অপ্রত্যাশিত পর্ব 3+4

0
1728

অপ্রত্যাশিত
পর্ব 3+4
#মুনতাহা
.
ছাদে বসে আছি। হঠাৎ বাড়িতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি করে নিচে এসে শুনলাম মিতু কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে ভাবলাম আশেপাশে কোথাও আছে কিন্তু সেই ভাবনা ও ভুল হলো যখন ওর ঘর থেকে একটা চিঠি পাওয়া গেল.. চিঠিতে লেখা,
” তোমরা আমাকে ক্ষমা করো আমি এই বিয়ে করতে পারবনা। আমি অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসি তাই তার সাথেই বাড়ি ছাড়লাম। আগেই বলেছিলাম বিয়ে করবনা কিন্তু তোমরা জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে তাই যাকে ভালোবাসি তার সাথে বাড়ি ছাড়লাম..”
– মিতু –
চিঠিটা পড়ে সবার করুণ অবস্থা। সবাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। সবাই ভাবছে আমি সব জানতাম।
আম্মু: তুই সব জানতিস
আমি : আরে আমি জানবো কিভাবে?
মিতুর ভাই: তাহা বল না বোন ছেলেটা কে? দেখছিস তো সবার অবস্থা।
আমি : ভাইয়া আমি সত্যি কিছু জানিনা। ও তো আমাকে কিছুই বলেনি,,,
মিতুর মা কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে গেছে। পুরো বাড়ির পরিবেশ গরম। কাল বিয়ে আর আজকে রাতে কনে পালিয়ে গেছে এটা ভাবতেই সবাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবিরের বাড়িতে সবটা জানাতে হবে কিন্তু সাহস করে কেউ কথা বলতে পারছেনা। সব এলোমেলো হয়ে গেল। মিতুর উপর খুব রাগ হচ্ছে, পালিয়ে যাবি তাহলে বিয়ে ঠিক করলি কেন? যত দোষ এখন আমার হচ্ছে, সবাই ভাবছে আমি সব জানি।।
অবশেষে আবিরের বাবাকে সব জানানো হলো। ভদ্রলোক সব শুনে কিছু না বলে ফোন রেখে দিলেন। এবার আরও বেশি টেনশন এ পড়ে গেছে সবাই। বাড়ির মান সম্মান সব শেষ অন্য দিকে আবিরের পরিবারের কাছেও ছোট হতে হলো।
আমার কাছে সবার এক প্রশ্ন মিতু কোথায় আর আমার ও এক উত্তর আমি সত্যি জানিনা।
বিরক্ত হয়ে আবার ছাদে চলে আসলাম। ইচ্ছে হচ্ছে মিতুর মাথা ফাটিয়ে দেই। হঠাৎ আবিরের বোন অরিনের কল,
অরিন : হ্যালো তাহা আপু?
আমি : হ্যাঁ অরিন বলো
অরিন: আমার ভাইয়াকে তোমার কেমন লাগে?
আমি : হঠাৎ এই কথা কেন?
