#অপূর্ণতা❤️
#লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
#পর্ব_৪
– বাহ রে! আমি আমার হবু বউকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না?
– আংটি পড়িয়েছেন বলেই শরীরে টার্চ করার অধিকার পাওয়া হয়ে গেলো?
রাইসার কথা শুনেই লোকটি বিশ্রীভাবে দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললো…..
– আপনাকে বিয়ে করবো বসিয়ে খাওয়ার জন্য না। আপনার উপর আমার একটা অধিকার আছে। আর সেই অধিকারে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছি।
” রাইসা লোকটির কথা শুনেই রাগে শরীর ফেটে পড়ছে। রাইসা লোকটার বিশ্রী হাসিটা দেখে নিজেকে বড্ড বেশি ঘৃণা হচ্ছে। নিজেকে ভোগের বস্তুু মনে হচ্ছে।
এই সমাজে একটা মেয়ে এতোটাই অবহেলিত ভাগ্য নিয়ে জন্মায়।
” যখন রাস্তায় বের হবে যেনো কোন ভোগ পন্য বস্তুু। সবাই মর্মহিত হয়েছে অজুহাতে কাছে ঘেষতে চেষ্টা করে।
রাইসা রাগে ফেটে পড়ে বললো…..
– আপনার বাগদত্তা হয়েছি বলে এটা মনে করবেন না কেনা বস্তু হয়ে গেছি। আমি কোন ভোগ বিলাসের বস্তু না ইচ্ছে হলে কাছে টেনে নিবেন। নয়তো দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন। আমারো একটা ইচ্ছে অনিচ্ছা আছে। আমার একটা আত্নবোধ আছে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন?
“রাইসার কথা না শুনেই আবার জড়িয়ে ধরতে গেলেই ঠাস করে চড় দিয়ে বসলো। চড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে কটমট করে রেগে তাকিয়ে আছে।
রাইসা এইবার নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে উঠলো……
– ইতর জানোয়ার,বদমাস। বের হয়ে যা।
চড় খেয়ে রাইসার দিকে রেগে তাকিয়ে বললো…..
– চু**** তুই এটা কি করলি??
“রাইসা লোকটির কথা শুনেই চিৎকার করে বলে উঠলো….
– রুম থেকে এখনি বের হয়ে যা।
রাইসার চিৎকার শুনেই তাঁর আম্মু রুমে আসলো। মেয়ের হবু জামাই এসেছে বাসায় তাই একটু রান্না ঘরে ছিল। মেয়ের রুম থেকে চিৎকার শুনেই মনে মনে আশংকা করতে থাকে আবার রাইসা অন্য কিছু করে বসলো না তো। এমনি তেই বিয়ে তে মত নেই তারপর যদি বিয়ে টা ভেঙে যায় তাহলে মুখ দেখাতে পারবে না সমাজে। একে তো বিধবা যা সমাজের চোখে করুণার পাত্রী ছাড়া আর কি? আর কত মানুষের কাছে শুনবে?
তাঁর উপর বিয়ে ভেঙে গেলে কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবে না।
“রুমে আসতেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। রাইসার কান্না দেখে অবাক হয়ে গেলো। হবু জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে গাল হাত দিয়ে রেগে তাকিয়ে আছে। জামাইয়ের চেহারা দেখে কি হয়েছে বুঝতে চেষ্টা করছে।
রাইসাকে শান্তনা দিয়ে বললো…..
– রাইসা, কি হয়েছে?
” রাইসা তাঁর আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। তাঁর আম্মু কে সবটা খোলে বলতে না পারলেও যতটুকু সম্ভব বলতে চেষ্টা করেছে। মেয়ের কথা শুনে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কেননো না রাইসার রুমে তিনিই পাঠিয়ে ছিলেন।
“রাইসার হুবু বর যখন এসে রাইসার কথা জানতে চাইলো তখন রুমে আছে বলে পাঠিয়ে দিলেন। একে তো মেয়ের হবু জামাই তারপর কয়েক দিনের মাঝেই বিদেশে চলে যাবে। রাইসার সব কাগজ পত্র ঠিক করেই বিয়ের কাজ টা শেষ করে ফেলবে।
” রাইসাকে শান্তনা দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো……
– মা, ও তোমার হবু বর। তাছাড়া……
– ছিঃ মা ছিঃ। একটা মেয়ে হয়ে তুমি এই কথা বলতে পারলে?
