অন্তরিন প্রণয় পর্ব-২৬+২৭

0
486

#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব_২৬

আহনাফ দেওয়ানের মুখোমুখি গম্ভীর মুখে বসে আছেন খুরশীদ আনওয়ার।সকাল-বিকেল পেরিয়ে রাত শুরু হলো কিন্তু এখনো সেহেরিশের দেখা মিলেনি।সবাই নাওয়াখাওয়া ছেড়ে এখনো আগের সাজে বসে আছে।খুরশীদ আনওয়ারের মুখের দিকে তাকিয়ে ক্রমশ কয়েকটি ঢোক গিললেন ফাহমিদা।আজ সেহেরিশের সাথে দেখা হলে নির্ঘাত রণক্ষেত্র তৈরি হবে।

– দয়া করে এত রেগে থাকবেন না।আমরা আপনার মেয়েকে তো জলে ভাসিয়ে দেবো না।সে যেহেতু আফীফের স্ত্রী আশা করি বুঝতেই পারছেন পরিবার, সমাজে সে ঠিক কতটুকু মর্যাদা, ভালোবাসা পাবে।এই কয়েকদিনে আমাদের আফীফের সম্পর্কে খুব ভালোই জেনেছেন আশা করি।
আহনাফ দেওয়ানের কথায় আড় চোখে তাকায়
খুরশীদ আনওয়া।
– আপনাদের ছেলে নিতান্তই একজন সুদর্শন যুবক।সব দিক দিয়েই পার্ফেক্ট।তবে তার জন্য আমার মেয়ে একদম পার্ফেক্ট নয়।সে আরো ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে।

– যেখানে আফীফ নিজে সেহেরিশকে পছন্দ করেছে সেখানে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে?
– একটা কথা বলুন তো,বাংলাদেশের কথাই ধরলাম একজন ছেলে একজন মেয়ে দুজন দুজনকে পছন্দ করেই বিয়ে করে।হয় কখনো বাবা মায়ের অসম্মতি বা কখনো তাদের সম্মতিতে।কিন্তু তাদের মাঝে কি বিচ্ছেদ হয় না?একজন আরেকজন কে ভালোলাগলো,ভালোবাসলো বলেই যে বিয়ে করতে হবে এমনটা না।কে কার জন্য কতটা পার্ফেক্ট তা আগে নির্নয় করা জরুরি।
তাই আবারো বলছি আফীফের আমার মেয়েকে ভালোলাগলো বলেই এইসব পাগলামি করবে আর আমি আমার মেয়েকে হাসতে হাসতে তার হাতে তুলে দেবো তা কিন্তু নয়।আমি আমার।মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্রের সন্ধ্যান করবো।আফীফ যে আমার মেয়েকে ছেড়ে দেবেনা বা মানসিক শান্তিতে রাখবে তার নিশ্চয়তা কি?

খুরশীদ আনওয়ার থামে।এতক্ষণ আমান কিছুটা দূরে সামীর সঙ্গে অন্য সোফায় বসে রুবিক্স কিউব সমাধান করায় ব্যস্ত ছিল।কিন্তু খুরশীদ আনওয়ারের কথা কানে আসতেই তার ভেতরে চাপা রাগের সঞ্চার হয়। কাউকে কিছু প্রকাশ করতে না দিয়ে।হাতের রুবিক্স কিউবটি নাড়াতে নাড়াতে খুরশীদ আনওয়ারের মুখোমুখি সোফায় বসে পড়ে।শান্ত,তুখোড় কন্ঠে বলে,

– আঙ্কেল বললেন না বিয়ের পর আফীফ ভাই সেহেরিশ আপুকে যে ছেড়ে দেবে না তার নিশ্চয়তা কি?আমি বলে রাখছি একটা সময় আসবে আফীফ ভাই ছাড়তে চাইবে না কিন্তু আপনারা তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য উঠে পড়ে লাগবেন।এটা আফীফ দেওয়ান একবার বিয়েটা হোক তার পর দেখবেন।অবশ্য ৮০% কাজ এখন ভাইয়ের কমপ্লিট হয়ে গেছে।
– এই ছেলে কি বলছো এইসব তুমি?
– না ভয় পাবেন না।আগে কথাটা শুনুন,এতদিন ভাইয়া সেহেরিশ আপুর অসম্মতিতে কিছু বলতেও পারেনি করতেও পারেনি তবে এখন সেহেরিশ আপুর মুখ থেকে একবার যখন সম্মতি পাওয়া গেছে এবার আপু পরবর্তীতে চাইলে আফীফ ভাইয়ের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে না।