অরিন : আহা বলোনা
আমি : উনি তো সব দিক থেকেই ভালো,,
অরিন : আচ্ছা রাখছি
আমি : অরি,,,,
যাহ ফোনটা কেটে দিলো, কিন্তু কি বললো কিছুই বুঝলাম না।এসব ভাবতে ভাবতে নিচে চলে আসলাম। প্রায় বিশ মিনিট পর আবিরের বাবার কল আসলো, ভাইয়া কল রিসিভ করলো,
ওপাশ থেকে :_____
ভাইয়া : হ্যাঁ আঙ্কেল বুঝতে পারছি আমরা
ওপাশ থেকে :_______
ভাইয়া : কিন্তু এখন কি করার আছে আপনারাই বলেন
ওপাশ থেকে :____
ভাইয়া : এটা কি করে হতে পারে?( অবাক হয়ে )
ওপাশ থেকে :___
ভাইয়া : আচ্ছা আমি সবার সাথে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি
ভাইয়া ফোন কেটে দিলো, সবাই শোনার জন্য ছটফট করছে, ভাইয়া বলল,
ভাইয়া : আঙ্কেল এই বাড়ির মেয়ের সাথেই ওনার ছেলের বিয়ে দিতে চাই
আমি চুপচাপ ভাইয়ার কথা শুনছি,,
সবাই : কিন্তু মিতু তো,,
ভাইয়া : ওনারা তাহার সাথে আবির এর বিয়ের কথা বলছে।
সবাই শুনে হা হয়ে গেছে আর আমি তো,, হাতে চিমটি কেটে দেখছি স্বপ্ন দেখছি কিনা,উফ নাহ এটা বাস্তব।
সবার মধ্যে গভীর চিন্তার ছাপ, সম্মান বাচাতে এটাই একমাত্র উপায়। সবাই রাজি, রাজি না হয়ে উপায় নেই এখন সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
আমি : এটা কি করে হয়? পারবনা আমি বিয়ে করতে
আম্মু আমাকে আলাদা করে ঘরে নিয়ে গেল,
আম্মু: তোর বাবা মারা যাবার পরে তোর ছোট চাচা আমাদের অনেক উপকার করেছে আর আজ তার সম্মানের কথা ভেবে এটা করতে পারবিনা?( ইমোশনাল ব্লাকমেইল)
আমি : কিন্তু আম্মু,,
আম্মু: তোর বাবা বেচে থাকলে আমি জোর করতাম না,বুঝিস ই তো ভাইয়ের সংসার এখন।
আমি 🙁 এর পর আর কিছু বলার থাকে না ) আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা যা ভালো মনে করো।
কি হচ্ছে কেন হচ্ছে আমি জানিনা, শুধু জানি আবিরের সাথে আমার বিয়ে। মনে মনে তো নাগিন ডান্স আহাআআআ,,,
পরের দিন একরকম ঘোরের মধ্যেই আমাদের বিয়েটা হয়,,,,
আবির একবার ও আমার দিকে দেখে নি। আমার তো টেনশনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। না জানি এরপর আমার কপালে কি আছে। এসব ভাবতে ভাবতে আবিরের বাড়িতে চলে এসেছি। সব নিয়মকানুন শেষ করে এখন বাসর ঘরে বসে আছি আর আল্লাহ কে ডাকছি। না জানি কি কি শুনতে হবে। আগের সব কথা মনে পড়ছে। আগে যখন ফেইক আইডি দিয়ে আবিরকে বিরক্ত করতাম তখন ঠিকই বুঝে যেত ওটা আমি। একবার তো আমাকে থাপ্পড় দিতে চাইছিলো। হায় আল্লাহ, এখন ও যদি সত্যি সত্যি থাপ্পড় দেয় তখন কি করব? কোথায় পালাবো? এসব ভাবছি তখনই দরজা লক করার শব্দ পেলাম…
আমি : আল্লাহ বাচাও প্লিজ প্লিজ প্লিজ ( আস্তে আস্তে)
আবির : কি সমস্যা? ঘাড়ে ভূত আছে নাকি?
আমি : আপনি নিজেই তো ভূত ( আস্তে করে )
আবির : কি বললে? ( রাগি লুকে)
আমি : কি..কিছু না ( ভয়ে আমি শেষ )
আবির : যাও ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ো। এমনিতেই পেত্নির মতো লাগছে দেখতে।
মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। দেখতে খারাপ জানি তাই বলে এতোই খারাপ? ফ্রেশ হয়ে এসে চুপচাপ খাটের একপাশে শুয়ে পড়লাম। একটা জিনিস মাথায় আসছে না যে মিতু চলে যাওয়াতে আবিরকে একটু ও আপসেট দেখাচ্ছে না। একবারও মিতুর কথা বললো না। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতে পারি নি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আবির ঘুমাচ্ছে আর আমি ওর হাতের উপর শুয়ে আছি। চুপি চুপি উঠে আসছি নাহলে দুঃখ আছে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখছি আবির এখনো ঘুমিয়ে আছে। ইস কতো কিউট লাগছে মুখটা। ও চোখ খুলে দেখলো আমি ওকে দেখছি..
