অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-০৬

0
5446

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

মুখ দিয়ে অস্পষ্ট সুরে বের হয়, আপনি।

আমি দু কদম পিছিয়ে যাই।

ওহ জানেমান তোমার দেখা যায় আমার কথা মনে আছে।

আপনি এখানে কেনো এসেছেন?

জেল থেকে বের হয়ে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি বেবি।

একদম ওল্টা পাল্টা কথা বলবেন নাহ। এক্ষুনি এখান থেকে বের হয়ে যান।

আজকে কতদিন পরে তোমার সাথে দেখা হলো আর তুমি আমাকে এভাবে চলে যেতে বলছো। দিস ইজ নট ফেয়ার বেবি। একটু মিষ্টি করেও তো কথা বলতে পারো।

একদম আমার দিকে এগুবেন না।

তা বললে কী করে হয়?

বলছি ভালো হবে না কিন্তু।

খারাপ হবার আর কী বাকি আছে? শুধু মাত্র তোর জন্য আমি ১ বছর জেল কাটছি। শুধু মাত্র তোর জন্য রিয়ান আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিছে। তোকে আর রিয়ানকে তো আমি এতো সহজে ছাড়বো না। আজ থেকে আমার খেলা শুরু। আবার দেখা হবে বাই বেবি।

আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপছি । হাত দিয়ে কপালের গাম মুছে স্টোর রুম থেকে বের হই। ভাইয়ার রুম থেকে ফুলের মালা নিয়ে আপুর রুমে যাই।

একটা ফুলের মালা আনতে এতক্ষণ লাগে।

সরি আপু খুঁজতে লেইট হয়ে গেছে।

এখন দে।

আমি গিয়ে আপুর কাছে বসলাম।

কী হয়ছে রিয়া? তোকে কেমন জানি দেখাচ্ছে। তোর কী শরীর খারাপ লাগছে?

আমি মাথা নেড়ে না বললাম।

তাহলে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?

আমি আপুর দিকে ছলছল চোখে তাকালাম।

এই রিয়া তুই কাঁদছিস কেনো? তোর শরীর খারাপ লাগছে? তোকে কেউ কিছু বলছে? একবার নামটা বল মেরে নাক ভেঙে দিব।

আমি ফিক করে হেসে দিলাম।

তুমি বিয়ের কনে হয়ে মারামারি করবে। লোকে কী বলবে?

আমি লোকের কথায় কান দেই না। আমি তোর জন্য সবকিছু করতে পারি।

আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।

তুমি আজকে চলে গেলে কে আমার খেয়াল রাখবে আপু?

আপুও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।

আমাকে ছাড়াই কান্না কাটির পর্ব শুরু হয়ে গেছে?

দরজায় হেলান দেওয়া অবস্থায় ভাইয়া কথাটা বললো। আপু ভাইয়ার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলল,

ভাইয়া।

ভাইয়া এসেও আপুকে জড়িয়ে ধরে। ভাইয়ার চোখের কোণেও পানি চিকচিক করছে। মানুষ বলে ছেলের সহজে কাঁদে না । এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। ছেলেরাও কাঁদে কিন্তু তারা তাদের কষ্টটা সবার সামনে প্রকাশ করে না। প্রিয়জনের কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়ার কষ্ট সবারই হয়।

আমার ছোট বোনটা কত বড় হয়ে গেছে? আজকে তার বিয়ে।

আপু কোনো কথা বলছে না শুধু ফুফিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

বাইরে থেকে আওয়াজ আসছে বর আসছে। এটা শুনার সাথে সাথে আমার সব কাজিনরা চলে যায় গেইট আটকাতে। কিন্তু আমি স্থির হয়েই বসে আছি।

এতো কাঁদলে তোর সাঁজ নষ্ট হয়ে যাবে। তোকে পত্নীর মতো লাগবে। পরে তোর বর তোকে দেখে ভয়ে বিয়ে না করেই পালিয়ে যাবে।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি আর আপু ফিক করে হেসে দেই।

ভাইয়া আমার মাথায় চাটি মেরে বলে, তুই এখানে বসে আছিস কেনো? গেইট ধরবে কে? যা বলছি।

আমি যাবো না।

ভাইয়া আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলে, তোর একমাত্র বোনের বিয়ে একদিনই পাবি হবু জিজুকে ফকির বানানোর জন্য।

