#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১১
#তাসনিম_ জাহান_রিয়া
কতদিন পরে পরে নিহু ভাইয়াকে দেখবো।
নিহান তোর সাথে দেখা হবে এটা ভেবেই অনেক এক্সাইটেট। এই দুই বছরে তো তুই একবারও নিহানের সাথে কথা বললি না।
রাগ করছিলাম তাই কথা বলি নাই।
চল ডিনার করবি।
আমি খাবো না।
কেনো?
ভালো লাগছে না।
তুই না খেলে কিন্তু আমি ও খাবো না।
ভাইয়া প্লিজ ভালো লাগছে না।
আজকে তোকে আমি খাইয়ে দিবো।
চলো।
ডিনার করতে গেলাম। ভাইয়ে আমাকে খাইয়ে
দিচ্ছে আর আমি ভাইয়াকে। ডাইনিং রুমে জুড়ে বিরাজ করছে নিরবতা শুধু চামচের টুং টাং শব্দ। নিরবতা ভেঙে ভাইয়া বলল,
আব্বু আগামীকাল আমি আর রিয়া বড় খালা মনির বাসায় যাব যদি তোমরা অনুমতি দাও।
আগামীকাল যাওয়ার কী দরকার? এখনি চলে যা। এয়ারপোর্ট থেকে নিহানকে রিসিভ করতে পারবি।
আমরা এখনি যাবো আব্বু।
হুম।
আমি খুশিতে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
রিয়া তাড়াতাড়ি রেডি হ আমি এখনি রেডি হয়ে আসছি।
আচ্ছা।
আমি রুমে এসে ফোনটা হাতে নিলাম দেখি রিয়ান ভাইয়ের ৩৪ টা মিসড কল আর অসংখ্য ফোন। আবার ফোনটা বেঁজে ওঠলো রিয়ান ভাই কল করছে। আমি রিসিভ না করে ফোনটা অফ করে রেখে দিলাম। আমি একবার কারো ওপর রাগ বা অভিমান করলে কেউ আমাকে সহজে মানাতে পারে না। আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা আমি ছোট ছোট বিষয় নিয়ে রাগ করে জেদ করে বসে থাকি।
ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি আর ভাইয়া রওনা দিলাম বড় খালামনির বাসা উদ্দেশ্যে। প্রায় তিন ঘন্টা জার্নির পর বড় খালামনির বাসায় পৌছালাম। আপুর বিয়েতে বড় খালামনিরা কেউ যেতে পারেনি কারণ পপসি (খালামনির হাজবেন্ড) অসুস্থ ছিল।
ভাইয়া কলিংবেল বাজালো। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করিয়ে খালামনি এসে দরজা খুলে দিল। আমাদের দেখে খালামনির খুশি উপচে পড়ছে। সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম।
এতো বড় বাড়িতে খালামনি, পপসি আর মেহেরিন আপু থাকে।
(নিহান ভাইয়া পড়াশোনার জন্য দুই বছর আগে পাড়ি জমিয়েছে অন্য দেশে। মেহরেন আপু আমার এক বছরের বড়। নিহান ভাইয়া ভাইয়ার সমবয়সী। খালামনির বড় মেয়ে মেহেরুন আপুর বিয়ে হয়ে গেছে তিন বছর আগে। মেহেরুন আপুর হাজবেন্ড পেশায় জার্নালিস্ট ।মেহেরুন আপুর ২ বছরের একটা ছেলে আছে।)
যা তোরা দুইজন ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নে।
ভাইয়া চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
খালামনি মেহেরিন আপু কই?