আমানের কথা শুনে বিস্তার হাসি হাসে আহনাফ দেওয়ান।
.
গাল ফুলিয়ে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে সেহেরিশ।আফীফের কান্ডে সে এবার বড্ড বিরক্ত।তার সম্মতিতে এই ছেলে যা শুরু করেছে বিয়ে হলে তো তাকে আস্ত রাখবে না।সেই সকালে সেহেরিশকে জড়িয়ে ধরে বেশ অনেক্ষণ নিঃশব্দে কাঁদে।সেহেরিশের গলায় মুখ ডুবিয়ে কান্নার ফলে তার গলার সমস্ত অংশ ভিজে আছে।এখনো কেমন ভেজা ভেজা ভাব অনুভব করছে সে।সকাল পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে। এই বিস্তার সময়ে আফীফের মুখ থেকে টুকটাক কিছু কথা বের হলেও বেশির ভাগ সময় সে চুপ করেছিল।সে শুধু তার সেহেরিশকে অনুভব করছিল।

– এবার কি আপনি আমায় ছাড়বেন?
– না।
– আমি এবার উঠবো প্লিজ সরুন।
– প্লিজ সেহেরিশ যেওনা।তোমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র নেশাটা আজ তবে কিঞ্চিৎ পরিমান ঘুচেছে।
– না সরুন।কিসব করছেন আপনি।
– কি করেছি?একটু জড়িয়ে ধরেছি,জানো তোমার গায়ের গন্ধটা আমার বেশ ভালোলাগে।একদম মোহনীয়।তুমি যখন ছোট বেলায় ঘুমিয়ে থাকতে তোমার পাশে থেকে আমি ঘ্রাণ নিতাম।
– সরুন আপনি, এটা আমার পাফিউমের ঘ্রাণ।
– বোকা মেয়ে।তুমি কি জানো তোমার শরীর ঘ্রাণ আর পারফিউমের ঘ্রাণ দুটো মিলে এলকোহল তৈরি হয়।নেশা,নেশা মস্তবড় নেশা লেগে যায়!

সেহেরিশ আফীফের ঘোর লাগা কন্ঠে ভ্রু কুচকে তাকায়।এই ছেলেকে বিয়ে করলে যে তার মৃত্যু হবে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে সেহেরিশ।প্রতিহিংসা,বিদ্বেষ, রুষ্টতা থেকে নয় বরং আফীফের ভালোবাসায় মৃত্যু হবে তার।

– মি.ঘ্রাণ বিজ্ঞানী আপনি দয়া করে উঠবেন প্লিজ আমি বাইরে যাবো।সেই সকালে আমায় বন্দি করেছেন আর এখন রাত হতে চললো।
– হুহ।
আফীফ উঠে বসে সেহেরিশ নিজেও উঠে চুল গুলো ঝাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়।আফীফের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে তাকিয়ে বিরস সুরে বলে,
– ধরুন এবার আমি আপনাকে ছেড়ে চলে গেলাম তবে কি হবে?

সেহেরিশের কথা শেষ করতে দেরি হলো কিন্তু তার উপর দিয়ে সুনামি বয়ে যেতে দেরি হলো না।সেহেরিশ পিট পিট করে চোখ খুলে তার অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছে।হঠাৎ আক্রমণে ঘাড়ের ব্যথায় এদিক থেকে সেদিক তাকাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।সে বিছানায় শুয়ে আছে আফীফ তার উপরে শুয়ে, তার দিকে তাকিয়ে আছে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে।তার তপ্ত শ্বাস আছড়ে পড়ছে সেহেরিশের চোখে মুখে।সেহেরিশ ঢোক গিলে।আফীফ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– কি বলেছো?আমাকে ছেড়ে যাবে?
– হুহ!মানে এমনি বলছিলাম।

সেহেরিশের কথা শেষ হতেই আফীফ তার গলায় মুখ ডোবায়।হঠাৎ সেহেরিশ অনুভব করে তার গলার চামড়া ভেদ করে যেন রক্ত শোষণ করতে চাইছে আফীফ।কিছুক্ষণের মধ্যেই তীব্র ব্যাথায় সেহেরিশ কেঁপে উঠেতেই আফীফ তার মুখ চেপে ধরে।বেশ কিছুক্ষণ পর আফীফ সেহেরিশকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে চুল গুলো এমন ভাবে ঠিক করছে যেন একটু আগে কিচ্ছু হয় নি।সেহেরিশ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আফীফের দিকে।সেহেরিশ গলায় হাত দিতেই লাফিয়ে উঠে,
– ইয়াক!ছিহহ গলায় লালা লাগিয়ে দিয়েছেন কেন?
– ছেড়ে যাবে বললে কেন?
– তাই বলে…আহ আমার গলায় ব্যাথা করছে।