রাইসাকে কিছু বলতেও গিয়েও পারেনি, থমকে যায় । তাঁর আগেই ঘৃণায় নিরাপদ আশ্রয় ভেবে যে বুকে মাথা গুছে ছিল সেখান থেকে মাথা সরিয়ে প্রতিবাদ করে রাইসা । মেয়ের কথা শুনে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। তাছাড়া আর কি করার আছে??
“সমাজের চোখে তো আজ রাইসা স্বামী হারিয়ে অপরাধী। প্রতিনিয়তই চোখের সামনে মেয়ের কত অপবাদ সহ্য করবেন। কত কথা শুনতে হবে? স্বামী নামক আশ্রয়ে মেয়েকে রাখতে পারলে হয়তো কিছুটা বাঁচবে। তবে নোংরা এই সমাজ কখনো জানবে না সব স্বামীরা নিরাপদ আশ্রয় হয়ে ওঠে না। চার দেওয়ালের মাঝে কত নারীকে নীরবে মুখ বুঝে অত্যাচার সহ্য করতে হয়। কত বার ধর্ষিত হতে হয়। শুধু দেহ টা ভোগ করতে পারলেই হল। দেহ ছাড়াও যে একটা মন আছে তা কখনোই বুঝতে চেষ্টা করে না। স্বামীর একটু ভালবাসা স্নেহ মমতা পেতে অপেক্ষায় থাকে।
“রাইসার কন্ঠ শুনেই ছুটে আসে তাঁর আব্বু। রাইসাকে কান্না করতে দেখে বুকের সাথে জড়িয়ে নেই। রাইসা যে তাঁর বাবার আদরের রাজকন্যা। হয়তো সব বাবার কাছেই মেয়েরাই রাজকন্যা হওয়ার ভাগ্য নিয়ে জন্মায়।
মেয়েকে আগলে রেখে জানতে চাইলো….
– মা, তোর কি হয়েছে? কান্না করছিস কেনো?
” বাবার বুকে রাইসা আশ্রয় টুকু খুঁজে পায়। রাইসা ডুকরে কেঁদে উঠলো। মেয়েকে শান্তনা দিয়ে কান্না থামাতে বললো। রাইসা কান্না করেই যাচ্ছে। রাইসার আম্মুর কাছে জানতে চাইলে মাথা নিচু করে বললো।
রাইসার আব্বু শুনেই প্রচন্ড রেগে গেল। লোকটার দিকে রেগে বললো…..
– বের হয়ে যা আমার বাসা থেকে। তোর মতো চরিত্রহীনের কাছে আমার মেয়েকে দিবো না।
আর কোনদিন এই দিকে মুখ করবি না।
” রাইসার আব্বুর কথা শুনেই রাইসার হবু বর বলে উঠলো…..
– আপনার মেয়েকে কে বিয়ে করতে চাইলো? একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করবো সেটা আপনাদের ভাগ্য। আপনার মেয়ের ভাগ্য ভালো যে আমার মতো মানুষ রাজি হয়েছিল।
– চুপ কর বেয়াদব। বের হয়ে যা বাসা থেকে।
“রাইসার আব্বুর কথা শুনেই রাগে গজগজ করতে করতে বের হয়ে গেলো। মেয়েকে আগলে নিয়ে রাইসার সব কথা শুনলো। বাবার ভালবাসা পেয়ে রাইসা কান্না চোখে সব খোলে বললো। রাইসার কথা শুনেই তাঁর আম্মু কে বললো……
– ছিঃ, তুমি আমার স্ত্রী হয়ে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে পারলে?
– তো কি করবো? আর কত সমাজের মানুষের কাছে ছোট হবো? আর কত মেয়ের অপমান সহ্য করবো বলতে পারো? কবে এই নোংরা সমাজের বাকা চোখ থেকে আমার মেয়ে মুক্তি পাবে??