আমি মুখ ফুলিয়ে বলি, আমি যাবো না।

ভাইয়া ধমক দিয়ে বলে, এক্ষুনি যা।

অগ্যতা ভাইয়ার ধমক শুনে বাইরে বের হয়ে যাই। গেইটের কাছে গিয়ে দেখি আমার কাজিনরা কোমড় বেধে ঝগড়া করছে বরপক্ষের সাথে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে দুই পক্ষের কেউই কোনো সমাধানে আসতে পারে নাই। আমি দুরে দাঁড়িয়ে তাদের ঝগড়া দেখছি। তখনি তিশা আমাকে ডেকে বলে,

রিয়া দেখ তোর জিজু কতো কিপ্টা?

আমি তাদের কাছে এগিয়ে গেলাম।

তখনি জিজু বলে, আমার শালিকার এতক্ষণ পরে আমার কথা মনে পড়লো।

আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই জিজুর পাশের একটা ছেলে বলে,

এটাই তোর ওয়ান এন্ড ওনলি শালি। দেখতে কিন্তু হেব্বি। বাট একটু বাচ্চা বাচ্চা টাইপের।

জিজু দিস ইজ নট ফেয়ার আপনার সামনে আমাকে টিজ করছে আপনি কিছু বলবেন নাহ।

চুপ কর শালা।

আমি তোর শালা না তোর শালা ভিতরে। আমি তোর বন্ধু কিন্তু একজন চাই়লে ভবিষ্যৎ এ অন্য কিছু হলেও হতে পারি।

আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারে। আমি ভেংচি কেটে প্রমির দিকে তাকিয়ে বলি,

তোরা কত টাকা দাবি করছিস?

ত্রিশ হাজার টাকা।

মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা।

আদ্রিয়ান জিজু অবাক হয়ে বলে, ত্রিশ হাজার টাকাও মাত্র ।

পঞ্চাশ হাজার টাকার কম দিলে আমি আমার বোনকে আপনার কাছে বিয়ে দিবো না হুহ।

এই যে বেয়াইনসাব আপনারা কী এখানে ভিক্ষা করতে আসছেন।

জেরিন আপু কপট রাগ দেখিয়ে বলে, ঐ আপনি কাকে ভিক্ষারি বলছেন? আপনার কোন এঙ্গেল দিয়ে আমাদের ভিক্ষারি মনে হচ্ছে।

সব এঙ্গেল দিয়েই।

ইউ।

ইরাদ।

এদের ঝগড়া দেখে এখন আমার রাগ ওঠে যাচ্ছে।

জেরিন আপু একটু চুপ করো। আর ইউ ইরাদ, ফিরাদ, জিরাদ যেই হন না কেনো আপনার সাথে কথা বলতে আমরা আগ্রহী নই। জিজু আপনি টাকা দিবেন নাকি আপুকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিব। বিয়ে বাড়িতে কিন্তু ছেলের অভাব নাই।

পাশ দিয়ে রোহান ভাইয়া যাচ্ছিলেন তিনি বলেন, আমি কিন্তু এক পায়ে রাজি বিয়ে করার জন্য।

একটা ছেলে ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলে, এতো সহজে কিন্তু টাকা দিবো না।

ছেলেটার হাসিটা দেখে মনে হচ্ছে ছেলেটা নিজেকে নিজে বোকা প্রমান করতে চাইছে। উনি উনার হাসি দ্বারা এটা বোঝাচ্ছেন যেনো আমি হ্যাবলা, আমি হ্যাবলা।

আমি ছেলেটার দ্বিগুণ দাঁত কেলিয়ে হেসে বলি, ভাইয়া আপনার হাসিটা কিন্তু ইউনিক। এরকম হাসি সচরাচর দেখা যায়।

আমার কথা শুনে ছেলেটা থতমত খেয়ে যায়। আমি জিজুর দিকে ভ্রু নাচিয়ে জিঙ্গেস করি ভাইয়া আপুকে কী রোহান ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দিব?

চলবে…..

( আপনাদের কিছু কথা ক্লিয়ার করে দেই। অনেকে বলেছেন রিয়াদ রিয়াকে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে গেছে। রিয়াদ রিয়ার ভাই হই তাই এভাবে টেনে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। রিয়ার তিন ভাই বোন রিয়া, রিয়াদ, রোজ।)