আফীফ সেহেরিশকে টেনে আয়নার সামনে দাড় করায়।
– দেখো আমার ভালোবাসার সিলমোহর লাগিয়ে দিলাম।
– আল্লাহ আপনি এটা কি করলেন।বা..বাইট!
– উহুহ, বাইট বলছো কেন লাভ বাইট বলো।
– এটা কি করা খুব জরুরি ছিল?
সেহেরিশের ঝাঝালো কন্ঠ।আফীফ তার গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
– আর বলবে ছেড়ে যাবে?সিলমোহর দিয়ে দিলাম আমার।এবার সারাজীবন এই দাগ থেকে যাবে।ক্রমশ কালো হতে থাকবে যেখানে যাও এই দাগ নিয়ে যাবে।

সেহেরিশ প্রত্যুত্তর করলো না।তার চোখের কোনে জল চিকচিক করছে।আফীফ বুঝতে পেরে মলম এনে সেহেরিশকে বসিয়ে তার কামড়ের জায়গায় মলম লাগিয়ে দিতে থাকে।
– শুনো সেহেরিশ তুমি ৭০% আমার হয়ে গেছো।এতদিন তোমার সম্মতি হীন আমি কিছু করতে পারিনি।হাত-পা গুটিয়ে বসে ছিলাম।এবার তুমি ছেড়ে যেতে চাও আর কেউ তোমাকে নিয়ে যেতে চায় যাই করুক এর ফল বেশি ভালো হবে না।আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি তার আগে রুম থেকে বের হবে না।দুজনে একসাথে বের হব।তোমার পাপা নিশ্চই ক্ষেপে আছে তোমাকে দেখলেই হাত চালাতে দেরি করবেন না।তাই আমাকে ছাড়া বাইরে বের হবে না।

সেহেরিশ মাথা নেড়ে সায় দেয়।আফীফ ক্লজেট থেকে জামা নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।

আফীফ চলে যাওয়ার পর সেহেরিশ আফীফের রুমটা খুটিয়ে দেখছে দেয়ালের ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে সে বেশ অবাক হয় কেননা প্রতিটা ছবি সেহেরিশের অজান্তে তোলা।
সেহেরিশের ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা মিলে যায়।কোন স্পাই তার পেছেন আছে কে জানে।
কিছুটা এগিয়ে এসে সেহেরিশ দেয়ালে থাকা একটি ডায়রির ছেড়া পাতা পড়তে থাকে।

” আমার অনুভূতি মিথ্যা নয়!তাকিয়ার মনে জমে থাকা ঘৃণা একদিন ভালোবাসায় রূপান্তরিত হবে আমি শুধু সেই দিনের অপেক্ষায়….
৬ জুলাই ২০১৮

সেহেরিশ চমকায়।কত আগের লেখা আফীফের অনুভূতি গুলো।পাশে রাখা আরেকটি কাগজের লেখা সেহেরিশ পড়তে থাকে।

” আমি একা হাতে সপ্নের ঘর বুনি, একা হাতে সপ্ন সাজাই। কিন্তু যার জন্য আমার এই আয়োজন সে আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে!তবুও আমি তার অপেক্ষায়…..
২১ অক্টোবর ২০১৭

সেহেরিশ থমকে যায়।অনুভূতি গুলো দোটায়নায় খেলছে।দু’চোখ বার বার ঝাপসা হয়ে আসছে।একটা মানুষ তাকে আড়ালে এতটা ভালোবাসে কিন্তু সে কি পালিয়ে বাঁচার পায়তারা করছিল।ইসস ভালোবাসা সত্যি সুন্দর যদি অপর পক্ষের মানুষটি নিটোল ভাবে ভালোবাসে।

– আমার এই লেখা তুমি টানা চারদিন পড়লেও শেষ করতে পারবে না।আর অনুভূতি গুলো সম্পূর্ণ অনুভব করতে কখনো পারবেনা।

আফীফের কথায় তড়াক করে পেছনে ঘুরে তাকায় সেহেরিশ।মাথা নুইয়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়।আফীফের গায়ে ব্লাক জ্যাকেট চুল গুলো ভেজা চোখে মুখে শুভ্রতার ভাব সেহেরিশ আবার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।

– কাল সারাদিন সারারাত সিগারেট, মদ গিলেছি শুধু তাই গোসল করে নিলাম।শশুড় আব্বা গায়ে যদি সিগারেটের গন্ধ পায় তবে তো আবার বলবেন জামাই গাঞ্জা খোর।
– হাহ।আমার খিদে পেয়েছে।সেই সকালে একটু খানি স্যান্ডউইচ খেয়েছি।
– এত আদর দিলাম পেট ভরলো না?তুমি তো মহা খাদক সেহেরিশ।বাই দা ওয়ে এতক্ষণ তো আদর পেয়েছো এবার দেখো কি ঝড়টা যায় তোমার উপর।
– সেটাই ভাবছি আমি।
– চলো অলরেডি রাত নয়টা বেজে গেছে।

