অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
5519

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আপুর গায়ে হলুদের হলুদ নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখনি শাড়ির সাথে পা ভেজে হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলে কেউ আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি। আমি ভয়ে পিটপিট করে চোখ খুলি। চোখ খুলে এক জোড়া মুগ্ধতার দৃষ্টি দেখতে পাই।

আমি মৃদু স্বরে বলি, রিয়ান ভাই।

রিয়ান ভাই আমাকে সোজা করে দাঁড় করায়। এতক্ষণ যে চোখ জুড়াতে মুগ্ধতা ছিল এখন তা ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

এই মেয়ে তোর কোনো কমসেন্স নাই। এখন যদি পড়ে যেতি তাহলে। (ধমকের সুরে)

আমি ভয়ে কেঁপে ওঠি। আমি মৃদু আওয়াজে বলি, সরি।

তোর সরি ধুয়ে পানি খাবো আমি।

আপনি সরি ধুয়ে পানি খেতে যাবেন কেনো? আপনি গ্লাস ধুয়ে পানি খাবেন।

আমার এখন ইচ্ছে করছে থাপরায়া তোর দাঁত ফালাইয়া দেই।

আপনি অলওয়েজ আমাকে বকেন কেনো?

তুই বকার মতো কাজ করিস তাই বকি। এখন তাড়াতাড়ি হলুদ নিয়ে যা।

আমি মাথা নেড়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হই।

ঐ শুন।

কী?

শাড়ি সামলাতে পারিস না তাহলে শাড়ি পরিস কেনো? নেক্সট টাইম জেনো তোকে শাড়ি পড়তে না দেখি। এখন যা।

আমি মাথা নেড়ে চলে আসি। সবাই মিলে আপুকে হলুদ লাগাচ্ছে। আমি স্টেইজের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ দুটো টলমল করছে। যেকোনো সময় দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে।

আচ্ছা মেয়েদের বিয়ের পর নিজের বাড়ি নিজের পরিবার ছেড়ে অন্য কেনো কারো বাড়িতে যেতে হয়? এই অদ্ভুত নিয়ম কে তৈরি করছে?

এসব ভেবেই টলমল পায়ে ঐ স্থান ত্যাগ করলাম। নিজের রুমে এসে বেলকনিতে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ি। আজ অনেক কাঁদতে ইচ্ছে করছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ‘এই অদ্ভুত নিয়ম মানি না। কেনো মেয়েদের বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়? কেনো তারা নিজের বাড়িতে থাকতে পারে না’।

কাঁদতে ইচ্ছে করলেও আজকে কাঁদতে পারছি না। কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে আসছে। হঠাৎ কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে ওঠি। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেই। কারণ এই ছোঁয়াটার সাথে আমি গভীর ভাবে পরিচিত। এটা আর কেউ নয় রিয়ান ভাই। কিছু না ভেবেই ঝাপিয়ে পড়ি তার বুকে হাউ মাউ করে কেঁদে দেই। অবচেতন মন বলছে রিয়ান ভাই আমার কান্না শুনে বিচলিত হয়ে গেছেন। রিয়ান ভাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

রিয়া কী হয়ছে তোর এভাবে কাঁদছিস কেনো?

আমি কান্নার জন্য কথা বলতে পারছি না।

এই রিয়া প্লিজ কান্না থামা।

রিয়ান ভাইয়ের কোনো কথাই জেনো আমার কানে পৌচাচ্ছে না।

রিয়ান ভাই এবার হালকা ধমক দিয়ে বলে, কান্না থামাবি নাকি থাপ্পড় দিব।

রিয়ান ভাইয়ের ধমক শুনে কান্না আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। আমি অভিমানে মুখ ঘুরাই।

কথা বলবো না উনার সাথে। সব সময় শুধু আমায় বকে।(মনেমনে)

কী হয়ছে আমার অভিমানি পাখির?

