অন্তরালে তুমি পর্ব-১৮

0
2467

#অন্তরালে_তুমি
#Part_18
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
?
কোলে ল্যাপটপ নিয়ে সোফার এক কোনে বসে আছে আরিহা। খুব মনোযোগ সহকারে কাজ করেই চলেছে। ইহান বার বার রুম থেকে উঁকি ঝুঁকি করছে। দুই একবার আরিহার সামনে দিয়ে ঘুরেও এসেছে কিন্তু বেচারাকে আরিহা পাত্তাই দিল না। এমন এক ভাব নিয়ে বসে রইলো যেন এই কাজ ব্যতীত দুনিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই হতে পারে না। একদমই না! একটুর জন্যও যদি সে ল্যাপটপ থেকে চোখ সরায় তাহলে যেন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে।
ইহান এইবার না পেরে আরিহার পাশে গিয়ে বসে। কিন্তু কি দিয়ে কথা শুরু করবে তাই বুঝতে পারছে না। তাই আরিহার আর্কষণ নিজের দিকে আনার জন্য হাল্কা কেশে উঠে। উহু! কাজ হলো না। তাই ইহান এইবার আরেকটু জোরেই কেশে উঠলো। এইবারও একই অবস্থা। তাই ইহান এইবার লাগাতার কাশতে লাগলো। যেন সে যক্ষ্মা নামক ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত আর এখনই কাশতে কাশতে শহীদ হয়ে যাবে। আরিহা মনে হয় এইবার একটু খেয়াল করলো। তাই সে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই বলে,

— ডান দিকের ড্রয়ারে ঔষধের বক্সে এম-কাস্ট ট্যাবলেট রাখা আছে। ডিনার করে ওইটা খেয়ে নিও কাশি কমে যাবে আর পরের বার এইভাবে বৃষ্টিতে ভিজো না।

ইহানের এইবার অসহায় চোখে আরিহার দিকে তাকায়। সে চাইলো কি আর হলো কি? সে তো আরিহার মনোযোগ নিজের দিকে আনতে চেয়েছিল কিন্তু এইখানে দেখি আরিহা তাকে রোগীই বানিয়ে দিল। ইহান এইবার স্বাভাবিক হয়ে বলে,

— এত কি কাজ করো শুনি? তোমার যে একখান কিউট হ্যান্ডসাম বর আছে তা কি ভুলে গিয়েছ? তার দিকে তো দেখি তোমার কোন খেয়ালই নেই। নিজের বরের দিকে একটু খেয়াল রেখ তা না হলে কখন কোন রমনী এসে তাকে ফুড়ুৎ করে উড়িয়ে নিয়ে যায় তা তো বলা যায় না।

ইহানের এমন কথায় আরিহার ভ্রুকুটি কুঞ্চিত হয়ে যায়। সে ল্যাপটপের থেকে মুখ তুলে ইহানের দিকে সুক্ষ্ম চোখে তাকায়। বুঝার চেষ্টা করে হুট করে ইহান এমন কথা বলার মানে কি? আরিহার এমন দৃষ্টি দেখে ইহান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে আমতা আমতা করে বলে,

— কি?

আরিহা সেই আগের ন্যায় সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তারপর সন্দেহ ভরা কন্ঠে বলে,
— তুমি কি ড্রিংক করেছ? মানে এইসব আবোল তাবোল কি বকছো?

ইহান এইবার হাল্কা হেসে বলে,
— না আমি কিছু খায় নি আর আবোল তাবোল বলছি না তো। সত্যিটাই বলছি। দেখা গেল তুমি কাজে ব্যস্তই হয়ে রইলে আর এইদিকে কেউ আমায় কিডন্যাপ করে নিয়ে চলে গেল।

আরিহা এইবার ইহানের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
— জ্বরে মাথা গেছে তোমার। রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

ইহান এইবার আরিহার আরেকটু পাশে এসে বসে তার বলে,
— যদি বলি রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না তখন?