আবির : কি? ( ভ্রু উচু করে )
আমি : ক..কই কি? কিছু না..( যাহ ধরা পড়ে গেলাম )
আবির : রাতে একটু ও ঘুমাতে দাওনি
আমি : মানে? ( অবাক হয়ে ) আপনি এইপাশে এসেছেন, আমি যাইনি ( একটু ভাব নিয়ে )
আবির : শোনো এটা আমার ঘর আর বেডটাও আমার। তোমাকে দয়া করে থাকতে দিয়েছি।
আমি : হুহ। খচ্চর, খাটাশ..
আবির : এই দাড়াও তোমার খবর আছে।
আমি : ( ভেংচি কেটে বের হয়ে আসলাম )
বাইরে অনেক মানুষ। নিজকে অসহায় লাগছে কিন্তু কি আর করার।
অরিন : কি ভাবি রাতে ঘুম হয়েছে?
আমি : হ্যাঁ হবে না কেন?
অরিন: না মানে….
আমি : কি মানে মানে করছো বলোতো?
অরিন : ধ্যাত কিছুই বোঝোনা। আচ্ছা এটা বলো যে ভাইয়ার সাথে তোমার প্রেম কতোদিনের ছিল?
আমি : প্রেম? ( আমি তো অবাক ) তাও তোমার ভাইয়ার সাথে?
অরিন : হ্যাঁ। কেন প্রেম করোনি? এমনি বিয়ে করলে? ( মজা করে )
আমি : আরে মিতু পালিয়ে না গেলে তো..
অরিন : ওয়েট ওয়েট। কিন্তু ভাইয়া তো সেদিন বললো তোমার আর ভাইয়ার…
অরিন এইটুকু বলেই থেমে গেল। পিছনে তাকিয়ে দেখি আবির দাড়িয়ে আছে..
আমি : আরে থামলে কেন? কি বললো সেটা বলো।
অরিন : না না কিছুই বলেনি।
কথা শেষ হতেই অরিন দৌড়ে পালালো। কি হচ্ছে এসব কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
পুরো বাড়িতে মানুষ আর আমি অসহায় হয়ে বসে আছি। সবাই আমাকে দেখছে, আহা নিজেকে বিখ্যাত মনে হচ্ছে। আবিরের কোনো খোজ নেই। বিয়ে করলে যে বউ এর খবর রাখতে হয় সেই জ্ঞান টাও নেই..
পরের দিন আমাদের বাড়িতে আসলাম। সবাই মিতুর কাজের জন্য আবিরের কাছে সরি বলছে আর ও সবার সাথে এমন ব্যবহার করছে মনে হচ্ছে ওর মতো ভালো মানুষ আর নেই… ওমা, আবার আমার বোন গুলোর সাথে হাসাহাসিও করছে..
রাতে..
আমি : ওদের সাথে এতো কথা বলার কি আছে?
আবির : কাদের সাথে? ( না জানার ভান করে )
আমি : আমার বোনদের সাথে
আবির : না মানে পছন্দ করছিলাম আর কি
আমি : মানে? ( রেগে )
আবির : তুমি চলে গেলে কাকে বিয়ে করব সেটা ঠিক করছিলাম ( বলেই অট্টহাসি )
আমি : মরে গেলেও ভূত হয়ে আসব (রেগে)
কথাটা বলেই শুয়ে পড়লাম..
যতদিন যাচ্ছে ততোই ওর প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে। সবার সাথে ব্যবহার দেখে মাঝে মাঝে ওকে অচেনা লাগছে। চলে আসার সময় খুব কান্না করছি।
আবির : আচ্ছা তাহা এতো কাদছো কেন?
আমি : বুঝবেন না। মেয়ে হলে বুঝতেন( কান্না করছি )
আবির : হাহাহাহাহা
আমি : ধ্যাত।
রাতে মন খারাপ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। বাড়ির কথা মনে পড়ছে।কখন আবির পাশে এসেছে খেয়াল করিনি..
আবির : ঘুমাবা না?
