ্ছো না?

আরিহা তখন মুখ তুলে তাকিয়ে বলে,
— ফোর মি ফিলিংস আর ভেলুলেস। এর কখনোই কোন দাম হয় না। কেন না ফিলিংস শুধু একটা মানুষকে দূর্বল করে আর কিছুই না। এর চেয়ে ভালো মানুষকে দাম দেওয়া। কেন না আপনি যদি মানুষের দামই দিতে না জানে তাহলে এইসব ফালতু ফিলিংস দিয়ে আপনার কি কাজ?

ইহান তখন শান্ত কণ্ঠে বলে,
— তাহলে আমার দাম কি তোমার কাছে আছে?

আরিহা তখন শক্ত গলায় বলে,
— আপনি এখন আসতে পারেন।

ইহান আর কিছু না বলে বেড়িয়ে আসে। দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের দিন ঘনিয়ে আসে। এই কাল বাদে পরশু অনুষ্ঠান। আরিহা এইবার খুব সুক্ষ্ম ভাবে নিজের কাজ করতে থাকে। সবকিছু নিজের হাতে সামলাতে শুরু করে। এর মধ্যে দরকারী কিছু জিনিস লাগবে বলে আরিহা বেরিয়ে যায়। জিনিসগুলো কাছেই পাবে বলে গাড়ি নেয় নি সে। দরকারী সব জিনিস কিনে সে রাস্তার এইপারে এসে দাড়ায় রাস্তা পার হওয়ার জন্য। এমন সময় পাশেই অবস্থিত পার্কের দিকে নজর যায়। কয়েকটা ছেলে মেয়ে পার্কের বাইরে ময়লা টোকাচ্ছে। এদেরকে সাধারণ ভাষায় টোকাই বলে সম্মোধন করা হয়। এদের মধ্যে একটা বাচ্চা ছেলে একটা সুখী পরিবারের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। পার্কের এক কোনে ওর বয়সী একটা মেয়ে খেলছে। খেলা শেষে যখন সে তার বাবা-মার কাছে যায় তখন তারা তাকে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটা অপলক দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে থাকে। এরই মধ্যে একজন সাহেব ধরনের লোকের সাথে ওর গায়ের ছোঁয়া লেগে যায়। আর সেই লোকটি তাতে প্রচন্ড ক্ষেপে যায় আর ছেলেটিকে কষিয়ে এক থাপ্পড় মেরে কিছুটা গালমন্দ করে চলে যায়।
ছেলেটি সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে কান্না করতে থাকে। তখন ওদের গ্রুপের একজন এসে ওকে বলে,
” অনাথের ভাগ্যে বাবা-মার ভালবাসা না বরং লাথি আর থাপ্পড়ই জুটে।”

আরিহা তখন অপলক দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের কোনে হাল্কা পানি জমে আসে।

— শুধু মাথায় বাবা-মার ছায়া নেই বলেই যে তাদের ভালবাসা থেকে তারা বঞ্চিত তা কিন্তু না। অনেকের বাবা-মা থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের কাছ থেকে সেই সামান্যটুকু ভালবাসাও পায় না। একসময় সমাজও পরিহাস করে সেই অভাগাদের। পরিশেষে তারা হয়ে উঠে কলঙ্কিত। ~~ বাণীতে জান্নাত

আরিহা কোন মতে চোখের পানি আড়াল করে বেখেয়ালিভাবে রাস্তা পার হতে নেয় এমন সময় একটা গাড়ি ফুল স্প্রীডে ওর কাছে চলে আসে। আরিহা কিছু বুঝার আগেই ওর হাতে টান পড়ে। আর আরিহা কাউরো বুকের উপর গিয়ে পড়ে। তার হৃদয়ের স্পন্দন কানে আসতেই সাথে সাথে আরিহা একদম সর্বশান্ত হয়ে যায়। মনের মধ্যে এক শীতল হাওয়া বয়ে যায়। একটু আগের অশান্ত আরিহা হয়ে উঠে একদম শান্ত আর নিরব। নিজের মধ্যে চলতে থাকা তুফান বন্ধ হয়ে যায়। নিজের সকল কষ্ট মিলিয়ে যেতে থাকে। কেন এমন হলো সে বুঝতে পারছে না?
সেই বুকের মালিকটি এইবার আরিহাকে নিজ থেকে সরিয়ে দেয়। আরিহা এইবার মুখ তুলে তাকাতেই এক অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের চেহারা তার চোখের সামনে ভেসে উঠে…

#চলবে