আফীফ সেহেরিশ একসঙ্গে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সেহেরিশ আফীফের আগে আগে হাটতে গেলেই পেছন থেকে ডেকে উঠে আফীফ।
– সেহেরিশ।
– হ্যা বলো।
– আমার পাশে আসো।
সেহেরিশ আফীফের পাশে দাড়াতেই আফীফ সেহেরিশের হাতের মুঠোয় তার হাত আঁকড়ে ধরে।
– সব সময় আমার পাশেপাশে থাকবে খবরদার আগে কিংবা পিছনে নয়।

সেহেরিশ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আফীফের দিকে।এই মানুষটার ভালোবাসা বড্ড অদ্ভুত!

.

থাপড়ের শব্দে সবাই একসঙ্গে চমকে তাকায় খুরশীদ আনওয়ারের দিকে।হ্যা চড়টা সেহেরিশের গালেই পড়েছে।
– প…পাপা
– চুপ!পাপা ডাকবি না তুই আমায়।আদর করে করে তোকে বেয়াদব করে তুলেছি তাই আজ বাবা মায়ের সিদ্ধান্তের উপরে তুই কথা বলিস।

খুরশীদ আনওয়ার আবার হাত তুলতেই
আফীফ সেহেরিশ হাত টেনে দু-কদম পিছিয়ে আনে।সেহেরিশ কাদঁছে, নিরবতা ভেঙ্গে তার হেঁচকির শব্দ চারিদিকে ধ্বনি তুলছে।আফীফের বাবা মাসুম এগিয়ে এসে সেহেরিশের মাথায় হাত বুলিয়ে অনুনয় সুরে বলে,
– থাক কান্না করিস না।ভাইজান রেগে ছিল তাই চড় দিয়ে ফেলেছে।

– এই মেয়েকে খুন করে ফেলবো আমি এত সাহস কোথায় পেলো সে, আমার উপরে কথা বলে।
খুরশীদের কথা কেঁপে উঠে সেহেরিশ।আবারো তিনি তেড়ে আসতে নিলেই ঢাল হয়ে দাঁড়ায় আফীফ।
– আঙ্কেল একবার মারার জন্য সাহস করেছেন কিচ্ছু বলিনি দ্বিতীয় বার আর করবেন না প্লিজ।
– মেয়ে আমার তাকে আমি মারবো কাটবো নদীতে ভাসিয়ে দেবো সেটা কী আমি তোমায় জিজ্ঞেস করবো?
– আমি জানি মেয়ে আপনার।তবে মারার কারনটা আমাকে নিয়ে।তাই আমাকে কথা বলতেই হবে।

– তোমাদের আমায় আগেই সন্দেহ হয়েছিল এতটা আদর সোহাগ মোটেও এমনি এমনি করনি।আমার নির্বোধ মেয়েটার মাথা চাবিয়ে খেয়েছো।
– সরি আঙ্কেল বিষয়টি একটু ভদ্র ভাবে করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনারাই আমার ভদ্রতাটা কেড়ে নিলেন।ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে গেলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত?
– এত কৈফিয়ত আমি তোমায় দিতে পারবো না। এই মেয়ের যদি এই বাড়িতে থাকার সখ হয় তবে থাকুক সে আমরা চলে যাবো।এই সবাই চলো।

খুরশীদ বড় ব্যাগটি হাতে তুলে নিতেই সেহেরিশ ছুটে যায় তার বাবার দিকে।কিন্তু আফীফকে পেরিয়ে যেতেই সেহেরিশ হাতে টান অনুভব করে।আফীফ তার কবজি শক্ত করে ধরে আছে।সেহেরিশ কান্নার ঘোরে ইশারা করে আফীফকে হাত ছাড়তে কিন্তু আফীফ মাথা দুই পাশে নাড়িয়ে না বোধক ইশারা করে।সেহেরিশকে টেনে তার কাছে এনে কানের সামনে ফিসফিস করে বলে,