আমি : কে? ( ভয় পেয়ে)
আবির : আরে আরে ভয় পাচ্ছো কেন ময়নাপাখি।
আমি: ময়না পাখি? (অবাক হয়ে )
আবির : না মানে আমার একটা ময়না পাখি ছিল, সারাদিন তোমার মতো বকবক করতো হাহাহা..
আমি : ওহ ( মন খারাপ )
আবির : আচ্ছা শোনো..
আমি : হু
আবির : কাল থেকে শাড়ি পরে আমার সামনে আসবা না…
আমি : আজিব! কেন?
আবির : আমি বলছি তাই।
আমি : শাড়ি আমার খুব পছন্দ তাই আমি শাড়ি পরবো।
কথাটা বলে চলে আসছিলাম হঠাৎ আবির হাত ধরে টান দেয়। আমি দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে দাড়িয়ে আর আবির আমার সামনে..
আমি : ( ভয়ে কোনো কথা নেই )
আবির : যা বলছি সেটা শুনবা ( অনেকটা কাছে এসে )
আমি : ( চোখ বন্ধ করে ) পা..পা..পারবনা
আবির : নাহলে কিন্তু..
আমি : নাহলে কি?
আবির : আর দূরে থাকতে পারবনা ( কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল)
কথাটা বলে চলে গেল রুমে আর আমি দাঁড়িয়েই আছি
আমি : কি বলে গেল ও?
.
.
আজ থেকে আবির এর অফিস। সব গুছিয়ে দিয়ে রুমে এসে বসলাম। অরিন আসলো,
অরিন : ভাবি
আমি : আরে আসো
অরিন : মা তোমাকে ডাকছে। পাশের বাসার আন্টি তোমাকে দেখবে
আমি : আচ্ছা চলো
অরিন : ভাবি আন্টির কথাবার্তা কিন্তু ভালো না তুমি আবার মন খারাপ করোনা
আমি : আচ্ছা ঠিক আছে
বসার ঘরে..
আন্টি : বউ তো ভালো তবে গায়ের রং টা একটু চাপা
আমি : ( মাথা নিচু করে আছি )
অরিন : কথা আপুর ( আন্টির মেয়ে) থেকে কম তাইনা আন্টি?
আন্টি : না মানে… তো মা তোমার বোন তো পালিয়ে গেছে এবার তুমি যাবা না তো? ( শয়তানি হাসি দিয়ে )
অরিন : আন্টি কথা আপু যে দুলাভাই এর বন্ধুর সাথে চলে গেছে তো আপুর কোনো খবর পাইছেন?
আন্টি : ভাবি আপনার মেয়েটা খুব বেশি কথা বলে ( রেগে)
আমার শাশুড়ি : মেয়েটা একটু স্পষ্টভাষী কিছু মনে করেন না ভাবি
আন্টি : আচ্ছা আজ আমি যাই
অরিন : জ্বী আন্টি। আর কথা আপুর খবর পেলে জানাবেন ( মুচকি হেসে)
আন্টি : হুহ
আন্টি চলে যাবার পরে সবাই হেসে উঠলাম।
মা( শাশুড়ি ): যাক বাবা বাচা গেছে। তুমি কিছু মনে করোনা তাহা
আমি : না মা ঠিক আছে
অরিন : ওহ মা আমি ভাবিকে আগেই সব বলেছি। হাহাহাহাহা।
রাতে আবির আসার পর…
আবির: তো দিন কেমন কাটলো ময়না পাখি?
আমি : ভালো। পাশের বাসার আন্টি আসছিল
আবির : ওই মহিলা আবার কেন আসছিল (শার্ট খুলতে খুলতে বলল)
আমি : ইসস বড়দের সম্মান ও করতে জানেন না।
হাত ধরে কাছে টেনে..
আবির : তুমি জানো সম্মান করতে?
আমি : জ্বী হ্যাঁ আমি জানি
আবির : বরকে সম্মান করতে জানো?( আরও কাছে টেনে )
আমি : অনেক রাত হয়েছে খেতে আসেন। সবাই অপেক্ষা করছে।
উফফ বাচা গেল। রাতে খাওয়া শেষে…..
চলবে….