মেহেরিন ওর ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে গেছে। তোরা তো আগে বলিস নি আজকে আমাদের বাসায় আসবি তাই মেহেরিন পার্টিতে গেছে।
—————————-
রুমে বসে বসে নিউজ ফিডে ঘুরাঘুরি করছিলাম। উদ্দেশ্যে রিয়ান ভাইকে জ্বালানো। আমি অনলাইনে আছি তবু উনার মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছি না এটা দেখলে উনি রেগে আগুন হয়ে যাবেন। কথায় আছে না দেখবে আর জ্বলবে লুচির মতো ফুলবে। রিয়ান ভাইয়ের অবস্থাও এখন সেইম হবে। আমার এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই আমার ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠলো। মেসেজটা আর কারো না রিয়ান ভাইয়ের । মেসেজটা ওপেন করি।
রিয়া আমি তোকে কতবার সরি বলবো। প্লিজ ক্ষমা করে দে। আমি রাগের মাথায় কী বলেছি আমি নিজেও বুঝতে পারি নি। এই কলিজা প্লিজ ক্ষমা করে দে।
রিয়ান ভাইয়ের ফোন থেকে কল আসলো কিন্তু রিসিভ করলাম না। আবার মেসেজ টোন বেজে ওঠলো।
রিয়া তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস। এবার ফোন রিসিভ না করলে তোর বাসায় গিয়ে তোকে থাপড়ায়া আসবো।
এবার ফোন রিসিভ না করলে তোর বাসায় গিয়ে তোকে থাপড়ায়া আসবো। (ব্যাঙ্গ করে) আমি বাসায় থাকলে তো তুই আমাকে থাপড়াইবি। ওহ রিয়ানের বাচ্চা তো জানেই না আমি বাসায় নাই। ( বিড়বিড় করে)
রিয়ান ভাই আবার ফোন দিল কিন্তু আমার কোনো হেলদুল নাই। ফোনটা অফ করে শুয়ে পড়লাম। শুধু এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু দু চোখের পাতা এক করতে পারছি না। প্রত্যেক দিন এমন সময় আমি মরার মতো পড়ে পড়ে ঘুমাই। আর আজকে দু চোখ জুড়ে ঘুম নেই।
সকালে
সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখি ৮ টা বাঁজে। রাতে অনেক দেরি করে ঘুমানোর ফলে সকালে ওঠতে দেরি হয়ে গেছে। আড় মোড় ভেঙে বিছানা থেকে নামলাম। এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে খোপা করে নিলাম। পা বাড়ালাম ওয়াশরুমের দিকে।
তখনি পিছন থেকে কেউ ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। আমি ভয়ে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে দিলাম এক চিৎকার।
আআআআআআ
চলবে…
#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১২
#তাসনিম_ জাহান_রিয়া
তখনি পিছন থেকে কেউ ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। আমি ভয়ে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে দিলাম এক চিৎকার।
আআআআআআ
এই সয়তান মাইয়া এতো জুড়ে চিল্লাস কেন?
পরিচিত কন্ঠ শুনে চোখ খুলে পিছন ফিরে দেখি মেহেরিন আপু।
আপু (চিৎকার করে)
মেহেরিন আপুকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরি। আচমকা এমন ঝাপটে ধরায় আপু টাল সামলাতে না পেরে আমাকে নিয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।
ও মাগো আমার কোমড়টা গেলো গো।
আমি আপুর ওপরে পড়ায় ব্যথা পায়নি। আমি আপুর ওপর থেকে ওঠে আপুকে টেনে তুলে বিছানায় বসাই।
তোর এই বাদরের মতো লাফালাফি জীবনে গেলো না। আজকে তোর জন্য আমার কোমড় ভেঙে গেলো।
আমি কান ধরে ঠোঁটে উল্টিয়ে বলি,
সরি আপু বুঝতে পারিনি।
হয়ছে আর ঢং করতে হবে না।
কী বললা আমি ঢং করি?
তখনি আপুর ফোনের মেসেজ টোন বেঁজে ওঠলো। আপু মেসেজটা দেখে মুচকি হাসলো। আমি আপুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকি। অতপর ছুঁ মেরে আপুর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেই।
রিয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আমার ফোনটা দে বলছি।
না দিবো না। আগে তো দেখি কার মেসেজ দেখে আমার সুইট আপুটার মুখে হাসি ফুটে ওঠলো।
আপু আমার কাছ থেকে ফোন নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। একসময় আমার এক হাত ধরে আপু টান দেই। আমি আপুকে নিয়ে বিছানায় পরে যাই। আপু নিচে আর আমি আপুর ওপরে। আপু এখনো ফোন নেওয়ার চেষ্টা করছে।
রিয়া তোর কী হয়ছে? এভাবে চিৎকার করছিস কেনো?
ভাইয়া রুমে ঢুকতে বললো। আমাদের দুজনকে এভাবে দেখে কতক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে ব্যপারটা বুঝার চেষ্টা করে। কয়েক মিনিট এর মাঝে ঘর কাঁপিয়ে হাসি শুরু করে দেয়। কারো শব্দ পেয়ে আমরা দুজন দরজার দিকে তাকায়। দরজা তাকিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমার রাগ ছাদে ওঠে গেলো। ভাইয়া ফোন দিয়ে আমাদের দুজনের ছবি তুলছে। আমরা দুজন লাফ দিয়ে বিছানা থেকে ওঠে গেলাম।
ভাইয়া একদম ছবি তুলবে না।
কিন্তু আমি তো ছবি তুল নিয়েছি। এই ছবি গুলো তো আমি ফেসবুকে আপলোড করবো। আহা কি কিউট কাপেল। ইশ তোরা রোমান্টিক মোমেন্ট স্পেন্ড করছিলি আমি এসে তোদের ডিস্টার্ভ করে দিলাম। আমি চলে যাচ্ছি তোরা কান্টিনিউ কর।
আমরা দুজন একসাথে চিৎকার দিয়ে বললাম, ভাইইইইয়া।
ভাইয়া কানে আঙ্গুল দিয়ে বলে, এতো জুড়ে চিল্লাস কেন?