– বলেছি না সামনেও না পিছনেও না একদম পাশাপাশি থাকবে। আর এই নিয়ম সারাজীবনের জন্য।

সেহেরিশ আর কিছু বলতে পারলো না কান্নায় তার শরীর কাঁপছে।
– আমার মেয়েটাকে বশ করে ফেলেছো দেখছি।
– আঙ্কেল এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি।
– ভালোয় ভালোয় বলছি আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও আমি কিন্তু আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।
– আইন?আইন শেখাচ্ছেন আমায়?আপনি যে কেন এই বাড়িতে মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইছেন না তা আমি জানি আমার সাথে এইসব টালবাহানা করবেন না।আর আপনার মেয়েকে শুধুমাত্র আপনাদের অসম্মতিতে আমি ছেড়ে দেবো এত সহজ নাকি?আট থেকে নয় বছর তাকে নজরে রেখেছি, একটু একটু করে আমি নিজেকে সামলে রেখেছি আর সামনে পেয়ে ছেড়ে দেবো এত সহজ নয়।এই বাড়ির চৌকাঠ পার হওয়ার আগেই আক্রমণ আপনাদের উপর হতো আমি সিওর।অন্তত আমার স্বার্থ, আমার ভালো থাকার জন্য হলেও আমার দাদাজান আপনাদের এত সহযে এই বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না।

আফীফ থামে।চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছেড়ে মাথা ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায়।রাত নয়টা পয়ত্রিশ।আফীফ তার দাদাজানের দিকে তাকিয়ে গমগম সুরে বলে,
– দাদাজান কাজে লেগে যাও।কাল থেকে বিয়ের সব আয়োজন শুরু।এই রাতেই শহর থেকে ওয়েডিং প্লেনার দের আনার ব্যবস্থা কর।আমি কোন ক্রুটি দেখতে চাই না।এটা জমিদার আহনাফ দেওয়ানের নাতি আফীফ দেওয়ানের বিয়ে।আশা করি বুঝতেই পারছো?
– তুই কোন চিন্তা করিস না।আমি এখনি সবাইকে নিয়ে ব্যবস্থা করছি।

কেইন এতক্ষন নিরব দর্শক হয়ে সবটা দেখছিল।তার ভেতরটা মুষড়ে যাচ্ছে।শুষ্কো ঠোঁটটা কামড়ে ধরে কান্না থামানোর ব্যবস্থা করে।কিন্তু তবুও চোখে পানি চলে আসছে তাই সবার মাঝ থেকে নিজেকে দ্রুত আড়াল করে নেয়।
.

সেহেরিশ হেচঁকি তুলে কাদছে তার সামনে আফীফ এক থালা ভাত নিয়ে বসে আছে।বাম হাতে সেহেরিশের চোখের পানি মুছে আশ্বাস সুরে বলে,
– কান্না করছো কেন তুমি?একদম কাদবেনা।দেখো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কালকের মেকাপ সুন্দর হবে না কিন্তু।
– পাপা আমার উপর অভিশাপ দেবে আমি জানি।
– তুমি বুঝিয়ে বলবে সেহেরিশ।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।আঙ্কেলের সাথে আমি কথা বলবো।
– না আমি পাপার সামনে যাবো না আমায় মেরেই ফেলবে।
– বোকা মেয়ে।তোমার অনেক সুবিধা হলো জানো তুমি?বিয়ের পর আঙ্কেল বকা দিলে ছুটে চলে আসবে আমার কাছে।বুকে মাথা রেখে ইচ্ছে কাঁদবে।আর আমার যখন ভীষণ রাগ লাগবে তখন হয়তো নিজের অজান্তে বকে দিবো তখন ছুটে যাবে তোমার বাবা মায়ের বুকে।

আফীফের এমন কথায় ফিক করে হেসে দেয় সেহেরিশ।
#চলবে…..

#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব_২৭

– এটা কে রে?লালা টুকটুকে বউ!
জুহির কথায় কিঞ্চিৎ হাসে সেহেরিশ।কেইনের দিকে এক পলক তাকিয়ে সেহেরিশ তার হাত থেকে ফোনটা নিজের হাতে তুলে নেয়।
– জুহি তুই কেমন আছিস?
– ভালো থাকার কি কথা?আমি নেই আর তুই বিয়ের আসরে বসে গেলি।
– আসলে সবটা হুট করেই হয়ে গেছে।
– হুম, তাই বলে আমাকে না জানিয়ে।
সেহেরিশ প্রত্যুত্ত করলো না।মাথা নুইয়ে নেয়।একা রুমে এই মূহুর্তে কেইনের সাথে বসে আছে ভাবতেই অপ্রস্তুত লাগছে।সেদিন কেইনের মুখে ‘ভালোবাসি’ শব্দটা বন্ধুত্বের মাধুর্য নষ্ট করে দিয়েছে।ইসস হেসে খেলে কতবার যে কেইনকে সেহেরিশ জড়িয়ে ধরেছে তার ইয়াত্তা নেই।কিন্তু এখন কেইনকে দেখলেই অন্যরকম অনুভূতি হয়।

