অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-১৪

0
5558

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১৪
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

গত ৩০ মিনিট ধরে আমি, ভাইয়া আর মেহেরিন আপু অপেক্ষা করছি। যার জন্য এতো অপেক্ষা তারই আসার কোনো খবর নাই। আমার ভিষণ রকম অস্বস্তি হচ্ছে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। চারদিকে কত মানুষ দম বন্ধ হয়ে আসছে।

ভাইয়া আমি বাইরে যাচ্ছি।

কেনো?

এত মানুষের ভীরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্লিজ ভাইয়া একটু বাইরে যাই।

আচ্ছা যা। কিন্তু কাছাকাছি থাকিস।

আচ্ছা।

এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে একটু দুরে আসতেই রিয়ান ভাইকে চোখে পড়ে। ওনি একটা বড় বিল্ডিং থেকে বের হয়ে গাড়ি ওঠছেন। আমি দৌড়ে ওনার কাছে গিয়ে পিছন থেকে ওনার হাত টেনে ধরলাম। রিয়ান ভাই যখন আমার দিকে ফিরলেন তখন ওনার মুখে বিরক্তি ভাবটা স্পষ্ট। পরমুহূর্তে আমাকে দেখে অবাক হয়ে যান।

রিয়া তুই এখানে।

হুম।

এখানে কী করছিস?

তুমি জানো না নিহান ভাইয়া আসছে।

নিহান ভাইয়ার নামটা শুনেই রিয়ান ভাইয়ের মুখটা চুপসে গেলো। যাস্ট ছোট করে বলল ওহ।

তুই এয়ারপোর্টে না থেকে এখানে কী করছিস?

ঐখানে একটু ভালো লাগছিলো না দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তাই হাওয়া খেতে বের হয়েছিলাম। তখন আপনাকে দেখতে পাই আর ছুটে চলে এলাম।

এখন কোথায় যাবি?

তোমার সাথে।

নিহান ভাইয়াকে রিসিভ করতে যাবি না।

না আর যেতে ইচ্ছে করছে না।

আমার সাথে কোথায় যাবি?

আজকে আপনার সাথে ঘুরবো।

আমার তো কাজ আছে।

ওহ। তাহলে আমি বাসায় চলে যাই।

আমি চলে আসতে নিলেই রিয়ান ভাই আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মারে। আমি টাল সামলাতে না পেরে ওনার বুকে আঁচড়ে পড়ি। আমি চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি রাস্তা দিয়ে যারা হেঁটে যাচ্ছে তারাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। অনেকে মুচকি মুচকি হেসে চলে যাচ্ছে। আমি ওনার থেকে যতো ছুটার চেষ্টা করছি ওনার হাতের বাধন তত শক্ত হচ্ছে।

কী করছেন ছাড়ুন? দেখুন সবাই আমাদের দিকে কীভাবে তাকিয়ে আছে?

তাতে আমার কী?

আপনার কিছু না হলেও আমার অনেক কিছু ছাড়ুন বলছি।

ওনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দুরে সরে দাঁড়ালেন। হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালেন উনি নিজেও বসলেন। আমি কিছু বুঝতে না পেরে ওনার দিকে তাকাই।

আজকে সারাদিন তোকে নিয়ে ঘুরবো।

আপনার না কাজ আছে।

আমার কুইন মন খারাপ করে রাখলে কী আমার কাজে মনে বসবে। এখনো কী আমার কুইনের মন খারাপ।

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালাম।

এভাবে হেসো না গো বুকে বড় লাগে।

রিয়ান ভাইয়ের ছোট একটা কথায় আমার মনের মাঝে শিহরণ বয়ে গেলে। ভিতরে আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। ওনি আমাকে এই প্রথম ‘তুমি’ করে সম্বোধন করলেন। আজকে তুমি শব্দটা অন্যরকম লাগছে কেনো? ওনার মুখ থেকে শুনলাম বলে অন্যরকম লাগছে। কারো কাছে শুনেছিলাম যে যাকে ভালোবাসে তার হাঁচির শব্দও গানের সুরের মতো লাগে। তাহলে কী আমিও রিয়ান ভাইকে ভালোবাসি। বলতে কোনো বাধা নেই আমি রিয়ান ভাইকে ভালোবাসি।

