অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-১৫

0
5527

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

গানের মাঝে রিয়ান ভাইয়ের চিৎকার শুনে পাশে তাকিয়ে দেখি রিয়ান ভাই মাথায় হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে পানিতে বসে আছে। রিয়ান ভাইয়ের মাথা থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। রিয়ান ভাই মাটিতে পড়ে যায় তখন কেউ আমার মুখ রুমাল চেপে ধরে। আস্তে আস্তে আমার চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। বুঝতে পারলাম ঙ্গান হারাচ্ছি। চোখ বন্ধ করার আগে রিয়ান ভাইয়ের নিস্তেজ মুখটা দেখতে পেলাম। তারপর আর কিছু মনে নাই।

———————————

চোখ-মুখে পানি পড়ায় পিটপিট করে চোখ খুলি। আমার হাত-পা বেঁধে একটা দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। রুমের ভিতর ডিপডিপ করে জ্বলছে একটা এনার্জি বাল্ব। আমার সামনে একটা লোক চেয়ারে বসে আছে। মৃদু আলোয় লোকটার মুখ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। লোকটা মুখ দেখে আমি আতকে ওঠি। লোকটির চোখ মুখে হিংস্রতা স্পষ্ট। ভীতু কন্ঠে বলি,,

নিয়ন।

ওহহো জানেমান আমার নাম তোমার মনে আছে।

রিয়ান ভাই কোথায়?

হয়তো এই পৃথিবীতে আর নেই।

মানে??

খুব সহজ যেভাবে আঘাত করেছি এতক্ষণে উপরে চলে গেছে।

নাহ এটা হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না। রিয়ান ভাইয়ের কিছু হতে পারে না। উনি একদম ঠিক আছে। বুঝতে পেরেছেন আপনি। (চিৎকার করে)

আমার কথাগুলো শুনে হয়তো সামনে বসা থাকা লোকটি ভিষণ মজা পাচ্ছে তাই তো হো হো করে হাসছে। আমার এমন আর্তনাদে হয়তো উনি পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছেন।

সবকিছুর জন্য দায়ী তো আমি তাহলে আপনি রিয়ান ভাইকে কেনো মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন? উনি যা কিছু করেছেন সবকিছু আমার জন্য করেছেন। আপনি যা কিছু করার আমার সাথে করতেন কেনো রিয়ান ভাইকে মাঝখানে টানলেন?

নাগরের জন্য কষ্ট হচ্ছে বুঝি।

মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ।

চুপ থাক একদম ফটর ফটর করবি না। তোর ফটর ফটর শোনার জন্য আমি তোকে তুলি আনিনি। কে বলেছে তোর সাথে আমি কিছু করবো না? তোর এমন অবস্থা করবো যে সমাজে মুখ দেখাতেও পারবি না। রিয়ান যদি বেঁচেও থাকে তোর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও কেঁপে ওঠবে।

উনার কথাগুলো কর্নপাত হচ্ছে না। আমার এখন একটাই চিন্তা রিয়ান ভাই ঠিক আছে তো।

কেনো করছেন এমন?

জানো না রিয়ানের কলিজা। তোর আর রিয়ানের জন্য আমি দুই বছর জেল কেটেছি। তোদের জন্য আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু মাত্র তোদের জন্য মানুষ আমাকে জেল ফেরত আসামী বলে। সবাই আমার থেকে ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নেয়।

আপনি যেমন কাজ করেছেন তার জন্য আপনার উপর থুতু ফেলা উচিত। কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছেন আপনি। আমার জীবনও নষ্ট করতে চেয়েছিলেন কিন্তু রিয়ান ভাইয়ের জন্য পারেননি। আপনি আপনার কৃতকর্মের শাস্তি পেয়েছেন।

নিয়ন আমার মুখ চেপে ধরে।

চুপ একদম চুপ। তোর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। আজকের পর থেকে এই মুখ দিয়ে বুলি ফোটবে না।

নিয়ন আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করছে। লোভাতুর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নেই। নিয়ন আমার উড়নার দিকে হাত বাড়ায়। আমি নিরুপায় কিছুই করতে পারছি কারণ আমার হাত দুটো বাধাঁ। চোখ দিয়ে অঝর দাঁড়ায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আজকের পর থেকে সবাই ঘৃণিত চোখে তাকাবে। আচ্ছা রিয়ান ভাইও কী আমার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিবেন? নিয়ন আমার উড়না টান দিতে যাবে তার আগেই নিয়নের নাকে কেউ পাঞ্চ মারে। নিয়ন দুরে চিটকে পড়ে যায়। লোকটিকে দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট সুরে বের হয়,,

নিলয় ভাইয়া।

হাসিটা পরমুহূর্তেই গায়েব হয়ে যায়। কারণ নিলয় ভাইয়া নিয়নকে এলোপাতাড়ি মারছেন নিয়নের অবস্থা বেগতিক। নিলয় ভাইয়ার বিহেভিয়ার এখন সাইকোদের মতো লাগছে। নিলয় ভাইয়ার বাবা-মা এসে নিলয় ভাইয়াকে আটকায়। পুলিশ এসে নিয়নকে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে নিয়ন বলে যায়,, আমাদের তিনজনকে দেখে নিবে।

আমার মাথা ঘুরছে চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসছে। নিলয় ভাইয়া আর উনার বাবা-মা আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। তারা আসার আগেই আমি অঙ্গান হয়ে যাই। যখন ঙ্গান ফিরে আমি নিজেকে নিজের রুমে অাবিষ্কার করি। আমার দিকে তাকিয়ে আছে অনেকগুলো চোখ। আমার ঙ্গান ফিরতেই সবাই স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। আমি আশেপাশে তাকিয়ে রিয়ান ভাইকে খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু কোথাও উনাকে দেখতে পাই নাহ। আমি অস্তির হয়ে ওঠে বসি। আম্মু এগিয়ে এসে আমাকে ধরে।

রিয়া তুই রেস্ট নে তুই এখনো উইক।

আম্মু রিয়ান ভাই কই?

রিয়ান হয়তো অফিসে।

না আম্মু রিয়ান ভাই তো আমার সাথে ছিল। (প্রথম থেকে সবটা খুলে বলি সবাইকে)

আমার কথা শুনে মনি কান্না শুরু করে দেয়। সবাই মিলে রিয়ান ভাইকে খুঁজতে বের হয়।

এক সপ্তাহ হয়ে গেলো কিন্তু রিয়ান ভাইকে কেউ কোথাও খোঁজে পায়নি। মনির অবস্থা বেগতিক মনি হসপিটালে ভর্তি। অন্ধকারচ্ছন রুমটিতে বসে আছি। এক সপ্তাহে এই রুম থেকে একবারের জন্যও বের হয়নি। সবাই জোর করেও বের করতে পারেনি। সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে। এলোমেলো চুলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছি।

রিয়ান ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তো
মাত্র আমার জন্য। রিয়ান ভাই এসব ঝামেলায় ঝড়িয়েছে শুধু মাত্র আমার জন্য। আমি না থাকলে সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। রিয়ান ভাই কারো সাথে ঝগড়া করবে না আর এভাবে হারিয়েও যাবে না।

হাঁটু থেকে মাথা তুলে আশেপাশে খুঁজে একটা নাইফ হাতে নেই। নাইফটা বাম হাতের শিরা বরাবর ধরি।

চলবে…..