– সেহেরিশ তো বিজি আছিস। আমি বরং রাখছি আর নার্ভাস হবি না একদম।সব ঠিক ঠাক হবে অল দা বেস্ট।
জুহির সঙ্গে আর কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দেয় সেহেরিশ।কেইনের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিলে কেইন তা হাতে তুলে নেয়।

– আমার সঙ্গে কথা বলছিস না কেন সেহেরিশ?যা হয়েছে তা বাদ তুই সুখী থাক এটাই আমি চাই।
– না আসলে….
– থাক,শাক দিয়ে মাছ ঢাকিস না।কাল গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে তুন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছিস কিন্তু আমার সঙ্গে একটু কথাও বললি না।ভালোবাসি প্রকাশ করেছি বলে কি পর হয়ে গেছি?শুন সেহেরিশ যা হয়েছে তা সমাপ্ত তুই আমার ফ্রেন্ড ছিলি তুই আমার ফ্রেন্ড থাকবি।
– আমি জানি কেইন।
– আফীফ ভাই তোকে অনেক ভালোবাসবে।সে তো আমার থেকেও হতভাগা আট বছর তোর অপেক্ষায় ছিল কিন্তু কাছে না পেয়েও নিখুঁত ভাবে ভালোবেসে যায়।

সেহেরিশ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে কেইনের দিকে।আজ ছেলেটাকে বড্ড অচেনা লাগছে।এটা সেই কেইন না যে কেইন লাফিয়ে ঝাপিয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকে।এটা সেই কেইন যে কেইন চাপা আর্তনাদ লুকিয়ে রেখে হাসছে।

কেইনের সেহেরিশের পাশে এগিয়ে এসে দাঁড়ায়।
– সেহেরিশ একবার জড়িয়ে ধরবি?
সেহেরিশ উঠে দাঁড়ায়।কেইনকে শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরে।কেইনের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠেছে তবে সেহেরিশের মাঝে ভর করেছে ভয়।আফীফ দেখে ফেললে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
.
গতকাল গায়ে অনুষ্ঠান শেষে আজ বিয়ের আয়োজন।সেহেরিশ লাল লেহেঙ্গায় তৈরি হয়ে আছে।ঢাকা থেকে ওয়েডিং প্লানার সহ বিউটি পার্লার থেকে সাজানোর জন্য মেয়ে আনার ব্যবস্থা করে আফীফ।সেহেরিশ তার বাবাকে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত সবটা খুলে বলায় তিনি কিছুটা রাগ মুক্ত হয়েছেন।তবে মেয়ের বিয়ে নিয়ে তার মাঝে আনন্দের শেষ নেই।

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে।রাতের দেওয়ান মঞ্জিল ঝলমল করছে হরেক রকম লাইটের সাজসজ্জায়।কিছুক্ষণ পরেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
সেহেরিশ মৌ’কে নিয়ে বকবক করতে ব্যস্ত ।আফীফ নিজের রুম থেকে তৈরি হয়ে সেহেরিশের রুমে একবার উঁকিঝুঁকি দেয়।সেহেরিশকে একা মৌয়ের সঙ্গে দেখে সুযোগ বুঝে রুমে ঢুকে যায়।

– মৌ সোনামণি যাও তোমার মামনি ডাকছে।
আফীফের কন্ঠে চমকে তাকায় দুজনে।মৌ আফীফের ইশারা বুঝতে পেরে এক ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।আফীফ সুযোগ বুঝে দরজাটা বন্দ করে সেহেরিশের সামনে দাঁড়ায়।সেহেরিশ কাপঁছে আফীফের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে নার্ভাস ভঙ্গিতে হাসে।
– কি হলো মিসেস আফীফ আপনি কাঁপছেন কেন?
আফীফের মুখে ‘মিসেস আফীফ’ শব্দটা শুনেই শিউরে উঠলো সেহেরিশ।মানে কি বিয়ে না হতেই মিসেস বানিয়ে ছাড়লো এই লোক।
– তিন কবুল এখনো পড়িনি যে মিসেস আফীফ বলবেন।
– পড়ার দরকার নেই আফীফ দেওয়ানের চোখ যখন পড়েছে তখনি তুমি আমার হয়ে গেছো।তা আপনি কাঁপছেন কেন?
– প…প্রথম বার বিয়ে করছি তো তাই।
– আমি কি সপ্তমবার বিয়ে করছি নাকি?