“রাইসার আম্মু কথা গুলো বলেই শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করতে করতে বের হয়ে গেলো। যেই মানুষ টা কোনদিন চোখ তুলে তাকায় নি আর আজ তাঁর চোখে ঘৃণা দেখে নিজেকে সামলে নিতে পারেনি। মেয়ে তো শুধু তাঁর একার না। সেও তো মা,একজন মেয়ে। কত অপমান সহ্য করবে মেয়ের।
” মায়ের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো। রাইসার আব্বু মেয়েকে বললো….
– তুই চিন্তা করিস না। যতদিন আছি তোর কোন কিছু হবে না।
” মেয়েকে কথা গুলো বলে পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে অশ্রু গুলো মুছে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মা হয়ে কত টুকু কষ্ট করে বুঝতে পারে। কে না চায় তাদের মেয়ে সুখী হোক। এক মূহুর্তের ঝড়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে কে জানতো?
“রাইসা বিছানায় পড়ে বালিশ জাপ্টে ধরে কান্না করতে করতে বললো….
– অনন্ত আর কত অপমান সহ্য হলে আমাকে তোমার কাছে নিবে? কেনো আমাকে একা ফেলে চলে গেলে। আমি তো তোমাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম। সেদিনের রাগের মাথায় কথা গুলো মেনে তুমি সত্যি সত্যি হারিয়ে গেলে অভিমান করে?
রাইসা বিছানায় শুয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। রাইসার চোখের অশ্রু গুলো ঝড়ে পড়তে শুরু করলো।
৫,
“অনন্ত সেখান থেকে অন্ধকারে কবর স্থানে চলে আসে। সেখানে তাঁর প্রিয় মানুষটি শুয়ে আছে। চারদিকে সুশান নীরবতা। শেষ বিকালের সূর্য অস্ত গিয়ে এখন মধ্য রাতে গড়িয়েছে।
অনন্ত যতই এগিয়ে যেতে থাকলো হাজারো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে। যখন নিজের কাঁধে করে মানুষ টাকে নিয়ে এসেছিলো তখন শুধু দেহ টাই পড়ে ছিলো। একটা নিথর দেহ বার বার পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখতে থাকে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে আছে।
” শেষ বারের মতো যখন মানুষ টাকে বিদায় জানাবে তখন অনন্ত ডুকরে কেঁদে বলেছিলো…..
– আমাকে যে অনেক ভালবাসতে তুই না বললেও বুঝতে পেরেছিলাম। তবে আমার ভালবাসা টাকে তুই কখনোই বুঝতে চেষ্টা করিস নি!
“অনন্ত হাতে করে নিয়ে আসা লাল গোলাপ টা কবরের অপর রাখে। অনেকদিন না আসায় ঝোপ ঝাড়ে পরিনত হয়েছে। যদিও খোঁজে পেতে বেগ পোহাতে হয় নি।
“অনন্ত কবরে ফুল রেখে একমনে তাকাতেই মনে পড়লো কথা গুলো……
” শোন, যদি আমি তোর আগে মরে যাই তাহলে প্রতিবার আমার কবরে যাওয়ার সময় একটা গোলাপ ফুল দিয়ে আসবি।
অনন্ত ফুলটা মাঠিতে রেখেই ডুকরে কেঁদে উঠে। কান্না চোখে বলতে শুরু করে…….
– অভিমানী। সেদিন আমার সাথে অভিমান করে বের হয়ে চিরদিনের মতো হারিয়ে গেলি? আমি না হয় একটু দেরি করে এসেছিলাম তাই বলে তুই এতোটা দূরেই চলে যাবি?
অনন্ত কবরের পাশে বসে কান্না করতে থাকে। তখনি একটা হাত এসে কাঁধে স্পর্শ করলো। অনন্ত স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই চমকে উঠে।
অনন্ত কে চমকে উঠতেই দেখে বললো……
– অনন্ত, তুমি চম…………………………..
(চলবে)