আমি রাগ করছি। আপনার সাথে আমি কথা বলবো না।

রিয়ান ভাই এক হাত বাড়িয়ে আমার মুখটা উনার দিকে ঘুরায়। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আমি মুগ্ধ হয়ে উনার হাসি দেখছি। হাসলে ছেলেটাকে কি সুন্দর দেখায়। এই ছেলেটার সব কিছু এতো পারফেক্ট কেনো। কী সুন্দর করে হাসে? পূর্ণিমার রাত হওয়ায় আকাশে গোলাকার রুটির মতো চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলো রিয়ান ভাইয়ের মুখে পড়ায় তাকে কত স্নিগ্ধ লাগছে। হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে। ফর্সা শরিরে যেনো এই রঙটা ফুটে উঠেছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে এই রঙটা তৈরির করা হয়েছে এক মাত্র রিয়ান ভাইয়ের জন্য। এই রঙটা উনি ছাড়া অন্য কেউ পড়লে বড্ড বেমানান লাগবে। আচ্ছা উনি এতো সনন্দ কেনো? উনি কী জানেন নাহ ছেলেদের এতো সুন্দর হওয়া মানায় না।

আমার এসব আকাশ-পাতাল ভাবনার মাঝেই কারো মিষ্টি কন্ঠ কানে আসছে। পাশ ফিরে দেখি রিয়ান ভাই চোখ বন্ধ করে গান গাইছে। আমি মুগ্ধ হয়ে উনার প্রতিটি গানের লাইন অনুভব করতে থাকি।

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে,
রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে ।

আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে,
তোমার কাছে এসে।

তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে,
আমার ছাদে এসে,
ভোরের শিশির ঠোঁট ছুঁয়ে যায়,
তোমায় ভালোবেসে।

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে,
রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে ।

————————————–

গত তিন ঘন্টা যাবত পার্লারে বসে আছি কিন্তু আমার শ্রদ্ধেয় বড় বোনেদের এখনো সাজ শেষ হয় নি। অপেক্ষা জিনিসটা বরাবরই আমার কাছে অসহ্য লাগে। আমার কোনো কালেই অতিরিক্ত সাজগোজ পছন্দ নই। আমার পছন্দ নিরামিষ টাইপের সাজ। আমি পার্লারে আসতে চায়নি। আপুর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের জন্য আসতে হয়েছে। আমাকে আরো ৩০ মিনিট বসিয়ে রাখার পর তাদের সাজ কম্পলিট হলো। পার্লার থেকে বের হয়ে বাসা থেকে পাঠানো গাড়িতে ওঠে বাসার দিকে রওনা দেই।

বাসার কাছে এসে গাড়ি থামে। গাড়ি থেকে নেমে গেইট দিয়ে ঢুকতেই আমার চোখ জোড়া এক জায়গায় স্থির হয়ে গেলো। রিয়ান ভাই কারো সাথে কোনো বিষয় নিয়ে ডিসকাস করছে। রিয়ান ভাইকে দেখতে পুরা ব্ল্যাক কিং লাগছে। আমার আর রিয়ান ভাইয়ের ড্রেসের রঙ এক হয়ে গেছে। আমি ব্ল্যাক লেহেঙ্গা পড়ছি।

এই রিয়া রিয়াদ ভাইয়ের রুম থেকে মালাগুলো নিয়ে আয়।

মহুয়া আপু কথাটা বলে দ্রুততার সঙ্গে ঐ স্থান
ত্যাগ করে। আমি ও ভাইয়ার রুমের দিকে যেতে লাগলাম। ভাইয়ার রুমে যেতে হলো স্টোর রুমের সামনে দিয়ে যেতে হয়। আনমনে করিডোর দিয়ে হাঁটছিলাম তখন এক জোড়া হাত আমাকে টেনে স্টোর রুমের ভিতরে নিয়ে যায়। স্টোর রুমের মৃদু আলোয় লোকটার মুখ দেখে আমার অন্তর আত্না কেঁপে ওঠে।

মুখ দিয়ে অস্পষ্ট সুরে বের হয়, আপনি।

চলবে…..