সেহেরিশ থতমত খেয়ে যায়।কি বলবে ভেবে পায় না।আফীফ তার দিকে এক পা দুই পা করে এগিয়ে আসতে সেহেরিশ পিছিয়ে যায় কিন্তু বেচারি বেশি দূরে গিয়ে পারলোনা তার আগেই আফীফ হাত টেনে সামনে এনে দাঁড় করায়।
– পালিয়ে যাবে কোথায়?আজকের পর থেকে বন্দিনি আফীফের কাছে।
– তাই তো ভয় লাগছে যদি কখনো না ছাড়েন।
– ছাড়বো কেন?যা চাইবে তাই পাবে শুধু আমার হয়ে থেকো।

সেহেরিশ মিষ্টি করে হাসে।আফীফ তার দিকে তাকিয়ে আবদার সুরে বলে,
– একটা চুমু খাবো?
– না।
– একটা, শুধু একটা।
– আমার মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে
– উহুহ উল্টা পালটা বাহানা দেখাবে না আমায়।

আফীফ এগিয়ে এসে সেহেরিশের কপালে চুমু খায়।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সাড়ে সাতটা বাজতে দেখেই তাড়া দিয়ে বলে,

– আমি বরং যাই বিয়ের সময় এসে গেছে।
– যাই বলতে নেই, বলুন আসি।আমার জন্য ভালোবাসার পবিত্রতার দলিল নিয়ে আসবেন।
– জো হকুম আমার দিলের রানী।
.
বিয়ে বাড়ির উৎসব আয়োজনে আজ একজনের আনন্দের সীমা নেই।না সে দাওয়াতে ব্যস্ত নয় বরং অন্ধকার মিশ্রিত রুমে বসে আছে।কেননা আজ তার মুক্তি হবে।আফীফ যখন সেহেরিশের হয়ে যাবে তখনি তার মুক্তি হবে।শর্ত এটাই ছিল!

অন্য একটি রুমে জ্বলমলে আলোর ব্যবস্থা।পুরো রুমটা সাজানো বেশ যত্ন সহকারে কিন্তু সেই রুমের মানুষটির বোধ নেই।ঘুম ভাঙ্গলেই এক নাগাড়ে তার মুখে একটা কথাই বাজে ” আমার কিছু চাই না আমি বাচঁতে চাই”আমার কিছু চাইনা আমি বাঁচতে চাই”

ব্লাক হাউজে এই দুটো রুম বিশেষ ভাবে নিরাপত্তার মাঝে আছে।বাকি রুম গুলো ব্যবহার করা হয় আপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য।আফীফের কাছে সবচেয়ে প্রিয় শাস্তি অপরাধীকে মেরে ফেলা নয়,বরং একলা একা একটি রুমে রেখে মানবসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা।বছরের পর বছর বাইরের আলোহীন বন্দ ঘরের মানুষটির বার বার তখন ইচ্ছে হয় একটু খানি বাইরের দৃশ্য দেখার পরিবারের মানুষগুলোকে দেখার।

.
সেহেরিশ একা রুমে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছে।জানালা দিয়ে বেশ কয়েকবার আড়ালে আফীফকে দেখতে পায়।তৎক্ষনাৎ লজ্জায় চোখ মুখ অসাড় হয়ে আসে।রুমে পাইচারি করতে করতে সেহেরিশের কানে আসে মোবাইলে ভাইব্রেশনের শব্দ।সেহেরিশ বিছানার উপর আফীফের ফোন দেখে হাতে তুলে নেয়।একটি নাম্বার থেকে বেশ কয়েকবার ফোন আসছে। নাম্বারটি সেভ করা ‘জিউ’ নামে।সেহেরিশ দোটানায় পড়ে যায় জিউ কি ছেলেদের নাকি মেয়েদের নাম।ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে সেহেরিশ ফোনটা রেখে দেয়।এক নাগাড়ে নয়টি কল আসে সেই নাম্বার থেকে অবশেষে মেসেজের শব্দে আবারো মোবাইল হাতে নেয় সেহেরিশ।

স্বাভাবিক মুখে সেহেরিশ মেসেজটি পড়লেও মেসেজ পড়ার পর সেহেরিশের মুখের অবস্থা আর স্বাভাবিক নেই।রাগে থরথর করছে কাঁপছে তার শরীর।নিজের মোবাইলটি হাতে তুলে নিয়ে মারুফাকে ফোন করে সে,
– ফুফি যা বলছি মন দিয়ে শুনো।
– কি বলবি বল।
– আমি সন্ধান পেয়ে গেছি।পাপাকে দেওয়া কথাও আমি রাখবো।পাপার কসম আমি অমান্য কর‍তে পারবো না।তোমাকে কিছু ট্রিক শিখিয়ে দিচ্ছি দোহায় লাগে প্রয়োজনে তুন্দ্রকে নিয়ে সবটা কাজ করো সময় নেই আমাদের হাতে মাত্র ১ ঘন্টা আছে।তুমি শুনো…………..