রিয়া রিয়ানকে ভালোবাসে। ( বিড়বিড় করে)

এটা বলে লজ্জায় দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলাম। আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ওনাকে দেখার চেষ্টা করলাম। ওনি আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ভুবন ভুলানো একটা হাসি দিলেন। ইশ এই ছেলেটার হাসি এত সুন্দর কেনো? নির্ঘাত কোনো একদিন এই ছেলের হাসির জন্য আমি হার্ট এট্যাক করবো। আজ বড্ড ইচ্ছে করছে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলতে,

ওহে বালক তুমি কী জানো তোমার ঐ হাসি কত মেয়ের হার্ট এট্যাকের কারণ?

নিজের ইচ্ছে কখনো দমিয়ে রাখতে নেই। ইচ্ছেকে মুক্ত পাখির মতো উড়তে দিতে হয়। তাই যা বলতে ইচ্ছে করছে বলে ফেলো। এতো মেয়ের হার্ট এট্যাকের কারণ হতে চাই না এজনের হলেই হবে।

হঠাৎ রিয়ান ভাইয়ের এমন কথায় আমি চমকে ওঠি। ওনি এগুলো জানলেন কী করে আমি কি জুড়ে কথা বলছিলাম? না আমি তো মনে মনেই বলছিলাম। তাহলে কী ওনি আমার মনের কথা বুঝতে পারেন? এখন তো ওনার জন্য মনে মনেও কথা বলা যাবে না। হঠাৎ আমার মাথায় প্রশ্ন আসলো ওনি আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে?

আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

সারপ্রাইজ।

আমরা শহর থেকে অনেকটা দুরে চলে এসেছি।

আমার সাথে যেতে ইচ্ছে করছে না বা আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিস না।

আমি আপনাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। (আনমনে)

আমি কথাটা বলে রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকাই ওনার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি। হয়তো ওনি এইজন্যই খুশি আমার বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন। আমি ভাইয়াকে ফোন করে বলে দিলাম আমি রিয়ান ভাইয়ের সাথে আছি।

কিছুক্ষণের মাঝেই গাড়ি থামলো একটা নির্জন জায়গায়। রাস্তার দুই পাশে ঘন জঙ্গল। রিয়ান ভাই গাড়ি থেকে নেমে আমাকেও হাত ধরে গাড়ি থেকে নামাই। আমার হাত ধরে সামনের দিতে হাঁটা দেয়। ছোট কাটো একটা জঙ্গল পেরিয়ে রিয়ান ভাই আমাকে একটা নদীর কাছে নিয়ে আসে। নদীটা এতো বড় না হলেও একেবারে ছোটও না। পরিবেশটা অনেক শান্ত শহর থেকে একদম আলাদা পরিবেশ।

রিয়া চল পানিতে পা ভিজাই।

চলেন।

দুইজন পানিত নামলাম। আমার অনেক ভালো লাগছে।

রিয়ান ভাই একটা গান শুনাবেন প্লিজ।

আচ্ছা।

ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল
কে আছে বল…..
তোরি মতো এমন…
কে বুঝে বল
বুঝে আমার এই মন..

ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল
কে আছে বল…..

আহহহহহহহ

গানের মাঝে রিয়ান ভাইয়ের চিৎকার শুনে পাশে তাকিয়ে দেখি রিয়ান ভাই মাথায় হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে পানিতে বসে আছে। রিয়ান ভাইয়ের মাথা থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। রিয়ান ভাই মাটিতে পড়ে যায় তখন কেউ আমার মুখ রুমাল চেপে ধরে।

চলবে…..