আরিহা শান্ত কন্ঠেই বলে,
— দরজা খুলে ছাদে গিয়ে শুয়ে পড়ো।

ইহান এইবার কিছুটা রেগে যায়। মেয়েটা ওকে পাত্তাই দিচ্ছে না। এইটা কোন কথা? আগে তো সবসময় ইহানের পিছে বেজে থাকতো আর তখন ইহান পাত্তা দিত না। এখন যখন ইহান নিজ থেকেই কথা বলার চেষ্টা করছে এই মেয়েটা কি ভাব নিচ্ছে। ইহান এইবার আরিহার ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে অফ করে দেয়। ইহানের এমন কাজে আরিহা কিছুটা অবাকই হয়। সে মোটেও ইহানের কাছ থেকে এমন এক আচরণ আশা করে নি৷ আরিহা এইবার বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে ইহানের দিকে তাকায় আর কর্কশ কণ্ঠে বলে,

— এইসব কি ইহান? এইভাবে ল্যাপটপ নেওয়ার মানে কি? ডোন্ট ইউ নো কাজের মাঝে আমি ডিস্টার্বেন্স পছন্দ করি না।

ইহান এইবার বলে,
— ডিস্টার্ব করেছি বেশ করেছি। নিজের বউকে ডিস্টার্ব করছি তাতে তোমার কি? দরকার হলে বস্তা ভরে ভরে ডিস্টার্ব করবো তাতে তোমার এত জ্বলে কেন?

ইহানের এমন কথায় আরিহা আহাম্মক হয়ে যায়। বুঝে উঠতে পারছে ইহানের হলোটা কি? সে বিস্মিত চোখে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইহানের আচরণে কেমন অপরিচিত অপরিচিত ভাব আসছে। আরিহা এইবার চোখ পিটি পিটি করে বলে,
— তোমার হয়েছেটা কি আজ? পাগল হলে নাকি?

ইহান এইবার মুচকি হেসে বলে,
— পাগল হয়েছি কিনা জানি না শুধু এতটুকু জানি নিজের বউয়ের প্রেমে পড়েছি। যাকে বলে সাংঘাতিক প্রেম।

আরিহা এইবার শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
— এইটা প্রেম নাকি প্রতিশোধ?

ইহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলিংবেল বেজে উঠে। একবার নয় পরপর তিনবার। আরিহা এইবার ভ্রু কুচকিয়ে দরজার দিকে তাকায় তারপর কি মনে করে চট করে দাঁড়িয়ে দিয়ে দৌঁড়ে দরজা খুলতে যায়। আরিহার এমন কাজে ইহান আহাম্মক বনে যায়। আরিহা দরজা খুলতেই সেই কাঙ্ক্ষিত চেহারা ভেসে উঠে। আরিহা শান্ত চোখে সেই দিকে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটের কোনে হাল্কা হাসি ফুটে উঠে। সে কিছু বলার আগেই দরজার অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি আরিহাকে জড়িয়ে ধরে। আর মিষ্টি সুরে বলে উঠে,

— সাপ্রাইজ!!!!

আরিহা এইবার মুচকি হেসে বলে,
— আ’ম নোট সাপ্রাইজড! তাই এত খুশি হওয়ার দরকার নেই।

সেই ব্যক্তিটি এইবার আরিহাকে ছেড়ে দিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে,
— বইন কখনো তো আমার খুশির জন্য বলে দে যে তুই সাপ্রাইজড হয়েছিস। এই নিরিহ বাচ্চার উপর একটু তো করুণা কর।

আরিহা এইবার শান্ত হয়ে বলে,
— আরিহা ইজ হার্টলেস। তাই সে আপাতত করুণাটা করতে পারছে না। আপনি অন্য দিকে যান।
সেই ব্যক্তি এইবার রেগে গিয়ে বলে,
— থাপড়াইয়া গাল দুটো রসগোল্লা বানিয়ে ফেলবো। বেয়াদব মেয়ে কথাকার। আমার সাথে মশকরা করা হচ্ছে? তুই জানিস আমি কে?

আরিহা এইবার শান্ত কন্ঠে বলে,
— না একদমই জানি না আপনি কে। কে আপনি ভাই?

সে এইবার চেঁচিয়ে বলে,
— আরিহা!! তোকে তো আমি…

আরিহা হেসে বলে,
— হয়েছে আর বলতে হবে না। অনেক হয়েছে এইবার ভিতরে আয়।

ব্যক্তিটি ঘরে ঢুকতেই নিবে তখন ইহান দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
— আরিহা এ কে??

ইহানের কন্ঠ কানে আসতেই আরিহা আর সেই ব্যক্তিটি ইহানের দিকে তাকায়। আরিহা ইহানের দিকে তাকিয়ে বলে,

— তুমি চিনবে না তাই পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। হি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড জিসান এন্ড জিসান হি ইজ মাই হাসবেন্ড ইহান।

ইহান এইবার সুরু দৃষ্টিতে জিসানের দিকে তাকায়। জিসান তা দেখে দাঁত বের করে একটা হাসি দেয়৷ অতঃপর হুট করেই চেঁচিয়ে উঠে,

— ও মাগো মেরা টুরু সতিন!!!

#চলবে