সেহেরিশ কথা শেষ করে আবারো আফীফের ফোনের দিকে তাকায়। বিড়বিড় করে তার মুখ থেকে একটাই শব্দ বের হয় “বেইমান”।

.
গায়ের ভারী লেহেঙ্গাটা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে সেহেরিশ।বিয়ে বাড়ির বেশির ভাগ এখন ঘুমে কাতুর অবস্থায়।বাইরের একটু আগের বিয়ের আয়োজন এখন নিভুনিভু অবস্থায়।আফীফ বিশেষ ফোনকলে বেরিয়ে গেছে বাড়ি থেকে। দায়িত্ব দিয়ে যায় আহনাফ দেওয়ান মুনিফ এবং মামুনের কাছে।কিন্তু সবার অবস্থা এখন ঘুমন্ত।কিছুক্ষণ আগে সেহেরিশের কথায় মারুফা সবার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন যার দরুনে পুরো বাড়িটা ধীরে ধীরে নিস্তব্ধতা ছেঁয়ে যায়।যেহেতু আফীফ বাড়িতে নেই তাই কাজটা বেশ সুবিধা ভাবে সম্পূর্ণ করে মারুফা।সেহেরিশ তাদের সবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।কিন্তু বিপাক ঘটলো সেহেরিশের ক্ষেত্রে। সেহেরিশের পাসপোর্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।বেশ কয়েক মিনিট খুঁজে না পাওয়ার পর হাল ছেড়ে দিয়ে দ্রুত ব্লাক হাউজের দিকে এগিয়ে যায়।সবাই মিলে ব্লাক হাউজের দরজা খুঁজে পেলেও দরজায় পিন সিস্টেম হওয়ার কারনে সবাই থমকে যায়।

– ক..কি করবো আমরা পাপা?
– সেহেরিশ আমার কসম লাগে যা হয়েছে বাদ দে।কাউকে মুক্ত করতে হবেনা আমাদের।প্লিজ,চল আমরা চলে যাই এতটা সুযোগ আর কখনো পাবো না।
– কিন্তু পাপা আমার কারনে পারভিন আন্টি বন্দি হয়ে আছে এখানে।তাকে আমার মুক্তি করতেই হবে।
– চুপ কর।আমি যা বলছি তাই কর।
বাড়ির বাকি সবাই সেহেরিশকে তাড়া দিতে থাকে।তুন্দ্র সেহেরিশের হাত টেনে নিয়ে যেতে চাইলে সেহেরিশ ঠোঁট কামড়ে কান্না সুরে বলে,
– আফীফের ভালোবাসা মিথ্যা নয়।আমি উনাকে ঠকাতে চাই না।

সেহেরিশ কথা শেষ করার আগেই তার গালে চড় পড়ে।হ্যা চড়’টা খুরশীদ আনওয়ার দিয়েছেন।সেহেরিশ দু’কদম পিছিয়ে যেতেই কেইন তাকে আগলে ধরে।
– কু*বাচ্চা এই দিন দেখার জন্য আমি তোকে বড় করেছি।দুইদিনের ছেলেটার জন্য তোর মায়া লাগে আর আমি তোর মা পরিবারটার জন্য মায়া লাগেনা।এখনি তোকে ত্যাজ্য করবো আমি।
খুরশীদ আনওয়ারের ধমকে ভয় পেয়ে যায় সেহেরিশ।
– প..পাপা আমি যাবো।

সেহেরিশ ভয় পেয়ে যায়।তার মস্তিষ্ক যেন অকেজো হয়ে গেছে।জীবনের এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েনি।
ভাবনার মাঝেই সেহেরিশের হাতে টান পড়লো।হ্যা কেইন তাকে নিয়ে ছুটছে আফীফের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য। সেহেরিশ যন্ত্র মানবের মতো কেইনের সাথে ছুটছে।দুচোখে তার জল।দুনিয়া উলটে গেলেও সেহেরিশ অস্বীকার কর‍তে পারবেনা আফীফ’কে সে ভালোবাসে।সত্যি ভালোবাসে।আফীফ কি তার জীবনে আর ফিরে আসবে না দেখা হবে না তাদের?সেহেরিশের বার বার চোখে ভাসছে সেই দৃশ্য।আফীফকে বলা কথা গুলো।ভাবতেই ভেততটা মুষড়ে যাচ্ছে,

“যাই বলতে নেই, বলুন আসি।আমার জন্য ভালোবাসার পবিত্রতার দলিল নিয়ে আসবেন।

সেহেরিশ তো চলে যাচ্ছে আফীফকি তার জীবনে ফিরে আসবে?

বাড়ির গেট থেকে বের হতেই সেহেরিশ বিড়বিড় করে বলে,
– আলবিদা…

#চলবে…