আমরা কোনো কথা না বলে ভাইয়ার কাছে গিয়ে পিঠে ধুমধাম করে কিল দিতে লাগলাম। ভাইয়া আমাদের কাছ থেকে কোনো মতে পালিয়ে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিল।
রিয়া আমার ফোন দে।
আগে আমার জিজুকে দেখবো তার পরে।
মেসেজটা ওপেন করে আমার চোখ ছানাবড়া এ আমি কাকে দেখছি? কতক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ করে জুড়ে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠি,
ইয়াহু। আরফান ভাইয়া আমার জিজু।
আপু আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
তুই আরফানকে চিনিস?
চিনি বলতে খুব ভালো করে চিনি। আরফান ভাইয়াকে তো আমি ছোট বেলা থেকে চিনি।
কেমনে?
আরফান ভাইয়া ভাইয়ার স্কুল ফ্রেন্ড। আরফান ভাইয়া আর ভাইয়া খুব ভালো বন্ধু। আরফান ভাইয়া আমাদের বাসায় প্রায়ই আসতো। তাই আরফান ভাইয়ার সাথে আমার অনেক ভালো বন্ডিং হয়ে যায়। আরফান ভাইয়া পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে চলে যায়। আমরা ঐ শহর ছেড়ে এখানে চলে আসি। ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হই আর আরফান ভাইয়ার সাথে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
তাহলে তুই সেই।
মানে?
আরফানের বেবি ডল। আরফান তোকে আর রিয়াদ ভাইকে পাগলের মতো খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। আরফানের মুখে তোর কথা এতো শুনেছি যে তোকে দেখার প্রবল ইচ্ছা জাগে আমার মনে। আমি কী জানতাম আরফানের বেবিডল আমার পিচ্চি বোনটা। আরফানকে তোর কথা বলি ফোনটা দে জানলে অনেক খুশি হবে।
উহু আগে আমার কিউট জিজু + ভাইয়ার সাথে ফাইজলামি করি তারপর আমার কথা বলো। আগে তো দেখি উনার আমার কথা কতটা মনে আছে।
আপুর ফোন থেকে আরফান ভাইয়াকে মেসেজ দেই।
অনি কী করো?
আরে রিয়া এটা কী করলি? এখনি আরফান আমার ওপর রেগে যাবে।
কেনো?
আরফান তো জানে না তুই তাকে মেসেজ দিয়েছিস। এই নামে আরফানকে কেউ ডাকলে আরফান অনেক রেগে যায়। এই নামে ডাকার অধিকার শুধু তার বেবিডলের আর কারো না।
আমি হো হো করে হেসে দিলাম।
আপুর ফোনে মেসেজ আসলো।
মেহু তোমাকে আমি না করছি না আমাকে এই নামে ডাকবে না।
কেনো ডাকবো না একশো বার ডাকবো।
দেখো মেহু আমি এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না।
কেউ আমার কাজে বাধা দেখ সেটা আমি পছন্দ করি না।
দেখো মেহু আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।
তো আই কিরতাম।
এসব কী ভাষা ইউজ করছো? আমি কিন্তু সত্যি সত্যি রেগে যাচ্ছি।
রেগে চুলে সুইংগাম লাগিয়ে দিবো।
হোয়াট দা হেল তুমি এমন বিহেভ করছো কেনো?
এখন আর আমাকে ভালো লাগে না তাই না। আমি তো পুরোনো হয়ে গেছি।
সত্যি করে বলো তুমি কে? তুমি মেহু হতেই পারো না। এমন অভিমান, জেদ, রাগ, কথা বলার স্টাইল একজনেরই ছিল।
সাথে আরফান ভাইয়া ফোন দিল। আমি ফোনটা মেহেরিন আপুর হাতে ধরিয়ে দিলাম।
আপু তুমি একদম বলবে না যে আমি ছিলাম। আমি ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিতে চাই। তুমি যদি বলে দাও তাহলে আমি তোমার সাথে কোনো দিন কথা বলবো না।
আপু ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করে আর আমি ওয়াশরুমে চলে যাই।
—————————————-
নিহান ভাইয়ার ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়ে গেছে। নিহান ভাইয়া দুই দিন পরে আসবে। আমি রাতে শুয়ে রিয়ান ভাইয়ের কথা ভাবছিলাম তখন বেলকনিতে ধপ করে কিছু পড়ার আওয়াজ হলো। আমি শুয়া থেকে ওঠে বেলকনির দিকে পা বাড়ালাম। বেলকনিতে গিয়ে যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমি ভয়ে দু পা পিছিয়ে গেলাম।
চলবে…